তোমাতেই অস্তিত্ব আমার পর্ব-৮

0
2250

#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা

৮.

রাতে মনে হলো কেউ আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আমারি পাশে শুয়ে আছে।কারো শরীরের ঘ্রান নাকে লাগছে।যেনো সে আমার চুলে মুখ ডুবিয়ে আছে,তার গরম নিশ্বাস এসে পরছে আমার কানে।আমি শত চেষ্টা করেও চোখ মেলে মানুষটাকে দেখতে পারছি না।রাজ্যের ঘুম এসে জরো হয়েছে আমার চোখে,তাকাতেই পারছি না একদম।সে মানুষটার শরীর মৃদ্যু কাপছে, ফুপাচ্ছে সে,আমার গালে দু ফোটা পানির স্পর্শ অবদি বুঝলাম আমি,তবুও চোখ মেলে তা দেখার সুযোগ পেলাম না আমি।
সকালে ঘুম ভাঙতেই ধরফরিয়ে উঠে বসলাম।রাতের কথা মনে পরতেই গা শিউরে উঠলো আমার।কে এসেছিলো আমার রুমে?পাশ ফিরে দেখলাম মাইশু বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।

-ওই,ওঠ!

-উমম্,আপু আরেকটু।

-মাইর দিবো।ওঠ।দরকার আছে।

-পারতাম না সকাল সকাল তোমার ফাই ফরমাশ খাটতে।

-কিছু করতে হবে না তোকে,কথা আছে।ওঠ।

মাইশু আড়মুড়িয়ে কম্বল টেনে কানে বালিশ নিয়ে আরামছে ঘুমালো।যেনো আমি ওকে ঘুমাতেই বললাম।সকাল সকাল রাগে আমার কান দিয়ে ধোয়া না বের করলে ওর চলছিলো না।আমি ওর কোমড়ে চরে বসে বললাম,

-উঠবি নাকি ওয়াশরুমের পানি আনতাম?

একধাক্কায় ফেলে দিয়ে ও উঠে বসে হাপাতে হাপাতে বললো,

-কি সমস্যা?কাজ না করে শুয়ে বসে খেয়ে হাজার কিলোর নুনের বস্তা হয়ে আমার উপরে আস্ত ভর চাপিয়ে মেরে ফেলবা নাকি?

-তুই আমাকে ইনডিরেক্টলি মোটা বললি?

-না।ডিরেক্টলি মোটকু টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি বললাম।

রাগে গা জ্বলছে আমার।দাতে দাত চেপে সহ্য করে গেলাম।জোরে শ্বাস ফেলে বললাম,

-রাতে ওভাবে জরিয়ে ধরে কাদছিলি কেনো?

-ওই তোমার মাথা ঠিক আছে?ওয়েট এমদাদ আঙ্কেলকে ডাকি?

আমি ওর মাথায় চড় মেরে বললাম,

-রাগাস না আমাকে?বল কি হয়েছে তোর?

মাইশু মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চেচিয়ে বললো,

-আম্মু গো।ভালো মানুষের দিনকাল নাই গো।বড়মেয়েকে অসুস্থ্যতার জন্য ডাক্তার দেখাতে চাওয়ায় তোমার ছোটোমেয়ের মার খেয়ে দিন শুরু হলো গো!!

আমি ওর মুখ চেপে ধরে বললাম,

-ওই চুপ!!!!নইলে আরো মার খাবি।

-আপু,মারিও না আমারে।পায়ে পরি তোমার।আমি রাতে ঘুমাইয়াই কুল কিনারা পাইনা।সকালে তোমার কোকিলকন্ঠের অ্যালার্ম না শুনলে,টেবিল‌ক্লকের অ্যালার্মে আমার ঘুম ভাঙে না।রাত বিরাতে কান্নাকাটি করবো কেমনে?

ওর কথায় যুক্তি আছে।মেয়েটা বড়ই ঘুমপাগলি এটা আমরা সবাই জানি।কিন্তু আমি তো নই।যেই আমি গায়ে কারো ছোয়া লাগলেই টের পেয়ে উঠে বসে পরি,কাল আমাকে কেউ ওভাবে ছুলো আর আমি চোখ মেলেই তাকাতেই পারলাম না?হঠাৎ মনে পরলো আপির ঔষুধগুলোর কথা।হতে পারে ওগুলোর সাইড ইফেক্ট হিসেবে ঘুম বেশি হয়।তাহলে রুমে এসেছিলো কে?নাকি পুরোটাই আমার মনের ভুল?

