পারমিতা পর্ব ১২

0
660

#পারমিতা
পর্ব—১২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—-সেই রাত ছিলো আমার মায়ের জন্য সবচেয়ে বিভীষিকাময় রাত।মা ট্যাক্সি ধরে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।ঠিক সেই সময় জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা একদল দূর্বৃত্ত ট্যাক্সির ওপর অ্যাটাক চালায়,ড্রাইভার গাড়ি থামাতে বাধ্য হয়।
এরপর তারা আমার মায়ের আর ড্রাইভারের থেকে সমস্ত টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়,
সর্বস্ব লুট করার পরে তারা চলেই যাচ্ছিলো, হঠাৎ দুর্বৃত্তদের ভেতরে কোনো একজনের মাথায় একটা ভয়ানক কুবুদ্ধি আসে।
সে তার দলের অন্যদের সাথে পরামর্শ করে,
তারা সবাই মিলে আমার মাকে সেই গাড়ির ভেতরে ধর্ষণ করে।
দুর্বৃত্তদের দলে পাঁচজন লোক ছিলো,তাদের একজন বাদে সবাই পালাক্রমে মাকে ধর্ষণ করে।

আমার অসহায় মায়ের ওদের হাতে নিজের সম্ভ্রম হারানো ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না, একলা,অশক্ত অবস্থায় কতগুলো মানুষরুপী পশুর অত্যাচার সহ্য করে সে।

এরপর এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে,পেপার পত্রিকায় মাকে নিয়ে হেডলাইন বের হলো।
“দুর্বৃত্তদের হাতে এক বেসরকারী অফিস কর্মচারী ধর্ষণ “!

প্রচুর ফেস লস হয় আমার মায়ের আর তার গোটা ফ্যামিলির।

কিন্তু এতোকিছুর পরেও সব ঠিকঠাক ছিলো,
চার মাস পরে আর কোনো কিছু ঠিক রইলো না।
মা জানতে পারে সে চার মাসের প্রেগনেন্ট।
পরিবারের সবার মাথায় হাত।
চার জন সাথে সেদিন শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে আমার মায়ের!

তার ভেতর কার সন্তান মা নিজের গর্ভে বয়ে বেড়াচ্ছে সে নিজেও জানতো না,আর সেটা এভাবে জানা বা বোঝা সম্ভব ও নয়।

আমার ভাগ্যটা দেখো,আমি এমন একজন মানুষ ছিলাম যে কিনা নিজের জন্মপরিচয়টুকু জানি না,বাস্তবে আমার বাবা কে,আমার জন্মদাতা কে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আজানা ছিলো আমার কাছে।আমি এখনো জানি না,কার ঔরসে সেদিন জন্ম হয়েছিলো আমার, আর সেটা জানতে পারলে কি এমন সুখকর হতো আমার জন্য বলো।

(আকাঙখার চোখ জোড়া জলে ছলছল করছে)

—তারপর?

—তারপর মায়ের অফিসের বস,তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বেশ ভালো মনের অধিকারি একজন মানুষ ছিলেন।যেহেতু তার অফিসের কর্মচারী একটা দূর্ঘটনা কবলিত হয়েছে,অফিসের বস হিসেবে সেদিন রাতে উচিত ছিলো তার মহিলা কর্মচারীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা,সেদিন অফিসে অযাচিত লেট না হলে হয়তো এমন কোনো ঘটনা ঘটতোই না,একারনে সে প্রথম থেকেই মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের জন্য নিজেকে,নিজের অফিসকে দায়ী মনে করতেন,
এরপর যখন মায়ের প্রেগন্যান্সির কথা সবার সামনে আসে তিনি নিজের অনুতাপ বোধ থেকে মায়ের দরজায় এসে হাজির হন।
ভদ্রলোক নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার কথা ভেবে মাকে তার পরিবারের কাছে বিয়ে করার প্রস্তাব রাখেন,যাতে মায়ের জীবনটা নষ্ট না হয়ে যায়।

তিনি নিজের পরিবারের অসম্মতিতে মাকে বিয়েও করে নেন,এরপর সোজা মাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে উপস্থিত হন।রকমারি সকল গল্প এবং দেশী বিদেশী মুভির খবরাখবর সংক্রান্ত “Movie and stories fans group”এ জয়েন করুন।বাড়ির অন্যান্যরা তাদের দুজনকে মেনে নিলেও বাধ সাধলেন আমার মায়ের শ্বশুর,অর্থাৎ আমার বর্তমান দাদু।

তিনি কিছুতেই মাকে মেনে নিতে পারেন নি,আর আমাকে মেনে নেবার কোনো প্রশ্নই ছলো না, পুরোটাই আমার মায়ের মুখে শোনা।
দাদাভাইয়ের সমস্ত সমস্যা ছিলো আমায় নিয়ে,অন্যের করা পাপের ফসল কেন তার ছেলে বাড়ি বয়ে নিয়ে এসেছে এটাই ছিলো তার আসল রাগ,ঘৃনা,অভিযোগ সবকিছুর মূল কারণ।
মায়ের থেকে এটাও শুনেছি আমার জন্মের পরে নাকি তিনি আমায় হাসপাতালের এক নার্স মারফত অন্য কোথায় সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে,যদিও তিনি সেইবার সফল হন নি।

