পতিতা পল্লী পর্ব ৮

0
1139

পতিতা পল্লী
৮ম পর্ব
ক্যালেশনঃ গ্রুপ

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে দৌঁড়ে রান্না ঘরে গেল আর রান্না ঘর থেকে এসে একটা গরম খুন্তি ডালিয়ার পিঠে চেপে ধরল।ডালিয়া চেঁচিয়ে উঠল আর বলল

—ও আল্লাহ গো জ্বলে যাচ্ছে আমার।এবার আমাকে ছেড়ে দিন।

—তোকে কষ্ট দিতে পারলেই আমার শান্তি লাগে।

ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্যের হয়ত মাবিহার কথা মনে পড়ছে আর মাবিহার কথা মনে হলেই অরণ্যের মেয়েদের প্রতি ঘৃণা জন্মায় আর অরণ্য ডালিয়াকে কষ্ট দেয় আর অরণ্য মনে করে এ কষ্টটা সে মাবিহা কে দিচ্ছে।তাই ডালিয়া নিজেকে সামলিয়ে কাদোঁ কাঁদো কন্ঠে বলল

—আপনার যদি আমাকে কষ্ট দিয়ে শান্তি লাগে আপনি কষ্ট দিন।আমাকে কষ্ট দিয়ে শেষ করে দিন তবুও আপনি ভালো থাকুন।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে কিছুটা অবাক হল।সে ভাবল একটা মেয়েকে সে এত কষ্ট দিচ্ছে আর মেয়েটা তার সুখের জন্য এসব বলছে।হয়ত এটাও এই মেয়ের ছলনা।তাই অরণ্য ডালিয়াকে একটা লাথি দিয়ে বলল

—তুই ও ছলনা শুরু করলি।ভালো সাজার অভিনয় করছিস।আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিস তাই না।কিন্তু আমি তো আগের মত বোকা না যে তোর কষ্টে গলে যাব।ছলনাময়ী কোথাকার।

—আপনি যা ইচ্ছা ভাবেন।আমার তাতে কিছু যায় আসে না।আপনার যদি আরও মারতে মন চায় মারুন।মেরে যদি আপনি শান্তি পান তাহলে মারুন।যত পরুন মারুন।আমাকে তো আপনি আপনার শান্তির জন্য কিনেই এনেছেন।আমার কাজেই তো আপনাকে শান্তি দেওয়া।এখন যদি আপনি মেরে শান্তি পান তাহলে মারুন।আমি তো আর কিছু করতে পারব না।সহ্য করা ছাড়া তো আমার উপায় নাই।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে কোনরূপ কথা না বলে সেখান থেকে প্রস্থান নিল।অরণ্য যাওয়ার পর ডালিয়াও ডালিয়ার রুমে চলে আসল।ডালিয়ার পিঠটাই হাতও দিতে পারছে না ডালিয়া।ডালিয়ার পিঠটা মনে হচ্ছে জ্বলে যাচ্ছে।কিন্তু তবুও আজকে অরণ্যের প্রতি ডালিয়ার ঘৃণা জন্মাচ্ছে না।কেন জানি না আজকে অরণ্যের প্রতি অদ্ভূত ভালো লাগা আর মায়া কাজ করতেছে।অনেক দিন পর ডালিয়ার কোন ছেলের প্রতি মায়া জন্মাল।ডালিয়ার কাছে সব ছেলেকেই নরপশু মনে হত।এখন ডালিয়ার মনে হচ্ছে সব ছেলে এক না।সবাই শুধু মেয়েদের মাংসপিন্ড ভাবে না।কিছু ছেলে মেয়েদের ভালোবাসা দিয়া আগলেও রাখে।এসব ভবতে ভাবতে ডালিয়া একটু চোখ বুজল।

হঠাৎ অরণ্য ডালিয়ার রুমে আসল।অরণ্যে আওয়াজ শোনে ডালিয়া চোখ খুলল আর খেয়াল করল অরণ্যের হাতে কি একটা যেন। ডালিয়া মনে মনে ভাবতে লাগল এবার হয়ত তার কপালে আরও দুঃখ আছে।ডালিয়া কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল

—অরণ্য বাবু আপনি?কিছু লাগবে?

—হুম তুমি একটু ঐদিকে ফির।

—কোন দিকে?

