#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২৭
হৈমন্তী মন খারাপ করে খাবার নিয়ে রুমে ফিরে দেখলো সারা ফ্লর পানিতে মাখামাখি। বিছানা ভেজা। আবির বাথরুম থেকে বের হয়নি। পানির শব্দ হচ্ছে। হৈমন্তী খাবার রেখে ফ্লর পরিস্কার করে বিছানার চাদর চেঞ্জ করতে করতেই আবির টলমলে পায়ে বেরিয়ে আসলো। হৈমন্তী ছলছল চোখে সেদিকে তাঁকিয়ে আবারও কাজে মন দিলো। আবির টাওয়েল রেখে সোফায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
> তোমার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কি খবর? ভাবছি আরেকটা বিয়ে করবো। বউ চলে যাচ্ছে কতদিন পরে ফিরবে বলা যাচ্ছে না। যতদিন না আসে সেবাযত্ন পাওয়া যাবে,কি বলো?
আবিরের বলতে দেরী হলো কিন্তু হৈমন্তীর ছুটে আসতে দেরী হলো না। হৈমন্তী কোমরে হাত রেখে রাগী কন্ঠে বলল,
> আপনি ভয়ংকর খারাপ মানুষ। বউ থাকতে বিয়ের কথা বলছেন?আমি এখুনি দাদিজানকে ফোন দিয়ে বলবো আপনার নাতির চরিত্রের দোষ হয়েছে।
> বউ যে আমাকে রেখে চলে যাচ্ছে তার বেলা কিছু না? রাগ করে দুটো কথা বলেছিলাম বলে চলে যাবে? এই তোমার ভালোবাসা? কতদিন পরে ফিরেছি। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কোথায় দৌড়ে এসে চুমুটুমু খাবে। সিনেমায় দেখোনি? নাকি শুধু সাবানা ম্যামের ভাত দে তেই সীমাবদ্ধ আছো?
আবির একদমে কথাগুলো বলে থামলো।হৈমন্তীর রাগ হলো ওর এমন কথাবার্তা শুনে। লোকটা ওকে দোষারোপ করছে। কিছুক্ষণ আগেও কত ভালো ছিল। ও মানতে পারলো না। মুখটা কঠিন করে বলল,
> সেদিন কতগুলো কথা বলছেছিলেন মনে আছে? আমার কি দোষ বলুন? হঠাৎ বিয়ে হলো বর আমাকে রেখে পালিয়ে গেলো তারপর হঠাৎ ফিরে এসে বলে মানিয়ে নিচ্ছি। সেখানে কোনো ভালোবাসা নেই। আছে শুধু দ্বায়ীত্ববোধ। আমার দরকার নেই ওরকম সস্তা বউ হওয়ার। শুনেছেন আপনি? আপনি শুধু আমাকে ঝামেলা ভাবেন আমি আপনার ছোট বলে।
হৈমন্তী কথাগুলো বলে কেঁদে ফেলল। আবির দ্রুত ওকে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়ে দুহাতে আগলে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল,
> ভালোবাসি না কে বলল? খুব ভালোবাসি পাগলি। আর বউরা একটু ছোট হলে কিছু হয়না। তোমার খোটা দেওয়া বন্ধ হলো না। পালিয়ে গিয়েছিলাম কোথায়? বউ বাচ্চার দায়িত্ব নিতে হলে ডিগ্রীটা দরকার বুঝলে? তোমাকেও নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তো আমার চিঠিটা আজও পড়লে না।
হৈমন্তী থামলো না ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলো। আগামীকাল যে ফ্লাইট এটাও ওকে যন্ত্রণা দিচ্ছে তবুও মুখে কিছু বলতে পারলো না। আবির ওকে এটা ওটা বলে সান্ত্বনা দিলো। হৈমন্তী চুপচাপ ওর কোল থেকে উঠে গিয়ে খাবার নিয়ে আবিরের হাতে তুলে দিলো। আবির কিছুক্ষণ ওর থমথমে মুখের দিকে তাঁকিয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে ওকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে নিলো।বাম হাতে হৈমন্তীর চোখের পানি মুছে দিয়ে খাবার নিয়ে হৈমন্তীর মুখে দিয়ে বলল,
> বউ হুটহাট রাগ করা ভালো না। আমি একবার রাগ করে দুটো কথা বলেছি বলে খিচুড়ি পাকিয়ে আমাকে টাইট দিলে। এদিকে তুমি প্রতি কথায় রাগ দেখাও আমি কিছু বলেছি? এই যে একটা শিক্ষা দিলে বাপের জন্মে ভুলবো না। এবার তোমার এমপি ভাইকে বলো আমার বউ তার বরকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে না।
হৈমন্তী মুখটা করুন করে বলল,
> অনেক গুলো টাকা খরচ হয়েছে। আমি কিভাবে মানা করবো? ভয় করছে খুব। ভাইয়া যদি ধমক দেন আমি তো মরেই যাবো।
আবির ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,
> আজেবাজে কথা বলো কেনো? ভাইয়াকে আমি বুঝিয়ে বলবো ঠিক মানবে।
> যদি না মানে?
