পঞ্চভুজ তারা পর্ব-১১

0
341

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১১
চারিদিকে ধাউ ধাউ করে জ্বলছে আগুন।চারদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।ধোয়ায় মন্থর সব কিছু।ফ্লোরে পরে আছে সাদুর নিথর দেহটা।যে মেয়েটা একদন্ড স্থির হয়ে থাকতে পারে না।সে আজ এইভাবে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে ফ্লোড়ে।

এদিকে সাদুকে হন্য হয়ে খুজছে মনির সহ বাকি সবাই।হঠাৎ পাশ থেকে ভার্সিটির দপ্তরি চিল্লাতে চিল্লাতে আসছে পুরান ভবন এর স্টোর রুমে আগুন লেগেছে।এবং তা প্রাই সবকিছু জ্বালিয়ে দিয়েছে।এটা শুনে সবাই কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে রইলো।আফরান ধরা গলায় বলে,

—“আমরা কি ওইখানে গিয়ে দেখবো?”
—“নাহ! আমার উম্মি ওইখানে কিভাবে থাকতে পারে কি বলছিস এসব তুই?” পাগলের মতো ছটফট করছে মনির।
নূর কাদো কন্ঠে বলে,
—“প্লিজ ভাইয়া একবার দেখে আসি।যদি সাদু থেকে থাকে ওইখানে তো আমাদের ওকে বাচাতে হবে কারন ওইখানে আগুন লেগছে।”
—“নাহ! নাহ! আমার উম্মিপাখি কিচ্ছুটি হবে না আমি কিছু হতেই দেবো না।” চিৎকার করে কথাগুলো পড়ে পুরান ভবনের দিকে দৌড় দিলো মনির।ওর পিছু পিছু বাকিরাও গেলো।
মনির হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো পুরান ভবনের স্টোর রুমের সামনে,দরজাটাও পুরো গেছে। মনির এক লাথি দিয়ে দরজাটা ফেলে দিলো যেহেতু আগুন লেগে অনেকখানি পুরে গেছে।সবাই তাকিয়ে আছে কিন্তু ধোয়ার কারনে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।হঠাৎ একটা বাতাস আসায় খানিক ধোয়া সরে যেতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো সবাই।সাদু নিথর হয়ে পড়ে আছে।আর তার শাড়িতে আগুন জ্বলছে।দৃশ্যটা মটোও সয্য করার মতো না।নিবির,আফরান আর মনির পাগলের মতো আচরন করা শুরু করলো।কোনকিছু না ভেবেই নিবির,আফরান আর মনির আগুনে দগ্ধ হওয়া ঘরে প্রবেশ করলো।আফরান আর নিবির আগুনের জলছে যাওয়া সবকিছু লাথি দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।মনির সাদু’র কাছে গিয়ে কি করবে দিশা পাচ্ছে না।হাত দিয়েই ওর শাড়ির আগুন নেভানো শুরু করলো।ফলে মনির এর হাত খানিক পুরেও গেলো।মনির কে এমন করতে দেখে আলিফা পাশ থেকে একটা মেয়ের হিজাব খুলে নিলো।মেয়েটি কিছু বললো না এই মুহূর্তে একটা হিজাব থেকে একজনের প্রান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হিজাবটি বেশ মোটা কাপড়ের। তাই আলিফা কাদতে কাদতে চিল্লিয়ে বলে,,

—“আফরান ভাইয়া! মনির ভাইয়াকে এই হিজাবটা দিয়ে আগুন নেভাতে বলেন।নাহলে হাত দিয়ে নেভানো যাবে না উনার হাত পুরো যাবে।”

আফরান খানিক এগিয়ে আসতেই আলিফা হিজাব টা ছুড়ে মারলো।আফরান নিয়ে সাদু’র আগুন নেভাতে লাগলো।

এদিকে আরিফ,মেরাজ সহ কয়েকজন মিলে পানির পাইপ এর ব্যবস্থা করে পুরো রুমে পাইপ দিয়ে পানি দিতে লাগলো।আর কয়েকজন বালতি,জগ ভরে পানি ছিটাতে লাগলো।ফলে আগুন অনেক খানি কমেও গিয়েছে।

মনির সাদু’র আগুন নেভানো শেষে ওকে হিজাব টা দিয়ে ভালোভাবে পেচিয়ে রুম থেকে কোলে করে নিয়ে বের হলো।একছুটে ভার্সিটির মেডিকেল ল্যাবে চলে গেলো।ওর পিছুপিছু বাকিরাও গেলো।সাদুকে একটা বেঞ্চি’র উপর বসিয়ে মনির বলতে লাগলো,

