পঞ্চভুজ তারা পর্ব-৫

0
441

#পঞ্চভূজ_তারা
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৫
আফরান আর নিবির ঘরের মধ্যে অনবরত ছুটছে কারন তাদের অনাবরত তারা করে চলছে সাদু।তার একটাই কথা আফরান এবং নিবির এর সাহস বেরে গিয়েছে যে তারা নিজেদের বোনকে ভার্সিটিতে তার উল্লুক মার্কা ফ্রেন্ড’সদের নিয়ে রেগিং করতে চায়।এই অপরাধের কারনে আফরান এবং নিবির কে খুন্তি হাতে মারার জন্য ছুটে চলেছে সাদু।আর এইসব উপভোগ করছে আলিশা, ফরিদা (সাদুর মা) আর আলম (সাদুর বাবা)। তারা বেশ ইনজয় করছেন কারন এইসব যে নিত্য দিনের কাহিনি।তারা পোপকর্ন নিয়ে বসেছেন একেবারে।এদিকে সাদু দৌড়াচ্ছে আর বলছে,
–” তোরা দুইটা আমার ভাই না-কি শত্রু। আজ তোদের আমি এই খুন্তি দিয়ে পিটিয়ে ছাল তুলে দেবো।”
আফরান ছুটতে ছুটতেই নিবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–” নিবির এখান থেকে একদৌড়ে সোজা মনিরদের বাসায় ডুকে যাবি একেবারে মনির এর রুমে বুজেছিস নাহলে আর এই ডাইনির হাত থেকে বাচার উপায় নাই।”
নিবির করুন ভাবে তাকালো আফরানের দিকে বললো,
–“ওকে ব্রো লেট্স গো ওয়ান,টু,থ্রী।”
লে দৌড় আফরান আর নিবির একছুটে মনিরদের বাসায়।যেহেতু মনির আর সাদুদের বাড়ি একসাথে। যেতে মাত্র ৩-৫ মিনিট লাগবে।তাই তারা দুই ভাই মনির এর কাছে যাওয়ার জন্য ছুট লাগালো।আফরান আর নিবির গেটের দিকে পা বাড়াতেই সাদু নিজের হাতের খুন্তি ওদেত দিকে ছুরে মারলো।ভাজ্ঞিস খুন্তিটা লাগেনি কারন তার আগেই ওরা দুজনেই পগারপাড়।সাদু রেগে বিরবির করে বলে,
–” হাহ আসছে আমাকে রেগিং করতে। এখন পালিয়ে গেছে শয়তান কোথাকার।”
আলিশা হাসতে হাসতে বলে,
–“একেবারে ভেগে গেছে মনে হয় আর আজ বাড়ি আসবে না।”
সাদু কিছু একটা ভেবে লাফিয়ে উঠে বললো,
–” আমার এই উল্লুন ভাই দুইটা তো আজকে আর আসবে না।তো আমি নূর,আলিফা আর মিম কে আমাদের বাড়ি ফোন করে আসতে বলি।কাল তো ভার্সিটি ওফ।তাহলে আজ আমরা জমিয়ে আড্ডা দিবো!কি বলিস?”
