পদ্ম ফুলের অভিমান পর্ব ৩

0
786

#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 3)
#লেখীকা_নাফিসা_আনজুম

বাথরুম থেকে রুমে এসে এতোক্ষনে ঘটে যাওয়া কথাগুলো মনে পরতে লাগলো। হাতের যেখানে অভ্র ভাইয়া ধরেছিলো সেই জায়গাটার দিকে তাকালাম। কি এমন হতো যদি স্পর্শটা রিকোয়েস্ট এর না হয়ে ভালোবাসার হতো। এখানে ধরে বলছিলো, পদ্ম ফুল ভূল বুঝিও না,কিছু কথা আছে। কিন্তু কথাটা যদিও হতো পদ্ম ফুল আজ পালাবে কোথায়,আজ তোমাকে আমার ভালোবাসার কাছে হার মানতেই হবে।আবারো এসব ভেবে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।

ছিহ ছিহ এসব আমি কি ভাবছি। যে মানুষটা ঠ*ক প্র*তা*র*ক তাকে নিয়ে এসব ভাবছি আমি। না না আমি আর কিছুতেই ভাববো না এই মানুষটার কথা। এসব ভেবে চোখঁ মুছে বাহিরে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু আবারো আমার এই বে*হায়া মন ওনার কথাই ভাবতে শুরু করলো। দেখতে তো মাশাআল্লাহ সেই মানুষটার ভেতরে এমন কেনো। কিছুতেই ভূলতে পারছি না। না তো ঘৃ*ন্যা করতে পাচ্ছি। এমন কেনো হচ্ছে আমার। আমি কেনো ভূলতে পাচ্ছি না। কেনো বার বার হিং*সা হচ্ছে ঐ শুপ্তি নামের মেয়েটার ওপর। তাহলে আমি কি প*চাঁ
মেয়েদের মতো হয়ে গেলাম। যারা অনের স্বামীকে দেখে জ্বলে। না আমি তো এমন না। আমি কখনো ওদেরকে আলাদা করবো না। আমি কাল সকালেই চলে যাবো এখান থেকে। আমি আবারো চলে যাবো ঢাকায়। আর কখনো আসবো না নানু বাড়িতে। তাহলেই এই ঠ*ক প্র*তা*র*ক মানুষটাকে কখনো দেখবো না আর।

নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বাহিরে গেলাম। গিয়ে দেখি অনেকেই আছে,মামিরা রান্না করছে। আমার নিজের দুই মামি আর নানু, নানি এনারা এক জায়গায়। আর অভ্র ভাইয়ার আব্বু একাই আমার আম্মুর চাচাতো ভাই। অভ্র ভাইয়ার দাদু মারা গেছে দাদি আছে। মানে ওটাও একটা নানি হয়।বাহিরে যারা যারা ছিলো তাদের আর মামিদের সাথে কথা বলে ঐ নানির রুমের দিকে গেলাম।কাল সকালে উঠেই চলে যাবো। তাই আজ গিয়ে দেখা করে আসি। নানির ঘরে যেতেই নানি বললো,

-কে পদ্ম

-হ্যাঁ নানি, কেমন আছো

-ভালো আছি রে বুবু, তুই কেমন আছিস (নাতনিদের বোন সমন্ধ করে বুবু ডাকে)

-আমিও আছি ভালো

-আমি জানি রে বুবু, তুই ভালো নেই

-এসব কি বলছো নানি ভালো আছি তো আমি

-আমি আগেই জানতাম যে অভ্র দাদু ভাই আর তুই দুজন দুজনকে ভালোবাসিস। অভ্র অনেকবার আমার ঘরে এসেও কথা বলেছে। কিন্তু হটাৎ করে যে এমন একটা কাজ করে বসলো তা একদম ঠিক করে নি ও

কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছি জন্য নানি আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

আমারো ইচ্ছা ছিলো আমার পদ্ম ফুলের মতো একটা নাতবউ হবে, সেটা পদ্ম ফুল হলে তো কথায় নেই, যে সবার সাথে মিশবে,যার মধ্যে কোনো হিংসা নেই,কোনো কথা বললে হেয়ালি করবে না, দেখতেও পরীর মতো, সেই হিসেবে আমার পদ্ম যে একেবারে একশোতে একশো ছিলো।
কিন্তু তুই মন খারাপ করিস না বুবু, তোর ভাগ্যে রাজপুত্রের মতো একটা রাজকুমার আসবে। যে সাত সমুদ্র পারি দিয়ে তোকে নিয়ে যাবে তার রাজ্যে। কারন একটা কথা মনে রাখবি যে যেমন তার কপালে তেমনি জুটে রাখছে।

নানির কথাগুলো শুনে ভালো লাগছে,, কিন্তু আদৌও কি এমন কেউ আছে যে আমাকে আমার মতো করে বুঝবে। যে তার ভালোবাসা দিয়ে আমার কষ্টের দিনগুলি ভুলিয়ে দিতে পারবে। নাকি আমি কখনো ভূলতেই পারবো না অভ্র ভাইয়াকে। কিভাবে ভূলবো আমি যে এই মানুষটাকে মনের গহীন থেকে ভালোবেসেছি।

