পারমিতা পর্ব ২

0
1156

#পারমিতা
পর্ব : ৹২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

এতো লাশটার আবারো পিরিয়ড শুরু হয়েছে।।।
এই দৃশ্য দেখে আরফান সাহেব এবার সত্যি সত্যি ঘাবড়ে গেলেন।

—স্যার,এবার কি করবো?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।(নার্স)

—আচ্ছা,তোমাদের ম্যাডাম কে কোনো খবর দিয়েছো,সে কোথায়?

—ম্যাম একটু বিজি আছেন,ওনাকে কল করেছিলাম, চলে আসবে হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যেই।

—ও আচ্ছা,গ্রেট জব।

ইতিমধ্যে অপারেশন থিয়েটারে মোটামুটি একটা ভিড় পড়ে গেছে,তবে কোনো বাইরের লোক নয়।
অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার নার্সরা যারাই খবরটা শুনেছে সবাই ছুটে এসেছে।

সবাই বিষ্ময়ে হতাক,কারো মুখে কোনো কথা নেই।মেডিকেল সায়েন্স কখনো রোগীদের কোনো পরিস্থিতিতে হতাশ হয় না বা ভেঙে পড়েন না।এই এই ঘটনা যেন সবাইকে ভরকে দিয়েছে,কেউ কিছু বুঝেই উঠতে পারছে না।

হঠাৎ ভিড় ঠেলে ডাক্তার আকাঙ্খা জামানের প্রবেশ ঘটে।

—কি হয়েছে?ওয়ার্ক টাইমে সবাই এভাবে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

সবাই সরে গিয়ে আকাঙ্ক্ষা জামানকে পথ করে দিলো।

—দেখো তো,কেইস টা কি?সেই তখন থেকে কনটিউয়াসলি মেনস হয়ে যাচ্ছে,আমি বুঝতে পারছি না কিচ্ছু।

আরফান সাহেবের কথা শুনে আকাঙ্খা জামান ডেডবডির কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন,ভদ্রমহিলা নিজেও খানিকটা ভরকে গেলেন এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখে।

—ও মাই গড!এটা কিকরে হলো,আচ্ছা তুমি আমায় আরো আরো আগে নক করলে না কেন?

নিজের স্বামী আরফানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তিনি।

আরফান সাহেব আর আকাঙ্খা এরা দুজনেই একসাথে এই হসপিটালে চাকরি করে,তারা সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী।
তাদের বিয়ে হয়েছে ছয় বছর।বৈবাহিক জীবনে বেশ সুখী দম্পতি এই দুজন।

—-আমি কখন নক করবো।আমি নিজেও এইমাত্র আসলাম এখানে।(আরফান সাবেব)

—আচ্ছা আমরা কিছু চেক করে নেই,এমনো হতে পারে,ভদ্রমহিলা লাইফ সাপোর্ট আছে এখনো।

—কিন্তু সেটা সম্ভব নয় ম্যাডাম।স্যার নিজে মৃত ঘোষণা করেছেন ওনাকে।
(একজন নার্স।)

—একটা ডেডবডির পিরিয়ড হবার থেকে তার বেঁচে থাকাটা কি বেশী অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে তোমার কাছে?

নার্সকে বেশ কড়া স্বরে প্রশ্ন আকাঙ্খার।

তার এই প্রশ্নে চুপ হয়ে গেলো সবাই।এমনকি আরফান সাহেব ও তার স্ত্রীর ওপরে কথা বলতে পারলেন না।

এরপর ডেডবডি অর্থাৎ পারমিতার শরীরে সকল ধরনের চেক করা হয়,তার শরীরের সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে টেস্ট করা হয়।

যদি তার দেহের ভেতরে ১%ও বেঁচে থাকার কোন লক্ষন পাওয়া যায়।
কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না,,,,,