—পিঠটা আমার দিকে ফিরাও।

—কেন?আমি কি আবার কোন ভুল করেছি।

—এত প্রশ্ন করতেছ কেন? তুমাকে যা বলতেছি তাই কর।

ডালিয়া অরণ্যের দিকে পিঠটা ফিরাল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়ার পিঠটা পুড়ে লাল হয়ে ফুসকা পড়ে গেছে।ডালিয়ার ক্ষতটা দেখে অরণ্য নিজেকে বকতে লাগল।ভাবতে লাগল এত বড় অমানুষ সে কিভাবে হল।এত বড় কাপুরুষ কিভাবে হল যে একটা মেয়ের গায়ে এত নির্মম ভাবে আঘাত করেছে।অরণ্য এসব ভেবে নিজেকে আজকে খুব পশু লাগছে অরণ্যের। অরণ্য হাত থেকে মলমটা বের করে ডালিয়ার পিঠে লাগিয়ে দিল।ডালিয়া আঃ করে করে উঠল।

ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্য তার পিঠে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।ডালিয়া যেন ভিতরে ভিতরে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল।অরণ্য কে যতটা কঠোর ভেবেছিল অরণ্য তার থেকে ও নরম মনের মানুষ।হয়ত পরিস্থিতি তাকে কঠোর করে দিয়েছে কিন্তু মানুষটার ভিতরটায় খুব মায়ায় ভরা।অপরদিকে অরণ্য পিঠে মলম লাগাতে লাগাতে বলল

—ডালিয়া জানি না আমার মাথায় কি হয়।আমি তখন নিজেকে সামলাতে পারি না।নিজেকে খুব পাগল পাগল আর অস্থির লাগে তাই তোমাকে আঘাত করি।তোমাকে তো আমি সুযোগ দিয়েছিলাম চলে যেতে তুমি। চলে গেলে না কেন?এখানে থাকলে যে তোমাকে আরও কষ্ট পেতে হবে।

—কোথায় যাব বলুন।আমার যে যাবার জায়গা নাই।এখানে আছি তবু ভালো আছি।কারন এখানে শুধু শারিরীক আঘাত পাচ্ছি কিন্তু কেউ তো আর আমার শরীরটাকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে না।আমাকে যেতে হলে তো সেই পতিতা পল্লীতে যেতে হবে আর সেখানে গেলে তো একের পর এক নরপশু আমাকে খুবলে খুবলে খাবে।এট থেকে আমি এখানে আছি ঢেড় ভালো আছি।আপনার এ সামান্য কষ্ট আমার কাছে কিছু না।আর আমাকে মেরে যদি আপনার একটু শান্তি হয়, হোক।আপনার কাছে মেয়ে মানুষ সবচেয়ে ঘৃণিত বস্তু আর আমার কাছে ছেলে মানুষ।দুজন দুজনের জায়গায় কষ্ট পাচ্ছি।একজন পুরুষের হাতের শিকার আরকেজন নারীর ছলনার হাতে।কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছি পৃথিবীতে সব পুরুষ এক না।এদের মধ্যেও ভালো আর খারাপ আছে।শুধু এটাই বলব আমি এখানেই খুব ভালো আছি।

ডালিয়ার কথা গুলো শোনে অরণ্যের যেন আরও বেশি অপরাধ বোধ কাজ করল।একটা মেয়ের শাস্তি সে বিনাদোষে আরেকটা মেয়েকে দিল।এত বড় অন্যায় সে কিভাবে করল।এসব ভেবে ভেবে অরণ্য ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেতে লাগল।অরণ্য কোনরূপ কথা না বলে চলে গেল।

আর এদিকে ডালিয়াও অরণ্যের এমন সহাণুভূতি পেয়ে খুশিতে আত্নহারা।কিন্তু অরণ্যকে স্বাভাবিক জীবনে যে করেই হোক ফিরাতে হবে।কিন্তু কিভাবে ফিরাবে ডালিয়া।কারন অরণ্য তো কোন মেয়েকে বিশ্বাস করেনা।মনে মনে ভাবল আগে অরণ্যের মনে বিশ্বাস আনাতে হবে ভালোবাসা দিয়া কিন্তু কিভাবে?অনেক ভেবে ডালিয়া উপায় বের করল।ভাবল অরণ্যকে স্বাভাবিক জীবনে আনতে হলে আগে অরণ্যের রুম থেকে এসব ছবি উল্টা পাল্টা জিনিস দূর করতে হবে।

