পদ্মরাগ পর্ব- ১৪

0
310

#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী
∆৪
ইজ্বা ফাস্ট এইড বক্স থেকে ব্যাথার মলম এনে পরীক লাগিয়ে দিতে লাগে।
পরী চুপচাপ । সে বুঝতে পারছে না ইজ্বা কখন এলো, কিভাবে এলো, কোথায় থেকে এলো, তাও তার রুমের ভেতর থেকে?
ইজ্বার সঙ্গে দেখা হলে,সে তার মনের কথা বলবে ঠিক করেছিল কিন্তু এখন যেন সবকিছু এলোমেলো হয়েগেলো। পরী কনফিউজড।
ইজ্বা তো মনে মনে ভীষণ খুশি আজ। পরীর সবকথা সে শোনেছে। পরীও যে তাকে ভালোবাসে সেটা তার কাছে আজ পরিষ্কার। মনে মনে বিলিয়েন হাসি দিয়ে,

ইজ্বা- আমার সুইট মণিমা। আজ থেকে আমি তোমার বুদ্ধির ফ্যান হয়ে গেলাম।

এই বলে ইজ্বা কল্পনা করতে তাকে সেদিন রাতে পরীর কাছ থেকে যাওয়ার পর কি হয়েছিল……..

পরী ইজ্বাকে ভালোবাসে না, একথা বলে দেওয়ার পর ইজ্বা মন খারাপ করে রুমে গিয়ে বসে থাকে। রুশেন আরা তার বোন সুমিতা আরার থেকে জানতে সব কিছু জানতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন, বিশেষ করে পরী বাবা মাহবুব সাহেব। তিনি মনে মনে চাইছিলেন পরী আর ইজ্বার চার হাত এক করে দিতে। কিন্তু আগেই যেহেতু ইজ্বা আর জারার বিয়ে ঠিক হয়েগিয়েছিল তাই তিনি আর এ বিষয়ে কথা বলতে সাহস পাননি। কিন্তু এখন মাহবুব সাহেব আর রুশেন আরা নিজেদের খুবই হালকা ভাবছেন। রুশেন আরা ভেবেই পাচ্ছিলেন না এই নাচড়বান্দা মেয়েটাকে কে বিয়ে করবে, মনে মনে ইজ্বাকে পছন্দ হলেও হাত পা বাঁধা ছিল। ইজ্বা যেমন ইডুকেডেট, নম্র ভদ্র তেমনি রুশেন আরার ছেলের মতো,
পরী যা দুষ্টু অন্যকারোর কাছে বিয়ে দিলে ভয় থেকেই যায়। কিন্তু ইজ্বা প্রথমে যখন এসেছিল তখন বা এর রাগে রাগী টাইপের হলেও আজকাল অনেকটা মিশুক আর হাসিখুশি হয়েগেছে। আর পরীর সঙ্গে থেকেতো দুষ্টুমিটাও শেষ শিখেছে। ইজ্বা আর পরী দুজনই দুজনের দুষ্টুমির দিক দিয়ে এক ধাপ এগিয়ে। ইজ্বা পরীকে বুঝতে পারে সেটা রুশেন আরা আর মাহবুব সাহেবের বুঝার বাকি নেই।
তো সেদিন রাতে রুশেনআরা ইজ্বার জন্যে প্রতিদিনের মতো দুধ নিয়ে এলে দেখেন ইজ্বা মন খারাপ করে বসে আছে, রুশেন আরা তিন-চার বার ডাকার পর ইজ্বা সাড়া দিল।

রুশেন আরা বিষ্ময় দৃষ্টিতে ইজ্বার দিকে তাকিয়ে বলেন,

রুশেন আরা- কি হয়েছে ইজ্বা বাবা? মন খারাপ কেন?

ইজ্বা রুশেন আরার কোলো মাথা রেখে বলে,

ইজ্বা- বলা যাবে না সিকরেট।

রুশেন আরা- আমার কাছেও সিকরেট?

