তোমার আমার প্রণয় পর্ব-১৪

0
4371

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_14

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দৃশ্য সবসময়ই ভীষণ পছন্দ করে। চারিদিকে কেমন শীতল হাওয়া বইতে থাকে। রোদের তাপ এই সময়টাতে ফিল হয় না। আজকের দিনটা অনেকটা সেইরকম। তবুও এত সুন্দর আবহাওয়া দৃশ্যর মনটাকে খুশি করতে পারছে না। এক বিষন্নতায় ছেয়ে আছে তার মন। এমন কেন লাগছে? মানুষটাকে একটা দিন না দেখে এত অস্থির হয়ে উঠছে তার মন? যেমন তেমন করে ক্লাস গুলো শেষ করে বাসায় চলে আসলো দৃশ্য। দুপুরে খেতে বসেও খাবার যেনো গলা দিয়ে নামছে না। অথচ মা তার পছন্দের কৈ মাছ ভুনা করেছে। কৈ মাছ দৃশ্য ভীষণ পছন্দ। এটা দেখলেই সে এক প্রকার খাবারের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু আজ তার সেই পছন্দের কৈ মাছ টাও গলা দিয়ে নামছে না। কোন কারণে মেয়ের মন খারাপ বিষয়টা বুঝতে পারলেন আনিকা কবির। না হলে নিজের পছন্দের মাছ দেখে ও মেয়ে খেতে পারছে না এটা হতে পারে না। কিছুটা চিন্তিত হয়ে তিনি বললেন

-“কিরে দৃশ্য মন খারাপ?”

মায়ের কথায় এক লোকমা ভাত মুখে পুরে দৃশ্য বললো
-“নাতো মা।”

-“তাহলে ঠিকমত খাচ্ছিস না কেন? কৈ মাছ দেখলে তো ঝাঁপিয়ে পড়িস আর আজকে খাচ্ছিস না কেনো?”

-“খাচ্ছি তো। মা ভাইয়া কোথায়?”

-“তোর ভাই কি বাসায় থাকে? সারাদিন টই টই করে বাইরে ঘুরে বেড়ায়।”

-“ভাইয়া সারাদিন বাইরে ঘুরলেও তোমরা কিছু বলো না,আর আমাকে একা কোথাও যেতে দাও না।”

-“তুই এখনো ছোট মানুষ নিজের খেয়াল রাখতে জানিস না। তাছাড়া তোর বাবা মেয়ে মানুষের বাইরে থাকা খুব একটা পছন্দ করে না।”

দৃশ্য এবার কিছুটা মন খারাপ করে বললো
-“বাবার সব রূলস আমার জন্য।”

কথাটা বলেই দৃশ্য টেবিল থেকে উঠে চলে গেল। আনিকা কবির কিছুটা চিন্তিত মুখে মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়ের মধ্যে যে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটছে সেটা তিনি বুঝতে পারছেন। তবে দৃশ্যর এই স্বাধীনভাবে চলার ইচ্ছা দেখে তিনি অনেকটা চিন্তিত। কারণ তিনি খুব ভালো করেই জানেন সেটা কখনোই সম্ভব না। কারণ এই বংশের মেয়েদের স্বাধীনভাবে কখনো চলতেই দেওয়া হয়নি।

আনিকা কবিরের বিয়ে হয়েছিল অনেক ছোট বয়সেই। তখন তিনি মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। লেখাপড়া করার তীব্র ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু বিয়ের পর তার সেই ইচ্ছা টাকে মাটিচাপা দিতে হয়েছে। তিনি মোটেও বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। তার পরিবার ছিল নিম্ন মধ্যবিত্ত। কিন্তু আশরাফ হোসাইন এর জন্য যখন তাকে দেখা হয় তিনি এক দেখাই আনিকা কবিরকে পছন্দ করেন। আশরাফ হোসাইন এর আর্থিক অবস্থা দেখে আনিকা কবিরের বাবা-মা এই বিয়েতে রাজি হয়ে যান। বিয়ের পর তিনি আশরাফ হোসেনকে অনেকবার লেখাপড়া কন্টিনিউ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তিনি বরাবরই এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। এই মানুষটাকে তিনি ভীষণ ভয় পান তাই কখোনো আর এ বিষয়ে কথা বলেননি।

সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরছে ফাহিম। গলির মোড়ে আসতেই দেখতে পেলো তমাকে। তমা তাদের বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দুইটা বাচ্চা ছেলের সাথে ঝগড়া করছে। যাকে বলে কোমর বেঁধে ঝগড়া। ফাহিম কপাল কুঁচকে সামনে এগুলো। তমাকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“এই তোর সমস্যা কি? এতো বড় ধামরি মেয়ে হয়ে এই সন্ধ্যার সময় বাচ্চা গুলোর সাথে ঝগড়া করছিস?”