শেষ পর্যন্ত আকাঙ্খা জামান নিজেও মেনে নিলেন যে ওটা সত্যি পারমিতার লাশ।
সে আর বেঁচে নেই পৃথিবীতে,
কিন্তু তার পিরিয়ড হবার ব্যপারে এখনো চিন্তিত সে।
কিছুতেই নিজের চোখে দেখা দৃশ্যগুলো ভুলতে পারছে না সে,বার বার পিরিয়ডের দৃশ্য ভেসে উঠছে তার চোখে।

রাতের বেলা পারমিতার ডেডবডি পোস্টমর্টেম করা হবে।এখন তার সবরকমের অ্যারেঞ্জমেন্ট চলছে।
ডঃ আকাঙ্খা আর আরফান সিধান্ত নিলেন তারাও লাশ পোস্টমর্টেম এর সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে সবটা প্রতক্ষ্য করবেন।

আকাঙ্খা একটু রুক্ষ স্বভাবের মানুষ,,, হসপিটালের রোগীসহ ডাক্তাররা সকলে বেশ ভয় পায় তাকে,এমনকি তার সিনিয়র ডাক্তারেরাও তার ওপরে কথা বলেন না।
যদিও তার অনেক উপযুক্ত কারণ আছে।
কারণ বুদ্ধি বিবেচনা আর সিধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে তার জুরি নেই,তাই সবাই বেশ মান্য করে তাকে, তার সিধান্তের ওপর প্রশ্ন তোলার সাহস নেই কারোর।

নিজের কোনো ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র স্ত্রীর কথায় রাজি হলো আরফান সাহেব।
তাছাড়া আকাঙ্খাকে একলা ছেড়ে দিতেও মন সায় দিচ্ছে না তার,তার ওপরে পোস্টমর্টেম কেইস।

রাতে পারমিতার লাশ মর্গে নিয়ে আসা হয়।
একটু পরেই তার পোস্টমর্টেম শুরু হবে।
তখন সাড়ে বারোটা বেজেছে।
একজন ডাক্তার পারমিতার লাশের পাশে নিজের ইন্সট্রুমেন্টস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

একটু দুরেই দাঁড়িয়ে আছে আকাঙ্খা আর আরফান সাহেব।

তারা নির্দেশ করতেই সে তার কাজ শুরু করে।

এতোক্ষণে লাশের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছে।

আকাঙ্খা লক্ষ্য করলো ডাক্তার নিজের কাজ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।

—-কি ব্যাপার,আপনি থেমে গেলেন কেন??কি হয়েছে?

—ম্যাডাম, স্যার একটু এদিকে আসুন,আরো কাছে আসুন।

—কেন কি হয়েছে,

—আগে আসুন না তারপর বলছি।

আরফান সাহেব আকাঙ্খা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো পারমিতার লাশের দিকে।

—দেখুন স্যার,এর শরীরের রক্ত তো এখনো বেশ গরম। জমাট বাঁধে নি।

—তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে,ডেডবডির রক্তের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে কিকরে??

—আচ্ছা আপনারা নিজেরাই দেখুন না।

আরফান সাহেব এগিয়ে বললেন – ওকে আমি দেখছি।তুমি এখানে দাঁড়াও।

একটু পরে নিজের স্ত্রীকে উদ্বেগজনক স্বরে ডাকতে লাগলো সে।

—আকাঙ্খা দেখো,ও মাই গুডনেস।এটা কিকরে পসিবল।এর রক্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আছে দেখছি।

—কী বলছো,কই আমি দেখি তো।

আকাঙ্খা কোনো কিছু নিজের চোখে পরখ না করে বিশ্বাস করতে পারে না,এটা তার একটা স্বভাব বলা যায়।

সেও দেখলো তার স্বামী আর ডাক্তারের কথা পুরোপুরি সঠিক।

কিন্তু একটা মৃত মানুষের প্রথমে পিরিয়ড হওয়া,তারপর তার রক্ত সচল থাকা।।

সবকিছু তালগোল পেকে যাচ্ছে।

—এ কোন ঝামেলায় ফেঁসে গেলাম স্যার?এখন কি করবো।কাজ বন্ধ করে দেবো কি?