ইজ্বা- বললে তুমি কি রকম বিহ্যাভ করবে আমি জানিনা তাই সিকরেট রাখাই ভালো।

রুশেন আরা- আমার সোনা ছেলে, মণিকে আগে বলে দেখ।

ইজ্বা কিছুক্ষণ রুশেন আরার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলতে তাকে,

ইজ্বা- মণিমা আমি পরীকে ভালোবাসি। বিশেষ করে ওর দুষ্টুমি গুলোকে আমার খুব ভালো লাগে। আমিও কেমন ওর সঙ্গে দুষ্টুমিতে মেতে উঠে শৈশবে হারিয়ে যাই। পরীও আমাকে ভালোবাসে সেটা আমি মাঝেমধ্যে ফিল করতে পারি। কিন্তু পরী হঠাৎ করেই আবার অচেনা হয়ে যায়। ওকে জিঞ্জেস করলেই সেটা অস্বীকার করে। এখন আমি কি করব বুঝতে পারছি না। মণিমা তোমাদের পারমিশন থাকলে আমি পরীকে আমার জীবন সঙ্গীনী করতে চাই
ইজ্বা চুপ হয়ে যায়।রুশেন আরা বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবলেশহীন মুখে বললেন,

রুশেন আরা- কি বলছ এসব ইজ্বা, তোমাকে আমি কত বিশ্বাস করতাম আর তুমি বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলে?
ইজ্বা রুশেন আরার রক্তাভ মুখ দেখে অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। এবার কি সে নিজের মণিমাকেও হারাবে পরীকে ভালোবাসার অপরাধে। না, সে এটা হতে দিতে পারে না।

ইজ্বা- তুমি না চাও মণিমা আমি পরীকে বিয়ে করার কথা আর কখনো বলব না।

রুশেন আরা- সত্যি! তুমি আমার পাগলী মেয়েটাকে বিয়ে করবে? সত্যি !

ইজ্বা রুশেন আরার চোখেমুখে আনন্দ ফুটতে দেখে চট করে বিছানা থেকে উঠে রুশেন আরার হাত ধরে বলে,

ইজ্বা- মণিমা তাহলে তুমি রাজি! রিয়েলি! তাহলে আগে ওভাবে বললে যে?

রুশেন আরা- আরে পাগল ছেলে আমি মজা করছিলাম। আমি কি তোর আংকেলও এ বিষয়ে রাজি। তোমাদের চার হাত এক করে দিলেইতু আমাদের শান্তি।
– ইজ্বা অবাক হয় রুশেন আরার কথা শোনে। সে ভেবেছিল রুশেন আরা হয়তো রিয়েকশন করবেন কিন্তু এতো বিলকুল আগে আগে হগাইয়া। ইজ্বা ঠোঁট উল্টে হেসে বলে,

ইজ্বা-এত তাড়াতাড়ি আমাকে মেনে নিলে মণিমা? আবার আংকেল ও!

রুশেন আরা- মেনে না নেওয়ার কি আছে, আমার গুলড সনের হাতেই তো তুলে দিচ্ছি মেয়েটাকে।ইজ্বা রুশেন আরার গালে চুমু দিয়ে বলে, আমার সোনা মণি লাভ ইউ। কিন্তু পরীতো বলছে ও আমাকে ভালোবাসে না?

রুশেন আরা- আমি আমার মেয়েকে ঢের দেখেছি,ওর চোখ দেখলেই বুঝতে পারি কিছুটা হলেও মেয়েটা তোমার ওপর দুর্বল।

ইজ্বা- রিয়েলি?

রুশেন আরা- হুঁ।

ইজ্বা- কিন্তু

রুশেন আরা- কিন্তু কি?

ইজ্বা-মুখেতো স্বীকার করছে না?

রুশেন আরা- ওহ এইকথা। আমার একটা প্ল্যান কাজ করছে।

ইজ্বা- প্ল্যান !কি প্ল্যান?

ইজ্বা এসব কল্পনা কল্পনা করতে পরীকে মলম লাগিয়ে দিয়ে শেষ করে হেঁচকা টানে পরীকে কাছে আনে। পরী চোখ বন্ধ করে ইজ্বার গরম নিশ্বাস অনুভব করছে। ইজ্বা তার দুই হাত দিয়ে পরীর দুগালে ধরে মুখ তার দিকে তাক করে বলে,

ইজ্বা- চোখ বন্ধ কেন?

