তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ১৪

0
1113

#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৪

মায়ের চেচামেচিতে ঈশা পড়া ছেড়ে উঠে গেলো খেতে। রাগি চেহারা নিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। বেশ রাগি গলায় বলল
–আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম আর তুমি বিরক্ত করছিলে আম্মু।

ঈশার মা বিরক্ত হয়ে বললেন
–খেয়ে তারপর সারারাত পড়বে। তোমার জন্য তোমার আব্বু অপেক্ষা করছে।

ঈশা কোন কথা না বলে সামনে গ্লাস নেয়ার জন্য হাত বাড়াল। হাত বাড়াতেই ঈশার মায়ের তার হাতের দিকে চোখ পড়লো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা পানি খেয়ে গ্লাসটা রাখতেই তিনি তার হাত টেনে নিজের দিকে নিয়ে ভালো করে দেখে নিলেন। মায়ের আচরনে ঈশা অবাক চোখে প্রশ্ন করলো
–কি হয়েছে?

ঈশার মা এবার তার দিকে তাকাল। প্রশ্ন বিধ্য চোখে তাকিয়ে বলল
–তোমার আংটি কোথায় ঈশা?

ঈশা এবার চমকে উঠলো। মায়ের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা রুমার দিকে তাকাল। রুমা চোখ দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলো সব সত্যিটা বলে দিতে। ঈশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঈশার বাবা গম্ভীর গলায় বললেন
–আংটিটা ইভানের কাছে আছে।

ঈশা তার বাবার দিকে তাকাল। তার মানে তার বাবা সব জানেন। কিন্তু ঈশার মা কথাটা হজম করতে পারলেন না। তিনি তার সামির দিকে তাকিয়ে বললেন
–ইভানের কাছে কেন থাকবে? কি এমন হয়েছে যে ইভান আংটি নিজের কাছে রেখেছে?

আশারাফ সাহেব নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
–তোমার আম্মু প্রশ্ন করছে ঈশা। উত্তর দাও।

ঈশা কোন কথা বলল না। ঈশার মাও নাছোড়বান্দা। তিনি শুনেই ছাড়বেন। ঈশাকে বারবার একি কথা জিজ্ঞেস করছে। সে কোন কথা বলছে না। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে রুমা বলল
–আমি বলছি কি হয়েছে।

রুমা সবটা সবাইকে সব খুলে বলল। ঈশার মা সব কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলেন। এতো বড় ঘটনা ঘটে গেলো অথচ কেউ কিছুই জানল না।

——————–
থমথমে পরিবেশ চারিদিকে। ফ্যানের আওয়াজ ছাড়া কিছুই কানে আসছেনা। সোফায় বসে মাথা নিচু করে ঈশা এক হাতে আরেক হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। তার ঠিক সামনেই বসে আছে আশরাফ সাহেব আর ঈশান। ঈশার থেকে একটু দূরে বসে আছে তার মা। তার সাথে একদম লেগে বসে আছে রুমা। পাশের সোফায় ইভান আর ইমতিয়াজ রহমান বসে আছে। ঈশার বাবা ফোন করে তাদের আসতে বলেছেন বাসায়। যাতে এই বিষয়টা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারে সবাই। এভাবে তো আর সব কিছু চলতে পারেনা। ভরা সমাজে সবার সামনে ইভান কে ভালবাসার কথা বলে তার সাথে এঙ্গেজমেন্ট করার পর আবার সেই আংটি খুলে ফেলেছে। এখন আদৌ এই সম্পর্ক তারা মানতে চায় কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন। মানতে না চাইলে সেটা এখান থেকেই শেষ করে দিবে। ঈশার বাবা ঈশার অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক করবে। এতো কিছুর পর তিনি আর মেয়েকে বাড়িতে রাখতে পারেন না। আর ইভানের আশে পাশে রাখা তো মোটেই ঠিক হবে না।

–এতো কিছু হয়ে গেছে আমাদেরকে কিছুই জানাওনি। আবার নিজেরাই এই সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ। আমরা তোমাদের সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করেছি তাই বলে কি তোমরা নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত বদলাতেই থাকবে? আমাদের যে সমাজে চলফেরা করতে হয় সেটা কি একবারও ভাববে না? সবার সামনে একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হবে আবার মুহূর্তেই সেটা ভেঙ্গে ফেলবে এটা কোন ছেলে খেলা নয়। আমরা মানুষের কাছে কি জবাব দিবো কোন উত্তর আছে তোমাদের কাছে?

