তোমাতেই অস্তিত্ব আমার পর্ব-৪

0
3229

#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা

৪.

আজ চারমাস পর বাবার অফিসে ঢুকলো আরমান।কেবিনে ঢুকে চারপাশটাতে চোখ বুলাচ্ছে ও।ওর বাবার হাতে এই জামান ইন্ডাস্ট্রি অনেকদুর এগিয়েছে।আফরোজ জামান চেয়েছিলেনই শুধু তার সন্তানদের সুখ,তাই রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ব্যবসাকে এতোদুর দাড় করিয়েছেন।আজ এতোদিন পর এখানে এসে আবারো এসব কথা মনে পরছে আরমানের।এসেছিলো এখানে,প্রথমবার ছ মাস আগে।বাবার হাজারবার বলা সত্ত্বেও আসতো না ও,যদি না মিথি ওর জীবনে আসতো।দমকা হাওয়ার মতো এসে সবটা উল্টোপাল্টা করে দিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলো,কিন্তু উপরওয়ালা হয়তো অন্যকিছুই চায়।এবার আরমানের উপর হয়তো কিছুটা দয়া হয়েছে তার।ভালোবাসার মানুষকে হয়তো কেড়ে নিবে না,এজন্যই ফিরিয়ে দিয়েছে।এবার আরমানও ছাড়বে না,সবটা দিয়ে আগলে রাখবে ওর ভালোবাসাকে, আপনজনকে।

-স্যার আপনার জন্য কিছু আনাবো?চা বা কফি?

আরমান পিছনে ফিরে মাঝবয়সি এক লোককে‌ দেখতে পেলো।ও চেনে উনাকে।উনি ওদের‌ গ্রুপের কনসাল্টেন্ট,মি.কাদের।আরমান মেকি‌ হেসে‌ বললো,

-নো নো,ইটস্ ওকে।ব্যস্ত হবেন না,কিছু লাগবে না আমার।আদিব আসেনি এখনো?

-হ্যাঁ,উনি আগেই এসে আপনার কেবিন চেক করে গেছেন।মাত্র বেরিয়েছেন মিটিং শিডিউল জানতে।আসলে এমডি ছাড়া এসব ডিটেইলস্ জোগার করা,গুছিয়ে রাখা,হ্যান্ডওভার…বোঝেনই তো।

আরমান মাথা নিচু করে বললো,

-জ্বী।অনেকটায় ঝামেলায় ফেললাম বুঝি আপনাদের!

ওর কথায় কাদের সাহেব অবাক হলেন।উনি জানতেন ছেলেটা বদমেজাজি,গুন্ডা টাইপ।তাই‌ ভেবে রেখেছিলেন কোনোভাবে দোষ দেখিয়ে সহজেই অফিসছাড়া করানো যাবে একে,তারপর আদিবকেও সরিয়ে নিজেই রাজত্ব করবেন।ইচ্ছা করেই বাকা কথা বললেন ওর সাথে,কিন্তু ছেলেটা চুপচাপই রইলো।আগেরবার তো‌ কাজে দেয়নি এসব ছোটখাট প্লান,তবে শকও তো কম দেয় নাই,মেইনপয়েন্টে লাগিয়েছিলো।এতে তো এই অল্পবয়স্ক ছোকড়ার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা!শুনেছিলোও তো এমনটাই,ও নাকি কানাডা চলে গেছে।তাহলে আবার এখানে কেনো?ভাব ভঙিমা দেখে বোঝাই যাচ্ছে অফিসে ঘাটি গারতেই এসেছে।

-মিস্টার কাদের?হ্যালো??

-হু,জ্বী,জ্বী স্যার কিছু বলবেন?

-অনেককিছুই তো বললাম,এবার আপনিই বিষয়গুলো দেখুন।

-স্যার আরেকবার যদি একটু বলতেন,ইয়ে একটু অন্যমনস্ক ছিলাম আর কি!

আরমান ভ্রুকুচকে বললো,

-আপনার মতো এতো ইম্পর্টেন্ট লোক যদি অন্যমনস্ক থাকে,কোম্পানি তো লসের সাগরে ডুববে মিস্টার কাদের!যাই হোক,অন্যমনস্কতা কে অফিস মনস্কাতে রিফর্ম করুন কেমন?আর আপাতত লাস্ট চারমাসের এক্সপোর্ট,ইম্পোর্টের সবরকমের লেনদেনের হিসাবগুলোর ফাইল আমার টেবিলে চাই।হোপ ইউ গট ইট।