আলিশা খুশি হয়ে বলে,
–” গ্রেট আইডিয়া তাড়াতাড়ি ফোন কর।”
সাদু আলিশার দিকে দাত কেলিয়ে তাকালো তা দেখে আলিশা নিজের কপাল চাপরাতে চাপরাতে বলে,
–” তুই জীবনেও ভালো হবি না।ওলওয়েজ কাউকে কল দিতে হলে আগে আমাকে দিয়ে দিয়াতি এখন আমেরিকা থেকে এসেও তোর এই ফকিন্নি স্বভাব বদলাই নাই।”
সাদু দাত কেলিয়ে বলে,
–” দোস্ত ইউ নো না আমি সাদিয়া জাহান উম্মি…”
ওকে মাঝপথে থামিয়ে আলিশা বললো,
–” হ্যা জানি তুই সাদিয়া জাহান উম্মি উর্ফে সাদু।আর সাদু কখনো বদলায় না।এইতো তাইনা ফকিন্নি।”
–“???।”সাদু।
আলিশা কল দিতে দিতেই বলে,
–” ব্যাঙের মতো চেহারা বানানো ওফ কর।”
সাদু একটা ভেংচি কেটে দিলো।
____________________________
এদিকে মনির এর রুমে বসে আছে মনির, আফরান,নিবির,আরিফ আর মেরাজ।মনির যখন নূর থেকে শুনেছে যে সে সাদুদের বাড়ি যাবে আর আজকে আসবে না তারা সব ফ্রেন্ড’স রা আজ রাতে একসাথে থাকবে।তাই মনির ও আরিফ আর মেরাজ কে কল করে আনিয়েছে।আর আফরান এবং নিবির তো সাদুর তাড়া খেয়ে আগেই মনিরদের বাড়ি এসে হাজির হয়েছে।

মনির এর বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে আছে আফরান আর নিবির।আধাঘন্টা যাবত এইভাবেই শুয়ে আছে তারা।আর এতে চরম রকম বিরক্তবোধ করছে মনির,আরিফ আর মেরাজ। মনির আরিফ আর মেরাজ কে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করতেই ওরা ‘ ওয়ান,টু, থ্রী’ বলে একটানে আফরান আর নিবিরকে বিছানা থেকে টেনে ফ্লোড়ে নামিয়ে দিলো।আফরান ব্যাথা পেয়ে বলে,
–“সালা এইভাবে টেনে নামালি কেন। এখন কি এইখানেও শান্তি দিবো না।”
নিবির কাদো কাদো হয়ে বলে,
–” আফরান ব্রো।আমাদের কেউ ভালোবাসে না।এখন নিজের বেস্টুরাও আমাদের শত্রু।পিকুর জ্বালায় বাড়িতে থাকতে পারি না এখন তো আবার ওত ওই এলিয়েন ফ্রেন্ড ও সাথে আছে।আর এখানে এসে এদের জ্বালায় থাকতে পারি না।”
মনির ভ্রু-কুচকে বলে,
–” জ্বলাজ্বলি পরে করিস এখন বল তোরা দুজন[আফরান আর নিবিরকে] দুইজন এইভাবে ষাড়ের মতো দৌড়িয়ে একেবারে আমার বিছানায় এইযে সুইয়েছিস উঠার নাম নাই কাহিনি কি বল?”
আফরান একে একে সব খুলে বললো।তা শুনে মনির ও বললো,
–“নূর ও আমাকে মেরেছে আসার পর।পরে ওকে চকোলেট দিয়ে থামিয়েছি।”
আরিফ বলে উঠে,
–“সবগুলাই এক কোনটার থেকে কোনটা কম না।”
মেরাজ কাদো কাদো হয়ে বলে,
–“আজ যেই পারা দিয়েছে আমার পায়ে ব্যাথায় এখনো টনটন করছে পা’টা।”
মনির মুচকি হাসলো বললো,
–“তবুও উম্মি যেমনি হোক আমি ওকে ভালোবাসি।আমার এই এলিয়েনকেই দরকার যতো প্যারা দিক আমি সয্য করে নিবো।”
আফরান মনির এর বাহুতে একটা থাপ্পর মেরে বলে,
–” তোর লজ্জা করে না। ভাইয়ের সামনে তার বোনকে নিয়ে এইসব বলিস।”
মনির ভাবলেশহীনভাবে বলে,
–“তুই মনে হয় দুধে ধওয়া তুলসি পাতা। আমার বোনকেও তো তুই ভালোবাসিস তার বেলায়।”
আফরান লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বলে,
–” হ্যা ভালোবাসি তো নূর কে।কিন্তু কে জানে আমার নূরি পাথর এর অভীমান কবে ভাংবে।সমস্যা নেই আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ওর অভীমান ভাংগাবো। তাই না দোস্ত।”
–“হ্যা!!” বলে মনির আর আফরান একে অপরের দিকে তাকিয়ে বাকিদের দিকেও তাকালো দেখে নিবির,আরিফ, মেরাজ গালে হাত দিয়ে ওদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
মনির আর আফরান বললো,
–“কি হয়েছে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
নিবির, আরিফ, মেরাজ গাল থেকে হাত সরিয়ে একসাথে চিতকার করে বলে উঠলো
–” ওওও মাগোওও টুরু লাভ!”””
