পঞ্চভুজ তারা পর্ব-৬

0
376

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ ০৬
মিম রাগের চোটে লাল হয়ে গিয়েছে।রাগী চোখে ব্যালকনি দিয়ে মেরাজ এর দিক তাকিয়ে আছে।এদিকে সাদু,নূর,আলিফা,আলিশা ব্যালকনি দিয়ে তাকালো পাশের বিল্ডিং এর ব্যালকনিতে দেখে মেরাজ আবুল এর মতো দাড়িয়ে আছে পাশেই আরিফ দাড়ানো।আর মনির,আফরান,নিবির মুখ টিপে হাসছে।
মনির চাপা হাসি দিয়ে বলে,
–“আব তেরা কেয়া হোগা মেরাজ?”
–“ওর কেয়া হোগা মিম উছকা ভার্তা বানাকার কুত্তোকো খিলা দেগি!”বলেই হাসতে লাগলো আফরান সাথে নিবির ও হাসছে।এদিকে মেরাজ ভয়ে কাচুমাচু হয়ে ওদের দিকে তাকালো।আবারো সাদুর ব্যালকনির দিকে তাকাতেই আৎকে উঠেই তাড়াতাড়ি সরে গেলো।ব্যস কিছুক্ষন আগে মিম এর মাথায় উরন্ত পুডিং পড়েছে। আর এখন ফ্লাইং ডিম এসে পড়লো আফরান এর মুখ বরাবর।বেচারা নাক মুখ কুচকে দাড়িয়ে আছে।ইসস কাচা ডিম তাও একেবারে মুখ বরাবর। ইয়াকককক!!!নিবির বলে উঠে,
–এএলো ব্রো এভি কাম সে গায়া। কাচা আন্ডা আফরানকে মুপে জাকার ফুটা।”
আফরান রাগী চোখে তাকালো নিবির এর দিকে।নিবির সাথে সাথে নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে দিলো।মানে সে একেবারে নিস্পাপ ভদ্র।
মিম ভয়ে ভয়ে চেচিয়ে বলে,
–“আফরান ভাইয়া আমি তো এই উল্লুকটাকে মারতে চেয়েছিলাম।আপনার গায়ে লেগে গেছে।সব দোশ এই উল্লুক টার।”
–“ওই তুমি আমার দোশ দিচ্ছো কেন?আমি সরে গেছি বলে কি আমার দোশ।”মেরাজ বলে উঠলো।
–“হ্যা আপনার দোশ।”মিম ও দমে নেই।
এদিকে নূর নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে না পেরে জোড়ে জোড়ে হেসে দিলো।
–“একেবারে সঠিক জায়গায় ল্যান্ড করছে ডিমটা।মিম রে তোরে আমি ফ্রী তে আরো এক হালি আন্ডা গিফটাইমু যা। ”
আফরান কিছু না বলে রেগে হনহনিয়ে চলে গেলো।
নূর আবারো বলে,
–“যাহ বাবা!লজ্জা পেয়ে চলে গেলো মনে হয়।”
সাদু মাথা ঝাকিয়ে বললো,
–“উহুউউ।আফরান ভাই আমফান তুফান নিয়ে আসছে।”
আলিশা হেসে বলে,,
–“,ইসস আফরান ভাইয়াটার মুখে না পরে যদি ওই খাটাসটার [নিবিরকে] মুখে পড়তো আমি লুংগি থুক্কু প্লাজু ড্যান্স দিতাম।”
আলিফা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
–“হ্যা তারপর উষ্টা খেয়ে পরে চিতপটাং।”
আলিশা এক ধমক দিলো,
–“তুই চুপ কর ফকিন্নি।”ওলওয়েজ কুফা দিস কেন?”
–“ওহ মাই গোড!!!”””””” সাদুর চিল্লানো শুনে সাদুর দৃষ্টি বরাবর তাকালো। দেখে আফরান ও ডিম নিয়ে হাজির।নূর ভ্রু-কুচকে বলে,
–” এ আবার ডিম নিয়ে আসলো কেন?বাই দ্যা ওয়ে সাদু তোর ভাই কি ডিমে তা দিয়ে মুরগির বাচ্চা ফুটাবে?”
সাদু ধমকে বলে,
–“ইডিয়ট মানুষ কি কখনো তা দিয়ে মুরগির বাচ্চা ফুটাতে পারে!”তুইইইইইইইই……..”
সাদু বলার আগেই ঠাস করে একটা আন্ডা তার মাথায়।হা হয়ে আছে এটা কি হলো।সাদু মনির এর ব্যালকনির দিকে তাকালো।দেখে আফরান মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আফরান এক ঢোক গিলে বলে,