নানি: শোন পদ্ম,একটু আগে অভ্র আমার কাছে এসেছিলো। আমি অভ্রের চোখঁ, মুখ কথা বলা দেখে বুঝেছি যে ও ভালো নেই, কাউকে কষ্ট দিয়ে বেশিদিন ভালো থাকা যায় না। আমার নাতি বলে যে ওর গুন গাইবো এমন মানুষ আমি নই। আমি জানি তোকে হারিয়ে ও খুব বড় ভূল করেছে। মানুষের টাকা,পয়সা আজ আছে কাল নেই কিন্তু ভালোবাসার মানুষটা একবার হারিয়ে ফেললে তাকে ফেরানোর সাধ্য নেই। তাই যে থাকতে মূল্য দিতে পারবে না তার থেকে হারিয়ে যাওয়া অনেক ভালো।
তোকে শক্ত হতে হবে, কাঁদলে বা ভে*ঙে পরলে চলবে না,একজন সফল ডাক্তার হতে হবে তোকে।সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে কারোর জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। অধিক ভালোবাসার পর যদি মানুষটা না বোঝে তাহলে তাকে কোনোভাবে বোঝানো যাবে না। তখন তাকে ইগনোর করতে হবে,তাহলেই বুঝবে। ভালোবাসা কোনো পুতুল খেলা না যে যখন যাকে ভালোলাগলো তার সাথে করবো। আর বউ চাই সতি সাবিত্রী। এমনটা হবে না,যে স্বামী বিয়ের আগে অন্য মেয়ের কাছে যাবে,পরে দেখবে তার বউয়ের ও প্রেমিক ছিলো।তখন সে নিজের ভূল বুঝতে পারবে যেমনটা অভ্র এখন বুঝতেছে।

অভ্র ভাইয়া ভালো নেই শুনে চোখঁ ভিজে গেলো, কেনো ভালো নেই মানুষটা, ভালোবেসে বিয়ে করেছে,বউ,বাচ্চা সবই তো কাছে আছে। তাহলে আর কিসের অভাব। আমার কথাই যদি মনে হবে তাহলে অন্যখানে বিয়ে কেনো করেছিলো। বিয়ে করার আগে কি ভাবে নি। নানির কথাই ঠিক,আমাকে শক্ত হতে হবে দেখিয়ে দিতে হবে আমিও বাঁচতে পারি,শুধু বাঁচতে না নিজের পরিচয় নিয়ে তাকে ছাড়াও বাঁচতে পারি আমি।
কিন্তু নানির শেষের কথা গুলো বুঝলাম না, নিজের বউয়ের প্রেমিক ছিলো,যেমনটা অভ্র বুঝতেছে এই কথাটা কেনো বললো নানি। নানিকে জিজ্ঞেস করলাম, নানি অভ্র ভাইয়া কি আমার সাথে সম্পর্ক করার সময় অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতো,

হুমম রে পদ্ম বলতো, সেটা আমি আগে শুনলে হয়তো তোকে সাবধান করতাম কিন্তু আমি আগে বুঝিনি বুবু। আমাকে ক্ষ*মা করে দিস।

নানির চোখেঁ পানি দেখে আবাক হলাম,নিজের নাতির কথাগুলো কিভাবে আমাকে বলে দিলো,অন্য কেউ হলে হয়তো চেপে যেতো,কিছু বলতে চাইতো না।কিন্তু এমন কিছু না করে আমাকে বলে দিলো।

আমি নানির হাত ধরে বললাম,তোমার কোনো দোষ নেই নানি। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। যে মানুষটা একসাথে একাধিক রিলেশন করে আমি যে তার বউ হই নি এটাই অনেক। না হলে হয়তো আমাকে পস্তাতে হতো। তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বের হয়ে আসলাম।

রাত প্রায় এগারোটা,,খাওয়া দাওয়া করে ঘরে এসেছি আর বের হই নি। নানি এতোক্ষন চিল্লাচিল্লি করলো, আজকেই এসেছে কাল কেনো যাবে, তিনবছর পর আজ এসেছে তবুও কাউকে না বলে,আজ তোর মামা বড় মাছ,নদীর মাছ কিছুই পায় নি, পছন্দ মতো খাওয়াতেই পারলাম না এখোনো,বিয়ে হলে স্বামী যে কেমন হয়, নানু বাড়িতে আসতে দিবে কি না সেটা কি আমরা জানি নাকি। এখনে কোনো যাওয়া নেই। পনেরোদিন থাকবি আমার সাথে। তিনবছরের দেখা মন ভরে দেখে নেবো তোকে। তোর পছন্দের সব খাবার খাওয়াবো তারপর যাওয়া।
মামা মামিরাও যাওয়ার কথা শুনে একদম না করে দিয়েছে।

