পঞ্চভুজ তারা পর্ব-৩

0
491

#পঞ্চভূজ_তারা
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৩
সকালেই সাদু,নিবির আর আফরান আর ওদের বাবা মা।এয়াপোর্ট পৌছে প্লেনে উঠে নিজ নিজ জায়গা মতো বসে পড়লো।সাদুর বাবা আর মা এক জায়গায়,নিবির আর আফরান এক জায়গায়।শুধু সাদু নিবির আর আফরানদের এক সিটে আগে একলা সিট পড়েঁছে।তো যে যার যার জায়গায় বসে পড়লো।সাদু সিটে হেলাম দিয়ে কানে ইয়ারপোড্স গুজে গান শুনতে লাগলো।কিছুক্ষন পর ওর পাশে কেউ বসেছে সেটা সাদু টের পেলো কিন্তু চোখ খুললো না।কিন্তু হঠাৎ কিছু একটার গন্ধ পেয়ে সাদু চোখ মুখ কুচকে ফেললো।এক মাত্র এই জিনিসের গন্ধটা সাদু একদম সজ্য করতে পারে না।তাই সাদু উঠে পাশে তাকালো দেখে একটা মেয়ে বসে আছে তার পাশে।দেখতে স্মার্ট, ফর্সা গায়ের রং,হাটু অব্দি জামা পড়েছে ফলে তার ফর্সা পা দুটো দৃস্যমান।দেখে বাঙ্গালিই মনে হচ্ছে। সাদু ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস বললো,
–“এক্সকিউজ মি!”
সাদুর কথা শুনে মেয়েটি সাদুর দিকে তাকালো বললো,
–“,ইয়েস!”
–“আসলে আপু আপনি যেই পারফিউম টা ইউজ করছেন। সেটা এখন ইউজ না করে প্লেন টেক-ওফ করলে ইউজ করিয়েন।”
মেয়েটি চোখ উল্টিয়ে বলে,
–“কেন?কি হয়েছে এতে?”
–“আসলে আপু আমি চকোলেট ফ্লেভার বা এর গন্ধ সয্য করতে পারি না।আপনি চকোলেট ফ্লেভার এর পারফিউম ইউজ করছিলেন তাই আমার সমস্যা হচ্ছিলো।”
মেয়েটি ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বলে,
–“সো হুয়াট কেন আই ডু?আর এমনিতেও ছোট ঘরের ছেলেমেয়েদেরা এইসব দামি ব্রান্ড এর কোন কিছু সয্য করতে পারে না।”
সাদুর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।আশ্চর্য মেয়েটাকে সে কথা সুন্দর ভাবে বললো আর এই মেয়েটা ওকে রিতিমতো অপমান করছে।সাদু রেগে বলে,
–“আপু ভদ্রতা সহীত কথা বলুন।আমি আপনাকে জাস্ট এটা বলেছি যে আমার চকোলেট ফ্লেভার এ সমস্যা হয়।”
মেয়েটি একবার সাদুর পা থেকে মাথা অবদি দেখে মুখ বাকিয়ে বলে,
–“নাহ জানি এইসব গাইয়া কোথা থেকে যে আসে গোড নোস! হাহ!এদেরকে প্লেনে উঠতে দেয় কে?”
মেয়েটার কথা শুনে সাদু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো সিট থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো,
–” ওরে ফকিন্নি মাইয়া তুই হাটু অব্দি ছিড়া জামা পরে নিজেকে বড়লোক্স ভাবিস।এতোক্ষন ধরে তোর পক পক শুনছিলাম কিছু বলি নাই।শাকচুন্নি মাইয়া তোর জামার থেকে আমার জুতার দাম বেশি। সেই তুই কি না আমাকে টাকার গরম দেখাস।”
মেয়েটি চিৎকার করে দাড়িয়ে উঠে বলে,
–“ওয়াট দ্যা হেল!এইসব পাগল টাগল প্লেনে উঠাইছে কে?”
