নীল বেনারশী শেষ পর্ব

0
1988

#নীল_বেনারশী
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৮_এবং_শেষ
মানিব্যাগ টা ওর হাত থেকে রাস্তায় পড়ে যায়।
আর মানি ব্যাগে থাকা সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।
ও সব কিছু তুলতে তুলতে হঠাৎ একটা চিরকুট পায়।
চিরকুট টা খুলে দেখতেই ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
ও দ্রুত রিক্সাওয়ালাকে বলে রিক্সা ঘুরান।
আমাকে দ্রুত বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিন।
আমি আমার মেঘার কাছে যাবো।

কল্প যেন ঝড়েরবেগে আমাদের বাসায় চলে আসে।
আম্মু আব্বু কল্পকে এত রাতে দেখেতো অবাক।
আম্মু কল্পকে জিজ্ঞেস করে,
তোমার কি কাজ টা শেষ বাবা?
কল্প উত্তর দেয়,আসলে আম্মু, মেঘার জন্য খারাপ লাগছিলো।
ওকে অসুস্থ রেখে গিয়েছিতো।ওর বমি বমি লাগছিলো জার্নির কারণে,তাছাড়া মাথা ব্যথাও করছিলো নাকি অনেক।
তাই মন টিকলোনা।চলে আসলাম।

_খুব ভালো করেছো বাবা।
যাও ভেতরে যাও।

কল্প আমার রুমে ঢুকে।
ঢুকেই আমাকে শোয়া থেকে টেনে তুলে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আমি ছিলাম গভীর ঘুমে।
ওর এই আচরণে আমি ভাবছিলাম আমি স্বপ্ন দেখছি।
কারণ ও তো চলে গিয়েছিলো আমার সাথে রাগ করে।
আর এত রাতে যে আবার আসবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।

কল্প আমাকে জড়িয়ে ধরে বসেই আছে।
_কি হয়েছে কল্প?
এত রাতে হঠাৎ আবার তুমি?
তুমি না আমাকে ছেড়ে চলে গেলে?
তাহলে আবার আসলে যে?
_চুপ একদম চুপ,আর একটা কথাও বলবেনা তুমি।
আমি এত গুলো কথা শোনালাম তোমাকে,আর তুমি কেন চুপচাপ সব শুনলে?
কেন বল্লেনা আমায় যে তুমি আমাকে আগেই চিনে গেছো।
বুঝে গেছো,জেনে গেছো আমিই যে তোমার কল্প।
আর তাই তুমি আমার কাছে স্ত্রীর অধিকার চেয়েছো।
কেন বল্লেনা?

_এই ছেলে এই, এভাবে কাঁদতে বলেছি তোমায় আমি হুম?
থামো বলছি।
আর এখন তো ছাড়ো আমায়।
আর কত ক্ষণ এভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখবে?
_সারাজীবন।
তোমার কোন সমস্যা?
_উঁহু আমিও তোমার বুকেই থাকতে চাই,জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
_তুমি জানো,আমি কত টা কষ্ট পেয়েছিলাম।
আমি মনকে কোন ভাবেই মানাতে পারছিলাম না,আমার মেঘা দুই দিনের মধ্যে ওর ভালবাসার কল্পকে ভুলে মায়ানকে হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে।
মায়ানের কাছে স্ত্রীর অধিকার চাচ্ছে।

যদি তোমার চিরকুট টা আজ না পেতাম।
তাহলে কি যে হতো আল্লাহই জানেন।

চিরকুট টাতে লিখা ছিলোঃ-

“এই যে মায়ান রাহমান কল্প!তুমি ধরা পড়ে গেছো তোমার বউ এর কাছে।
আমি জেনে গেছি,তুমিই আমার কল্প।
এই ছেলে,এটা দেখা মাত্র “নীল বেনারশী” নিয়ে আসবা,আমি তোমার বউ সাজবো”💙

_মেঘা!কেন আমাকে তুমি সরাসরি বলোনি?তাহলেই তো আমি তোমায় এভাবে একা রেখে যেতাম না।
তোমার এত কষ্ট পেতে হতোনা।
আর তুমি কবে বুঝতে পেরেছো আমিই যে তোমার কল্প?বলোনা প্লিজ।
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
কিভাবে বুঝলে তুমি?