মনির আর আফরান এর জানে তব্দা লেগে যাবার উপক্রম।মনির চেচিয়ে বলে,
–” চুপ কর হারামি গুলা কি বলছিস এইসব।”
আফরান রাগিভাবে বলে,
–“সব কয়টা পাগল হয়ে গেছে।”
মেরাজ দুঃখি দুঃখীভাব এনে বলে,
–” আজ আমি টুরু লাভ পাই নি বলে!”
আরিফ মেরাজ কে এক ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফালিয়ে দিয়ে বলে,
–“মরে যা!!আমরা ৪০শা খাবো।”
মেরাজ উঠে বসতে বসতে বললো,
–“তোদের একটাকেও আমার ৪০শার দাওয়াত দিবো না।”
সবাই জোড়ে বলে,
–“আমরা দাওয়াত ছাড়াই হাজির হবো।”
মেরাজ রেগে মেগে সামনে ছিলো পুডিং যা মনির এর আম্মু ওদের দিয়ে গেছে খেতে সেইটা নিয়ে তেড়ে গেলো ওদের দিকে। ওরাও নিজেদের বাচানোর জন্য ভাগলো। এদিকে আরিফ দৌড়ে গেলো ব্যালকনিতে।মনির এর ব্যালকনি আর সাদুর ব্যালকনি পাশাপাশা একেবারে। মনির নিজেই এইরুমটা বেছে নিয়েছে কারন সে চুপি চুপি সাদুকে দেখে।আফরান আর মনির দুজনে বুদ্ধি করেই দুজনেই তাদের প্রেয়সীকে দেখার এই ব্যবস্থা করেছে।এদিকে আরিফ যখন ব্যালকনিতে যায় মেরাজ হাতের পুডিংটা আরিফ এর দিকে ছুড়ে মারে।আরিফ নিচু হয়ে যায় ফলে পুডিংটি উড়ন্ত বিমানের মতো উড়ে গিয়ে ল্যান্ড করে বসে ভূলভাল জায়গায়।মানে একেবারে মিম এর মাথায়।সাদুর রুমের ব্যালকনি দরজাটা পুরো কাচের যা একটানে পুরো খুলা যায় আর তাই পুরোটা খুলে ফ্লোড়ে কাউচে বসে ওরা আড্ডা দিচ্ছিলো যার ফলে মেরাজ এর ফিক্কা মারা পুডিং অনায়াসে গিয়ে ল্যান্ড করে মিম এর মাথায়।এদিকে সাদুরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বুজার চেষ্টা করছে যে এই পুডিং টা কোথা থেকে উড়ে এসে একেবারে ডিম থুক্কু মিম এর মাথায় ল্যান্ড করলো।মিম এর অবস্থা দেখে সাদু,নূর,আলিফা,আলিশার পেট ফেটে হাসি আসছে।তবুও তারা মিম এর চেহারা দেখে তা অতি কষ্টে দমিয়ে রেখেছে।মিম এর অবস্থা এমন যে পারলে এক্ষুনি সব পারমানবিক বোমা মেরে ওই ব্যাক্তিকে উড়িয়ে দেয় যে এই কাজটা করেছে।
এইপাশে মেরাজ ও বেক্কল বনে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে।না জানি তার কপালে কি আছে।আজ শনি,মঙ্গল,বুধ,বৃহস্পতি,শ্রক্র একসাথে হামলে পড়বে তার উপর।মেরাজ কাদোকাদো হয়ে তাকালো আরিফ এর দিকে দাতে দাত চেপে বললো,,
–“আজ যদি আমার সাথে কিছু উল্টাপাল্টা হয় তাহলে তোকে কুপিয়ে মেরে আমি জেলে যাবো হারামি।”
মনির,আফরান,নিবির দাড়িয়ে দাডিয়ে মুখটিপে হাসছে।আজকে মেরাজ বেচারার দিকে আইলা,সিডর,আমফান একসাথে তেড়ে আসছে।

চলবে,,
ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।সকালের পার্ট টা ভালো হয় নি তাই আর একটা পার্ট দিলাম।কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here