বাবার গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে ঈশা একটু চমকে উঠলো। ঈশান এবার বলে উঠলো
–নিরবের সাথে বিয়ে যে তোর জন্য ভুল সিদ্ধান্ত ছিল সেটা আমরা মানি। কিন্তু এরকম করার আগে সবাইকে জানানো উচিৎ ছিল বিষয়টা। ইভানের নিজে নিজে এতো বড় সিদ্ধান্ত নেয়াটা ঠিক হয়নি। আমি অন্তত এটাকে সাপোর্ট করিনা।

ঈশা তার ভাবির হাত চেপে ধরল। রুমা ঈশার অবস্থা বুঝতে পেরে আমতা আমতা করে বলল
–যা হবার হয়ে গেছে। এসব নিয়ে আর কথা বলে কি লাভ। এখন ওরা ভালো থাকে তাহলেই ভালো।

–আমি সে কথা বলছি না রুমা। নিঃসন্দেহে ওদের ভালো থাকাই বড় কথা। কিন্তু এভাবে একটা সম্পর্কে জড়ানোর কোন মানে হয় না। হ্যা যদি ঈশাও ইভান কে ভালবাসত তাহলে সেটা আলাদা কথা ছিল।কিন্তু ঈশা তো বিষয়টা মেনে নিতেই পারেনি। আর আংটিটাও খুলে ফেলেছে। একটা সম্পর্ক মানে সারাজীবনের বিষয়। এখনি ওরা ঠিক মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বাকি জীবনটা তো পড়েই আছে। কোন ক্ষেত্রেই তাদের মতের কোন মিল নেই। আমি সব কিছু ভেবেই বলছি। সে ক্ষেত্রে তুমি ওদেরকে সাপোর্ট করতে পারনা রুমা।

ঈশান গম্ভীর ভাবে কথা গুলো বলতেই ঈশা চোখ তুলে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে চুপচাপ। সম্পূর্ণ ভাব্লেশ হীন ভাবে। তার চেহারা দেখে আন্দাজ করা সম্ভব যে শেষটা কি হবে সেটা তার জানা।

কথার পৃষ্টে কথা চলছে। এক রাশ যুক্তি তর্ক। কথার তিক্ততা অত্যধিক বেড়ে গেছে। ঈশা এখন বুঝতে পারছে আংটি খুলে নেয়া নিয়ে ততটাও সমস্যা নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে ইভান ঈশাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। এই বিষয়টাই ঘুরে ফিরে আসছে। এবার আর চুপ করে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এখনো চুপ করে থাকলে সেটা ইভানের সাথে চরম অবিচার করা হবে। এই অন্যায়ের দায় ভার ঈশা আর নিতে পারবে না। বেশ কিছুক্ষন নিরব থাকার পর ঈশা মুখ খুলল। মাথা নামিয়ে বলল
–আমাকে সবটা বলেছিল। আমি বিশ্বাস করিনি। তাই বাধ্য হয়ে এরকম কিছু করেছে।

আশারাফ সাহেব মাথা তুলে মেয়ের দিকে তাকালেন। তিনি খুব গম্ভীর গলায় বললেন
–কোন কারনে কি তুমি ইভান কে সাপোর্ট করছ?

