#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২৯
অষ্ট্রেলিয়া আগমনের চতুর্থ দিন হৈমন্তীর মন মেজাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ঝামেলা মুক্ত লাগছে।সারারাত ভালো ঘুম হয়েছে।তাই ভোরবেলা বাইরে বের হয়েছে সম্পূর্ণ একা।অযথা টেনশন নেই। আরেকটা সুবিধা হয়েছে একাকিত্ব ওকে ঘিরে ধরছে না বললেই চলে।তবে একা না থাকলে হৃদয়ের অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় ঘটেনা। জুলি আর নায়রা ওকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে বিষয়টা মন্দ না তবে হৈমন্তীর কাছে মাঝেমধ্যে বিরক্তিকর লেগেছে। এখানে এসে জীবনে প্রথমবার মুক্তির স্বাদ নিতে পেরেছে বলা যায়। বাংলাদেশ থাকতে কখনও এভাবে ঘোরাঘুরি বা বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়নি। শপিং বা স্কুল কলেজ সব সময় পাশে পরিবারের লোকজন গার্ডের মতো থেকেছে। কিন্তু এখানে ওরকম কেউ নেই। জুলির বিস্তর বন্ধু আছে যারা ভ্রমণপিপাসু। হৈমন্তীর সঙ্গে সকলের পরিচয় হয়েছে। ওরা কথা দিয়েছে হৈমন্তীকে পুরো ক্যানবেরি ঘুরে দেখাবে। দরকার হলে সিডনিতেও যাবে। অষ্ট্রেলিয়ার চমৎকার চমৎকার ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোতে ওকে নিয়ে যাবে। হৈমন্তী বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা পযর্ন্ত না দেখা মেয়ে। যার গণ্ডি ঘর আর বিদ্যালয় পযর্ন্ত সীমাবদ্ধ ছিল হঠাৎ এখানে এসে সত্যিই ওর চোখমুখের রঙ পাল্টে গেছে। সমুদ্র আর চুনাপাথর নদী ওকে টানছে। এতোটা আনন্দের পেছনে আরও একটা কারণ আছে। দীর্ঘ টেনশনে পরে একটা নিউজ শুনে ও কিছুটা রিলিফ পেয়েছে। আবির জেলের বাইরে কথাটা শুনেই মন শান্ত। কোথায় আছে এটা জানে না তবে বাইরে আছে মোটামুটি সুস্থ এর থেকে ভালো খবর ওর কাছে আপাতত নেই। লোকটাকে ঘিরে ওর সকল ভালোলাগা ভালোবাসা। অনুভূতিটা কাউকে বোঝাতে পারবে না। হৈমন্তীর ধ্যান ভাঙলো জুলির ডাক শুনে। হৈমন্তীর বিরক্ত লাগলো তবুও থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। চেয়েছিল একা নির্জনে একটু হাটতে। গতকাল সারাদিন জুলি আর নায়রার সঙ্গে শপিংমলে ঘুরতে হয়েছে। রাতে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে গেছে আবিরকে নিয়ে ভাবা হয়নি। লোকটাকে নিয়ে ভাবতে ওর ভালো লাগে। মনে হয় আশেপাশে আছে ওকে ছুয়ে দিচ্ছে। তাই ভোরবেলা কাউকে কিছু না বলে বের হয়েছে। ঢাকা শহরের মতো এই শহরের জনসংখ্যা ওরকম গিজগিজে নয়। এটাই হৈমন্তীর কাছে সবথেকে শান্তির। জুলি দৌড়ে এসে হৈমন্তীর সামনে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,
> পিচ্চি কোথায় যাচ্ছো? একা হারিয়ে যাবে।
হৈমন্তীর জোর করে হেসে বলল,
> কোথাও যাচ্ছি না আপু। হাটতে ইচ্ছা করছিল তাই এসেছি।
> একদম ঠিক করোনি। আমাদের ছোট একটা বাগান আছে তুমি যাবে সেখানে? আমি ফুল পছন্দ করি। টিউলিপ ফুলে বাগান ভর্তি।
হৈমন্তী আগ্রহ নিয়ে বলল,
> নিশ্চয়ই যাবো।
> তাহলে ফিরে এসো।