_তুমি আমাকে এত টা দিন জ্বালিয়েছো।কষ্ট দিয়েছো।
আমি একটু শোধ করবোনা?তাই তোমাকে সরাসরি কিছু বলিনি।
আর তুমি যেন আমাকে বলোনি,বুঝতে দিতে চাওনি।
আমাকে কষ্ট দিয়েছো।
আমিও তাই তোমাকে বুঝতে দেইনি,আমি যে বুঝে গেছি।
তোমারও তো একটু কষ্ট পাওয়া দরকার।

আমি প্রথম থেকেই আন্দাজ করছিলাম,তুমি আমার কাছে আসলেই আমার কল্প কল্প অনুভব হয়।
আমার মনে হয় আমার কল্প আমার পাশে।
তাছাড়া হঠাৎ করে ছেলে পক্ষ না করে দেয়ার সাথে সাথেই পাত্র হাজির।
তাও আবার আমাকে না দেখেই বিয়ের জন্য রাজি।

আর আমি তোমার হাইট টা তো জানতাম।
যখন দেখলাম মায়ান আমার থেকে ঠিক তত টুকুই লম্বা।
যতটুকু লম্বা আমার থেকে কল্প।

তাছাড়া কল্পর মেসেজ গুলো আসতো তুমি যখন আমার সামনে থেকে দূরে যেতে ঠিক তখনই।
আর যখন কল্প মানে তুমিই আমাকে মেসেজ দিয়ে বললে,
তুমি মায়ানদের বাসায় আসবে।
মায়ানের কথা জানো,তখনও সন্দেহ হচ্ছিলো।
কারণ মায়ানের বাসা তো আমার বাবা মা ই চেনেন না এখনো।
আর না এলাকার কেউ,আমার আত্মীয় স্বজন কেউ।
কল্প কিভাবে চিনবে।

তাছাড়া আমি বুঝতেও পারছিলাম মায়ান আমার সাথে অভিমান করে আছে।
মায়ান খারাপ ব্যবহার গুলো নিজে ইচ্ছেয় করছেনা।
জেদের কারণে করছে,অভিমান থেকে করছে।
তাছাড়া মায়ানের সাথে আমার কোন শত্রুতাও নেই যে সে আমাকে বিয়ে করে প্রতিশোধ নেবে।
এক মাত্র অভিমান থেকেই আমাকে মায়ান কষ্ট দিতে পারে।
আর আমি যেহেতু মায়ানকে আগে কখনো দেখিনি,আমরা কেউ কাউকে চিনিনা তাহলে মায়ান অভিমানই কেন করবে আমার সাথে।
কি বিষয়ে?
জানো এই সব কথা গুলো আমার মাথায় ঘুরতো।
আমি মায়ানের সাথে আর কল্পের সাথে মিলাতাম।কানেকশন খুঁজতাম।

আবার যখন তুমি বললে শাড়ী পরানো একজনের জন্য শিখেছো।
তখনও সন্দেহ হয়,কারণ কল্পকে আমি শাড়ী পরা শিখতে বলেছিলাম ইউটিউব দেখে।
আমি পারিনা বলে।যাতে বিয়ের পর আমাকে পরিয়ে দিতে পারে।

আর আমি ভাবতাম, যেদিন কল্পের মেসেজ পেয়ে হানিমুনে যেতে চাইলাম।
মায়ান আমাকে ঠিকই নিয়ে গেলো।
আবার হানিমুনে কোথায় নিয়ে গেলো?
সেই নীল শব্দের জায়গায়,বান্দরবানের নীলগিরি, নীলাচল।
আমার সন্দেহ বাড়তে থাকলো।

নীলগিরি ঘুরার দিন
আমার খুব বেশি মন বলছিলো মায়ানই আমার কল্প।আমি আমার আশেপাশে কল্পকে অনুভব করছিলাম বার বার।
আমার তোমাকে মানে মায়ানকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিলো।
কারণ মন বার বার বলছিলো,তুমিই আমার কল্প।

নীলগিরি ঘুরে বাসায় গিয়ে যখন শুয়ে পড়েছিলাম ঘুমানোর জন্য।তখনো আমার খুব বেশি কল্পকে মনে পড়ছিলো।ঘুম আসছিলোনা আমার।
আমি তোমার ঘুমন্ত মুখ টা বার বার দেখছিলাম আর মনে মনে বলছিলাম,মায়ানকে কেন আমার এত বেশি আপন মনে হচ্ছে?
কেন মনে হচ্ছে ও ই আমার কল্প।
কেন ওকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
তাহলে কি আমার মন যা বলছে তা ই সত্যি।
মায়ানই আমার কল্প?