–“পিকু আমার দোশ নেই। তোর বান্ধবি নিজে সরে গিয়েছে তাই তোর মাথায় আন্ডা ফুট গায়া।”
–“ভাইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই!!!”সাদু গর্জন দিয়ে উঠলো।
মনির কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,
–“এইবার এইটাও শেষ।সেরনি খেপেছে।”
সাদু আবার চিল্লিয়ে বলে,
–“,মিম!!ডিম গুলো নিয়ে এদিকে আয়।”
মিম সুরসুর করে ডিম নিয়ে আসলো।আফরান অবস্থা খারাপ দেখে মনির পিছনে লুকালো।
মনির চেচিয়ে উঠলো,,
–“এই সালা বাহির হো আমার পিছন থাইকা।আফরাইন্না বাহির হো।”
মনির যেদিকে যাচ্ছে আফরান ও সেদিকে যাচ্ছে। আফরান অসহায় হয়ে বলে,
–“দোস্ত বাচা আমাকে।তুই না আমার দুলাই আমাকে বাচা।”
–“আমি এখনো তোর দুলাই হই নাই।সর আমার পিছন থেকে…..”
নিবির বলে উঠে,,
–“গ্যায়া কাম সে ইছকে মু পারবি আন্ডা ফুট গায়া।”
সাদু আফরানকে টার্গেট করে ডিম মেরেছিলো।যেহেতু আফরান মনির এর পিছনে ছিলো।তাই ডিম গিয়ে পড়েছে মনির এর গায়ে।
–“ইয়াক্কক্কক্কক!!!!এটা কি করলে তুমি স্টুপিট।”
সাদু আমতা আমতা করে বলে,
–“সরি ভাইয়া!! “”
–“কিসের সরি ইডিয়ট।[আরিফকে উদ্দেশ্য করে]এই আরিফ ডিম দে আজকে ওকে আমি ডিম দিয়ে গোসল করাবো!”
মনির ডিম নিয়ে ফিক্কে মারলো।’নাহিইইইইই মাম্মিইইই’ বলে চিল্লিয়ে সাদু সরে যেতেই আবারো ডিম গিয়ে লাগলো নূর এর মুখে।
–“,মনির ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।””
আফরান ফিক করে হেসে দিলো।নূর আরো রেগে শেষ।সেও ২ টা ডিম নিয়ে মারলো দুটোই আফরান এর মুখে।আফরান ও মারলো।এইভাবে নূর,আফরান,সাদু,মনির,মিম,মেরাজ ডিম ছুড়াছুড়ি করতে লাগলো।ডিম শেষ হয়ে যাওয়াতে সাদু আলিফা কে আর মনির আরিফ কে আরো ডিম আনতে বললো।আলিফা ডিম নিয়ে এসে দেখে আরিফ হাসছে।তা দেখে আলিফা বলে,
–“এতো হাসি পাচ্ছে আপনার তাইনা আপনার মাথায়েও আন্ডা ফুটাবো দাড়ান।”
আলিফা ডিম নিয়ে ছুড়ে মারলো আরিফ এর গায়ে। একেবারে আরিফ এর মাথায়।আরিফ ডিম মারার উৎস খুজতে গিয়ে দেখে আলিফা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।নিশ্চই এই মেয়ে মেরেছে ডিম।আরিফ ও আলিফাকে ডিম ছুড়ে মারলো।ব্যাস ওরাও লেগে গেলো ডিম ছুড়ার যুদ্ধে।আলিশাও সুযোগ বুজে নিবিরকে একটা ডিম নিয়ে ছুড়ে মারলো।ঠাস করে আন্ডা ল্যান্ড করলো নিবির এর মাথায়।নিবির এর মাথায় তাও পড়েছে আবার পচা ডিম।ইউউউউউ!?।নিবির করুনভাবে বলে,
–“আন্ডা আমার মাথায়ও ফুটবে আমি জানি।পার মেরা ফুটা কিসমাত আন্ডাফি নিকলা হারামখোর।সালা আমার মাথাই পচা আন্ডা ফুটা লাগলো।মাম্মিইইইইই।”
আবার আলিশার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
–“তুমিই আন্ডা যুদ্ধ করবা তাই তো লেট্স স্টার্ট।”
বলেই নিবির ও ডিম ছুড়ে মারলো এইভাবেই ডিম ছুড়াছড়ি করতে লাগলো ওরা।লাফালাফি করে ডিম ছুড়াছুড়ি করছে।

