পতিতা পল্লী পর্ব ৭

0
1205

পতিতা পল্লী
৭ম পর্ব
ক্যালেশনঃ গ্রুপ

মাবিহা বলল
—অরণ্য আমি তোমাকে কখনও ভালোবাসি নি।আমি তো ভালোবাসি আকাশকে।আমি আকাশকে বিয়ে করব।তোমার সাথে যা ছিল সেটা একটা সাজানো নাটক।

—সাজানো নাটক মানে?

—হ্যাঁ সাজানো নাটক।আমি কলেজে পড়ি সময় আকাশকে ভালোবাসতাম।আকাশ ও আমাকে ভালো বাসত।কিন্তু আমাদের ভালোবাসার মধ্যে একটাই সমস্যা ছিল তা হল টাকা।আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছিলাম আর আাকাশের পরিবার ছিল নিম্নবিত্ত।তার উপর আকাশ পড়াশোনা করা ছিল না এত।স্টুডেন্ট ভালো ছিল না।অপরদিকে আমি মেডিকেলে পড়তাম।আকাশকে আমার পরিবার কোনভবেই মেনে নিবে না বুঝতে পারছিলাম।আর আমিও আকাশকে ছাড়া বাঁচব না।আমাদের রিলেশনে একমাত্র বাধা ছিল টাকা।দুজনেই খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।এটা নিয়া দুজনের মধ্যে জামেলা হত।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।এত টাকা কিভাবে পাব তাও বুঝতে পারছিলাম না।এটা বুঝতে পারছিলাম আমাদের ভালো থাকার জন্য টাকার খুব দরকার।

হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম তুমি আমাকে ফলো করছ।আমার দিকে তাকিয়ে থাক।বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছ।তোমার খোঁজ নিলাম জানলাম তুমি এক বাবার এক ছেলে। বাবা,মা নেই অনেক টাকা পয়সার মালিক।আমি আকাশকে বললাম

—আকাশ জানো আমাদের মেডিকেলের এক ছেলে আমাকে মনে হয় পছন্দ করে।সারাদিন ফলো করে।আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটার নাম অরণ্য।খোজ নিয়া জানলাম বাবার নাকি অনেক টাকা।ছেলেটা খুব বোকাসোকা জানো।

আকাশ আমার কথা শোনে একরাশ হাসি দিয়ে বলল

—তাহলে তো আমাদের কপাল খোলে গেছে।

—কপাল খোলে গেছে মানে?

—আমি যা বলি তুমি তাই করলেই হবে।আমার কথাটা শুধু মন দিয়া শোন যদি আমাকে না হারাতে চাও।

—হ্যাঁ বল কি করতে হবে।তোমার জন্য আমি সবটা করতে পারব।তবুও তোমাকে হারাতে চায় না।

—তাহলে শোন তুমি ছেলেটার সাথে জাস্ট প্রেমের নাটক কর।যত পার তাকে ইমোশন কর।আর তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যত পারে টাকা নাও।যেহুত বড়লোক আর বাবা,মা নেই বোকা আর সবচেয়ে বড় কথা হল তোমার প্রতি দুর্বল সেহুত টাকা আদায় করতে সমস্যা হবে না।আর আমাদের ও প্রবলেম সলভ।

