নীলিমায় কালো মেঘ পর্ব ৩

0
487

নীলিমায় কালো মেঘ
পর্ব ৩
ভাবনার মেয়ের জন্ম হওয়ার পর চাকরিটা কীভাবে করবে এ নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো ।ভেবেছিলো চাকরিটা বুঝি আর করা সম্ভব হবেনা। খুব মানসিক কষ্টের মাঝে তার দিন যাচ্ছে তার। এদিকে মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রায় শেষের দিকে কিন্তু এখন পর্যন্ত মেয়েকে কার কাছে রেখে সে অফিসে যাবে সেটাই ভেবে কূল পাচ্ছেনা।
মন ভালো করতে কিছুদিন মায়ের বাসায় থাকার জন্য আবিরের কাছে আবদার করলো সে। আবিরও না করলো না।

সাতদিন ধরে ভাবনা তার মেয়েকে নিয়ে মায়ের কাছে এসেছে। ভাবনার দুশ্চিন্তা তার মায়ের চোখ এড়ায় না। মেয়ের জন্য কি করবে সেটাই ভাবছে সে। দুপুরের খাবার পরে মেয়ের রুমে এসে বলল,

– তোর শাশুড়ি তো গ্রামে একাই থাকে। এখন তো আপনও ঢাকাতে থাকছে । উনি একা গ্রামে না থেকে তোর এখানে এসে থাকতে বল।

– এ কথা আমি আবিরকে বলেছি। আবির ওর মায়ের সাথে কথা বলেছে। কিন্তু উনি আসতে রাজী না। উনি উনার গ্রামের সহায় সম্পত্তি নিয়ে খুব চিন্তিত। উনি আবিরকে ডিরেক্ট বলেছে আমার চাকরি ছেড়ে দিতে। আবির এখন আগের চেয়ে মোটামুটি একটা ভাল বেতনের চাকরি করছে। তাই আবিরও চাচ্ছে আমি চাকরি না করি।

– আবির যে বেতন পায় তাতে কি তোর সংসার ভালো করে চলবে? এত টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে কি করে কিভাবে হবে? তাছাড়া যে ঘরে ছোট বাচ্চা থাকে সেখানে তো এদিক সেদিক খরচের অভাব নেই। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা তুই এত কষ্ট করে এমবিএ করলি মেয়েকে পেটে নিয়ে চাকরি আর সংসার সামলেই । তাহলে সবই কি বৃথা যাবে? এভাবে হাল ছেড়ে দিবি? খুব খারাপ লাগছে। নিজের হাতে নিজের কপাল পুড়িয়েছিস ।এখন ভোগ!

– মা ,এসব কথা একদম ভালো লাগেনা আর। কতবার বলবা? আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। এখন কি করবো সেই বুদ্ধি দাও।

– কি বুদ্ধি দিবো আর? আমি যে যেয়ে তোকে একটু সাহায্য করবো সেই উপায়ও নেই। তোর বাবার যে অবস্থা তাতে তাকে রেখে আমার কোথাও যাবার সাধ্য নেই। জানিসই তো আমাকে ছাড়া তোর বাবা একদম অচল।

– হুম। সেটাই তো। কি যে করবো বুঝতে পারছিনা । কিছুদিন গেলেই হয়তো প্রমোশন হবে আমার। আর এখন চাকরিই টিকাতে পারবো কিনা তা নিয়েই এখন চিন্তিত।

– এক কাজ কর! তুই আমার এখানে চলে আয়। তবে আমি তোর বাবার পাশাপাশি তোর মেয়েকেও দেখতে পারবো। পুরো বাসা তো খালিই পড়ে থাকে। আবিরকে নিয়ে এখানেই থাক। যদিও এখান থেকে তোদের অফিস দূরে হবে ।এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায়ই নেই।

– মা, কথাটা মন্দ বলনি। এই মুহূর্তে এছাড়া এর থেকে ভালো উপায় আর নেই। কিন্তু আবির মানবে কিনা জানিনা। আমি আবিরের সাথে আজই কথা বলবো।

– কথা বলে দেখ ।

– আচ্ছা।

রাতের খাবার শেষে আবিরকে ফোন দিবে ঠিক সেই সময়ই আবিরের ফোন এলো।

– মাত্রই তোমাকে ভাবছিলাম, আবির। ভাল করেছো ফোন দিয়ে।

– তাই! দেখেছো মনের মিল। জারা কি করছে তাই বল?

