#তোমাতেই_আমি
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট:২
গত আধ’ঘন্টা ধরে জেলের ভেতরে বসে আছি। তৌসি, পাপিয়া,সাবিনার দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। তাই জোরে জোরে চিৎকার করা শুরু করলাম। ৫ মিনিটের মধ্যে ইন্সপেক্টর ইমন এসে হাজির। আমাকে ধমক দিয়ে বলে,
‘এই মেয়ে তোমার কি কাজ নেই কোনো? এভাবে চিৎকার দিচ্ছো কেনো?’
‘আমি আপনার কথা ভেবেই তো চিৎকার দিচ্ছি স্যার।’
‘মানে।’
‘এইযে আপনি আমাকে বিনা দোষে এখানে আটকে রাখলেন তাতে ক্ষতি হবে আপনার। আমি একজন স্টুডেন্ট হিসেবে সবাই আমার পক্ষ নিবে। এমনিতেও তো আমি নির্দোষ। যদি তা একবার প্রমান হয়ে যায় তাহলে আপনাকে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী রা আর আস্ত রাখবে না। সো ভালোই ভালোই বলছি আমাকে ছেড়ে দিন।’
ইন্সপেক্টর ইমন আমার দিকে কতক্ষন ব্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বলে,
‘হয়েছে তোমার কথা বলা?’
‘হয়েছে মানে আপনি আমাকে ছাড়বেন না এখান থেকে?’
‘একবার না বলছি মানে নাহ। তোমাকে তোমার অভিবাবক এসে এখান থেকে নিয়ে যাবে।’
বলেই ইন্সপেক্টর ইমন হনহন করে চলে যান।
.
.
ইন্সপেক্টর ইমনের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে তৌসি,পাপিয়া,সাবিনা। ইন্সপেক্টর ইমন এসে নিজের কক্ষের সামনে তিন বান্ধবি কে একসাথে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
‘এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো তোমরা?’
ইন্সপেক্টর ইমনের দিকে তৌসি তীক্ষ্ণ দূষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘আমার ফ্রেন্ড আর চাচা কে আটকে রেখে বলছেন কেনো দাড়িয়ে আছি আমরা! ওদের ছেড়ে দিন আপনি তারপর আমরা এখান থেকে যাবো।’
‘মিস স্রুতি এসে তোমার চাচার নামে যা বলেছে তা যদি সত্য হয় তাহলে আমরা কি করে তাকে ছাড়বো?’
‘দেখুন স্যার আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে খুব ভালোবাসে তাই আমার বিয়েটা আটকানোর জন্য যা মিথ্যে বলতে হয়েছে তা বলেছে। এতে ওর দোষ নেই আমিই বলেছি যে ওই ছেলেটাকে আমি বিয়ে করবো না বাড়ির কেউ আমার কথা শুনে নি তাই ওদের হেল্প নিতে হয়েছে। আমি মানছি স্রুতি অন্যায় করেছে বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য মিথ্যে বলেছে। কিন্তু এটা সঠিক তো যে আমাকে বাল্য বিবাহ দিতে চাইছিলো এরা। যেহুতু আমার বয়স এখনো আঠারো হয়নি তাই। আমি মাত্র দশম শ্রেনিতে পড়ি এখনি আমার চাচার কাছে বিয়ের সমন্ধ আসতে থাকে তাই চাচা আমার বিয়েটা ঠিক করে ফেলে।’
‘বুঝলাম সবকিছু আপনি যেহেতু বললেন। আপনি যখন বলেছেন আপনার চাচাকে ছেড়ে দিতে তাহলে আমি ওনাকে ছেড়ে দিচ্ছি মিস তৌসি কিন্তু…’
ইন্সপেক্টর ইমনকে তৌসি আর কিছু বলতে না দিয়ে বলে,
‘কোনো কিন্তু নেই স্যার আমি স্রুতি এবং আমার চাচা দুজনকেই সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই। স্রুতিকেও আপনার ছেড়ে দিতে হবে।’