সাদু রেগে মেয়েটিকে চিল্লিয়ে বলছে,
–“তুই কাকে পাগল বললি আমি পাগল। পেত্নি তুই পাগল তোকে আজ মেরেই ফেলবো।তোর সব চুল টেনে ছিরে ফেলবো।”
এদিকে আফরান আর নিবির সাদুর চিৎকার চেচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি সাদুর কাছে গেলো।ওরা নেয়েটিকে সরিয়ে সাদুকে সামাল দিচ্ছে।আর সাদু তো ব্যঙের মতো লাফাচ্ছে ছাড়া পাবার জন্য।এয়ারহোস্টের্সরা এসে চেচামেচি করছে যে কেন এমন উশঙ্খলতা তৈরি করছে তারা। অবশেষে আফরান আর নিবির অনেক বুজিয়ে শুনিয়ে ম্যানেজ করেছে সব।আর সাদুকে অন্য সিটে বসতে দিয়েছি।তার জন্যও সাদু সেই কি চেচামেচি করে ছিলো যে কেন সে যাবে অন্য সিটে নিজের সিট রেখে।নিবির আইসক্রিম এর লোভ দেখিয়েছে অবশেষে সে শান্ত হয়েছে।
______________বর্তমান,,
সবাই হতবম্ভ হয়ে আছে।মনির তো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।মানে একটা কতোটা দুষ্টু হলে প্লেনে উঠেও ঝগরা করে। মনির ভেবছিলো আমেরিকা গিয়ে হয়তো সাদু একটু শান্ত হয়েছে।কিন্তু না তার ধারনা ভূল প্রমান হলো।সাদু আগের মতোই আছে।একটুও বদলাই নি।ভেবেই একটা মুচকি হাসি দিলো মনির।তা দেখে নিবির বলে উঠলো,
–“, সালা তুই ভেটাকাস! তোর বউ প্লেনেও আমাদের মান ইজ্জত এর ফালুদা করে দেয় ”
মনির ভ্রু কুচকে বললো,
–” সালা বলবো আমি তোকে।কারন তোর বোন আমার বউ হবে।কিন্তু তুই আমায় সালা বলিস কেন?আফরান সালা বলে তাও মানা যায় কারন নূর তার বউ হবে।কিন্তু তুই?”
নিবির জোড়ে চিল্লান দিলো একটা।
–“, মনিররররররর তুই কি ফাইজলামি পাইছিস।”
এদিকে নিবির এর চিল্লানো শুনে সাদুরা তাকালো ওদের দিকে। সাদুর চোখ সবার আগে মনির এর উপর পরে।চোখ দুটো সেদিকেই আটকে যায়।আজ কতোদিন পর দেখলো।এখন আরো হ্যান্ডসাম,আর কিউট হয়ে গেছে।কালো সাদা টি-শার্ট উপরে কালো জ্যাকেট সাথে ব্লাক ডেনিম প্যান্ট,চোখ সানগ্লাস দেওয়া,সিল্কি এলোমেলো চুল,হাতে ব্যান্ডেড ওয়াচ,ঠোটে মুচকি হাসি ব্যস মেয়েদের গায়েল করাত জন্য যথেস্ট।এদিকে নূর এরও একি অবস্থা সেও আফরানকে প্রানভরে দেখছে,সাদা শার্ট, ব্লু ব্লেজার,হুয়াইট ডেনিম প্যান্ট,স্পাইক করা চুল মারাত্মক লাগছে।কিন্তু কিছু একটা ভেবে নূর নিজের চোখ সরিয়ে নিলো। এই লোকটাকে সে কিছুতেই ক্ষমা করবে না। সাদু বললো,
–” আরে সব ভাইয়ারাও তো দেখি আছে।চল দেখা করে আসি কতোদিন পর দেখা হলো।”
আলিশা,নূর,মিম,আলিফা, সাদুর সাথে চললো। মনিরদের কাছে।সাদু, আফরান,নিবির একে একে সবার সাথে দেখা করলো।মনির সাদুকে বলে,
