দূর আলাপন,পর্ব:১৪+১৫

0
384

দূর আলাপন
পর্ব-১৪
______________
তিহা রুদ্ধ স্বরে জানতে চায়, ‘কি হয়েছে নিনাদের?’
ওপাশ থেকে উত্তর আসে, ‘কিছুদিন ধরেই একটু অদ্ভুত আচরন করছিল নিনাদ। দিন পাঁচেক আগে এক দুপুরে আমাদেরই এক রুমমেট তৌহিদ জানায় নিনাদের ঘরের দরজা নাকি আগেরদিন বিকেল থেকে বন্ধ। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। এখনো সে বের হয়নি একবারও। তাই আমরা ডাকি ওকে। ওর ঘরের চাবি তৌহিদের কাছেই ছিল। অনেক ডাকাডাকির পরও ওর সারা না পাওয়ায় তখন সেই চাবি দিয়ে নব খোলা হয়। ভেতরে গিয়ে দেখি নিনাদ উপুড় হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয় ওখানেই। তারপর বুঝতে পারি ও জ্ঞান হারিয়েছে। সেদিন থেকেই সমস্যাটার শুরু। দিনরাত দরজা বন্ধ করে বসে থাকত ও। খাওয়া দাওয়া একেবারেই করত না। দরজা খুললেও দেখা যেত জায়নামাজেই বসে রয়েছে সবসময়। আর ভীষণ অস্থির থাকত সারাক্ষণ। ফ্লাইটের তারিখ কিভাবে এগোনো যায় সেই নিয়েই সারাদিন ভাবত ভীষণ। আগের টিকিট ক্যান্সেল করে এই কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশে যাওয়া যায় কিনা সেই নিয়েও বিস্তর চেষ্টা করেছে ও। আমাদের ধারণা নিনাদের বাড়িতে হয়ত কিছু একটা ঝামেলা হয়ে থাকবে। আর বাড়ির মানুষ বলতে শুধু ওর ফুফুকেই চিনি আমরা। তাই সেখানে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিনাদ বাঁধা দিল। আর তারপর কাল ওর অবস্থাও ভীষণ খারাপের দিকে চলে যায়। প্রায় সপ্তাহ হতে চলল নিনাদ স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে চলছে। খাওয়া, ঘুম সব বেঠিক। তাই কাল ওকে হাসপাতালে ভর্তি করাটা জরুরি হয়ে পড়ে।’
তিহা স্তব্ধ হয়ে ফোন কানে নিয়ে বসে থাকে। নিনাদকে তিতিক্ষার পুরো ব্যাপারটা সে জানিয়েছিল দিন পাঁচেক আগেই। নিনাদের ঝালেমার শুরুও সেইসময় থেকে। অর্থাৎ তিতিক্ষার খবর শোনার পর থেকে। প্রতুত্তরে কিছু বলার কথা তিহার খেয়াল থাকে না। ওপাশ থেকে ছেলেটি তখন বলে,’কিছু মনে করবেন না। একটা কথা…এখন বোধহয় আমি বলতে পারি। নিনাদের কি হয়েছে আপনি কি জানেন? যদি জেনে থাকেন তাহলে ওর সাথে কথা বলে ওকে একটু বোঝাতে চেষ্টা করুন প্লিজ। এভাবে নিজেকে কষ্ট দেয়াটা আসলে কোন সমাধান নয়।’
তিহার সম্বিৎ ফিরে আসে,’ হ্যাঁ কথা বলব আমি ওর সাথে। কেমন আছে ও এখন?’
-‘ মারাত্মক কিছু এখনো হয়নি ওর। শুধু কেবল মানসিক ভাবে অসুস্থ আর শারিরীক ভাবেও খুব বেশি দূর্বল।’
তিহা নিচু স্বরে বলে, ‘ও’
আরও দু একটা কথার পর ছেলেটি ফোন ছেড়ে দেয়। তিহার মনে তখন নতুন চিন্তার উদ্রেক হয়। সেই শুরু থেকেই নিনাদ দূর্বল তিতিক্ষার প্রতি। একথা সে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ইঙ্গিতে জানিয়েছে। অথচ তিতিক্ষার মনে কি চলে তার কিছুরই খোঁজ সে পায় না। নিনাদের প্রতি তার সামান্যতম দূর্বলতাও কোনদিন নজরে পড়েনি তিহার। আর যদি থাকতই তবে কি রাজি হত সেবার বিয়েতে অত সহজে?