এরপর ধীরে ধীরে আমি তার দুচোখের বিষ হয়ে তার চোখের সামনে বড়ো হয়ে উঠতে থাকি,আমার ছোট ভাই ঐতিহ্যর জন্ম হয়।
ঐতিহ্য জন্মের কিছুদিন পরেই বাবা মারা যান, তিনি আমার সাথে কোনোদিন সৎ বাবার মতো আচরণ করেন নি,নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করে তোলেন আমায়।তিনি কোনোদিন বুঝতে দেননি আমায় যে আমি তার নিজের মেয়ে নই।

বাবা মারা যাবার পরে আমাদের বিজনেস কোম্পানীটাও বন্ধ হয়ে গেলো,দাদাভাইয়ের আক্রোশ এতটুকুও কমেনি তখন পর্যন্ত আমার ওপর থেকে।

উনি কখনোই আমায় ভালো চোখে দেখেন নি, সবসময় খারাপ ব্যবহার করতেন আমার সাথে,আমার কোনো মূল্য ছিলো না তার কাছে কোনোদিন।

সেদিন মায়ের সাথে ওনাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে যাই আমি,এই নয় বছরে উনি অনেকটাই পাল্টে গেছেন।সেদিন আমার জন্য কান্না করতে দেখেছি আমি তাকে।হয়তো এতোবছরে নিজেকে শুধরে নিয়েছেন তিনি।

আচ্ছা,এবার বলো তুমি এগুলো কেন জিজ্ঞেস করছো আমায়,এর সাথে আমার মৃত্যুর কি কোনো সম্পর্ক আছে?

—হ্যাঁ,আছে।

—আছে!কি বলছো তুমি?

—এতোক্ষন আমার ডাউট ছিলো,কিন্তু এখন আমি পুরোপুরি নিশ্চিত।তোমার মৃত্যুর সাথে তোমার দাদাভাইয়ের কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে!
আচ্ছা,তোমার কি একবারো মনে হয় না,তোমায় খুনটা উনিই করিয়েছেন?

—-না,না।এটা কি বলছো তুমি?
উনি আমায় যতোই অপছন্দ করুক না কেন,আমার সাথে এমন একটা কাজ করবেন এটা কিছুতেই বিশ্বাস করি না আমি।

আমায় মারার হলে অনেক আগেই মারতে পারতেন উনি,ছোটবেলায় এই কাজটা করলেন না কেন।
যখন আমি বিয়ে করে তার চোখের দূরে চলেই যাচ্ছিলাম তখন কেন ওনার আমাকে খুন করার কথা মাথায় আসবে?
সেটা করে কি লাভ হতো তার?বলো আমায়?

পারমিতার কথায় সত্যি যুক্তি আছে,এতোগুলো বছর পরে তার হঠাৎ নিজের নাতনীকে খুন করার কথা মাথায় আসবে!এই কাজ করার থাকলে সে আগেই করতে পারতো।

—কি হলো তুমি চুপ হয়ে গেলে কেন,কিছু বলছো না যে।

আকাঙখা কি উত্তর দেবে নিজেও বুঝতে পারছে না,সে আর স্বপ্নেও ভাবতে চায় না পারমিতার মৃত্যুর সাথে আরফান দায়ী,যদি সত্যি আরফান দায়ী হয় সেই ভয়ংকর সত্য কিছু মেনে নিতে পারবে না আকাঙখা।
এদিকে পারমিতার দাদুর হঠাৎ অ্যাটাক করতে আসা।সেই বা কেন এই কাজ করতে গেলো?

আরফান যদি সম্পূর্ণ নির্দোষ হয় পারমিতার পরিচয় কেন সে লুকিয়ে রেখেছে এতোবছর ধরে।কিসের এতো ভয় তার?

একবার নিজের স্বামী,আবার আরেকবার পারমিতার দাদাভাই!

আকাঙখার মাথায় যেন কেউ শতটন ওজনের পাথর চাপিয়ে দিয়েছে,তার মাথা কাজ করছে না। কাকে সন্দেহ করবে কাকে বিশ্বাস করবে নিজেও বুঝতে পারছে না।

কিন্তু কাউকে সন্দেহ করার ভেতরে তো অন্যায় নেই,নিজেকে আরো শক্ত করতে হবে আকাঙখার,পারমিতার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন করে হবে তাকে,তার জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে এতো ভাবলে চলবে না।
তাছাড়া আরফান সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট কাজ করেছে,তার ওপর তো এমনি এমনি সন্দেহ সৃষ্টি হয় নি আকঙ্খার।

—দেখো ভাবতে অপ্রিয় হলেও এটা সত্যি,তোমার মৃত্যুর জন্য আমি বিশেষ দুইজন মানুষকে সন্দেহ করছি।
এখন সময় এসেছে তাদের পরীক্ষা করার।
এই কাজে তুমি সাহায্য করবে আমায়।
আজ রাতেই প্রমান হয়ে যাবে,তোমার আসল খুনি কে?

কে,তোমাকে সেদিন রাতে নির্মম ভাবে খুন করিয়েছে,কি উদ্দেশ্যে ছিলো তার?
আজ রাতেই সবটা পরিস্কার হবে।আমার শুধু তোমার হেল্প দরকার।

—আমি তোমায় আমার সর্বশক্তি দিয়ে সাহায্য করবো,আজ একটা কথা মনে হচ্ছে আমার বার বার।আমি মরে গিয়েও নিজের বুদ্ধি বিবেচনা বোধ হারাইনি,একদম সঠিক মানুষটাকে বেঁছে নিয়েছি আমি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here