রাতের ঘটনার ক্লিয়ার কোনো কারন খুজে পাচ্ছি না।অগোছালোভাবেই ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে বের হতেই দেখলাম বাসার সামনের সিসি ক্যামেরা নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে।বিষয়টা বুঝলাম না।এগিয়ে যেতেই দেখলাম আব্বু দাড়িয়ে সেদিনের সিয়াম নামের লোকটার সাথে কথা বলছেন।লোকটা ফর্মাল ড্রেসে উনার গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আব্বুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।আমাকে দেখেই‌ গাড়ির জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে ভেতর থেকে একটা কালো সানগ্লাস বের করে চোখে দিলো।আব্বু বললেন,

-সিয়াম যখন এসেছেই,আর রিয়াও বাসায়,আজ একাএকা রিকশায় না গিয়ে ওর সাথেই যাও।ড্রপ করে দিবে ও তোমাকে।

-কিন্তু আব্বু,আমি একা যেতে পারি।

-হ্যাঁ,জানি।কাল থেকে একাই যেও।আজ যখন ও এসেছেই,যাও ওরই‌ সাথে।

-উনার সাথে…

আব্বু গম্ভীরভাবে বললেন,

-যাও।

আমি আর কথা বাড়ালাম না।চুপচাপ গাড়িতে চরে বসলাম।সিয়ামও দাত কেলিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গেলো।আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

-সিটবেল্ট লাগাতে পারো?

-হ্যাঁ,কেনো?

-ন্ না মানে,বেশিরভাগ মেয়েরাই পারে না।আর তুমিতো গাড়িতে চলাফেরা করো না এজন্য আর কি।

বেশিরভাগ মেয়ে বলতে যে ফিল্মের নায়িকাদের বুঝাইছে তা আমি জানি।মুখ ফুটে বলেই ফেললাম,

-তো চলাফেরা না করলে জানবো না এমন কোন শাস্ত্রে লেখা?আর বেশিরভাগ মেয়ে মানে?আমাকে কি হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো মনে হয় আপনার?

উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-ন্ না না।তা কেনো,এমনি বলছিলাম।

বলে তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।রাস্তায় ননস্টপ রেডিওর মতো ওই লোকের বকবকানি শুনে আমি ক্লান্ত।ভার্সিটি আসতেই গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি করে নেমে চলে আসার সাথে সাথেই নিলু দৌড়ে এলো।আমি হেসে ওর হাতে বিশ টাকা ধরিয়ে দিলাম।সিয়ামও গাড়ি থেকে নেমে আসলেন।নিলুকে দেখে বললেন,

-কি‌ ছোট বাচ্চা!এভাবে ইনকাম করতে হচ্ছে?এই নে।

বলে একটা পাঁচশ টাকার নোট ওর দিকে বাড়িয়ে দিলেন।নিলু টাকাটা না নিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি বললাম,

-ছোট বলেও যে আত্মসম্মান থাকবে না ওর এমনটা কিন্তু নয়।যদি ফুল কেনেন তবেই টাকা নিবে ও,সেটাও দামের বেশি না।

উনি বেশ কয়েকটা গোলাপ ওর ঝুড়ি থেকে নিয়ে আমার দিকে ধরে বললেন,

-নাও তবে।

উনার হাবভাব আমার আগে থেকেই পছন্দ না,আজ ক্লিয়ার হয়ে গেলাম কি চান উনি।আব্বুকে বলতে হবে বিষয়টা।বললাম,

-আমি গাছের ফুল হাতে পছন্দ করি না।

নিলু টাকাটা ফেরত দিয়ে চলে গেলো।সিয়াম কিছুটা রাগী গলায় বললেন,

-তো ওরা ইনকাম করুক এটাও চাও,কেউ হাতে না নিক এটাও চাও!কি চাও কি তুমি আসলে?

-তা আপনাকে বোঝাতে যাবো কেনো?এনিওয়ে,আসছি আমি।লেইট হচ্ছে আমার।

বলেই পা বাড়ালাম ভার্সিটির দিকে।সিয়াম পেছন থেকে ডাক লাগালেন,

-মিথি!

