তোমাতেই অস্তিত্ব আমার পর্ব-২৭

0
1987

#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা

২৭.

বর্ষনটা আজ একটু বেশিই।যে সময়ের বিকেলটা কোকিলের ডাক আর সোনালী রোদ্দুরে ভরে থাকে,দুপুরের পর থেকে এরকম ঝরোঝরো বৃষ্টি নেমে আসাটা আরমানের এখানে উপস্থিতির মতোই অনাকাঙ্ক্ষিত।ছাদের কার্নিশে পা ঠেকিয়ে দুহাত পেছনে দিয়ে মাথা উচু করে চোখ বুজে ভিজছেন উনি।কতোই না শান্তি পাচ্ছেন যেনো।দরজা খোলার শব্দে তাকালেন আমার দিকে।মানুষটার চেহারার হাল কালকের থেকেও বেশি খারাপ।আকাশী রঙের শার্টটা ভিজে একাকার,আটকে আছে সুঠাম দেহের সাথে। হাতের লোম,মুখের ভেজা দাড়ি আরো মোহনীয় লাগছে।কালো মেঘের অন্ধকারে ফর্সা চেহারার দিপ্তী যেনো বেড়ে গেছে শতগুন।কপালের ভেজা চুলগুলো থেকে টপটপ পানি পরছে,চোখদুটো লাল।বোঝাই যাচ্ছে অনেকক্ষন যাবত ভিজছেন উনি।

তাড়াহুড়োয় ছাতা আনি নি আমি নিজেও।ভিজে গিয়েছি।শাড়ির আচল হাতে পেচিয়েছি সবটা।কেনো এসেছেন উনি এখানে?কিভাবে এসেছেন?খুব কি দরকার ছিলো আসার?আজও কি শুধুমাত্র অন্যান্য দিনের মতো আমাকে শুধু বুঝাতে এসেছেন যে ভালোবাসেন আমাকে?নাকি বলতে এসেছেন?উনি এগোলেন আমার দিকে।মুখের স্নিগ্ধ হাসি বলে দিচ্ছে অনেক কথা জমা পরে আছে ঐ ঠোটের কোনে।বলবেন কি?ভালোবাসেন আমাকে?
হাহ!যদি তাই হয়ে থাকে তবে আপনি ব্যর্থ আরমান।বলার জন্য সময়টা খুজে বের করতে অনেকটা দেরি করে ফেলেছেন আপনি।আমার জীবন অন্য কারো সাথে জরিয়ে গেছে।চাইলেও পারবো না আপনার হতে।আজ শুধু ফিরিয়ে দেওয়ার অবস্থাতে আমি।জীবনে কাউকে,আপনাকে ভালোবাসার অনুভুতিটাও পুর্ন করতে পারলাম না।সুচনাতেই থেমে গেলাম।বাধা পরে গেলাম অন্য সম্পর্কের বেড়াজালে।উনি শান্ত গলায় বললেন,

-শিমুল ফুলের রঙটাকে গায়ে জরিয়েছো?আজও হাতে পেচিয়েছো আচলে?কাজলটা যে লেপ্টে গেছে মিথি।ভালোই হয়েছে।খালি চোখেই তোমার মায়াবী চেহারার আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।দুলটার গায়ে বৃষ্টির ফোটা দেখে হিংসে হচ্ছে বিশ্বাস করো।গলার ওই চিকন চেইনটার প্রতি আরো।কি দুঃসাহস ওর!ছুয়ে দিয়েছে বিউটি বোনের পাশের তিলটাকে!

এভাবেও বর্ননা দেওয়া যায়?আমার বর্ননা দেওয়া যায়?দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।নিজের দিকে একবার তাকিয়ে আজ আবারো তাকালাম ওনার কলারের দিকে।ওটা ধরে চেচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে কেনো এমন করছেন উনি?কি চান উনি?সব কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করছে আমার।কিন্তু আরমানের চেহারা দেখে বাকিসব ভুলে গেলাম।মাথা নিচু করে ধীর স্বরে বললাম,

-চলে যান এখান থেকে।

-চলে যেতে আসিনি।

-কেনো এসেছেন?

