পানপাতার ঘর? পর্ব ৯+১০

0
727

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ০৯-১০
লেখা – Mahfuza_Monira

উদয় কে নিয়ে মিশি বারান্দায় আসে। একটা ছোট্ট টবে ঘাসফুল লাগানো। উদয় মিশিকে তা দেখিয়ে বলে-
– ঘাসফুল কেউ টবে লাগায়!?

মিশি মৃদু হেসে বলে-
– প্রকৃতি যখন তার ছোট ছোট জিনিসে এত বড় বড় সৌন্দর্য দিয়েছে তবে কেন তা উপেক্ষা করা? আমার তো ঘাসফুলই পছন্দ। ভীষণ পছন্দ।

উদয়ও একপলক চেয়ে দেখে সেই ফুল গুলোর দিকে। হুট করেই তার মনে হয় এই পৃথিবীতে ঘাসফুলের চেয়ে সুন্দর আর কোনো ফুল নেই।

মিশি আবারো বলে-
– সব কিছুই সুন্দর। সবকিছুই। শুধু আমাদের দেখার ধরন ভিন্ন।

বারান্দার একপাশে ছোট বেতের সোফা পাতা। মিশি গিয়ে সেখানে বসে। হাতে থাকা লাঠি চকলেট আয়েশ করে খাওয়া শুরু করে। উদয় মিশির দিকে তাকায়। ছোট্ট একটা মেয়ে,চুলগুলো তার খোলা,হেলে দুলে চকলেট খাচ্ছে! উদয়ের একমুহূর্তের জন্য আশেপাশের সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে যায়। সে অপলক দৃষ্টিতে মিশির দিকেই তাকিয়ে থাকে। অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে-
– এর থেকে সুন্দর দৃশ্য আর হতে পারেনা!

উদয় কে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিশির খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। উদয়ের সামনে তুরি মেরে বলে-
– এভাবে কি দেখছিস?

উদয় মাথা দোলায়।
– নাহ,কিছু না।

মিশি মুচকি হাসে। সোফার একপাশে সরে গিয়ে বলে-
– এইখানে আয়। বস।

উদয় বসতে বসতে বলে-
– আচ্ছা আমরা তো এখন জিএফ বিএফ। তাহলে এখনো কেন তুই তুকারি? তুমি করে বলবা আমায়। বুঝছো?

মিশি মুখ বাকিয়ে বলে-
– ঢং! এতদিন তো বুঝতাই না আমার ভালোবাসা আর এখন কত্ত ঢং!! ঢং ঢং ঢং!

উদয় আঙুল উঁচিয়ে বলে-
– একদম ঢং ঢং করবা না। বললাম তো,আমি গাধা বলদ তাই বুঝিনি। এখন তো বুঝছি নাকি…!

মিশি আবারো মুখ বাকিয়ে বলে-
– যাক,অবশেষে স্বীকার তো করলা যে তুমি একটা গাধা,বলদ। আরো আছে তো। হাতি,টিকটিকি,কুত্তা,বিলাই,ছাগলের গু আর পঁচা কুম….

মিশি বাকি টুকু বলার আগেই উদয় তার মুখ চেঁপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে-
– চুপ চুপ,একদম চুপ। বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু মিশি…!

মিশি এক ঝটকায় উদয়ের হাত সরিয়ে দেয়। উদয়ের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে চেয়ে বলে-
– এখনো মিশি? হাদারাম রে…
প্রেমিক প্রেমিকাকে জান সোনা এসব বলে হুহ!

উদয় খুক খুক করে কেশে উঠে। বিরবির করে বলে-
– প্রেমে এত কেন জ্বালা!

মিশি স্পষ্ট শুনতে পায় কথাটা। উদয়ের দিকে একটু ঝুকে চোখ রাঙিয়ে বলে-
– কি বললা তুমি?

উদয় ঠোঁট কামড়ায়।
– ইয়ে মানে..বলছিলাম যে জান। আমি তোমাকে টিমটিম নামে ডাকবো ওকে?

মিশি ভ্রু নাঁচায়।

– টিমটিম? এটা কেমন নাম!

উদয় বুক ফুলিয়ে বলে-
– ভালোবাসার নাম মেরি জায়ায়ায়ায়ান…!

