তোমার আমার প্রণয় পর্ব-৫

0
4667

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_5

বিকেলের দিকে মাহাদ এসেছে তার ফ্যাশন হাউজে। ড্রিম ফ্যাশন হাউস। সিংগিং ক্যারিয়ারের বাইরে সে এই ফ্যাশন হাউস টা ওপেন করেছে। এই অনুপ্রেরণাটা সে তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে। মাহাদের বাবা আমজাদ রহমান ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। পূর্বপুরুষ থেকেই তারা বহু সম্পদের মালিক। বংশপরম্পরায় তাদের এই কাপড়ের ব্যবসা চলে আসছে বহুদিন ধরে। তাদের এই কাপড়ের ব্যবসা এর গোড়াপত্তন রাজশাহীতে হলেও আমজাদ রহমান এটি ঢাকায় শিফট করে নিয়েছেন। তাই ব্যবসায়ের কাজে তাকে ঢাকা টু রাজশাহী ভালোই দৌড়াদৌড়ি করতে হতো। কারণ তার মা। শামসুন্নাহার বেগম কিছুতেই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় আসতে রাজি ছিলেন না। তাইতো তিনি তার পরিবারকে রাজশাহী রেখে বারবার ঢাকায় আসতে হতো। ঢাকায় ব্যবসা শুরু করার কয়েক বছর পর তিনি এখানে বিশাল বড়ো ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছেন। সেখানেই তিনি থাকতেন। মাঝে মাঝে বউ বাচ্চা নিয়ে ও সময় কাটাতেন।

লেখাপড়া শেষ করে মাহাদ সিনগিং ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তাই ফ্যাশন হাউসটি ওপেন করেছে।তার এই ফ্যাশন হাউসে বেশ নামিদামি ফ্যাশন ডিজাইনাররা নিয়োজিত আছে। তবে তাদের মধ্যে ‘মিস লুবনা আফরোজ’ এই হাউজের হেড। লুবনা সাথে তোর সর্ম্পক টাও বেশ ভালো। মূলত তার সকল ড্রেস লাবনাই ডিজাইন করে থাকে। গত তিন মাস সে দেশে ছিল না। তাই সকল দায়িত্ব মিস লুবনার উপরে ছিল। খুব সততা ও নিষ্ঠার সাথে তিনি তার দায়িত্ব পালন করে থাকে।
মাহাদের নেক্সট মিউজিক ভিডিওর শুট এর জন্য লুবনা ড্রেস ডিজাইন করেছেন। তাই সে ট্রায়াল রুমে এখন সেগুলোই ট্রাই করবে বলে ওয়েট করছে। লুবনার অ্যাসিস্ট্যান্ট গেছে ড্রেসগুলো আনতে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে হাত দিয়েই নিজের চুল ব্রাশ করছে।আসলে মিডিয়া জগতে নিজেকে অলওয়েজ ঘুছিয়ে রাখতে হয়। তবে মিডিয়া জগতে তার ইমেজ খুব একটা ভালো সেটা বলা যায় না। প্রায়শই অতিমাত্রায় ড্রিংক করে সাংবাদিকদের সাথে বাজে ব্যাবহারের রেকর্ড রয়েছে তার। ভিশন অ্যারোগান্ট নামেও পরিচিত সে। তবে এসবে তার কিছুই আসে যায়না। কারণ তার হিউজ ফ্যান ফলোইং রয়েছে।তার গাওয়া প্রতিটা গান সুপারহিট হয়।
হটাৎ লুবনা বলে উঠলো

-“মাহাদ একটু ওয়েট করো আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট কে পাঠিয়েছি, তোমার ড্রেসগুলো এখুনি চলে আসবে।”

-“আরে ব্যাপার না আমি আছি।”

-“তোমার শুট শুরু হবে কবে থেকে?”

-“কাল থেকে।”

-“বাসার সবাই কেমন আছে?”

