তোমাতেই অস্তিত্ব আমার পর্ব-১৫

0
1964

#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা

১৫.

শপিং মানেই আমার হাজারটা দোকান ঘোরা।বাজে অভ্যাস এটা আমার।একটা জিনিস কেনার অজুহাতে অনেকগুলো দোকান ঘুরবো,দেখবো।রিয়াপিও এ নিয়ে প্রচুর বিরক্ত।আজও তার বিপরীত হয় নি। দুটো জিনিস কিনেই এ দোকান,ও দোকান ঘুরছি।একথা সেকথা বলতে বলতে ফুটপাত দিয়ে হাটছিলাম।আপিও জানে এমনটাই করবো আমি,তাই বিরক্তি ফেলে আর হয়তো আমার মুড ভালো করতে ওউ কথা বলতে শুরু করেছে।

রাস্তায় একটা দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই দোকানটাতে সাজিয়ে রাখা কাচেরচুড়ির সারিতে চোখ আটকে যায় আমার।দাড়িয়ে গেলাম আমি।যদিও চুড়ির প্রতি ততোটা হুমড়ি খাওয়া আগ্রহ কোনোদিনই ছিলো না আমার,গলা,হাত কানে কিছুই পরি না আমি।তবুও একপা দু পা করে কেনো জানি না সেগুলোর দিকে এগোলাম। ছুয়ে দিলাম চুড়িগুলো।কেমন যেনো চোখ ফেরাতে পারছি না ওগুলো থেকে,মনে হচ্ছে আমার সাথে ওগুলো জরিয়ে আছে।যতদুর মনে পরে,আমিতো এ দোকানে আসি নি কোনোদিন।আসলেও আর যাই হোক,চুড়ি নিয়ে কোনোদিন মাথা ঘামাইনি।তাহলে?শপকিপার এগিয়ে এসে বললেন,

-এক্সকিউজ মি ম্যাম!কোনটা দেখবেন?

তার কথায় ধ্যান ভাঙে আমার।পাশে তাকিয়ে দেখলাম দোকানটাতে কেউই নেই শুধু দোকানদার ছাড়া।আপিও নেই।ইশ্!আমিই তো চলে এসেছি ভিতরে,আপি তো কথা বলতে বলতে এগিয়েছে,খেয়াল করে নি।এখন হয়তো ঠিকই খুজছে আমাকে!চিন্তা করছে হয়তো।

-ন্ না মানে,আসলে…

-একদম গাঢ় লালটা বেশি মানাবে।

পিছনে ঘুরে তাকিয়ে লোকটাকে দেখে কিভাবে রিয়্যাক্ট করবো তাই ভুলে গেছি।নেভি ব্লু শার্ট,ব্লেজার,ব্লাক প্যান্ট,সু,স্পাইকড্ চুল,সাথে সেই অনন্য পারসোনালিটির টেডিস্মাইল।ইশতিয়াক আরমান।দুহাত বুকে গুজে দাড়িয়ে হাসছেন উনি।কি পরে আছেন তা বুঝাতে পারলেও কেমন দেখাচ্ছে উনাকে তার জন্য কোনো শব্দ খুজে পেলাম না।তবে প্রতিবারের মতো মনটা নির্লজ্জের মতো বলেই উঠলো”মাশাল্লাহ”

-হেই!ওভাবে দেখলে তোমারই নজর লেগে যাবে!

আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।ছি ছি!এভাবে কোনো ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম?এসব,এসব আমার সাথে কি হচ্ছে?উনাকে দেখলে আমি আমার নিজের কাছে নিজের দেওয়া কথাগুলোই ভুলে যাই।কখনো কোনো ছেলের দিকে যে নজরে তাকাইনি,সেই আমি আজ উনার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলাম!ছিহ্!কি অধঃপতন আমার!আরমান ঠোট টিপে একটু হাসলেন।এগিয়ে এসে দোকানদারকে বললেন,

-এক্সকিউজ মি,গাঢ় লাল রঙের চুড়িটা দিন তো।

উনি চুড়ির কথা জিজ্ঞাসা করতেই আমার ভার্সিটির কথা মনে পরে গেলো।উনি হয়তো সেই মেয়েটার জন্যই চুড়ি কিনতে এসেছেন।মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে চলে আসার সময় কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে দু পা পিছিয়ে গেলাম।মাথা তুলে দেখি আরমান আমার পথ আগলে দাড়িয়ে আছেন।তারমানে উনার বুকের সাথেই আমি ধাক্কাটা খেয়েছি।শক্ত গলায় বললাম,

-এভাবে দাড়িয়েছেন কেনো?