-জ্বী বলুন।

-অচেনা কারো সাথে মিশবে না।

আবারো রাগ তুলে দিলো।কড়া গলায় বললাম,

-সেটা আপনি বলে দিতে আসবেন না।

-তোমার আব্বু বলতে বলেছে।

-উনি আমাকে তাহলে ডিরেক্টলি বলতেন।নিজের কথা আব্বুর বলে চালাতে আসবেন না।মাইন্ড ইউর লিমিটস্।

রাগে ফুসতে ফুসতে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকলাম।কিছুদুর হাটতেই,

-এইযে ফ্রেশার!!!

আমি ঘুরে দাড়ালাম।কয়েকটা ছেলে দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।বুঝলাম র‍্যাগিং এর পাল্লা।মাইশুর সাথে সকালটা ওভাবে শুরু করে দিনটাই মাটি আমার।বললাম,

-আমি সেকেন্ড সেমিস্টার।ফ্রেশার নই।ক্লাস আছে।একটু তাড়াতাড়ি বলুন কি বলবেন।

-আয়হ্যায়!!!এতো বেশ কথা বলে।তো কি হয়েছে একটু পুরোনো হয়েছো?

আরেকজন বললো,

-দেখনা দেখনা,আবার তাড়া দিচ্ছে।ক্লাস আছে ওর।

ওরা হোহো করে হাসতে লাগলো।বিরক্তি নিয়ে সামনে এগোতেই একজন পথ আগলে দাড়িয়ে বললো,

-নট নাও!আমরা এখনো যেতে বলি নি।

আমি কিছু বলার আগেই,

-তবুও ও যাবে।

পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখি আরুর ভাইয়া মিটমিটয়ে হাসছে।পাশেই আরু দাড়িয়ে।ও নিজেও হাসছে।আমার সামনের লোকটা অবাক হয়ে বললো,

-আপনি ভাই?ভার্সিটিতে?

উনি সানগ্লাস খুলে এগিয়ে এসে বললেন,

-আসলাম।তোদের খবর নিতে।চিনলি আমাকে?অবশ্য এতো তাড়াতাড়ি চেহারা ভুললে চলে?

আমার দিকে তাকিয়ে বললো কথাগুলো সে।ওই লোকটা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

-সরি ভাই,ভুল হয়ে গেছে।

-ইটস্ ওকে,এসব ছেড়ে পড়াশোনা কর।

লোকটা ঘাড় দুলিয়ে বললো,

-জ্বী ভাই।

এই লোকটা বরই আজব একটা লোক।ভয় দেখানোর সময় এমনভাবে ভয় দেখায় যে সবাই ভয় পেতে বাধ্য।কিন্তু ওরা এতো সহজে মেনে নিলো?যেভাবে বললো,মনে হয় চেনে উনাকে।

-কিরে মিথি,চল যাই।

-হুম?হ্যাঁ,চল।

আরুর সাথে চলে এলাম।ওর ভাইয়া ওখানেই ঠায় মেরে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে গেলো।ফার্স্ট ক্লাস শেষে বেরোতেই মালু,উর্বি,রায়হান তিনটাই আসলো।আরুও ছিলো আমার সাথে।মালুর হাতে চারটা আইসক্রিম। মালু একটা আইসক্রিম আমার দিকে বারিয়ে বললো,

-নে ধর!গলে যাচ্ছে,তাড়াতাড়ি শেষ কর।
বলতে বলতে বাকি আইসক্রিমগুলো সবাইকে দিলো।

-এটা…

-আরেহ,তোর চিরকুটের কথা শোনার জন্য গিফট্।

রায়হান বললো,

-মিথির উছিলায় পেটপুর্তি করছিস,আমারটা কই?

-আবে কিপটার দোকানদার,কোনোদিন খাইয়েছিস যে খেতে চাচ্ছিস?তুই আদমশুমারির বাইরে।

ওরা সবাই হাসলো।আরু বললো,

-উই ক্যান শেয়ার!

আমরা বড়বড় করে ওর দিকে তাকালাম।ও কিছুটা চমকে গিয়ে বললো,

-ন্ না মানে,উই কান্ট শেয়ার।কিনে আনো তুমি রায়হান।

রায়হান চলে গেলো।আইসক্রিম পেয়ে আমার খুশি দেখে কে।তারমানে রিয়াপি জানে আমি ঠিকমতো মেডিসিন নিয়েছি,এজন্য মালুর কাছে এটা দিয়েছে। কিন্তু ও নিজে দিলো না কেনো?

