দেবী পর্ব ১

0
1368

#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ।
১ঃ

গেইটের কাছে বড় অক্ষরে লেখা ” সিরাজী মঞ্জিল”।বিশাল এক পুরনো মহল। প্রবেশ পথের ডান পাশে বিশাল ফাকা মাঠের মতো। সবুজ ঘাসে আবৃত।আর বামপাশে বিশাল বাগান।গাছ গুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ পুরনো।তার মধ্যে রক্তজবা ফুল গুলি বেশি উকি দিচ্ছে। সিরাজী মঞ্জিলের ভিতরে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। অনুমতি নেই বললেই চলে। তবে সাহায্য চেয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। বয়স ৭০-৮০ হবে। বৃদ্ধটি দাড়োয়ান কে বললেন সে সাহায্যের জন্য এসেছে। তাকে অনুমতি দেওয়া হলো। প্রবেশ করলেন সিরাজী মঞ্জিলে। বললেন, “সিরাজী আব্বা বাড়ি আছেন নি?”

বয়স চল্লিশের বেশি হবে নাম সামিয়া। মহিলাটি বললো, “জি দাদাভাই তো আছে,কি দরকার?”

লোকটি মাথা নিচু করে বললো,”জমির ব্যাপারে কথা আছে,বইলেন করিম খা আইছে। খুব দরকার।”

সামিয়া বললো,”দাড়ান আমি দাদা ভাই কে বলছি।”

বেতের চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন এক পুরুষ।
কালো ফ্রেমের চশমা, শুভ্র রঙা পাঞ্জাবি -পাজামা পরিহিত।চোখের নিচে কালো দাগ। যেন কত রাত নিদ্রাহীন।মুখভর্তি সাদা-কালো মিশ্রিত চাপ দাড়ি। মাথার চুলেও পাক ধরেছে বহু বছর। পাশেই টি টেবিলে রাখা চা।চা প্রায় শেষ। মনোযোগ দিয়ে পড়ছে পত্রিকা। (লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)

সামিয়া লোকটির কাছে এসে বললো,” দাদা ভাই, দাদাভাই, করীম খা এসেছে। বললো জমির বেপারে জরূরী কথা আছে।”

পত্রিকা সরালো। চশমা ঠিক করলো। ভারী কন্ঠে শোনা গেল চারশব্দ। ” ইন্তেজার কক্ষে বসতে বলো”।

প্রস্থান নিলেন সামিয়া। আর গিয়ে বললেন, “আপনি
আসুন আমার সঙ্গে।”

বৃদ্ধ লোক টি সামিয়া কে অনুসরণ করে গিয়ে বসলো এবং অপেক্ষা করতে থাকলো।

আগমন হলো উক্ত পুরুষ টির।তাকে দেখে করীম খা বললো- “আসসালামু আলাইকুম সিরাজী আব্বা।”

–“ওয়ালাইকুম আসসালাম,, কি সাহায্য চাই বলুন।”

করিম খা বললো,”আজ্ঞে,আমি আমার দখীন ভিটের পিছনের জমিখানা বেইচপার চাই,,,আপনি কিনলে আমার বড়ই উপকার হইতো। দলিল নিয়া আইছি।”

–ভারী কন্ঠস্বরে বললো,”আপনার প্রিয় জমি সেচ্ছায় বিক্রি করবেন।নিশ্চয় কোনো কারণ আছে।”

করিমা খা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললেন, “না মানে আসলে হ্যাঁ সিরাজী আব্বা হে কথা ঠিক ই।”

–“শুনলাম মেয়েকে নাকি মেডিকেলে ভর্তি করাবেন।”

করিম খা মেকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,” জি মাইয়ার স্বপ্ন ডাক্তার হবো তাই আর কি।”

–“কত টাকা চাই?”