-জ্বী স্যার।

-ইউ‌ মে কাম নাও।

কাদের সাহেব মাথা নেড়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন।আরমান একটা টেডি স্মাইল দিয়ে টেবিলে উপর দুহাত রেখে বললো,

-বয়সটা আর অভিজ্ঞতাটা আপনার থেকে কম হতে পারে কিন্তু বুদ্ধি আর বিবেচনা বোধ এতুটুকু কম না আমার।আব্বুকে অতিসহজে হাত করে রেখেছেন এমন ভুলধারনা নিয়ে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখে চলেছেন মিস্টার কাদের?আব্বু আপনার উদ্দেশ্য বুঝেই আমাকে আরো অফিস আসতে জোরাজুরি করতো।কিন্তু আমি তো আছি অন্য ভাবনায়,আপনার পাওয়ার অফ থিংকিং যেখানে আটকাবে,আই উইল স্টার্ট ফ্রম দেয়ার।শুধু একবার মিথি আমার কাছে চলে আসুক,সবটা আমার প্লানমতো মিটে যাক,আই উইল মেক শিওর যেনো আপনি দুনিয়াতেই জাহান্নাম দেখে যান।

এরমধ্যে ফোন বেজে ওঠে আরমানের।কানাডা থেকে বাবার কল।ও অফিসে আসতেই সে খবর পৌছেছে তার কানে,তাই কল করেছেন।অন্যসময় হলে আগের মতোই কেটে দিতো ফোন,কিন্তু সময় পাল্টেছে।মিথি সবটা পাল্টে দিয়েছে,ফিরে এসেছে ওর কাছে।চার মাস পর এই ব্যাক্তির সাথে কথা বলবে আরমান।রিসিভ করে চোখ বন্ধ করে বললো,

-সরি আব্বু,সরি ফর এভরিথিং।প্লিজ চলে আসো।অনেক মিস করি তোমাকে।এখন তো প্যান্ডেমিকও নাই,চলে আসোনা।কাল আম্মুকে কথা দিয়েছি,আজ তোমাকেও বলছি,আমি সেরকমই হয়ে যাবো যেমনটা তোমরা চাও।চলে আসো না আব্বু।

আরমানের কথায় কাদতে লেগেছেন জামান সাহেব।কষ্ট না,খুশি!চোখ মুছে বললেন,

-বৌমার জন্য কি আনবো?

কথাটা শুনে কলিজা কেপে উঠেছে আরমানের।জামান সাহেব বললেন,

-আমি জানি,এতোবড় সুখবরের কারন মিথি ছাড়া কেউ না।তারমানে তুই ওকে খুজে পেয়েছিস!আমার একমাত্র ছেলের বউ হবার যোগ্যতাও ও ছাড়া কারো নেই।বল কি আনবো?

আরমান নিজেকে সামলে বললো,

-কবে আসছো তুমি?

-পরশুর ফ্লাইটই নিবো।দেরি করবো না,আগেরবার এজন্য অনেককিছু হারিয়েছি।

-বেশ,সাবধানে এসো।

-হুম,তুইও সাবধানে থাকিস।

বাবার সাথে কথা বলে ঠোটের কোনায় হাসি ফুটলো আরমানের।অফিসের এতোদিনের হিসাবগুলোতে চোখ বুলিয়ে, গরমিলগুলো ধরে সবটা আদিবকে বুঝিয়ে দেয় ও।বেরিয়ে পরে গাড়ি নিয়ে,গন্তব্য ড.এমদাদুল হকের বাসা।ওখানকার হিসেব সেরে বাসায় ফেরে আরমান।

-আম্মু ,আম্মু?আরু?কই তোমরা সবাই?

বাসায় ঢোকার সময় আরমানের এমন গলার আওয়াজ শুনে মা মেয়ে দুজনেই অত্যন্ত অবাক হলো।আরমান এগিয়ে এসে বললো,

-আম্মু জানো,আজ অফিসে আব্বুর সাথে কথা হয়েছে।পরশুর ফ্লাইটে আসছে সে।

মিসেস জামান ছলছল চোখে ছেলেকে দেখছেন।চারমাস পর আবারো সেই কাঙ্ক্ষিত রুপ তার।আটবছর পর আরমানের বাবা ফিরবে!আরমানের সাথে কথা শেষে মি.জামান ওদের সাথেও কথা বলেছেন।এতো খুশি কই রাখবেন মিসেস জামান?সইবে তো?

-তুই অফিস গিয়েছিলি ভাইয়া?