-আপি আসলো না কেনো?

-ও আসবে কেনো?

-তাহলে…

-ও হ্যা,শোন,চিরকুট আইসক্রিম,মেডিসিন এসব নিয়ে আপিকে কিছু বলবি না।রাগ করবে।

-এতে রাগ করার কি আছে?

-সেটা আমি কি করে বলবো?কারনটাও জিগাবি না।

বিষয়টা বুঝলাম না।তবে আপি যদি বারন করে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই কারন আছে।চুপ থাকাই ভালো। মালু বললো,

-কিরে মিথি?কাল তুই হাওয়া হয়ে গেলি কেনো?

-বাজে বকবি না একদম,নিজেরাই লাপাতা থেকে আমাকে বলতে আসছে।

উর্বি বললো,

-আরে আরে,তা কিভাবে?তোকেই তো ক্লাস শেষে খুজে পেলাম না।

-নাটক ছাড়বি?তোরাই না আমাকে ছেড়ে চলে গেলি আরুর ভাইয়ার আলাদা বচন শুনতে।

কথাটা বলা শেষ হতেই মনে পরলো আরুও ওখানে দাড়িয়ে।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।না জানি কি কি শুনাবে।ওদের সবারই তো তার সাথে আবার বেশি ভাব।রায়হান বললো,

-তোমার ভাইয়া এসেছিলো আরু?

আরু কিছুটা লজ্জা লজ্জা পেয়ে বললো,

-হ্যাঁ,আজও এসেছিলো।আমাকে ড্রপ করে দিয়ে অফিস গেছে।

-মালু,উর্বি,তোদের সাথে আমার কথা আছে।

-হ্যাঁ,বল না?

আমি দুটোকে টেনে একটু দুরে নিয়ে আসলাম।আরু আর রায়হান ওখানেই দাড়িয়ে।

-মালু,কাল আরুর ভাই তোদের কি বললো রে?

মালু ইয়া বড় এক হাসি দিয়ে বললো,

-উনার ভালোবাসার কথা।

আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম ওর দিকে।ও চার বছর হলো কাজিনের ফ্রেন্ড আবির ভাইয়ার সাথে রিলেশনশিপে আছে,ওই লোকের সাথে আবার ভালোবাসার কিসের কথা?উর্বিও হাসছে।মালু বললো,

-কি হলো?ওভাবে তাকিয়ে আছিস যে?

-উল্টাপাল্টা কথা ছাড়,উর্বি তুই বলতো?

-উল্টাপাল্টা কথা হতে যাবে কেনো?উনার কি ভালোবাসা থাকতে পারে না?এতো হ্যান্ডসাম,ড্যাসিং,গুড লুকিং একটা লোক,থাকতেই পারে।

-তা থাকতেই পারে তবে তোর সাথে কি?

-কেনো?তোকে বলা উচিত ছিলো?

আমি রেগে ওদের দিকে তাকালাম।ওরা দুজনেই বত্রিশ পাটি দাত বের করে রাক্ষুসীর মতো হাসছে।আরু এগিয়ে এসে বললো,

-নট ফেয়ার মিথি,এতো হাসির কথাতে আমাকে থাকতে দিলি না তুই!কি হয়েছে রে উর্বি?

আমিও দাত কেলিয়ে বললাম,

-একজনের বফ সুদুর অন্য বিভাগে,আরেকজনের কপালে তো নাইই।তাই ক্লোজআপের স্পন্সরশিপ নিছে ওরা।দাত দেখানোও হবে,কাছে আসার পাব্লিকও খুজে পাবে।

আমার কথায় আরু রায়হান হাসছে,এবার ওই দুটোর চেহারা দেখার মতো।উর্বি বললো,

-আমাদের হাসি নিয়ে তুই এভাবে বললি মিথি?

-তো তোরা কি চাস?রানু মন্ডলস্ সুরেলি সং এর সাথে তুলনা করি?