হৈমন্তী বাধ্য হয়ে ফিরে আসলো। জুলির সঙ্গে বাগানে এসে সত্যিই ওর মন আরও ভালো হয়ে গেলো। চারদিকে অসংখ্য ফুল ফুটে আছে। নানা রঙের ফুল। হৈমন্তী ঘুরে ঘুরে দেখলো। ফোনটা আনলে হয়তো দুটো ছবি নেওয়া যেতো। বাড়ির পেছনে এতো সুন্দর একটা বাগান হৈমন্তীর চোখে আগে কেনো পড়েনি বুঝতে পারলো না। ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখানে সকাল সন্ধ্যায় বসে থাকবে। গাছগুলো জুলি নিজেই যত্ন করে। আবেদা মির্জাও ওকে সাহায্য করে। নায়রা অলস প্রকৃতির মেয়ে। ওর ঘুম থেকে উঠে অনেক লেট হয়। আর রোহান বাড়িতে কখন আসে কখন যায় কেউ বলতে পারে না। হৈমন্তীর কাছে এটা ভালো খবর। ছেলেটা ওকে খোচা দিয়ে অপমান করার চেষ্টা করে। হৈমন্তী ওর চক্ষুশূল বলা যায়। জুলি ওকে ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে। হঠাৎ সেখানে রোহানের আগমন। ছেলেটা দৌড়ে এসে হুটকরে হৈমন্তীর নাক ধরে টেনে দিয়ে বলল,
> সব সময় ভ্রু কুচকে থাকো কেনো মেয়ে? পৃথিবীর সবাইকে বিরক্ত লাগে?
হৈমন্তীর নাক বেশ ব্যাথা করছে । লোকটার কোনো আক্কেল নেই। একটা মেয়ের অনুমতি ছাড়া তাকে স্পর্শ করে আবার দাঁত বের করে হাসছে। হৈমন্তীর সহ্য হলো না। বিরক্ত হয়ে উত্তর দিলো,
> আপনি কেনো আমাকে বিরক্ত করছেন?
হৈমন্তীর কঠিন করে রাখা মুখের দিকে তাঁকিয়ে ছেলেটা থতমত খেয়ে গেলো। ও যে রেগে গেছে বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
> বাহ পিচ্চি দেখি আবার রাগতেও পারে। পেত্নীর মতো ভয়ংকর লাগছে ।মাম্মাকে বলবো তোমাকে ঘরে আটকে রাখতে।
হৈমন্তীর বুঝতে পারলো না ওকে ঘরে আটকে রাখার মতো কি হয়েছে। তাই কৌতুহলবশত প্রশ্ন করল,
> আমি কি চিড়িয়াখানার জীবজন্তু যে ঘরে আটকে রাখবে? আপনাকে আটকানো ফরজ। আপনি প্রচণ্ড খারাপ মানুষ।
হৈমন্তী রাগ দেখিয়ে চলে আসলো। জুলি দৌড়ে ওর পিছু নিলো। রোহান সেদিকে তাঁকিয়ে মলিন হাসলো। মেয়েটাকে ওর মনে ধরেছে। আগে জানলে বাংলাদেশ সফর আগেই করে ফেলতো। কেনো যে বাবা মা কে বাংলাদেশে যাওয়া থেকে আটকে রেখেছিল এখন আফসোস হচ্ছে।
☆☆☆☆☆
পায়ের উপরে পা তুলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আরাফাত। অরিন ওর পায়ের কাছে বসে আছে । আরাফাত সত্যি সত্যিই ওকে দিয়ে পা টিপিয়ে নিয়েছে। দজ্জাল শাশুড়িদের থেকেও সাইকো বর বেশি বিপদ্দজনক। অরিন মুখ ভার করে চুপচাপ পা টিপে দিচ্ছে। এখন ঘুম পাচ্ছে। ঘুমে ঢুলে ঢুলে পড়ছে। আরাফাতের চোখে ঘুম নেই। ও ঘুমের ভান ধরে আছে। মাঝেমাঝে এক চোখ খুঁলে দেখছে। মেয়েটাকে বিরক্ত করতে ওর ভালো লাগে। ভয়ভয় মুখ নিয়ে যখন তাকিয়ে থাকে আরাফাত তখন মুগ্ধ হয়ে দেখে। এখানেও আলাদা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। ও শুধু অনুভব করে। আরাফাতের ধ্যান ভাঙলো অরিনের থেমে যাওয়া দেখে। মেয়েটা ঝিমিয়ে ওর পায়ের উপরে মাথা রেখেছে। আরাফাত দ্রুত উঠে বসে অরিনকে সোজা করে দিলো। মেয়েটা চমকে উঠে ডিড়ডিড় করে বলল,
> সরি প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে।
> শুয়ে পড়ো জেগে আছো কেনো?