ফাহিমকে দেখে তমা যেন মুহূর্তেই চুপসে গেল। আর মনে মনে বললো

‘আমার তো মোটেও এই বাচ্চা গুলোর সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করে না। আমার তো তোমার সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে ফাহিম ভাই। দিন রাত চব্বিস ঘন্টা আমি তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাই। রুটিনমাফিক ঝগড়া করবো আমরা। ঝগড়া করতে করতে যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়বো তখন তুমি এক গ্লাস পানি বাড়িয়ে দিবে আমার হাতে আর বলবো আর ঝগড়া করেনা সোনা।’

তমার কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে ফাহিম এবার ধমকে উঠলো। ফাহিমের ধমক খেয়ে বাচ্চাগুলোর দৌড়ে পালালো আর তমার কিছুটা কেঁপে উঠলো।

তমা ভাবছে ‘এই লোকটার গুন্ডামি কি আমার কাছে আসলে বেড়ে যায়? কোন অধিকারে আমাকে এত ধমক দিচ্ছে এই বদ গুন্ডাটা। এই খারাপ লোকটা তো আমাকে ভালোবাসে না তাহলে কেন এত ধমক দিবে? আমাকে যদি ভালোবাসতো তাহলে অন্য কথা ছিল। তখন না হয় এই ভন্ড গুন্ডার গুন্ডামি সহ্য করতাম। কিন্তু না গুন্ডাটা জীবনেও আমার ভালোবাসা বুঝবে না।’

নিজের ভাবনার রাজ্য থেকে বের হয়ে কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে বললো

-“আ.. আমিতো অকারণে ঝগরা করছিলাম না ফাহিম ভাই। ওই বিচ্ছু দুইটা আমার বাগানের এতগুলো ফুল ছিঁড়ে নিয়েছে। এত সখের বাগান আমার।”

ফাহিম কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো

-“তোর ওই ফালতু বাগানের দুইটা ফুল ছিঁড়েছে বলে তুই এভাবে ঝগড়া করবি? দিন দিন কি তোর বয়স বাড়ে না কমে?”

-“খবরদার আমার বাগানকে ফালতু বলবেননা।আপনি জানেন কত কষ্ট করে আমি এতগুলা ফুল গাছের চাড়া কালেক্ট করেছি। কতদিন যত্ন নিয়ে তবেই এত সুন্দর ফুল ফুটেছে আমার বাগানে। আমি আজ পর্যন্ত একটা ফুল ছিলাম না অথচ এই বিচ্ছু দুইটা কতগুলো ফুল ছিড়ে নিলো।”

কথাগুলো বলতে বলতে মুখটা একদম কাঁদো কাঁদো করে ফেললো তমা। এতে ফাহিম বিরক্ত হলো,চরম বিরক্ত। এই মেয়েটা এমন ছিঁচকাঁদুনে কেন? ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে কিছু হলেই কেঁদে কেঁদে চোখের জলে নাকের জলে ভাসিয়ে দেবে। ছি! কি বিচ্ছিরি লাগে তখন। ফাহিম চোখ কুঁচকে বললো

-“শোন এমন নাটক আমার সামনে করবি না। আর সন্ধ্যেবেলা বাসার বাইরে বের হয়েছিস কেনো? চাচা কে বলে তোর খবর নিচ্ছি। আর তোর ওই বাগান কোন দিন যেন আমি লন্ডভন্ড করে দেই তার ঠিক নাই।”

কথাটা বলেই ফাহিম আর এক মূহূর্ত দাঁড়ালো না হেঁটে বাসার ভেতরে চলে গেলো। তমা ভেজা চোখে ফাহিমের যাওয়ার দিকে এখনও তাকিয়ে আছে আর ভাবছে

-‘আমার বাগানের কি হবে জানিনা, তবে আপনি যে আমার মনটাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছেন সেটার কি হবে ফাহিম ভাই?”