–” একেবারেই সেই পিচ্চিই আছো একটুও বদলাও নি ”
সাদু ভাব নিয়ে বলে,
–” আমি সাদিয়া জাহান উম্মি। উর্ফে সাদু আর সাদু কখনো বদলায় না।”
মনির হেসে দিলো ওর কথা শুনে। এদিকে আফরান অনেক চেষ্টা করছে নূর এর সাথে কথা বলতে কিন্তু নূরকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।অবশেষে অনেক ভেবে নূর এর কাছে গেলো।আফরান আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
–” নূর আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো। কিন্তু বুজার চেষ্টা করো সেই সময় পরিস্থিতি ওইরকম ছিলো না।”
নূর মুচকি হেসে জোড়ে বললো,
–” ভাইয়ারা আমাদের মনে হয় এখন যাওয়া উচিত।আংকেল আন্টি সেই কখন চলে গেছে। আমরাই দাড়িয়ে আছি।”
সবাই এইবার নূর এর কথা শুনে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।এবং নিজ নিজ বাড়ির দিকে রওনা দিলো
_______________এক সপ্তাহ পর_____________
এই এক সপ্তাহ ওরা ঘুরাফিরা করে কাটালো।মনির সাদুর সাথে ফ্রি হবার চেষ্টা করেছে।আফরান নূর এর রাগ ভাংগাতে অনেক কিছু করেছে কিন্তু নূর গলেনি।আলিফা, আরিফ,মিম,মেরাজ,ওরা ঝগরা করেই গেছে সব সময়।আলিশা নিবির এর সাথে অতোটা কথা বলেনি।কারন নিবির যখন চলে যায় তখন আলিশা অনেক ছোট ছিলো।
আজ সাদুদের ভার্সিটির প্রথমদিন।আলিশা, সাদু আর নূর একসাথে বের হলো।মনির আফরান বলেছিলো ওদের নিয়ে যাবে কিন্তু ওরা কিছুতেই মনির দের সাথে যাবে না। তাই মনির আর আফরান ওদের রেখে চলে যায়।আর আলিফা এবং মিম একসাথে রওনা হয়েছে।কিছুক্ষন পর মাজপথে সাদুরা, আলিফা আর মিম কে পিক-আপ করে নিয়ে ভার্সিটি চলে যায়।
ভার্সিটির বটতলায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলো মনির,আফরান,নিবির,মেরাজ,আরিফ।হঠাৎ আফরান নিজের বোনের গাড়ি পার্কিং লটে দেখে বলে,
–“মনে হয় শয়তানের গ্যাং এসে পড়েছে।”
আরিফ আজাহারি করতে করতে বলে,
–“আহারে আজ থেকে ভার্সিটির সবার জিন্দেগী তেনাফাডা হয়ে যাবে।”
মনির বাকা হাসি দিয়ে বলে,
–” আমরা আজ ওদের ১২ টা বাজাবো।কারন আজ আমি, আফরান বা নিবির ভাই না।আমরা এখন ভার্সিটি সিনিয়র আর সিনিয়র রা তো জুনিয়েরদের রেগিং করতেই পারে রাইট।”
মেরাজ এক লাফে উঠে বলে উঠলো,
–” দোস্ত সেইরকম বুদ্ধি আজ এই মিম,ডিম, আন্ডাকে রোদে দার করিয়ে রেখে ওমলেট বানাবো।”
নিবির দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলে,
–” এখন রেগিং করবা ঠিক আছে।বাট ভেবে নিও বাড়িতে গেলে কি হবে।পিকু আমার আর আফরান এর হাড্ডি গুড্ডি ভেংগে পাউডার বানিয়ে দেবে।”
