তোর নামের রোদ্দুর২ পর্ব 2

0
2350

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
পর্বঃ২
লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা

-এভাবে এক্সাক্টলি আর কতোক্ষন?

শুদ্ধ ভাইয়ার দাতে দাত চেপে বলা রাগী আওয়াজের কথাটা বারি খেলো কানে।চোখ স্বাভাবিকভাবে বন্ধ করে রুমের দরজা আটকানোর জন্য সর্বশক্তিতে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টায় ছিলাম।আর সে মানুষটা একহাতে দরজা বন্ধ হওয়া থেকে আটকে দিয়েছে।

-গায়ের জোরটা যে তোর খুব বেশি না প্রমান দেবো?সেটার কনসিকুয়েন্সটা ভালো হবে তো?

কি বললেন উনি?কনসিকুয়েন্স?আরো ভয় পেয়ে দরজা জোরে ঠেলতে লাগলাম।একহাতে কি করে আমার এতো ধাক্কাধাক্কি আটকে দিচ্ছেন উনি?লাগছে না কেনো দরজাটা?এরপর আমার কি হবে তাহলে?

.
বাসার সবাই তৈরী হয়ে যখন বরযাত্রী নিয়ে বেরোতে ব্যস্ত,চেন্জ করে রুমে বেডে চাদর গুটিয়ে শুয়ে ছিলাম।যীনাত আপু কানের দুল ঠিক করতে করতে রুমে ঢুকলো।কোনোদিক নাা তাকিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বললো,

-জানিস ইনসু?শুদ্ধটা আরো অনেক হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে দেখতে ইয়ার!আরো বেশি মজা করতে….

বলতে বলতে আয়নাতেই দেখলো আমাকে।এগিয়ে এসে সামনে বসে বললো,

-শাড়ি পাল্টে রেডি না হয়ে এই বেশে কেনো তুই?আর শুয়ে আছিস কেনো?যাবি না?

-আ্ আমার শরীর ভালো লাগছে না আপু।যাবো না আমি বাইরে।

-মানেহ্?

-শরীর দুর্বল লাগছে।কম খাটুনি যায়নি তো এ কয়দিন!

-খাটুনি?তোর?

-ওভাবে বলছো কেনো?মেশিন নই আমি।ক্লান্তি আমারো আছে।

-কাজটা কি করেছিস তুই?

চুপ রইলাম।জবাব দেওয়ার কিছু নেই।শপিং আর সবার কাজ বিগরানো ছাড়া কিছুই করি নি আমি।ওসব কথা তুললে আমারই অপমান।

-হুট করে কি হলোটা কি তোর?আর বাইরে না গেলে সিফাত ভাইয়ার বিয়েতে কি করে যাবি?

-যাবো না আপু।ত্ তোমরা যাও না!

-যাবি না মানে?সীমা ভাবি তো তোর সাথেই বাসায় ঢুকবে বলেছে।আর তুই এমন….

-বললাম তো শরীর ভালো লাগছে না আমার!জ্বর জ্বর লাগছে!

-ওর নাটকের শেষ আছে আপু?গায়ে হাত দিয়ে দেখোতো একফোটা জ্বর আছে কি না?

ইরামের কথামতো যীনাত আপু তাই করলো।কটমটে চোখে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।যীনাত আপু বিরক্তি নিয়ে বললো,

-যাবি না কেনো?

-এই ইরু?শুদ্ধকে দেখেছিস?

তাপসী আপুর মুখে রুমে ঢুকেই ওই নাম।চোখ বন্ধ করে দুটো জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলালাম।

-না।দীদুন তো বললো শুদ্ধ ভাইয়া নাকি ইমরোজ ভাইয়ার সাথে আগেই বেরিয়ে গেছে।

যাক!তারমানে উনি বরযাত্রীর সাথে গেছেন।এবার আরো যাবো না আমি।রুমেই থাকবো।

-কিরে ইনসু?তুই এভাবেই কেনো এখনো?

-আসলে তাপসী আপু,একটু শরীর খারাপ লাগছে।গা গুলাচ্ছে কেমন যেনো।

-তো তাই বলে কি….

-তোরা ওকে জোর করছিস কেনো?

দরজায় দীদুন দাড়িয়ে।মোটামুটি সোজা হয়েই হাটে সে,তবে সাপোর্ট হিসেবে লাঠিটা থাকে হাতে।হাসি ফুটলো আমার মুখে।দাদাভাইয়ের মতো দীদুনও আমার সব কথা রাখে।একে বোঝালাম,তো সবাইকে বোঝালাম।

-নানুমনি,ও বলছে ও নাকি যাবে না।

-কেনো?