-রাগ করেছো?

-মানে?আপনার উপর আবার কিসের রাগ?পথ ছাড়ুন।

-তোমার রাগ না কমলে যেতে দেবো না।

-আজব তো!আমি কেনো রাগ করতে যাবো?আর আপনিই বা কেনো এভাবে আমার রাগ নিয়ে পরেছেন?

-ভার্সিটিতে তুমি যেভাবে আমার রাগ নিয়ে পরেছিলে,সরি বলতে এসেছিলে,সেভাবে।

কথাটা ধীর গলায় বললেন উনি,কিন্তু আমার শরীরে কেনো জানি তার ওই শীতল কথায় শিহরন বয়ে গেলো।আমি যেভাবে গিয়েছিলাম,তার কোনো ফিলিংস্ কি উনার মধ্যে আছে?আমার মতো উনিও কি রাগ করাটা নিয়ে কোনো খারাপ লাগায় পরেছেন?না!কিসব আকাশপাতাল ভাবছি আমি?এটা সম্ভব না।না আমি উনাকে নিয়ে আলাদা কিছু ভাবছি,না উনি আমাকে নিয়ে কিছু ভাবতে পারেন।অন্যদিক তাকিয়ে বললাম,

-আমার কারো উপর কোনো রাগ নেই।

-ও তাই?

-জ্বী,রাস্তা থেকে সরে দাড়ান।যেতে দিন।

উনি আচমকাই জোরে জোরে বলতে লাগলেন,

-বা রে,একটা দোকান থেকে চুড়ি কিনে দেয়নি বলে টিপিকাল বাঙালী বউদের মতো এভাবে রাগ করে একা একা ঘুরছো?তোমার এই ভোলাভালা,কিউট বরটাকে যদি কেউ কিডন্যাপ করে নেয়?

উনার কথা শুনে আকাশে থেকে পরেছি আমি।বলে কি এ?টিপিকাল বাঙালি বউ মানে?আমার বর মানে?পাশে তাকিয়ে দেখি দোকানদার মিটমিটিয়ে হাসছেন।রাগ হলো আমার।ফালতু কথা আর মজার একটা লিমিট থাকে।রাগী গলায় বললাম,

-কি সব আবোলতাবোল বলছেন আপনি?

-ওই‌ দেখো!এখনো কতো রাগ!

-ভুল ভাল কথা বলার একটা সীমা থাকে।এসব কি বলছেন আপনি?

-কেনো বোঝো না?

-জ্বী না।

বলে আবারো যেইনা উনাকে পাশ কাটাতে যাবো উনি আমার হাত ধরে একটানে নিজের বুকের সাথে আটকে ধরলেন।আমি মোচড়ামুচড়ি করে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি,কিন্তু তাতে কোনো লাভই হচ্ছে না।উনি ওভাবে ধরে রেখেই বললেন,

-এতো রাগের কি আছে বউ?কিনে দিবো তো তোমাকে চুড়ি।চলো এই দোকান থেকেই কিনে দিচ্ছি।

আবারো!আবারো জরিয়ে ধরলেন উনি আমাকে!আবারো তার স্পর্শ!শরীরে বৈদ্যুতিক শকের মতো ঝড় খেলে যাচ্ছে আমার,শিহরনে কাপছি আমি।উনার ছোয়া,এই বউ বউ ডাক কোনোটাই সহ্য হচ্ছে না আমার।কিন্তু তার শরীরের ঘ্রান আমার বড্ড চেনা চেনা লাগে।মনে হয় ওই বুকের মাঝে ওভাবে জরিয়ে থেকে যেনো অভ্যস্ত আমি।হাতের শপিং ব্যাগটা ফেলে দিয়ে হাত দিয়েও ধাক্কাতে শুরু করেছি।নাহ্ কিছুতেই ছাড়াতে পারছি না উনাকে।উনি ওভাবেই দুহাতে জরিয়ে ধরে আছেন আমাকে।

-ছাড়ুন!ছাড়ুন আমাকে!

