পারিজাত পর্ব ২

0
1688

#পারিজাত
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ২

সুগন্ধা মির্জা তাঁর স্বামীর জন্য অপেক্ষা করলেন। চাইলেই তিনি আজই পারিজাকে বের করে দিতে পারতেন বাড়ি থেকে। কিন্তু, আজ দুই জামাই এসেছিল মেয়েদের নিয়ে যেতে। সম্মানের কথা চিন্তা করে আর পারিজাকে কিছু বলেননি তিনি। কিন্তু, মনে মনে এখনও একটা ক্ষোভ রয়ে গেছে পারিজার প্রতি।

পারিজা ঘরময় পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। সকালের ওই ঘটনার পরে ওয়াহেদের সঙ্গে একবারও দেখা হয়নি। ওয়াহেদ একবারও এমুখো হয়নি। পারিজা জানে না ওয়াহেদ কোথায়। রাগ,ঘৃণায় ওয়াহেদ যে তাঁর নিকট হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তা বহুপূর্বেই বুঝতে পেরেছে পারিজা। বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে তাঁর। আম্মা এই কাজটা কী করে করলো? এত বড় কথাটা সবার থেকে গোপন করলো?কেন? বিয়েটা নাই বা হতো। আইবুড়ো হয়েই নাহয় মরতো। একটা বিয়ের জন্য এত মিথ্যে? যে-ই সম্পর্কের শুরুতেই এত মিথ্যে এত ধোঁকা। সেই সম্পর্কে আদৌও কী কোনো মিল মহব্বত থাকে?সংসারে সুখ শান্তি নামক বস্তুটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় সেখানে?

ওয়াহেদ রাতে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরলো। সুগন্ধা মির্জা প্রথমেই পারিজার প্রসঙ্গ টেনে কথার সূচনা করলেন। ওয়াহেদ বিরক্তির দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে দ্রুত প্রস্থান করলো। সুগন্ধা মির্জার স্বামী আলী আকবর খান। নিজের স্ত্রীর মুখে বিস্তারিত ঘটনা শুনেই চমকে উঠলেন। ওয়াহেদের মুখখানি দেখে একবার বুঝতে পেরেছিলেন বাড়িতে কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু, ঘটনা যে এতদূর গড়িয়েছে তা কে জানতো! সুগন্ধা মির্জা নিজের স্বামীকে অশান্ত গলায় বললেন,
— তা কী বলো? মেয়েটাকে বাড়িতে রাখলে তো আর মানসম্মান থাকবে না। পাড়ার লোকে ছিছি করবে। কাল সকালেই বাক্স প্যাটরা গুছিয়ে বিদায় করে দেই কী বলো? ছেলে আমার সোনায় সোহাগা। পাত্রীর কোনো অভাব হবে না। কত মেয়ে মুখিয়ে আছে আমার এই ছেলের জন্য। ”

আলী আকবর কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে ভাবলেন। তারপর বললেন,
— বাড়ি থেকে বিদায় করলেও আরেক ঝামেলা বাঁধবে। লোকে বলবে শশুড় শাশুড়ির অত্যাচারে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তারচেয়ে বরং, মেয়েটাকে বাড়ির ঝি এর মতো রাখো। কাজ করবে খাটবে। পরে আমি ওয়াহেদের আরেকটা বিয়ে দেবো। আপাতত এটা নিয়ে আর ভেবো না। ঘরের জিনিস ঘরেই থাকুক। মেয়ে মানুষ বড় নিন্দুকে জাত। বাইরে গিয়েও আমাদের নামে নিন্দা করবে।”

সুগন্ধা মির্জা মোটেও নিজের স্বামীর কথা একমত হতে পারলেন। ওই মেয়েটাকে চোখের বিষ লাগে এখন! যেভাবেই হোক সাতদিনের মধ্যে মেয়েটাকে ঝাঁটার বারি দিয়ে হলেও বিদায় করবে।

ওয়াহেদ ঘরে গিয়ে দেখলো পারিজা জেগে রয়েছে। ওয়াহেদ পারিজাকে না দেখার ভান করে ঘরে ঢুকলো। পারিজা ওয়াহেদের সামনে জল ভর্তি গ্লাসটা রাখলো। ওয়াহেদের মাথায় রাগে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। ওয়াহেদ উঁচু গলায় পারিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি তোমার কোনো দায়িত্ব নিতে পারবো না। আজ থেকে তোমার জন্য তোমার স্বামী মৃত। কখনো আর আমার আশেপাশে ঘুরবে না। আমি তোমাকে চিনি না। আমি তোমার স্বামী না। মা যদি তোমায় বাড়িতে রাখে। তবে সে রাখবে। না রাখলে সকালে আর তোমার মুখ যেন না দেখতে হয়।”

ওয়াহেদ এটুকু বলেই ওপাশ ফিরে শুয়ে পরলো। পারিজার চোখ দুটি থেকে নয়নজল গড়িয়ে পরলো। চাপা কান্নায় মুখোরিত হলো ঘরময়। কেউ ভাবলো না তাঁর কথা। নিজেদের স্বার্থে সবাই হিংস্র হয়ে উঠলো। রাগে মানুষের মুখ থেকে বের হওয়া কথাগুলো সত্যিই ভয়ংকর। খুব ভয়ংকর! অতএব একটি কোমল হৃদয়ে ব্যাথার সৃষ্টি হলো।

পারিজা ঘুম থেকে উঠেই স্নান সেরে বের হলো। ওয়াহেদ ওমুখো বসে পারিজাকে গম্ভীর গলায় বললো,
— মা অনেক ভেবেচিন্তে কাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তুমি এই বাড়িতে থেকে যাবে। এখন বিয়ের দুদিনের মাথায়ই তো বাড়ির বউকে ঘর ছাড়া করা যায় না। তোমাদের মতো মেয়েদের সম্মান নাই থাকতে পারে৷ আমরা তো আর সেসব করতে পারি না।”

পারিজা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ওয়াহেদের সামনে থেকে আসার সময় ওয়াহেদ পিছু ডেকে বললো,
— এত ধবধবে সাদা রঙের শাড়ি পরেছো কেন? সদবা মেয়েরা বুঝি এই রঙের শাড়ি পরে?”

পারিজা ওয়াহেদের দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— কেন তোমার কাল রাতের কথা মনে নেই বুঝি? তুমিইতো বললে।”

ওয়াহেদ অবাক হয়ে পারিজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
— কেন? কী এমন বলেছিলাম আমি?”

পারিজা নিজের সাদা শাড়িটার দিকে তাকিয়ে বললো,
— তুমিই তো বললে আজ থেকে তোমার স্বামী তোমার জন্য মৃত। বিধবা মেয়েদের পোশাক তুমি দেখনি বুঝি?বিধবা মেয়েরা তো এগুলোই পরে।”

ওয়াহেদের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। রাগে পারিজার দিকে তাকিয়ে দরজা খুলে গটমট করে বেড়িয়ে গেল সে। পারিজা ওয়াহেদের কান্ড দেখে এক দফা হাসলো। পুরুষ মানুষদের শিক্ষা দিতে হয় এভাবেই। কাল সারাদিন কম তো কথা শোনায়নি ওয়াহেদ তাঁকে। এটা ওয়াহেদের সেই কথার বাস্তব রূপ। সদবার স্বামী যদি আগেই বলে আজ থেকে তুমি বিধবা। তবে বিধবার বেশ নিতে আপত্তি কীসের ?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here