মিশি উদয়ের কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে। উদয় ও ফিক করে হেসে ফেলে। উদয় মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে-
– তবে একটা কথা কি জানো! প্রেমিকা বা বউ প্রাণী হলো ভীষণ ভালো প্রাণী। এরা যখন বলে “কি বললা” এর মানে এই না যে এরা শুনে নাই। এরা শুনেও প্রেমিক বা হাজবেন্ড কে একটা চান্স দেয় কথা ঘুরিয়ে ফেলার। হে হে হে…!

উদয়ের হে হে হে টাইপ হাসি মিশির গায়ে জ্বালা ধরায়। মিশি আঙুল উঁচিয়ে বলে-
– একদম ছ্যাবলা মার্কা হাসি হাসবা না! মশা.!

উদয় এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে-
– আমি মশা?

মিশি মুখ বাকিয়ে বলে-
– তো আবার কী!

উদয় মিশির থুতনিতে হাত দিয়ে বলে-
– তবে তো মশার মতো কাজ টা সেরেই ফেলতে হয়..!

মিশি চোখ বড়বড় করে ফেলে।
বলে-
– কি কাজ..!

উদয় দুষ্টমিপণা হাসি দিয়ে বলে-
– ঐ যে,মশা তো সারাদিন চুমাচুমি করে। আমিও এবার তোমাকে……

মিশি উঠে দাঁড়ায়।
ঘরের দিকে পা বাড়াতে নিতেই উদয় তাকে ধরে ফেলে। টান মেরে নিজের কোলে বসিয়ে বলে-
– কই যাচ্ছো সুন্দরী! আজকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কেউ না। হাহ হাহ হাহ!

মিশি ও উদয়ের মতো অভিনয় করে বলে-
– প্লিজ,আমায় যেতে দিন চৌধুরী সাহেব। আমার এত বড় ক্ষতি আপনি করিয়েন না। আমায় যেতে দিন…!

হঠাৎ রুমের ভেতর কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দে উদয় মিশি কে আলগা করে দেয়। মিশি সাথে সাথে উঠে রুমের ভেতরে ছুটে যায়। উদয় ভয়ে ঘামছে। কেউ আবার আসলো না তো! দেখে ফেললো না তো!

উদয় স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকে সেখানেই। খানিকবাদে মিশি এসে বারান্দার দরজা দিয়ে উঁকি মেরে বলে-
– ভেতরে আসবেন না জনাব? আমার বিড়াল মিনি ছিল ওটা…! হা হা হা। কী ভীতু!

উদয় হাফ ছেড়ে বাঁচে যেন। যাক কেউ দেখেনি তাহলে। পরক্ষণেই উঠে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে বলে-
– কে ভীতু! আমি তো অভিনয় করছিলাম ভয় পাওয়ার। এই উদয় কাউকে ডড়ায় না। ডড়াইলে কি আর চেয়ারম্যান এর মাইয়ার লগে প্রেম করতাম?

মিশি ভ্রু নাচিয়ে বলে-
– হুম। তা অবশ্য ঠিক বলেছো। কিন্তু তাই বলে তো আর বিশ্ব সাহসীর খেতাব পেয়ে যাওনি! এবার ভেতরে আসো। আমার অনেক অংক বাকি রয়েছে। বুঝিয়ে দিবা।

উদয় ভেতরের ঘরে আসতে আসতে বলে-
– আরে অংক রে! প্রেমের আগেও ডিস্টার্ব ছিল এখনো ডিস্টার্ব করে!

মিশি কিছু না বলে শুধু মুচকি মুচকি হাসে।
.
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো উদয় মিশির রুমে ঢুকেছে। এখনো আসছে না! করছে টা কী ভেতরে…!