সকাল হয়ে আসে। তিহা স্যুপের বাটি নিয়ে বিছানার পাশে চেয়ারে রেখে, এসে বসে তিতিক্ষার মাথার কাছে। রাতের সেই অসহায়, ভীত ভাবটা আর তার হৃদয়ে থাকে না। নিজের জমাট অন্ধকারের সাথে সাথে রাত্রি যেন তার মনের ভীত অসহায় ভাবটাকেও সঙ্গে নিয়ে গায়েব হয়। তিহা একদৃষ্টে চেয়ে দেখতে থাকে বোনের মুখ। নিমীলিত চোখের সেই ভীষণ ফর্সা মুখ যেন শরতের সবুজ দীঘিতে ফোঁটা শ্বেতপদ্মের মতই সুন্দর দেখায়। তিহা সেখানে একটা কিছু খুঁজতে থাকে। একটু ভালোবাসার চিহ্ন! নিনাদের জন্য কোন অনুভূতিই কি নেই তিতিক্ষার? কই, আছে বলে তো এত বছরে একবারও মনে হয়নি তার। তিহা খুঁটিয়ে দেখে তিতিক্ষার মুখ, নিমীলিত আঁখি আর রাঙা ঠোঁট। সবটা জুড়ে কেবলই মায়া। এত মায়া। তবুও কি কোথাও স্থান নেই একটু ভালোবাসার, নিনাদের জন্য?

তারপরের কয়েকটা দিন তিহার কাটে একটু ভিন্নরকম ব্যাস্ততায়। সেই যে একরাতে কল করেছিল, সেই ছেলেটির নাম হাসনাত। তিহা তারপর হাসনাতকে কল করে কয়েকবার। উদ্দেশ্য নিনাদের সাথে একটু কথা বলা। নিনাদের নিজের ফোন তো বন্ধ সেই কবে থেকে। হাসনাত দুঃখিত হয়ে জানায় নিনাদ কথা বলতে চায় না তিহার সাথে। এর একটা কারণ তিহা নিজেই ভেবে বের করে তারপর। হয়ত তিতিক্ষার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য নিনাদ দায়ী করছে তাকে। তাই কথা বলতে চাইছে না তার সঙ্গে। তিহা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে। সত্যিই তাই! দায় সে এড়াতে পারে না। তিতিক্ষার জীবনের প্রতিটি ছোট থেকে বড়, সব সিদ্ধান্তই সে নিজে নিয়েছে চিরকাল। সেবার বিয়ের সমন্ধটাও মধ্যস্থতা করেছিল সে। অতঃপর তিতিক্ষা কেবল রাজি হয়েছিল বোনের কথায়। একটি মেয়ের দায়িত্ব, তাকে সকল বিপদ থেকে আগলে রাখার দায়িত্ব কম কথা নয়। তা সে পারে নি। নরখাদক শেয়াল কুকুর থেকে বাঁচাতে সে পারেনি তার বোনকে। দায় তার ওপরই পরে বটে।

যে ভিন্নরকম কাজে কাটে আজকাল তিহার সময়, কাজ হিশেবে তা পরম উপভোগ্য! রোজ সে খানিক পর পর যায় বোনের ঘরে। বোনের সাথে বন্ধু হতে চেষ্টা করে। নানান কথা বলে তাকে হাসায়। জানতে চেষ্টা করে তার মনের খবর আর তার মুখে, চোখের দৃষ্টিতে খুঁজে ফেরে অন্যরকম একটা কিছু। সেই ভালোবাসার চিহ্ন!
তিতিক্ষার সামনে নিনাদের নাম মুখে নিতেও কেন যেন তার বাঁধে। লজ্জা হয়। তিতিক্ষা যদি ভাবে তার বোঝা বইতে না পেরে এখন বোন তাকে গছাতে চাইছে নিনাদের ঘাড়ে!
আবার ভয়ও হয়। তিতিক্ষা অন্য সব মেয়েদের মত তো নয়। এত যে তার আত্মভাব। সে কি পারবে আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে, নতুন করে সবটা শুরু করতে?