-তো কই যাবো?তোর মতো তো আমার মোবাইল নিয়ে পরে থাকলে দিন কাবার হয়না আরু।

মা মেয়ে দুজনে আরমানকে জরিয়ে ধরে কেদে দিলো এবার।আরমান দুহাতে ওদের জরিয়ে নিজেও দুফোটা চোখের পানি ছাড়লো।এই মানুষগুলোকেও নিজের কষ্টের সাথে কষ্ট দিয়েছে ও,অনুতাপ তো হবেই।কাধের সাথে গালের পানি মুছে ওদের ছাড়িয়ে বললো,

-কাদছো কেনো তোমরা বলোতো?এজন্য কি এসব করলাম?

মিসেস জামান তৎক্ষনাৎ চোখের পানি মুছে বললো,

-নাহ্!কই কাদছি আমরা?এগুলো তো সুখের বর্ষন।আনন্দ অশ্রু।জীবনের প্রাপ্তি।

আরমান মায়ের চোখ মুছে দিয়ে তার দু গালে হাত রেখে বললো,

-তোমাকে আর আব্বুকে দেওয়া কথা আমি রাখবো আম্মু।আগেরবার শুধু বলেছিলাম,তাই উপরওয়ালা হয়তো আমার কাছ থেকে তা কেড়ে নিয়েছিলো।কিন্তু বিশ্বাস করো,এবার আর তা হবে না।আমার লাইফে ঠিক তেমনটাই হবে যেমনটা তোমরা চাও।

আরমানের কথায় হাসি ফুটলো দুজনের মুখে।আরমান আরুর সামনের চুলে টান মেরে বললো,

-কেদেছিস তো আয়নায় গিয়ে দেখ চেহারার কি হাল হয়েছে।একদম পেত্নির মতো দেখাচ্ছে।তোকে বিয়ে দিতে আমার বারোটা বাজবে তা বোঝাই যাচ্ছে।

আরিশা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,

-কি আমাকে পেত্নির মতো দেখতে?বিয়ের কথাও ভেবেছিস তুই ভাইয়া?

-কেনো?তুই বুঝি ভাবিস না?তবে তোর মোবাইলে যে টুংটাং করে ডেইলি গুড মর্নিং ম্যাসেজ আসে তার কি হুম?

-তুই চেক করনা আমার ফোন?আম্মুও জানে ওইটা আমার অ্যালার্ম টোন।তাইনা আম্মু?

মিসেস জামান হেসে বললেন,

-হ্যাঁ,ওইটা তো আরুর অ্যালার্ম টোন।

আরমান গাল ফুলিয়ে বললো,

-আম্মু,তুমিও আরুর পক্ষ নিচ্ছো?আমাকেই পর করে দিলে তো এবার?একা পরে গেলাম তো আমি!

আরিশা হেসে বললো,

-জানোতো আম্মু,এর মানে কি?ভাইয়া ওর টিম মেম্বার চায়।ওর পক্ষের ওকালতি করার জন্য একজনকে দরকার।কি বলো?

আরিশার কথা শুনে মিসেস জামান চুপ করে গেলেন।একধ্যানে আরমানের দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।আরমান মেঝের দিকে তাকিয়ে।আরিশা নিজেও চুপ।মুখ ফসকে এই কথাটা বলা ওর একদমই উচিত হয়নি তা ও জানে।এরআগে এধরনের কথাই ওদের আরমানের কাছে থেকে দুরে সরিয়ে দেওয়ার কারন হয়ে দাড়িয়েছিলো,শুধুমাত্র ওকে মুভ অন করতে বলেছিলো ওরা।পুরোনো কথা মনে করে ওদের সামনের প্রানোচ্ছল আরমান আবারো হারিয়ে যাবে এমনটা ভয় দানা বাধলো দুজনের মনেই।ওনাদেরকে অবাক করে দিয়ে আরমান বলে উঠলো,

-হ্যাঁ,তাইতো!লাগবেই তো!চিন্তা করিস না আরু,তোর ভাবিকেও খুব তাড়াতাড়ি আমার টিমে আনার ব্যবস্থা করছি।

মা মেয়ের মুখে আবারো হাসি।কিন্তু আগের‌ ঘটনাগুলো মনে পরতেই আবারো মুখটা কালো‌‌ হয়ে গেলো দুজনেরই।আরমান মৃদ্যু হেসে বললো,

-এতো ভেবোনা আম্মু,আমার উপর ভরসা রাখো।এবার আর কিচ্ছু উল্টোপাল্টা হবে না,শুধু একটু সময় লাগবে।

মিসেস জামান অবাক চোখে তাকালো।আরমান সবটা খুলে বললো ওদের।ওর কথা শুনে ওরা দুজনেও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।অনেকটাই ঘটে গেছে ওর সাথে এতোটুকো বয়সে।আরমান বললো,