আবির কোনো উত্তর করতে পারলো না। ওর জানা মতে রাজীব এমন কাজ কখনও করবে না। যদিও বা করে তবে তাঁকে বোঝালে বুঝবে। আবির চুপচাপ খাওয়া শেষ করে হৈমন্তীর মুখে পানির গ্লাস ধরে বলল,
>পরের কথা পরে ভাবা যাবে।শুনো না প্রচণ্ড মাথায় যন্ত্রণা করছে। কোথায় অসুস্থ বরের সেবা করবে তানা নিজেই আদর খাচ্ছো। যাও মাথা হাত বুলিয়ে দাও।
আবির হৈমন্তীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। জ্বর ক্রমশ বাড়ছে। হৈমন্তী ওড়নার এক প্রান্ত ভিজিয়ে আবিরের কপালে লাগিয়ে দিলো। সোফায় বসার জন্য নড়াচড়া করতে পারলো না। আবিরের ঘুম আসছে না। হাত পা যন্ত্রণা করছে। হৈমন্তী যে ওর কপালে পানি পটি দিচ্ছে বুঝতে পারছে। কিভাবে যে এসেছিল সেটা ওই জানে। মাদ্রাজের হাসপাতালে বসে দ্রুত টিকিট কেটেছিল। অনেক কষ্টে টিকিট পেয়ে আর অপেক্ষা করেনি। ফ্লাইটের এক ঘন্টা আগে গিয়ে বসে ছিল। এক কপড়ে চলে এসেছে। ভেবেছিল এক মূহুর্ত অপেক্ষা করলে মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলবে। ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দিতে হয়না আগলে রাখতে হয়। যত্ন নিতে হয়। সম্পর্কের মধ্যে হাজারো সমস্যা আসবে ঝগড়া ঝামেলা হবে তাই বলে তাঁকে দূরে পাঠিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয়না। ভুলত্রুটি মিলেমিশেই মানুষ। কথাগুলো ভেবে আবির হৈমন্তীর কোমর জড়িয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। হৈমন্তীর অস্বস্তি হচ্ছে তবুও কিছু করার নেই।আবিরের গরম নিশ্বাস হৈমন্তীর কোমরে গিয়ে পড়ছে। নড়াচড়া করার কোনো অবকাশ নেই। আবির গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো কিন্তু হৈমন্তীর ঘুম হলো না। ছেলেটার জ্বর কমার বদলে আরও বেশি হলো। হৈমন্তীর এবার বেশ ভয় করছে।ওষুধ দিলে কম হতো কথাটা ভেবে ও আবিরকে জোর করে তুলতে গেলো কিন্তু হলো না। হৈমন্তী হতাশ হলো তবে চেষ্টা করা ছাড়লো না। বুদ্ধি করে কিছু পানি আবিরের মুখে ছুড়তেই ছেলেটা লাল লাল চোখ খুঁলে তাকালো। ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,
> বিরক্ত করছো কেনো?
