#না_চাওয়া_পূর্ণতা ?
লেখক : সানজিতা আক্তার মীম
পর্ব : ২১
সকালে,,,,,,,
সবাই সকাল থেকে কাজে লেগে পরেছে। তনু এখনো কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে আছে। কথায় আছে যা যার বিয়ে তার খোঁজ নেই, পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নেই। তনুকে অন্তু কয়েকবার ডেকে গেছে কিন্তু তনু উঠে নি। সায়নও কয়েকবার কল করেছে। তনু ফোন ওফ করে ঘুমাচ্ছে যেন কেউ কল দিয়ে ডিস্টার্ব না করে।
এদিকে সায়ন আবার কল করেছে তনুকে। মোবাইল বন্ধ শুনে রাগ উঠে যায় সায়নের।
সায়ন : একটা মানুষ এতো কিভাবে ঘুমাতে পারে বুঝি না। wait ,ঘুম ছুটাচ্ছি।
সায়ন কিছু একটা ভেবে হাসতে হাসতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলো।
১১ঃ৩০,,
তনু আসতে আসতে চোখ খুলে একবার পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিল। উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১ঃ৩০ বেজে গেছে।
তনু : অন্তুউউউ,,,,,,,,,প্রিন্সেস, মাম্মাম এর কাছে আসো।
তনুর ডাক শুনে অন্তু দৌড়ে রুমে আসলো। এসে দেখে তনু বসে আছে।
অন্তু : মাম্মাম তুমি উঠে গেছো। জানো তোমাকে কতোবার ডেকেছি আমি। বাবাইও কল করেছিল। এতো বড় হয়ে গেছো তাও কতো লেট করে উঠেছ। আমি কত্তো গুলো কাজ করেছি জানো।
তনু অন্তুকে কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি কি কাজ করেছে।
অন্তু : নানির সাথে বসে বসে রান্না করা দেখেছি৷ নানার সাথে সাথে সবাই বাড়ি সাজাচ্ছিল তা দেখছিলাম। নাস্তাও করেছি। আর তুমি পরে পরে ঘুমাচ্ছো। আমি মাম্মাম নাকি তুমি মাম্মাম, হ্যাঁ??
তনু : কে আবার। তুমিই তো আমার বড় মাম্মাম টা। এভাবে তো মাম্মামরা ই বকে। ( বলে অন্তুর গালে চুমু দিল)
অন্তু : মাম্মাম, জানো আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি। তোমার আদর গুলো কত্তো মিস করেছি।বাবাইও অনেক মিস করতো। জানো বাবাই তোমার রুম ছাড়া কখনো অন্য কোনো রুমে ঘুমায় নি। এই ভেবে যে তুমি যদি অসুস্থ হয়ে যাও তাই। আমি ঘুমিয়ে গেলে বাবাই কান্নাও করতো। আমি সব দেখেছি।
তনু : Love you, princess.
অন্তু : love you too mammam.
নুহাশ : love you three.লাভ ইউ দিয়েই কি পেট ভরবি নাকি নাস্তা করবি।
তনু : হ্যাঁ, অনেক ক্ষুধা লেগেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তোমরা বসো।
তনু ফ্রেশ হতে চলে গেলো।নুহাশ আর অন্তু খাটে বসে দুষ্টুমি করতে লাগলো। ততক্ষণে তনুর মা খাবার নিয়ে হাজির।
তনুর মা : কি ব্যাপার, কি শুরু করলি দুইটায়। সর আমি বিছানা গুছাই।
তনু : মা নাস্তা কই? জলদি দাও খাবো।
তনুর মা : কিসের নাস্তা? কয়টা বাজে,এখন কোনো খাবার নাই।
তনু : এহ, বললেই হলো৷ লাগবে না তোমার নাস্তা। আমি বানিয়ে নিতে পারবো।হুহ। ( বলে রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিলো)
নুহাশ : ওই drama Queen. এইযে টেবিলে নাস্তা। খেয়ে তারপর ঔষধ খেয়ে নে৷ তা না হলে তুলে একটা আছার মারবো।
তনু : বল বল। সবাই মিলে এমন করছো না। সায়নের কাছে সবগুলোর নামে বিচার দিব। হুহ।
নুহাশ : সিংহকে বাঘের ভয় দেখায়। হা হা হা how funny. বাই।( বলে নুহাশ চলে গেলো)
তনু নাস্তা করে বাইরে এসে সোফায় বসে অন্তুকে নিয়ে ডোরেমন দেখতে লাগলো।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। তনুকে রেডি করতে পার্লার থেকে লোক এসেছে। তনুকে বাসন্তী রং এর লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে। অন্তুও সেম টু সেম তনুর মতো লেহেঙ্গা পরেছে।
তনুর সাজ শেষে সবাই ছাদে চলে এসেছে। কারণ গায়ে হলুদ ছাদেই হবে। সবাই সায়নদের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু তাদের কোনো খোজ নেই।
কিছুক্ষণ পর সায়নের বাসা থেকে লোক এসেছে। সায়নের মা আর বাবা তনুর কাছে চিন্তিত মুখ নিয়ে এসেছে। তা দেখে তনু জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
সায়নের বাবা : তনু মা, সায়ন সেই সকালে বের হয়েছে কিন্তু এখনো বাড়ি ফিরে নি।
তনু : মানে!!! সায়ন কোথায়। ও ঠিক আছে তো।
সায়নের মা : আমরা ভেবেছিলাম যে সায়ন তোমার কাছে।
তনুর মা : নুহাশকেও দুপুর থেকে দেখি নি। হয়তো ওরা এক সাথে৷ তনু তুই নুহাশকে কল কর।
তনু : হ্যাঁ।
তনহ নুহাশকে কল করেছে। কিন্তু কল রিসিভ করছে না।
আবার কল করলো এবার কল রিসিভ করলো।
তনু : ভাইয়া, সায়ন!! আমার সায়ন কোথায়?