-বলছে তো শরীর খারাপ।ব্যাঙের আবার সর্দি!

-তো কি যীনাত?নাই গেলো অসুস্থ্য শরীর নিয়ে।এমনিতেও বাসর ঘর সাজাতে কয়েকজন তো থাকছেই।ওউ না হয় থাকুক।

-কিন্তু দীদুন…

-থাক!তুমি চুপই থাকো।

তাপসী আপুকে থামিয়ে দিলো দীদুন।ওউ চুপ মেরে গেলো।শেহনাজ মন্জিলে এখনো তার কথাই চলে।দীদুন বাইরে থেকে যতোটা কড়া,ভেতরে ততটাই নরম।অবশ্য আমার কাছে তা নয়।যেমনটা দাদাভাই ছিলো।দীদুনের কড়া কথাও তাকে জরিয়ে ধরে নিজের করে নেই।

বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে গেলো ওরা সবাই।যীনাত আপু রাগই করেছে আমি জানি।অনেক প্লান ছিলো আমাদের।এমনটা ছাড়া উপায় নেই।যেভাবে যতোটুকো পারি,দুরে থাকবো তার।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।দীদুন এগিয়ে এসে বিছানায় বসলো।আমি সোজা হয়ে বসলাম।দীদুন বললো,

-গেলি না কেনো?

জরিয়ে ধরে বললাম,

-যেখানে দীদুন যাবে না,ওখানে আমি কেনো যাবো?

-তো তোর বাসরঘরেও দীদুনকে নিয়ে যাস কেমন?

হাত আলগা হয়ে আসছিলো।তবুও মুখে হাসি টেনে বললাম,

-হ্যাঁ হ্যাঁ।কেনো নয়?বিছানায় তোমাকে বসিয়ে আমি নিজে খাটের নিচে থাকবো।ডোন্ট ওয়ারি!

-আহা!বেশ তো!অল্পবয়স্ক নাতিজামাইয়ের সাথে বাসরটা আমিই সেরে ফেলবো।

ফিক করে হেসে দিলাম।দীদুন গাল ছুইয়ে বললো,

-আচ্ছা হয়েছে।এবার তুই আরাম কর।আমিও আসছি।কিছু লাগলে মলিকে ডেকে নিস কেমন?

হাত মুঠোতে নিয়ে চুমো দিলাম।দীদুন বেরিয়ে গেলে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম আমি।কিন্তু একটুপরেই রুমে দমবন্ধ লাগছিলো।যেনো অনেকক্ষন হলো বাইরে বেরোই নি।যেহেতু যমরাজ নেই,তাই সবেমাত্র দরজা খানিকটা খুলেছি,তখনি কেউ থাবা মারে দরজায়।লাফিয়ে উঠে লাগানোর চেষ্টায় লেগে যাই।শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি।

.
গায়ের জোরটা দুহাত,কাধ,পায়ের হাটু,সোজা দাড়িয়ে,বাকা দাড়িয়ে সবরকমভাবে খাটিয়ে যাচ্ছি,লাভ নেই।দরজা একচুলও নড়ছে না।আটকাবো কি?সরবেই বা কিভাবে?স্বয়ং শুদ্ধ আটকে আছেন যে সেটা।ঠোট কামড়ে ধরে নিজের মতো করে চেষ্টায় আছি ওটা লাগানোর।শুদ্ধ ভাইয়া এবার চেচিয়ে বলে উঠলেন,

-তোর সাথে হাইড এন্ড সিক খেলতে আসি নি ডাফার!

কথাটা বলেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে ঠাস করে ওটা লাগিয়ে দিলেন উনি।কাপতে কাপতে কয়েকপা পিছিয়ে গেলাম চোখ বন্ধ রেখেই।এবার আরো ভয় করছে।চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছি।চাইনা ওনার মুখোমুখি হতে।চাইনা দু বছর আগের ঘটনা মনে রাখতে।উনিও তো চান না,তাইতো এ বাসায় এরমধ্যে আসেননি কোনোদিন।আব্বুও তো বলেছিলেন,মাথা থেকে ওসব ঝেড়ে ফেলতে।তবে কেনো আজ এতোদিন পর নিজের মতো করে থাকতে গিয়ে ওনার মুখোমুখি হতে হলো আমাকে?আমি তো নিজেকে বুঝিয়ে নিয়েছি,উনি কেনো এমন করছেন তবে?