ওরা দুজন আবারো গাল ফুলালো।আর কিছু বললো না,জানে কিছু বললে আমি আরো শুনিয়ে দেবো ওদের।আরু হাসতে হাসতেই বললো,

-জানিস মিথি,তোর কথাগুলো যতবার শুনি ততবারই মনে হয় ভাইয়ার সামনে দাড় করিয়ে দেই তোকে।তোর কথায় একমাত্র ওই ফুলস্টপ লাগাতে পারবে।

উর্বি বললো,

-হুম,আরমান ভাইয়া ইজ দ্যা বেস্ট।

মালু বললো,

-হ্যাঁ রে,এতোটা পারফেক্ট পারসোনালিটির মানুষ খুব কম হয়।উনি তো…

ওরা নাকি আমার বান্ধবী!আমাকে পচিয়ে এমন একজনের গুন গাচ্ছে যাকে দুচোখে দেখতে পারি না আমি।কিছুটা রাগী গলায় বললাম,

-তো আজ এই টপিকেই তোদের প্রেজেন্টেশন আছে নাকি?

উর্বি হেসে বললো,

-থাকলে তো ভালোই হতো,গবেষনা করতে গিয়ে যদি একটু আশার আলো পেতাম!

ওরা হাসলো আবারো।কিন্তু আমি কোনো মানে বুঝলাম না।মালু বললো,

-একদম ঠিক বলেছিস।আই উইশ সিঙ্গেল থাকতাম আর থাকতো!

উর্বি বললো,

-দুঃখের কথা আর কি কইতাম বইন?ভালো পোলাগুলান আগে থাইকা বুকড্ থাকে।আবির ভাইয়া,রায়হান বাদর,এখন আরমান ভাইয়া।

ওদের কাছে আরমান সাহেবের গুন শুনে মনে হচ্ছিলো বেশি বলছে ওরা,আবার এটাও মনে হয়েছিলো মানুষটার পারসোনালিটি আসলেই ওভাবেই বলার মতো নয় কি?কিন্তু উর্বির শেষের কথাটা শুনে কেনো যেনো লাগছিলো।বুকড্ মানে?উনার লাইফে কেউ আছে?খুব ভালোবাসেন উনি তাকে?আচ্ছা,মেয়েটাতো তাহলে দেখতে খুব সুন্দরী হবে!আরুকে বলবো? নাহ্!আমি এসব কেনো ভাবছি?ইয়া আল্লাহ্,রহম করো।এসব ভাববো না আমি।উনাকে কেনো,কাউকে নিয়ে না।প্রেম ভালোবাসা তো আমার সিলেবাসের বাইরে!

আরুকে পৌছে দিয়ে অফিস যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরে আরমান।ক্যাম্পাসে থাকতেই মনে পরলো রাতের কথা।জানালা দিয়ে রাখা চিরকুটে যে ওয়াদা করে এসেছে ও,আইসক্রিম খাওয়াবে,সেটা একদমই ভুলে গেছে ও।তাইতো মালুকে দিয়ে কাজটা হাসিল করালো।ওদের আগেরদিনই প্রায় সবটাই বলেছে ও,মিথির সুস্থ্যতার জন্য ওরাও রাজি হয়ে যায় ওর কথায়।
ঔষুধগুলো ড.এমদাদের কাছ থেকেই নেওয়া।মিথির ফ্যামিলি ডক্টর যে আরমানের মায়ের দুর সম্পর্কের ভাই হয় তা কেউ জানতো‌ না।মিথির সবটাই উনি জানতেন,তবে আরমানের নাম ছাড়া অন্য কিছু না।সম্পর্কের দোহায় দিয়ে আরমান ইমোশনালি ব্লাকমেইল করে উনাকেও মানিয়ে নেয়,মিথিকে সুস্থ্য করতে।মাহবুব আলম যে মিথির ওষুধ ঠিকমতো দিচ্ছিলেন না এটা জেনে আরমান রিয়াপিকেই ইউজ করার কথা ভেবেছিলো।মিথির ঘুমের প্রয়োজনটা বেশি,তাই আরমান ইচ্ছা করেই মামুকে বেশি কড়া ঘুমের ওষুধ দিতে বলেছিলো।এজন্যই কাল রাতে ওভাবে ঘুমিয়েছে ও।