—তুমি যা বলবা তাই হবে।তবুও তোমাকে হারাতে পারব না।আমিযে তোমায় বড্ড ভালোবাসি।

তারপর আাকাশের কথা মত কলেজ ফাংশন এর দিন তোমার সাথে কথা বলে নাটক করা শুরু করি।একের পর এক নাটক করি।আকাশ ছিল নাটকের লেখক আর আমি ছিলাম অভিনেত্রী।তোমার কাছ থেকে একের পর এক বায়না করতাম আর তুমি আমার সে বায়না পূরণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে।তোমার থেকে টাকা নিয়ে আকাশের সাথে ডেটে যেতাম।কিন্তু সমস্যা ছিল যে বিয়ের আগে তো তোমার কাছ থেকে বাড়িঘর লিখে নেওয়া যাবে না।তাই দুজন ঠিক করলাম বিয়ে ঠিক হলে বাড়ি লিখে নিব আর বিয়ের দিন তুমি যা গয়না দিবে তা নিয়ে পালিয়ে চলে যাব।
তাই তুমি বলার সাথে সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু বাড়ি লিখে নিতে পারি নি তখন।তাই ভাবলাম গয়না নিয়েই পালাব।কিন্ত বিয়ের আগের দিন আাকাশ বলল

—আমাদের এ গয়না দিয়ে কিছুি হবে না।তুমি বিয়েটা করে নাও।

—মানে আাকাশ আমি তোমাকে ভালোবাসি।অরণ্যকে কেন বিয়ে করব?পাগল হয়ে গেছ তুমি?

—আরে বোকা বিয়ে না নাটক করবা।নাটক করে বিয়ে করে অরণ্যের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে দুইটা বাড়ি লিখে নিবা।তাহলে আমাদের জীবনে আর টাকার কষ্ট থাকবে না।

আমিও আকাশের কথায় রাজি হয়ে গেলাম।বিয়ে করে ফেলালাম তোমাকে।বিয়ের পর সুযোগ খুজতে লাগলাম কখন তোমার কাছ থেকে দুইটা বাড়ি লিখে নিব।কিন্তু আমি সুযোগ বের করার আাগেই তুমি সুযোগ বের করে দিছ।আমার জন্মদিনে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছ।আর আমিও এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তোমার কাছ থেকে বাড়ি লিখে নিই।কিন্তু বাড়ি বিক্রি করতে আর ডিভোর্স পেপার রেডি করতে আর আকাশকে বিয়ে করতে আরও একমাস দেড়ি হয়।আর আজকে সব কাজ সম্পন্ন হল তাই তোমাকে জানালাম।আর শোন তুমি ডিভোর্স না দিলেও তিনমাস পর এমনি ডিভোর্স হয়ে যাবে।আর আমি আকাশকে বিয়ে করে নিয়েছি।আনরা বিদেশ চলে যাব।ও কিছুক্ষন পর আসবে ওর সাথে চলে যাব আমি।

—মাবিহা এসব কি বলছ এতদিনের ভালোবাসা আর স্মৃতি সব মিথ্যা আর সব নাটক।বিবেকে বাঁধল না আমার সাথে এত বড় নাটক করতে।আমি কি ক্ষতি করেছিলাম তোমার।

—তোমাকে যা বলেছি ঠিক বলেছি।তুমি কোন ক্ষতি কর নি কিন্তু আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতার জন্য তোমাকে এটুকু কষ্ট দিতেই হত।তা না হলে আমরা ভালো থাকতাম না।

—তাই বলে এত বড় ধোঁকা এত বড় ছলনা।পারলে কি করে?আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি তুমি তো জান।কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিলে

—সরি অরণ্য এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।মনে কষ্ট নিও না।আর একটা সুসংবাদ দেই তোমার কাছে এটা সুসংবাদ কি না জানি না তবে আমার কাছে সুসংবাদ।বিয়ের ১ মাস পরেই জানতে পারি তোমার আর আমার বাচ্চা আমার পেটে এসেছে। ১৫ দিন আগে আমি আর আকাশ মিলে ঐটাকে নষ্ট করে দেই।

—এত বড় অন্যায় তুমি কিভাবে করলে মাবিহা।মা হয়ে নিজের বাচ্চা নষ্ট করতে কেমনে পারলে।

—কিচ্ছু কারার নেই আকাশের জন্য আমি সব করতে পারি।আকাশ চলে আসবে।আমি ওর সাথে চলে যাব।