বকর মোল্লা ধিমি পায়ে এসে মিশির রুমের সামনে দাড়ান। দরজা টা হালকা করে ভেজানো। বকর মোল্লা উঁকি দিয়ে দেখেন মিশি আর উদয় দুজনেই মন লাগিয়ে পড়াশোনা করছে।
বকর মোল্লা খুশি হন। উদয় ছেলেটাকে বরাবরই তার ভীষণ পছন্দ। ছেলেটা যেমন মেধাবী তেমনি তার আদব কায়দা। বকর মোল্লা মনে মনে ভাবেন-
– এরকম একটা ছেলেকেই যেন সে পায়,তার মিশি মায়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য!
.
.
– তুমি তো এই জায়গায় ভুল করেছো। এভাবে হবে না তো। আমায় দাও,আমি করে দিচ্ছি।

মিশি উদয়ের কাছ থেকে অংক খাতা টা নিয়ে নেয়। উদয়ের করা ভুল অংশ টুকু সে ঠিক ভাবে সমাধান করে। উদয় তা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিশির দিকে।
মিশি অংক করা শেষে উদয়ের দিকে খাতা বাড়িয়ে দেয়। খেয়াল করে উদয় অবাক হয়ে দেখছে তাকে। মিশি বুঝতে পারে।
মুচকি হেসে বলে-
– বিএফ অংকে এক্সপার্ট। তাহলে জিএফ কেমনে অংকে ফেইল মারে…!? তাই আমিও চেষ্টা করছি। তুমি খুশি হওনি?

উদয় উঠে এসে মিশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে-
– অনেক অনেক অনেএএএএএএক….
খুশি হইছি…..
– আরেহ! ছাড়ো তো। কেউ এসে পড়বে। অংক করায় মন দাও। অংকের সময় নো রোমান্স নো প্রেম!

উদয় ভরা গলায় বলে-
– জ্বি ম্যাম। কমান্ড এক্সেপ্টেড।

হঠাৎ মিশির মা রুমে ঢুকে। উদয় মিশি অংক করায় ব্যস্ত তখন।
মিশির মা মুখ বাকিয়ে বলে-
– অংক যখন হয় না তোর দ্বারা তখন কেন অংক করিস! যাক গে,যে কথা বলতে এলাম। তোর বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শেষ। কবে বিয়েটা করবি তাই বল…

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ১০
লেখা – Mahfuza_Monira

– ছেলে! কার জন্য ছেলে দেখা শেষ?

উদয় হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে। নতুবা বেগম এগিয়ে এসে মিশির পাশে দাঁড়ায়। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-
– আমার একমাত্র মেয়ের জন্য আমি একটা লক্ষী টুকটুকে বর দেখে রেখেছি।

মিশি বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে-
– টুকটুকে তো বউ হয়! বর না মা।

নতুবা বেগম আমতাআমতা করে বলেন-
– হলেই হলো একটা। তুই বল তুই কবে বিয়েটা করতে রাজি?

উদয় মিশিকে উদ্দেশ্য করে অবাক কণ্ঠে বলে-
– তুমি মানে তুই বিয়ে করছিস মানে! মানে টা কী মিশি!?

মিশি ভাবে এই সুযোগ। একটু জ্বালিয়ে নেওয়া যাক উদয় কে।

মিশি নতুবা বেগম এর গা ঘেঁষে বলে-
– হুম আমি বিয়ে করছি। মানে করবো আর কী! কেন? সমস্যা কী? তুই কি চাস আমি বিয়ে করবো না?

উদয়ের মন ছোট হয়ে যায়। মেয়েটা কী তার সাথে মজা করছে নাকি!

উদয় জবাব না দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার। কিছুক্ষণ আগেও তো মনে হলো জীবন কত সুন্দর। আর এখন মনে হচ্ছে,এই রকম জীবন না থাকাই শ্রেয় যেখানে ভালোবাসা শুরু হতে না হতেই বিরহ…!

মিশি আড়চোখে তাকায় উদয়ের দিকে। মুখে তার টিপটিপানি হাসি। উদয় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এরপর নিচু হয়ে টেবিল থেকে তার বই খাতা তুলে নেয়। রুম থেকে চলে যেতে নিলেই মিশি বাধা দিয়ে বলে-
– কোথায় যাচ্ছিস?

