তোমাতেই অস্তিত্ব আমার পর্ব-১৪

0
1830

#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা

১৪.

বাসায় নিজের রুমে ঢুকে ভাঙচুর করছে সুহানা।আরমান নিজের রুমের দরজা লক করে দিয়েছে শুনেই সুহানাও তান্ডব শুরু করে দেয়।মিথির কামব্যাকের কথা শুনে রাগের পাহাড় তৈরী হয়েছে ওর,সহ্য করতে পারছে না ও।ভেবেছিলো আরমান ওকে নিজের লাইফে ফেরত চায় বলে ডেকেছ,কিন্তু তেমন তো কিছুই না,উল্টো মিথির ফিরে আসার খবর জুটেছে।এমনটাই হবে জেনে ওর রুম থেকে আগেই দামী আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে পুরাতনগুলো রেখেছিলেন মিসেস জামান।ঠুসঠাস আওয়াজ আসছে।সেটার কোনো রিয়্যাক্ট নেই ড্রয়িংয়ের কারোই।আরিশা কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে আর পপকর্ন চিবোচ্ছে,মিসেস জামান কিচেনে।পত্রিকা পড়তে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন আফরোজ জামান।মা,মেয়েকে শান্তিতে থাকতে দেখে একপ্রকার সইলো না তার।আরিশার হেডফোন খুলে দিয়ে বললেন,

-ওকে তো কেউ গিয়ে থামাতেও পারো।

-ও থামবে না।দেখছো না,সাউন্ডপ্রুফ রুম।দরজা লাগিয়ে ভাঙচুর করুক না।কিন্তু না,বিদেশী মেম চায় আমরা শুনি ও ভাঙচুর করছে,দরজা খুলে রেখেছে।

-কি বলছো গুড়িয়া?

-ঠিকই বলছি আব্বু,তুমি চেননা ওকে,ছ মাস আগে ওর আসল রুপ দেখেছি আমরা।

-তা বলে একবার থামাতে যাবে না কেউ?

-আব্বু,একবার বললে থামবে,আবার শুরু করে দিবে।

-তো আবার বলবে!

-বারবার বললে কান্নাকাটি করবে।ওকে কেউ ভালোবাসি না,বকি,ব্লা ব্লা ব্লা।

-কাদলে কাদুক।তাও চুপ করুক।

-ও তো সেটাই চায়।ও চায় আমরা ওকে বকি,ও কাদুক সে কথা ভাইয়ার কানে যাক।ভাইয়া ওকে কাদাতে বারন করেছে।এ বাসায় ওর সব কথা মেনে নিতে বলেছে।

-ছেলেটা জানে এসবের ফল ভালো হয়নি আর হবেও না তারপরও…

-আব্বু জানো,ভাইয়া এখনো নিজেকে দোষ দেয় ওই ঘটনার জন্য।এজন্যই সুহানা আপুকে যতটুকো পারে ভালো রাখতে ওর অনেক কথাই শোনে।

-কি করবে বল?কিন্তু ঘটনাটাতে আরমানের তো কোনো হাত ছিলো না।শোয়াইব তো জেনেশুনেই, ইচ্ছা করেই নিজে থেকে জড়িয়েছিলো আর…

-আমিই দায়ী আব্বু!

আফরোজ জামান আর আরিশা চোখ তুলে তাকালো।আরমান মাথা নিচু করে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথাটা বললো।আফরোজ জামান বললো,

-আরমান নিজেকে এভাবে দায়ী করো না তুমি।তুমি তো জোর করো নি ওকে!

-কিন্তু দায়িত্বটাও তো পালন করতে পারি নি আব্বু।

-তোমার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিলো না।

-তবুও ব্যর্থ হয়েছিলাম তো।

-সবটা সবসময় আমাদের হাতে থাকে না আরমান।

-তবুও তার মাশুল দিতে হয়েছে তো।

আফরোজ জামান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।আরমানের কাধে হাত দিয়ে বললেন,

-যা হয়েছে ভুলে যাও।

আরমান বাবার দিকে ছলছল চোখে তাকালো,যাতে অনুতাপ স্পষ্ট।কিন্তু দোষটা তো সত্যিই ওর ছিলো না।তবে কেনো এতবড় সাজা পেতে হয়েছিলো।আফরোজ জামান বললেন,

-যা হবার হয়েছে আরমান।আট বছর আগের ঘটনাকে ধরে বসে থাকাটা জীবন না।তুমি বড়ভাইয়ের সবটা গুছিয়ে সুহানাকে ওদেশে পাঠাও।নিজের লাইফটাকেও গুছিয়ে নাও।

আরমান ওর বাবাকে জরিয়ে ধরলো।এই আশ্বাসের জায়গাটাকে এতোদিন ইচ্ছা করে দুরে সরে রেখেছিলো ও।আজ বাবার বুকে কান্না করতেও শান্তি লাগছে।হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠলো ওর।বাবাকে ছেড়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করলো।

-হ্যালো?

