নির্মোচন পর্ব ১১

0
717

#নির্মোচন . ❤
#পর্বসংখ্যা_১১ .
#ফাবিয়াহ্_মমো .

বাড়ির বাইরে দুটো কান ফাটানো হর্ণ বাজতেই ফিহার ছোট্ট বুকটা ধক্ করে উঠল। তৎক্ষণাৎ মুখটা ডানে ফিরিয়ে বিস্ফোরিত নেত্রে দূরের দেয়ালঘড়িটায় তাকাল ও। একদম কাটায় কাটায় এগারোটাই বাজছে তখন। একটা সাধারণ পেশায় কর্মরত পুরুষ কী করে সময়ের ব্যাপারে এতোটা কঠোর হতে পারে? মুখে এগারোটা বলেছে দেখে কাটে কাট এগারোটায়ই আসতে হবে? কেমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে না? আয়নায় তাকিয়ে পড়ণের সুন্দর সাদা অল্প ঘেরওয়ালা জামাটা পরোখ করে গলায় লাল টুকটুকে ওড়নাটা জড়িয়ে নিল ফিহা। নীচে থেকে সুফিয়া খালা চ্যাঁচিয়ে চ্যাঁচিয়ে ‘ নাবিলা? ও নাবিলা শুনতাছো? তাড়াতাড়ি আহো। গাড়ি তুমার লিগা অপেক্ষা করতাছে। ‘ কথাটুকু বলতেই এক মূহুর্তও দেরি না করে ঝটপট কাঁধে বাদামী চামড়ার ব্যাগটা তুলে দৌড়ে লাগাল ফিহা। গেটের কাছে উর্দিপরা দারোয়ান যখন ফিহাকে দেখে ছোটো পকেট গেটটা খুলে দিচ্ছে, তখন বুকের ভেতরটা কেমন কঠিনভাবে মোচড়ে উঠল ওর! এক লহমায় হাড় কাঁপানো শীতের মতো শিরশির করে কেঁপে উঠল ফিহার ছোট্ট নরম দেহটা! দু’হাত মুঠো করে লাল ওড়নাটা তীব্রভাবে খামচে ধরে ভেতরের অস্থিতিশীল অবস্থাটা প্রাণপণে আঁটকে নিল একটু। আজ মানুষটার সামনে একেবারেই অপ্রকৃতিস্থ হওয়া যাবে না, বুঝতেই দেবে না তাঁর সামনে যাওয়ার জন্য প্রচণ্ড অস্থির অনুভব করছে। বাঁ পা বাড়িয়ে গেটের বাইরে যেতেই রোলস রয়েসের কালো চকচকে গাড়িটাকে নিশ্চল মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। বুকে চাপা রুদ্ধ নীরব নিঃশ্বাসটা আস্তে করে ছাড়তেই গাড়িটার সামনে দিয়ে আধা পাক হেঁটে আনলক দরজাটা খুলে বসে পরে। ভুল করেও ডানদিকে তাকানোর মতো দুঃসাহসী স্পর্ধাটা দেখাতে পারে না ফিহা। এদিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভেতর দুর্ভেদ্য চাহনির অন্তর্ভেদী চোখদুটো ফিহার অস্থিরপ্রবণ মুখটা আড়চোখে দেখছে। এই অস্থিরতার কারণ ও ব্যাপার কোনোটাই পরিস্কার হচ্ছে না তার কাছে। গাড়িটা স্টার্ট দিতেই বাঁদিকে একবার চোখ বুলিয়ে গলাটা নির্লিপ্ত করে বলল,

– আমি সর্বোচ্চ তিনঘণ্টা সময় দিতে পারব। আমার পক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেওয়া সম্ভব না। যদি এই সময়ের ভেতর কাজ শেষ না হয়, দ্যান আই হেভ টু গো ফর মাই ডিউটি। ফাসেন ইয়্যুর সিটবেল্ট অ্যান্ড ইয়্যু আর ইন দ্যা কার।