হঠাৎ টুংটাং কলিংবেলের আওয়াজ শোনা গেল।মাবিহা দরজা খুলল। খেয়াল করলাম একটা ছেলে এসেছে।মাবিহা তাকে জড়িয়ে ধরে আমার কাছে আনল আর বলল

—অরণ্য এ আকাশ আমার স্বামী।আর আকাশ তুমি তো অরণ্যকে চিনই।

আকাশ একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকাল আর বলল

—হাই ব্র জীবনে চড়াই উতরাই আসেই।আপনার জন্য আমাদের ভালোবাসা আজকে পূর্ণতা পেল।কিন্তু ব্র ভালোবাসায় অন্ধ হলেই হয় না।আর ভালোবাসা পেতে হলে বুদ্ধি লাগে টাকা আর কোয়ালিটি দিয়ে কিচ্ছু হয় না।আমি মাবিহাকে নিয়ে গেলাম ভালো থাকবেন।

এ বলে তারা চলে গেল।সেদিন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম আমি জানি শুধু।এতটা কষ্টই পেয়ে ছিলাম যে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম।ধাক্কাটা সামলাতে অনেক সময় লাগল।তারপর আবার কাজে মনযোগ দিলাম।মাবিহার জন্য একটা হাহাকার ছিল তবুও।একদিন হাসপাতালে কেউ ছিল না আমি ছাড়া।হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা মেয়ে আসল আর বলল

—ডাক্তার সাহেব আমার পেটে খুব ব্যাথা একটু আল্ট্রা করে দেখেন না কি হয়েছে।পেটের ব্যাথায় নড়তে পারছি।

মেয়েটার কান্না দেখে বুঝতে পারলাম মেয়েটা হয়ত অনেক কষ্ট পাচ্ছে পেটের ব্যাথায়।কিন্তু এ মুহুর্তে হাসপাতালে কোন মহিলা মানুষ নেই ওনাকে একা আল্ট্রা রুমে নিয়ে কি করে যায়।সারা হাসপাতালে একটা মহিলা নার্স ছিল না তখন।আমি বাধ্য হয়ে ওনার কান্না দেখে একাই আল্ট্রা রুমে নিয়ে যায়।আল্ট্রা রুমে নিয়ে যাওয়ার পর উনি হঠাৎ দরজা লাগিয়ে দিল।আর বাঁচাও বাঁচাও করে চিৎকার দিতে লাগল।আমি বুঝতে পারছিলাম না ওনি এমন কেন করছে।আমি ওনাকে বললাম

—-আপনি এমন কেন করছেন?আমি তো কিছু করি নি।আমাকে এভাবে ফাঁসাচ্ছেন কেন।

উনি আরও জোরে চিৎকার করতে লাগল।আমিও ভয় পেতে লাগলাম ওনি এমন কেন করছেন এটা ভেবে।ভয়ে রুমের দরজা খুলে ফেললাম।দেখলাম আমার কলিগ দাঁড়ানো আরও কিছু লোক সাথে।আমার কলিগ বলে উঠল

–ছিঃ অরণ্য সাহেব আপনি এমন কাজ করলেন?

—দেখুন আমি কিছু করে নি আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

—আপনি যে কিছু করেন নি তা তো বুঝতেই বা দেখতেই পারছি.।আপনার বউ আপনাকে এজন্যই ছেড়ে গিয়েছে তাই না।

সেদিন আমার কথা কেউ বিশ্বাস করে নি।আমার নামে ধর্ষনের মামলা করা হল।হাসপাতালের এক নার্সকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি কেমন?।ওনিও সেদিন মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছিল বলেছিল

—আমি এতদিন ভয়ে মুখ খুলে নি।এ অরণ্য সাহেব আমাকে অনেকবার কুপ্রস্তাব দিয়েছে।অনেকবার আমাকে ব্যাবহার করার চেষ্টা করেছে।ওনি একজন বদমাইশ লোক।ওনার যোগ্য শাস্তি কামনা করছি।

