নীলিমায়_কালো_মেঘ পর্ব_১০

0
579

নীলিমায়_কালো_মেঘ
পর্ব_১০

আবিরের কিছুদিন ধরে অফিসে মন বসছেনা। কেনো যেন খুব জোর করেও কাজের প্রতি মনযোগী হতে পারছেনা। যে করে হোক এর থেকে ভালো কোন জব তাকে খুঁজতেই হবে। ভাবনার সামনে দাঁড়ালেই নিজেকে ভাবনার কাছে খুব তুচ্ছ মনে হয়। কয়েক জায়গা এ পর্যন্ত সিভিও ড্রপ করেছে সে। তবে ভাবনার কাছে কিছুই জানায়নি। নিজেকে নিজে বোঝানোর চেষ্টা করছে খুব । কিন্তু কিছুতেই এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে টেনে বের করতে পারছেনা। মনে মনে চিন্তা করলো ব্যবসা করবে। কিন্তু তার তো তেমন পুঁজি আর ব্যবসা সংক্রান্ত জ্ঞান নেই যা দিয়ে কোনো ব্যবসা শুরু করতে পারবে। যে কোনো ভালো ব্যবসা করতে গেলে বেশ ভালো পরিমাণ পুঁজির প্রয়োজন। পুঁজি না হয় গ্রামের সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে জোগাড় করলো কিন্তু তার চাইতেও বড় কথা অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন। ভালো কোনো আইডিয়া এই মুহূর্তে মাথায় আসছেনা তার। তাছাড়া আবির খুব ভীতু ধরণের। ব্যবসা করার জন্য যে ঝুঁকি নিতে হবে সেই সাহসও তার নেই। দেখা গেলো কোনো ব্যবসা শুরু করলো কোনোভাবে কিন্তু যদি লস হয় তাহলে কী হবে? সংসার চলবে কী করে? পরে অনেক ভেবেচিন্তে ব্যবসায়ের চিন্তা মাথা দিয়ে ঝেড়ে ফেলল। আবিরের কয়েকজন কলিগ শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করেছে । শেয়ার বাজারের অবস্থা খুব বেশি ভালো না হলেও উনারা মোটামুটি সেখান থেকে যা আর্ন করে তাতে ভালোই চলে যায়।
আবির মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সেও শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করবে। ওর কলিগের সাথে এ নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা করলো কীভাবে কী করতে হয় এ ব্যাপারে। যদিও ভাবনার সাথে আলাপ করলে সে এর থেকেও ভালো বুদ্ধি পেত যেহেতু ভাবনা এই লাইনে আছে । কিন্তু নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার জন্য ভাবনার সাহায্য সে ইচ্ছে করেই এভয়েড করলো। সিদ্ধান্ত নিলো ভাবনাকে এ ব্যাপারে সে কিছু জানাবেই না।

ভাবনা রায়হান সাহেবের রুমে বসে আছে। অফিসিয়াল কিছু আলাপ আলোচনা শেষে রায়হান সাহেব বললেন , আপনি সেদিন যে হেল্প করেছেন এজন্য আমার ওয়াইফ আপনাকে নিজে থেকে দেখা করে থ্যাংকস দিতে চায়। ডাক্তার সাহেব খুব যত্ন সহকারে দেখেছেন এবং আপনার কথা বলতেই খুব আপ্যায়ন করেছেন আমাদেরকে। উনার নাম্বার দিয়ে দিয়েছেন যাতে এরপরে কোনো সমস্যা হলে সরাসরি কথা বলতে পারি । আমার স্ত্রী এজন্য খুব কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি।

– স্যার , এভাবে বললে খুব লজ্জা পাচ্ছি। নিশ্চয়ই দেখা করবো ম্যাডামের সাথে। এ আমার সৌভাগ্য !