দিনগুলো এভাবেই কেটে যাচ্ছিল। শিউলি বেগম আফরিনকে নিয়ে তোড়জোড় চালাচ্ছেন ভাতিজার বিয়ের। তিতিক্ষাদের বাড়ি অত ঘনঘন আসার সময় তার নেই।
তিহা আছে বোনকে নিয়ে। তিতিক্ষার একটু সুস্থতা এখন তার পরম কাম্য। সেই সাথে আছে তার নিজের মনের তীব্র অনুতাপ। এখানে তিতিক্ষা, ওখানে নিনাদ আর মাঝখানে তার বৃদ্ধ বাবা। সবাই কষ্ট পাচ্ছে। কষ্টের সে কি নিদারুণ প্রচ্ছন্নতা! কেউ কারোও সামনে কাঁদে না, আলাপ করে না কষ্ট নিয়ে। এই কষ্ট শুধু নিজে ভোগ করতে হয়। কারোরই ভাগিদার যে হওয়া যায় না এই কষ্টে। একজন বাবা কিভাবে তার নির্জিত মেয়েকে বলবেন, ‘তুমি কষ্ট পেয় না। এসো আমরা একসাথে একটু কাঁদি। দেখবে সব কষ্ট চলে যাবে।’
এভাবে কেউ পারে না বলতে। সেই কষ্টে একথা বলা যায় না। তিহা সঙ্গোপনে কত দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে। আর ওপরে দৃষ্টি মেলে দু’হাত তুলে বলে, ‘আল্লাহ, এমন দিন আর কোন মেয়ের জীবনে না আসুক। কোনদিন না আসুক।’
পনেরটা দিন এভাবে কেটে যাওয়ার পর একদিন একটি বিচিত্র ও অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে।

সেদিন সকাল থেকেই বড় বেশি পাগলামি করছিল তিতিক্ষা। বোনের বেপরোয়া আচরণ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তিহাকে। মারুফ সাহেব ছোটনকে স্কুলে দিতে গেছেন। এদিকে আকবরের মা ও আসে নি তখনো। তিতিক্ষা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে অনবরত কেঁদে চলেছে। দু’হাতের মুঠোয় খামছে ধরে রেখেছে নিজের খোলা চুল। গায়ে তার গোলাপি রঙের সুতির বড় গোল জামা। সেই রঙে মিলানো পাজামা। ওড়নাটা পড়ে আছে দূরে। ঘরের এক কোণে। মাঝে মাঝেই সে মাথা থেকে হাত নামিয়ে আঁচড় কাটছে নিজের মুখে। তারপর আবার খামছে ধরছে চুল। আর মুখে বলে চলেছে অজস্র এলোমেলো কথা।
তিহা অদূরে মেঝেতে বসে দেখছিল বোনের কীর্তকলাপ। এবার আর সইতে না পেরে সে কল করল রওশানকে। বলল,’ হ্যালো, রওশান। দয়া করে আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে। তুমি এসো। কিছু একটা করো। আমি আর পারছি না। এবার সত্যি মরে যাব আমি। ‘ বলে সেখানে বসেই চিৎকার করে কাঁদতে লাগল সে।
তিতিক্ষা নিজের কান্না ও ক্রিয়াকলাপ দুটোই বন্ধ অবাক চোখে চেয়ে রইল বোনের দিকে। তার মুখ জুড়ে সদ্য দেয়া আঁচড়ের লাল লাল দাগ। হঠাৎ তিহাকে কাঁদতে দেখে সে নিজেই কাঁদতে ভুলে গেছে। তখন কলিংবেল বেজে উঠল। তারপর বাজতে লাগল একনাগাড়ে। রওশান তিহাকে কিছু বোঝাচ্ছিল। বারবার বলছিল সে আসবে। আজই আসবে। তিহা যেন আর কান্নাকাটি না করে। তিহা তাকে কিছু না বলেই ফোন কেটে দিল। হঠাৎ কান্না থামিয়ে চোখ মুছে এগোল দরজার দিকে। নিশ্চয়ই আকবরের মা এসেছে। দরজায় তখন বেলের পাশাপাশি আঙুলের টোকাও পরতে শুরু করেছে। তিহা দ্রুত নব ঘোরাল। দরজা খুলে তার আর বিস্ময়ের সীমা রইল না। সে তাড়াতাড়ি মাথায় কাপড় তুলে দিল। অবাক চোখে চেয়ে রইল সামনে। পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়া লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। গলায় গামছা ঝোলান অপরিচিত এক লোক সাথে। আর তাদের পায়ের কাছে দেয়ালে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে নিনাদ বসে আছে। তার চোখ নিমীলিত। পাশেই রাখা তার সুটকেস। তিহা বিস্মিত স্বরে সেই ভাড়াটিয়া লোকটিকে বলল,’ একি আফসান ভাই। ওকে কোথায় পেলেন আপনি? কি হয়েছে ওর? ‘
আফসান নামের ভদ্রলোকটি কপালে ভাজ ফেলে চিন্তিত মুখে বললেন,’ আর বলো না। আমি বেরিয়েছি দোকানে যাব বলে। বেরিয়েই দেখি ইনি তোমাদের গেটের সামনে সিএনজির বাইরে দাঁড়িয়ে টলছেন। বোধহয় ভাড়া দিতে দাঁড়িয়েছিলেন। পড়ে যাবেন যেকোনো মুহুর্তে। গিয়ে ধরে জিগ্যেস করলাম কোথায় যাবেন? তোমার বাড়ি দেখিয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। ইনি কি হয় তোমার? আগে তো দেখতাম প্রায়ই আসত এখানে। ইদানীং দেখি না।’
তিহা একবার নিনাদের কাছে গিয়ে তার কপালে হাত রাখল। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে ওর। তারপর থমথমে স্বরে বলল,’ আমার ভাই হয়। দারান আসছি আমি।’বলে সে ত্বরিতে ঘর থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট এনে ধরিয়ে দিল সিএনজি ওয়ালার হাতে। ভাড়ার বেশি টাকা পেয়ে সিএনজি ওয়ালা তখন খুশি মনে ফিরে যাচ্ছিল। এর মাঝেই তিহা দ্রুত কিছু জিনিস ভেবে নিল। প্রথমত নিনাদকে এখানে রাখা একদমই উচিত হবে না এখন। তিতিক্ষা তাকে দেখলে আবার নতুন কি ঝামেলা করে তার ঠিক নেই। তাছাড়া নিনাদও সুস্থ নয়। তার সেবা শুশ্রূষার দরকার। এখন তাকে মোহাম্মদপুর পাঠিয়ে দেয়াই তাই সবচেয়ে মঙ্গল। ভেবে নিয়ে তিহা সাথে সাথে ডাকল সিএনজি ওয়ালাকে। তারপর ভাড়াটিয়া ভদ্রলোকটিকে বলল, ‘আফসান ভাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কষ্ট করে ওকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু এখন আরেকটু কষ্ট করতে হবে আপনাকে। দয়া করে আবার একটু সিএনজিতে তুলে দিতে হবে ওকে। ওকে মোহাম্মদপুরে ওর বাসায় রেখে আসব আমি। আপনি প্লিজ উনার সাহায্য নিয়ে ওকে একটু সিএনজিতে তুলে দিন। আমি এক্ষুনি আসছি।’
আফসান নামের লোকটি ও সিএনজি ওয়ালা মিলে নিনাদকে ফের নিয়ে গিয়ে তুলল গাড়িতে। বলা বাহুল্য। এতে তাদের অনেক কষ্ট পোহাতে হল। তিহা দৌড়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিল বোরকা আর ব্যাগ আনতে। মাঝরাস্তায় এসে সে থমকে দাঁড়াল। তিতিক্ষা দাঁড়িয়ে আছে তার ঘরের দরজা ধরে। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। তিহার উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে আঙুল নির্দেশ করে সে জিগ্যেস করল, ‘কে ও?’
তিহা টলমল চোখে তাকাল একবার বোনের মুখের দিকে। তারপর কাছে এসে তার কপালে চুমু খেয়ে বলল,’ কেউ না।’ বলে সে দ্রুত নিজের ঘরে গেল। বোরকা ও ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেল নিনাদের কাছে, নিজের আধপাগল বোনকে একা ফেলে।