‘উনি যে বড়দের রেসপেক্ট করতে পারে না তা বুঝানোর জন্য উনাকে একটা রাত এখানে থাকতে হবে।’
‘হবে না ইন্সপেক্টর সাহেব আমরা স্রুতিকে ছাড়া বাড়ি যাবো না। আমাদের হাতেও হাত কড়া পরিয়ে ওর কাছে নিয়ে যান। আমরাও সমান অপরাধী আমরা আরো বেশি বড়দের সাথে তর্ক করি হয়তো আপনি তা দেখেন নি স্রুতির টা দেখেছেন।’
‘আপনাদের ফ্রেন্ডশীপ টা আসলেই অসাধারন মিস তৌসি। আমি আজকে স্রুতিকে ছেড়ে দিচ্ছি ওনাকে সাবধান করে দিবেন।’
খুশিতে তৌসির চোখ চকচক করে উঠে।
‘ধন্যবাদ স্যার।’
‘শুনুন মিস তৌসি আপনার মুখে ইন্সপেক্টর সাহেব টাই বেশি স্যূট করে। আর একটা কথা এই নামে সবাইকে ডাকবেন না।’
বলেই উনি এসে জেলের দরজা টা খুলে দেন। আমি বের হয়ে তৌসি কে জড়িয়ে ধরে বলি,
‘দোস্ত কি জাদু করলি যে ইন্সপেক্টর স্যার এতো সোজা হয়ে গেছে।’
আমার কথা শুনে ইন্সপেক্টর ইমন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দূষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘তোমাদের ফ্রেন্ডশীপ টা আমার পছন্দ হয়েছে তাই ছেড়ে দিচ্ছি নাহলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট আমার নেই।’
‘হয়েছে ছেড়ে দিয়েছেন এতে আমি অনেককক খুশি হয়েছি ।’
এর মধ্যে তৌসির চাচাকেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আমরা সবাই মিলে বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়েছি। তৌসির চাচা তো আমাদের উপর অনেক খুশি হয়েছে কারণ আমরা গিয়ে ওনাকে ছাড়িয়ে এনেছি তাই। ওনি বলেছেন একদিন আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবেন।
.
সবাইকে বিদায় দিয়ে আমি আমার বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে আসতেই ভাইয়া বলে,
‘এই স্রুতি এতো দেরী করলি কেনো?’
‘এমনি ভাইয়া তৌসিদের বাড়িতে ছিলাম।’
‘ওহ শুন কালকে থেকে আমি তোকে স্কুলে দিয়ে আসবো। শুনেছি তোকে নাকি কে ডিস্টার্ব করে?’
‘কে বলেছে ভাইয়া তোকে?’
‘তোকে কি আমি একা স্কুলে যেতে দেই নাকি? তোর আশে পাশের সবার সাথেই আমার যোগাযোগ আছে। তাই আমার থেকে কিছু লুকাবি না। আমি জানি ছেলেটা তোকে ডিস্টার্ব করে তুই এতে খুশি না তাই আমি চাই ছেলেটা যেনো তোর আশে পাশে আর আসতে না পারে।’
‘থাংকু ভাইয়া।’
‘হয়েছে আর এতো আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না ঘরে তোর ভাবি একা ঘরে যা।’
ঘরে এসে ভাবির সাথে কিছুক্ষন গল্প করে নিজের রুমে চলে আসি আমি। কালকে আবার স্কুল যেতে হবে তাই পড়তে বসতে হবে।
.
.
সকাল ৭ টা বাজে। ভাবি এসে আমাকে নাস্তা দিয়ে গেছে তাই নাস্তা করে স্কুলের জন্য তৈরি হচ্ছি। প্রাইবেট আছে তাই সকাল সকাল স্কুল যেতে হচ্ছে।
স্কুলে আসতে প্রায় ১০ মিনিট লেইট করে ফেলেছি আমি। ৮:১০ বাজে আর প্রাইবেট আট টা থেকে শুরু। স্কুলের চারতলা যে ভবন টি আছে সেখানের তৃতীয় তলায় আমাদের প্রাইবেট পড়ায়। তাই দৌড়ে দৌড়ে তৃতীয় তলায় উঠে হাপাতে হাপাতে ক্লাসের সামনে এসে দাড়াই।
‘মে আই কাম ইন স্যার?’
