তোমাতেই আমি পর্ব ১

0
1519

বাল্য বিবাহ দেওয়ার অপরাধে বাড়িতে পুলিশ এসেছে শুনে আমার চাচা তা দামা’চাপা দেওয়ার জন্য পুলিশ কে ঘুষ দিতে চাইলো। কিন্তু পুলিশ উল্টো আমার চাচাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। বিষয় টা শুনতে হাস্যকর হলেও সত্য। চাচাকে পুলিশে নিয়ে গেছে শুনে বিয়ে বাড়ির সবার মুখ থমথমে। শুধু আমরা চারজন বাদে।

‘কেমন দিলাম বল?’

বাড়িতে সবার এরকম অবস্থা তারউপর স্রুতির এরকম ফাজলামো দেখে আমি বললাম,

‘তুই থামবি স্রুতি? সবাই যদি জানে বিয়েটা আমরা ভেঙ্গেছি তাহলে আমাদের হাড্ডি ভেঙ্গে বুড়ি’গঙ্গায় ভাসিয়ে দিবে।’

‘আচ্ছাহ, এবার অন্তত কনের ড্রেস টা চেন্জ কর। আর শুন একটু মন খারাপ করে থাকবি।’

স্রুতির কথা শুনে আমরা সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠলাম। হঠাৎ রুমে আমার চাচি প্রবেশ করে। মুহুত্বে আমরা আমাদের রিয়েকশন চেন্জ করে বসে আছি। আমি কাদো কাদো গলায় বলি,

‘আহারে আমার কি হবে আমাকে কে বিয়ে করবে? কোন অপরাধ করেছি আমি যার কারনে আমাকে এভাবে ভুগতে হচ্ছে।’

আমার এরকম মরা কান্না শুনে আমার চাচি কাদো’কাদো মুখ করে আমার পাশে এসে বসে।

‘এভাবে কাঁদিস না তৌসি দেখবি তোর অনেক ভালো জায়গায় বিয়ে হবে।’

আমার চাচির এরকম শান্তনা শুনে পাপিয়া বলে উঠে,

‘আন্টি তৌসিকে পরেও বিয়ে দেওয়া যাবে আগে আপনি আঙ্কেলকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। এই বাড়িতে তো আপনি ছাড়া আর কেউ কোনো কাজেই করে না।’

পাপিয়ার মুখে চাচির এতো প্রশংসা শুনে আমরা বিরক্ত হলেও চাচির খুশির কোনো শেষ নেই।

‘আচ্ছাহ মা আমি যাচ্ছি তোমাদের চাচাকে ছাড়াতে। তোমরা তৌসিকে সামলে রেখো। ও যেনো উল্টো’পাল্টা কিছু না করে।’

বলেই চাচি রুম থেকে চলে যায়। আমি পাপিয়াকে একটা খোঁচা মেরে বলি,

‘অভিনয় তো ভালোই করতে পারিস। তা এগুলো কে শিখিয়েছে?’

‘আরে এই সাবজেক্ট টা বাদ দে তো। শুন তোর চাচা কে কিন্তু ওরা এতো তাড়াতাড়ি ছাড়বে না যা করতে হবে আমাদের কেই করতে হবে। তোর ওই অকর্মা চাচিকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’

পাপিয়ার কথা শুনে আমরা সবাই গভীর চিন্তায় পড়ে যাই। হঠাৎ সাবিনা বলে উঠলো,

‘আমরা সবাই যে হারে ওই সাদা বিলাইটারে ভুল বুঝাইছি এতে তো জীবনেও ছাড়বে না। আমাদের উচিত হয়নি এরকম বাজে ভাবে বুঝানোর।’

‘একদম বাজে বকবি না সাবিনা বলে দিলাম। তখন কি এতো কিছু ভাবার সময় ছিলো নাকি? ওই ইনেস্প্যাক্টর টা তো আমাদের মতো পিচ্ছি মেয়েদের কথা বিশ্বাসই করলো না। আজ একটা ছেলে বন্ধু থাকলে আর এতো কষ্ট করতে হতো নাহ।’

পাপিয়ার কথা শুনে আমরা তিনজন ওর দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। স্রুতি বলে উঠলো,

‘সারাদিন কি ছেলে’বন্ধু ছাড়া আর কিছু বুঝিস না? সিরিয়াস সময়েও তোর ছেলে বন্ধু চাই গাধা কোথাকার।’

‘একদম গাধা বলবি না বলে দিলাম, বললে বলবি গাধী।’