—“এই এই উম্মি চোখ খুলো লক্ষিটি আমার প্লিজ ওপেন ইউর আইস। উম্মি ফোর গড সেক আই কান্ট টোলারেট এনিমোর প্লিজ ওপেন ইউর আইস।”

আফরান ধপ করে বসে পড়লো সাদু’র সামনে,,

—“বোন বোন রে আমার কলিজাটা আমার দেখ তুই না ভাইয়া’র দুষ্টুপাখি উঠ না দেখ ভাইয়া আর বকবে না উঠ আমার পিকুকে এইভাবে মানায় না।”

—“ব্রো ওকে উঠতে বলো না।ওকে বলো ওর নিবির ভাইয়া এত্তোগুলা সরি। ওর ঠিক মতো খেয়াল রাখতে পারি নি।ভাই ওকে উঠতে বল না আমার ভিতর টা শেষ হয়ে যাচ্ছে।ধিক্কার আসছে নিজের প্রতি নিজের সামান্য বোনটাকে আমি দেখে রাখতে পারি নি।ছিঃ ওকে উঠতে বল নাহলে আমি মরে যাবো। এই পিকু উঠ না।

সবাই কাদছে।আলিশা আর নূর দুই ভাইয়ের আর্তনাদ দেখছে।তাদের ভেতরটাও জ্বলে যাচ্ছে নিজের প্রানপ্রিয় বন্ধুকে এইভাবে পরে থাকতে কেইবা সজ্য করতে পারবে।
আলিশা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

—“ভাইয়া ওকে হস্পিটাল নিতে হবে।ওর অনেকখানি জায়গা পুরে গেছে হস্পিটাল না নিলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।”

আলিশার কথা শুনে নিবির বললো,

—“নাহ নাহ আমার পিকুর কিচ্ছু হবে না।ওকে এক্ষুনি নিয়ে যাবো।দে আমার বোনকে আমি নিবো।”

নিবির সাদুকে কোলে তুলে নিলো তারপর প্রাই একপ্রকার দৌড়িয়ে যাচ্ছে ওকে নিয়ে।পিছে পিছে বাকিরা যাচ্ছে।নিবির সাদুকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ওকে কোল থেকে নামাবেই না।মনির এক পাশে এসে সাদুর মাথাটা নিজের কোলে নিলো আর আফরান আর একপাশে গিয়ে সাদু’র পা গুলো নিজের কোলে নিলো কিন্তু খুব সাবধানে কারন সাদু’দ পা অনেকখানি পুরে গেছে।আর নিবির মাঝে বসে সাদুকে আকড়ে ধরে আছে।ড্রাইভিং সিটে আরিফ বসলো পাশে বসলো মেরাজ। আরিফ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বাহিরে আলিফাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“তোমরা ড্রাইভ করে আসতে পারবে।”
—“হ্যা!নূর ড্রাইভ করতে জানে।”
—“আচ্ছা আর যেতে যেতে প্লিজ আংকেল আর আন্টিকে একটু ফোন করে বলে দিও।”
—“আচ্ছা আপনারা টেন্সন করিয়েন না ওকে নিয়ে দ্রুত যান।আমরা আসিছি।”

আলিফার কথায় আরিফ মাথা নাড়িয়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো তারপর চলে গেলো।এদিকে নূর,আলিফা,আলিশা,মিম ও অন্য গাড়ি দিয়ে রওনা হলো।যেতে যেতে আলিশা সাদু’র মা বাবাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলো।।

..
আরিফ দ্রুত ড্রাইভ করে হস্পিটাল পৌছালো।এইবার আফরান নিজের বোনকে কোলে তুলে নিলো হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো হস্পিটাল এর ভীতরে।
মনির চিল্লিয়ে বলছে,

—“ডক্টর! ডক্টর প্লিজ ওকে ঠিক করে দিন।”
—“আরে কেউ জলদি আসুন আমার বোনের কিছু হলে এই হস্পিটাল বন্ধ করে দেবো আমি।”নিবির রেগে বলে উঠে।

হস্পিটালের ওয়ার্ড বয় জলদি স্ট্রেকচার নিয়ে আসলে আফরান আলতো করে সাদুকে শুইয়ে দেয়।তারপর ডক্টর রা দ্রুত ওকে আই.সি.ইউ তে নিয়ে যায়।এর কিছুক্ষনের মাঝেই নূর আর বাকিরাও এসে পড়লো।