-“ভালো, একদিন বাসায় আসো।দাদী তোমার কথা বলছিলো।”

-“আরে তুমি তো জানোই কাজে কত প্রেসার। একদমই সময় করে উঠতে পারি না। তবে একদিন অবশ্যই আমি যাব ম্যাডামের সাথে দেখা করতে।”

হঠাৎ শব্দ পেয়ে সে পেছনে ঘুরে তাকালো। একটা মেয়ে টেবিলে কিছু বক্স রাখছে। মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হতেই মাহাদ স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে কি ঠিক দেখছে? সত্যি কি দৃশ্য তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে? মাহাদ যেন চোখের পলক ফেলতে ও ভুলে গেছে।আজ ঠিক চার বছর পর এই মুখটা দেখতে পেল ।মেয়েটার চুল গুলো অনেক বড় হয়ে গেছে।আগে ছিলো পিঠ অব্দি।আর এখন কোমর অব্দি পৌঁছেছে।সেই পিচ্চিটা আর পিচ্চি নেই। কিশোরী বয়সে ছেড়ে যৌবনে পা দিয়েছে। তার চেহারায় অন্যরকম গ্লেজ। নিশ্চয়ই এটা সব যুবতী মেয়েদের মধ্যেই দেখা যায়। পিচ্চিকালে তো শুধু কিউট ছিল ভীষণ কিউট। সময় কি মানুষকে আসলেই এতটা বদলে দেয়?

মাহাদ কে এখানে দেখে দৃশ্যও ভীষণ অবাক হলো। মাহাদ এখানে কি করছে? তার মানে কি মাহাদ এই ফ্যাশন হাউজের মালিক? দৃশ্য যেন আর কিছুই ভাবতে পারল না। মাহাদ কে এভাবেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লুবনা বললো
-“মাহাদ ও আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট নুরপা জাহান দৃশ্য। গত মাসে জয়েন করেছে ও।”

কথাটা বলেই তিনি দৃশ্যের দিকে চোখ গরম করে তাকালেন। দৃশ্য প্রথমে এর কারণ বুঝতেই না পারলেও
পরে ব্যাপারটা ধরতে পেরে বললো
-“আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

মাহাদ এখনো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দৃশ্যের দিকে।লুবনার ডাকে সে বাস্তবে ফিরলো। তবে সালামের জবাব দিলো কি না সেটা বোঝা গেল না।

গাড়ি ড্রাইভ করছে মাহাদ। সামনের রাস্তাটা বারবার ঝাপসা হয়ে আসছে। ভীশন অস্থিরতা কাজ করছে তারা মাঝে।সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে।

প্রথম দিন ওই বাচ্চা মেয়েটার কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখেই মাহাদ তার মায়ায় পড়ে গেছিলো। যদিও সে পরে বুঝতে পেরেছিল সেটা ছিল নেকা কান্না। কারো নেকা কান্না এতোটা মায়াবী হতে পারে সেটা মাহাদ সেদিন প্রথম জেনেছিলো।
তারপর থেকেই সে দৃশ্যকে চোখে চোখে রেখেছে।মেয়েটাকে দেখে কেমন যেনো আলাদা অনুভূতি হয়। সেদিন দৃশ্যের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছিল মেয়েটা ভীষণ দুষ্ট।তবে ক্লাস এইটে পড়ে শুনে তার মনটা একটু খারাপ হয়েছিলো।মেয়েটা আসলেই পিচ্চি।

সেদিন কলেজ থেকে যাওয়ার পথে দূর থেকে দৃশ্যকে দেখে সে দৌড়ে তার কাছে গেলো। পিচ্চিটা কি নিজের একটু খেয়াল রাখতে পারেনা? এসব বিষয়ে মেয়েরা অনেক সতর্ক হয়। কিন্তু এই মেয়ে কে দেখো! তারতো দিন দুনিয়ার খবর নাই।সে দ্রুত তার শার্টটা খুলে দৃশ্যর কোমরে বেঁধে দিয়েছিলো। সেই সময়টাতে দৃশ্যর চেহারা দেখার মত ছিল। অতি দুষ্ট মেয়েটাও কেমন লজ্জা পেয়ে গেছিলো। আল্লাহ বাঁচিয়েছে সেদিন সে শার্টের নিচে একটা টি-সার্ট পড়েছিলো। না হলে খালি গায়ে বাসায় ফিরতে হতো। তবে বাসায় ফিরে যে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় নি তা কিন্তু নয়। বাসায় ঢুকতেই তাকে দেখে তার মা কপাল কুঁচকে বললেন

-“মাহাদ তোর শার্ট কই?”