-এই‌ বৃষ্টিকে তোমার আমার ভালোবাসার সাক্ষী করতে।

ভালোবাসা শব্দটা বুকে লাগলো একদম।কিন্তু নিজেকে দুর্বল করি কিভাবে?দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না তো নিজেকে।শক্ত গলায় বললাম,

-বাসায় যান।অসুখ করবে।

আরমান কিছুটা এগোলেন আমার দিকে।কিছুটা ঝুকে ফিসফিসিয়ে বললেন,

-আজ আমি বলবো মিথি।বলেছিলাম না তোমাকে,যেদিন আমি বলবো,কেউ থাকবে না আমাদের মাঝে?সে কেউটার মধ্যে তুমিও পরো।শুনতে নয়,শুনাতে এসেছি আমি আজ মিথি।

আরমানের এরকম কন্ঠে হারিয়ে যাই আমি বারবার।আজও এমনটাই হচ্ছিলো।চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি।একটু পরেই নিজের সীমাবদ্ধতা মনে পরলো আমার।চোখ তুলে কড়া গলায় বললাম,

-শুনতে বাধ্য নই আমি।চলে যান আপনি।

-না বলে একচুলও সরবো না।তুমি না শুনে চলে গেলেও না।এভাবেই থাকবো বৃষ্টিতে।

উল্টো ঘুরে দাড়ালাম আমি।জানি না পা বাড়াতে পারবো কি না।তবে সত্যিই আটকে গেলো আমার পা।এভাবে পাগলামোর কোনো মানে হয়?আমি তো জানি কি বলবেন,এটাও জানি কি হবে তারপর।কি করে ওনাকে বুঝাই,এসবের ফল একটাই।বিচ্ছেদ!

-বিচ্ছেদ নয়,ভালোবাসার মিলন!

কথাটা বলে আমার ভেজা চুলে পিছন থেকে হাত লাগালেন আরমান।আমি যেই না হাত দিয়ে ছোবো তখনই,

-এই‌ এই‌ এই!ছুয়ো না।ছাড়া চুল।কোনোমতে গুজেছি,ভেজা বলে আছে একটু,নইলে পরে যেতো।দেখি না তোমাকে!

তার দিকে ঘুরলাম।মাথা থেকে টুপ করে দুটো বেলি ফুল ছাদে পড়লো।মাথায় বেলিফুল গুজে দিয়েছিলেন উনি।ফুলগুলো দেখে আবারো শিহরন বয়ে গেলো শরীরে।আরমানের দিকে তাকালাম।শতশত কষ্টের মাঝেও যেনো ঠোটে এক অমায়িক হাসি ঝুলিয়ে রেখেছেন।কষ্ট?এখনো তো কষ্ট দেইই নি ওনাকে!কিসের কষ্ট এখনি?

-দেখলে তো!পরে গেলো।

-আপনি যাচ্ছেন না কেনো?এভাবে ভিজলে অসুস্থ্য হয়ে পরবেন।নাকি আমিই চলে যাবো?

উনি বাকা হেসে কপালের ভেজা চুলগুলো উল্টে বললেন,

-তা তো তুমি পারবেই না!

বুঝেছি।আমার দুর্বলতা বুঝতে পেরেছেন উনি কিছুটা।এখন বুঝে কি হবে?আমাকেই শক্ত হতে হবে।বললাম,

-বেশ।আসছি আমি।আপনি থাকুন এভাবেই।

পা বাড়ালাম চলে আসার জন্য।পিছন থেকে আরমান হাত ধরে হেচকা টানে তার সামনে দাড় করালেন।অস্ফুট স্বরে বললাম,