-হ্যাঁ,আরমান আমি বলছি।

-এটা তো তোমার নাম্বার না মামু?

-কি আর করবো ভাগ্নে?মাহবুব আলমের চোখ এড়াতে ডাবল সিম চালাতে হয়।

-বাব্বাহ!বেশ চালাক হয়ে গেছো দেখছি।

-মামুটা কার দেখতে হবে তো!

-রাইট ইউ আর!

-হয়েছে হয়েছে।আর ক্রেডিট নিতে হবে না।যে কারনে ফোন করলাম তোমাকে…

-হুম বলো মামু।

-মিথির ঔষুধগুলো তো বেশ কয়েকদিন দিলাম,এবার ওর একটা চেকাপ দরকার।

-তো চলে যাও ও বাসায়।তোমার জন্য তো আর আমার মতো দরজায় লেবু মরিচ ঝোলানো না।

-হ্যাঁ,কিন্তু কথাটা শুধু ওর চেকাপ না।একটা স্ক্যান করালে বেটার হতো।

-ইউ মিন হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ওকে?

-হুম।

-ওকে মামু,তুমি সবটা রেডি করো,ওকে নিয়ে আসবো আমি।

-কিন্তু তা কি করে…

-সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না তোমাকে।আ’উইল হ্যান্ডেল।

-ওকে ডান।

ফোনটা কেটে উপরের সুহানার রুমের দিকে তাকালো আরমান।আর কোনো শব্দ আসছে না ওখান থেকে।আরিশার দিকে তাকিয়ে বললো,

-সরি বলেছিলি?

-না,এখনো ফোন রিসিভ করে নি।

-ওকে,আর কল করিস না ওকে।

-তাহলে কিভাবে…

-পরে জানাবো তোকে।

-হুম।

-সুহানাকে ডেকে আন।লান্চ করবো।বিকেলে বেরোতে হবে।

আফরোজ জামান বললেন,

-মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছা করছে আমার।

এতক্ষন চুপচাপ কাজ করলেও মিসেস জামান এবার রান্নাঘর থেকে গলা উচিয়ে বললেন,

-এই কথাটা আমি কবে থেকে বলছি।আরমান,আজ যদি তোর আব্বু যায়,আমিও যাবো বলে দিলাম।

ওরা তিনজনই শব্দ করে হেসে দিলো।আরমান বললো,

-আব্বু,মিথিকে ঠিক সেভাবেই তোমাদের সামনে আনবো যেভাবে তোমরা দেখতে চেয়েছিলে।বধুবেশে।

আফরোজ জামান হেসে মাথা উপরে নিচে দোলালেন।আরিশা উঠে গেলো সুহানাকে ডাকতে।আরমান ডেকেছে শুনে চুপচাপ বেরিয়ে এসে খেতে বসলো।আরমান খেতে খেতে বললো,

-সুহানা,তুমি কাল থেকেই অফিস যাবে।

-তুমি?

-আমিও যাই,তবে কতোক্ষন থাকতে পারবো তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।

-কেনো?

-আমার জীবনে অফিসে বসে কাজ করার চেয়েও আরো ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে।

-তুমি কি মিথির কথা বলছো?

-ভালোই বুঝেছো।

-ও এখন কোথায়?

-ওর বাসায়।

-কেনো?

-আনি নি তাই।

-কেনো আনো নি?

আরমান মাথা তুলে তাকালো সুহানার দিকে।প্লেট দেখে বুঝলো ও খাওয়া বাদ দিয়ে এসব বলে চলেছে।আরমান বললো,

-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।আন্টির বারন করা সত্ত্বেও এদেশে এসেছো,নিজের যত্ন নিজে করতে শেখো।নইলে তোমার কিছু হলে আন্টি কষ্ট পাবেন।

-আর তুমি?