পরী- আমাকে ছাড়ো?

ইজ্বা- কিছুক্ষণ আগে এই রুমে কেউ একজন বলছিল, আই মিস ইউ ইজ্বা ভাইয়া, আই লাভ ইউ। কে সে? কোথায় সে?

পরী লজ্জা পেয়ে ইজ্বার বুকে মুখ নিয়ে লুকিয়ে রেখে বলে,

পরী- তুমি শোনলে কিভাবে, তুমি রুমে ছিলে?

ইজ্বা- হুম, আমি তো ওয়াড্রপের পিছন দিকটায় ছিলাম। তোর জন্য কত কি যে করতে হচ্ছে আমাকে উফফফফ?

পরী- এনাকন্ডা একটা, আমাকে বোকা বানানো? এতক্ষণ বেরিয়ে আসলে না কেন?

ইজ্বা- আমার জন্য তুই যে কাঁদছিলি সেটা দেখতে কি ভালো লাগছিল, আহা !
পরী রেগে কটমট করতে করতে ইজ্বার কলার ধরে বলে,
পরী- এখন কেন তাহলে তুই বেরিয়ে এলি?

ইজ্বা- বেরিয়ে আসবো না, না আসলে তো আমার সাধের টি-শার্ট গুলো জ্বালিয়ে দিতি।

পরী- দেবই তো। আমাকে কাঁদানো, তোর সাহস কত?

ইজ্বা- তুই বলছিস?

পরী- আপনি করে বলব কি তোকে, শখ কত? আগে বল তুই ট্রান্সফার কেন নিয়েছিস?

ইজ্বা- তুইতো আমাকে ভালোবাসিস না, আমি এখানে থেকে কি করব?

পরী-ওই ফাজি টিচার, তুই বুঝস না আমি তোকে কতটা ভালোবাসি।
ইজ্বা রসগোল্লার মতো চোখ করে বলে,

ইজ্বা- আমি তো তোকে কতবার জিঞ্জেস করেছিলাম তুইতো না করলি?
পরী ইজ্বার কলার ছেড়ে বলে,

পরী-
সিলেটে টান্সফার নিয়েছো কেন? ওহো নিশ্চয়ই ওখানের সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়েছো তাই বেছে বেছে ওইখানেই গিয়েছো? ওকে চলে যাও। গিয়ে জমিয়ে প্রেম করো। একবার জারা আরেকবার সিলেটের সুন্দরী মাইফোট

এই বলে পরী কপট রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
ইজ্বা পরীর হাত ধরে টেনে আবার পরীর গুলুগুলু দুই গালে হাত দিয়ে তার অবাধ্য চুল গুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলে,
ইজ্বা- বাহ! একেবারে বউ এর মতো কথা বলছিস। বিয়ে করার আগেই এসব হিংসে রোগে পেয়ে বসেছে?
লজ্জা পেয়ে পরী মুখ নিচু করে থাকে।
ইজ্বা পরীর মুখ উপর করে বলে,

ইজ্বা- পাগলি একটা, তোকে ছাড়া আমি কি অন্যকাউকে ভালোবাসতে পারব নাকি?

পরী- তাহলে ট্রান্সাফার নিয়েছো যে?
ইজ্বা তার আর রুশেন আরার প্ল্যানের কথা কেন পরীকে বলল না। মৃদ্যু হেসে বলল

ইজ্বা- এখন যদি আমাকে সরাসরি বলিস ভালোবাসিস তবে যাব না আর।
পরীর চোখ মুখ চকচকিয়ে উঠে,

