#না_চাওয়া_পূর্ণতা ?
লেখক : সানজিতা আক্তার মীম
পর্ব : সমাপ্ত
রায়জাদা মেনশন,,,,,
আজ বিয়ে তাই সবাই ব্যস্ত। সায়ন এর বাবা ডেকোরেশন সামলাচ্ছে। সায়ন সকালে যেয়ে অন্তুকে নিয়ে এসেছে। অন্তুর বায়না সে সায়ন এর কাছে আসবে। সায়ন অন্তুর হাত ধরে ধরে সব কাজ দেখছে।
অন্তু : বাবাই আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।
সায়ন : আমার প্রিন্সেস টা কি খাবে এখন?
অন্তু : তোমার হাতের নুডলস।
সায়ন : ওক্কে। চল তাহলে।
অন্তুকে রান্না ঘরের কেবিনেটের ওপর বসিয়ে সায়ন নুডলস রান্না করতে লাগলো।
সায়ন : প্রিন্সেস তোমার খাবার রেডি। চল চল খেয়ে দেখো তো কেমন হয়েছে।
অন্তু : always এর মতোই best. ( একটু খেয়ে)
সায়ন : আচ্ছা তুমি দাদুর কাছে বসে খাও আমি উপরে আছি কেমন?
অন্তু : ওকে বাবাই।
সায়ন : চল।
অন্তুকে নিয়ে সায়ন মায়ের রুমে যেয়ে অন্তুকে রেখে উপরে চলে আসলো আর অন্তু বসে বসে খাচ্ছে। সায়নের মা অন্তুর কাছে বসে অন্তুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কথা বলতে লাগল,
সায়নের মা : কি অন্তু দাদু বাবার হাতের নুডলস খেতে এসেছো বুঝি, নাকি আমাদের মিস করেছো তাই এসেছো কোনটা?
অন্তু : আমি তো আমার একমাত্র দাদুর জন্য এসেছি। তোমাকে ছাড়া কি আমার ভালো লাগতে পারে বলো। ( দাদিকে পটানোর ধান্দা সব)
সায়নের মা : ওরে বাটপার। আমাকে মাখন লাগানো হচ্ছে। তা আমার দাদুটা আজ কি পড়বে?
অন্তু : বাবাই বলেছে আমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
সায়নের মা : ওও আচ্ছা। তনু কি করছে?
অন্তু : মাম্মাম তো ঘুমিয়ে ছিল। জানো দাদিজান তোমার ছেলের বউটা অনেক অলস হয়ে গেছে। সারাদিন ঘুমায়।
সায়নের মা : তোমার মাম্মামকে অনেক পাওয়ার এর ঔষধ খেতে হয় যে তাই বেশি ঘুমায়। সুস্থ হয়ে গেলে আর এমন হবে না।
অন্তু : হুম।
চৌধুরী বাড়িতেও কাজ চলছে। মেয়ে পক্ষ বলে কথা। চৌধুরী সাহেব কোনো কমতি রাখতে চান না মেয়ের বিয়েতে৷ নুহাশ যেখানে রান্নার কাজ হচ্ছে সেইখানটা দেখছে। তনুর বাবা–মা বাড়ির কাজ দেখছে৷ ফুল, বাতি ঠিক করে লাগাচ্ছে কি না।
দুপুর ১২ টা বাজতে চললো তনু এখোনো ঘুমায়। পার্লার থেকে মেয়েরা চলে এসেছে। কিন্তু তনুর কোনো খবর নেই। সায়ন নুহাশের ফোনে কল করেছে ভিডিও। নুহাশ ফোন নিয়ে তনুর রুমে গিয়ে দেখে তনু বালিশের নিচে মাথা দিয়ে ঘুমায়। তা দেখে সায়ন বিরক্ত। নুহাশ ফোনটা তনুর সামনে ধরে দাড়িয়ে আছে।
সায়ন : মেরি জান, আর কত ঘুমাবা উঠো। আমি কি তোমাকে এইভাবে নিয়ে আসবো নাকি। তুমি চাইলে আমি এইভাবে নিয়ে আসতে প্রবলেম নেই।
তনু : সায়নের বাচ্চা ঘুমের মধ্যেও শান্তি নাই। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও তোর কথা কানে আসছে। বজ্জাতের হাড্ডি। ( ঘুমের মধ্যে)
সায়ন : মেরি জান আমি তোমার সামনে, স্বপ্নে না। চোখ খুলে দেখে নাও।
সায়নের কথা শুনে তনু তরিঘরি করে উঠে বসলো৷ চারপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই নুহাশ বাদে৷
তনু : ভাইয়া ওই বজ্জাতের হাড্ডির আওয়াজ আসলো কোথা থেকে। একটু ঘুমাতেও পারলাম না।
নুহাশ : এই নে, এখানে।
সায়ন : কি যেনো বলছিলে?