কথা, ধার, অবিচল কণ্ঠের সেই লৌহকঠিন ভঙ্গি দেখে ঘন একটা ঢোক গিলল ফিহা। সাধারণ একটা পুরুষের ভেতর এতোখানি ধারালো ভাব থাকে কিনা বুঝতে পারছে না। জানালার বাইরে চলমান দৃশ্যপট থেকে মুখ ঘুরিয়ে দু’হাতে সিটবেল্ট বেঁধে ভাবনায় ডুবল ও। তখনই চোখের ডানকোণ দিয়ে দেখতে পেল মানুষটার ডানহাতের ব্যান্ডেজটা আবারও ময়লা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু সেটা বদলানোর মতো যত্ন ও সময় একেবারেই দেখায়নি সে। ছোট্ট কোলের ভেতর তুলতুলে নরম ব্যাগটা চেপে মনের হাঁসফাঁস করা প্রশ্নগুলো বলে উঠল ফিহা,

– আপনি অফিসের কোন্ পজিশনে চাকরি করেন আমি সঠিক জানি না। কিন্তু আমার বাবাকে দেখে যতদূর জেনেছি বুঝেছি, সেখানে অফিসে কর্মরত সাধারণ একজন পুরুষ কখনোই যখন-তখন ছুটি নিতে পারে না। সেখানে আপনি কী করে সময় বের করলেন? আপনি কী ডি.জি.এম., এ.জি.এম, ম্যানেজার পদের মতো উঁচু কোনো পদে যুক্ত আছেন?

প্রশ্নটা শুনে কৃষ্ণাভ চোখের তারায় তারায় অদ্ভুত একটা স্ফুরণ খেলে গেল। মনে মনে যেন ভেবে নিচ্ছে কতখানি উত্তর দেওয়া সম্ভব। স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে ব্যস্ত মানুষটা বাঁয়ে মোড় নিতেই উন্মুখ ফিহার জন্য স্থৈর্য্য কণ্ঠে বলল,

– আমার পজিশন বোঝার মতো সময় ও সুযোগ এখনো আসেনি। নিড দ্যাট ভাইটাল মোমেন্ট অ্যান্ড টাইম টু টেল ইট। অফিসের এইচ.ও.ডি. পার্সনের মতো আমার হাতে পাওয়ার আছে। মেবি ইটস এনাফ ফর ইয়্যুর নলেজ।

সোজাসুজি কথাটা না বললেও নিজের ব্যাপারে বাড়তি প্রশ্ন করতে সুক্ষ্মভাবে বারণ করে দিলো মানুষটা। শক্ত, জটিল, ঘুরপ্যাঁচ উত্তর শুনে ফিহা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে তাকায় তাঁর দিকে। ‘ এইচ.ও.ডি. ‘ কথাটার মানে বুঝতে না পেরে শুধু প্রশ্নাতুর মুখে জিজ্ঞেস করে,

– দুঃখিত, কিন্তু আমি আপনার এইচ.ও.ডি কথাটার মানে বুঝলাম না। এটা দিয়ে কী আপনার অফিসে কোনো বিশেষ পদ বোঝাচ্ছে?

ডান পকেটে কাঁপতে থাকা বস্তুটি মনোযোগ আকর্ষণ করলেও ফিহাকে সেটা একদমই বুঝতে দিলো না সাঈদ। বেশ ঠান্ডা মাথায় জবাব ছুঁড়ে বলল,

– হেড অফ ডিপার্টমেন্ট, শর্টকাট এইচ.ও.ডি.। ওভারসী, ডাইরেক্ট, কোচ অ্যান্ড ম্যানেজ পারসোন্যাল(Personnel) ফর দ্যা ফিল্ড ডেভেলপমেন্ট। আমার আন্ডারে একটা টিম থাকে, যাদের গাইড, ট্রেইন, প্রোপার ওয়েতে রেডি করা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