এদিকে নিচে বসে চা খাচ্ছিলেন সাদুর আম্মু আর আব্বু।মেয়ের রুম থেকে এরকম ধুপ-ধাপ লাফালাফির শব্দ পেয়ে। সাদুর আম্মু বলে,
–“কি গো উম্মির আব্বু তোমার মেয়ের রুম থেকে এরকম শব্দ আসছে কেন?”
সাদুর আব্বু ভ্রু-কুচকে বলে,
–“কি জানি!তুমি যেখানে আছো আমিও সেখানে তার চেয়ে বরং দেখে আসি কি হচ্ছে!”
সাদুর আব্বু আম্মু চল্লেন মেয়ের রুমে কি হচ্ছে দেখার জন্য।
এইদিকে মনির এর মা, বাবা আর নূর এর মা,বাবাও মনির এর রুমে যাচ্ছেন দেখার জন্য আসলে হচ্ছেটা কি?”
তারা সবাই নিজেদের ছেলেমেয়ে দের রুমে এসে অবাক চাড়িদিকে ডিম এর ছড়াছড়ি আর তার মধ্যেই মনির,আফরান,নিবির,আরিফ আর মেরাজ সুয়ে আছে তাদের সারা শরীরে ডিম দিয়ে লেপ্টানো।
সাদুর বাবা,মা শক্ড তার তাদের ছেলেমেয়েদের একি অবস্থা।মনে হচ্ছে ডিমের হোলি খেলেছে এরা।এক একটার চেহারা নকশা বদলে গেছে।এ কি কান্ড।
_________________________
ভার্সিটির মাঠের গাছতলায় বসে আছে মনির,আফরান,নিবির,আরিফা আর মেরাজ।মনির আর আফরান চরম বিরক্ত হয়ে আছে নিবির, আরিফ আর মেরাজ এর উপর।
মনির রেগে নিবিরকে এক ধাক্কা দিয়ে বলে,
–“উঠ হাতিটা সর আমার উপর।থেকে ভার্সিটি এসে ঘুমে ঝিমুচ্ছিস কেন?”
নিবির ধাক্কা খেয়ে আবার কাত হয়ে পড়ে হা করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
আরিফ কফি খাচ্ছে আর ঘুমে ডুলুমুলু হয়ে বলে,
–“,সালা কালকে ডিমের হলি খেলে কি হয়েছে মনে আছে।পুরো রুম পরিস্কার করা লেগেছে রাত জেগে।আবার সারা শরীরে যেই ডিমের গন্ধ ইয়াককক!এক ঘন্টা শাওয়ার নিয়েও গন্ধ যাই নি।”
আফরান বলে উঠে,
–“তো আমরা কি পায়ের উপর পা তুলে বসে ছিলাম।আমরা পরিস্কার করিনাই।তারপরেও কি তোদের মতো ঝিমুচ্ছি না-কি?”
মেরাজ ঘুমু চোখে একবার তাকালো আফরান আর মনির এর দিকে আবারো চোখ বুজে বলে,
–“হো ভাই তোরা সুপার হিরো।তোদের ঘুম আসে না।আন্ডা হোলি খেলি তোদের শক্তি বেরে গেছে।কোনগ্রাচুলেশন ব্রো।”
বলেই আবারো খা খা করে নাক ডেকে গাছের সাথে হেলাম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।মনির,আফরান মাথা চেপে ধরে আছে। কালকে আন্ডা যুদ্ধ করার পর।নিজ নিজ মায়েদের করা নির্দেশ মতো।একঘন্টার মধ্যে পুরো রুম সাফ করেছে ওরা যাকে বলে একেবারে ঝকঝকা।আর একঘন্টা করে শাওয়ার নিয়েছে।তাই ওদের এই অবস্থা।আর বেচারা নিবির এর গায়ে তো একেবারে পচা আন্ডা ফুটেছে।শরীর গসতে গসতে বেচারার জীবনটা বদনা থুক্কু বেদনা। তাই সে এরকম মরার মতো ঘুমাচ্ছে।মেয়েদের কেও সেম শাস্তি ভোগ করা হয়েছে।তারাও নিজেদের আন্ডাওয়ালা রুম আন্ডা ভরপুর মাখামাখি শরীর নিয়ে সাফ করেছে।পরে শাওয়ার নিয়েছে।
আহারে কালকের পুরো দিনটাই আন্ডাওয়ালা জিন্দেগী কেটেছে সবার।

চলবে,,

ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।আজকে গল্প দেওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা।তোমাগো থ্রেড পাইয়া ডরাইয়া দিয়া দিছি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here