দৃশ্য মন খারাপ করে পড়ার টেবিলে বসে আছে। গত এক ঘন্টা যাবত সে পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা। আজ সারা দিনে একবারও মাহাদের সাথে কথা হয়নি তার। মনটা ভীষন ছটফট করছে। কয়েকবার কল করেছিল সে কিন্তু কলটা রিসিভ হয়নি। বিরক্ত হয়ে ফোনটা বিছানায় আছাড় মেরে ফেলে দিয়েছে।

এত কি ব্যস্ত যে তার কলটা রিসিভ করা যায় না? এই ভালবাসে তাকে? এখনো তো কোনো বড় গায়ক হয়ে যায়নি তাতেই এই ছেলের এই অবস্থা। যদি বড় কোন গায়ক হয়ে যায় নিশ্চয়ই তাকে চিনতেও পারবেনা। চারপাশে সুন্দরী মেয়েরা ঘুরঘুর করবে সেখানে কি আর দৃশ্যের পাত্তা আছে? মুহূর্তেই মনটা ভীষণ ভার হয়ে গেলো তার। আসলেই কি মাহাদ তাকে ভুলে যাবে। হাজারো মানুষের ভিড়ে সে কি হারিয়ে যাবে? নাকি মাহাদ তাকে ঠিক খুঁজে নিবে।

এমন হাজারো চিন্তা দৃশ্যর ছোট্ট মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে মনে ভীষণ অভিমান হচ্ছে তার। আজ সে কিছুতেই এই অভিমান কে ভাঙতে দেবে না। মোটেও মাহাদের সেই দৃশ্য পাখি ডাকে গলে যাবে না।
এইসব ভাবনার মাঝে দৃশ্যর ধান ভাঙ্গে ফাহিমের ডাকে। ফাহিম বললো

-“কিরে দৃশ্য তোর মনোযোগ কোথায়?”

-“এখানেই তো ভাইয়া, বল কি হয়েছে?”

-“তুই নাকি প্রায়ই ওই ছিঁচকাঁদুনির সাথে গলির মোড়ে ফুচকা খেতে যাস।”

দৃশ্য কিছু বুঝতে পারল না তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফাহিমের দিকে তাকালো।
ফাহিম বললো
-“আরে ওই তমা ফাজিলের কথা বলছি।”

এবার দৃশ্য বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো

-“হ্যাঁ গিয়েছি তাতে কি? ভবিষ্যতে যাতে আমাকে বেশি না জ্বালাতে পারে তাই এখন থেকেই আপুর সাথে একটা ভালো বন্ডিং করে নিচ্ছি।”

ফাহিম দৃশ্যের কথা কিছুই বুঝতে পারলো না তাই জিজ্ঞাসা করল

-“ওই তমা ভবিষ্যতে তোকে কেন জ্বালাবে?”

-“আরে ভাইয়া তুমি তো জানো না মেয়েরা ননদ নামক জিনিসটা কে খুব একটা পছন্দ করে না।”

দৃশ্য কথায় ফাহিম হা করে তাকিয়ে থাকলো। বিষয়টা ধরতে তার দুই সেকেন্ড সময় লাগলো। যখন বুঝতে পারলো তখন দৃশ্যর মাথায় চাটি মেরে বললো

-“বেশি পেকে গেছিস।ওই তমার সাথে থেকে তোর এই অবনতি।খবরদার তোকে যেনো আর ওর সাথে না দেখি।”

দৃশ্য বিরক্তি নিয়ে বললো
-“তমার আপুর মতো এমন সুন্দরী একটা মেয়ে খুজে বের করো তো ভাইয়া। এখন পাত্তা দিচ্ছো না তো যখন অন্য কেউ নিয়ে উড়ে যাবে না তখন ভ্যা ভ্যা করে কেঁদোনা।”

ফাহিম দৃশ্য টেবিলে থাকা ক্যালেন্ডারটা আছাড় মেরে ফ্লোরে ফেলে রুম থেকে চলে গেলো। দৃশ্য এখন ভীষণ হাসি পাচ্ছে। তবে তার ভাইয়ের মনে কি চলছে সেটা ঠিক ধরতে পারছে না।

রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। দৃশ্য শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে স্ক্রল করছে। আসলে তার কিছুতেই ঘুম আসছে না। না পড়ায় মন বসছে। আর ওই মাহাদ ব্যাটা! তাকে তো আর কল করেনি। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলো।দৃশ্য দ্রুত আগে ফোনটা সাইলেন্ট করলো। এত রাতে ফোনের আওয়াজ পেলে বাসার সবাই তার খবর করে ছাড়বে। এতক্ষণে মাহাদ প্রায় কয়েক বার কল করে ফেলেছে কিন্তু দৃশ্য কিছুতেই ফোন ধরছেনা। বারবার কল আসাতে দৃশ্য বিরক্ত হয়েই ফোনটা ধরলো আর বললো

-“হেলো!”

-“বারবার কল করছি রিসিভ করছো না কেনো?”