উদয় গম্ভীর গলায় বলে-
– নিজের বাসায়। তোর তো বিয়ে করার শখ জেগেছে। তোকে অংক করিয়ে কি করবো আর! বায়।

মিশি মৃদু হেসে উদয়ের হাত থেকে তার বই খাতা কেড়ে নিয়ে আবার টেবিলের উপর রাখে।

– চুপ করে বস এখানে। আমি অংক শিখবো।

নতুবা বেগম তাড়া দিয়ে বলেন-
– আহহা! এখন আবার অংক কেন? কত কাজ পড়ে আছে বিয়ের! কত কেনাকাটা করা লাগবে। আবার বিয়ের ডেইট টাও তো ফাইনাল করতে হবে নাকি?

মিশি উদয়ের পাশে বসতে বসতে শান্ত গলায় বলে-
– মা,আমি বিয়ে করবো কিন্তু এখন তো না।

মিশির কথা শুনে উদয় চমকালেও নতুবা বেগম বিরক্তিভরা গলায় বলেন-
– মানে? কবে করবি তাহলে? ১-২ মাস পর?

মিশি মাথা নাড়ায়।
– উঁহু। তাও না। আমি যেহেতু মেয়ে হয়েছি,তাহলে বিয়ে তো একদিন করবোই। তবে সেটা নিজের পায়ে দাড়ানোর পর। এখন কিসের বিয়ে! বয়সই বা কত আমার!?

নতুবা বেগম আবারো বিরক্ত হন।
– মানে তুই এখন বিয়ে টিয়ে করবি না?
– হুম। করবো না।

এবার নতুবা বেগম রীতিমতো রেগে যান। বাজখাঁই গলায় বলেন-
– মশকরা করছিস আমার সাথে? সকালে যে বললি ছেলে দেখতে!

মিশি খুব শান্ত গলাতেই বলে-
– ছেলেই দেখতে বলেছি! তবে এটা বলেনি এখনি বিয়ে করবো। ওকে? এবার যাও মা,আমি অংক করবো।

নতুবা বেগম রাগে গজগজ করতে করতে চলে যান রুম থেকে। কত বড় সাহস মেয়েটার! তার সাথে কিনা এত কাহিনি করে..!

মিশি মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসে। পরমুহূর্তেই উদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে উদয়ের মুখে লোডশেডিং।

মিশি ভ্রু উঁচিয়ে বলে-
– কি ব্যাপার? এখনো স্যাড হয়ে আছিস কেন?
– তুমি কি মশকরা করতেছো আমার আর আন্টির সাথে?
– যদি বলি হ্যাঁ..
– সিরিয়াসলি মজা করবা না। তোমার মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছে সত্যি করে বলো মিশি। প্লিইইইইজ…

মিশি উদয়ের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে-
– ওকে বলছি তো বাব্বাহ! কুল কুল। আসলে সকালে আম্মু জিজ্ঞেস করছিল,আমাকে বিয়ে দিবে কিনা! ছেলে দেখবে না। আমি তখন রাগ ছিলাম তোমার প্রতি। তাই রাগেই বলেছি দেখতে। কিন্তু এখন যেহেতু তোমায় পেয়েছি,এখন তো প্রশ্নই আসেনা অন্য কাউকে বিয়ে করার! তাই এত সব ড্রামা করলাম। আম্মুর কথা দিয়ে আম্মুকেই ফাঁদে ফেলে বিদেয় করলাম। নয়তো আমায় বিয়ে দিয়েই ছাড়তো… বোধহয়!

উদয় কুপাল কুঞ্চিত ভাঁজ করে বলে-
– চালাক মেয়ে!

মিশি হেসে বলে-
– হু তোমার বউ…
তবে একটা ব্যাপারে আমি রাগ করেছি তোমার উপর।

উদয় অবাক হয়ে বলে-
– কি ব্যাপারে?

মিশি মুখ গোমড়া করে বলে-
– আম্মুর সামনে হুট করে তুই করে বললে কেন আমায়!

উদয় মিশির মাথায় গাট্টা মেরে বলে-
– এত কিছু বুঝো,আর এটা বুঝো না? আন্টির সামনে তুমি করে বললে আন্টি সন্দেহ করতো না? তাই। আর তুমিও তো তখন আমায় তুই করে বলেছো।

মিশি কপাল ভাঁজ করে বলে-
– সেতো তুমি বলেছো তাই,আমিও বলেছি। শোধবোধ। হুহ!