– আজ ডিনারটা তবে আমাদের সাথে করেন। আমার ওয়াইফ আসবেন । অফিসের পাশের সেভেন হেভেন রেস্টুরেন্টেই টেবিল বুক করা আছে। আমার মিসেস আবার এই রেস্টুরেন্টের খুব ভক্ত। প্রায়ই আসে এখানে। দুজনে খানিক সময় বসে মন খুলে গল্প করি। বাসায় গেলেই তো সেই সংসার, সন্তান আর হাজারো ব্যস্ততা! তাই মাঝে মাঝে এভাবে নিজেদের জন্য সময় বের করার চেষ্টা করি। আজ আমাদের সাথে আপনি জয়েন করলে আমরা খুব খুশি হব।

– অনেক ধন্যবাদ, স্যার। কিন্তু স্যার ,আপনাদের মাঝে আমি কেনো? ম্যাডামের সাথে নিশ্চয়ই দেখা করব । প্রয়োজনে আমি ওখানে যেয়ে দেখা করে আসবো ম্যাডামের সাথে। কিন্তু প্লিজ, এই ডিনারের অনুরোধ করবেন না। আমি আপনাদের সাথে ডিনারে কেন বুঝতে পারছিনা।

– আমি আমার ওয়াইফের কাছে কথা দিয়েছি আপনি আসবেন। এখন না গেলে ব্যাপারটা কেমন হয়না? আমাদের সাথে ডিনার করলে উনি খুব খুশি হবেন। আজকের ডিনারটা বলা যায় আপনার উদ্দেশ্যেই। আমরা দুজন তো প্রায়ই বসি, আজ না হয় আমাদের সাথে আপনিও থাকলেন। তাছাড়া সাতটার সময় টাইম দিয়েছি। আপনার বাসায় যেতে সমস্যা হবেনা। অফিস ছুটিই তো আটটায়। আপনি আটটা সাড়ে আটটার মধ্যেই ওখান থেকে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হতে পারবেন। অফিস থেকে আপনি পৌনে সাতটায় বেরিয়ে গেলেই চলবে। প্লিজ, না করবেন না। আপনার জন্যই মূলত এই ডিনারের আয়োজন। আপনি না গেলে কী করে হবে?

– অসংখ্য ধন্যবাদ ,স্যার। এটা আমার জন্য বিশাল সৌভাগ্য। ঠিক আছে। আমি সময়মত পৌঁছে যাবো।

ভাবনার মনের মধ্যে কেমন তোলপাড় শুরু হয়েছে। কী প্রয়োজন ছিল আসার? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছে। আবার ভাবছে না আসলেও ঠিক হবেনা এমন দোটানায় থেকেই সে ঠিক সময়ে এসে নির্ধারিত টেবিলে বসে আছে । রায়হান সাহেব বা তার ওয়াইফ এখনো পর্যন্ত আসেনি। খুব অস্বস্তি লাগছে তার। এভাবে আসাটা ঠিক হল কিনা সে বুঝতে পারছেনা। মন কিছুতেই সায় না দিলেও রায়হান স্যার বারবার অনুরোধ করার পরেও কি করে সে এভয়েড করবে বুঝতে পারছিলোনা। মিনিট দশেক অপেক্ষা করার পরেই রায়হান সাহেব আসেন। উনাকে দেখেই ভাবনা উঠে দাঁড়ালো ।

– প্লিজ, বসুন! আপনাকে মনে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিলাম । এক্সট্রিমলি সরি ! দেরী করে ফেললাম মনে হয়।

– নো নো, ইটস ওকে স্যার! ম্যাম আসেন নি?

– ও বাসা থেকে বেরিয়েছে। রাস্তায় জ্যামে পড়েছে । হয়তো মিনিট দশেকের মধ্যে পৌছে যাবে। ততক্ষণ আমরা অপেক্ষা করি।

– শিওর স্যার!