– এইতো খেলছে সবুরা খালার সাথে।

– ওখনে তো বেশ আরামেই আছো। আম্মা আছে তার উপর সবুরা খালাতো আছেই।

– তুমি আজ আসলেই পারতে। আজ কাল দুদিন বন্ধ। একা কি খাচ্ছো না খাচ্ছো!

– সমস্যা নেই। আমি বিকেলে গ্রামে এসে পৌঁছেছি মায়ের কাছে।

– ভাবনা খানিকক্ষণ থেমে বললো, আমাকে জানালে কি অন্যায় হতো!

– না, হুট করে প্লান করে চলে আসলাম। হঠাৎ আপন এসে বললো ও বাড়িতে যাবে । ভাবলাম তুমি বাসায় নেই । একা একা সময় কাটছেনা বাড়িতে গেলে মন্দ হয়না। তাই চলে আসলাম। কালকেই চলে আসবো, ইনশাআল্লাহ!

– হুম, বুঝেছি। আচ্ছা, বল! মা, কেমন আছে ?

– আছে মোটামুটি, আলহামদুলিল্লাহ্‌!

– একটা কথা বলতে তোমাকে ফোন দিতে চেয়েছিলাম।

– বল!

– আমি এখন থেকে এখানেই থাকতে চাই। মাও তাই বলল। তাহলে জবটা করতে পারবো। মা জারার দেখাশোনা করতে পারবে। আমার জব করতে আর কোনো অসুবিধা হবেনা। তুমি কি বল!

– তাহলে তো আর কোনো সমস্যাই নেই । কিছুটা থেমে বললো আবির।

– কি হয়েছে তুমি মনে হয় খুশি হওনি?

– তুমি তোমার মায়ের কাছে থাকবে এতে আমার কাছে অনুমতি নেবার কি আছে?

– আমি শুধু আমার আর জারার কথা বলছি না। আমি তোমার কথাও বলছি। এ বাসা তো খালিই পড়ে থাকে । আমরা এখানে থাকবো । তাছাড়া বাবা মায়েরও জন্যও এটা খুব ভাল হবে।

– আচ্ছা, পরে কথা বলি ভাবনা। খুব ক্লান্ত লাগছে। একটু দম নিয়ে বললো আবির।

– ভাবনা আবিরের মনোভাব কিছুটা হয়তো বুঝতে পারলো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলল, ঠিক আছে।

আবির দু হাতে মাথা চেপে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে ঠিক তখন আবিরের মা এসে উপস্থিত।

– কিরে বাবা ! কোনো কারণে কি মন খারাপ তোর?

– না মা! ভাবনাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।

– কেনো কি হয়েছে , বউমার?

– নাহ, চাকরিটা কি করে বাঁচাবে সেটা নিয়ে খুব চিন্তিত। তোমাকে বললাম তুমি তো যাবেনা বললে। একটা কাজের মেয়ের উপর তো ভরসা করে জারাকে রাখা যায়না। আজকাল যেসব অঘটন ঘটছে চারদিকে।

– এত চিন্তা করার কি আছে? অনেক বছর তো চাকরি করলো। এখন ঘর সংসার সামলাক। তোর আয় রোজগার তো আগের থেকে কিছুটা ভাল এখন। তবে চাকরি করার কি দরকার?

– মা, এক কথা আর কত বলি বল! ভাবনা চাকরি ছাড়তে চাচ্ছেনা।

– তবে কি করবে সে? মেয়েকে নিয়েই অফিস করবে?

– ওর মা বলছে ওদের ওখানে থাকতে । তাহলে জারার কোনো অযত্ন হবেনা।

– তার মানে কি? তুইও থাকবি?

পাশ থেকে আপন উঠে বললো, এটা তো সোজা হিসেব। ভাবি ওখানে থাকলে ভাইয়া কি আর আলাদা থাকবে?