-ছাড়ুন প্লিজ।আপনার…

আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে আমার দুহাতের আঙুলকে নিজের আঙুগের ভাজে মিশিয়ে একদম কাছে টেনে নিলেন আমাকে।দুজনে ভিজে একাকার।শাড়ীটা একদম লেপ্টে আছে গায়ে।চুলগুলো আমার বাধ্যমত ঘাড়ে পরে আছে,সামনের ছোট কয়েকটা থেকে টপটপ করে পানি পরছে।মাথা নিচু করে আরমানের টাখনুর উপর অবদি ভাজ করা জিন্সের নিচে ফর্সা পায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।মোহে পরে গেছি পায়ের ভেজা লোমগুলোর।কি বলবো,কি করবো,সবটাতেই থেমে আছি।আরমান আমার এতোটাই কাছে যে বৃষ্টির হিমশীতল স্পর্শের চেয়ে তার উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখে বেশি লাগছে।উনি ফিসফিসিয়ে বললেন,

-আমি না ছাড়লে তো পারবে না যেতে তুমি।আজ যে এই বৃষ্টিতে অসুখে ডুবাবো তোমাকে।ভালোবাসার অসুখ।নিজের অস্তিত্বকে ভালোবাসার মানুষের মাঝে বিলিন করে দেওয়ার অসুখ।ভালোবাসি তোমাকে মিথি।অনেক ভালোবাসি।

কথাটা শেষ হবার সাথে বজ্রপাতের আর্তনাত!বিকট শব্দে আরমানের হাত ছাড়িয়ে দু পা পিছিয়ে গেলাম।এগুলো যে আগেও ঘটেছে আমার সাথে!কিন্তু,কোথায়?কখন?কিভাবে?কে ছিলো আমার সাথে?আরমানের মুখের তৃপ্ত হাসিতে স্পষ্ট যেনো উনি এই সময়েরই প্রতিক্ষায় ছিলেন।কবে ভালোবাসি বলবেন আমাকে।মুখে সেভাবে হাসি রেখেই বললেন,

-বলো মিথি।তুমিও ভালোবাসো আমাকে।একটাবার বলো?

*
-একটাবার বলো মিথি,তুমিও আমাকে ভালোবাসো।বলো।

আরমানের কথায় তার দুহাতের বন্ধন থেকে বেরিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম তাকে।হাতের কাচের চুড়িগুলো রিনঝিন করে বেজে উঠলো।মাথা থেকে দু একটা বেলিফুল পরলো মাটিতে।আমাকে একপ্রকার জোর করে জরিয়ে ধরে কথাটা বললেন তিনি।শার্ট ভিজে আছে।হাত পায়ের লোমে পানিকনা লেগে আছে।কপালে পরে থাকা চুলগুলো দিয়ে পানি ঝরছে।আকাশে অসময়ের তুমুল বৃষ্টি।সবুজ ঘাসে ভরা ভার্সিটির কৃষ্ণচুড়ার তলা!অজানা কারো চিরকুটের টানে তারই উপহারের পরে আসা গায়ের লাল শাড়ীটা ভিজে একাকার আমার।আচলে কাদা না লাগে এজন্য পুরোটাই বামহাতে পেচিয়েছি।সামনের মানুষটা হতবিহ্বলের মতো তাকিয়ে আছে।চোখে বিস্ময় আর ‘ কি করলাম আমি? ‘ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে।কাট কাট গলায় বললাম,

-আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার?

আরমান মাথা নেড়ে বিচলিতভাবে বললেন,

-এর আগেও স্পর্শ করেছি তোমাকে আমি।

-হ্যাঁ,আমারই ভুল ছিলো।বান্ধবীর ভাই ভের দিন চুড়ি পরাতে দিয়েছিলাম আপনাকে,আবির মাখতে দিয়েছিলাম,ওই ছেলেগুলোর হাত থেকে যখন বাচালেন তখন আমি ভয় পেয়ে নিজে থেকেই জরিয়ে ধরেছিলাম আপনাকে।কি করে এসব করলাম আমি?কি করে?