ডাইনিং টেবিলের সবাই সুহানার দিকে তাকালো।সুহানা কোনোদিকে এতোটুকো ভ্রুক্ষেপ না করে শক্তভাবে বললো,

-বলো আরমান,তোমার কষ্ট হয় না আমার জন্য?আমার এই একমাত্র চাওটা থেকে কেনো ফিরিয়ে দাও আমাকে।ভাইয়া তো…

-এনাফ সুহানা।কেনো ওই এক কথা নিয়ে পরে আছো?শোয়াইব ভাইয়াকে আমি বলেছিলাম,দেখবো তোমাদের।তা বলে তোমার অন্যায় আবদার মানতে পারবো না আমি।

-অন্যায় আবদার?কাউকে ভালোবাসা কখনো অন্যায় না আরমান?আমি তোমাকে ভ্…

আফরোজ জামান এবার মুখ খুললেন।ঠান্ডা গলায় বললেন,

-সুহানা,তুমি বড় হয়েছো।এসব কথার কোনো মানে হয় না সেটা বোঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে তোমার।

-আঙ্কেল আমি আরমানকে…

-তুমি বোন হও আরমানের।আরমানের জীবনেও অন্য কেউ আছে।তাহলে এভাবে এখানে বসে সবার সামনে উল্টাপাল্টা বলছো কেনো?

-আঙ্কেল আমি…

-নট আ সিঙ্গেল ওয়ার্ড মোর।

সুহানা খাবার ছেড়ে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো।আরিশা বললো,

-ভাইয়া,তুই তাও এটাকে এ বাসায় অ্যালাউ
করবি?

-আই হ্যাভ নো চয়েজ।

-কিন্তু…

আফরোজ জামান ওকে থামিয়ে বললেন,

-থাক আরু,ও যা ভেবেছে।তাই করুক।কিছু বলিস না ওকে।

মিসেস জামান বললেন,

-একবার মিথি আসুক,আমি এ সংসারে কোনো ঝামেলাকে থাকতে দিবো না বলে দিলাম।

আরমান হেসে বললো,

-হ্যাঁ,হ্যাঁ,তোমার সংসার,তোমার ইচ্ছা!

সবাই হেসে আবার খেতে লাগলো।সুহানা উপরে আড়াল থেকে সবটাই শুনলো।মনেমনে বললো,

‘কি জানো তো আরমান,এতোদিন ভেবেছিলাম হয়তো ভাগ্যই চায় আমি তোমাকে পাই,এজন্যই তো মিথি আগেরবার,,,,কিন্তু তা হলো না,ফিরে এলো ও।তবে একটা কথা কি,তোমার দুর্বলতা আমি জানি,এবার মিথির পালা।যেহেতু এখনো এ বাসায় আনো নি ওকে,এতোটাই আঘাত করবো ওকে যে ও তোমাকে ছেড়ে আরো দুরে চলে যাবে,আসবে না এ বাসায়।তুমি শুধু আমার হবে।অনলি মাইন!’
কথাগুলো মনে মনে আওড়ে মুচকি হেসে রুমে ঢুকে দরজা লক করলো সুহানা।আপতত ওর একটু সময় একা থেকে সবটা ভাবা প্রয়োজন।

রেডি হচ্ছিলাম।তেমন কোনো কথাই বলি নি আপির সাথে।ওর কথাগুলোও ঠিকমতো শুনিনি।অনেকক্ষন যাবত অনেককিছুই বলছিলো ও।একসময় আপি আমার হাত ধরে বললো,

-তুমি কি কোনো বিষয়ে ওয়ারিড বা স্যাড?

-ক্ কই?ন্ না তো আপি।

-বলবে না?

-ক্ কিছু হয়নি তো আপি।

আপি আমার হাত ছেড়ে অন্যদিকে ঘুরে বললো,
-মিথ্যেটাও ঠিকমতো বলতে পারো না।

-মিথ্যে কেনো বলবো?

-সেটা তুমিই জানো।তবে আপিকে মিথ্যে বললে কি শান্তি পাবে তুমি?

আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।সত্যিই বলেছে ও।ওকে না বলে থাকাতে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার।রিয়াপিকে বললে কষ্টটা কমবে হয়তো আমার।কিন্তু এ সঙ্গা যদি ভালোবাসার হয় তাহলে?আপি কি ভাববে?আব্বু?আমার কমিটমেন্ট?এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে দাড়িয়ে বললাম,

-আপি,কোনো ছেলের পাশে একটা মেয়েকে দেখে কোনোদিন কষ্ট হয়েছে তোমার?

আপি চোখ বড়বড় করে তাকালো আমার দিকে।আমি আবারো মাথা নামিয়ে নিলাম।জানি না কি কি প্রশ্ন করবে ও এখন আমাকে।আব্বুকে বলে দিবে না তো?নাহ্,আপি তো এমন না।আব্বু শুনলে বিষয়টা অন্যরকমভাবে নিতে পারেন,হয়তো আবারো আমাকে ঘরবন্দি করে দিবেন,আপি সেটা চাইতে পারে না।কিন্তু তাতে সত্যিটা কি বদলায়?কোনোভাবে কি দূর্বল হয়ে পরি নি আমি?