-চিন্তা করো না আম্মু,ও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাবে।আমি বলছি তোমাকে।

-হ্যাঁ বাবা,তুই তাড়াতাড়ি সবটা ঠিক করে ওকে নিয়ে আয়।আমার ঘরটাকে ভরিয়ে দে,নিয়ে আয় ওকে।

-হ্যাঁ আম্মু,আরেকটু সময়ের অপেক্ষা শুধু।নিয়ে আসবো ওকে।খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবো।

আরিশার দিকে তাকিয়ে বললো,

-ভাবিকে ওয়েলকাম করার বন্দোবস্ত কর?ভার্সিটিতে এখন থেকে তোকে আমি ছাড়তে যাবো।

আরু খুশিতে ওকে জরিয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।আরমান মুগ্ধ চোখে শুধু দেখছে,ওর সুখে ওরা কতোটা সুখি হয়!!!

রিয়াদের বাসার বসার ঘরে দম মেরে বসে আছে কবির রহমান,মাহবুব আলম,রিয়া,আর ওর আম্মু।গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোতে অন্তত মিথির ভালো হবে না এমন ভালোমতোই জানেন তারা।কবির রহমানের চেহারায় শুধু অপরাধবোধ।রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-তুমি কি ওকে সবটা বলেছো?

রিয়া মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো,

-হ্যাঁ আব্বু,সবটাই বলেছি।

-কেনো?কেনো বললে?দেখতাম গুন্ডাটা কি করতে পারে।তুমি কেনো ওকে বললে সবকিছু?

কবির রহমান একপ্রকার গর্জে উঠলেন।রিয়া জিহ্বা দিয়ে ওর ঠোট ভিজিয়ে বলতে শুরু করলো,

-আব্বু,আপনি জানেন আরমান কেমন ছেলে।আর মিথির ব্যাপারে ও কতোটা সেন্সিটিভ।একপ্রকার সাইকো যাকে বলে।আপনাকে ও যেকোনোভাবে কষ্ট দিতো আমার সামনে তা আমি কি করে দেখতাম?আমার দ্বারা তা সম্ভব হতো বলুন?তাই আমি আর দুবার ভাবিনি ওকে সবটা বলতে।

রিয়া এবার মাহবুব আলমের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আর আঙ্কেল আপনি?আপনার এখানে আসার ডিসিশন এতো তাড়াতাড়ি নিতে হলো কেনো?চারটা মাস,আরো কয়েকদিন দেখতেন না হয়!এখানকার সব খবরাখবর কনফার্ম না করেই এখানে চলে আসলেন কি করে?

মাহবুব রহমান অনুতাপের স্বরে বললেন,

-হ্যাঁ,রিয়া দোষটা আমারি।আমি স্বীকার করছি।দু তিনজনের কাছে ওর কানাডা যাওয়ার কথা আর ওর এভাবে গায়েব হয়ে থাকা,মিথির ক্লাসও মিস যাচ্ছে এসব ভেবে আমিই এতোবড় ভুলটা করে ফেলেছি।আমার দোষে তোমাদের ফ্যামিলিটাও এসবের ঝামেলায় পরছে।

কবির রহমান এগিয়ে গিয়ে মাহবুবুর আলমের হাত দুহাতে ধরে বললেন,

-এভাবে কেনো বলছো তুমি মাহবুব?মিথি তো আমারো মেয়ে।আমরা যা বলছি তা শুধুমাত্র ওর চিন্তা করেই।আমাদের ইনভল্ব থাকা নিয়ে এতুটুকো চিন্তা করতে হবেনা তোমাকে।

রিয়ার আম্মু এগিয়ে এসে বললো,

-জ্বী ভাইজান।মিথি আমার কাছে রিয়ার থেকে এতোটুকোও কম না।বরং আরো বেশিই আদরের।যে মেয়েটার হাসির শব্দে দু বাসা সবসময় মেতে থাকতো,তার জন্য তো এমন জীবন না।এসব ডিসার্ভ করে না ও।

মাহবুব আলম ছলছল চোখে বললেন,

-রিয়া মামনি,এই একমাসে ওকে দুনিয়া থেকে আড়াল করে রেখেছিলাম,না মোবাইল,না কোথাও বেরোনো,না কাউকে বাসায় আসতে দিয়েছি,টিভিটা অবদি নষ্ট বলে সরিয়ে রাখছি।পৃথিবীতে থেকেও ঘরবন্দি এলিয়েনর মতো রেখেছি ওকে,সবকিছু থেকে দুর।তিনমাস এ শহরের বাইরে হসপিটালাইজড্ থেকে জ্ঞান ফেরার পর ও আবারো পাখির মতো উড়তে চেয়েছিলো,আমি ওকে খাচায় পুরে রেখে দিয়েছিলাম।কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা করতে পারলাম না।আজ মিথি লুকিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছিলো।

কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন উনি।কিন্তু রিয়া কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেছে।বললো,

-কিহ?মিথি বাসার বাইরেও বেরিয়েছিলো?একথা আপনি আমাকে এখন বলছেন?কি কি ঘটেছে ওর সাথে রাস্তায়?তারমানে কি আরমানের সাথে দেখা….