> ওষুধ খেতে হবে। জ্বর কমছে না আমার ভয় করছে। বিছানায় চলুন।
আবির আশেপাশের তাঁকিয়ে দেখলো ওরা বিছানায় নেই। হৈমন্তী বসে আছে। আবির আর অপেক্ষা করলো না হন্তদন্ত হয়ে উঠে হৈমন্তীকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় চলে গেলো। হৈমন্তী কিছু বলতে পারলো না। চোখের নিমিষেই সবটা হয়ে গেলো। আবির হৈমন্তীকে বিছানায় রেখে ওর গায়ে কম্বল দিয়ে নিজেও ভেতরে ঢুকে গেলো। ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> সামান্য জ্বর টরে তোমার বরের কিছু হবে না। টেনশন করো না। আমি ঠিক আছি। তুমি শুধু আমাকে অনুভব করো।
আবির চোখ খুলে রাখতে পারছে না। বারবার বন্ধ করছে কিন্তু হৈমন্তীকে ছাড়ছে না। আবিরের শরীরের উষ্ণতায় হৈমন্তী ঘেমে যাচ্ছে। তবুও লোকটার হেলদোল নেই। হৈমন্তীকে খু*ন করতে হয়তো বদ্ধপরিকর।
_______________________
সকালের রোদ চোখে পড়তেই হৈমন্তীর ঘুম ভেঙে গেলো। হৈমন্তী হুড়মুড় করে উঠে বসলো। পাশে আবির নেই। এলোমেলো বিছানায় নিজেকে দেখে আশেপাশে তাকালো। বাথরুমের দরজা বন্ধ। জ্বর নিয়ে লোকটা কোথায় যেতে পারে বুঝতে পারছে না। সারারাত লোকটার জ্বর ছিল। হৈমন্তী দ্রুত নেমে পড়লো। আগে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলো সবাই ডাইনিং রুমে বসে আছে। হৈমন্তী কৌতূহলী হয়ে নেমে আসলো। ওকে দেখে রাজীব গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> শুনলাম তোর বলদ ডাক্তার ফিরে এসেছে। তাঁকে বল বউ এবার হাতছাড়া হচ্ছে। আমি কিন্তু টিকেট বাতিল করতে পারবো না। যেতেই হবে।
হৈমন্তী কাঁদো কাঁদো হয়ে সকলের মুখের দিকে তাঁকিয়ে দেখে নিলো। উপস্থিত কারো মুখে কোনো হাসি নেই। সবাই সিরিয়াস। আবিরকে পাওয়া যাচ্ছে না। ওকে পেলে দুজনে মিলে কিছু বুদ্ধি করা যেতো। লোকটা কোথায় গেলো? হৈমন্তী বারবার আবিরের ফিরে আসার জন্য দোয়া করলো। ওকে চুপচাপ দেখে মাসুদ বলল,
> তোর আজ ফ্লাইট তাই সকাল সকাল শশুর বাড়ি থেকে চলে আসলাম। গতকাল শপিং করেছি রুনিকে নিয়ে। দারুণ সব ড্রেস নিয়েছি। এখন যদি না যায় কতগুলো টাকা নষ্ট হলো ভাবা যাচ্ছে না।
মাসুদ খাপছাড়া ভাবে কথাগুলো বলল। হৈমন্তীর রাগ হচ্ছে ভাইদের উপরে। ওকে পাঠাবে বলে সব হাত ধুয়ে বসে আছে। কেউ ওকে ভালোবাসে না। আরাফাত বলল,
> হৈমী ওসব ডাক্তার ফাক্তারের কথা ভাবিস না। কাজীরা সত্যিই ডাকাত। তুই সেখানে ভালো থাকবি না। তারচেয়ে ভালো যা যা পছন্দ খেয়ে নে। ভাবির হাতে, মায়ের হাতে আবার কবে খাওয়া হবে। দেশে ফিরতে ফিরতে বহুদিন বাকী ।
আরাফাতের কথা শুনে হৈমন্তী হু হু করে কেঁদে ফেলল। ওকে তাড়ানোর সব ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে। বোনকে দুর করতে এদের এতো তাড়া ওর জানা ছিল না। হৈমন্তী ফ্লোরে বসে দুহাতে মুখে ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলো। তিন ভাই হন্তদন্ত হয়ে বোনের কাছে উঠে আসল। রাজীব বোনের পাশে বসে ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
> আরে বাবা কাঁদতে হবে না। তুই তো একা যাচ্ছিস না তোর ডাকাত ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিস। আমি দুজনের জন্যই যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তোর ছোট ভাইয়া তোঁকে বলতে মানা করছে। ওই পাজিটার সব দোষ।
হৈমন্তী ভাইকে ছেড়ে দিয়ে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে পাশে বসা দুই ভাইয়ের দিকে তাঁকাতেই মাসুদ বলল,
> ডাক্তার সাহেবের সময় কম তাই এক সপ্তাহ ঘুরাঘুরি করার ব্যবস্থা করেছি। খুশীতো?