-কি বলোতো,তুমি দিনভর চেষ্টা করেও কিন্তু আমি না চাইলে ছাড়াতে পারবে না।আর যতোক্ষন এরকম করবে,আমি ছাড়বো না বলে দিলাম।

আমি কিছুটা চুপ করে গেলাম।প্রথমদিনও এমনটাই ঘটেছিলো তো।উনার শক্তির সাথে পেরে উঠিনি।আমাকে থামতে দেখে উনি যেই একহাতে ছাড়িয়ে আমার আরেকহাত ধরতে যাবেন,আমি সাথে সাথেই একপ্রকার লাফিয়ে অনেকটা দুরে সরে যাই।অল্পবয়স্ক দোকানদারটা বলে উঠলেন,

-আরে ম্যাম,এতো রাগ করছেন কেনো?স্যার তো বলেছে আপনাকে চুড়ি কিনে দিবে।

আমি কটমটে চোখে তাকালাম উনার দিকে।আরমানের কথায় লোকটা ধরেই নিয়েছে আমি তার ওয়াইফ।রাগী গলায় বললাম,

-শুনুন,আমি ওনার কেউ হই না।

আমার কথার কোনো দামই দিলেন না উনি।একটু হেসে আরমানের দিকে তাকালেন।আরমান এখনো পথ আগলে দাড়িয়ে আছেন।আরমানের কথাই যে দোকানদার শুনবেন তা বুঝতে বাকি রইলো না আমার। জোরে একটা শ্বাস ফেলে বললাম,

-আপনার দোকানে একটা মেয়েকে এই লোক জোর করছেন,এখনো রাস্তা আটকে রয়েছেন,আর আপনি উনাকে কিছু না বলে উল্টো সাপোর্ট করছেন?আমি সবাইকে ডাকবো,বলবো আপনাদের বিহ্যাভের কথা!

উনি ভয় না পেয়ে উল্টো হেসে বললেন,

-আসলে আপনি বিয়ের পরেও এতোটুকু বদলান নি।

এরপর আরমানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-স্যার,যান তো।ম্যামকে পরিয়ে দিন চুড়ি।ম্যামের রাগটা আগের মতোই আছে।

আরমান বললো,

-দিন,লাল চুড়িটা।

আমি চোখ বড়বড় করে দেখছি আর ভাবছি এসব কেনো করছেন উনি।চুড়ি হাতে এগুচ্ছেন আমার দিকে।আমি পেছোনোর জায়গা না পেয়ে দেওয়ালের সাথে আটকে গেছি।আরমান এগিয়ে এসে চুড়িগুলো আমার চোখের সামনে ধরে নাড়ালেন।চুড়ির শব্দ সোজা মাথায় লাগলো আমার।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।মাথা ব্যথা করতে লাগলো।আবারো মনে হচ্ছে এগুলো আগেও ঘটেছে আমার সাথে।দোকানে আসা,এই গাঢ় লাল রঙের চুড়ি,কারো জোর করে আমাকে চুড়ি পড়াতে চাওয়া,,,,উফ্!সবকিছু ধোয়াসা!মনে পরছে না।মনে পরছে না আমার!

‘ মনে করো মিথি,মনে করো।একটা বার মনে করো।সেদিন তোমাকে কিভাবে আমি জোর করে লাল চুড়ি পরিয়েছিলাম,একটু মনে করো।শুধুমাত্র আমার জন্য চুড়ি পছন্দ না করলেও তুমি সেদিন পরেছিলে চুড়ি।আমি পরিয়েছিলাম তোমাকে,আর তুমি বলেছিলে আমি কেনো পরালাম তোমাকে।আজও একবার বলো,একটাবার বলো,কেনো আবার চুড়ি পরাতে এসেছি তোমাকে,প্লিজ বলো মিথি।বলো। ‘

ভার্সিটির নবীনবরন!কারো সাথেই সেভাবে পরিচয় ছিলো না তখন মিথির।প্রথম দিনে আরিশার সাথে দেখা হয়েছিলো,আর কলেজ ফ্রেন্ড মালিহা।ড্রেস কোড মেয়েদের ছিলো লাল শাড়ি।যদিও মিথি শাড়ী পরতে জানে না,রিয়া জোর করেই ওরই একটা শাড়ি পরিয়ে দিলো মিথিকে।লাল কমই ছিলো শাড়িটাতে।মিথির ম্যাচিং কোনো গয়নাও ছিলো না,রিয়াই ওর একটা মালা পরালো।বরাবরের মতোই সাজগোজ পছন্দ করে না বলে চুলগুলো খোলা রেখে,ঠোটে একটু লিপস্টিক দিয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে পরে মিথি।গেইট থেকে বেরোতেই রিয়া পিছন পিছন দৌড়ে এসে বললো,

-ওই‌ শুনো,বাসা থেকে আনা চুড়িটা কালার ভালো লাগছিলো না,ম্যাচ করছিলো না বলে পরাই নি।তুমি রাস্তায় কোনো দোকান থেকে ম্যাচিং একডজন চুড়ি কিনে বামহাতে পরো,নইলে খালি খালি লাগবে।