কথাগুলো বলে নিজের চুল টানতে লাগলাম।আরমান এগিয়ে এসে বললেন,

-কারন তুমি আমাকে ভালোবাসো।আর ভালোবাসার স্পর্শ…

-শাট আপ!ভালোবাসার স্পর্শ বলে কিছু হয় না।পবিত্র বা অপবিত্র স্পর্শ হয়।আর আপনার প্রতিটা ছোয়াই অপবিত্র।

-হ্যাঁ,মানছি।স্বীকার করলাম।কিন্তু আমি এই স্পর্শের নাম দিতে চাই,পবিত্র স্পর্শ হবে এগুলো।মিথি তোমাকে ভালোবাসি আমি।বিয়ে করতে চাই।

হাত মুঠো করে শক্ত গলায় বললাম,
-কি দেখে ভালোবেসেছেন?খোজ নিয়েছেন আমার?কি জানেন আপনি আমার ব্যাপারে?আমি কাউকে ভালোবাসতে পারি না।

-তুমি তোমার আব্বুকে কথা দিয়েছো তোমার লাইফপার্টনার সে চুজ করে দিবে তাইতো?

অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে।পরক্ষনেই চোখ ফিরিয়ে বললাম,

-সবটাই‌ জানেন তবে এসবের মানে কি?

-প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে মিথি।সবটাই খোজ নিয়েছি আমি।তাইতো এতোদিন কিছু বলি নি তোমাকে।আজ যখন জানলাম তোমার আব্বু তোমাকে অন্য কোনো ছেলের সাথে মিট করাবে,মাথা কাজ করছিলো না আমার।তুমিও হয়তো জানো না এখনো,উনি বিকেলেই বেরোতে বলতেন তোমাকে।
আমি কি করে সহ্য করবো বলো,অন্য আরেকটা ছেলের সামনে তুমি সেজেগুজে যাবে বলো?অন্য একটা ছেলে তোমাকে দেখবে,কি করে মানবো আমি?তোমার আব্বুকে কিছু বলতে পারি নি।ওনার সামনে যাওয়ার পরিস্থিতি আমার এখনো হয় নি।তাই ভাবলাম তোমাকে আগে জানাই।হয়তো আমার জন্য তোমার ফিলিংস্ দিয়ে মিটমাট করা যাবে সবটা।চিরকুটের অজানা কেউটা আমি।এই কৃষ্ণচুড়ার তলা ছাড়া অন্য কোথাও ভাবতে পারলাম না।তাই এখানেই ডেকে পাঠিয়েছি তোমাকে।

বাকি কোনো কথা কানে যায়নি আমার।কানে বাজছে ছেলে দেখতে আসবে আমাকে।আব্বু ছেলে দেখেছেন আমার জন্য আর আমি এসেছি অচেনা কোনো চিরকুটের মালিককে খুজতে?বিরবির করে বললাম,

-তারমানে আব্বু ছেলে দেখেছেন আমার জন্য?

-হ্যাঁ মিথি।কিন্তু তুমিতো আমাকে ভালোবাসো।তোমার আব্বুকে…

মাথা তুলে শক্তভাবে বললাম,

-ব্যস!অনেক বলেছেন।আর না।আমার আব্বু যা ভেবেছেন,তাই হবে।ভালোবাসি না আমি আপনাকে।শুনে নিয়েছেন?আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

কথাগুলো বলে একমুহুর্ত দেরি না করে চলে এসেছিলাম কৃষ্ণচুড়ার তলা থেকে।জানি না আরমান কি করেছিলো সেদিন!বৃষ্টিতেই ভিজতে থেকেছিলো নিজের কষ্ট কমাতে?নাকি চলে গিয়েছিলো সত্যিটা মেনে নিয়ে?তবে সেদিন কোনো ছেলেপক্ষের সামনে যেতে হয়নি আমাকে।আব্বু পরে বলেছিলেন ছেলেটার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।

*
চোখ বেয়ে পানি পরতে শুরু করেছে আমার।বৃষ্টিতে তা কারো দৃষ্টিগোচর হবে না।এই ছিলো অতীত?এভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম আপনাকে আমি আরমান?কেনো বলেন নি আমাকে?এর আগেও ভালোবাসি বলেছিলেন!

-এভাবেই যেনো মনে পরে তোমার সবটা তাই বলিনি তোমাকে।দেখো না,ভার্সিটি গেলে না তুমি,বৃষ্টিটা কিন্তু নিজের টাইমিং একদম ভোলে নি!