অরিনের প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হলো কিন্তু কিছুই বলা হলো না। রুমে সিঙ্গেল সোফা আছে সেখানে ঘুমানো যাবে না। নিচে বিছানা করতে ওর ইচ্ছে করছে না। এতদিন দুজন এক রুমে থাকলেও আরাফাত ওকে নিজের সঙ্গে ঘুমাতে দেয়না। দুজন আলাদা বিছানাতে ঘুমাই। মির্জা বাড়িতে থাকলে আরাফাত সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে যায়। তাছাড়া ও প্রায় রাতে বাড়িতে থাকে না। অরিন এসব নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি। একটার পর একটা ঘটনা সবার উপরেই প্রভাব ফেলেছে। আরাফাত ওর বোনকে ভালোবাসে ওকে তো না। প্রথমে মন খারাপ হলেও এখন আর হয় না।কথাগুলো ভেবে ও বিছানা থেকে নামতে যেতেই আরাফাত ওর হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলল,
> কোথায় যাচ্ছো?
> বিছানা করতে। এখানে সোফা নেই।
আরাফাত বিরক্তি নিয়ে বলল,
> বিছানা করতে হবে না। এখানে অনেক জায়গা আছে। আমার পাশে ঘুমিয়ে যাও।
আরাফাত পাশে চেপে গিয়ে অরিনের জন্য জায়গা করে দিলো। মেয়েটা হতবাক হয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। এটা ভয় নাকি আনন্দ ওর জানা নেই। আজানা কারণে হাত পা মৃদু কাঁপছে। ওর এমন কাঁপাকাঁপি দেখে আরাফাত ঝটকরে ওকে নিজের পাশে টেকে নিয়ে বলল,
> অনেক কাঁপাকাঁপি হয়েছে। এখন ঘুমাও।
আরাফাত পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করলো। অরিনের ঘুম কেঁটে গেছে। লোকটার পাশে জায়গা পাবে কল্পণাও করেনি। আশা জাগ্রত হলো একদিন ঠিক মনে জায়গা করে নিবে। আরাফাত সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চাইছে। মেয়েটা ওকে ভালোবাসে কিন্তু ভয় পাচ্ছে। এভাবেই সারারাত পার হলো। ভোরবেলা ফোন পেয়ে আরাফাত হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো বাইরের দিকে। গাড়ি নিয়ে সোজা থানায় গিয়ে হাজির হলো। গতকাল রাতে আবিরের ফুপাতো বোন পিউলিকে উঠিয়ে আনা হয়েছে। মেয়েটার জিঞ্জাসাবাদ চলছে। আরাফাত এক্সট্রা টাকা দিয়েছে আবির অন্যায় না করেও যেমন ধোলাই খেয়েছে এটাকেও যেনো তেমনিভাবে ধোলাই করা হয়। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে মিডিয়ার লোকজনকে পিউলির বাবা জানিয়ে দিয়েছে। ওরা থানার বাইরে সকাল সকাল ভিড় করেছে। আরাফাত পিউকে থানায় রাখতে নিষেধ করেছে তাই ওকে বাইরে রাখা হয়েছে। আপাতত যতদিন না সত্যি বের হচ্ছে ততদিন ওকে সেখানেই রাখা হবে। মৃত্যু হলে তো সব শেষ হয়েই গেলো। যন্ত্রণা কাকে বলে মেয়েটা এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবে। কল রেকর্ড থেকে জানা গেছে ঘটনার দিন রাতে মেয়েটা ঘনঘন বাবার সঙ্গে কথা বলেছিল। দুজনে পরিকল্পনা করে একজন মানুষকে হত্যা করে ভালো মানুষের উপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করে পার পাবে না। সত্যি কখনও চাপা থাকে না।