মাহাদের ধমক শুনে দৃশ্য মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। একেতো সারাদিন একটা কল করেনি আবার এই রাতের বেলা কল করে তাকেই ধমকাচ্ছে। মাহাদ আবার বলে উঠলো

-“কথা বলছো না কেন? আর এত রাতে অনলাইনে কি হুম?”

দৃশ্যর এখন মন চাইছে হাতের মোবাইলটা দিয়ে মাহাদের মাথা ফাটিয়ে দিতে। এই ছেলেটা ভীষণ খারাপ। তাকে একটুও ভালোবাসো না। ফালতু একটা ছেলে।কিছুটা রেগে দৃশ্য বললো

-“আমি যা খুশি তা করবো তাতে আপনার কি? আপনিও তো সারাদিন যা খুশি তা করে বেড়ান তাতে আমি কিছু বলেছি?”

মাহাদ এবার বুঝতে পারলো তার ছোট্ট পাখিটা অভিমান করেছে। তাই অনেকটা আদুরে গলায় বললো

-“আমার দৃশ্য পাখিটা কী রাগ করেছে?”

মাহাদের আদুরে গলা শুনে দৃশ্যত পুরো আইসক্রিমের মতো গলে গেলো।ইসস!! মাহাদের কন্ঠটা যে কোন মেয়েকে পাগল করতে যথেষ্ট।তার আদুরে গলায় কথা বলা শুনে দৃশ্যর মনে হাজারো বাটারফ্লাই উঠতে শুরু করলো। তবে পরমুহুর্তেই নিজেকে সংযত করে আবার রাগী গলায় বললো

-“আমি কোন পাখি টাখি না। কেউ যেন মোটেও আমাকে আল্লাদ দেখাতে না আসে।”

-“তাই নাকি? মনে হচ্ছে আমার দৃশ্য পাখিটা আজ আমাকে ভীষণ মিস করেছে।”

দৃশ্যর এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে

‘শুধু মিস! আমি আপনাকে আজ ভীষণ রকমের মিস করেছি মাহাদ। না শান্তিতে বসতে পেরেছি, না খেতে পেরেছি।কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারিনি।আপনি একটা চোর। আপনি আমার মনের সকল শান্তি চুরি করে নিয়ে গেছেন। একরাশ বিষাদ দিয়ে এখন আবার ঢং করতে এসেছেন?’

কিন্তু এমন কিছুই দৃশ্য মুখে বলতে পারলো না।সে রাগ নিয়ে বললো

-“আমার বয়েই গেছে আপনাকে মিস করতে। আমি মোটেও আপনাকে মিস করি নি।”

দৃশ্যের কথা শুনে মাহাদ মুচকি হাসলো।আর বললো

-“সকাল থেকেই ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম পাখি। সকালে আমার গানের প্র্যাকটিসে অনেক সময় লেগে গেছিলো। আর আজকে আমার প্রোগ্রাম ছিলো রাজশাহী শহরের বাইরে। দুপুরের দিকে একটু ফ্রি ছিলাম তখন তুমি ক্লাসে ছিলে। আর প্রোগ্রামের সময় ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে ছিলাম তাই তোমার কল রিসিভ করতে পারিনি বুঝেছো পাখি?”

কথাগুলো বলেই মাহাদ নিজেই হাসলো আর ভাবলো নিজের কাজের কৈফিয়ৎ সে কখনোই কাউকে দেয়নি। কিন্তু তার জীবনে এখন একটা মানুষ আছে যার কাছে তার প্রতিটা কাজের কৈফিয়ৎ দিতে হচ্ছে। তবে বিষয়টা যে মাহাদের কাছে খারাপ লাগছে তা কিন্তু নয়। কারো কাছে নিজের কাজের কৈফিয়ত দিতে এত টা ভাল লাগতে পারে তাতো মাহাদের জানা ছিল না।

মাহাদের কথায় দৃশ্য এবার কিছুটা শান্ত হলো। মানুষটা সব সময়ই তার সাথে ভীষণ আদুরে গলায় কথা বলে। যেন দৃশ্য ছয় বছরের ছোট একটা বাচ্চা।

মাহাদ আবার বলে উঠলো
-“আমার ছোট্ট পাখিটার রাগ কমেছে?”