আসলে নানা নানিরা বুঝি এমনি হয়। আসলেই খাওয়ার দিকটা একদম ঠিক থাকা চাই। কি খাবো কি খাবোনা সব যেনো মুখস্থ করে রাখে। মামা মামিও খুব ভালো,আমি আসলে আমার খাবার যেনো সবার আগে,টাইমে টাইমে সব করে দেবে। চুল আচরিয়ে দেবে,তেল দিয়ে দেবে,মাথা ধুয়ে দেবে, গোছল শেষে কাপরটাও ধুয়ে দেবে, আমি ধুলেই বকা দিয়ে বলবে বিয়ে হলে কি আমরা কেউ যাবো তোর কাজ করতে, এখন একটু করে দেই,তা না আগে আগে করিস।

কিন্তু কিভাবে বোঝাবো,আমি যতো থাকবো ততো কষ্ট পাবো। যখনি মনে পরতেছে অভ্র ভাইয়া আর শুপ্তি এক ঘরে আছে তখনি যেনো চোখেঁর জল আর বাঁধা মানছে না।
তবে এতোটা খা*রা*প ছিলো এই মানুষটা। আমার সাথে সম্পর্কের সময় অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতো। কিন্তু আমি বো*কার মতো ওনাকে বিশ্বাস করেছি। আমার কখনো মনেই হয় নি যে এই মানুষটা আমাকে ঠকাতে পারবে। কি নিখুঁতভাবে কথা বলেছে আমার সাথে। মনেই হয় নি ওনার মনে এমন থাকতে পারে।

পরেরদিন খুব সকালেই ঘুম ভেঙে গেলো,আমাদের বাড়ি তো রাস্তার সাথেই, রাতে দিনে সবসময় গাড়ির হর্ন,মানুষের কোলাহল এসবে ভর্তি থাকে। ফুপির বাসা রাস্তার সাথে না হলেও শহরের মধ্যে,গাছপালা কম পাখির ডাক ও বেশি শোনা যায় না। আর নানু বাড়ি গ্রামে, চিরদিকে গাছপালায় ভর্তি, পুকুর জমি। তাই অনেকদিন পর আজকের সকালটা বেশ ফুরফুরে মনে হচ্ছে।পাখির কিচিরমিচির ডাক আর সকালের মৃদু বাতাসে ঘরের পর্দাগুলো উরছে। আমি উঠে গিয়ে জালানা থেকে পর্দা সরাতেই চোখঁ গেলো উঠানের শেষ মাথার সবুজ ধানক্ষেতে, মনে হয় কিছুদিন আগে জমিতে ধানগাছ লাগিয়েছে, পুরো মাঠ একদম সবুজ হয়ে আছে, মনটা আর মানলো না আসতে আসতে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলাম বাহিরে। কালকে সবার কথা শুনে বুঝেছি আজকে আমাকে কেউ যেতে দেবে না। আর মামাদের ওপর দিয়ে তো কথাও বলতে পারবো না। কমপক্ষে দুইদিন থাকতে হবে আমাকে। সবার কথা ভেবি না হয় দুটো দিন মানিয়ে নেবো।

আমি সবুজ ধানখেতে এসে কয়েকটা সেলফি উঠালাম। ছবির ক্ষেত্রে শহরের বড় বড় দালানকোঠার চেয়ে গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেক সুন্দর। ছবির পেছনের জায়গা সুন্দর হলে ছবি ভালো হয়। তাছাড়া আর কবে নানু বাড়িতে আসবো কি না জানি না,এই সৌন্দর্য ফোনে থাকলে সবসময় দেখতে পাবো।

সেলফি তোলা হলে ছবিগুলা দেখার সময় দেখলাম রাত একটার দিকে ফুপি কল দিয়েছিলো। রাতে ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো জন্য বুঝতে পারি নি। তাই এখন কল করলাম এতো রাতে কেনো কল দিয়েছিলো কারো কিছু হয়েছে নাকি।

কল দেওয়ার সাথে সাথেই ফুপি রিসিভ করলো,

-সালামি দিয়ে বললাম কেমন আছো ফুপি

-আমি খুব ভালো আছি রে পদ্ম, জানিস তোর নিলয় ভাইয়া দেশে আসছে। আমাকে কাল বলেছে। তাই রাত্রেই তোকে জানানোর জন্য কল দিছিলাম।

নিলয় ভাইয়া আসছে,নিলয় আমার ফুপাতো ভাই পড়াশুনার জন্য বাহিরে ছিলো। আমি ফুপির বাড়িতে যাওয়ার একবছর আগে চলে গেছে। আমি দেখেছিলাম পাঁচ বছর আগে। এখন চেহারাটা অতো মনে নেই। বাড়িতে একগুলা ছবি ছিলো সেগুলো প্রায় পাঁচ-ছয় বছর আগের। ফুপি ভিডিও কলে কথা বলার সময় অনেকবার ডেকেছে কিন্তু আমার ভিডিও কলে কথা বলতে লজ্জা লাগে,আমি সামনেই থাকতাম না বেশি। অডিও কলে বলেছিলাম কয়েকবার।

চলবে,,

#ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।❌কপি করা নিষেধ ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here