___________________
বাড়িতে হৈমন্তী আর আবেদা মির্জা একা আছে। ভাইবোনেরা সব ইউনিভার্সিটিতে গেছে। প্রতিবেশির বাড়িতে অনুষ্ঠান হচ্ছে ওরাও বাঙ্গালী পরিবার।ওই বাড়ির বড় বউ অনুর বেবি হবে তাই ছোটখাট বাঙালি টাইপের আয়োজন করা হয়েছে। হৈমন্তীকে ফুপির সঙ্গে অনুষ্ঠানে যেতে হলো। অনুকে দেখে হৈমন্তীর খুব পছন্দ হলো। অল্প সময়ের মধ্যে দুজনের মধ্যে বেশ ভাব জমে গেলো। কিন্তু হঠাৎ ওর ফুপা ফোন দিয়ে দ্রুত ওর ফুপিকে বাড়িতে ফিরতে বললেন। হৈমন্তীকে অনু কিছুতেই ফিরতে দিলো না।। শেষমেশ আবেদা মির্জা ওকে রেখেই ফিরে আসলো। গান নাচ কবিতা আবৃত্তি অনেক অনেক আনন্দ হলো। হৈমন্তীর বেশ ভালো লাগলো এদের আয়োজন দেখে। নিজেদের মধ্যে এরকমটা ও আগে কখনও দেখেনি। পুত্রবধুর আনন্দের জন্য শশুর বাড়ির লোকদের কত উৎসাহ। ওর বারবার নিজের কথা মনে হলো। ওর যদি বেবি হয় তাহলে কাজীদের বাড়িতে এরকম একটা অনুষ্ঠান হবে। ভাবতেই ভালো লাগছে সেই সঙ্গে লজ্জা পাচ্ছে। এতো সুখ কি কপালে লেখা আছে? হৈমন্তী সিদ্ধান্ত নিলো এবার একটা বেবি নিবে। বাচ্চা কাচ্চা থাকলে আবির ওকে আর ঘনঘন অস্বীকার করতে পারবে না। লোকটাকে ও উচিত শিক্ষা দিবে। অনু হৈমন্তীকে ধরে সুন্দর একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরিয়ে দিলো। হৈমন্তীকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে অনু মিষ্টি হেসে বলল,
> হৈমী তোমাকে দারুণ লাগছে। আমার একটা ভাই থাকলে তোমার রক্ষা ছিল না। আমি আজকের মধ্যে তোমাকে ভাবি বানিয়ে নিতাম।
হৈমন্তী লজ্জা পেলো তবে প্রতিবাদ করলো না। সারাদিন বেশ আনন্দ করে পড়ন্ত বিকেলে ও বাসাই ফিরলো। অনু ওকে বাড়ির গেট পযর্ন্ত দিয়ে গেলো। শাড়ি পরে ছোটছোট পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। আবির ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছে। ছেলেটার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। ওকে ঘিরে বাড়ির বাকী সদস্যরা বসে আছে। হৈমন্তী কয়েকবার চোখ বন্ধ করলো মুছে নিলো কিন্তু দৃশ্য চেঞ্জ হলো না। হৈমন্তীকে দেখে আবেদা মির্জা বলে উঠলো,
> হৈমী বাংলাদেশ থেকে তোর ফুপার একটা ছাত্র এসেছে। কাজী আবির এহসান। এখানে তোর ফুপার মেডিক্যালে কয়েকবছর ছিল। এতদিন পরে ওকে দেখে তো আমি অবাক। যাইহোক ভালো হয়েছে।
হৈমন্তীর কিছু বলার আগেই ভদ্রমহিলা হড়বড় করে সবটা বলে দিলো। হৈমন্তী চোখ বড়বড় করে তাঁকিয়ে আছে। আবিরকে দেখছে। ছেলেটা মন দিয়ে খাচ্ছে। সামনে ওর ফুপা বসে আছে। এর জন্যই হয়তো তাড়াতাড়ি ফুপিকে ডেকেছে কিন্তু হৈমন্তী বুঝতে পারছে না আবির হৈমন্তীর কথা এখানে বলেনি কেনো। লোকটার মতিগতি ধরতে পারছে না। হৈমন্তীর এবার বিরক্ত লাগছে। জুলি আর নায়রা খুশী খুশী মনে ওকে আরও খাবার বেড়ে দিচ্ছে। আদর যত্নের বাহার দেখে হৈমন্তী চুপচাপ আবিরের সামনে গিয়ে বলল,
> ফুপি এই ভদ্রলোকের হয়তো বিশাল ক্ষুধা পেয়েছে। যেভাবে খাচ্ছে হয়তো থালাবাসন খেয়ে নিবে। তুমি বরং ওকে আরও কিছু খাবার দাও। আমি যাচ্ছি।