গাড়িটা সামনের জ্যামে স্থির হয়ে পরতেই পকেটের সেলফোনটা বের করে কানে চাপল। দু-একটি স্পষ্ট, দ্রুত, কাটকাট বাক্যের ইংরেজি নির্দেশ দেওয়া ছাড়া বাকিটা সময় হুঁ-হা করে কথা বলতে থাকে সাঈদ। হঠাৎ ফিহার মাথার ভেতর বিদ্যুতের মতো ব্যাপারটা দ্রুততার সাথে খেলে গেল। বাবা তো কখনোই অফিসের ডিউটি ছেড়ে যখন-তখন আসতে পারতো না। এমনকি ফিহা একবার সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে ডান পা ভেঙে কেলেঙ্কারি করে ফেলেছিল, সেদিনও তো বাবা অফিস থেকে তৎক্ষণাৎ আসতে পারেনি। হাসপাতাল থেকে পা প্লাস্টার করার তিন থেকে চারঘণ্টা পর বাবা রিকশা করে দেখতে আসে ওকে, তাও একঘণ্টার বেশি সময় দিতে পারেনি সে। এমতাবস্থায় কোন্ উত্তরটা এই পাশে বসা মানুষটির বেলায় প্রযোজ্য হবে এখন? একজন এইচ ও ডি ব্যক্তির ক্ষমতা কী সত্যিই এতোটা বেশি থাকে যে, চলতি ডিউটি থেকে তিনঘণ্টা ছুটি নেওয়া সম্ভব? ছোটোখাটো জ্যামটা পাঁচ মিনিটের ভেতর ছুটে গেলে গাড়িটা এবার শপিংমলের সামনে চোখ ধাঁধানো সুউচ্চ একটি বিল্ডিংয়ের নীচে থামল। ফিহা গাড়ি থেকে আগেভাগে নেমে গিয়ে শপিংমলটার ভেতরে ঢুকে দু’পাশের সাজানো-গোছানো দোকানগুলো দেখতে দেখতে এগোচ্ছিল, অন্যদিকে গাড়ি পার্ক করে কয়েক হাত পিছনে ফোনে কথা বলতে বলতে সাদা কূর্তির দিকে নজর রাখছে সাঈদ। শাড়ির একটা বিশাল বড়ো দোকানে ঢুকে পরতেই দু’জন সেলস্-ম্যান ভারী ব্যস্ত হয়ে বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন ধাঁচের, বিভিন্ন কারুকার্যে ভরা একের পর এক শাড়ি দেখাতে লাগল। ফিহা ছোট্ট একটা টুলে বসে শাড়িগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল ঠিকই, অপরদিকে পেট ফোলা সেলসম্যান লোকটা ফিহার পেছনে বডিগার্ড স্টাইলে বুকে হাত ভাঁজ করা মানুষটার দিকে কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে তাকাচ্ছিল। এই ব্যক্তির চাহনি দেখলে মনে হয় সেলস-ম্যান বুঝি মিনা কার্টুনের কুখ্যাত মুরগি চোর, আর সেই চোরের কাছ থেকে মুরগি পাহারা দিচ্ছে সুপুরুষ এই লোক। সেলস্-ম্যান লোকটা পাশের অধঃস্তন কর্মীকে কনুই গুঁতা মেiরে ফিসফিস করে বলল,

– কী রে সজীইব্বা, শাড়ির নতুন দাম কী বেশি বেশি লেখছোস? এই ব্যাডায় আমগোর দিকে পুলিশের মতো চাইয়া আছে কে? এইডা কী আবার পুলিশ নি?

