তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ১৬

0
898

#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৬

নিজের কেবিনে বসে টেবিলে পড়ে থাকা ফাইল গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আর একটার পর একটা সাইন করছে ইভান। দরজায় শব্দ হতেই সেদিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়েই গম্ভীর গলায় বলল
–কাম ইন!

দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল মেঘলা। ইভান কে দেখে হালকা হাসল। ধির পায়ে সামনে দাড়িয়ে গলা নামিয়ে ডাকল
–ইভান?

ইভান চোখ তুলে তাকাল। তার দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে সে এতক্ষন জগতের বাইরে ছিল। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–ওহ! মেঘলা? আসো।

মেঘলা সামনের চেয়ারে বসে টেবিলে পড়ে থাকা ফাইল গুলো দেখে বলল
–খুব বিজি?

ফাইলের দিকে তাকিয়েই ইভান বলল
–কিছু বলবে?

–তেমন কিছু না। এমনিতেই। বিজি থাকলে পরে আসবো?

ইভান ফাইলটা বন্ধ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলল
–আসলে বিজি না ফ্রি ছিলাম। তাই ভাবছিলাম আজ সব ফাইল গুলো সাইন করে শেষ করে ফেলি।

মেঘলা হাসল। টেবিলে থাকা ইভানের হাতের উপরে হাত রেখে খুব শান্ত ভাবে বলল
–হ্যাপি বার্থ ডে ইভান।

ইভান কিছুক্ষন চুপ থেকে ঠোট এলিয়ে হাসল। স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–থ্যাঙ্ক ইউ!

–লাঞ্চ করবে না?

ইভান ঘড়ি দেখে বলল
–এখনি?

মেঘলা হেসে বলল
–সময় হলে তবেই।

ইভান হাসল। মেঘলা আবার বলল
–তাহলে কি আমরা একসাথে লাঞ্চ করতে পারি? যদি তোমার প্রবলেম না থাকে?

ইভান কি বলবে বুঝতে পারলো না। মেঘলার সাথে লাঞ্চ করতে জাওয়াটা কতোটুকু যুক্তি সঙ্গত হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না। মেঘলা উত্তরের অপেক্ষা করছে। বেশ কিছুক্ষন পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার ইভানের হাত ধরল। খুব শান্ত সরে বলল
–আমি বুঝতে পারছি ইভান তোমার প্রবলেম আছে। বাদ দাও। টেক ইট ইজি! আমি কিছু মনে করিনি।

মেঘলার কথা শেষ হতেই ঈশা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। মেঘলাকে ইভানের হাত ধরে থাকতে দেখে দাড়িয়ে গেলো। মেঘলা ঈশাকে দেখে হাত সরিয়ে ফেলল। ঈশা সেদিকে তাকিয়ে আছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে ঈশা কি ভাবছে ইভান সেটা নিয়েই চিন্তিত। ঈশাকে দেখে বুঝতে চেষ্টা করছে সে। ঈশার দিকে তাকিয়ে মেঘলা বলল
–আরে ঈশা আসো। দাড়িয়ে গেলে যে?

ঈশা কোন কথা বলল না। মেঘলা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ইভান খুব বিজি। দেখছ না কতো ফাইল নিয়ে বসেছে।

এবার ঈশা মুখ খুলল। স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–দেখতে পাচ্ছি কতটা বিজি।

মেঘলা দাড়িয়ে গেলো। ইভানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেতে যেতে বলল
–আমার মনে হয় তোমার নক করে আসা উচিৎ। কেবিনে তো আর সব সময় ইভান একা থাকেনা। অনেক অফিসিয়াল লোকজন আসে। এই অবস্থায় তুমি এভাবে হুট করে ঢুকে গেলে বিষয়টা ভালো দেখায় না ঈশা।

বলেই পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ঈশা সামনের টেবিলে ফাইল গুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে বলল
–এতো দিন কোন অবস্থাতেই আমি নক করে এই রুমে আসিনি। রুমটাও আগের মতই আছে। আর রুমের মানুষটাও। কোন কিছুই যখন পরিবর্তন হয়নি তাহলে এই নতুন নিয়ম কেন?