ঈশা কোন কথা বলল না। চুপ করে থাকল। আশরাফ সাহেব মেয়ের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ঈশা কোন উত্তরই দিচ্ছে না। তিনি অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন
–ছেলে মেয়েদের আবদার মেনে নেয়া যায়। কিন্তু ভুল কোন বাবা মাই মেনে নিতে পারেনা। কোন ভাবে যদি এটা বাইরে কেউ জানতে পারে তাহলে কি হবে সেটা ভেবেছ। তোমার দিকে যখন কেউ আঙ্গুল তুলে কথা বলবে তখনও কি এভাবে যুক্তি তর্ক করতে পারবে ঈশা?

ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেলল। আসলেই বিষয়টা যত সহজ ভাবে দেখছে ততটাও নয়। তার বাবা ভুল কিছু বলেন নি। ইভান তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো সেটা বাইরের লোকজন জানলে এটাকে অনেক কিছু বানাতে পারে। আর তাদের চোখে ইভানের ভুলটা হচ্ছে ইভান কেন তাদের জানায় নি। সেটাও যুক্তি সঙ্গত। ঈশাকে জানিয়ে যখন কোন কাজ হয়নি তখন বড়দের জানাতে পারত। অবশ্যই কোন না কোন একটা ব্যবস্থা করতো সবাই মিলে। সবাই সবার দিক থেকে ঠিক। কিন্তু ইভানেরও কাজে কোন ভুল ছিলোনা সেটা কেউ বুঝতে পারছে না। আশরাফ সাহেব বেশ হতাশ হয়েই বললেন
–আজ এখানে তোমার কথা শোনার জন্যই আমরা সবাই বসে আছি। আমরা ইভানের কথা শুনেছি। সে আজ কোন কথা বলবে না। আজ তোমার কথা সবাই শুনবে।

ঈশা মাথা তুলে বাবার দিকে তাকাল। মাথা নামিয়েই বলে
–আমি মানছি আব্বু ইভান ভুল করেছে। কিন্তু কোন খারাপ কিছু তো করেনি। তোমার কথা একদম ঠিক কিন্তু ইভান যা কিছু করেছে আসলে ওই মুহুরতে এটা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। এঙ্গেজমেন্টের আগের দিন যদি তোমাকে এসে ইভান এসব কথা বলতো তাহলে কি তুমি মানতে? মানতে না। কারন ইভানের কাছে কোন প্রমান ছিলোনা। সে শুধু বিষয়টা জানতে পেরেছে। কিন্তু তখনও কোন প্রমান জোগাড় করতে পারেনি। মেয়েটা নিজের পরিচয় লুকিয়ে ছিল যাতে কেউ তাকে খুজে না পায়। আর ইভান তাকে খুজে পায়নি। আমি কোন ভাবে মেয়েটার খোজ পেয়ে যাই তাই আজ সবাই সত্যিটা জানে। যদি না পেতাম তাহলে আমার জীবন নষ্ট না হতে দেয়ার দায়ে সারাজীবন ইভান কে আমার কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হতো। অথচ সেটা ওর প্রাপ্য ছিলোনা আব্বু।

কথা শেষ করে অসহায়ের মতো মাথা নিচু করে বলল
–এরকম কিছু যদি ইভান না করতো তাহলে আজ তোমার মেয়ের জীবনটা এরকম সাজানো গোছানো থাকতো না আব্বু। আমি যে ভুলটা করেছি তোমরাও আজ একি ভুল করছ। আমি ইভান কে এতদিন এমন ভুলের শাস্তি দিয়েছি যেটা সে করেইনি। তোমরাও সেটাই করতে চাইছ। ওর এই শাস্তিটা প্রাপ্য না আব্বু। ইভান যে কিছু করেছে আমার জন্য করেছে। আমাকে ভালবেসে করেছে।

–আর তুমি?

আশরাফ সাহেবের কথা শুনে ঈশা থমকে গেলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। মেয়ের উত্তর না পেয়ে তিনি আবার বললেন
–আমি মানলাম ইভান যে করেছে সে তোমাকে ভালবেসে করেছে। কিন্তু তোমার মনে যদি তার জন্য কোন ভালবাসা না থাকে তাহলে এই এক তরফা ভালবাসা দিয়ে সারাজীবন চলতে পারেনা। এই সম্পর্কটা যদি মেনেই নিতে না পার তাহলে কেন সাপোর্ট করছ ইভান কে?