নিনাদের বাড়ি পৌঁছাতেই শিউলি বেগম নিনাদকে দেখে কেঁদে, চিৎকার চেচাঁমেচি করে তৎক্ষনাৎ হুলুস্থুল বাধিয়ে দিলেন। বারবার বললে লাগলেন, ‘বাও লাগছে। আমি কইছিলাম বিদেশে না যাইতে। পোলার পড়বার শখ। শুনল না আমার কথা। ঠিকি গেল গা একলা একলা। এই বাও তো সোজা বাও না। নিশ্চয়ই বিদেশ বিভূঁইয়ে পরীর আছর পরছে। ও আল্লাহ গো। এহন কি হইব আমার নিনাইদ্দার। পোলার বিয়াডা মনেহয় আর দিতে পারমু না আমি।’ বলে তিনি কপাল চাপড়ে কাঁদতে লাগলেন। আফরিনও ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল নিনাদের অবস্থা দেখে। তিহা বুঝল এদের থেকে কোনরকম সাহায্য পাওয়ার আশা নেই। সিএনজি ওয়ালাকে সাথে নিয়ে সে বহুকষ্টে নিনাদকে ভেতরে এনে শোয়াল। ফোন করল মারুফ সাহেবকে। বলল ছোটনকে স্কুলে রেখে একটা ডাক্তার নিয়ে দ্রুত মোহাম্মদপুরে নিনাদের বাসায় চলে আসতে। ডাক্তার এলে নিনাদের মোটামুটি একটা ব্যাবস্থা হল। মারুফ সাহেবকে তিহা পাঠিয়ে দিল বাড়িতে তিতিক্ষার কাছে। নিজে সে রয়ে গেল এখানেই। রাতেই দেখা গেল রওশান এসে হাজির। তখন প্রায় মাঝরাত। তিহার কাছে সব শুনে রওশান সরাসরি চলে এসেছে নিনাদের ওখানে। তিহা অবাক হয়ে বলল, ‘তুমি এত রাতে? আজ রাতে কেন এলে? কাল এলেই তো পারতে।’
রওশান ক্লান্ত চোখে তাকাল। অসহায় মুখে বলল ,’ তুমি না বললে এখানে একা সবকিছু সামলাতে পারছ না। আর বলেই কান্নাকাটি জুড়ে দিলে। আমি ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই কাজ ফেলেই ছুটে এলাম।’
এত কষ্টের মাঝেও তিহা হাসল। বলল, ‘ভালো হয়েছে। তুমি এখানে থাকো নিনাদের কাছে। কাল সকালে আমি যাই ওখানে। তিতিক্ষা, ছোটন ওদের কি হাল কে জানে। দেখে আসি গিয়ে।’
চলবে….।