মেঘলা দাড়িয়ে গেলো। ঈশার দিকে ঘুরে ঘাড়ে হাত রেখে বলল
–তুমি কি কোনভাবে আমার কথায় হার্ট হয়েছ ঈশা? আই এম সো সরি। আমি তোমাকে হার্ট করতে কথাটা বলিনি। আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম যে আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে বিষয়টা অন্য ভাবে নিত। এখনো তো তোমাদের মধ্যে সেরকম কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি তাই আর কি। তাই বলছিলাম। প্লিজ অন্যভাবে নিবে না।

ঈশা সামনে তাকিয়েই ঝাঝাল গলায় বলল
–আমি কিছু মনে করিনি মেঘলা আপু। বরং তোমার কথা শুনে মুগ্ধ হয়েছি। তুমি আমাদেরকে নিয়ে সত্যিই অনেক ভাবো। তবে আমি সরি তোমার কোয়ালিটি টাইমটা নষ্ট করে দেয়ার জন্য।

ইভান ঈশার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকাল। মেঘলাও কিছুটা অবাক হল। ঈশা মেঘলার দিকে ঘুরে হাসি মুখে বলল
–আসলে কি বলতো তুমি খুব কম সময়ে এরকম সুযোগ পাও। আর আমার কারনে মাঝে মাঝেই সেটা ভেস্তে যায়। এই জন্য আমার খুব খারাপ লাগে। তুমি যদি আসার আগে একবার আমাকে বলে আসতে তাহলে আমি আর একটু দেরিতে আসতাম। আর একটু সময়টা কাটাতে তোমার বন্ধুর সাথে।

ঈশার কথাটা যে মেঘলার জন্য চরম অপমান জনক সেটা সে বুঝতে পেরেই প্রচণ্ড রেগে গেলো। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলাটা বোকামি তাই একটু হাসল। খুব শান্ত ভাবে বলল
–বন্ধুর সাথে সময় কাটানোটা খারাপ না ঈশা। এটা একটা অন্য রকম সম্পর্ক। এটার একটা নাম আছে। এমন কোন বেনামি সম্পর্ক না যেটা নিয়ে আমি অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করি।

কথা শেষ করেই চলে গেলো সে। মেঘলার কথাটা ঈশার গায়ে আগুন জালিয়ে দিলো। তার সম্পর্ক নিয়ে তাকে যে খোটা দিয়ে গেলো সেটা ভেবেই তার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। ঈশার অবস্থা দেখে ইভান চুপ চাপ চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে। এরকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সে সেটা ভাবেনি। সে জন্য কোন কথাও বলেনি। কারন এখানে কথা বলাই বোকামি। বিষয়টা কোন ভাবেই ভালো দেখায় না। এখন ঈশা কি করে সেটাই দেখার পালা। ঈশা ইভানের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। ইভান চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে আছে। এগিয়ে এসে একটা ফাইল টেবিলে ছুড়ে দিয়ে বলল
–এটাতে সাইন লাগবে তোমার।

ইভান ভ্রু কুচকাল। সে কোনভাবেই ঈশার কাছ থেকে এরকম কথা আসা করেনি। এই মুহূর্তে নিজে থেকে কিছু বলতে চাওয়াটাও অন্য রকম হবে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো
–কিসের ফাইল এটা?