সায়ন : মেরি জান, আমি সায়ন বলছি। তুমি কান্না করছো কেন। কি হয়েছে।
তনু : তুমি সকাল থেকে গায়েব কেন।কোথায় তুমি?
সায়ন : তাহা জেল থেকে পালিয়ে এসেছে। আমি আর নুহাশ পুলিশ স্টেশনে এসেছিলাম। রাস্তায়ই আছি। আসছি। কান্না না করে লক্ষী মেয়ের মতো বস।
তনু : সাবধানে এসো।
সায়ন : ঠিক আছে মেরি জান।
তনু সবাইকে সব খুলে বললো। সবাই শান্ত হলো। একটু পর নুহাশ আর সায়ন চলে আসে। সায়নকে দেখে তনু সাথে সাথে যেয়ে সায়নকে জড়িয়ে ধরলো। তা দেখে সবাই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
সায়ন বুঝতে পেরেছে তনু অনেক ভয় পেয়েছে।নুহাশ তনু আর সায়নের কাছে এসে বলতে লাগলো,
নুহাশ : বোন এটা পাবলিক প্লেস। কুছ তো সারাম কার।
নুহাশের কথা শুনে তনু আশেপাশে তাকিয়ে লজ্জায় সায়নের পিছনে দাড়িয়ে মুখ লুকালো। তা দেখে সবাই জোরে হেসে দিল।
তারপর গায়ে হলুদ শুরু হয়ে গেল কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি করলো সায়ন। সায়নের কথা হলো ওর বউকে ও আগে হলুদ লাগাবে আর সায়নের মা বলছে আগে বড়রা।
শেষে সায়ন এর কথাই রইলো। সবার আগে সায়নই তনুকে হলুদ লাগিয়েছে আর তনুও সায়নকে৷
এভাবে গায়ে হলুদ সুন্দর করে শেষ হলো। সবাই চলে গেছে৷
কিন্তু সায়ন লুকিয়ে লুকিয়ে তনুর রুমের বারান্দায় বসে আছে। তনু রুমে এসে দরজা বন্ধ করে লেহেঙ্গার ওরনা টা খুলতে চেষ্টা করছিলো। সায়ন বারান্দা থেকে তনুকে দেখছিলো। তনু অনেক চেষ্টা করেও পারছিলো না পিন খুলতে। হঠাৎ একটা হাত এসে তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তনু ভয়ে চিৎকার করতে গেলে সায়ন তনুর মুখ চেপে ধরে।
সায়ন : মেরি জান, তুমি এতো ভয় পাও কেমন করে বলো তো।
তনু : ওই তুই আমার রুমে চোরের মতো করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবি আর আমি ভয় পেলে দোষ। সর এখান থেকে।
সায়ন : ছি: নিজের বরকে এভাবে তুই করে বলে কেউ।
তনু : আমি বলি।
সায়ন : আচ্ছা বাদ দাও। জানো তোমাকে আজ একদম পরীর মতো লাগছে। বাসন্তী পরী।
তনু : i know.
সায়ন : তাহলে একটা আদর দাও। ( ঠোঁট এগিয়ে দেয়ে)
তনু : বিয়ের আগে কোনো আদর নাই। যাও এখান থেকে।
সায়ন : এই আমরা কিন্তু already husband & wife. তাই জলদি করে আমার আদরটা আমাকে দিয়ে দাও আমি চলে যাই।
তনু : নাহ।যাও। আমি হলুদ তুলবো এখন।
তনু ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিলো। সায়ন হেচকা টান দিয়ে তনুকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো।
সায়ন তনুর মধ্যে এক ইন্চির গেপ মাত্র। তনুর হার্টবিট প্রচন্ড রকমের বেরে গেছে। সায়ন এক দৃষ্টিতে তনুকে দেখছে।
তনু : সায়ন ছাড়। কেউ চ,,,( আর কিছু বলতে পারলো না। কারণ সায়ন তনুর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়েছে)
তনু ছুটার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু সায়ন এর সাথে পেরে উঠচ্ছে না। সায়ন তনুর হাত দেয়লে আটকে রেখেছে।
তনু জানে সায়নকে ও থামাতে পারবে না তাই একটা সময় নিজেও সায়নের সাথে তাল মিলালো।
বেশ কিছুক্ষণ পর সায়ন তনুকে ছেড়ে কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেল। তনুও ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
#চলবে