-“হুঁম।”

-“আজ তোমাকে ভীষণ মিস করেছি ছোট্ট পাখি।”

দৃশ্যর একবার বলতে মন চাইলো আমিও আপনাকে ভীষণ মিস করছি। আমার জীবনে এত বেশি মিস আমি আর কাউকে করিনি। কিন্তু সে বললো না।

মাহাদ আবার বললো
-“অনেক রাত হয়ে গেছে এখন ঘুমিয়ে পড়ো কাল সকালে স্কুল আছে।”

কিন্তু দৃশ্যর কিছুতেই ফোন রাখতে ইচ্ছা করছে না। মনে হচ্ছে সারারাত মাহাদের কথা শুনতে। কিন্তু সে সেই ইচ্ছাটা প্রকাশ করল না। কারণ আজ সারাদিন মাহাদ ভীষণ ব্যস্ত ছিল। নিশ্চয়ই অনেক টায়ার্ড। তাই সেও বায় বলে কল কেটে দিলো।
___________________________
মাহাদ এই মুহূর্তে নিজের উপর ভীষণ বিরক্ত। এই নিয়ে সে প্রায় বেশ কয়েকবার গান রেকর্ড করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রত্যেকবারই কোনো না কোনো ভুল হচ্ছে। কিছুতেই সে কনসেনট্রেট করতে পারছে না। তার এই অবস্থা দেখে আদ্রিয়ান বললেন

-“মাহাদ আজ বাত দাও। আমরা বরং রেকর্ডিংটা কাল করি।”

মাহাদ মাথা নেড়ে সায় দিল। আসলে সে নিজেও বুঝতে পারছে তার বারবার ভুল হচ্ছে। রেকর্ডিং রুম থেকে বের হতেই আদ্রিয়ান বললেন

-“আরে মাহাদ ব্যাপার না এমন মাঝে মাঝেই হয়।”

মাহাদ অনেকটা মন খারাপ করে বললো

-“সরি ভাই আজকের দিনটা পুরা ওয়েস্ট গেলো। আসলে কিছুতেই কনসেনট্রেট করতে পারছিলাম না।”

-“ব্যাপার না। আসলে প্রায় সময়ই আমাদের পার্সোনাল লাইফের অনেক কিছুই আমাদের প্রফেশনাল লাইফে এফেক্ট করে। তাছাড়া তুমি বরাবরই এক টেকেই গান রেকর্ড করে ফেলো। সবসময় একরকম হবে এমন কোন কথা নেই।”

মাহাদ মুচকি হেসে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো। আদ্রিয়ান হচ্ছে একজন বড় মিউজিক ডাইরেক্টর। মাহাদের সিঙ্গিং ক্যারিয়ারের প্রথম দিক থেকেই সে আদ্রিয়ান কে চেনে। মাহাদের প্রথম দিকের সব হিট গানগুলো আদ্রিয়ানের ডিরেকশনে গাওয়া হয়েছে। মানুষটা ভীষণ সাপোর্ট করেছে তাকে।আর আজও করে।

এই রাতেও রাস্তায় এতো ট্রাফিক দেখেও মাহাদের কোনো ভাবান্তর হচ্ছে না।কারণ তার ভাবনা জুড়ে এখন শুধু দৃশ্য বিচরণ করছে। সে ভাবছে দৃশ্য ঢাকায় কেনো? তাহলে কি তার পুরো ফ্যামিলিই ঢাকায় শিফট করেছে? কিন্তু দৃশ্য তার ফ্যাশন হাউসে জবই বা কেন করছে? কারণ তার জানা মতে দৃশ্য ফ্যামিলি এটা কখনোই অ্যালাউ করবে না। আচ্ছা দৃশ্য কি আজও একা আছে নাকি তার জীবনে খুবই স্পেশাল কেউ চলে এসেছে? কথাটা ভাবতেই মাহাদের বুক ধক করে উঠলো। চোখ জোড়াও কেমন ঝাপসা হয়ে আসলো। এই মেয়েটার আশেপাশেও সে কাউকে সহ্য করতে পারে না। আর আজ মেয়েটার জীবনে কি ঘটছে সে কিছুই জানেনা। মাহাদ আর কিছুই ভাবতে চাইছে না। তার ভেতরটা তো এমনিতেই পুড়ে কয়লা হয়ে আছে। আবার সেই কয়লার আগুন জ্বালাতে চায়না সে। এই মেয়েটা কেন আবার তার সামনে আসলো? সে তো বহু কষ্টে নিজেকে অনেকটা সামনে নিয়েছিল। তাহলে এভাবে আবার তার জীবনে এসে কেন সব এলোমেলো করে দিচ্ছে। এই মেয়েটা কি তাকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দেবেনা। এতদিন চোখের সামনে না থেকে যন্ত্রনা দিয়েছে। আর এখন তো চোখের সামনে এসে যন্ত্রণার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এই যন্ত্রণা থেকে কী মুক্তি মিলবে না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here