আমি সেদিন বুঝতে পারছিলাম না ওনি কেন আমার নামে এমন মিথ্যা বলল।যে আমি মাবিহাকে ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকায় নি সে আমাকে এতটা দোষারূপ করল।আমাকে ধর্ষনের জন্য শাস্তি দেওয়া হল।পত্রিকায় বড় করে হেডলাইন দেওয়া হল এক অবহেলিত মেয়েকে ধর্ষনের দায়ে ডাক্তার অরণ্যকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।ধর্ষক হিসেবে আমার ছবি ছাপা হল।আমাকে চাকুরীচ্যুত করা হল।দুই বছরের জেল দেওয়া হল।

পরে জানতে পারি আমার কলিগ ওদেরকে দিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছে কারন আমার পরিচিতি বেশি ছিল রোগীরা ওর থেকে বেশি আমার কাছে আসত।এজন্য মেয়ে দুইটারে টাকা দিয়ে এ কাজ করিয়েছে।হায়রে টাকা! সামান্য কয়টা টাকার জন্য মেয়ে দুইটা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিল।আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিল।বাইরে মুখ দেখাতেও আমার এখন কষ্ট হয়।কি দোষ ছিল আমার?আমার নিজের মা আমাকে ছেড়ে গেল।আমাকে ছেড়েই যদি যেতে হত আমাকে জন্ম কেন দিল?কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তাদের?আমার ভালোবাসা আমাকে ধোকা দিল।কিভাবে পারল একটা মেয়ে শুধু মাত্র টাকার জন্য আমার সাথে এত বড় ছলনা করতে।কিভাবে পারল আমাকে কষ্ট দিতে।কিভাবে পারল আমার বাচ্চাটা আসার আগেই খুন করতে?আমার দোষটা কোথায় ছিল?ভালো ডাক্তার হয়ে ও আমি আজকে চাকুরীচ্যুত।ধর্ষণ না করেও আমি আজকে ধর্ষক।দোষটা আমার কোথায় ছিল?এ সব কিছুই হয়েছে ছলনাময়ী নারীদের জন্য।আমি দেখেছি নারীর রূপ গুলো।নারীরা শুধু ঠকাতে জানে।ছলনা করতে জানে।বাবা ঠিকেই বলেছিল নারী হল এক “ছলনাময়ী বিষাক্ত জাল”। আজকে এ কথার মানেটা ঠিকেই বুঝেছি।এখন কোন নারীকে আমার সহ্য হয় না।কোন নারী কষ্ট পেতে দেখলে আমার শান্তি লাগে।নারী আমার কাছে ঘৃনিত বস্তু ছাড়া আর কিছু না।তোমার আগেও একটা মেয়েকে এনেছিলাম সেও পালিয়ে গেছে।তোমাকে ও সুযোগ দিয়েছিলাম পালানোর তুমি পালাও নি।তাই এত কিছু তোমাকে বললাম।

ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে বেশ অবাক হল।অরণ্যের মনে যে এত কষ্ট লুকানো ছিল ডালিয়া বুঝতেই পারে নি।ডালিয়ার সবসময় মনে হত পুরুষ মানুষ জন্তু আর জানোয়ার আর এখন অরণ্যের কথা শোনে মনে হচ্ছে মেয়ে মানুষ ও কম না।ভালোই বুঝতে পারছিল অরণ্য বারবার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে।আর এসব বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণা অরণ্যকে এমন বানিয়েছে।হাঠাৎ ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্য একটা বিদঘুটে হাসি দিচ্ছে।ডালিয়া ভয় পেয়ে গেল অরণ্য এভাবে কেন হাসছে।ভয়ে ভয়ে ডালিয়া অরণ্যকে বলল

—অরণ্য বাবু এভাবে হাসছেন কেন?

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে দৌঁড়ে রান্না ঘরে গেল আর রান্না ঘর থেকে এসে ডালিয়ার…

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here