হৈমন্তী দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,
> তোমরা সবাই পচা। কেউ ভালো না। আমাকে দুঃখ দিলে। আমি চলে গেলে তোমাদের ভালো হতো।
আরাফাত বোনের মাথায় হাত রেখে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> মজা করেছি। আবিরকে আমি গতকাল ফোন করে নিয়ে এসেছি। আমার বোনকে দুঃখ দিয়ে ছেলেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে এটা তো হবে না। কোথায় সেই বলদ? এখুনি ডাক।
হৈমন্তীর এবার মনে পড়লো আবিরের কথা। এর মধ্যেই অরিন দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বলল,
> ভাইয়ার ক্লিনিকে ফুপি খুন হয়েছে। ছোট ভাইয়া ফোন করেছিল। আমার ভয় করছে। ফুপা নাকি সব দোষ ভাইয়ার উপরে চাপিয়েছে।
কথাটা বজ্রপাতের মতো হৈমন্তীর উপরে পতিত হলো। রাজীব দ্রুত উঠে পড়লো। কাকে একটা ফোন করতে করতে বেরিয়ে গেলো। সেই সঙ্গে আরাফাত আর মাসুদও সঙ্গে গেলো। হৈমন্তীর হাত পা কাঁপছে। এটা আবার নতুন কোন ঝড়ের আভাস?
______________________
চারদিকে হৈচৈ চলছে। মিডিয়ার লোকজন আবিরের ক্লিনিকের আশেপাশ ঘিরে ধরেছে। একটা অভিজাত ক্লিনিকের মধ্যে কিভাবে মানুষ খুন হতে পারে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। সিসি ক্যামেরা গার্ড সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে খু*নী ভদ্রমহিলাকে গলা টিপে মেরেছে। জুলেখা কাজীর স্বামী আবিরসহ ওর পরিবারেরর উপরে খুনের মামলা দায়ের করেছে। কোথা থেকে একদল বখাটে যুবক এসে ক্লিনিক ভাঙচুর করেছে। আবির পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। জুলেখা কাজীর কাছে উনার ছোট মেয়ে পিউলি ছিল। মেয়েটা বাথরুম থেকে ফিরে এসে মাকে এভাবে দেখে চিৎকার করে সবাইকে ডেকেছে। সিসি ক্যামেরা বা দারোয়ান কাউকে আসতে বা যেতে দেখেনি। একজন মৃত্যু পথযাত্রী রোগীকে খু*ন করে কার কি লাভ হতে পারে কারো ধারণা আসছে না। জুলেখা কাজীর স্বামী বয়ান,দিয়েছে উনার স্ত্রীর নামে শশুর বাড়িতে বড় ধরণের মোটা অঙ্কের টাকা আর অর্থসম্পদ আছে। সেসব গায়েব করতে আর প্রতিশোধ নিতে উনাকে ডাক্তার কাজী আবির এহসান হত্যা করেছে। তাঁর পূরো পরিবারের লোকজন এই জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত। হৈমন্তীর বাড়ির লোকজন আবিরদের বাড়িতে সবাইকে সামলানোর চেষ্টা করছে। এদিকে আবিরকে পুলিশ ঘিরে রেখেছে। নজর বন্দী অবস্থা। হৈমন্তী কান্নাকাটি করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। রাজীব বোনের শশুর বাড়ির সবাইকে ভরসা দিয়েছে কিছু হবে না। ও প্রটেক করবে।। সারাদিন এসব ঝামেলায় পার হলো। সন্ধ্যা তিনভাই মিলে হৈমন্তীর সামনে গিয়ে বসলো। আবিরকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিঞ্জাসাবাদ করছে পুলিশ। ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিন ভাই আর পুরো পরিবারকে এক সঙ্গে দেখে হৈমন্তীর কপালে ভাজ পড়ে গেলো। রাজীব মুখ কঠিন করে বলল,
> হৈমী দ্রুত রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নেই আই। এক ঘন্টা পরে তোর ফ্লাইট। অষ্ট্রেলিয়া গিয়ে তোর ফুপির কাছে থাকবি। আমি ওখানে তোর এডমিশনের ব্যবস্থা করছি।
হৈমন্তী ভাইয়ের এমন কথা শুনে চমকে উঠলো। আবিরের এই কঠিন সময়ে ও কিভাবে যেতে পারে? কখনও না। জীবন থাকতে না। হৈমন্তী নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