– এটাই বাকি ছিলো! বেশ তো থাকবি ঘরজামাই। অসুবিধা কি! তোর শশুরের ছেলে নেই। ওখানে থাকলে তাদের উপকারই হবে। ওখানে উনাদেরও তোকে দরকার! তোর শশুর অসুস্থ! দেখাশোনা করার কেউ নেই। তুই থাকলে উনাদের ভালই হবে। বাজার সদাই, হাট বাজার, ডাক্তার কবিরাজের কাছে আনা নেওয়া এসব কাজের জন্য একজন ছেলে মানুষ পাশে থাকা দরকার তাদের। ভালই হলো। শেষ পর্যন্ত তোকে ঘর জামাইয়ের পদটা দিয়েই দিলো। তাছাড়া উনার অন্য দুই জামাই তো জীবনেও এ বাড়িতে থাকবেনা। তাই তোর বিকল্প আর কেউ তো নেইও।

– মা, এসব কি বলছো!

– সত্যি বলছি। তোর তো ঘরের কাজকর্ম করার আগে থেকেই অভ্যাস আছে। এ আর নতুন কি!

– মা, সবসময় সব কথা ভাল লাগেনা। আমি কি বলেছি আমি ওখানে যাচ্ছি। ভাবনা বলেছে আমি শুনেছি। ওর মা বাবা আমাকে এমনিতেই বিশেষ পছন্দ করেনা। আর ওর দুই দুলাভাই তো আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন আমি কোনো গিরগিটি।

– দেখাটাই স্বাভাবিক। তুই ওদের তুলনায় কিছুইনা আবির। তোকে কেনো ওখানে নিতে চাচ্ছে সেটা ভেবেই দেখ!।

– মা, একটু ঘুমাবো। প্লিজ, সকালে বের হতে হবে আবার।

– আচ্ছা, ঘুমা তাহলে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, আবিরের মা।

ভাবনার মনটা খুব খারাপ। গতকালই সে ফিরেছে মায়ের বাসা থেকে। আবির পৌঁছেই তাকে নিয়ে এসেছে। আবিরের সাথে কথা হয়েছে ভাবনার। আবির শশুর বাড়িতে থাকতে চাইছেনা। তবে ভাবনা যদি থাকতে চায় তাতে তার আপত্তি নেই। সে একাই বাসাতে থাকবে। ভাবনা বুঝতে পারলো আবিরের তার মায়ের বাসায় থাকাটা পছন্দ না। সে যাবেনা মানে ভাবনারও যাওয়া হবেনা। কারণ এটা দু চারদিনের ব্যাপার না যে কিছুদিন পরে চলে এলাম । আর আবিরকে সে ভালো করেই জানে একবার যেহেতু না বলেছেই যত বোঝানোই হোক সে কিছুতেই আর ও বাসাতে যেতে রাজী হবেনা। তাই নিজেকে আর ছোট করতে ইচ্ছে হলোনা তার। তাই মনে যতটুকু আলোও উঁকি দিয়েছিলো চাকরি বাঁচাবার, তাও হারিয়ে গেলো।
রাতে খাবার টেবিলে বসে আবির তেমন কথাবার্তা বলছেনা। ভাবনাও কিছু মুখে দিচ্ছেনা, প্লেটে হাত দিয়ে এটা সেটা নাড়ছে। আবিরের সাথে কথা বলবে কিন্তু কি বলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা। খুব কান্না আসছে তার। চাকরিটা বাঁচানো যেনো শুধু তারই মাথাব্যথা। আবির একফোঁটাও টেনশন করছে বলে মনে হচ্ছেনা। অথচ এত কষ্ট করে ইনকাম করে তো এই সংসারের পেছনেই সে খরচ করছে।

অনেক ভেবে আস্তে করে বললো,

– তুমি কি চাওনা আমি চাকরিটা করি!

– কেনো চাইবোনা। এমন কথা কেনো বলছো?

– তাহলে আমাদের বাসাতে থাকতে চাইছো না কেনো?

– তোমাকে থাকতে তো নিষেধ করিনি। কিছুটা রাগতস্বরে বলল আবির।

– আবির! আমি আর বাবু থাকবো তাহলে তুমি কই থাকবে?

– আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। একাই ম্যানেজ করতে পারবো।

– এটা কোনো সমাধান হলোনা। এটা দু চারদিনের সমস্যা তো না। এভাবে কতদিন একা থাকবে আর জারাই বা ওর বাবার থেকে কেনো আলাদা থাকবে? তোমার ও বাসাতে থাকলে কি অসুবিধা ? তাছাড়া মা বাবা একা থাকেন। আমার তো কোনো ভাই নেই । আমার বোনেরাও মনে হয়না কোনোদিন কেউ এসে তাদের সাথে থাকবে? আজ না হয় কাল তো আমাদের ওখানে যেতেই হবে। মা নিজে থেকেই বলেছে । আমি তো বলিনি।

– আবির খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমাকে ঘরজামাইয়ের তকমাটা গায়ে জড়তে বলছো।

– এটা কেমন কথা! ঘর জামাই হতে যাবে কেনো? তুমি তো বসে খাবেনা সেখানে।

– ভাবনা, যেটা পারবোনা সেটা আগেই বলেছি। আবার কেনো ব্যাপারটা তুলছো?

– কারণ, আমি জবটা ছাড়তে চাচ্ছিনা ,আবির। প্লিজ, বোঝার চেষ্টা করো।

– ভাবনা, তোমার আপা দুলাভাইয়েরা এমনিতেই আমাকে দেখতে পারেনা। এখন যদি আবার তোমাদের বাসাতে পার্মানেন্টভাবে থেকে যাই তবে তো কথাই নেই। কোনদিন দেখা যাবে তোমার দুলাভাইদের সিগারেট কিনে আনার আদেশও দারোয়ানের পরিবর্তে আমার ঘাড়ে বর্তাবে। আমাকে তারা এর অতিরিক্ত একফোঁটাও বেশি কিছু যে ভাবেনা এটা এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝেছো তুমি।

– ভাবনা চুপচাপ। কি বলবে বুঝতে পারছেনা ।

– ভাবনাকে চুপচাপ দেখে আবির বলল, এটাতে তুমি কি ছোট হবেনা?

– তবে করার কি কিছুই নেই? তুমি তো একটা মানুষের যোগাড় কোনোভাবেই করতে পারলেনা।

– চাকরিটা ছেড়ে দাও। আমি তো এখন বেতন যা পাই টেনেটুনে পারবো চালাতে সংসার । তুমি চিন্তা করোনা।

– অর্ধেকের বেশি তো বাসা ভাড়াতে চলে যাবে তবে!

– আমি সব ভেবে রেখেছি। একটা রুম সাবলেটে দিয়ে দিবো।

– আবার সাবলেট ?

– তোমাকে এডজাস্ট করতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমার বেতন বাড়লে তখন না হয় আবার পুরো বাসা নিয়েই থেকো।

ভাবনা আর কথা বাড়ালোনা। কষ্টটাকে চেপে কোনোমতে খাবার শেষ করলো।

পরেরদিন তার কাছে সবকথা শুনে তার মা খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। মেয়েটার জন্য কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। শেষে অনেক ভেবে বলল,

– তোর সবুরা খালাকে তোর কাছে পাঠিয়ে দেই।

– মা, সেটা কি করে সম্ভব? উনি এতবছর ধরে তোমার কাছে থাকছে বাবাকে দেখাশোনার জন্য। তোমার কি হবে? বাবাকে ওঠানো, নামানো , গোসল করানো এগুলি একা তুমি সামলাতে পারবেনা মা। তাছাড়া তোমার কথাবার্তা বলার মত তো কেউ থাকবেনা। তুমিও না আবার বাবার মত অসুস্থ হয়ে যাও, তখন!

– আমি না হয় কষ্ট করলাম। তাও দেখি একটা মেয়ে পাই কিনা গ্রামে তোর বড় খালার সাথে কথা বলবো। তোকে তো আর নতুন মানুষ দেয়া যায় না। বাবুকে রেখে যাবি। নিরাপত্তা নিয়েও ঠিকঠাক ভাবতে হবে।

– সেটা অবশ্য ঠিক বলেছো। কিন্তু মা সবুরা খালার বয়স তো অনেক! উনি পারবে বাবুকে সামলাতে। সারাদিনের ব্যাপার। বাবু কত ছোট। বোঝইতো। তাছাড়া একা একা থাকতে অসুবিধা হবেনা উনার?