– ততক্ষণে স্যুপ আর অন্থন দিতে বলি ! বলেই সে অর্ডার দিয়ে দিলো।

টেবিলের শুধুমাত্র তারা দুজন বসে আছে। ভাবনার অস্বস্তি বেড়েই চলছে। এমন আজব পরিস্থিতি হবে জানলে সে যে কোন অজুহাত দেখিয়ে না আসার চেষ্টা করতো। মনে হচ্ছে এখনি বুঝি দম আটকে আসবে। টেবিলে টুনটান শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। রায়হান সাহেব ভাবনার অস্বস্তি বুঝতে পেরে নিজে থেকেই কথা শুরু করলেন।

– আপনার একজনই মেয়ে , তাইনা!

– জ্বী স্যার।

– কিসে পড়ে?

– এবার ক্লাস ওয়ানে দিয়েছি।

– তাহলে তো বড় হয়ে গেছে দেখছি।

– জ্বী স্যার, দোয়া করবেন।

– বাসায় কার কাছে রেখে আসেন?

– আমার শাশুড়ি আছেন । তাছাড়া খুব কাছেই আমার বাবার বাসা। সেখানেই থাকে বেশিরভাগ।

– হুম, তবে তো নিশ্চিন্তে থাকা যায়।

– জ্বী স্যার!

– আপনার হাসবেন্ড যেন কি করে?

– আবির একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানীতে আছে।

– গুড! দুজনেই জব করছেন। সবদিক সামলাতে কষ্ট হয়না?

– খুব বেশি সমস্যা হয়না, স্যার। আবির খুব আন্ডারস্ট্যান্ডিং মাইন্ডের।

– খুব ভালো। সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিত। দুজন মিলে সমান তালে ঘরে বাইরে খেয়াল করলে কারো কাছেই বোঝা মনে হয়না। আসলে সংসারটা হাজবেন্ড ওয়াইফ দুজনেরই। তাই দুজনে মিলে সবদিকে খেয়াল রাখলে সমস্যা হবার কথা না। আপনার হাজবেন্ডের এমন মানসিকতা জেনে খুব ভালো লাগল। প্রতিটি মেয়ে সংসারে এমন সাপোর্ট পেলে মেয়েদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান আজ অনেকটাই বদলে যেত।

– জী স্যার! ধন্যবাদ।

এভাবে টুকটাক কথা বলার এক পর্যায়ে রায়হান সাহেবের ওয়াইফ চলে আসলেন। টেবিলের দিকে এগিয়ে আসার ভঙ্গি দেখেই ভাবনার সাথে পরিচয় করানোর আগেই সে বুঝতে পারলো ইনিই মিসেস রায়হান। ভাবনা অপলক নয়নে চেয়ে আছে তার দিকে। বোঝা যাচ্ছে খুব পরিপাটি ,স্মার্ট আর স্টাইলিশ একজন মানুষ।

গাঢ় নীল রংয়ের পাতলা শিফনের শাড়ি এবং হালকা গয়নার সঙ্গে ন্যুড শেইডের মেইকআপ আর ডিপ কালারের লিপস্টিকে বেশ লাগছে মিসেস রায়হানকে। দেখতে একদম যেন নায়িকা বা কোন মডেলদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। দেখলে বোঝার উপায় নেই যে উনার বারো বছরের একটা ছেলে আর তিন বছরের একটা মেয়ে আছে। মনে হচ্ছে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে এমন। খুব নিয়ম মেনে যে চলে সেটা তার এই মেদহীন ছিপছিপে গড়ন দেখেই বোঝা যায়। মিষ্টি হাসিতে সে ভাবনার দিকে এগুলো। এই হাসি যেকোন প্রেমিক পুরুষকে কাবু করার জন্য একবারই যথেষ্ট। ভাবনা তো প্রথম ঝলকেই উনার ফ্যান হয়ে গেল।

– পরিচয় করিয়ে দেই। ভাবনা , আমার ওয়াইফ আশা। আর আশা , এই হলো ভাবনা। আমাদের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। যাকে দেখার জন্য তুমি খুব উদগ্রীব ছিলে।

