পদ্ম ফুলের অভিমান পর্ব ২

0
919

#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 2)
#লেখীকা_নাফিসা_আনজুম

মামি:পদ্মমা একটা সুন্দর অর্থ দেখে নাম বল না

পদ্ম:মামি ভাবিকে জিজ্ঞেস করো ওনাদের কোনো পছন্দের নাম আছে কি না

মামি:হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলছিস,শুপ্তি তোমার কোনো পছন্দের নাম আছে কি

আমি এবার অভ্র ভাইয়ার ভাবনা ছেড়ে ওর বউ কি যেনো নাম,শুপ্তি। হ্যাঁ মামি বলেছিলো শুপ্তি। ওর দিকে তাকালাম,,শ্যামলা গায়ের রং হলেও চোখঁগুলো টানা টানা,লম্বা আমার মতোই হবে 5.3। মূখে ছোট ছোট অনেক দাগ আছে, মনে হচ্ছে তেল গেছিলো ছিটে। চোখেঁর নিচে ডেবে গেছে,অনেকদিন না ঘুমিয়ে থাকলে যেমনটা হয় ঠিক তেমন। কিন্তু কেনো আমার ভালোবাসার মানুষটা না হয় আমার পাশে ছিলো না কিন্তু এই মেয়ের তো ছিলো,তাহলে এর চেহারায় এতো মলিনতা কেনো।

হটাৎ করেই শুপ্তি জবাব দিলো, মা আমার মেয়ের নাম অবনি রাখলে কেমন হবে। মানে আপনাদের যদি পছন্দ হয় তাহলে,বলেই আসতে আসতে বিছানায় আমার পাশে এসে বসলো মেয়েটা।

অবনি নামটা শুনে বুকের মাঝে চিনচিন করে উঠলো। এই নামটা কেনো বললো এই মেয়েটা। আমার পছন্দের নাম এর মূখে কেনো। তবে কি অভ্র ভাইয়া একে বলেছে যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিলো। তাহলে মেয়েটা আমাকে দেখে কোনো রিয়েক্ট কেনো করছে না। এমন ভাবে আছে মনে হয় আমাকে চেনেই না।

মামি: না না আমাদের আবার পছন্দ হবে না কেনো।মা পদ্ম নাম না টা ভালোই আছে তাই না। অভ্রর মেয়ে অবনি।

পদ্ম: হ্যাঁ মামি নামটা সুন্দর, এই বলে অবনিকে মামির কোলে দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম। চোখেঁর পানি আর বাঁধা মানছে না। কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে, তিনবছরে তো আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। মেডিকেল এ চান্জ পেয়ে অনেকটা হালকা হয়েছিলো সেই কষ্ট। কিন্তু এখন যেনো নতুন করে সব জেগে উঠেছে। তাহলে কি আমি এতোদিনেও সেই কষ্টগুলো ভূলতে পারি নি। শুধুমাত্র সময় চলে গেছে জন্য কষ্টগুলো সাফল্যের চাপে ঢাকা পরেছিলো। কিন্তু এখন ওর বউ আর বাচ্চাকে দেখে সব যেনো বের হয়ে আসছে।বুক ফেটে যাচ্ছে আমার। কি করবো আমি, এই দিনটা দেখার জন্যই কি এতোদিন পর নানুবাড়িতে আসছিলাম আমি।
আগে কেউ কেনো বললো না আমাকে যে অভ্র বিয়ে করেছে,ওর বউয়ের বাচ্চা পেটে। আগে থেকে জানলে হয়তো এতো কষ্ট হতো না আমার। অভ্র ভাইয়ারে আমি তো হতে চেয়েছিলাম এই সন্তানের মা। তবে কেনো এই মেয়েটা। মন চাচ্ছে এই মেয়েটাকে ঘর ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই,কেনো আমার জায়গা দখল করে নিয়েছে, কেনো আমার কাছ থেকে অভ্র ভাইয়া কে কেড়ে নিয়েছে। আমার অভ্র, সারাজীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আমাকে।

ঘরের দরজা লাগিয়ে ঘুমানোর কথা বলে কতোক্ষন কেদেছি মনে নেই।তারপর চোখঁ লেগে এসেছে। সন্ধ্যার আগে আগে ঘুম ভেঙেছে, উঠে মনে হচ্ছে চোখঁ দিয়ে কিছু দেখতে পাচ্ছি না, আয়নার সামনে গিয়ে দেখি দুই চোখঁ ফুলে গিয়ে বন্ধ প্রায়। কাঁদলেই যে এমন হয় । চোখের নিচে ওপরে সব ফুলে থাকে। এই অবস্থায় বাহিরে যাওয়া যাবে না। আমি আসছি বলে হয়তো অনেকেই এসেছে দেখা করতে। নানি নিশ্চয় বলেছে এখন পদ্ম ঘুমিয়েছে সন্ধ্যায় এসো। নানু বাড়ি গ্রামে, এখানে এসে আগে সবাই মিলে কতো মজা করেছি। প্রত্যেক বিকেলে সবাই মিলে নদীতে গেছি। সবার বাড়ি থেকে রাগ হলে সবাই আমার ওপর দিয়ে পার হয়ে যেতো,বলতো পদ্ম আমাদেরকে নিয়ে গেছে। আর কেউ কিছু বলতো না।আমাদের সাথে ছিলো অভ্র ভাইয়া।ভাইয়া থাকলে সবাই আরো বেশি করে ঢং করতো।মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগতো আমার।কি দরকার সবার সাথে এতো মেশার।শুধু আমার সাথে থাকলেই তো হয়। তবে সেই দিনগুলিই ভালো ছিলো অনেক। এই তিন বছরে অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটোগুলা এই তিন বছরে ওনেক বড় হয়ে গেছে। অনেকদিন পর দেখে চেনাই যায় না।