সে কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছিলো না। আমতা আমতা করে বললো

-“মা.. মাঠে খেলেছিলাম তো তাই ধুলো লেগে নোংরা হয়ে গেছে। ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছি। একটু পর ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে দিব।”

-“ও! আচ্ছা মাহিম কই দেখতো? সারাটা দিন বাইরে টোটো করে ঘুরে বেড়ায় লেখাপড়ার কোন খবর নাই। এখন ক্লাস টেনে উঠছে কয়েকদিন পর এসএসসি পরীক্ষা হবে তার কোন খবর আছে।ভাইয়াকে কিছু বলতে পারিস না?”

-“তুমি চিন্তা করো না মা। আমি দেখছি ও কোথায় গেছে?”

-“পড়ে যা আগে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে।”

-“হুঁ।”
_____________________
স্কুলে এসে ক্লাসে ঢুকতেই দৃশ্য মেজাজ গরম হলো। মিম আর মাহি তাদের বেঞ্চে বসে আছে। এই মিম আর মাহিকে দৃশ্যর বন্ধুমহল একদমই পছন্দ করেনা। এই দুইটা মেয়ের কিসের এত অহংকার সেটাইতো অদৃশ্য বুঝতে পারেনা। সব সময় তাদের সাথে লাগতে আসে। দৃশ্য বেঞ্চের সামনে এসে বললো
-“তুই আমাদের বেঞ্চে বসলি কেন?”

মিমি ভাবলেশহীনভাবে জবাব দিল
-“আমাদের ইচ্ছা হয়েছে তাই।”

-“প্রতিদিন আমরা এখানে বসি।তোরা অন্য বেঞ্চে যা।”

-“বেঞ্চে কি কারো নাম লেখা আছে?”

দৃশ্য বিরক্ত হয়ে বললো
-“অবশ্যই আছে,ব্যাগ সরিয়ে দেখ নিচে আমাদের নাম লেখা আছে।”

-“আমরা আগে এসেছি,তাই আমরা এইখানে বসবো।”

দৃশ্যর এবার ভীষণ রাগ হচ্ছে।
সবসময় তারা চার বান্ধবী এই খানে বসে।আসলে ক্লাসের সবাই নিজেদের জায়গা দখল করে নিয়েছে। সবাই প্রতিদিন এক নিয়মেই বসে। দৃশ্য আর তার বান্ধবীরা এই শেষের বেঞ্চটি দখল করেছে।আসলে এই সবকয়টা নম্বর ওয়ান ফাঁকিবাজ। পেছনের বেঞ্চে বসে বসে আড্ডা দেওয়া যায়, ঘুমানো যায় তাই এইটা তারা দখল করে আছে। কিন্তু আজ হঠাৎ করেই এই মিম বাগড়া দিয়ে বসলো। নাবিলা বুঝতে পারলো এইবার দৃশ্য মারামারিও করতে পারে। তাই দৃশ্যকে সেখান থেকে নিয়ে আসলো।আর বললো

-“আরে মাথা ঠান্ডা কর।”

-“দেখলি কেমন বেয়াদব? ওকে যদি এটা শিক্ষা না দেই তো আমার নাম দৃশ্য না।”

মৌ বললো
-“দৃশ্য একদম ঠিক বলছে। এই ফাজিল মেয়েরে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত।”

সায়মা চোখ কুঁচকে বললো
-“এই দৃশ্য তোর মাথায় নিশ্চয়ই কোন শয়তানি বুদ্ধি আসছে তাই না?”