– আমি কথা বলেছি ওর সাথে। ও পারবে,ভাবিস না তুই। সবুরা আমাদের এলাকার মানুষ। ওর কাছে নিশ্চিন্তে রেখে যেতে পারবি নানুকে।

তখনকার মত ভাবনার চাকরিটা বেঁচে গেলো সবুরা খালার উছিলায় । জারার বয়স এখন প্রায় দু’বছর। এতদিন খুব বেশি অসুবিধা হয়নি জারাকে রেখে অফিসে যেতে। কিন্তু গত দু’মাস ধরে উনি এত অসুস্থ যে কিছুই করতে পারছেন না। বয়সে ভাবনার মায়ের থেকে কিছুটা ছোট হলেও অভাব, অযত্ন আর অনাদরে খুব ভেঙ্গে পড়েছে সবুর খালার শরীরটা। স্বামী হারিয়েছে অনেক আগেই। পেটে ছেলে নেই। দু মেয়ে শশুরবাড়ীতে। তাদের অবস্থাও খুব ভালোনা। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েদের বিয়েশাদী দিয়ে পেটের দায়ে এসছিলেন ভাবনাদের বাসাতে কাজের জন্য। খেয়ে পড়ে কিছু বেতনও পায়। মাসে মাসে মেয়েদের পাঠায়। অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথেই ভাবনা ডাক্তার দেখিয়েছে অনেক কিন্তু এবার কিছুতেই সুস্থ হচ্ছেনা। বাবুকে রাখা উনার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। উলটো খুব চিন্তায় থাকতে হয় সারাদিন উনাকে আর জারাকে নিয়ে ভাবনার।

উনার মেয়েরা এসে নিয়ে গেছে বাড়ীতে।
ভাবনা হন্য হয়ে খুঁজেছে পরিচিত কাউকে কিন্তু মিলেনি। অপরিচিত কারো কাছে মেয়েকে রেখে যাওয়া সম্ভব না। সে তার শাশুড়িকে নিজে অনেকভাবে বুঝিয়েছে । কিন্তু তার পক্ষে এই বুড়ো বয়সে এভাবে ঢাকার শহরে বন্দী জীবন কাটানো সম্ভব না। অবশেষে চাকরিটা ছাড়তে হলো ভাবনাকে। আবির তাকে নানাভাবে স্বান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই মন মানছেনা তার। আরো এক মাস অফিসে যেতে হবে তাকে । এই এক মাস মায়ের বাসাতেই থাকবে। তাছাড়া আর উপায় নেই কোনো।

আজকাল সারাদিন মেয়েকে নিয়েই সময় কাটে ভাবনার । ধীরেধীরে চাকরির মায়াও কেটেছে কিছুটা। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট লাগতো । এখন অনেকটাই সয়ে গেছে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর নিরাপত্তার কথা মনে আসলেই আর কোনো কষ্ট থাকেনা তার।

ভাবনার এক আত্মীয়ের বিয়ের দাওয়াত সামনের সপ্তাহে। তাদেরকেও দাওয়াত দেয়া হয়েছে, বিয়েতে যেতে হলে কিছুটা প্রস্তুতির দরকার। টুকটাক কিছু কেনাকাটা করা দরকার। হাতে টাকাপয়সাও নেই তেমন তার। রাতে খাওয়ার পরে আবির ঘুমাতে যাবে তখন সে আবিরকে বলল,

– আমার কিছু টাকা দরকার ,আবির।

– আবির খানিকটা চুপ করে থেকে বলল, কত?

– এই হাজার তিনেক হলেই চলবে।

– সেদিন না এক হাজার নিলে।

– সেদিন কোথায় ? সেটা তো গতমাসে নিয়েছিলাম। বাবুর জন্য কিছু কেনাকাটা করেছিলাম।

– এখন আবার কি করবে?

– সামনের সপ্তাহে বিয়ের দাওয়াত আছে বলেছিলাম না। এজন্য কিছু শপিং করবো ,তাই।

– বিয়েতে যাবে সেখানে গিফট বাবদ এমনিতেই খরচ! আবার এখন টাকা চাচ্ছো । এত কোথা থেকে দিব। কি এমন কেনাকাটা করতে হবে? যা আছে সেগুলিতেই চলবে! অযথা খরচ করার কি দরকার!

– আবির! আমার খুব প্রয়োজন না হলে চাইতাম না।

– তাই বলে একসাথে তিন হাজার? হাজার খানেক হলে তবু চলে!

– এখন কি আমার প্রয়োজনীয় জিনিসও কিনবো না।

– আমার পকেটের কি অবস্থা সেটাও তো তোমাকে বুঝতে হবে ।

– আমি কি খুব বেশি কিছু চেয়েছি।

– ভাবনা প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। সকালে অফিস আছে।

ঝাপসা চোখে আবিরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ভাবনা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here