স্যার আমার দিকে কিছুক্ষন ব্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বলে আসতে। ক্লাসে ডুকে স্যারের সামনে দিয়ে যেতে নিতেই স্যার বলে,
‘এতো লেইট কেনো? সারারাত কি আমাদের দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে কাটিয়ে দিয়েছো নাকি?’
স্যারের এরবম কথা নতুন না স্যার সবার সাথেই এরকম দূষ্টুমি করে তাই স্যারকে বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের সিটে এসে বসি। আমাকে বসতে দেখে পাপিয়া আমাকে খোচা দিয়ে বলে,
‘কি সারারাত কার সাথে কাটালি হু?’
‘তোর জামাইয়ের লগে।’
এরি মাঝে স্যার হুংকার দিলেন সবাই চুপ করার জন্য।
.
প্রাইবেট শেষে আমি, সাবিনা আর পাপিয়া মাঠে এসে প্রতিদিনকার মতো আড্ডা দিতে থাকি। তৌসি আমাদের মাঝে নেই কারন ও প্রাইবেট পড়ে না।ও স্কুলে সাড়ে নয়টা বাজে আসবে আর এখন নয়টা দশ বাজে।
‘আচ্ছাহ স্রুতি স্যার যখন ওই কথা টা বলেছে তাহলে কেনো তুই মুচকি হেসেছিলি? স্যার তো সত্যিও ভাবতে পারে!’
পাপিয়ার কথা শুনে সাবিনা বলে,
‘আরে স্যার তো ওকে দুধে দোড়া তুলসি পাতা ভাবে। স্যার যদি জানে ও ফেসবুক ইউস করে তাহলে তো স্যার হার্টফেল করবে।’
‘শুন সাবু আমি যে ফেসবুক ইউস করি তা আদ্র স্যার জীবনেও বিশ্বাস করবে না। উনি তো জানে আমি বিথীর ফেসবুক থেকে তোদের সাথে কথা বলি।’
‘হহ স্যার তো তোরে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। একদিন দেখবি তোকে স্যারের হাতে কেমন বাঁশ দেই দেখিস। ওই দিন কেমন দিলাম বল?’
‘পাপিয়া তুই সব কাজে বেশি করিস আমি ফেসবুক ইউস করলে স্যারের কি?’
‘স্যার তোকে ওইদিন বলছে না যে তোর বোন বিথীর মতো ভালো রেজাল্ট না করলে হাড্ডি ভেঙ্গে দিবে!’
আমি পাপিয়া ধমক দিয়ে বলি,
‘হহ স্যার হাড্ডি ভাঙতে আসবে আর আমি স্যারের সামনে আমার হাড্ডি নিয়ে বসে থাকবো।’
সাবিনা আমাদের দুজনকে থামাতে ব্যাস্ত হয়ে গেলে। আমাদের চারজনের মধ্যে পাপিয়া আর তৌসি আমার পিছনে পড়ে থাকে আর সাবিনা সব কিছু মিটমাট করে। এর মাঝে আমাদের মাঝে তৌসি এসে হাজির হয়।
‘এই স্রুতি তোর ক্রাশের কি খবর?’
‘স্কুল এসেই তোর শুরু হয়ে গেলে এসব বকবক?’
সাবিনা বললো,
‘তোরা প্লিজ আর ঝগড়া করিস না আমি হাপিয়ে গেছি তোদের ঝগড়া মিটমাট করতে করতে।’
এর মাঝেই আমাদের সামনে পরিক্ষার্থী একটা ভাইয়া এসে বলে,
‘এই স্রুতি তুমি তোমার ভাইকে সাথে নিয়ে স্কুল আসো কেনো?’
‘কেনো ভাইয়া তাতে আপনার সমস্যা কি?’
চলবে…..
[ভুল-ক্রুটি ক্ষমার দৃ্ষ্টিতে দেখবেন। কালকের পর্ব কিছু টা এলোমেলো হয়ে গেছে আপনাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।]