-আমি জানি না রিয়া।কি কি ঘটেছে ওর সাথে।কিন্তু বাসায় এসে অনেক প্রশ্ন করেছে আমাকে।এই একমাসে শুধু সবটা দেখে ওর আম্মুকে বলতো।আমি কষ্ট পাবো বলে কিচ্ছু বলেনি আমাকে।কিন্তু কাল বাসায় ফিরে আমার কাছে সবটা জানতে চেয়েছে ও।ওর আম্মু ওর গায়ে অবদি হাত তুলেছে,রুমে আটকে দিয়েছে।মেয়েটা আমার কাদতে কাদতে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।সকালে আবার ডক্টর ডেকে এনেছিলাম ওকে দেখাতে।আমি এ বিষয়ে কথা বলতেই তোমার কাছে এসেছিলাম।জানি,তুমি ছাড়া এখন ওকে কেউ সামলাতে পারবে না।কিন্তু তোমাদের সাথে যা ঘটেছে এতে তো মনে হচ্ছে সবটা বোধহয় আমার হাতের বাইরে চলে গেছে মামনি।আরমান ওকে….

মাহবুব আলম চুপ রইলেন।বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে রিয়া বললো,

-মিথিকে সবটা জানাতে হবে আঙ্কেল।

ওর কথায় উপস্থিত সকলে আটকে গেছে।রিয়া নিজেও জানে ও অনেক ভয়ানক একটা কথা বলে ফেলেছে।আবারো বললো,

-হ্যাঁ,এবার ওকে সবটা জানাতেই হবে।একবার যখন ও জানতে চেয়েছে,তখন ও আর চুপ করে থাকবে না।যেভাবেই হোক সবটা জানবে,সেটা যার কাছ থেকেই হোক না কেনো।আর তখন আমাদের প্রতি ওর যে অবিশ্বাস তৈরি হবে তা ওর সেইফটির জন্য একদমই ভালো হবেনা।

-কিন্তু রিয়া,ওই গুন্ডাটা…

-আঙ্কেল,আরমান আর যাই করুক,মিথির কোনো ক্ষতি করবে না।আর মিথি না জানলে বিষয়গুলো আরো কম্প্লিকেটেড হয়ে যাবে। এটা আমিও জানি আপনিও ভালোমতোই জানেন যে,আরমান চাইলে কিন্তু অনেক বড়সর ব্লান্ডার করতেই পারতো,কিন্তু করেনি।ও যদি পাল্টে যায় তো…

-ব্যস রিয়া!ওর মতো ছেলে পাল্টানোর নয়।ওর গিরগিটির রঙ আমরা সবাই দেখেছি,তুমিও দেখেছো।তবে?আর রইলো মিথিকে সত্যিটা বলা?বলবো ওকে সবটা।ওর ভার্সিটিও এখান থেকেই কমপ্লিট করাবো।আমিও দেখে নিবো ওই ছেলে কি করতে পারে।

-কিন্তু মাহবুব….

-কোনো কিন্তু নয় ভাই,আমি রিয়াকে নিয়ে এক্ষুনি আমাদের বাসায় যাচ্ছি।প্রয়োজন পরলে রিয়া কিছুদিন ও বাসায় থাকুক।থাকবে না তুমি রিয়া?ভাই আপনি কি বলেন?

-কোনো সমস্যা নেই,রিয়া থাকবে ওখানে।

বাবার কথামতো লাগেজ গুছিয়ে রিয়া তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে মাহবুব আলমের সাথে বের হলো।উদ্দেশ্য মিথিকে সবটা জানাতে ওদের বাসায় যাওয়া।না জানি বাচ্চা মেয়েটা এই বয়সে এতো বড় সত্যিটা মেনে নিতে পারবে কি না।কি কি বলে মিথিকে কন্ট্রোলে রাখা যাবে তাই ও ভাবতে লাগলো।কতটা বললে মেয়েটা সহ্য করতে পারবে?সবটা শুনতে পারবে তো ও?

#চলবে…

®

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here