পরী- রিয়েলি।

ইজ্বা-হুঁ।

পরী- লাভ ইউ ইজ্বা ভাইয়া। লাভ ইউ সো মাচ।

এই বলে ইজ্বাকে সে জড়িয়ে ধরে লজ্জা মুখ নিয়ে।

ইজ্বা- লাভ ইউ টু, পাগলিটা আমার।

ইজ্বা এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছিল কলেজ থেকে। পরীকে ফটানোর জন্যে কিন্তু রুশেন আরার প্ল্যান যে এত তাড়াতাড়ি কাজ করবে তা সে কল্পনাও করেনি। এই ছয়দিন সে কি করবে, ভাবতে বের করল পরী আর রীতুকে ঘুরতে গেলে কেমন হয়?
আইডিয়া মাফিক পরী আর রীতুকে নিয়ে যাবে সব ঠিক টিকেটও কাটা শেষ কিন্তু রীতুর জ্বর আসল হঠাৎ, গা কাঁপানো জ্বর। তাই বাধ্য হয়ে দুজনে একাই আসল। সেখানে আসল ওরা যে শহরের নামে ওদের ভালোবাসা শুরু হয়। সেই শহর সেই পাহাড় সেই নদীর কাছে, আর সেই জায়গাটা হলো সিলেট। দুদিনের জন্য সিলেট থেকে খানিকটা দূরে দ্যা প্ল্যাসে দুটো রুম বুক করেছে ওরা, আর এখানে আসতে ঢাকাতেই টিকেট কেটে আসতে হয়।
দ্যা প্ল্যাসের পৌছাতে ওদের সন্ধ্যা হয়ে আসে। কিন্তু সন্ধ্যার আবছা আলোতে যেন এখানকার পরিবেশ আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে। বিল্ডিং ফেরেয়ি সুইমিং ফুল, তার পাশ কাটিয়ে চা-বাগানের সমারোহ, প্রত্যাক ফুল গাছে গাছে ঝিঁঝি পোকার দল। আর একটু দূরেই একটা কৃত্রিম নদী, তার ওপর বিয়ে একটা ব্রিজ। কি অপূর্ব !
সকাল সকাল উঠে পরী কখনো ঝরণায়,সুইমিং ফুলে, আবার কখনো পাহাড়ের পিঠে ওঠে ধাপাধাপি করে বেড়াচ্ছে। ইজ্বা ঘুম থেকে উঠে দেখে ফ্রেশ হয়ে পরীর রুমে গিয়ে দেখে পরী নেই। কিন্তু পরীতো এত সকাল কখনো উঠেনা। ইচ্ছা সারা প্ল্যাস খুঁজে লাস্ট টাইম পরীকি আবিষ্কার করল পরী সরোবরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরছে। কিন্তু কি আজব কান্ড পা পানিতে ঢুবিয়ে নাচাতে নাচাতে ছিপ ফেলেছে। বেচারা সব মাছ এমনিতেই উধাও!
পরী ইজ্বাকে দেখে বলে,

পরী- ইজ্বা ভাইয়া এসেছো এখানে এসো মাছ ধবরে তুমি?

ইজ্বা- না পরী আমি ধরব না।

পরী-তুমি কেন ধরবে না? ই
ছিপ ফেলতেই হবে। এ্যাঁই ফাজি টিচার আয় বলছি?
গল্পকথক- আর যাই হোক ইজ্বা পরীর রাগকে খুব ভয় পায়। রাগ উঠলে পরী যখনতখন যা ইচ্ছে তাই করে দিতে পারে সেটা তার অজানা নয়। ইজ্বা সরোবরের সিঁড়িতে বসে পরীর মাথায় গাট্টা দিয়ে বলে,

ইজ্বা- তোর রাগকে আমি খুব ভয় পাই ক্রেজি?

পরী-আমাকে আবার ক্রেজি বলছো?

ইজ্বা- আমাকে বীর ভাইয়া ডাকলে তো আমি ক্রেজিই ডাকব তোকে।

পরী-তো আমি কি ডাকব?

ইজ্বা- তুমি।

পরী- ওলে বাবালে,

ইজ্বা-হুম

পরী- ওগো শোনছো চলনা দুজনে এই পানিতে ভিজি?

ইজ্বা- ওগো শুনছো এটা আবার কি?

পরী- মা বাবাকে এভাবেই ডাকে!

ইজ্বা- পাগলী একটা!

চলবে…..
রেসপন্স প্লিজ…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here