পাশে থাকা সজীব ছেলেটা নকল হাসি দিয়ে একইভাবে নীচুকণ্ঠে বলল,

– ওইটা তো আমিও কইতে পারতাছি না বস্। আপনে যেমনে যেমনে কইছেন আমারে লেখতে, আমি তো হেমনে হেমনেই কামডা সাইরা লাইছি। ট্যাগের শেষে শূন্য না বহায়া নতুন দাম লেইখা প্রাইস ট্যাগ লাগায়া দিছি।

দু’জনের ভেতরে নীচুস্বরে গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথন চললেও সেটা কর্ণগোচর হলো না কারোর। ফিহা ঠোঁট মুচড়ে কোনো একটা শাড়িও পছন্দ করতে না পেরে শেষমেশ অন্য শাড়িতে চোখ বুলাচ্ছে। সাঈদ বুকে হাত ভাঁজ করে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে অপরপ্রান্তের আপডেট শোনার পাশাপাশি সামনে থাকা দুই বাটপারদের দিকে স্থিরচোখে তাকিয়ে আছে। লম্পট দুই ধান্দাবাজ সেলস্ ম্যান এটাও জানে না তাদের ঠোঁট নাড়ানো দেখে-দেখে কেউ একজন সবই পড়ে ফেলছে। সজীব ছেলেটা এবার ফিহার দিকে ঠেলেঠুলে হাসি দিয়ে বসের কাছে লঘুস্বরে বলল,

– বস্ ইদানিং তো ভোক্তা অধিকার বইলা একটা দল চালু হইছে। এই ব্যাডা কী আবার হেই দলের লোক নাকি? কালা প্যান্ট-শার্ট পইরা কানে ব্লুটুথ লাগায়া যেমনে এহনো চাইয়া আছে, আমার তো এহন কলিজাডা ধুকুর-ধুকুর করতাছে বস্, পরে যদি ঝামেলা হয়?

বস্ তার অধঃস্তন কর্মীর কথা শুনে মুখ ঝামটা মেরে বলল,

– ধুর শা লা! খালি বিপদের নাম নেস কে তুই? বিপদের ঠ্যালা আইলে যে লালবাতি জ্বলব জানোস না? গু খাইয়া কাম করতে আইছোস ব্যাডা? কালকের যে মালগুলি পুরানা দামে ট্যাগ দিয়া রাখছে, ওইখান থেকে ভালা ভালা কয়টা খাসা মাল আইনা দেখা। তাড়াতাড়ি এই মালগুলি বুলবুলরে ডাইকা সরায়া ফেল। বিশ্বাসের মাlইlর নাই।

– ঠিক আছে বস্। এহনই কামডা করতাছি। আপনে টেনশন কইরেন না কোনো।

ফিহা ধৈর্য ধরে একটা শাড়িও পছন্দ করতে পারল না। ওর কেনাকাটার অভিজ্ঞতা একেবারে শূন্য বললেই চলে। সবসময় মা আর আপু যা পছন্দ করে কিনে দেয়, সেটাই মূলত বিনা বাক্য ব্যয়ে পরা হয় বেশি। ফিহা নিজের উপর মহাবিরক্ত হয়ে বস্ লোকটার উদ্দেশ্যে বলল,

– আপনি যেসব শাড়ি দেখালেন তার মধ্য থেকে একটাও পছন্দ হলো না আঙ্কেল। এমন কটকটে রঙ, পাতলা কাপড়, জর্জেটের কোনো শাড়ি মূলত দেখাতে বলিনি। বলেছিলাম কলেজে পরার মতো সাদামাটা একটা সুতির শাড়ি বা তাঁতের কোনো লাল রঙের কাপড়। থাক আর লাগবে না। দুঃখিত আঙ্কেল, এখন তাহলে উঠি। কষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

বস্ বলা লোকটা যেন আরো কিছু দেখানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত হতে যাচ্ছিল, কিন্তু পেছনে দাঁড়ানো লম্বাদেহী ব্যক্তিটি স্থিরচোখে ‘ না ‘ ইশারায় মাথাটা আস্তে আস্তে ডানে-বামে নাড়ায়। সেই দৃশ্য দেখে লোকটা ঢোক গিলে শাড়ি দেখানো বাদ দিয়ে ফিহার দিকে অনিচ্ছুক মিষ্টি হাসি দেয়। ফিহাও পালটা হাসি ছুঁড়ে সৌজন্যতা দেখিয়ে দোকানটা থেকে বেরিয়ে পরে। বুকে হাত ভাঁজ করা হাতদুটো আলগা করে সাঈদও চলে যেতে নেয়, কিন্তু শেষমূহুর্তে থেমে গিয়ে সরাসরি বাটপার লোকটাকে তেজালো ক্ষিপ্ত রূঢ়স্বরে বলে উঠল,