★অদ্রিজা আশয়ারী

দূর আলাপন
পর্ব-১৫
____________________
ভিড়ানো দরজার খানিকটা খুলে তিহা উঁকি দিল ভেতরে। এখান থেকে শুধু ওর পেছন টুকুই নজরে পড়ছে। মেঝেতে শুয়ে আছে মেয়েটা। জানালার গরাদ গলে সকালের নরম রোদ এসে পড়ছে তার গায়ে।
তিহা ধীর পায়ে এগোয় সেদিকে। রোদে নিজের হাত রেখে সে হাতটাকে নাড়াচাড়া করছে তিতিক্ষা। সৃষ্টি হচ্ছে অদ্ভুত সব আকৃতির ছায়া। সেসব চঞ্চল ছায়া এসে পড়ছে তার মুখে, চোখে। রোদে পড়ে জ্বলজ্বল করে ওঠা নিজের ফ্যাকাসে সাদা হাতের দিকে সে তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ চোখে।
তিহা গিয়ে তার পাশে বসে। হাসি হাসি মুখ করে বোনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কি করিস?’
বোনের উপস্থিতি টের পেয়েও তিতিক্ষা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। ওভাবেই রোদে হাত রেখে নাড়তে নাড়তে বলে, ‘রোদ দেখি।’
তিহা অস্ফুট হাসে,’ রোদ কি আবার দেখার জিনিস নাকি?’
-‘আমার দেখতে ভালো লাগে। রোদ থেকে আমি শক্তি নিই। গাছের মতো। ‘
তিহার দৃষ্টি গভীর হয়। ওভাবেই তাকিয়ে থেকে সে দেখতে থাকে নিজের কাছের মানুষের বদলে যাওয়া অন্য রূপটাকে। দিনের পর দিন এই বদ্ধ ঘরে থাকতে থাকতে মেয়েটার সাদা মুখ আরও ভয়ংকর সাদা হয়েছে উঠেছে। হঠাৎ দেখলে মনে হয় কোন বিদেশিনী। তখন তার কালো চুল দেখে সেই ভ্রম ভাঙ্গে। চোখের রঙও যেন বদলে গেছে অনেকটা। তার হালকা বাদামি চোখ এখন গাঢ় ধূসর রঙে পরিনত হয়েছে। আর চোখের ওপরের বাদামি রেখা যেন পূর্ণতা দান করেছে সেই চোখের সৌন্দর্যে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় নিখুঁত হাতে আঁকা গাঢ় অঞ্জন যেন।
তিহা সূর্যের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তাকানো মাত্র রোদের তেজে চোখ তার বুজে আসে। সে খুব দীর্ঘ একটা শ্বাস নেয় তখন। তারপর নিশ্বাস ছাড়ে ধীরে ধীরে। যেন কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করে সে সূর্যের থেকে।
-‘কতবার না বলেছি মেঝেতে না শুতে। তবুও? উঠে বোস এক্ষুনি!’ বলে সে টান দেয় তিতিক্ষার হাত ধরে। তিতিক্ষা ক্লান্ত ভঙ্গিতে উঠে বসে।
-‘আমি ফের একটু বাইরে যাব। ফিরতে খানিক দেরি হবে। এখন খাইয়ে দিয়ে যাই।’ বলে সে আকবরের মা কে ডাকে গলা উঁচিয়ে। আকবরের মা প্রায় সাথে সাথেই হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে হাজির হয়। নিনাদের ওখান থেকে ফিরে, নিজে ফ্রেশ হয়ে ছোটনকে খাইয়ে আকবরের মা কে সে বলেছিল তিতিক্ষারও খাবার দিতে। তাকে খাইয়ে তবেই আবার সে যাবে নিনাদের বাড়ি।

