তোমাতেই আমি পর্ব ৩

0
663

#তোমাতেই_আমি
#পার্ট_৩
#হালিমা_চৌধুরী

‘দেখুন ভাইয়া আমার ভাইয়া আমাকে স্কুলে দিয়ে যায় তাতে আপনাদের সমস্যা কি।’

‘সমস্যা অনেক আছে। পূর্ন যে তোমাকে পছন্দ করে সেটা তুমি খুব ভালো করে জানো তাহলে এমন করছো কেনো?’

তানিম ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে সাবিনা বলে,

‘এমন করবে না তো কেমন করবে? আপনার ওই বন্ধু কেমন তা আমাদের খুব ভালো করেই জানা আছে। এটা কে ভালোবাসা বলে না ডিস্টার্ব করা বলে বুঝলেন ভাইয়া? নেক্সট টাইম এমন করলে আমরা আদ্র স্যারের কাছে বিচার দিবো বলে দিলাম।’

‘আচ্ছাহ তোমরা স্যারকে কিছু বলোনা আমরা এই ব্যাপারে পরে কথা বলবো।’

বলেই তানিম নামের ছেলেটা মাঠ ত্যাগ করে। তৌসি একটু ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,

‘শোন স্রুতি এই তানিম ভাই ও কিন্তু খুব ভালো ছেলে না। সাথে পূর্ন ভাইয়া তো আছেই। চেয়ারম্যানেরর ছেলে দেখে যা ইচ্ছে তাই করছে।’

আমি বিরক্ত ভঙ্গিতে বলি,

‘তৌসি এই ব্যপার টা বাদ দে তো অন্য ব্যাপারে কথা বল। আমার এসব আর ভালো লাগে না। কবে যে আজাব গুলো বিদায় হবে স্কুল থেকে কে জানে!’

‘আচ্ছাহ এসব বাদ দে। চল সমাবেশ শুরু হবে এখন। ‘

‘আচ্ছাহ চল।’

আমরা সবাই সমাবেশের জন্য মাঠে দাড়িয়ে পড়লাম।
.
.
সমাবেশ শেষ করে আমরা সবাই ক্লাস রুমে চলে আসি। তৌসি B section এ পড়েছে তাই আমাদের সাথে নেই ও। আমরা তিনজন A section এ পড়েছি। তৌসি মানবিক বিভাগে গেছে আর আমরা তিনজন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে আছি। ক্লাস করার সময় তৌসির সাথে শুধু একঘন্টা বসতে পারি কারন লাস্টের ঘন্টা বিজ্ঞান হয় এটা আর্স আর কমার্স মিলে দলীয় ভাবে হয়।

‘এই স্রুতি বাংলা কি পড়া দিয়েছে?’

‘ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট কে জিঙ্গেস কর পাপিয়া আমি জানি না কি পড়া দিয়েছে।’

‘জানবি কেনো? সবসময় বলিস তুই কিছু জানিস না পরিক্ষা দিয়েও বলস তুই কিছু দিস নি এমনিতে আমাদের সবার আগে তোর রোল।’

‘শুন পাপিয়া আমার না কি পড়া দিয়েছে তা বলতে আলসেমি লাগে তাই বলি না।’

‘হুম ভালো। পড়া শিখেছিস?’

‘ম্যাম পড়া নিলে বুঝবো যে শিখেছি কিনা।’

‘ত্যাড়া উত্তর ছাড়া আর কিছুই দিতে পারিস না তুই?’

সাবিনা আমাদের কে থামিয়ে বলে যে ম্যাম আসতেছে। তাই সবাই যে যার জায়গায় বসে পড়ি। পাপিয়া আর সাবিনা তৃতীয় বেন্চে বসেছে আর আমি ২য় বেন্চে। ওরা সামনে বসতে চায় না তাই আমাকে একা বসতে হয়। পাপিয়া আমার বরাবর পিছনে বসেছে তাই আসাকে একটা খোচা মেরে বলে,

‘তোর ভাই’টা কিন্তু জোশ। তোর ভাইয়ার ওয়াইফের নাম যদি নিতু হতো তাহলে বেশ মানাতো। একদম নিতুর মাহাবুব ভাই হয়ে যেতে।’

‘ডাইনি মাইয়া ভাইয়ের দিকে নজর দিবি না বলে দিবি। ভাই আমার মিঙেল।আর আমার ভাবির বুঝি আমার ভাই ভাইয়া হয়?’

এরি মধ্যে ম্যাম সবাইকে চুপ করতে বলে। আর রোল কল করা শুরু করে।
.
.
বিরতির সময় আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডার বিষয় হলো আমি বাড়িতে চলে যেতে চাই ওরা আমাকে যেতে দিবে না তাই। তাই একপ্রকার বাদ্য হয়ে সবাই মিলে দোকানে চলে গেলাম।

‘আরে মিস তৌসি কেমন আছো?’

ইন্সপেক্টর ইমন গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললেন কথাটা। আর তৌসি ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে।

‘জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তো স্যার আপনি এখানে কি করেন?’

‘একটা কাজ ছিলো তাই আসছি। প্রতিদিনেও কোনো না কোনো কাজ থাকে এইদিকে।’

‘ওহ আচ্ছাহ। আসি স্যার।’

বলে তৌসি যেতে নিতেই ইন্সপেক্টর ইমন তৌসি কে ডাক দেয়। তৌসি বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।

‘কি বলবেন স্যার তাড়াতাড়ি বলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

‘তোমাদের আর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?’