দৃশ্য মুচকি হেসে বললো
-“টিফিন আওয়ারে পরে এদের দেখাবো মজা।”

সেদিন টিফিন আওয়ারের পর মিম আর মাহি বেঞ্চে বসে গল্প করছিলো। হঠাৎ খেয়াল করলো তারা বসা থেকে উঠতে পারছে না। খুব জোর করে উঠে দেখলো সারা বেঞ্চে চুইংগাম দিয়ে ভরা। চুইংগাম তাদের জামায় লেগে একদম একাকার অবস্থা। ক্লাসের সব মেয়েরা তাদের দুজনকে দেখে হাসাহাসি করতে লাগলো। দৃশ্যত পারে না হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ে।
পুরো বিষয়টাই মাহাদ খেয়াল করেছে।এই পিচ্চির মাথায় কি সারাদিন দুষ্টুমি ঘুরে? প্রতিদিনই কোন না কোনও ফাইজলামি সে করবেই। তবে দৃশ্যর এই চঞ্চলতা মাহাদকে ভীষণ আকৃষ্ট করে। এতদিনে তার বন্ধুরা বুঝে গেছে মাহাদ কোনভাবে এই পিচ্চিটার উপর দুর্বল হয়ে পড়ছে।

রাতে টেবিলে বসে মনযোগ সহকারে পড়াশুনা করছে দৃশ্য। কারণ কিছুক্ষণ আগেই তার বাবা তার রুমের পাশ দিয়ে চলাফেরা করছিলো।এই একজন মানুষকে সে যমের মত ভয় পায়। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে তার বাবা ভীষণ গম্ভীর একজন মানুষ। সাথে এটা বুঝতে পেরেছে তার বাবা ভীষণ বদরাগী ও বটে। এসব কারণেই হয়তো ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে তেমন একটা সখ্যতা গড়ে ওঠেনি।

হঠাৎ তার ফোনে নোটিফিকেশন লাইট জ্বলে উঠলো। মোবাইলটা চেক করতেই সে ভীষণ অবাক হলো। একটা আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে। আইডিটা আর কারো নয় মাহাদের।সামিন ইয়াসার মাহাদ। এই মানুষটার আইডিটা তো সে অনেকবার খুঁজেছে। কিন্তু পুরো নাম না জানার কারণে কখনোই খুঁজে পাইনি। আর সেই মানুষটা কিনা তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। সে দ্রুত মাহাদের প্রোফাইল টা ওপেন করে। প্রোফাইল পিকটা দেখে মনে হয় সে ছোটখাটো একটা ক্রাশ খেলো। একটা বাইকে হেলান দিয়ে শার্টের হাত ফোল্ড করছে। চোখে কালো সানগ্লাস। ধীরে ধীরে সে মাহাদের প্রোফাইলের সবগুলো ছবি দেখতে থাকলো। বিভিন্ন পোজে প্রায় কয়েক হাজার ছবি রয়েছে তার প্রোফাইলে। দৃশ্য প্রত্যেকটা ছবি খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে। ভাইয়াটাকে ভীষণ কিউট লাগে তার। পুরো প্রোফাইল ঘেটে মোবাইলটা সাইডে রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলো না। কেউ রিকুয়েস্ট পাঠালে এক্সেপ্ট করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই।

পরদিন সকালে স্কুলে প্রথম দুইটা ক্লাস করার পর সে ওয়াস রুমের দিকে গেলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে করিডরে আসতেই পেছন থেকে কেউ একজন পিচ্চি বলে ডাকলো। পিছনে ঘুরতেই দেখতে পেলো মাহাদ দাড়িয়ে। এক হাত প্যান্টের পকেটে রেখে আরেক দিয়ে সামনের চুল গুলি ব্রাশ করতে করতে তার দিকে আসছে। ইসস এই ভাইয়াটা এত হ্যান্ডসাম কেন? পুরাই কিউটের ডিব্বা। মাহাদ তার কাছে আসতেই দৃশ্য বললো

-“আমাকে ডেকেছেন ভাইয়া?”