-সবসময় চোখের দেখাটা ঠিক নাও হতে পারে।

অবাক হয়ে গেলাম আমি আপির মুখে এমন কথা শুনে।চোখ তুলে তাকালাম।কি বললো ও এটা?কেনো বললো?আপি আমার কাধে হাত রেখে বললো,

-চোখকে এতোটাও বিশ্বাস করতে নেই মিথি।সময় আর সিচুয়েশন না বুঝে কাউকে জাজ করাও উচিত নয়।হতে পারে সেই সময়ের একটু অভিমানে অনেক বড় ভুল করে ফেললে তুমি।

আমি বুঝলাম না যে আপিকে কি বুঝাতে পারলাম না,নাকি ও বুঝেও না বোঝার মতো করছে।ও কি কথায় কি রিয়্যাক্ট করলো আর কি জবাব দিলো?আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও বললো,

-হয়েছে।আর অতো ভাবতে হবে না।বাচ্চা মেয়ে,চিন্তায় চিন্তায় চিন্তাবিদ হয়ে যাবে তো।

আমি হাসলাম।আপি বললো,

-নিজের মনকে প্রশ্ন করলেই সব উত্তর পেয়ে যাবা মিথি।আর যাই করো,মনকে অস্বীকার করো না।

আমি আবারো চুপ করে গেলাম।আপি বললো,

-আজ আমিও গাউন কিনবো একটা।চুজ করে দিও তোহ!

-তুমি নিজে থেকে বলছো গাউন কিনবে?আমি ঠিক শুনলাম তো?

-তো কি হয়েছে?তোমার আপিকে গাউন পরলে খারাপ দেখায় নাকি?

-এ বাবা,তা কখন বললাম!তুমিই তো কিনতে চাওনা।

-আজ কিনবো।

-কেনো বলোতো?

-জানি না,ইচ্ছে করছে।চুজ করে দেবে তো তুমি?

-হুম।দেবো তো।

-ওকে,চলো বেরোই।

বেশ খুশি মনেই আপির সাথে বেরোলাম।কিছুটা ভালো লাগছে।আর ও নিয়ে মন খারাপ করবো না আমি।ইশতিয়াক আরমানকে নিয়ে আর ভাববো না।তার লাইফ,সে যা খুশি করুক!আমিও আমার লাইফের সবটা মজা বুঝে নেবো,আপির সাথে,আমার ফ্যামিলির সাথে।

লান্চ শেষে রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে আরমান।আপাতত মাথায় একটাই চিন্তা,মিথিকে হসপিটালে কি করে নেওয়া যায়।বিছানায় শুয়েই দেয়ালের ছবিগুলো দেখছে ও।টুংটাং ম্যাসেজের শব্দে ফোনটা হাতে নিলো।ম্যাসেজটা পড়েই মন ভালো হয়ে গেলো ওর।একটা হাসি ঝুলিয়ে কল লাগালো আদিবকে,

-হ্যালো আদিব?

-হ্যাঁ,বল।আমি তোকেই কল করতে যাচ্ছিলাম।

-কেনো?কাজটা হয়ে গেছে?

-ভাই,এ লোক তো ঝামেলা পাকাচ্ছে।

আরমান মৃদ্যু হাসলো।যেনো ও জানতো এমনটাই হবে।বললো,

-কি বলছেন উনি?

-বলছে ওর আগে এশুরেন্স চাই যে তুইই এসব চেয়েছিস।

-তো ফোন দে কথা বলে নিচ্ছি।

-মানবে না,ভিডিও কলেও মানবে না বলছে।ও তোকে সামনাসামনি দেখতে চায়।

-হোয়াট ননসেন্স?এখন কি পাব্লিক প্লেসে গিয়ে ওকে উত্তমমধ্যম দিয়ে বোঝাতে হবে আমাকে?

-অনেকটাই তাই।ইচ্ছে তো করছে একে…

-থাক,কিছু করিস না,আসছি আমি।

-হুম,তাড়াতাড়ি আয়।লজ্জা লাগছে আমার।

-কেনো?কেউ কিছু বলেছে তোকে?

-ইশতিয়াক আরমানের কাজে আর
মেহনাজ ইফতেখার আদিবকে কিছু বলবে সে সাধ্যি আছে কারো?

-তাহলে?