ভাবনা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে গেলো।

– হ্যালো, কেমন আছেন? প্লিজ, বসুন ! আপনার গল্প অনেক শুনেছি রায়হানের কাছে। সে তো আপনার খুব প্রশংসা করে। দেখা করার ইচ্ছা তাই খুব প্রবল ছিলো। ভালো লাগলো পরিচিত হয়ে।

– থ্যাংক ইউ। আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো আছি। আপনিও নিশ্চয়ই ভালো আছেন? আপনার সাথে পরিচিত হতে পারাটা আমার সৌভাগ্য। খুব ভালো লাগছে আপনাকে দেখে। স্যার হয়তো বাড়িয়ে বলেছে। এত প্রশংসা করার মত আমি কেউনা।

– অবশ্যই আপনি প্রশংসার যোগ্য। অফিসিয়াল ব্যাপার উনার তাই সে ব্যাপারে আমি কথা বলতে চাইনা। আপনি সেদিন ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে কি যে উপকার করেছেন । আব্বু খুব সিক ছিলেন। আ’ম রিয়েলি গ্রেটফুল টু ইউ!

– ইটস মাই প্লেজার! এভাবে বলবেন না প্লিজ! এটা এমন কি কাজ? উনি আমার বড় দুলাভাই। এজন্যই উপকারটা করতে পেরেছি। এটার জন্য প্লিজ আমাকে এভাবে বলে আর লজ্জা দিবেন না!

– হাহাহা! বুঝতে পেরেছি আপনি খুব লাজুক! ব্যাপার না। আমি আবার আপনার ঠিক উলটো। যাই হোক, দেখা হয়েছে এতেই খুশি।

ভাবনা আর আশা দুজনে বেশ কথাবার্তা বলছে ।
মিসেস রায়হানের সাথে কথা বলে ভাবনার এমনটা মনেই হচ্ছে না যে উনার সাথে আজ মাত্র প্রথম দেখা। খুবই হাসিখুশি, বিনয়ী আর সদালাপী একজন মানুষ আশা। রায়হান সাহেবও তাদের সাথে টুকটাক জয়েন করছে । আশার কথা শুনতে শুনতে ভাবনা চোখ ফেরাতেই পারছেনা আশার দিক থেকে। এত পার্ফেক্ট একজন মানুষ হয় কী করে! কোনোদিক থেকে কোনো কমতি নেই যেন! নিজেকে খুব সাধারণ মনে হচ্ছে তার সামনে। অবশ্য সে সাধারণই। আশা রায়হান সাহেবের ওয়াইফ ,তাকে তো অসাধারণ হতেই হবে।

রায়হান সাহেবের ওয়াইফ আসার পর থেকে শুরুর দিকের অস্বস্তিগুলি ধীরে ধীরে কেটে যেয়ে বেশ ভাল একটা সময় কাটলো ভাবনার ।

বাসায় ফেরার সময় বাসে বসে ভাবছে কত সুন্দর একটা জুটি রায়হান সাহেব আর আশার। এরা দু’জনও তাদের মতই ভালোবেসে বিয়ে করেছে । কিন্তু রোমান্টিক একটা জুটি! আবির সেও এমনই হতে পারতো! কিন্তু দিনদিন আবির বেশ বদলে যাচ্ছে। তাদের সম্পর্কের মাঝে কোথাও এখন আর রোমান্টিকতার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ ভাবনার।একটা একঘেয়ে দায়িত্বের মতই চলছে তাদের সম্পর্ক। একসাথে শেষ কবে দুজন বসে গল্প করেছে ,কোথাও ঘুরতে বেরিয়েছে মনে পড়ছেনা তার। আবির সব কিছুতেই খুব বিরক্তি দেখায়। তাই ভাবনা আজকাল আর এসবের জন্য একদমই আবদার করেনা তার কাছে। হয়তো আবিরের মা অসুস্থ এজন্য এমন করছে সে, এটা ভেবে স্বান্তনা খোঁজে ভাবনা।