তিহা রুটি ছিড়তে ছিড়তে আড়চোখে তাকায় বোনের দিকে। তারপর সবজি নিয়ে তিতিক্ষার মুখে পুরে সতর্ক ভাবে বলে,’কাল যে এল আমাদের বাড়িতে একটা ছেলে। তাকে চিনতে পেরেছিলি তুই?’
বোনের দিকে তিতিক্ষার খেয়াল নেই তখন। জানালার বাইরে গাছের ডালে বসে থাকা কি একটা পাখির দিকে তার নজর। ওদিকে তাকিয়েই সে সরল গলায় বলে, ‘কিভাবে চিনব? তাছাড়া তুমি না বললে ও কেউ নয়?’
তিহা থতমত খেয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিতে কিছুটা সময় লাগে তার। এর মাঝে আর কোন কথা না বলে সে খাইয়ে যায় বোনকে। তারপর কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলে, ‘কাল তো এত ব্যাস্ত ছিলাম। অতকিছু ভেঙে বলার সময় কই! কিন্তু তাই বলে তুই চিনতে পারিস নি! কে ও?’
তিতিক্ষা বিরক্ত স্বরে বলে, ‘না।’
তিহা আবারও বেফাঁস কিছু বলবার আগে ধাতস্থ হয়। তারপর দায়সারা ভাবে বলে, ‘নিনাদকে চিনিস না তুই? আমার বন্ধু। দু’দিন পর পরই আসত এখানে। সেদিন না আমেরিকা গেল পড়তে। এর মাঝেই ভুলে গেলি! ও তো….’ তিহা থেমে যায়। সন্দিগ্ধ চোখে দেখতে থাকে বোনের মুখ। নিনাদের নাম শুনে তিতিক্ষা কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবে না তো আবার!
তিতিক্ষা কিন্তু স্বাভাবিকই থাকে। অনেকক্ষণ ধরে সে ভাবে কিছু একটা নিয়ে। তারপর হঠাৎই চোখে মুখে অস্বস্তি ফুটে ওঠে তার। সে অস্থির হয়ে বলে, ‘আর খাব না বুবু, তুমি এখন যাও এখান থেকে।’ বলে বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
তিহা একদৃষ্টে চেয়ে থাকে সেই গমন পথের দিকে। তারপর হতাশ মুখে উঠে পা বাড়ায় বাইরে।

_________________________
নিনাদের ঘুম ভাঙে প্রচন্ড গরমে। জ্বর গায়ে, ঘুমের রেশ লাগা বোজা বোজা চোখে প্রথমে সে কিছু বুঝতে পারে না। ভাবে আমেরিকাতেই আছে এখনো। তবে এত গরম কেন লাগছে? এমনিতে শীতের প্রকোপে তো টেকা দায়। রুম হিটার ছাড়া চলে না এক মুহুর্ত, তবে হঠাৎ এত গরম…। নিনাদ চোখ খুলে দেখে গায়ে তার কাঁথা জড়ানো। পড়নের টি-শার্ট টা ঘেমে ভিজে একাকার। কাঁথা সরাতে সরাতে ঘরের দিকে সহসা চোখ পড়তেই সে চমকে ওঠে। এটা তোর তার গুড স্ট্রিটের বাড়িটা নয়। তারপর অনেকটা সময় লাগে তার ধাতস্থ হতে। সে বুঝতে পারে এখন সে আছে বাংলাদেশে, তার নিজের ঘরে। আমেরিকা থেকে ফিরেছে সকালের ফ্লাইটে। সবকিছু বুঝতে পারা মাত্র মুহুর্তে নিনাদ অস্থির হয়ে ওঠে। যে কারণটা তাকে সময়ের আগে জোর করে টেনে নিয়ে এসেছে এখানে, সেটা মনে হতেই শুরু হয় এই অস্থিরতা। নিনাদ বিছানা ছেড়ে উঠতে চায়। কিন্তু শরীর বেঁকে বসে। তখন সে খেয়াল করে ঠিক মত উঠে বসবার শক্তিও তার নেই। মনের জোরের সাথে সাথে দেহের জোরও কোথায় হারিয়ে গেছে। আর কিছু ভাবার আগেই দরজার নব নড়েচড়ে ওঠে। যে এগিয়ে আসে তাকে দেখে নিনাদের বুক চিরে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বেড়োয় শুধু। সে গন্তব্যহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামনে। তিহা বিছানার পাশে রাখা চেয়ারে এসে বসে। তার মুখ দেখে মনে হয় এই পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী ও অপরাধী মানুষটা সে।