তাই আমি আমার ফোন অন করে ডাটা অন করে কল্পর আইডিতে মেসেজ দেই।
আর লিখি,
_আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।

যেই না আমি মেসেজ টা সেন্ড করি আর মায়ানের মেসেঞ্জারে মেসেজের আওয়াজ ভেসে আসে।
মানে তোমার ফোনে।
আমি আবার ও একটা মেসেজ দেই।
এই লিখে-
কল্প আছো তুমি অনলাইনে?
কিন্তু তখনও তোমার ফোন বেজে উঠে।

আর তাই আমি তোমার ফোনটা নিয়ে তোমার আঙুল দিয়েই ফোনের লক খুলি।
আর তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলে বলে বুঝতেই পারোনি।

পরে ফোন খুলে দেখি যা ভেবেছি তাই।
তোমার ফোনে কল্পর আইডিই লগইন করা।
আর আমি সেদিনই পুরোপুরি সিউর হয়ে যাই।তুমিই আমার কল্প।
আর আমি মেসেজ দুটো ডিলিট করে ফোন আবার যেভাবে ছিলো সেভাবে রেখে দেই।

তারপর কল্পর কথা মানে তোমারই কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে বলি।

তুমি আমাকে নীলাচল নিয়ে যাও।
তোমার মনে আছে?
আমি তোমাকে সেদিন কি বলেছিলাম?
তুমি যখন নীলাচল গিয়ে আমাকে বলেছিলে,
_মেঘা!
সুন্দর না?
আমি বলেছিলাম,
_অনেক অনেক অনেক বেশি সুন্দর।
থ্যাংক ইউ সো মাচ কল্প।
_লাভ ইউ।

তুমি তখনো বুঝতে পারোনি,তোমার মেঘা বুঝে গেছে,তুমিই ওর কল্প।

আমি তোমায় আমার হাত ধরে ছবি তুলে দিতে বললাম তুমি তখনো কিছুই বুঝতে পারোনি।

আর রাতে বাসায় গিয়ে যখন তোমার পছন্দের লাল শাড়ী পরে তোমার কাছে এসে তোমার হাতে শুয়ে বললাম,আমি তোমার সাথেই ঘুমাবো।
তুমি কেমন রিয়েক্ট টাই না করলে।হি হি।
আমি আসলে চেয়েছিলাম তুমি যেন রেগে যাও,এই ভেবে যে আমি কল্পকে ভুলে গিয়েছি।
আর মায়ানকে মেনে নিচ্ছি।
আর তখনই যেন রেগে গিয়ে কষ্ট পেয়ে নিজে মুখে বলে দাও তুমিই আমার কল্প।
কষ্ট পেয়েছো ঠিকই,কিন্তু বলো আর নাই তুমি যে কল্প।

পরের দিন এত চেষ্টা করলাম কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনতেই পারলাম না তুমি কল্প।
আইডি ব্লক করলাম।
কল্পকে বললাম আমি মায়ানকে মেনে নিচ্ছি।
আরো কত কি।
মায়ান, মানে তুমিই আবার বাসায় আসলে,তোমার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইলাম।
বললাম আমি আমার ভালবাসার মানুষকে আমার সব কিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছি।
আমি তোমার সাথে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই।
তবুও তুমি নিজে মুখে কিছুই বল্লেনা।
বরং রেগে গিয়ে আমায় বাসায় ই দিয়ে গেলে।