-ধুরু,একেতো আজ প্রথমবার কাজ হাসিল করতে তোকে টেনে আনতে হচ্ছে।তার উপর একগাদা লোকজন নিয়ে একে ঘিরে এভাবে বসে আছি যেনো কি গন্যমান্য একজন উনি,পাহাড়া দিচ্ছি উনাকে।আর সবাই হয়তো ভাবছে,আমি এ লোকের ভক্ষক না,রক্ষক!

আরমান একটু জোরেই হাসলো এবার।বললো,

-মেরে দোস্ত!আসলি কাহানী হলো,উপরওয়ালা চায় যে আমি এখন বাসা থেকে বেরোই।

-মানে?

-ও তুই বুঝবি না।এনিওয়েজ,আসছি আমি।

ফোন রেখে একদম রেডি হয়ে বেরোলো আরমান।নিচে নেমে দেখলো ওর মা বাবা সোফায় বসে।ওকে বেরোতে দেখে মিসেস জামান বললেন,

-কোথায় যাচ্ছিস?

-আদিব ডেকেছে।

আফরোজ জামান বললেন,

-কোথায়?বলা যাবে?

-মার্কেটের একটা রেস্টুরেন্টে।

-পাব্লিক প্লেস?

-হুম।ডোন্ট ওয়ারি।যে চিন্তা করছো তার ব্যবস্থা করেই যাচ্ছি।

মিসেস জামান বললেন,

-সাবধানে যাস।আর একটু চোখকান খোলা রাখিস।মিথির সামনে কোনো ঝামেলা করিস না আবার।

আরমান হাসলো।কোনো মা তার ছেলেকে বেআইনি কাজের জন্য বেরোচ্ছে জেনেও বলছে সাবধানে যাস!গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পরলো ও। ড.এমদাদকে কল করলো আরমান।

-হ্যাঁ,ভাগ্নে।

-মামু,সব অ্যারেন্জমেন্ট হয়ে গেছে?

-ইয়াপ।তুমি কি আজই…

-হ্যাঁ মামু।

-ওকে।বি কেয়ারফুল।

-ওটা আরমানের প্রতিদ্বন্ধিদের জন্য মামু।উমমম্ আমাকে অল দ্যা বেস্ট বলতে পারো।

ড.এমদাদ হাসলেন।বললেন,

-বেশ।অল দ্যা বেস্ট।এসো তবে,দেখা হচ্ছে।

কথা শেষে গাড়ি পার্ক করে দ্রুতপায়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে পরলো আরমান।সোজা আদিবের আটকে রাখা লোকটার সামনে একহাতে চেয়ার টেনে বসে বললো,

-লুক!আপনার উপর যদিও এখন অনেক রাগ থাকার কথা আমার,তবুও‌ তা দেখাচ্ছি না।পারসোনাল একটা কারনে খুশি হয়েছি আপনার উপর।সাক্ষাৎ করে গেলাম।আই হোপ এবার অন্তত আদিবের কাজে কোনো প্রবলেম ক্রিয়েট করবেন না!আর যদি করেন,ইশতিয়াক আরমানের আরেকটা রুপ দেখার জন্য নিজেকে রেডি করিয়েন।দশ মিনিট সময় দিচ্ছি
আপনাকে সবটা ক্লিয়ারলি বুঝে দেওয়ার জন্য।ইউর টাইম স্টার্টস্ নাও।

একদমে কথাগুলো বলে লোকটার দিকে আরেকটু রাগী চোখে তাকালো আরমান।ওর উপস্থিতিই যার ভয়ের কারন,এমন কথাগুলো তাকে শকে ঠেলে দিতে কতটা কার্যকরি তা ও জানতোই।লোকটা ভয়ে চুপসে গেছে।আরমান উঠে দাড়িয়ে আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,

-এর কাজ শেষ কর।

-ওকে।তুই বেরোবি এখনই?

-হ্যাঁ।আর শোন,কিছুক্ষন পর দেখবি রিয়াপি এদিকেই এসেছে।তুই জাস্ট ওকে কিছুক্ষন ব্যস্ত রাখবি।আমার তাড়া আছে,আমি আসছি।তুইও এসব শেষ কর জলদি।

কথাগুলো বলেই আরমান ছুটলো কোথাও।কিন্তু আদিবের চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।আবারো রিয়া?কিছু বলার সুযোগটাও দিলো না ওকে।কিন্তু বলে যখন গেলো,কাজটা তো করতেই হবে।কিন্তু ও কি করে জানলো রিয়া এখানে?মিথিও এসেছে নাকি?তাহলে তো এখানের এসব ঝামেলা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।নিজেকে ঠিক করে আবারো সিরিয়াসভাবে লোকটার দিকে তাকালো আদিব।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর থেকে কাজ আদায় করাতেই হবে।

#চলবে…

®

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here