#নীল_বেনারশী
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৩
কাঁদতে কাঁদতে যখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো,ঠিক সেই মুহূর্তে
আমার ফোনের মেসেঞ্জারে তিন চার টা মেসেজের আওয়াজ।
ফোন টা হাতে নিতেই দেখি,
কল্প’র মেসেজ।
_মেঘা!আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।প্লিজ আমার মেসেজ সীন করো।প্লিজ তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
আমি মেসেজ গুলো দেখে অবাক হবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
কল্প!
মানুষটাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি।
আর ও কিনা আমাকে মাঝ পথে একা ফেলে চলে গেছে।
আর আজ যখন সব কিছু শেষ তখন আসছে আমার সাথে কথা বলতে।
অথচ আমি সেদিন কতই না আকুতি মিনতি করেছিলাম।
কল্প!
যার সাথে আমার এক ছাদের নিচে থাকার কথা ছিলো।
যাকে আমি আমার বুকের সব টুকু ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে ভালবেসেছি,সেই মানুষ টাই হচ্ছে কল্প। কল্পের সাথে পরিচয় টা আমার ফেসবুকে।
আমি যখন নতুন ফেসবুক জগতে আসি,তখন ওর আইডি থেকে আমার আইডিতে ও রিকুয়েষ্ট পাঠায়।
আমি ওর টাইমলাইন চেক করি,দেখি ছেলেটা খুব ভালো লিখালিখি করে।
আর তাই আমি ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করি।
অল্প কিছু সংখ্যক ফ্রেন্ডই আমি লিস্টে নেই।
তার মধ্যে কল্প একজন।
ফ্রেন্ডলিস্টের সবার সাথে কথা হতো আমার কমেন্ট বক্সে।
আমি যা কথা বলতাম ওই কমেন্ট বক্স অব্দিই।
ইনবক্সে আমি কারো সাথে কথা বলতাম না তেমন।
কল্পের সাথেও আমার কমেন্ট বক্সেই কথা হয় টুকটাক।
এরপর কয়েক দিন আমি অনলাইনে না যাওয়ায় আমি যখন অনলাইনে আসি ও আমার ইনবক্সে নক দেয়।
আর জিজ্ঞেস করে কেমন আছি, অনলাইনে আসিনি কেন।
আমি বলি এমনিই একটু অসুস্থ ছিলাম।
আসলে তখন আমার তিন চার দিন খুব বেশি জ্বর ছিলো।তাই অনলাইনে যাইনি।
সেদিন থেকেই আমাদের টুকটাক কথা শুরু।
ও প্রায়ই অনেক রাত জাগতো।
আমিও ফেসবুক ঘাটাঘাটি করতে করতে ঘুমাতাম না।
তখন ও আমাকে নক দিতো,কেন আমি এত রাত জেগে আছি।
আমিও বলতাম আপনিও তো জেগে আছেন।
ও বলতো ঘুম আসেনা ওর।
ও প্রবাসী।
ডিউটি করে এসে শুতো কিন্তু ঘুম নাকি আসতোনা।
তাই প্রায়ই জেগে থাকতো।
আর তখনই আমাদের অল্প স্বল্প কথা হতো।
কথা বলতে শুধু মেসেজিং হতো।
ও আমার প্রায়ই খোঁজ খবর নিতো।পরে একটা সময় এমন হয় যে,
আমিও ওর মেসেজের অপেক্ষায় থাকতাম।
যদি কোন দিন মেসেজ দিতে দেরি করতো,আমি অভিমান পুষে রাখতাম।
এরপর একদিন ও আমায় বলে,নিজেও তো একটা মেসেজ দিতে পারেন।
আচ্ছা সারাদিনে একবারও কি আমার কথা মনে পড়ে?
আমি উত্তর দিতাম জানিনা।
ধীরেধীরে আমাদের মেসেজিং বাড়তে থাকে।
এখন ওকে অনলাইনে না দেখলে আমার অস্বস্তি লাগে।
কেমন যেন কষ্ট হয়।
আমিও ওকে নক দেই খবর নেই।
আমরা অনেক বেশি চ্যাটিং করি।
ও ওর জীবনের গল্প শোনায়।
ওর বন্ধুদের কথা বলে,আর একদিন রাতে কথা বলতে বলতে বলে,তুমি কি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবা?