মিম বললো,

—“সাদু কোথায়?”
—“ওকে ওটিতে নেওয়া হয়েছে!”বললো মেরাজ।

মেরাজ এর কথা শুনে চোখমুখ কুচকে ফেললো মিম।কেন যেন মেরাজ কে সয্য হচ্ছে না ওর?কিন্তু কেন?কি কারনে?মেরাজ কি করেছে ওকে?কেন রাগ লাগছে তার? নাহ আপাতত এইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো মিম।কারন এখব বেশি ইম্পোর্টেন্ট হলো সাদু।

এদিকে আফরান, নিবির আর মনির এর অবস্থা খারাপ সাদুকে এইভাবে দেখে।আরিফ আর মেরাজ ওদের সামলাচ্ছে।নূর আর আলিশাও নিজেদের যথাসম্ভব শক্ত রাখছে কারন আলিফা আর মিম এর কাদতে কাদতে অবস্থা খারাপ এখন ওরাও যদি কাদতে থাকে তো এদের সামলাবে কে?

—“আমি একটা ইররেস্পন্সিবল ভাই।পারলাম না নিজের বোনকে হেফাজতে রাখতে।আমার বোনটা কতো কষ্ট পাচ্ছে।মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।কেন আমি তখন ফোন কল রিসিভ করলাম। ফোনে কথা না বললে আমার বোনটা ভালো থাকতো।কি হয়ে গেলো একটু আগেও বোনটা আমার কতো হাসি খুশি ছিলো।আমার কারনে এইসব হয়ে গেছে।(আফরান এর দু হাত আকড়ে ধরে) এই ব্রো আমাকে মেরে ফেল।আমার বেচে থাকার অধিকার নেই যেই ভাই তার বোনকে সেভ রাখতে না পারে তার বেচে থাকার অধিকার নেই।” নিবির কথা গুলো বলে ঢুকরো কেদে উঠলো।আসলে ও নিবির যতোই ফাইযলামি করুক।ওর মনটা অনেক নরম। নিজের বোনকে এইভাবে দেখে সে নিজেকে সামলাতে পারছে না।আফরান এর চোখের কোনাও জল চিকচিক করছে তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে নিবির কে আকড়ে ধরলো।ও যতো স্ট্রোং হোক না কেন?নিবির ততোটা না নিবির অনেক সফ্ট হার্টেড আর সাদুকে নিয়ে তো কোন কথাই নাই।

—” শান্ত হো ভাই কিছু হবে না আমাদের পিকুর।দেখবি একটু পর আবারো আগের মতো হয়ে যাবে।দেখিস তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।আমার পিঠের উপর চড়ে আইস্ক্রিম এর জন্য বায়না ধরবে।তোর চুল টেনে টেনে চকোলেট কেক খেতে চাইবে। কিচ্ছু হবে না ও আমাদের পিকু আর আমাদের পিকু অনেক স্ট্রোং গার্ল।”আফরান কথাগুলো নিবির কে জড়িয়ে ধরে বললো।কিন্তু নিজেকে কিভাবে সামলাবে আদরের বোনটার এই অবস্থা হলে কোন ভাই কি ঠিক থাকতে পারে।

মনির একধ্যানে তাকিয়ে আছে ওটি’র দিকে। মেনে নিতে পারছে না সে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।ওর বুকটা ভীষন জ্বলছে সাদুকে এইভাবে স্তব্দ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে মনে হয় ওর কলিজাটা কেউ টেনেহিছড়ে বের করে নিয়েছে।কেন হলো এইসব।আচ্ছা ও তো গিয়েছিলো নতুন ভবনের থার্ড ফ্লোড়ে যাচ্ছিলো।তাহলে ও পুরান ভবনের স্টোর রুমে গেলো কিভাবে?ওটা তো অনেক দূরে নতুন ভবন থেকে। আর ওইখানে কেউ যায় না।তাহলে সাদু ওখানে গেলো কিভাবে।না কিছুতো একটা ঘাপলা আছে।না ওকে এইভাবে বসে থাকলে চলবে না।এর পিছনে কার হাত আছে তা ওকে বাহির করতেই হবে।ওর কলিজাকে যে আঘাত করেছে সে তার কলিজাই টেনে ছিরে ফেলবে।ভাবতেই মনির এর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।

চলবে,,,,

ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।হাতটা আমার ইনফেকশন হয়ে গিয়েছে।তাই দু-দিন লেইট হলো গল্প দিতে।আপনারা প্রে করিয়েন যাতে আমার কাটা ঘাটা জলদি শুকিয়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here