উদয় মিশির নাক টেনে বলে-
– অনেক হয়েছে পাকনা পাকনা কথা। টেস্ট এক্সাম সামনে আসতেছে। এবার অংকে মনোযোগ দাও।
.
.
.
স্কুল ছুটি হলো কিছুক্ষণ আগে।
লিমা একা একা হেটে বাড়ি ফিরছে। তার মনে চলছে কালকে উদয়ের বলা কথা গুলো। যাক,শেষ পর্যন্ত ছেলেটা বুঝলো তো মিশির মনের কথা……!
লিমা আকাশের দিকে চেয়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে বলে-
– হে আল্লাহ,উদয় আর মিশির ভালোবাসা যেন সার্থক হয়। তাদের ভালোবাসার পরিনতি যেন আমার মতো না হয়।

মেঘের কথা মনে পড়ে যায় লিমার। মনে পড়ে যায় মেঘের সাথে কাটানো ছোট ছোট মুহুর্ত গুলো।
.
.
স্কুল থেকে বের হতেই লিমা মেঘ কে দেখতে পায়। বাইক নিয়ে বড় রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে। লিমা একবার আশেপাশে চোখ বুলায়। পরিচিত কেউ আছে কিনা!
নাহ নেই। রাস্তা ক্লিয়ার।
লিমা দৌড়ে মেঘের সামনে গিয়ে দাড়াতেই মেঘ বলে-
– বাইকে উঠো দ্রুত।
লিমা কিছু বলতে নিলে মেঘ আবারো তাড়া দিয়ে বলে-
– আহা! উঠো না। কথা বলো না তো।

লিমা আর কিছু বলে না। সে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে মেঘের বাইকের পেছনে উঠে বসে। মুখ টা স্কার্ফ দিয়ে বেধে নেয়। এরপর মেঘ কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।
লিমা ঠিকঠাক ভাবে বসতেই মেঘ বাইক নিয়ে টান দেয়। সর্বোচ্চ গতিতে চলতে থাকে তার বাইক। শাঁই শাঁই করে বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে লিমাকে। সে জানেনা কোথায় যাচ্ছে মেঘ তাকে নিয়ে। কিন্তু লিমার মনে ভয় নেই কোনো। মেঘ কে সে তার বাবার পরের নিরাপত্তার পুরুষ ভাবে।
.
.
একটা নদীর পাড়ে গিয়ে মেঘ বাইক থামায়। লিমা নেমে অবাক চোখে তাকায় আশেপাশে। খুব সুন্দর নদীর পাড় টা। এর আগে তো এই নদী সে দেখেনি! এছাড়াও আশপাশ টাও ভীষণ চুপচাপ। দূরে দূরে দু একজন লোক চোখে পড়ছে।

লিমা মেঘের দিকে ফিরে বলে-
– এখানে আনলে যে!

মেঘ মুচকি হেসে বলে-
– চোখ টা বন্ধ করো তো।

লিমা ভ্রু উঁচিয়ে বলে-
– কিহ!

মেঘ নিজে এসে তার ডান হাত দিয়ে আলতো করে বন্ধ করে দেয় লিমার চোখজোড়া। তারপর বলে-
– যতক্ষণ না বলবো,খুলবে না।

লিমা মাথা কাত করে।

কিছুক্ষণ পরে মেঘ বলে-
– এবার খুলো।

লিমা চোখ খুলতেই তার চোখ কপালে উঠে। মেঘ তার সামনে হাটু গেড়ে বসে আছে। হাতে একটা পায়েল। মেঘ বলে-
– সবাই সবার ভালোবাসার মানুষ টিকে আংটি দেয়। আমি দিবো পায়েল। হবে আমার মেঘবতী?

লিমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কোনোমতে মাথা দুলিয়ে বলে-
– হু!

মেঘ পায়েল টাতে একটা চুমু খেয়ে লিমার পায়ে পড়িয়ে দেয়। লিমা ঈষৎ কেঁপে উঠে যেন। তার প্রতিটা হাড়ে হাড়ে কাপন ধরে…
.
.
পুরোনো সেই দিনের কথা মনে হতেই লিমার চোখে জল ছেপে উঠে। বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। চোখের কোণা মুছে নিয়ে সে আবার বাড়ি ফেরার পথে মনোযোগ দেয়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here