-দরজা লক করে রাখার কি দরকার?

……

-বেরোতে গিয়ে আবার আটকে দেওয়ার কি দরকার?

….

-আংটিটা খুলে রাখার কি দরকার ছিলো?আই ওয়ান্ট মাই আন্সার!

আবারও সেই আংটির কথা!চাইনা ওটা আমার।তাই খুলেছি।কিন্তু কি বললে উনি কি রিয়্যাক্ট করবেন বুঝে উঠলাম না।হাত কচলাতে কচলাতে বললাম,

-এ্ এম্ এমনি।

কিছুক্ষন নিরবতা রেখে উনি শান্তভাবে বললেন,

-তোর এই “এমনি” কথাটার জন্য আমি কেনো পুড়বো বলতে পারিস?আমি কেনো শাস্তি পাবো?আমার কি দোষ?

বিস্ময়ে চোখ মেললাম।কিন্তু তা যতোদুর সম্ভব নামিয়ে রাখা যায়।শাস্তি?পোড়ানো?কি বলছেন উনি এসব?সেজোকাকু কিছু বলেছেন ওনাকে নাকি?সামনে দাড়ানো মানুষটার ফর্সা পা।সাদা পায়জামা পরেছেন উনি।হাটু অবদি খয়েরী পান্জাবীটা উড়ছে ফ্যানের বাতাসে।সে পান্জাবির হাতা গুটানো শুভ্র হাতজোড়ার একটায় সাদা রংয়েরই ঘড়ি চিকচিক করে উঠেছে।মুঠো করে রাখা হাতটার কৃষ্ণ লোমগুলো পরে আছে নিমীলিতভাবে।আবারো দৃষ্টি এদিক ওদিক সরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।যা দেখা চোখ নিজেও সইতে পারে না।মন মস্তিষ্ক মানবে কি করে?

-দু বছর,একমাস,বারোদিন পর তোর সামনে এসেছি সিয়া।একটাবার তাকাবি না আমার দিকে?

ওড়না মুঠো করে ধরলাম।সিয়া!এই ডাক!কতোদিন পর আমার সামনে এসেছেন উনি?এটা মনে আছে ওনার?এভাবে?আর এই করুন চাওয়া?এটা কেমন আবেদন?এতো আকুল আওয়াজ?এইভাবে কথা বলেন না উনি আমার সাথে।আজ কেনো বলছেন তবে?কি হয়েছে ওনার?সেদিনের মতো আজও কি বাধ্যবাধকতায়,দায়িত্ববোধের ভার সামলাতে এভাবে বলছেন?সেটা যাই হোক,আমি কোনোভাবে নিজেকে দুর্বল করতে পারবো না।পারবো না আর কোনোভাবে নিজেকে গুড়িয়ে দিতে।তাকাবো না তারদিক।দেখবো না সেই দু চোখের গভীর চাওনি।পরবো না তার ঠোটের ওই বাকা হাসির মোহমায়ায়।ইনসু!ইউ আর স্ট্রং!মানা করে দে ওনাকে।মানা করে দে!

-আ্ আপনি চ্ চলে যান এ্ এই রুম থেকে।

-কেনো?

-আ্ আমি চাইনা আপনি এখানে থাকুন।

-এভাবেই পুড়িয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চাস তারমানে?

কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো আমার।সবটা ভুলে চোখজোড়ায় শতশত অভিযোগ নিয়ে মাথা তুলে তাকালাম তার দিকে।ফর্সা চেহারায় মানানসই কুচকুচে কালো ভ্রুযুগল,কপালে কিঞ্চিত ভাজ,গালে চাপ দাড়ি,ঈষৎ লালাভ কিংবা বাদামীরঙা ঠোটজোড়ায় সেই বাকা হাসি।আর ওই গভীর চোখেদ্বয়ের চাওনি,যার অতলে ডুব দেওয়ার জন্য আকাশসম সাহস দরকার।সে সাহস দেখিয়েছি আজ আমি।উনি নিজের হাতদুটো পিছনে ধরে আমার দিকে ঝুকে বললেন,

-এইতো তাকিয়েছিস!

কথাটা প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মতো স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতে নাড়া দিতেই সাথেসাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।নুইয়ে গেলাম আমি।

-ঘাড় তুলে দেখাটা বেশ মানায় তোকে।লিলিপুট কোথাকার!