– আমি ভোক্তা অধিকারের লোক না হলেও ব্যবসায় লালবাতি ধরানোর ক্ষমতা আমার ভালোই আছে। ঠকবাজি কাকে বলে, কতপ্রকার ও কী কী সেটাই এতোক্ষণ যাবৎ ধৈর্য ধরে দেখছিলাম। কাষ্টমারদের গলা কেiটে ফালতু সব দাম বসিয়ে ভালোই রমরমা ব্যবসা চালানো হচ্ছে। আজ সঙ্গে মেয়েমানুষ না থাকলে কী অবস্থা করে ছাড়তাম জানি না। আধঘণ্টা পর আসল ডোজটা পাবেন। চলি।

দোকানের ভেতর সবক’টা মানুষকে অবাক করে দিয়ে কাঁচের ‘ Pull me ‘ দরজাটা টেনে বেরিয়ে গেল সাঈদ। বিস্ফোরণের মতো বড়ো বড়ো দুটো চোখ করে মাথায় নিরুপায় ভাবে হাত চাপড়াল বস্। তিনি চিন্তাও করতে পারছেন না কী করে এই যুবক ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো বুঝে গেছে! যে কথা এতো দূর থেকে কাকপঙ্ক্ষি পর্যন্ত শুনতে পাবে না, সে কথা কিনা ততদূর পর্যন্ত অপরিচিত একটা যুবক ধরে ফেলেছে!

.

অফিসের লান্ঞ্চ টাইমের পর কিছু মালামাল দেখার জন্য অন-স্পটে বেরিয়েছিলেন আফসানা। মাথার উপর ঠা ঠা তেজের সূর্য। সূর্যের দাপুটে তেজে আটত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জনজীবন যেন হাহাকার করে উঠছে। ভ্রুঁর কাছে ডানহাত দিয়ে তেজালো আলোটা বাঁচিয়ে তিনি সরুচোখে হিসাব দেখছেন। এমন সময় মনে হলো উনার ব্যাগের ভেতর ছোট্ট বস্তুটা ভুম ভুম করে কাঁপছে। তিনি এদিক-ওদিক ছায়ার সন্ধান করতে গিয়ে শেষমেশ গুদামের কাছে হাঁট খোলা জায়গাটুকুতে ছায়া পেয়ে কলটা রিসিভ করে বলেন,

– হ্যাঁ রোকসানা, কী খবর? বাড়ির সবাই ভালো আছে? কাল দুপুরে তোকে ফোন দিয়েছিলাম ফোন বন্ধ বলল। ফোন বন্ধ করে রাখিস কেন?

বয়সের তকমায় খুব বেশি বড়ো না হলেও বড়োবোনকে অদ্ভুত কারণে ভয় পান রোকসানা। ভয়ের জন্য সমীহ করার ব্যাপারটা আপনা-আপনি ভেতর থেকে ছিটকে আসে। এই মূহুর্ত্তেও তিনি গড়িমড়ি করতে করতে আলাভোলা একটা জবাব ছুঁড়ে দেন বড়োবোনের কাছে,

– ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে বড়োবু। চার্জ নিতে চায় না। তুমি যখন ফোন দিয়েছ মiরাiর ফোনটা তখন বন্ধ হয়ে গেছে।

– পরে একটা কল দেওয়া যায়নি? তুই কী সারাদিন আমার চাইতেও বেশি ব্যস্ত থাকিস? রাখ এই কথা। এখন শোন তুই, বিয়ের ডেটটা নিয়ে তাহলে কী করলি? পিছানোর কোনো সুযোগ নেই? ওর ফুপুদের বলে কী কোনোভাবেই ডেটটা পেছানো যায় না?