করিম খা বললো, “১০ হাজার টাকা দিলে দিয়া দিমু দলিল।”

–“আপনার জমি আমি ১১ হাজার দিয়ে কিনবো কেননা আপনার মেয়েকে ডাক্তার বানানোর জন্যই বিক্রি করছেন আপনি।শুনে খুশি হয়েছি আমি।”

করিম খার খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো,,বললেন,,”সত্যিই,,আপনি ধন্য আব্বা।সত্যিই মহান।শুকরিয়া। তয় আপনি হুনলেন কেমনে?”

–”সিরাজপুরের প্রত্যেক টা পাতা পড়ার খবর ও ‘রুহুল সিরাজীর’ কানে সবার আগে আসে। সে যাইহোক আপনার চিন্তা উত্তম। মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চান। বকুল, বকুল ১১ হাজার টাকা নিয়ে আয়”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)

শাল গায়ে দিয়ে বকুল নামের ভদ্রলোক টি এলো।টাকা দিলো করিমা খা কে। রুহুলের হাতে দলিল
দিয়ে টাকা নিয়ে বিদায় হলো করিম খা।

দলিল হাতে রুহুল নিজের একান্ত কক্ষে প্রবেশ করলো। গুপ্ত সিন্দুক খোলার পর দলিল রাখতে যাবে ওমনি দেখলো ভিতরে ছোট ছোট কাগজের টুকরো। হয়ত ইদুর কেটেছে। তাই সকল দরকারি কাগজ পত্র,দলিল বের করে পরিষ্কার করতে শুরু করলো। সব পরিষ্কার করে ড্রয়ারে অনেকগুলো দলিল সহ সকল দরকারি কাগজ রেখে সিন্দুক তালাবদ্ধ করলো।ঘর থেকে বেরোবে ওমনি চোখ গেলো নিচে পড়ে থাকা মুড়ানো কাগজে।লেখিকা স্রোতস্বীনি। রুহুল সিরাজী হাতে নিল। খুলে দেখবে ওমনি চিৎকার শুনতে পেলো। তাই সে মুড়ানো বস্তুটি টেবিলের উপর রেখে চলে গেলো।
বাইরে বেরিয়ে সে দেখলো ভাংচুর করছে মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন এক নারী। সামিয়া আর সাথে কাজের মহিলা নিলু দুজনে ধরে নিয়ে গেলো। উপরে দাঁড়িয়ে দেখছিল রুহুল সিরাজী।
সামিয়া রুহুল কে দেখে বললো,” চিন্তা করবেন না দাদাভাই, আমি শুইয়ে দিবো। ঠিক হয়ে যাবে।”

রুহুল মনে মনে ভাবতে লাগলো আদোও কি ঠিক হবে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেলো সিরাজী মঞ্জিল থেকে।

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে যখন বিছানায় গা এলিয়ে দিলো হঠাৎ রুহুলের মনে পড়লো বিকেলের কথা। টেবিলের উপর রাখা মুড়ানো বস্তুটির। অন্ধকার রুমে টেবিলের কাছে টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো। চেয়ারে বসে টেবিলের উপর রাখা মুড়ানো বস্তুটি খুললো। খুলতেই চোখ আটকে গেলো রুহুলের ।তার হৃদয়ের গতি যেন থেমে গেলো। তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। চোখে পড়লো এক নারীর পেন্সিলে আকা ছবি। মুখ থেকে অস্পষ্ট উচ্চারণ হলো “দেবী”।

মনে পড়ে গেলো সেই অতীত যা তার হৃদপিন্ড ক্ষতবিক্ষত করেছিল বহু বছর আগে। যা সে ভুলে ও ভুলে যেতে পারছে না। দিনে সকল ব্যস্ততায় মনে না পড়লেও তার ক্ষতবিক্ষত হৃদপিণ্ড তে রাতের আধারে ব্যাথা অনুভব হয়। ‘দেবী’ সে যে হৃদয় পথের স্বচ্ছ আকাশে একরাশ কালো মেঘ ছড়িয়ে হারিয়ে
গিয়েছিল নিমিষেই।
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
__________________
অতীতঃ-
এক বয়স্ক মহিলা লাঠিতে ভড় করে দাঁড়িয়ে আছে। অনুরোধের সুরে বলছে,” দাদা রে তুই থাইকা যা,, যাইস না।তর দাদাজানে কত্ত কইরা কইতাছে যাইস না। বড়গো কতা হুনা লাগে মানিক আমার।”