‘নাহ স্যার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

‘আচ্ছাহ কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে।’

‘জ্বী স্যার এখন আসি তাহলে।’

বলেই আমরা দোকান থেকে চলে আসি।
.
.
স্কুল থেকে বাড়িতে আসতেই তৌসি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার সামনে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে। তৌসিদের ঘরে খুব আরাম করে বসে আছে ইন্সপেক্টর ইমন। তৌসি কে দেখে তৌসির চাচা বলে,

‘তৌসি মা চলে এসেছিস? যা চেন্জ করে সুন্দর করে সেঁজে আয়।’

‘কেনো কি হয়েছে চাচা?’

‘আরে তোর জন্য বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এসেছে পুলিশ বাবু।’

‘মানেহ! এই আপনার কি লজ্জা নেইই নিজে একজন পুলিশ হয়ে এই অন্যায় কাজে কিভাবে জড়িত হচ্ছেন?’

‘সেটা আমার ব্যাপার তোমাকে ভাবতে হবে না। চাচা বিয়ে টা আমি আজকেই করতে চাই।’

‘হ ঠিক আছে বিয়ে ডা আজকে ওইবো।’

‘ঠিকাছে চাচা আপনারা তৌসিকে তৈরি করেন আমি আসছি। ‘

বলেই উনি বাহিরে চলে যান।

‘তৌসি সুন্দর করে গিয়ে তৈরি হয়ে আয় তাড়াতাড়ি।’

‘বললাম তো চাচা আমার দ্বারা এখন বিয়ে করা সম্ভব না তাহলে কেনো জোর করছেন?’

‘তো তোর মতো বিয়া ভাঙা মাইয়ারে কে বিয়া কইরবো?’

‘সেটা আমার ব্যাপার চাচা আপনার না ভাবলেও হবে।’

‘তোকে কে খাওয়াবে শুনি বাপ মা তো সেরে গিয়েছে আমাদের উপরে চাপিয়ে দিয়ে।’

‘সেটা আপনাদের না ভাবলেও হবে নিজেদের টাকাই কোনোদিন আমাকে একটা জামাও কিনে দেন নি বরং আমার। বাবা মা আমার উপর আপনাদের চাপিয়ে দিয়ে গেছে। আমাদের ঘরে এখনো দাড়িয়ে আছেন আমার খরচ টাও বড় আপু দেয় তাহলে কিসের কষ্ট আপনাদের?’

আর কিছু বলার আগেই তৌসির গালে একটা থা*প্পড় পড়ে। তৌসি চলচল চোখে তার চাচার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
.
সন্ধ্যা বেলা কিছু করার নেই তাই বেলকনিতে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ বাহিরে তৌসি কে দেখে আমি নিচে নেমে তৌসির কাছে গেলাম। তৌসি আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে কান্না করতে থাকে।

‘কি হয়েছে তৌসি এভাবে কাদছিস কেনো?’

‘আমার সব শেষ রে স্রুতি চাচা আমার আবার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।’

আমি তৌসি কে এভাবে কাদতে দেখে সত্যিই অবাক হচ্ছি এই মেয়েটাকে কখনো কাদতে দেখিনি আমি।এই মেয়েটি আমাদের সবাইকে আগলে রেখেছে আর এই মেয়েটা আজকে কাদছে!

‘তুই ঘরে চল তৌসি।’

বলেই আমি তৌসিকে নিয়ে ঘরে চলে এলাম।

‘একি তৌসি এখানে এই অসময়ে কি করছো কোনো সমস্যা হয়েছে?’

আমি ভাইয়াকে আস্তে আস্তে সব খুলে বলি।

‘আচ্ছাহ তৌসি আমরা তো পুলিশের সাহায্য নিতে পারি। স্রুতি তোরা কোন পুলিশের কাছে গিয়েছিলি?’

আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে তৌসি বলে,

‘কিছু হবে না ভাইয়া ওই পুলিশের কাছে গিয়ে। ওই পুলিশ শা’লা টাই বিয়ের প্রোপ্রোজাল নিয়ে আসছে।’

‘কি বলিস তৌসি এই লোকটা কে কি আমি এমনি এমনি কি আর ক্যাবলা বলি নাকী! ‘

‘আচ্ছাহ স্রুতি তোরা ঘরে যা আর একদম বাহিরে বের হবি না তাহলে পুলিশ যেনে যাবে তৌসি এখানে আছে।’

‘আচ্ছাহ ভাইয়া।’

বলেই আমি তৌসিকে নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম। ভাবি এসে নাস্তা দিয়ে গেছে। আমি আর তৌসি শুয়ে শুয়ে গল্প করছি। হঠাৎ নিচের থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতেই তৌসি ভয় পেয়ে যায়। আমি তৌসিকে বেলকনিতে নিয়ে এসে পর্দার আড়ালে চলে যেতে বলে আমি নিচে চলে আসি। নিচে আসতেই দেখি ইন্সপেক্টর ইমন ভাবির সাথে তর্কাতর্কি করছে।

‘এই আপনার সমস্যা কি? আপুর সাথে এমন করছেন কেনো?’

‘ ওহ তুমি চলে এসেছো শালিকা! ভালোই হলো তাড়াতাড়ি তৌসিকে বের করো। নাহলে এখানে খারাপ কিছু হয়ে যাবে বলে দিলাম।’

‘কি করবেন আপনি? আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন তৌসি এখানে নেই।’

আমি বলতে দেরি ইন্সপেক্টর এমন এসে আমার মাথায় পি*স্তল ঠেকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,

‘আমি জানি তৌসি তুমি এখানেই আছো। যদি তোমার বন্ধুকে বাচাতে চাও তাহলে ৫ মিনিটের মধ্যে সামনে চলে এসো।’

‘নাহ তৌসি আমাকে মে*রে ফেললেও তুই আসবি না।’

আমার বলার আগেই তৌসি দৌড়ে নিচে চলে আসে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here