এই ভাইয়া ডাকটা মাহাদের মোটেও পছন্দ হলো না।তবুও বললো

-“হুঁ তোমাকে ডেকেছি। এখানে তো আর কেউ নেই।”

দৃশ্য আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো আসলেই কেউ নেই। সে এবার বললো

-“কিন্তু আমার নাম তো পিচ্চি না আমার নাম দৃশ্য।”

-“সে তুমি দৃশ্য হওয়া বা অদৃশ্য তোমাকে তো আমি পিচ্চি ডাকবো।”

-“আমি মোটেও পিচ্চি না। সঠিক সময়ে বিয়ে হলে এতদিনে একটা বাচ্চা হয়ে যেত।”

দৃশ্যের কথা শুনে মাহাদের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। সে মুচকি হেসে বললো

-“তাই নাকি! বলো কী?”

-“হুঁ তা নয়তো কি? আমাদের পাশের বাসার আখির তো আমার সমান বয়স। গতবছরের বিয়ে হয়েছে আর কিছুদিন আগে ওর একটা ছোট বেবি হয়েছে। তাহলে বলুন আমি পিচ্চি কি করে হলাম।”

মাহাদ মনে মনে হাসছে।তার মন দখল করে নেওয়া এই পিচ্চিটা আসলেই ভীষণ অবুঝ। তা না হলে এমন ভাবে এই কথাগুলো বলতে পারতো না। মাহাদ এবার বলে উঠলো
-“আমার শার্ট কই?”

দৃশ্য ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বললো

-“আপনার শার্ট আপনার গায়ে।

-“আমি এই শার্টের কথা বলছে না। ঐদিন যে তোমার উপকার করার জন্য শার্ট দিলাম তুমি তো সেটা নিয়ে চম্পট হয়ে গেছো।”

দৃশ্য ভাবছে কিভাবে বলবে যে আপনার শার্ট তো আর শার্ট নেই। সে মাহাদের শার্টের সাথে নিজের গোলাপি ওড়না ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে ধুয়েছে।ফলে সাদা শার্ট হয়ে গেছে গোলাপি। সেদিন টেবিলে বসে বারান্দায় উড়ন্ত এই শার্টটা দেখেই ভাবছিল কিভাবে মাহাদকে এই কথাটা বলবে। সে বললো

-“আসলে ভাইয়া আপনার শার্টটা তো অনেক পুরনো হয়ে গেছিল। তবুও আমি খুব সুন্দর করে ধুয়ে রোদে দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আপনার সেই পুরনো জির্ণ শীর্ণ শার্টটা আমার আম্মু নেকড়া ভেবে ঘর মোছার কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।”

মাহাদ মনে হয় আকাশ থেকে পড়ল। পুরনো শার্ট মানে ওইটা ছিল তার নতুন শার্ট। বিরক্তি নিয়ে বললো

-“ওইটা মোটেও পুরনো শার্ট ছিল না।”

-“আপনার কি মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি? ঠিক আছে কালকে আমি সেটা আবার ধুয়ে আপনার জন্য নিয়ে আসবো ওকে ভাইয়া?”

মাহাদের এবার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সে কিছুটা রেগে বললো
-“তোমার কি মনে হয় ওই ঘর মোছা শার্ট আমি আবার পড়ব?”

-“তাহলে কি করব ভাইয়া?”

-“তোমাকে তো শাস্তি দেওয়া উচিত?”

দৃশ্য মনে মনে একটু ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ করল না। সে বললো

-“কি শাস্তি?”

-“সেটা এখন না পরে বলব। বাসায় গিয়ে সোজা আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবা মেসেঞ্জারে তোমাকে তোমার শাস্তির কথা বলবো।”

-“ঠিক আছে ভাইয়া।”

-“যাও ক্লাশে যাও।”

দৃশ্য মনে মনে মাহাদকে কয়েকটা গালি দিল। ইসস শখ কত আসছে আমাকে শাস্তি দিতে। আপনার তো আমি পড়ে ক্লাস নেব। দৃশ্য সেখান থেকে সোজা ক্লাসে চলে আসলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here