বাসায় ফিরে আর রাতের খাবার খেলোনা। আবির খাবার না খাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করাতে সে বলল, একটা ছোটখাট পার্টি ছিলো অফিসে। খেয়ে এসেছি । আবির ভাবনার উত্তরে কোনো প্রত্যুত্তর না করে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো। যেন ভাবনার পাশে দু দণ্ড বসার সময় তার নেই। আগে ভাবনা আগ বাড়িয়ে চেষ্টা করত আবিরকে কিছুটা সহজ করতে তার সাথে কিন্তু এখন আর সেই চেষ্টাও করেনা। আবিরের সমস্যাটা কোথায় সে বুঝতে পারেনা। ভাবনার থেকে কেমন যেন দুরত্ব রেখে চলে। ভাবনার কাছে মনে হয় আবির ধীরে ধীরে তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে । আবির তার খুব খেয়াল রাখে এটা সত্যি। আবির ঘর গৃহস্থালীর কাজেও খুব হেল্পফুল। ভাবনার ফিরতে দেরী হলে সে চিন্তায় অস্থির হয়ে যায়। তার প্রতি আবিরের ভালোবাসা যে একটুও কমেনি এটা সে বুঝতে পারে। কিন্তু তবুও তার মন মানেনা। কেনো যে আবির এমন নিরস হয়ে যাচ্ছে দিনদিন সেটাই তার মাথায় আসেনা। মন চায় আবিরের সাথে বসে খোলাখুলি এসব ব্যাপারে কথা বলবে কিন্তু তার ইগো সমস্যার কারণে সেটাও পারছেনা। দিনদিন সবকিছু কেমন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে যেন!

পরেরদিন অফিসের একটা কাজে খুব ব্যস্ত ভাবনা। তখন তার বড় দুলাভাইয়ের ফোন এলো।

– আসসালামু আলাইকুম, দুলাভাই! কেমন আছেন?

– এই তো ভালো। তুমি?

– আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। কই আছেন হসপিটালে?

– হুম, আজ কিছুটা ফ্রী আছি। তাই ভাবলাম তোমাকে ফোন দেই।

– ভালো করেছেন । নয়তো আমিই দিবো দিবো ভাবছিলাম। কিন্তু আপনি ওটিতে নাকি রাউন্ডে আছেন সেই ভয়ে দিতে সাহস পাইনি।

– হাহাহা! ভয় কিসের? তোমার আপি তো এসবের তোয়াক্কা করেনা। যখন তার দরকার হয় অমনি একটার পর একটা ফোন দিতেই থাকে। সময়মত রিসিভ না করার অপরাধে আমি ব্যস্ত ছিলাম কিনা জানার অপেক্ষা না করেই ধমকের পর ধমক শুরু করে দেয়। তোমার আপা আর বদলালো না। সেই একই রকম আছে। পাগলাটে! তোমার আপাকে আবার বলনা ,প্লিজ। তবে আমার খবর আছে।

– হাহাহা! দুলাভাই , পুরো হসপিটাল আপনার নামে কাঁপে আর আপনি কাঁপেন আমার আপির ভয়ে। বেশ ইন্টারেস্টিং! আমার আপি এমনই! সো বুঝেশুনে চলবেন। তবে আপনাদের দুজনের এই বয়সেও এই নিখাদ ভালোবাসা দেখে খুব হিংসে হয়। আল্লাহ আপনাদের আমৃত্যু এমনি রাখুক সেই দোয়া করি।

– স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা তো এমনই হওয়া উচিত। সময়ের গভীরতার সাথে সাথে সম্পর্কের গভীরতাও বহুগুণে বেড়ে যায়। কেনো ছোট গিন্নী তোমাদের বাড়ছেনা নাকি! এখন তো যে বয়স তোমাদের তাতে সারাদিন রোমান্স করতে করতেই পার করা উচিত।

– কি যে বলেন দুলাভাই! আমরা দুজন থাকি দু প্রান্তে ব্যস্ত! এসবের সময় কই? তবে হ্যা, আলহামদুলিল্লাহ আবির খুব কেয়ারিং আমার সব বিষয়ে। দোয়া করবেন।

– ফি আমানিল্লাহ! এখন বল কেনো ফোন দিতে চেয়েছিলে?