—কাজ কেন অফ থাকবে,আর দেখুন আপনি একদম ভয় পাবেন না,আমরা তো আছি।আপনি আপনার কাজ শুরু করুন।
আর যাই হয়ে যাক না কেন থামবেন না।
ওকে?

—ওকে ম্যাডাম।আজ আপনারা না থাকলে সত্যি ভয়ে মরেই যেতাম আমি।

—আচ্ছা,কাজ করুন।

ডাক্তার আবারো তার কাজ শুরু করে দিলো।

আকাঙ্খা এবং তার স্বামী আরফান আবারো দূরে সরে আসলো।

দুজনে ফিসফিস করে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে থাকে।

ডাক্তার নিজের কাজ করছে আর বারবার তাদের দিকে তাকাচ্ছে,আবার চোখে চোখ পড়তেই সে নিজের কাজে মনযোগ দিচ্ছে।

একটু পরে ডাক্তারের আতংকজনক কন্ঠস্বর ভেসে আসলো আবারো।

—স্যার একটা শিশি!

এবার সত্যি তাদের স্বাভাবিক মেজাজ বজায় রইলো না,নিজেদের সংযত রাখতে পারলো না তারা।

—আচ্ছা, আপনি না অটোপসি স্পেশালিস্ট। লাশ কাটাকাটি করা আপনার কাজ।এইভাবে সব ব্যাপারে আঁতকে উঠছেন কেন?

—আমি এখানে কাজ করতে পারবো না।। আমি পোস্টমর্টেম করতে পারবো না।(ভয়ার্ত কন্ঠে ডাক্তার বলে উঠলো )

—কাজ করতে পারবে না,কেন??

—এই শিশিটা!

—হ্যাঁ,, শিশিটা তো বেশ ছোট। এটা কোনোভাবে ভদ্রমহিলার পেটে ঢুকে গিয়েছিলো,
বা ঢুকানো হয়েছে।যাই হোক না কেন,আপনি কাজ করুন আপনার।

—স্যার-ম্যাডাম,আপনারা দয়া করে শিশিটা দেখুন।আমার মাথা কাজ করছে না।

—হ্যাঁ,দেখে তো পয়জনের শিশি মনে হচ্ছে।তোমার আকাশ থেকে পড়ার মতো কি এমন আছে এটাতে?

—কি আছে,আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন।

ডাক্তারের থেকে শিশিটা হাতে নিলো আকাঙ্খা।

শিশিতে খোদাই করা উৎপাদন তারিখ দেখে দুজন দুজনের চোখের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাতে লাগলো।আতংকে তাদের দুজনের হাত পা কাঁপতে লাগলো!

শিশিটা দুই একমাস বা দুই এক বছর আগের নয়,আজ থেকে দীর্ঘ নয় বছর আগের!
বেশ মারাত্মক একটা পয়জন।বেশ কিছু মারাত্মক কারনে এটা ৯ বছর আগেই সরকার নিষিদ্ধ করে দেয়।তারপর আর এই পয়জন তৈরী হয় নি বা বাজারে আসে নি। যা বেঁচে ছিলো সব নষ্ট করে দেয়া হয়েছিলো।।

কিন্তু এতো পুরনো শিশি এই ডেডবডির ভেতরে এলো কিকরে?

তার মানে এটা ৯ বছর আগের কোনো লাশ!😲পারমিতা আজ বা কাল নয়, দীর্ঘ নয় বছর আগে মৃত্যু হয়েছে তার।
কিন্তু এতোগুলো বছর পরেও তার শরীর অক্ষত আছে কিকরে,এমনকি তার বডির ভেতরটা এখনো সচল!

এটা আদৌ লাশ নাকি অন্য কিছু?না সম্পূর্ণ বেঁচে আছে,না মরে গিয়েছে!
কে এই পারমিতা?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here