ডালিয়া যা ভাবল তাই করল।মনে মনে ফাঁক খুজতেছিল যে অরণ্য কখন বের হবে।হঠাৎ খেয়াল করল অরণ্য বাইরে গিয়েছে ডালিয়া অরণ্যের রুমে গিয়ে মাবিহার ছবি ডালিয়ার কাটা চুল ডালিয়ার ছবি এগুলা খুলে ফেলে দিল।রহমত চাচা ডালিয়ার এসব দেখে বলল

—এসব কি করছ মা তুমি?অরণ্য যদি এসে দেখে তোকে যে খুব মারবে মা।

—চাচা মারলে মারুক।আমি অরণ্যের ভালোর জন্যই এমন করছি।তুমি কি চাও না অরণ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।

—তা তো চাই ই মা।ছেলেটা আমার কষ্টে পাথর হয়ে গেছে রে।

—যদি চাও তাহলে আমি যা বলি তাই কর।এসব কিছু কোথায় ফেলছি অরণ্যকে বলবা না।মাবিহার যত ছবি আছে আর অরণ্যের মা এর যত ছবি আছে সব ফেলে দাও চাচা।

—কিন্তু অরণ্য যদি রেগে যায়।আর অরণ্য রেগে গেলে তো তোকে মারবে রে মা।তোকে আঘাত দিবে, কষ্ট দিবে।তুই কি পারবি সহ্য করতে।

—চাচা তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।আমি মেনেজ করে নিব।আমাকে যতই আঘাত করুক সহ্য করে নিতে পারব।তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।

—আচ্ছা মা তুই যা বলিস তাই হবে রে মা।আমি মাবিহা আর আশালতার সব ছবি ফেলে দিচ্ছি।

তারপর ডালিয়া আর রহমতচাচা মিলে মাবিহা আর আশালতার সব স্মৃতি ফেলে দিল।ডালিয়া দেয়ালের লিখা গুলো মুছে দিল।বাড়িটা সুন্দর করে সাজাল।সব কাজ শেষে ডালিয়া অরণ্যের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।কখন অরণ্য আসবে এসে কি করবে এসব ভেবে ডালিয়া বারবার ভয়ে কুকরে যেতে লাগল। আবার ভাবতে লাগল যা হবার হবে অরণ্যের জন্য এতটুকু করতে ডালিয়ার সমস্যা নেই।

ঠিক সন্ধ্যার দিকে ডালিয়া ডালিয়া টুংটাং কলিংবেলের আওয়াজ শোনল।ডালিয়া দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খোলল।দরজা খোলে দেখল অরণ্য এসেছে।অরণ্য বাড়িতে ঢুকে দেয়াল খেয়াল করে দেখল কোন লিখা নাই।চারপাশ খেয়াল করল দেখল বাড়িটা নতুন ভাবে গুছানো।তাড়াতাড়ি রুমে গেল।রুমে গিয়ে দেখল সব কিছু ওলট পালট।কোন ছবি নেই।অরণ্য এসব দখে রেগেমেগে আগুন হয়ে গেল।চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলতে লাগল

—-রহমত চাচা,রহমত চাচা,কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি আস।

রহমত চাচা অরণ্যের চিল্লানো শোনে তাড়াতাড়ি অরণ্যের কাছে গেল।আর গিয়ে বলল

—বাবা কি হয়েছে? এভাবে চিল্লাচ্ছ কেন?

—তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারছ না আমি কেন চিল্লাচ্ছি।আমার রুম থেকে মাবিহার ছবি কোথায় গেল।সারা বাড়ি এভাবে গুছানো হল কেন?কথা বলছ না কেন?

—নাহ মানে,নাহ মানে।

—নাহ মানে,মানে করছ কেন।উত্তর দাও কার এত বড় সাহস আমার অণুমতি ছাড়া আমার ঘরে ঢুকে আমার ঘর গুছিয়েছে?