– না বড়োবু। অনেক চেষ্টা করলাম, লাভ হলো না। ওর ফুপুরা কোমর বেঁধে বলে দিয়েছে ডেট পেছালে ওরা থাকবে না। জামাইদের নাকি কাজের ব্যস্ততা আছে, আবার সামনের মাসে ছোটো ননদের ছেলেটাও ইতালির জন্য চলে যাচ্ছে। সবদিক বিবেচনা করে এখন না পারতে এই সপ্তাহেই ডেটটা ঠিক করলাম বড়োবু। ভাইজান কী আসবে? ভাইজানকে আসতে বলিয়ো। দীপের বাপ সেই কবে থেকে ভাইজানের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। এবার একটু বিয়ের খুশিতে আসতে বলো উনাকে।

আফসানা হাতের কালো ঘড়িতে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে হাঁপ ছাড়া গলায় বললেন,

– মেজর সাহেবকে গতমাসেই বলে দিয়েছি রোকসানা। উনারও তো কাজের কত ব্যস্ততা। ওই লাইনের চাকরি কেমন তা জানিস তো? বছরে ক’মাস ছুটি ছাড়া বাকিটা সময় কোয়ার্টারেই থাকে। দেখি এবার ভালো করে বলব আসার জন্য। আমার দীপের বিয়েটা হচ্ছে বলে কথা। আব্বার শেষ ইচ্ছা ছিল পরিবারের সবগুলো নাতী-নাতনীর জন্য ভালোটা দেখে যাবেন। কিন্তু হায়াত আব্বাকে রাখল কই? বাদ দে। আমি দেখি মেজর সাহেবকে আজ বাসায় গিয়ে খুলে বলব। উনি কাল পরশুর মধ্যে যদি আসতে পারে তাহলে আমি উনার সাথেই আসছি।

– ঠিক আছে বু। তুমি যা ভালো মনে করো ওটাই করো। এবার যেন আমার ছেলের বিয়েতে কাউকে অনুপস্থিত না দেখি। সবাই আসুক, আনন্দ করুক এটাই চাই। বু, এখন রেখে দেই তাহলে? দীপের আব্বা ডাকছে।

– আচ্ছা রেখে দে। ভালো থাকিস। আল্লাহ্ হাফেজ।

কলটা কাটার পরপরই এক মিনিটও দেরি হলো না যেন, দুম করে দ্বিতীয় কলটা বাজতে বাজতে আফসানাকে যেন ঘাবড়ে দিলো। দ্রুত কলটা কানে চেপে উদ্বেলিত স্বরে বললেন তিনি,

– কী হলো বলো তো? ব্যাপার কী সুফিয়া? তুমি তো আমাকে লান্ঞ্চ টাইমের পর কল দাও না। বাসায় কী কিছু —

আফসানার কথাটা ওখানেই থামিয়ে দিয়ে অপরপাশ থেকে প্রচণ্ড অস্থির গলায় বলতে লাগল সুফিয়া,

– আপা? আপা আমার কেন জানি ভয় করতাছে! এইহানে কিছু একটা ঠিক নাই আপা! ফিমা ইট্টু আগে কানতে কানতে বাইরের থিকা আইলো। কী হইছে জিগাইলাম কইল না, ঠাস কইরা দরজা বন্ধ কইরা দিছে! মনডা কু ডাকতাছে আপা! কেন জানি বিরাট ঘাপলা ঘাপলা লাগতাছে।

#FABIYAH_MOMO .

#নোটবার্তা : পেজে একটি আপডেট পোস্ট আমি দিয়েছি। সেখানে কারণ, সমস্যা ও ব্যাখ্যা সবটাই দেওয়া। অনুগ্রহপূর্ণ পোস্টটা পড়ে নিবেন। লেখাগুলো স্কিপ না করে আপনাদের জ্ঞাতব্যের জন্যই দেওয়া হয়। ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here