মজা নাকি অপমান করছেন বোঝার উপায় নেই আমার।তাই চুপই রইলাম।

-মরার কথা সহ্য হলো না বুঝি?

….

-হুউউউম!মৌনতাই সম্মতির লক্ষন।এনিওয়ে,নাও কাম টু দ্যা পয়েন্ট।দু বছরে আমি দেখতে হ্যান্ডসাম হয়েছি নাকি আরো হ্যান্ডসাম হয়েছি?

কপাল কুচকে এলো আমার।ওনার ব্যবহারের আগামাথা বুঝে আসছে না।পাঁচবছর আগে এ বাসায় আসলে সবার সাথে হাসিঠাট্টা করতেন।আমি আগে থেকেই কথা কম বলতাম ওনার সাথে।উনিও কোনো আলাদা আগ্রহ দেখান নি।রাগ ছিলো।জেলাসি ছিলো।সে নাকি আমাদের পরিবারের সবচেয়ে ভালো রেজাল্টধারী।আব্বু সবসময় ওনার উদাহরন দিতেন।হুট করে ওনার ব্যবহারের ধরন বদলে গেলো একসময়।ধমকে ধমকে কথা বলতেন,আমাকে সামনে যেতে দেখলেই উঠে চলে যেতেন,যেনো আমি মানুষটা কোনো ঘৃনার জিনিস তার কাছে।দেখতে নাই পারুক আমাকে,কথায় কথায় ধমক কেনো?স্টুডেন্ট ভালো বলে এটিচিউড দেখাক,আমাকে ধমকাবে কেনো?একপ্রকার অসহ্য লাগতো তার ব্যবহার।এতোদিন গায়েব থেকে আজ আবার এই ব্যবহার কেনো?দু বছর আগের ঘটনার জন্য?তবে এই দু বছর কি ছিলো?

-বললি না?বাইরে তোর প্রতিবেশী কাজিন তাহমিনাকে জিজ্ঞাসা করে আসি বরং।ড্রয়িংরুম থেকে দেখলাম মেয়েটা অনেকক্ষন হলো জানালার ধার দিয়ে উকিঝুকি দিচ্ছে।

উনি পা বাড়াতেই অজান্তেই বলে ফেললাম,

-আপনি বরযাত্রীর সাথে যান নি?

শুদ্ধ ভাইয়া থেমে গেলেন।আমিও অস্বস্তিতে পরে গেলাম।খুব দরকার ছিলো আটকানোর?যাক না!উনি আবারো আমার দিক ঘুরে বুকে হাত গুজে বললেন,

-আসলে কি বলতো?বর হওয়া ছাড়া ওইসব বরযাত্রী টরযাত্রী পোষাবে না শুদ্ধর।একেবারে বর বেশে বরযাত্রীতে জয়েন করবো।

তাহমিনা,বরবেশ অনেকদুর এগিয়েছেন উনি।আমিই শুধু হাতের এই আংটি দেখে থেমে গিয়েছিলাম।কেনো গিয়েছিলাম?এটার মুল্য তো কেউই দেয়নি।আ‌মি কেনো দ্বিতীয়বার ভাববো?

-বলছিলাম যে,এভাবে জোর করে ঘরে ঢুকতে চাইনি।

…..

-তখন শাড়িটাও নষ্ট করতে চাই নি।

….

-ওভাবে অন্ধকারে,ভয় দেখিয়ে হলুদ লাগাতে চাইনি আমি।

আমিও তো আপনার এইসব কারন,চাওয়া,না চাওয়া জানতে চাইনি।তবে কেনো এমন করছেন?

-আংটি কোথায় তোর?

কেপে উঠে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।আবারো ধমক দিয়েছেন উনি।কিন্তু আংটি তো খুলি নি আমি।ওটা তো হাতেই।এসব চিন্তা,ভয়ে খোলা হয়ে ওঠে নি।তবে ধমকাচ্ছেন কেনো এভাবে আমাকে?টের পেলাম দ্বিতীয়বারের মতো উনি আমার দিকে ঝুকলেন।পিছিয়ে যেতেই এক আঙুলে পেচিয়ে টেনে ধরলেন সামনের কয়েকটা চুল।কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,

-রাগ দেখালে শ্যামাপাখি বড্ড ভয় পেয়ে যায়।চোখমুখ খিচে বন্ধ হয়ে থাকা,কুচকানো কপাল।জাস্ট টেকস্ মি আউট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড!