পাপিয়ার কথা শুনে স্রুতি একবার জ্ঞান হারিয়ে আরেক বার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হচ্ছে। পরিবেশ টা চেন্জ করতে সাবিনা বলে,

‘এই তৌসি তোর ওই হা’ধা’রা’ম বরটার কি খবর রে?শুনেছি আমরা যখন পুলিশ কে নিয়ে আসছি তখন নাকি তোকে বিয়ে করার জন্য অনেক কান্না করেছে। তোকে ছাড়া নাকি বাঁচবে না আরো কত কিছু।’

‘ওই আ’বা’ল টার জায়গায় যদি কোনো সুদর্শন ছেলে আমাকে বিয়ে করতে আসতো তাহলে আমি কবেই বিয়ে করে ফেলতাম। তোদের আর কষ্ট করে বিয়ে টা ভাঙ্গতে হতো না। তোরা ফ্রি’তে একটা জিজু পেয়ে যেতি।’

‘ইশশশ শখ কত আগে আমি স্রুতি কে বিয়ে দিবো তারপর তোকে বিয়ে দিবো।’

পাপিয়ার কথায় যে স্রুতি রেগে গেছে তা আমরা তিনজন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।স্রুতির কোলে থাকা কুশন টা পাপিয়ার দিকে ছুড়ে মেরে বলে,

‘আমি থানায় যাচ্ছি তোরা আমার সাথে গেলে চল। তোর ওই ইনেস্প্যাক্টর সাহেব কিছুই করতে পারবে না মাইর দেওয়া ছাড়া। শুধু শুধু আঙ্কেল কেনো মাইর খাবে পাত্রপক্ষেরর ও দোষ আছে।’

আমি স্রুতিকে আটকে রেখে বলি,

‘তুই দাড়া আমরাও যাবো। আমি চেন্জ করে আসি।’

‘এতক্ষন থেকে আমি চিৎকার করে বলেছি যে চেন্জ কর তখন তো শুনোস নাই। বিয়ের শাড়ি এইডা এতোই পছন্দ হইছে তোর। তো বিয়ে করোস নাই কেনো শুনি।’

‘আরে আস্তে চিৎকার কর স্রুতি বাড়ির সবাই শুনলে সব বুঝে যাবে। বিয়ের শাড়ি আবার কোন দিন পরি তার ঠিক নাই তাই একটু ইচ্ছে মতো পড়তে দে।’

‘পাগল সারাদিন বিয়ে বিয়ে করে আর সবাই আমার পিছনে পড়ে আছে জিজু জিজু করে।’

‘আচ্ছাহ তোরা বাহিরে যা আমি চেন্জ করছি। ‘

বলেই আমি সবাইকে একপ্রকার জোর করে রুম থেকে বেরর করে দি।’
.
গ্রামের এই আঁকা’বাঁকা রাস্তায় সব সময় সিএনজি বা রিক্সা পাওয়া যায় না তাই হেটেই যেতে হচ্ছে আমাদের। হাটতে হাটতে স্রুতি একপ্রকার বিরক্ত হয়ে বলে,

‘শুধুমাত্র তৌসির জন্য আমার এতো কষ্ট করা লাগে। আমাদের উচিত হয়নি বিয়েটা ভাঙার। বিয়েটা হলে তৌসিও খুশি হতো আর আমরাও পেট ভরে খেতে পারতাম।’

‘এই স্রুতি তুই কবে থেকে এতো খাই খাই করছিস বল তো? অবশ্য বিয়েটা হলে ভালোই লাগতো। একটা বর পেতাম আরকি।’

তৌসির কথা শুনে সাবিনা বলে,

‘যার জন্য চুরি করছি সেই চোর বানিয়ে দিয়েছে দেখলি তো স্রুতি।’

আমি ওদের আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম,

‘অাচ্ছাহ বাবা সরি তোরা আমার অনেক বড় উপকার করেছিস। তারজন্য আমি তোদের সারাজীবন গিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়ে আসবো।’

আমার কথা শুনে পাপিয়া রাস্তার মধ্যে মরা কান্না শুরু করে দিয়েছে।স্রুতি ওর দিকে ব্রু যুগল কুচকে রাস্তার মধ্যে বসে পরে।

‘পাপিয়া আর তৌসি তোরা শুন তোরা আমার সাথে আমার নানার বাড়ি যাবি?’

দুজন একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

‘সত্যিইই স্রুতি!’

‘হ্যা রে ভাই সত্যি। আমি বরং যাই তোদের দুজনের জন্য তো আবার টিকেট বুকিং করতে হবে।’

‘এই তুই কোথায় যাইবি আর কিসের টিকেট বুকিং করবি?’