হৈমন্তীর কথা শুনে আবিরের গলাই খাবার আটকে গেলো। কেশে ফেলল। জুলি ওকে পানি এগিয়ে দিতেই ও ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। কি ফাঁসা ফেসেছে এটা শুধু ওই জানে। এখানে জামাই পরিচয় দেওয়ার আগেই স্যারকে দেখে সব গুলিয়ে গেছে। একের পর এক প্রশ্ন আর আবেদা মির্জার বকবক শুনে বাকীটা আর বলা হলো না। কি একটা বিপদ। হৈমন্তী আগেই রেগে ছিল এবার বম হয়ে গেলো। ক্ষমা টামার আশা ও ছেড়ে দিলো। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। খাওয়া শেষে আবেদা মির্জা ওকে একটা রুম দেখিয়ে দিলো। উনি হৈমন্তীর বরের ছবি দেখলে আর এই অবস্থা হতো না। আবির আগেও এই বাড়িতে এসেছে। আরাফাত হৈমন্তীর ঠিকানা দিলেই ও চুপচাপ চলে এসেছে। বলেছিল না বলতে যাতে হৈমন্তীকে চমকে দিতে পারে কিন্তু এখানে এসে যে কেস খেয়ে গেলো। আবির মন খারাপ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। কতদিন শান্তিতে ঘুমানো হয়নি। থানা থেকে বের হয়ে হোটেলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে কিছু না খেয়েই ফ্লাইট ধরেছে। ও এভাবে পালিয়ে আসতে চাইনি কিন্তু আরাফাতের জন্য বাধ্য হয়েছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। অন্যদিকে হৈমন্তী ভাইকে বলে দিলো ফুপিকে আবিরের পরিচয় না দিতে। লোকটাকে ও আচ্ছা করে টাইট দিবে। হৈমন্তী ফোন রেখে চেঞ্জ করবে ভাবল তার মধ্যেই জুলি এসে হাজির। ওকে টানতে টানতে গিয়ে গিয়ে কয়েকটা সেলফি নিয়ে বলল,
> তোকে দারুণ লাগছে। আমিও একদিকে শাড়ি পরবো কিন্তু পারি না। তুই সাহায্য করিস। চল ভাইয়াকে দেখাবি কেমন লাগছে। ও তো সেদিন খূব বলল তোকে খারাপ দেখতে লাগে। আজকে দেখবে কেমন লাগে।
জুলি একদমে কথাগুলো বলে ওকে টেনে নিয়ে গেলো। হৈমন্তীর ঢোক গিলে শাড়ির আচলটা মাথায় টেনে নিয়ে ভাবলো বাড়িতে বাঘের আনাগোনা। হরিণ শাবকের এভাবে সাহস নিয়ে ঘোরাঘুরি করা ঠিক হচ্ছে না। কখন সামনে চলে আসে বলা কঠিন। হৈমন্তী অস্বস্তি নিয়েও রোহানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হলো। ছেলেটা ওর দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> ওকে এভাবে পেত্নীর মতো কে সাজিয়েছে? কি জঘন্য লাগছে। এই মেয়ে তুমি সারাদিন কোথায় ছিলে?
হৈমন্তী মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> পাশের বাসাই অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানে।
হৈমন্তীর বলতে দেরী হলো কিন্তু রোহানের বেরিয়ে যেতে দেরী হলো না। মাকে আচ্ছা করে বাকাবকি করলো হৈমন্তীকে পাশের বাড়িতে পাঠানোর জন্য। আবেদা বেগম ছেলের উপরে বেশ বিরক্ত। হৈমন্তীকে উনি কোথায় নিয়ে যাবে সবটা কি এই ছেলে ঠিক করে দিবে। তাছাড়া ভদ্রলোকের বাড়িতে এভাবে চিৎকার চেচামেচি সাজে না। হৈমন্তী জুলিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।