নাক টেনে বললাম,

-সেদিনের মতো আজও ফিরিয়ে দেবো আপনাকে।বড্ড দেরি করেছেন এই একটা কথা ভালোবাসি বলতে।আজও আমাকে…

-ওসব ভুলে যাও।তোমার লাইফে শুধু আমিই ছিলাম,আমিই আছি,আমিই থাকবো।

-ভুলে যাবো?পাঁচমাস আগে বলেছিলাম আপনাকে,আব্বু যা ভেবেছেন তাই হবে,আর আজও তাইই হবে।ভালোবাসি না আমি আ্…

কথাটা শেষ করতে পারি নি।আরমান আমার ঠোট নিজের দখলে নিয়ে নেয়।রাগে অপমানে চোখ বেয়ে পানি ঝরছে।চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু শব্দ করতে পারছি না।নাই বা পারছি ওনাকে সরাতে।বেশ অনেকক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে দাড়ালেন উনি।আমি দুহাতে মুখ ঢেকে কাদতে শুরু করেছি।এভাবে কেনো অপমান করলেন উনি আমাকে?
আজ অবদি যতোটুকো হয়েছিলো তা কি কম ছিলো?কি করে এখন নিজেকে সিয়ামের পাশে কল্পনা করবো আমি?নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে গেলাম।এভাবে জোর খাটালেন আরমান আমার উপরে?শুধুমাত্র ভালোবাসি না বলেছি বলে?তা বলে এইভাবে আমাকে অপমান করলেন?ওনার প্রতি যেটুকো ভালোলাগা ছিলো তা ঘৃনায় পরিনত হয়ে গেছে আমার।ইচ্ছা করছে নিজেকে শেষ করে দিতে।আরমান চড়া গলায় বললেন,

-খবরদার মিথ্যে বলবে না মিথি।আগের বার তোমার এই অস্বীকার করার কারনে সবটা ওলোটপালোট হয়ে গিয়েছিলো সবটা।আর যা ভেবে কাদছো!আমার অপবিত্র ছোয়া!এই ভুল খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে দেবো আমি।আজকে তোমার সেদিনের কথা মনে পরেছে এটাই বড় পাওয়া।

আমি তখনো কাদছি।আরমান এগিয়ে এসে আবারো হাত ধরলেন।রাগ নিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।রাগ ছাড়া কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই আমার এই মানুষটার জন্য।চেচিয়ে বললাম,

-ছাড়ুন আমাকে।একদম ছোবেন না আমাকে।
আরমান শব্দ করে হেসে আমাকে টেনে কাছে নিয়ে আমার গাল ধরে বললেন,

-সরি জান।ইশতিয়াক আরমানের ভালোবাসার মানুষ তুমি।কি করে ছেড়ে দেই বলো?একবার না,দু দুবার একই প্লটে ভালোবাসি বললাম তোমাকে।এখন তুমি ছাড়ুন বললে আর হলো?আর রইলো ছোয়ার কথা!বললাম না,এর পবিত্রতার মাপ তুমি নিজেও জানো না।আগেও বলেছি,এখনো বলছি।ছোবো তো তোমাকে আমিই,আর তুমিও তোমার শরীরে শুধু আমার স্পর্শই বেয়ার করবে।আপাতত সবটা ক্লিয়ার না হওয়া পর্যন্ত টেক অল দিস এজ মাই লাভ টর্চার!

আমি গাল থেকে ওনার হাত সরিয়ে আবারো চেচিয়ে বললাম,

-হ্যাঁ,হ্যাঁ।টর্চার!আপনি আমার জন্য একটা টর্চারই।চলে যান।বলেছি তো ভালোবাসি না আম্…

আগেরবারের মতো আবারো ঠোট আটকে দিলেন উনি আমার।পরপরই ছেড়ে দিয়ে হাত ধরে হাটা লাগালেন।বললেন,

-এই কথাটা তো সহ্যই করবো না আমি।যতবার বলতে যাবে,তোমার মুখেই কথাটাকে থামিয়ে দেবো আমি।রাইট নাও,আর ভেজা যাবে না তোমার।চলো বাসায়।প্রচুর দেখিয়েছো ভালোবাসার টান।ছুটে ছাদে চলে এসেছো একবার বলাতেই,এতোক্ষন হলো দাড়িয়েই আছো আমার সাথে।ইটস্ এনাফ ফর টুডে।আমার দু দুটো পাওনাটা সুদসমেত পেয়েছি আমি।

সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে থেমে গেলেন।আমার দিকে ফিরে দাড়িয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললেন,

-ইউ নো,পাওনা,সুদ?
রাগ নিয়ে অন্যদিক তাকালাম।কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই আমার ওনার সাথে।উনি কিছুটা শব্দ করে হেসে বললেন,

-আসলেই অ্যারেথমেটিকস্ এ তুমি বেশিই কাচা।এনিওয়েজ,হোয়াই ফেয়ার,আ’ম দেয়ার জান।বুঝিয়ে দিচ্ছি।তোমার বাবার সোওওও কলড্ ফ্রেন্ডের পুলিইইইশ ছেলে সিয়াম তো দেখেনি এ সাজে তোমাকে,কজ এটা আমার পাওনা ছিলো।বৃষ্টির কাছে আরেকটা পাওনা ছিলো তোমার আগেরবারের ঘটনাটা মনে পরা।এন্ড এন্ড এন্ড,দ্যা স্পেশাল ওয়ান!সুদ!না বুঝেও তুমি সিয়ামের জন্যই তো সাজিয়েছেলে নিজেকে তাই না?সেইটার শাস্তিস্বরুপ আর আমাকে অস্বীকারের চেষ্টা করার জন্য…

কথাটা শেষ না করেই উনি থেমে গেলেন।আড়চোখে যেইনা তাকিয়েছে উনি মুচকি হেসে চোখ মারলেন আমাকে।আমার অগ্নিদৃষ্টিতে যেনো আরো মজা পাচ্ছেন উনি।নিজের নিচের ঠোট কামড়ে ধরে একহাত ঠোটের নিচে স্লাইড করালেন।রাগে গা জ্বলছে আমার।ভেজা শরীরটা দিয়েও যেনো আগুন বেরোচ্ছে।কান গরম হয়ে গেছে আমার।আরমান আবারো আমার হাত টেনেই সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলেন।দরজার কাছে এসে বললেন,

-চেন্জ করে নাও।চুলগুলো ঠিকমতো মুছো প্লিজ।নইলে অসুখ করবে।

দাতে দাত চেপে বললাম,

-ভাবতে হবে না আপনাকে।হাত ছাড়ুন।

আরমান একটু চিন্তার ভাব ধরে বললেন,

-উমমম্?ভাবতে হবে না?ওকে,তাহলে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাই।কি বলো?

রাগে কথা বেরোচ্ছে না আমার।ওনার সবকিছুতে রাগ হচ্ছে আমার।দরজা খোলা,আমিই তো খুলে বেরিয়েছিলাম।আরমান তবুও কলিং বেল চেপে আমার কপালে হুট করে ঠোট ছুইয়ে বললেন,

-আসছি।ওষুধটা খেয়ে নিও,নইলে জানোই তো,এর টর্চারটা কেমন হবে।এবার মাইশুটা তোমাকে ভেজা দেখে ঠিকই সামলে নেবে।অবশ্য কলিং বেলের আওয়াজে ওর ঘুম ভেঙেছে কি না কে জানে!রাতে যেভাবে ঘুমায়!বাপ রে বাপ!

বিস্ময় নিয়ে তাকালাম ওনার দিকে।রাতে যেভাবে ঘুমায় মানে?উনি কি করে জানবেন ও রাতে কিভাবে ঘুমায়?কিছু বলার আগেই আমার হাত ছেড়ে চোখ টিপে ঠোটের ইশারায় চুমো বুঝিয়ে হেসে দৌড়ে চলে গেলেন উনি।এতক্ষন পর হাত ছাড়া পেয়ে কচলাতে কচলাতে ভিতরে ঢুকলাম।পাশে কারো উপস্থিতি টের পেলাম।মাওশু উঠে গেলো না তো?ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম মাইশু না,ড্রয়িংরুমে আব্বু দাড়িয়ে!

#চলবে…

®

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here