আফরান মুহূর্তেই মুখটা পেচার মতো করে নিলো।বললো,
–” এখন যদি আমি রেগিং করি তাহলে দুই দিক দিয়া দুইটা নাগিন আমাকে আক্রমন করবে।এক আমার বোন পিকু দ্বিতীয়জন আমার হবু বউ নূর যে বিয়ের আগেই আমাকে ডিভোর্স দিবো। এমনিতেও যে রেগে আছে ভাভা গো ভাভা।”
আরিফ একটু এটিটিউট নিয়ে বলে,
–” উফফ তোরা এতো ভয় পাস কেন? আমার মতো সাহসি হবি।চল আমার পিছু পিছু চল।”
মনির দাত কিরমির করে বললো,
–“এই বেটা এখন ভাব নিচ্ছে। দেখবি আলিফার সামনে গেলে সব ভাব পাঞ্চার হয়ে ফুসস করে বের হয়ে যাবে।তখন বলবে মনির ভাই আমাকে বাচা।হাহ্ স্টুপিড একটা।”
আফরান,নিবির,মেরাজ হেসে কুটিকুটি মনির এর কথা শুনে।নিবির হাসতে হাসতে বলে,,
–” তাহলে তো দোস্ত বিনোদিন মিস করা যাবে না।আজ চরম বিনোদন নিবো।”
নিবির এর কথা সবাই সহমত হলো আর সাদুদের কাছে যেতে লাগলো।
সাদু’রা কথা বলতে বলতে ভার্সিটিতে আসছে।হঠাৎ মনির’রা ওদের সামনে এসে দাড়ালো।বেশ ভাব নিয়ে দারিয়ে আছে ওরা। আরিফ এর ভাব টা একটু বেশিই নিচ্ছে।মেয়েরা ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে।আলিফা আরিফ এর এরকম সাপের মতো মোচড়ামুচড়ি ওয়ালা ভাব নিতে দেখে রেগে গেলো।আলিফা রেগে বলে,
–“, কি হইছে এরকম সাপের মতো মুচড়াচ্ছেন কেন?পাতলা হাগু হইছে যে এরকম করছেন।আলিফা’র কথা শুনে সাদু,নূর,মিম,আলিশা হেসে দিলো।আর ছেলেরা চোখ-মুখ কুচকে ফেলে জোড়ে একসাথে বলে,
–“ছিহহহহহহহহহহঃ কি খাচ্চো মার্কা কথা।”
নিবির ওয়াক ওয়াক করছে।আলিশা হাসতে হাসতেই বলে নিবির কে বলে,
–“আপনার এক বন্ধুর পাতলা হাগু হইছে। আর এইদিকে আপনি ওয়াক ওয়াক করছেন বাই দ্যা ওয়ে আপনি কি প্রেগনেন্ট।”
নিবির আলিশার কথা শুনে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে,
–” ওয়াট দ্যা হেল! কি বলছো এসব হ্যা। ছেলেরা প্রেগনেন্ট হয় কখনো শুনেছ।”
–” কি জানি হতেও পারে। আজকালকার যুগে সব পসিবল।বাই দ্যা ট্রেনের চাকা আপনার বেবিটার মাম্মা কে?”বলেই আলিশা জোড়ে জোড়ে হেসে দিলো।ওর দেখা দেখি বাকিরাও হাসতে হাসতে শেষ।আর নিবির রাগে ফুসছে।আজ পর্যন্ত কোন মেয়ে সাথে এইভাবে কথা বলেনি।আমেরিকায় তো মেয়েরা ওর জন্য পাগল ছিলো।সেখানে এই মেয়ে ওর ইজ্জুতের হালুয়া,খিচুরি, ফালুদা,পায়েস যা আছে সব বানিয়ে দিয়েছে।দুঃক্ষে বেচারার ফরান ফাডি যায়?।

চলবে,,,,

ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর লাইক, কমেন্ট কতে ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here