– আপনাকে সেদিন ফোন দিয়ে স্যারের ওয়াইফ আর শ্বশুরের জন্য সিরিয়াল দেওয়াতে তারা খুব কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে স্যারের ওয়াইফ! খুবই ভালো মানুষ উনি। গতকাল রাতে ডিনার পার্টিতে আমাকে দাওয়াত দিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো। তাই আপনাকে ধন্যবাদ দিতে ফোন দিতে চেয়েছিলাম । আপনার কারণেই তো সবকিছু! আসল ধন্যবাদের হকদার তো আপনিই !

– হাহাহা! যাও ধন্যবাদ নিলাম। খুব ভালো হয়েছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছো । মুরুব্বীকে তো আগেই চিনতাম । এখন আরো ভালো করে চিনলাম। প্রচুর ক্ষ্যাপাটে । মেডিসিনে কাজ হয়নি কেনো এজন্য আমাকে ধমকের পর ধমক। বোঝ তাইলে!

– হাহাহা! উনি এমনই দুলাভাই।

– তবে তার মেয়ে মানে তোমার স্যারের ওয়াইফের বেশ মানসিক সমস্যা দেখলাম।

– কি বলেন! তেমন কিছু তো মনে হলোনা। কত পার্ফেক্ট একজন মানুষ! আমি তো উনার থেকে চোখ ফেরাতেই পারছিলাম না। এত সুন্দর!

– উপর থেকে বোঝার উপায় নেই । উনি মানসিকভাবে প্রচণ্ড সিক। মাঝেমাঝে কেমন অসংলগ্ন হয়ে পড়ে কথা বলতে বলতে! আমি উনাকে আমার ফ্রেন্ড ডঃ ফারুকের কাছে রেফার করেছি। উনার মাথায় কোনো সমস্যা নেই। উনার সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। আরো আগে ট্রিটমেন্টে আসা প্রয়োজন ছিলো।

– স্যার জানে সবকিছু? আমার তো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছেনা একদম।

– আমি এসব কথা কিছুই জানাইনি রায়হান সাহেব কে। যেহেতু আমি এ সাইডে বিশেষজ্ঞ না, তাই আগ বাড়িয়ে কিছু বলে উনার মন খারাপ করতে চাইনি। যা বলার ফারুকই বলবে। ওর সিরিয়াল দিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর ফারুককে সবকিছু বলেছি। উনাদেরকে ফারুকের কাছে আমার আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিয়েছি যাতে ট্রিটমেন্ট খুব ভালোভাবে পায়। সমস্যা বেশ গুরুতর বুঝলে। উনার দুনিয়ার টেস্ট করিয়েছি। বাট, দেয়ার ইজ নো প্রবলেম!
তুমি আবার এসব ব্যাপারে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতে যেওনা উনাদের কাছে।

– না,না ,কি বলেন! আল্লাহ সহায় হোন! খারাপ লাগছে শুনে । কি লাভিং একটা কাপল! অথচ এতবড় সমস্যা। ওপর থেকে আসলেই কারো ভেতরের সমস্যা বোঝা যায়না।

– সেটাই। রাখছি তবে। একটু রাউন্ডে যাবো। ভালো থেকো। আবির আর জারাকে নিয়ে বাসায় এসো। তোমার নাক উঁচু বর তো আবার আমার বাসায় কোনোদিন এলোই না। দেখ একদিন নিয়ে আসতে পারো কিনা! চুটিয়ে আড্ডা দিবো তোমাদের সাথে।

– ভাবনা একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল, আচ্ছা, দুলাভাই চেষ্টা করবো। ভালো থাকবেন।

ফোনটা রাখার পর ভাবনার চোখের সামনে মিসেস রায়হানের হাসি মুখখানি ভাসছে। কে বলবে এই মিষ্টি চেহারার মিষ্টি হাসির পেছনে না জানি কি বেদনা লুকিয়ে!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here