নিনাদ একটু উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে। তাকায় তিহার দিকে। তিহা চোখ তুলতেই সে হালকা হাসে। শান্ত স্বরে বলে,’কেমন আছিস?’
প্রতুত্তরে মলিন মুখে তিহা শুধু মুচকি হাসে। নিনাদও কিছু না বলে বালিশে হেলে পড়ে। তার দীর্ঘ নিশ্বাসের শব্দ তিহার কানেও পৌঁছায়। যা ভেঙে দেয় তিহার মনে বেঁচে থাকা বাকি জোর টুকু। দুজনে নিরব থাকে অনেকক্ষণ। তিহা অস্থির ভাবে নিজের হাত কচলাতে থাকে কেবল। তার বেপরোয়া মন আর বাঁধা মানতে চায় না। সহসা সে অস্ফুট স্বরে ডেকে ওঠে। ‘নিনাদ’
নিনাদ পাশ ফিরে তাকায়।
তিহা কিছুটা থেমে করুন স্বরে বলে, ‘মাফ করে দিস আমায় নিনাদ। আমার জন্যই সম্ভব হয়েছে সবটা। আমার লোভের জন্য, বেশি চাহিদার জন্য। ভালো ঘর পেয়ে, চেয়েছিলাম ওকে পার করে দিতে। কিন্তু….. ‘
মাঝপথে নিনাদ ওকে থামিয়ে দেয়। বলে, ‘থাক ওসব কথা। আমি অবুঝ নই। তোকে কখনোই দায়ী করতে পারি না এসবের জন্য। যা ঘটে গেছে, সেটা ঘটারই ছিল। আর, আমি কেই বা ওর! কেন কৈফিয়ত দিচ্ছিস আমার কাছে?’
তিহা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। যেন সে হারিয়ে ফেলেছে সব শব্দকে। কথা বলবে সে কি করে?
নিনাদ মাথা নুইয়ে কিছু ভাবে, গম্ভীর হয়। তারপর মেঘ স্বরে বলে, ‘আমাদের সম্পর্কের নীড় যেখানে, সেখানেই আমরা ফিরে যাই। আমরা দুজন ভালো বন্ধু সেই ছোটবেলা থেকে। বন্ধুত্বটা ভালো থাকুক। বন্ধুত্বে যেটুকু চলে, সেটুকুই চলুক। আর সব বাদ যাক। তোর পরিবার শুধু তোর, আর আমার পরিবার… ‘ নিনাদ থেমে যায় হঠাৎ। সত্যিই কি তার কিছু আছে পরিবার বলতে? খানিক থেমে সে বলে,’আমার ব্যাক্তিগত যা কিছু, সেসব শুধুই আমার। এখন থেকে আমরা দুজন শুধু ভালো বন্ধু। আর কিছু না।’ বলে সে মুচকি হাসে।
তিহা অবাক হয়ে চেয়ে থাকে নিজের বন্ধুর দিকে। আহত গলায় কেবল উচ্চারণ করে, ‘নিনাদ।’
নিনাদ তাকে থামিয়ে দিয়ে, কিছুই যেন হয়নি এমন ভঙ্গিতে অবাক হবার ভান করে বলে, ‘একি! আমি তো খেয়ালই করি নি এতক্ষণ। কি অবস্থা হয়েছে তোর! মুখ শুকিয়ে, চোখের নিচে কালি পরে গেছে। বরের হাতে মার খেলে মেয়েদের মুখ এমন হয়। রওশান ভাইকে কি আজকাল বউ পেটানোর রোগে ধরল নাকি?’
তিহা হাসে। এমন ভাবে তাকায়, যেন সে দেখছে কাছে বসে থাকা খুব দূরের কোন মানুষকে। এতটা দূরের, যে তার সাথে শুধু সুখের দিনে দু একটা খোশগল্পই বলা চলে। দুঃখের দিনের একফোঁটা অশ্রুর বিসর্জন সেখানে প্রহসনের মত শোনায়!