তনু : ক,,ক,,,কই কিছু না তো। আচ্ছা বাই আমার রেডি হতে হবে দেরি হচ্ছে। ( বলে তনু ফোন নুহাশের হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো)
তনুকে পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিয়ে গেছে। তনু গাঢ় লাল খয়রি রং এর লেহেঙ্গা পরেছে। তনুকে আজ অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগছে। সায়নতো দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। তনু বরযাত্রীর অপেক্ষায় আছে।
সায়নকেও আজ কম হেন্ডসাম লাগছে না। অন্তু নিজের বাবাই এর কানের পিছনে কাজল দিয়ে নজর টিকা দিয়ে দিয়েছে। তা দেখে সায়নের বাবা-মা হাসতে হাসতে শেষ।
বরযাত্রী বের হয়ে গেল।
বরযাত্রী চলে এসেছে। নুহাশ আর তনুর অন্য কাজিনরা গেট ধরেছে। সায়ন এর কাছে থেকে টাকা না নিয়ে ঢুকতে দিবে না।
সায়ন : এই নাও টাকা। ( বলে সায়ন ১০ টাকার বান্ডিলের ২ পাশে ৫০০ টাকার নোট রেখে বুঝিয়েছে যে এইগুলা সব ৫০০ টাকার নোট)
নুহাশ : বাহ বলার আগেই দিয়ে দিল। কুছতো গারবার হে দেয়া ( মনে মনে)
সায়ন সবাইকে বোকা বানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। সব ফর্মালিটি পার করে সায়নকে বসানো হলো স্টেযে। একটুপর তনুকে নিয়ে আসা হলো।
তনুকে নিয়ে আসার পর থেকে সায়ন হা করে তনুকেই দেখছে৷ তা দেখে তনু জোরে সায়নের হাতে চিমটি দিল।
তনু : এমনে হা কইরা থাকলে মানুষ কি ভাববে। ?
সায়ন : মেরি জান, মেরি জান লেনে কা ইরাদা হে কেয়া ?
তনু : offo কথা বলাই ভুল।
অবশেষে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। এবার বিদায় এর পালা। সবাই তনুকে ধরে কান্না করছে। তনুও কম কিসে। কান্না করে করে টায়ার্ড হয়ে গেছে। সায়ন তনু আর অন্তুকে নিয়ে গাড়িতে বসালো।
নুহাশ : আমি জানি তুমি তনুকে ভালো রাখবে তাই best of luck for future.
সায়ন : thank you ভাইয়া।
সায়ন আর তনু বাসায় চলে এলো। অনেক বড় করে আয়োজন করে তনুকে বরন করা হয়েছে। তনু আর সায়নের বান্ধবীরা তনুকে বাসর ঘরে বসিয়ে রেখে এসেছে।
তনু সায়নের জন্য অপেক্ষা করছে।
তনু : হুর এমন নার্ভাস লাগছে কেন। ও তো আগে থেকেই হাসবেন্ড। আজতো নতুন বিয়ে না। হুদ্দাই এমন লাগতাসে কেন। আর এই এসিটা কি নষ্ট নাকি। গরম লাগে কেন। একটু বারান্দায় দারাই।( বলে তনু বারান্দায় চলে এলো)
সায়ন রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে খাটে কাওকে দেখতে পেলো না। সায়নের বুঝতে বাকি নেই যে তনু বারান্দায়। সায়ন বারান্দায় এসে তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে তনু কেঁপে উঠল।
সায়ন : মেরি জান, ভয় পেলে কেন। আমিই তো৷
তনু : আমি ভয় পাবো কেন। একটুও ভয় পাই নি।
সায়ন : আচ্ছা তাই বুঝি ( সায়ন তনুর পেটে স্লাইড করতে করতে বলতে লাগলো) তা জান মনে আছে সকালে কি যেন বলছিলে? আমি বজ্জাতের হাড্ডি!
তনু : কই না তো। আমি এসব বলতে যাব কেন। আমার বয়েই গেছে। হুহ। ছাড় আমাকে।
সায়ন : ছাড়ার জন্য তো ধরি নি। আজ তো নো চান্স। চল।
তনু : কোথায়।
সায়ন : চল তো আগে।
সায়ন তনুকে নিয়ে ছাদে চলে এলো। ছাদে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সায়নূের ছাদে একটা দোলনা রয়েছে। সায়ন তনুকে দোলনায় বসিয়ে তনুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। তা দেখে তনু সায়নের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
সায়ন : জানো এই একটা বছর তোমাকে অনেক মিস করেছি আর এটাও অনুভব করেছি তুমি ৫ টা বছর কিভাবে পার করেছ।একা অন্তুকে সামলানো আবার চাকরি করা। এতোটা সহজ ছিলো না। আমি এক বছরেই তা বুঝতে পেরেছি। ( সায়ন উঠে বসে তনুর হাত গুলো নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে) আমাকে মাফ করে দিও তোমার জীবনের এই ৫ বছর খারাপ করে দেওয়ার কারণে। আমি আর কোনো কিছুতে তোমাকে কষ্ট পেতে দিব না মেরি জান।
তনু : শুনো না,,,,,,,,
সায়ন : হুম বলো
তনু : তুমি কি যান তুমি আমার #না_চাওয়া_পূর্ণতা। চাই নি তোমাকে আর। কিন্তু ভাগ্য ঠিকি আমাদের এক করে দিয়েছে। আমি তো ভেবে নিয়েছিলাম অন্তুকে নিয়ে দূরে চলে যাব। কিন্তু আল্লাহ চান নি এমনটা আর মনের কোনো এক জায়গা থেকে আমিও চাই নি তোমার থেকে আলাদা হতে। তাই আজ আবারও এতো বাধা বিপত্তির পর আমাদের #না_চাওয়া_পূর্ণতা ঠিকই পূর্ণতা পেলো।
সায়ন : ভালোবাসি।।।
তনু : আমিও ভালোবাসি।
সায়ন : ভালোবাসার অনুমতি তাহলে পেয়ে গেছি?
তনু লজ্জায় সায়নকে জড়িয়ে ধরলো। সায়নও নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। সায়ন কিছু না বলে তনুকে কোলে তুলে নিল। তারপর রুমের দিকে পা বাড়ালো। আজ হয়তো আবারও পূর্ণতা পাবে তনু আর সায়নের ভালোবাসার।
?❤️সমাপ্ত❤️?
————————
এভাবে পূর্ণতা পাক সকল ভালোবাসা। আজ এখানেই সমাপ্তি করলাম এই গল্পের।