ওহো!দিশার কথা তো বলিনি,দিশা যে তোমাকে এক তরফা ভালবাসে সেটা আমি বুঝেছিলাম আগেই।
কারণ আমি সেদিন দেখেছিলাম,দিশা তোমাকে পেছন থেকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছে।আর তুমি ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলে আর বলছিলে ছেড়ে দিতে ওকে।
তাছাড়া ওকে ভালবাসলে তুমি আর আমাকে বিয়ে করতেনা।
নিজের ভালবাসার মানুষকে ছেড়ে হুটহাট অন্য এক বিয়ে ভাঙা মেয়েকে বিয়ে করতে যেতেনা।

ও হ্যাঁ আমি কখন তোমার মানি ব্যাগে চিরকুট টা রেখেছি জানো?
যখন তুমি হোটেলে এসে আমায় রুমে দিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলে,আর বললে আমায় বিশ্রাম নিতে,তুমি নাকি একটু বাইরে যাবে।আমি তখন চুপচাপ তোমার মানি ব্যাগ টা খাটের উপর দেখে চিরকুট টা রেখে দেই।
কিন্তু কে জানতো,তুমি চিরকুট তো পাবেইনা বরং আমাকে ওই রাতেই বাসায় দিয়ে যাবে।

_সরি মেঘা!আমার এভাবে তোমায় একা রেখে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি।
_আচ্ছা,তুমি আমায় এত কষ্ট কেন দিলে এ কয়দিন?
_দিবোনা?আমি কি কম কষ্ট পেয়েছি?তাই একটু শোধ নিলাম।
আমার উপর কি একটুও বিশ্বাস ছিলোনা?
যে বিয়ের পিড়িতে বসে গেলে।
_আসলে আব্বু অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন,তার শেষ ইচ্ছে ছিলো আমার বিয়ে দেখে যাওয়া।
আর তিন মাস যাবত তুমি উধাও হয়ে ছিলে।
বিয়ের কথা বলা মাত্র,আর দেশে আসার কথা বলার পরই তুমি নিখোঁজ হও।
তাই ভুল বুঝেছিলাম।
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
_যদি তোমায় হারিয়ে ফেলতাম আমি,কি হতো বলোতো?
_কি হতো?
_আমি পাগল হয়ে যেতাম।
_হয়েছে আর পাগল হতে হবেনা।
_মেঘা!আমিও সরি হ্যাঁ!এ কয়দিন খুব খারাপ ব্যবহার করেছি বলে।
_আচ্ছা হয়েছে, হয়েছে।

কল্প আমাকে বুক থেকে ছাড়িয়ে এবার একটা শপিং ব্যাগ হাতে দিয়ে বলে,

_এই নাও।
_কি এটা?
_খুলে দেখো।

আমি খুলে দেখি একটা “নীল বেনারশী”
_অনেক সুন্দর কল্প!
থ্যাংক ইউ সো সো সো মাচ।
লাভ ইউউউ!
_এসো এবার পরিয়ে দেই।
_এত রাতে?
_হুম এত রাতেই।
_পরতে পারি,তবে আমার একটা শর্ত আছে।
_আবার শর্ত।
ওইদিনও কি শর্ত যেন ছিলো তোমার,এক সাথে ছবি তোলার সময় বলেছিলে।
_ওই দিন আর আজকের দুদিনের একটাই শর্ত।
_কি সেটা?
_তুমি আমাদের ম্যারেজ এ্যানিভার্সারিতে আমাকে আবার বান্দরবানের নীলগিরি আর নীলাচল নিয়ে যাবে।
আর আমি তখন সেখানেই থাকবো।
দূরে কোন হোটেলে উঠবোনা।

_ওকে ওকে আমি রাজি।
এবার তো এসো।

এরপর কল্প আমাকে “নীল বেনারশী” টা পরিয়ে দেয়।
আর আমার কপালে চুমু খেয়ে বলে ভালবাসি আমার বউ টা।খুব বেশি ভালবাসি।
আমিও কল্পকে জড়িয়ে ধরে বলি,আমিও তোমাকে ভালবাসি কল্প!
ভীষণ রকম ভালবাসি।

(সমাপ্ত)

#ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
গল্পটি কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।
ধন্যবাদ এত দিন আমার গল্পটি সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
আসসালামু আলাইকুম!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here