‘আমার নানার বাড়ি পাবনা তোরা সেটা জানিস। সাথে যে পাগলা গারদ অবস্থিত সেটাও নিশ্চয় জানিস?’

তৌসি অন্য মনষ্ক ভাবে বলেই দিলো যে জানে। পাপিয়া আমার কথা শুনে আমাকে একটা কিল দিয়ে বলে,

‘এরজন্যই তো বলি চুপচাপ রানীর আমাদের জন্য এতো দরদ হলো কোত্থেকে!’

.
.
এরকম দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া করতে করতে আমরা একটা সিএনজি পেয়ে গেলাম। ১০ মিনিটের মধ্যে সিএনজি টা থানার সামনে এসে থামে। আমরা চার’জন থানায় ডুকে দেখি আমার চাচি একটা চেয়ারে বসে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমার চাচির এরকম অভ্যস টা নতুন না। উনি যেখানে যান সেখানেই ক্লান্ত লাগলে ঘুমিয়ে পড়েন। তাই আমরা উনার কাছে না গিয়ে ইনেস্প্যাক্টর ইমনের কাছে গেলাম। ইমন নামক পুলিশ টা কে কোথাও খুজে না পেয়ে একজন দারোয়ান কে ডাক দিলাম।

‘মামা ইনেস্প্যিক্টর ইমন আছে এখানে?’

‘আছে ক্যান আফা আবার কোন খানে কোন অন্যায় হইছে?’

আমাকে স্রুতি কিছু বলতে না দিয়ে উগড়ো মেজাজে বলে উঠে,

‘ক্যান মামা আপনার ওই সাহেবের কাছে কি অন্যায় করা ছাড়া যাওয়া যায় না?’

‘আরে আফা আপনি আঁর লগে এমনে কথা কন ক্যান?’

‘তো জনাব সাহেব আপনার ওই ক্যাবলা মার্কা ইনেস্প্যক্টর কে কি একটু ডেকে দিবেন? ডেকে দিলে আমরা একটু খুশি হতাম।’

আমাকে তৌসি জোর করেও আটকাতে পারছেনা। আমি এক দমে ওই দারোয়ান কে এসব বলে থামলাম।

‘আফা আরো কোন থামেন ক্যান? স্যার তো পিছনেই আছে একদম সরাসরি বলে দেন।’

‘স্রুতি তুই কিন্তু বেশি বলে ফেলেছিস। আমাদের রাগ সব এই দারোয়ান এর উপর উঠাইছস এখন ঠেলা সামলা।’

আমি ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি উনি থমথমে মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
উনি আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে বলে,

‘ইউ আর অ্যান্ডার এ্যরেস্ট মিস স্রুতি।’

এরকম থমথমে কন্ঠে শুনে আমি চুপসে যাই। কি লাটসাহেব রে বাবা কি এমন বললাম আমি? কি বাজে পুলিশ অফিসার লোকটা বিনা কারনে একটা মেয়েকে এ্যরেস্ট করছে। থেমে থাকলে চলবে না আমার তাই বলেই ফেললাম,

‘কেনো আপনি আমাকে এ্যারেস্ট করবেন শুনি?’

‘আপনি যে এতক্ষন আমাকে পাগলের মতো বকেছেন তাই।’

‘আরে আমরা আপনার কাছে একটা কাজের জন্য এসেছি এ্যারেস্ট হতে আসিনি বুঝলেন।’

‘আমি তো আপনাদের কাজ দুপুরেই সমপন্ন করে দিয়ে আসছি। তাহলে এখন কি কাজ?’

আমি স্রুতি কে খোচা মেরে বলি এখন চুপ থাকতে।

‘দেখুন স্যার আমার চাচা নির্দোষ। তাই আমরা তাকে ছাড়াতে আসছি।’

‘এনাফ ইজ এনাফ অনেক হয়েছে আপনাদের ফাজলামো। একবার এসে বলেন আপনার চাচা আপনাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে আর একবার এসে বলেন আপনার চাচা নির্দোষ। আর মিস স্রুতি আমি ক্যাবলা?’

বলেই লোকটা এসে আমাকে টেনে নিয়ে জেলের ভেতরে ডুকিয়ে দেয়। আর পাপিয়া,সাবিনা, তৌসি আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো আমাকে এখানেই ভষ্ম করে দিবে।

চলবে……

#তোমাতেই_আমি
#হালিমা_চৌধুরী
#সুচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here