ঘর থেকে বের হয়ে আসতে আসতে চোখঁ বুলিয়ে নিলাম বাহিরে কে কে আছে,মামিরা সবাই দেখি কাজ করছে আর কয়েকজন অভ্র ভাইয়ার ঘরে কথা বলছে। সুযোগ বুঝে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। কিন্তু দরজা লাগিয়ে ভেতরে তাকাতেই ডুকরে কান্না পেলো,

অভ্র ভাইয়া শুধু একটা থ্রি কোয়াটার আর ঘারে একটা টাওয়াল রাখা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। মাথা থেকে পানি পরছে,মুখ ও ভেজা, অপূর্ব সুন্দর সুদর্শন যুবকের মতো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওনার মূখের দিকে তাকিয়ে আর কান্না আটকাতে পারলাম না, এই এই মানুষটা আমার কেনো হলো না, আল্লাহ কেনো এমন করলে আমার সাথে। মোনাজাতে তো শুধু এনাকেই চেয়েছিলাম আমি। অথচ এই মানুষটাকে ছোয়ার অধিকার আমার নেই। এনার শরীরে অন্য কারো ছোয়া। এই সুন্দর হাতগুলো তো আমার হবার কথা ছিলো। কিভাবে বোঝাবো এই কষ্ট আমি।
কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গেছে, অভ্র ভাইয়া এখনো ঐ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। কিভাবে এতো কঠর হয়েছে উনি।
অতীত,,
আগে তো আমার একটু মন খারাপ হলেই না খেয়ে থাকতো, আমাকে দেখার জন্য স্কুলর সামনে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতো। আমি বের হলেই বলতো, তোর জন্য দাড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। বিয়ের পর কোমর টিপে দিবি।

আমি লজ্জায় লাল হয়ে বলতাম, ছিহ আমাকে কোমর দেখাতে তোমার লজ্জা করবে না।

এএহহহ আইছে লজ্জাবতি, বউয়ের কাছে কিসের লজ্জা

বউ কথাটা শুনে আরো লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলতাম, উনি মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলতো লজ্জা পেলে যে পদ্ম ফুলকে সদ্য ফোটা ফুটন্ত ফুলের মতো অপূর্ব সুন্দর লাগে সেটা কি সে জানে। মন চায় ছুয়ে দেই।

আমি মন দিয়ে ওনার কথা শুনতাম ।

আজ খুব বেশি আফসোস হচ্ছে সেই দিনগুলোর জন্য। কেনো সুখের সময় তারাতারি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কষ্টের দিনগুলো কাটতেই চায় না।

বর্তমান,,
এখন আর নিজের কান্নার শব্দ নিজেই পাচ্ছি না,শুধু মাঝে মাঝে একবার করে ভেতর থেকে একটা শব্দ আসছে। যেটা আমি চাইলেও আটকাতে পারছি না। মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছে না। চেয়েছিলাম সামনাসামনি অভ্র ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো আমার দোষ কি ছিলো,কিন্তু এখন তো দেখছি আমার কথায় বের হচ্ছে না। পানি খেতে হবে আমার,অভ্র ভাইয়াকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে কল থেকে পানি নিয়ে হাত দিয়েই খেলাম। এখানে কল আছে আর মটর আছে। মামিদের বাথরুম রুমে সেগুলোতে বেসিন আছে কিন্তু এটাতে নেই।নানির রুমেও আছে।কিন্তু সবাই বাহিরে থাকলে এটাতেই বেশি আসে। আমি নানির রুমের পাশের রুমে ছিলাম এতোক্ষন আর সেই রুম থেকে এই বাথরুমটা কাছে হয় জন্য এটাতেই আসলাম।
পানি খেয়ে,চোখেঁ মুখে পানি দিয়ে নিলাম এর মধ্যে অভ্র ভাইয়া হাত ধরে বলতেছে দেখো পদ্ম ফুল আমাকে ভূল বুঝিও না,তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

কেনো জানি না এই কথাটা আমার সহ্য হলো না,অভ্র ভাইয়া আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলছে,তুমি করে বলছে আমাকে। এক ঝাটকাতে হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম,

আপনার সাথেও আমার অনেক কথা আছে মিস্টার অভ্রনীল চৌধুরি।

আমার মুখ থেকে এমনভাবে কথাটা মনে হয় ওনার হজম হলো না।ছোট ছোট চোখঁ করে তাকিয়ে বললো,

তুমি অমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলছো পদ্ম ফুল

কিভাবে কথা বলবো আপনার সাথে,কথা বলা সেখাবেন আমাকে,কিভাবে মানুষকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঠকাতে হয় সেভাবে কথা বলতে হবে নাকি।
আর হ্যাঁ আমাকে পদ্ম ফুল বলে ডাকবেন না, এই নামটা আপনার মুখে মানায় না।

একসময় তো আমি ডাকতাম এই নামে, তখন তো এভাবে বলো নি

একসময় বলতেন,সেই সময় এটা না, সময় চলে গেছে,দিন বদলে গেছে। আর সাথে মানুষগুলোও

আমি মনে মনে না চাইলেও কথাগুলো বলে চলছি, এদিকে আমার হাটু পর্যন্ত কাঁপছে, কেনোনা আমি এভাবে বড় করে কারো সাথে কখনো বলি নি। আজ কিভাবে বলছি জানি না। অভ্র ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বাথরুমে তো আর এতোক্ষন থাকা যাবে না। তার ওপর এই বাথরুমে সবাই আসতে পারে।তই হনহন করে বাথরুম থেকে চলে আসলাম।

ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবার রেসপন্স চাই।❌কপি করা নিষেধ ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here