দরজায় নক পরলো হঠাৎই।চমকে উঠলাম আমি।কে হতে পারে?সে কিভাবে নেবে আমাদের দুজনকে একঘরে দেখলে?এটা তো হওয়ার কথা নয়।উচিতও নয়।

-আসছি দীদুন।অকাজের তিনপায়া কোথাকার!এখন বুঝছি।তোমার থেকে ইরামকে ম্যানেজ করতে পারলে বেশি সুবিধা হতো।যীনাত আপু হলে তো আরো ভালো হতো।কপাল খারাপ হলে যা হয়।ধ্যাৎ!

তীব্র বিরক্তি নিয়ে গলা উচিয়ে কথাটা বললেন উনি।চুল ছাড়া পেয়েছে আমার।আবারো বিস্ময়ে তাকালাম তারদিক।সে একগাল হেসে আমার দিক তাকিয়ে থেকেই হেলতে দুলতে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।বাইরে দাড়ানো দীদুন লাঠি ভর করে ভেতরে ঢুকেই বললো,

-চিটার কোথাকার!তোর জন্য শাড়ি পরালাম,তোর জন্য ওর বরযাত্রীর সাথে যাওয়া আটকালাম,তোর জন্য ইরামকে তোর যাওয়ার সংবাদ দিলাম,তোর জন্য বাসায় থেকে যাওয়া বৌগুলোকে রান্নাঘরে,ছোকড়াগুলোকে বাসর সাজানোর কাজে ঢুকিয়ে,বাচ্চাগুলোকে ড্রয়িংরুমে পাহাড়া দিচ্ছি।আর তুইই বলছিস আমি অকাজের তিনপায়া?দেখবো,এই বুড়িকে ছাড়া কতোদুর এগোস তুই!

ভ্রুকুচকে তাকিয়ে থেকে শুধু সবটা শুনলাম।শুদ্ধ ভাইয়া দীদুনকে জরিয়ে ধরে বললো,

-ওরে আমার ইয়াংবার্ড!তুমি এংরিবার্ড হয়ে গেলে বয়সটা একদম ফুটে ওঠে মাই লেডি!সো রাগিও না!

-হয়েছে হয়েছে।আর মনোজয়ের কালজয়ী ভাষন ছাড়তে হবে না তোকে।এবার গিয়ে বাসরঘরটায় হাত লাগা যা!খুজছে তোকে সবাই।

-ধুউউউর!পারবো না!

-কেনো?তোর বেলায়ও সবাই এ কথাই বলবে দেখে নিস।পারবো না!

-নিজের বিয়ে ঠিক হওয়া সত্ত্বেও তার আগে অন্যের বাসরঘর সাজানোর কষ্ট!তুম কেয়া জানো দীদুন!যাই‌হোক!তবুও যাচ্ছি।বিয়েবাড়ির ভোজ দিয়ে পেটপূর্তি তো আর হলো না!কিছুতে তো পার্টিসিপেট করি!নইলে আমার আসাটাকে তোমার লেটেস্ট ভার্সন কি চোখে দেখবে কে জানে?

কথাগুলো একশ্বাসে বলে আড়চোখে তাকালেন উনি আমার দিকে।চোখ সরিয়ে অন্যদিক তাকালাম।নিজের বিয়ে?ওনার বিয়ে ঠিক?কই সেজোকাকু তো কিছু বলেন নি।সেজোমাও তো কিছু বললো না।শেহনাজ মন্জিলে এ নিয়ে কথাও হয় নি।আব্বু জানেন?সেজোকাকু অবশ্যই বলবেন ওনার আদরের ছোটভাইকে।এমনটা হতে পারে আমার রিয়্যাক্ট করার কথা ভেবে জানতে দেননি আব্বু আমাকে।কিন্তু আমিই বা কেনো রিয়্যাক্ট করবো?আমিও তো চাই সেদিনটা সবাই ভুলে যাক।আমিও ভুলে যাই।তবে আবার নতুন করে এসব কেনো সামনে আসছে আমার?হাতের আংটিটার দিকে তাকাতেই তীব্র রাগে মনটা কেমন যেনো বিষিয়ে উঠলো।

#চলবে….

[এন্ডিং নিয়ে ভয়ের কিছুই নেই।আপনাদের ধমকি কাজে দিয়েছে?
হ্যাপি রিডিং?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here