বলিষ্ঠ দেহের লম্বা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের সুপুরুষ যার নাম রুহুল সিরাজী।দাদিমার অনুরোধ কে অবজ্ঞা করে বলল,”না দাদিমা,, আমি চলে যাবো।গত মাসেই চলে যেতাম যদি মতি ওর বোনের বিয়ের জন্য আটকিয়ে না রাখতো।আক্কাস যদি গন্ডগোল শুরু করে এই ভয়ে মতি আমাকে যেতে দেয় নি।তা না হলে চলেই যেতাম।”

দাদিমা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,”বিদেশ যাইয়া হুদাই এত্ত ব্যবসার জন্য লেহাপড়া কইরা কি হইবো। তর দাদাজান কি পড়ছে। হে কি সব সামালায় তাছে না?”

রুহুল দাদির হাত মাথা থেকে সরিয়ে দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,” আবার শুরু করলেন আপনি। গত মাসে যে কেন ওই আক্কাসের সাথে ঝামেলা করলাম। না করলেই ভালো হতো। অন্তত এতদিন বিলেতে থাকতাম।”

প্রাণখোলা হাসি দিয়ে এক কিশোরী কন্যা বলে উঠলো,”দাদাভাই,আপনে যে মাইর ডা দিছেন ওরে ও আর কোনোদিন কোনো মাইয়ার হাত ধরবো না। আর মিতা রে তো বিয়া ও করবার চাইছিল। আপনি ভালো পোলা খুইজা বিয়া দিয়া দিলেন। এখুন তো আরো কষ্টে পাগল হইয়া গেছে। হিহিহি।”

দাদিমা এবার রেগে বললো,” এই সামিয়া চপ তুই ছেড়ি। খালি ফটর ফটর। মানিক আমার, তুই পাগলামি বাদ দে।লেখিকা স্রোতস্বীনি। তর ছুট দুইডা ভাই আছে ওরা তো তর মতো লেহাপড়া করবার চায় না।ওরা কিন্তু আমার কথা শুনে।আর তর দাদাজানের নিষেধ অমান্য করলে কি হবো জানোস ই তো। ”
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)

রুহুল এবার জোড়ালো কন্ঠে বলল,” না দাদিমা আমাকে যেতেই হবে। দাদাজান কে বুঝান না আপনি। আমার অনেক স্বপ্ন আছ..

রুহুলের পুরো কথা সম্পুর্ণ করার সুযোগ না
দিয়েই একজন বললেন,, ” তোমারে বাধা দেওয়ার লোক এখুনো জীবিত। ‘দুলাল সিরাজী’ এখনো মরে নাই। সে যখন কইছে তুমি যাইবা না তার মানে তুমি কোথাও যাইবা না।

মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে সবাই। কারো সাহস নেই কথা বলার। কারণ স্বয়ং দুলাল সিরাজী সামনে দাড়িয়ে।

সবাই ভয় পেলেও রুহুল বললো,”কিন্তু দাদাজান আপনি আমায় কথা দিয়েছি…”

দুলাল সিরাজী রুহুলের দিকে তাকিয়ে বললো,”চুপ কুনো কথা না,,আসরের সালাত কায়েম কইরা তুমি আমার সাথে মহিলাশালায় যাইবা। নতুন ঘর খারা করছি। সামনে জুম্মায় মিলাদ দিমু। তুমি সাথে যাইবা কোন টালবাহানা শুনবার চাই না।”

রুহুল এর বলার কোনো কিছু নেই আর। নিরুপায় হয়ে বললো,”জি দাদাজান। আমি যাবো আপনার সাথে।”

চলবে….

#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি

বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না।ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট,শেয়ার করে পাশে থাকবেন।আমার লেখা প্রথম গল্প ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।

®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here