পাশ থেকে ডালিয়া বলে উঠল

—অরণ্য বাবু আমি করেছি।

ডালিয়ার মুখ থেকে অরণ্য এ কথা শোনে আরও রেগে গেল।রেগে গিয়ে ডালিয়ার চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগল

—তোরে এত বড় সাহস কে দিছে?সকালে তোকে একটু দয়া দেখিয়েছি বলে এত বড় সাহস দেখায়ছিস তাই না?তোর সাহস হল কিভাবে যে তুই আমার অণুমতি ছাড়া আমার ঘর গুছাইছিস।

—আপনি আমাকে যত পারুন মারুন আমার কোন কষ্ট নেই।কিন্তু আপনার জীবনটা পাল্টানোর জন্য এটুকু করা জরুরী ছিল।আমি চায় না আপনি এভাবে জীবন যাপন করুন।চায় না এভাবে কষ্ট পান।আপনার যদি আমাকে মেরে শান্তি হয় তাই করুন।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে আরও রেগে গেল চুল টানতে টানতে নিয়ে গেল সিঁড়ির কাছে।সিঁড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে টেনে হিঁচরে ফেলল।আর ডালিয়া সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে গেল।ডালিয়া সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে গেল।রহমত চাচা ডালিয়ার কাছে দৌঁড়ে গেল আর গিয়ে দেখল ডালিয়ার কোন সাড়া শব্দ নেই।রহমত চাচা অরণ্যকে বলল

—বাবা মেয়েটা যা করেছিল তেমার ভালের জন্য করেছিল।আর তুমি এ কি করলে?মেয়েটার তো কোন সাড়া শব্দ নেই।একজনের রাগ তুমি আরেক উপর ছাড়লে।বাবা দেখে যাও মেয়েটার অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না।শ্বাস প্রশ্বাস চলছে না।কি হয়েছে মেয়েটা বুঝতে পারছি না।তাড়াতাড়ি হাডপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

রহমত চাচার কথা শোনে তাৎক্ষনিক অরণ্যের মনে হল সত্যিই তো সে এমন কেন করল।ডালিয়াকে এতটা আঘাত করা তার ঠিক হয় নি।দৌঁড়ে নীচে নাম ডালিয়ার হাত ধরে দেখল তার পালস অনেক নেমে গেছে।শ্বাস প্রশ্বাস চলছে না।অরণ্য ভয় পেয়ে গেল।তাড়াতাড়ি করে ডালিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।ডাক্তার ডালিয়াকে ইামরজেন্সিতে নিয়ে গেল।অরণ্য আর রহমত চাচা বাইরে দাঁড়িয়ে রইল।ডাক্তার অনেক ক্ষণ চেক আপ করল আর বাইরে এসে অরণ্যকে বলল

—আপনার রোগীর অবস্থা ভালো না।ট্রিট মেন্ট চলছে।আর আপানাকে একটা ফরম ফিল আপ করতে হবে।তাড়াতরি ফরম ফিল আপ করে রোগী ভর্তি করান।না হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

অরণ্য ডাক্তারের কথা শোনে থমকে গেল এটা ভেবে যে তার জন্য আজকে একটা নির্দোষ মেয়ে মরতে যাচ্ছে।যে মেয়েটা কি না তার ভালো করতে গেছিল।এতটা নিষ্ঠুর সে কিভাবে হল এটাই ভাবতে লাগল।তাড়াতাড়ি গেল ডালিয়াকে ভর্তির জন্য।সেখান থেকে ফরম দিল ফিল আপ এর জন্য।অরণ্য সব ফিল আপ করে নার্সকে দিল।নার্স ফরমটা দেখে অরণ্যকে বলল

—স্যার রোগী আপনার কি হয় সেটা তো পূরণ করেন নি।এটা একটু পূরণ করে দিন।

অরণ্য বেশ বিব্রত বোধ করল। বুঝতে পারল না কি লিখবে।কিছুক্ষণ কাগজটা ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।নার্স আবার বলে উঠল

—স্যার তাড়াতাড়ি ফিল আপ করে দিন।

অরণ্য এবার শূন্যস্থান টাই লিখে দিল যে রোগীর স্বামী হয় অরণ্য।আর রোগী তার স্ত্রী। তারপর নার্স ফরমটা নিয়ে চলে গেল।আবার ডালিয়ার চিকিৎসা শুরু হল।আর এদিকে অরণ্যের বুকটা যেন হাহাকার করতে লাগল ডালিয়ার জন্য।তীব্র এক যন্ত্রণার শুরু অরণ্যের।বাবার ডালিয়ার সুস্থতা কামনা করতে লাগল।ডালিয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।নিজেকে খুব বেশি অপরাধী ভাবতে লাগল।আর এদিকে অনেক ক্ষন চিকিৎসা করার পর ডাক্তার এসে বলল…….

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here