আমিও এক্সেপ্ট করি,আর বলি হতে পারি।
কিন্তু কোন দিন আমায় ছেড়ে যেতে পারবেন না।
আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারবেন না।
কোন দিন আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করতে পারবেন না।
ও আমাকে উত্তর দেয়,আমি বেঁচে থাকতে কোন দিন যোগাযোগ বন্ধ করবোনা।
তোমায় ছেড়ে যাবোনা।
মরে গেলে জানিনা।
তবে তুমি আমায় আজ থেকে তুমি করে বলবে।
বন্ধুদের আপনি করে বলতে হয়না।
আমিও রাজি হই।
তুমি করেই বলি দুজন দুজনকে।
খুব ভালো ভাবেই চলছিলো আমাদের বন্ধুত্ব।
কিন্তু একটা সময় আমি অনুভব করি,ওর জন্য আমার কেমন যেন একটা অনুভূতি কাজ করে।
যা কখনো কারো জন্য অনুভব করিনি আমি।
ওকে আমি আমার ফ্যামেলি মেম্বারে জায়গা দিয়ে দেই।
ওকে আমি আমার পরিবারের ই একজন মানতে শুরু করি।
আর এর মধ্যেই কল্প একদিন হুট করে আমাকে প্রপোজ করে বসে।
ও কোন ভণিতা না করে ডিরেক্ট আমাকে মেসেজ দিয়ে বলে,
_এই মেয়ে আমি তোমাকে ভালবাসি।
আমিও ডিরেক্ট বলে দেই আমিও তোমাকে ভীষণ ভালবাসি।
আর সব থেকে মজার কথা হলো,আমরা কেউ কাউকে না দেখেই ভালবেসে ফেলি।
এভাবেই আমাদের সম্পর্কের শুরু।
আমরা সিদ্ধান্ত নেই আমরা সামনাসামনিই একবারে মিট করবো।দুজন দুজনকে দেখবো।আর তা কল্প দেশে আসলেই।
এর আগে কেউ কাউকে আমরা দেখবোনা।
আমাদের দুজনের কারো আইডিতেই আমাদের ছবি ছিলোনা।
আর আমরা কখনো ফোনেও কথা বলিনি।
শুধু মেসেজিং এই কথা হয় আমাদের।
না দেখে,না শুনে ফেসবুকে রিলেশন হলেও আমাদের ভালবাসাটা ছিলো সত্যি।
আমি কল্পকে প্রায়ই আমার ইচ্ছে গুলোর কথা বলতাম।
কল্প বলতো,আমি দেশে এসে তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করবো।
কিন্তু ও আমার কোন ইচ্ছেই পূরণ করেনি।
বরং মাঝ পথে আমার হাত টা ছেড়ে দিয়েছে।
অথচ এই মানুষটাকে নিয়েই আমার কত স্বপ্ন ছিলো।
কল্পের কথা ভাবতে না ভাবতেই মায়ান আবার রুমে চলে আসে।
এসেই কাঁথা বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়ে।
আর আমি মনে মনে ভাবি,
যেই মানুষ টা আমার স্বপ্ন গুলো এক নিমিষেই শেষ করে দিয়েছে।
আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।
তার সাথে আর কি কথা বলবো।
তার আর আমার সাথে কি ই বা কথা থাকতে পারে।
অভিমান কষ্টে আমি ডাটা অফ করে শুয়ে পড়ি।
সারাটা রাত কাঁদতে কাঁদতেই কেটে যায় আমার।
এর মধ্যে মায়ানের ধমকে দুই একবার থামতে হয়েছিলো।
আমার কান্নায় তার নাকি ঘুমে ডিস্টার্ব হয়।
মানুষ এমন নিষ্ঠুর হয় কি করে।
মনে মনে ভাবি,সব ছেলেরাই কি তাহলে এমন?
সকাল হয়ে যায়।
আমি সকালের নাস্তা তৈরিতে আম্মুকে সাহায্য করতে চলে যাই।
আম্মু আমাকে মায়ানের ছোট বেলার গল্প শোনান।
মায়ান ছোট থেকেই নাকি এক রোখা জেদি।
যা বলে তাই নাকি করে।
ওর কোন ইচ্ছেই নাকি আম্মু আব্বু অপূর্ণ রাখেন নি।
মনে মনে ভাবছি,
যদি তাই হয় তাহলে সে যাকে ভালবাসে তাকে কেন বিয়ে করলোনা?
আম্মু আব্বু তার ইচ্ছে তো ঠিকই পূরণ করতেন।
_বউমা!
_জ্বী আম্মু।
_কি ভাবছো?
_না আম্মু কিছুনা।
তখনই মায়ান রান্না ঘরে চলে আসে।
_মেঘা!
আম্মু আব্বু ফোন দিয়েছেন এই নাও কথা বলো।
আম্মু আব্বুর সাথে কিছু ক্ষণ কথা বললাম।
তারা জিজ্ঞেস করছেন আমি কেমন আছি,
তাদের কে কিভাবে বলি আমি যে ভালো নেই।
তবুও হাসি মুখে বললাম,ভালো আছি।
আম্মু আব্বুকে কোন ভাবেই টেনশনে রাখা যাবেনা।
শাশুড়ি আম্মু আমার কাছ থেকে ফোন নিয়ে আম্মু আব্বুকে দাওয়াত দিলেন।
আসতে বললেন বাসায়।
আম্মু আব্বু বললেন,পরে আসবে।
আর বললেন মায়ান যেন আমাকে নিয়ে কয়দিন আমাদের বাসায় গিয়ে বেড়িয়ে আসে।
আর সাথে যেন বাড়ীর সকলেই যান।
শাশুড়ি আম্মু বললেন মায়ান আর আমাকেই পাঠাবেন দুই এক দিন পর।
তাদের কথা শেষ হলে আমি ফোন নিয়ে আমাদের রুমের দিকে যাই।
আর গিয়ে দেখি দিশা মায়ানকে জড়িয়ে ধরে আছে।
আমি হতভম্ব হয়ে যাই।
তাহলে কি দিশাই মায়ানের ভালবাসার মানুষ?
এই জন্যই তাহলে মায়ান রাতে আমার সাথে এমন করেছে?
চলবে…