“আ’ম সরি,তোমার জন্যই তোমাকে কড়া ওষুধ দিয়েছি।তোমার জন্যই তোমার বাসাতেই বাজেভাবে ঢুকতে হয় আমাকে।কি করবো বলো?এই দুরত্ব যে আমার সহ্য হয় না।জ্বালিয়ে শেষ করে দেয় আমাকে।তোমায় বুকে জরিয়ে সেই জ্বালার আগুন যে চোখের পানি হয়ে ঝরে আমার।শান্তি পাই আমি।”
কথাগুলো বলে একটা জোরে শ্বাস নিয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো ও।
কাল রাতের পর এখনো আদিবের সাথে না দেখা হয়েছে,না কথা!আসলে অফিসে এসেই কাজে আটকে গিয়েছিলো ও,তাই সময় করে উঠতে পারেনি।কিছুটা কাজ গুছিয়ে কল করলো আদিবকে।

-হ্যাঁ,বল।

-কিরে কই তুই?

-ঘুমোচ্ছি।কেনো?

-এখন ঘুমাস মানে?কখনকার ঘুম?এখন কেনো?

-কাল রাতে যে কাজটা করেছি তারপরও তোকে বলতে হবে কেনো?

আরমান ঠোট টিপে‌ হাসলো।বললো,

-খামের চিঠিতে কি কি ছিলো?আর দাদুমশাই কতক্ষন ছিলো ও বাড়িতে?

আদিব উঠে বসলো এবার।কাল রাতে রিয়াদের বাসায় চুলদাড়ি লাগিয়ে বুড়ো সেজে যায় সে,হাতের চিঠিতে লেখে নিয়ে যায় একটা সুইসাইড নোট।ওর নাতি নাকি রিয়াকে না পেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে।যদিও রিয়ার বাবা হ্যান্ডেল করে নিয়েছিলো ব্যাপারটা,তবুও আদিবের জোরাজুরিতে শেষ অবদি ওকে বাসায় নিয়ে হাজির হয়।এরপর রিয়া পুলিশের মতো একটার পর একটা যেসব প্রশ্ন করে তা শুনে‌ ঘাম বের হয়ে‌ যায় আদিবের।ওরা তো থানার জন্য বেরিয়েও‌ যাচ্ছিলো।অতি কষ্টে ওদের আটকে রিয়াকে বলে আসে বাসায় থাকতে,নাতি সুস্থ্য না হলে নাকি সেই পুলিশ নিয়ে আসবে।শেষের কড়া কথায় কিছুটা নুইয়ে যায় ওরা।হাফ ছেড়ে বেরিয়ে আসে আদিব।
সবটা শুনে আরমান হাসছে।আদিব জোরে করে নিশ্বাস ফেলে বললো,

-তারপর বল,পুলিশ আর সিসি ক্যামের কি খবর?

-আরেহ্ মিস্টার আলমকে শুধু বলেছি যে ওই বাসার পাঁচটার একটা ক্যাম আমার,তাতে রাতেই তিনটে খুলে ফেলেছে।একটাবার চেকও করেনি।অবশ্য ডিল হয়েছে আমার উনার সাথে,রিল্যাক্স উনি।এজন্য পুলিশও আসেনি আজ।

-কিসের ডিল আরমান?

-অসুস্থ্য মিথিকে না জ্বালানো,না নিয়ে আসার ডিল।

-তবে সুস্থ্য হলে?

বলেই আদিব হাসলো,সাথে আরমানও।

-বিনিময়ে উনি কি দিচ্ছেন তোকে?

-পরে বলবো।

-কিন্তু আরমান…

-জোর করিস না,বলেছি বলবো,তখন বলবো।আর আমার কিছু হবে না,ডোন্ট ওয়ারি।রাখছি হুম?বাই।

হতাশার নিশ্বাস ফেলে ফোন রাখলো আদিব।কি এমন চেয়েছে ও যার জন্য মাহবুব আলম বিশ্বাস করে নিলেন যে আরমান মিথিকে ছাড়বে?এমন কি কিছু থাকতে পারে?কোনো কিছুর অফারে কি মিথিকে ভুলতে পারে আরমান?নাহ্!কখনোই না।যদিও এমনটা হবে না,তবে মাহবুব আলম রাজি হয়ে গেছেন কেনো?যাচাই করতে?নাকি আরমানের চাওয়া জিনিসটার গুরুত্ব পরখ করতে?নাকি ওর কোনো ক্ষতি করতে?

#চলবে…

®

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here