ঈশা এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না। শ্বাস ছেড়ে জোর গলায় বলল
–আমি সেদিনও যা বলেছিলাম আজও তাই বলবো। এটা ঠিক সেদিন ইভান আমাকে বাধ্য করেছিলো আর আজ আমি নিজের ইচ্ছাতেই ইভান কে বিয়ে করতে চাই আব্বু। আমার সিদ্ধান্ত আমি জানিয়ে দিয়েছি। সেটা আর পরিবর্তন হবে না।

ঈশার কথা শুনে ইভান তার দিকে তাকাল। ঈশা মাথা নিচু করেই বসে আছে এখনো। ঈশান মুচকি হেসে ইভানের দিকে তাকাল। ইভানও তার দিকে তাকিয়ে হাসল। ঈশান সবটা শুনে আগে ইভানের সাথে কথা বলেছে। ইভানের কাছে ভালো করে শুনেই সে বুঝতে পারে ঈশা ইভান কে ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু নিজের মনের কথা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। ঈশাকে সময় দিলেও পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছিল। তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে বাইরে অনেক রকম কথা হচ্ছিল। যত কিছুই হয়ে যাক ঈশা তো একটা মেয়ে। অন্তত আবার অনুষ্ঠান করে আংটিটা পরিয়ে রাখলেও কেউ তেমন বিষয়টা নিয়ে কথা বলবে না। তাই তো ঈশান নিজেই বলেছিল সবার সামনে এরকম একটা পরিস্থিতিতে ঈশা নিজের মনের কথা না বলে কিছুতেই চুপ করে থাকতে পারবে না। সেটা যদিও বা ইভান আর ঈশান ছাড়া কেউ জানেনা। তাই আংটি নিয়ে কথা উঠার পরেই সেই সুযোগটাকে আর হাতছাড়া করতে চায়নি ঈশান। সময় নষ্ট না করেই সে তার বাবাকে বলে ইভান আর তার বাবাকে ডেকে বিষয়টা এখানেই ক্লিয়ার করে নিতে। আর আশরাফ সাহেবও বন্ধুর কাছে সবটা শুনে এই রকম একটা সময়ের অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ভেবে নেন যে মেয়ের মুখেই তার কথা শুনবে তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসবে । তাই তো তিনিও ইশানের কথা মেনে নিলেন। সব শুনে ইমতিয়াজ রহমান শান্ত গলায় বললেন
–মামনি আমরা চাই একটা প্রোগ্রাম করে আবার তোমাদের এঙ্গেজমেন্ট টা করে রাখতে। আর তোমার ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই বিয়েটা হবে। তোমার কোন আপত্তি আছে?

ঈশা মাথা নিচু করেই না বলল। ইভান তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা নত দৃষ্টিতে হাসল। ভালবাসা বড়ই অদ্ভুত! এক অসীম সুখের অনুভুতি। ইভান বলেছিল তার ভালবাসার গভীরতায় হারিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরা আর সম্ভব নয়। সত্যিই তাই। ইভানের ভালবাসার এই গভীরতা থেকে বের হওয়া যে ঈশার জন্য অসস্মভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তো সে সারাজীবনের জন্য এই ভালবাসার গভীরতায় ডুবে যেতে চায়।

চলবে………
(যারা আমার ইনবক্সে খোজ খবর নিয়েছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর একটা কথা বিশেষ ভাবে বলতে চাই। ঈশা ইভানের স্বাভাবিক প্রেম কাহিনী চেয়ে যারা ইনবক্স ভরিয়ে ফেলছেন তাদের জন্য আমি কিছু ভাবছি। কিন্তু একটা গল্প রানিং চলছে। এটা শেষ হোক। তারপর বিষয়টা ভাববো। আপাতত আপনারা শান্ত থাকুন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here