তবুও তিহা নিজের দায় এড়ায় না। শিউলি বেগম আর আফরিন দুজনেই অনুষ্ণ ধরনের মানুষ। তাদের কেবল মুখেই রা। কাজের বেলায় ততটা শক্ত নন। তাই তিহাকে তারা সেদিন অনেক বেলা পর্যন্ত আটকে রাখেন জোর করে।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে তিহার সন্ধ্যে পেড়োয়। গেট পেড়িয়ে উঠোনে পা রাখতেই দেখে মারুফ সাহেব ছোটনকে কোলে নিয়ে হাঁটছেন উঠোন জুড়ে। সে এগিয়ে যায়। কিছুটা রাগি স্বরেই বলে,’ বাবা, এই ভর সন্ধ্যে তে তুমি ওকে নিয়ে বাইরে কেন ঘুরছ? তাছাড়া তিতিও তো ঘরে একা রয়েছে।’
মারুফ সাহেব শান্ত গলায় বলেন,’তিতি মা’র আজ হঠাৎ যে আবার কি হল। তুমি যাওয়ার পর থেকেই খুব চিৎকার চেচাঁমেচি করছে। দরজাও বন্ধ করে রেখেছে, খেলও না কিছু সারাদিন। কেমন যেন হয়ে গেছে মেয়েটা। কথা শোনে না একদম। ছোটন ভয় পাচ্ছিল সেসব দেখে। তাই…’
তিহা চিন্তিত মুখে বলে, ‘ওহ, তাই নাকি? আচ্ছা চল ভেতরে। আমি দেখছি কি করা যায়। ‘

তিহার অনেক আর্জি-অনুরোধের পর দরজা খোলে তিতিক্ষা। তিহা ভেবেছিল নিশ্চয়ই ঘরে বসে কোন অনর্থ বাঁধিয়েছে মেয়েটা। হয়তো ভাংচুর করেছে আবারও। কিন্তু ঘরে ঢুকেই তার ধারনা পাল্টে যায়। সে ভেতরে পা বাড়াতেই তিতিক্ষা এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে তিহা একটু কেঁপে ওঠে। মুখের কাঁচা ক্ষত গুলোর ওপর খামচিয়ে সেগুলোর অবস্থা করুন করে ফেলেছে মেয়েটা। দু এক জায়গা থেকে রক্ত বেরিয়ে জমাট বেঁধে আছে ওখানেই। তিহা তাকিয়ে থাকে বোনের মুখের দিকে। তিতিক্ষা তাকে জড়িয়ে ধরে হিচকি তুলে কাঁদছে। সে হাত রাখে বোনের মাথায়। চাপা স্বরে বলে, ‘কি করেছিস!’
তিতিক্ষার খেয়াল নেই সেসবে। সে গুমরে কাঁদতে কাঁদতে অসহায় মুখে বলে,’ আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন বুবু? আমি শ্বাস নিতে পারছি না। শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরা জ্বলছে। নিজের গলা কেটে ফেললেও বোধহয় কারো এত যন্ত্রণা হয় না। আমি কি মারা যাব বুবু? আমি বোধহয় মারাই যাচ্ছি। এখানে আর কোন সুখ নেই। মরেই আমার শান্তি। আমাকে একটু শান্তি দাও।’
তিহা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তিতিক্ষার দিকে। তার ঠোঁট কাঁপতে থাকে অনবরত। সে হঠাৎ তিতিক্ষার হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে। আর যে নিতে পারছে না সে। কত আর সওয়া যায়?
ঘর থেকে বেড়িয়ে তিহা আবারও থমকে দাঁড়ায়। তার বাবার মারুফ সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন দরজার সামনে, পাথরের মূর্তির মত। কিন্তু মূর্তির চোখে কি কখনো জল ঝরে? মারুফ সাহেবের চোখ বেয়ে ঝরঝর করে গড়িয়ে পড়ছে পানি। তিহাকে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি এবার কথা বলেন। করুন স্বরে বলেন,’ তিহা, কারো কষ্ট যখন জীবনের সকল কিছুর থেকেও প্রবল হয়ে ওঠে তখন তার জন্য মৃত্যুই হয় শ্রেয়, মুক্তির একমাত্র উপায়। এসো, তিতিক্ষাকেও আমরা মুক্তি দিই।’
চলবে…….

★অদ্রিজা আশয়ারী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here