ঈশা কঠিন ভাবে তাকাল। বলল
–এটা বন্ড! সাইন করে বিষয়টাকে সহজ করে দাও। পার্মানেন্ট ভাবে তোমার জীবনের হিসাবটা নিজের জীবনের খাতায় টুকে নিতে চাই। যাতে তোমার লাভ ক্ষতির জন্য অন্তত আমাকে কারও কাছে জবাব দিহি করতে না হয়। শুনলেই তো একটা বেনামি সম্পর্কে জড়িয়ে অধিকার দেখানোটা আমার ঠিক সাজে না।

ইভানের এই মুহূর্তে নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় প্রানি মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে তার সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক একদম শুন্য। অসহায় চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে সে। ঈশা একটা শ্বাস ছেড়ে চেয়ারে বসে পড়লো। ইভানের দিকে না তাকিয়েই বলল
–ইফতি দিলো। আমি আসছিলাম বলল তোমার কাছ থেকে সাইন করে আনতে।

ইভান গ্লাসে পানি ঢেলে ঈশার সামনে এগিয়ে দিলো। ঈশা প্রথমে গ্লাসের দিকে তাকাল। তারপর ইভানের দিকে। ইভানের দিকে তাকাতেই ইভান তার পাশের চেয়ারটাকে একটু কাছে টেনে ঈশাকে চোখের ইশারায় সেখানে বসতে বলল। ঈশা সেদিকে তাকিয়েও চোখ ফিরিয়ে নিলো। ইভান এবার হাত ধরে তাকে টেনে সেই চেয়ারে বসে দিলো। সেটা টেনে কাছে এনে পানির গ্লাসটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে খুব শান্ত কণ্ঠে বলল
–খাও।

ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। ইভান দুই আঙ্গুলে ঈশার গালে হালকা স্পর্শ করে বলল
–তোমার প্রতি এতো দুর্বল হয়েও আমি তোমাকে কখনও সেভাবে স্পর্শ করিনি। আর অন্য কাউকে করবো? বিশ্বাস নেই আমার উপরে?

ঈশা পানি খেয়ে গ্লাসটা রেখে বলল
–তোমার উপরে বিশ্বাস না থাকলে এতক্ষন তোমার ওই সো কল্ড বান্ধবির কথার তেজ সহ্য করতাম না। তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই আমি কোন সিন ক্রিয়েট করিনি। আমি জানি তার গায়ে পড়া স্বভাবটা একটু বাড়াবাড়ি রকমের।

ইভান হাসল। ঈশা একটু রাগ করেই বলল
–তাড়াতাড়ি সাইন করে ফাইলটা আমাকে দাও। আমার ক্লাস আছে। ইফতিকে দিতে হবে।

ইভান ঈশার হাত ধরে বলল
–না খেয়ে শুধু ক্লাস করলে হবে? শরীর খারাপ করবে।

ঈশা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে অভিমানি কণ্ঠে বলল
–করুক।

ইভান একটু হেসে ঈশাকে নিজের দিকে টেনে আনল। এক আঙ্গুলে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল
–এখন প্রায় ১২ টা বাজে। ক্লাস কখন শেষ হবে?

–১.৩০ এ।

গলা নামিয়ে উত্তর দিলো ঈশা। ইভান কোমল কণ্ঠে বলল
–ক্লাস শেষে ম্যাডামের কি সময় হবে আমার জন্য?

ঈশা তাকাল। হালকা হেসে বলল
–নাহলে কি করবে?

–অপেক্ষা।

ঈশা হেসে ফেলল। মাথা নাড়িয়ে বলল
–হবে। কেন?

ইভান মুচকি হেসে বলল
–ডেটে যাবো তাই।

ঈশা ফাইলটা সামনে ধরে বলল
–সাইনটা করে দাও।

ইভান ফাইলটা খুলতেই ঈশা বলল
–কোথায় যাবে?

ইভান হেসে ঈশার দিকে তাকাল। শান্ত কণ্ঠে বলল
–কেন? ভয় পাও?

–কিসের ভয়?