> জীবন থাকতে না ভাইয়া। আমি উনাকে ফেলে কিভাবে যেতে পারি? প্লিজ ভাইয়া একটু বুঝো। তুমি কি বিশ্বাস করছো উনি এসব করতে পারেন? ভাইয়া উনি এসব কিছু কেনো করবেন? উনাকে ফাঁসানো হচ্ছে। প্লিজ ভাইয়া কিছু করো।
হৈমন্তী ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে বসে পড়লো। আরাফাত দ্রুত গিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
> হৈমী আবির চেয়েছে তুই চলে যা। বোন আমার একটু নিজেকে সামলা। ওকে বড় ঝামেলায় ফাঁসানো হয়েছে। বের হতে জানিনা কতদিন লাগবে। শোন এদের ঝামেলায় পড়ে তুই কষ্ট পাবি এটা আমরা চাচ্ছি না। চল কাউকে কিছু বলতে হবে না। আমি লাগেজ আমি গুছিয়ে এনেছি।
ভাইয়ের কথা শুনে হৈমন্তীর প্রচণ্ড রাগ হলো। স্বার্থপরের মতো কথাবার্তা বলছে। হৈমন্তী নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলল,
> তোমরা সবাই স্বার্থপর। কিভাবে পারলে এই বিপদে ওর সঙ্গে না থেকে আমাকে নিয়ে ভাবার। আমি যাবো না।
আরাফাত কিছু বলল না। হৈমন্তী হাতে ছোট একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলো। হৈমন্তী মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় সেটা চোখের সামনে মেলে ধরলো। গোটাগোটা অক্ষরে লেখা,
প্রিয় হৈমী,
আমার কথা ভেবে নিজের ক্ষতি করিও না। অষ্ট্রেলিয়া গিয়ে মন দিয়ে লেখাপড়া করো। কার জন্য নিজের জীবন ধ্বংস করবে?যে তোমাকে কখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেনি তার জন্য? তুমি ভালোবাসা নিয়ে আমার স্ত্রী হতে চেয়েছিলে কিন্তু আমি হয়তো ব্যার্থ। পারিনি তোমাকে মন থেকে মেনে নিতে। আমার সময় খারাপ যাচ্ছে তাই পারলাম না সত্যি লুকিয়ে অভিনয় করতে। তুমি হয়তো ভাববে মাদ্রাজ থেকে আমি কেনো তোমার কাছে ছুটে এসেছিলাম। এটা নেহায়েত স্বামী হিসেবে কর্তব্য পালন ছিল। তোমার সঙ্গে যা কিছু হয়েছে ভূলে যাও আর পারলে মন থেকে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আবির এহসান
চিঠিতে আর কিছু লেখা নেই। সবটা পড়ে হৈমন্তী শব্দ করে কেঁদে উঠলো। লোকটা গতকাল রাতেও ওর সঙ্গে ছিল। কত সুন্দর ভালোবাসার অভিনয় করলো। হৈমন্তী মানতে পারছে না। আরাফাত বোনকে সামলে নিয়ে বলল,
> বিষয়টা তোকে জানাতে চাইছিলাম না। শোন সময় কম তাড়াতাড়ি চল।
হৈমন্তী হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গেলো। রাজীব ইশারা করে সবাইকে বের হতে বলল। আসমা বেগম নিরবে সবটা দেখলেন কিন্তু কিছুই বললেন না। হৈমন্তী ভাইদের সঙ্গে বেরিয়ে আসলো। আসার সময় বারবার পেছনে ফিরে দৃষ্টিনন্দন বাড়িটার নাম বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো। ওকে একপ্রকার জোর করে আবির এই বাড়িতে এনেছিল আজ ও চলে যাচ্ছে যেখানে আবির নেই। হৈমন্তীর কাছে সবটা কেমন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। যা ঘুম ভাঙলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আবির ওর কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না।রাত আটটার সময় হৈমন্তীর ফ্লাইট হয়ে গেলো। যাওয়ার সময় হৈমন্তী একটুও চোখের পানি ফেলল না। চুপচাপ সবটা মেনে নিলো। আরাফাত লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদলো। রাজীব বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি থানা থেকে ফোন আসছে। আবিরের উপরে টর্চার হচ্ছে।
(চলবে )
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।দয়াকরে ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের মতো হচ্ছে ভেবে বকাবকি করবেন না। যেভাবে ভেবেছি সেভাবেই লিখেছি।