–যদি তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাই।

ঈশা শব্দ করে হাসল। ইভান অবাক হয়ে দেখছে তার দিকে। ঈশা হেসে বলল
–নিয়ে গেলে তো ভালই হয়।

ইভান একটু এগিয়ে এসে ঈশার মুখে পড়ে থকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। বলল
–আচ্ছা এটা কিভাবে সম্ভব? একটা মানুষকে সব ভাবেই এতো ভালো লাগে কি করে? মনে হয় পুরোটাই একটা নেশা আর এই নেশায় আমি কঠিন ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ি বারবার।

ঈশা শব্দ করে হাসল। ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–এরকম সব সময় নেশায় আসক্ত হয়ে থাকলে বাকি কিছু কি মাথায় ঢুকবে।

–চাইনা আর কিছু। আমার এটাই চাই।

ঈশা হাসল। ইভান হেসে ঈশার দিকে তাকিয়েই সাইন করে ফাইলটা তার হাতে দিলো। ঈশা হেসে ফাইলটা নিয়ে বাইরে যাচ্ছিলো তখনই ইভান আবার বলল
–আমি রুমেই থাকবো। ক্লাস শেষ করে চলে আসবি। দেরি করবি না।

ঈশা মাথা নাড়ল। বের হয়ে চলে গেলো। বাইরে বের হয়ে দেখে ইফতি দাড়িয়ে আছে। চোখ মুখ অন্ধকার তার। ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
–কি হয়েছে? তোর এই অবস্থা কেন?

ইফতি কোন কথা বলল না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এখনি কেদে দিবে। চোখ মুখের বেহাল দশা। কঠিন কিছু হয়েছে বুঝতে পেরে ঈশা ইফতিকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর ফাইলটা হাত দিয়ে বলল
–সাইন করে দিয়েছে।

ইফতি একবার সেটার দিকে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে নিলো। ঈশা বিরক্ত হল। একটু রাগ করেই বলল
–কি হয়েছে বলবি তো? কথা না বললে আমি বুঝবো কিভাবে?

ইফতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আমার সাথে এক জায়গায় যাবি ঈশা?

ঈশা বুঝতে পারলো ইফতির কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কোথায় যেতে বলছে? স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো
–কোথায় যেতে বলছিস?

ইফতি উঠে দাঁড়ালো। চিন্তিত হয়ে বলল
–গেলেই বুঝতে পারবি সবটা। তখনি নাহয় শুনিস।

–কিন্তু ক্লাস……।

কথাটা বলেও থেমে গেলো ঈশা। ইফতির বিষয়টা মনে হচ্ছে খুব জটিল। এখন ক্লাসের থেকে সেটাই বেশী জরুরি। তাই কিছু না ভেবেই বলল
–চল।

ইফতি ঈশার হাত ধরে অনুরধের সুরে বলল
–কাউকে এখনি কিছু বলিস না প্লিজ!

ঈশা অবাক হল। কিন্তু ইফতির কথা মেনে নেয়া ছাড়া এখন উপায় নেই। তাই মাথা নাড়ল। ইফতি ঈশাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।

ঈশা বের হয়ে যাওয়ার পর ইভান নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। ফোন বাজতেই বিরক্তি নিয়ে সেদিকে তাকাল। ঈশার নাম্বার দেখে বেশ অবাক হল। এখন তো তার ক্লাসে থাকার কথা। তাহলে ফোন কেন করছে? ফোনটা ধরে বলল
–কি হয়েছে?

ঈশা খুব শান্ত সরে বলল
–কলেজের পাশে যে রুফ টপ রেস্টুরেন্ট টা আছে ওখানে একবার আসবে?

ইভান চিন্তিত হয়ে গেলো। বলল
–তুই ক্লাসে নেই?

–নাহ! তুমি আসো। বলছি।

ইভানের মাথায় সব কেমন এলোমেলো ভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু তো একটা হয়েছে। কিছুই বুঝতে পারছে না সে কি করবে। কিন্তু এখন ঈশার কাছে যাওয়াটাই সব থেকে দরকার।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here