‘আমার হাতে চুড়ি!হুহ!তাহলেই হয়েছে।একেতো পছন্দই না,তারউপর হাতে ঢুকাতেই পারি না পারফেক্ট সাইজের চুড়ি।পরতে পারলে হয় তাহা আপনাআপনি খুলিয়া পরিবে,নয়তো বা আর বেরোবে না।’

কথাগুলো ভেবে মুচকি হাসলো মিথি।তবুও রিয়ার দিকে তাকিয়ে হ্যাসুচক হাসলো ও।রিকশায় উঠতেই আরিশা কল করলো ওকে,

-হ্যালো,বেরিয়েছিস তুই?

-হুম,মাত্র উঠেছি রিকশায়।

-শাড়ি পরেছিস?

-হ্যাঁ,তোদের জ্বালায় না পরে উপায় আছে?রিয়াপিও বললো লাইফের এসব ইভেন্টে একটু আধটু পরতে হয়,মানতে হয়,কমফোর্ট জোন থেকে বেরোতে হয়,আরো কতো কি!পরিয়েই দিলো।

-গুড!শোন না,চুড়ি লাল পরেছিস নাকি ম্যাচিং অন্য রঙ?

এও একি কথা বলছে?চুড়ি যে আমার হাতে বেড়ি পরার মতো লাগে এদের কিভাবে বুঝাই?

-এইরেহ্!চুড়ি তো পরি নি।ভালো লাগে না আমার।

-তুই আজ চুড়ি না পরলে এক্কেরে আড়ি!ফ্রেন্ডশিপ শেষ বলে রাখলাম!

আরমানের চোখ রাঙানিতে কথাগুলো বললো আরিশা।বরাবরই চুড়ি পছন্দ আরমানের।ছোটবেলায় মায়ের হাতের কাচের চুড়িগুলোর শব্দ শুনতে খুব ভালোবাসতো ও।এরপর প্রথম যেদিন রিকশায় শুধু মিথির কব্জি অবদি ঢাকা হাত দেখেছিলো,ওর মন আরো তৃষ্ণার্ত হয়ে পরে সে হাতে চুড়ি দেখার জন্য।তাই আজ যখন শাড়ী পরা মিথিকে দেখবেই,চুড়ি কেনো নয়!সামনে না গেলেও,দুর থেকে দেখবে,শাড়ি,চুড়ি পরা মিথিকে।

-এখন আবার বাসায় গিয়ে পরে আসবো নাকি?

-না,তুই ভার্সিটি আয়,আমিই দেবো।

হুম বলে ফোনটা রাখলো মিথি।পরক্ষনেই মনে হলো ওর হাতের সাইজ তো খাপছাড়া!দেখে কিনলেই গরবর হবে,আরিশা না দেখে কিভাবে বুঝবে?আর ওর চুড়ি নিলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে?না পরলেও তো নির্ঘাত ঝামেলা পাকাবে।তাই গাল ফুলিয়ে একটা দোকানে নামলো মিথি।
আরিশা চুড়ি নেওয়ার কথা বলেছে তাই আরমান ভাবলো চুড়িটা ওই কিনে দিবে।গাড়িটা দাড় করিয়ে দোকানে যেইনা ঢুকতে যাবে দেখে একই দোকানে মিথিও ঢুকছে।শাড়ী পরে সাধাসিদে মেয়েটাকে আজ অপূর্ব লাগছে।একদম সিম্পল সাজেও মেয়েটার মায়াবী চেহারায় সৌন্দর্য আছড়ে পরছে একদম!চুড়ি কেনার জন্যই দাড়িয়েছে ও এটা বুঝলো আরমান।মিথি ভিতরে ঢুকে কাচের চুড়ির সারিতে চোখ বুলালো।লাল চুড়ি দেখিয়ে দোকানদারকে দিতে বললো।

চুড়িটা হাতে নিয়ে এপাশ ওপাশ ঘুরাচ্ছে মিথি।এই জিনিস পরতে পারবে কি না বা পরলে বেরোবি কি সেই চিন্তা করছে ও।আরমান ওকে ভাবতে দেখে হেসে গাড়ি থেকে নেমে একটু আড়ালে দাড়ালো।মোবাইলে ব্যস্ত আরিশা একবার ভাইয়ের চলে দেখলো শুধু।
অতিকষ্টে একটা চুড়ি পরলো মিথি।তারমানে এর থেকে একসাইজ বড় লাগবে ওর।দোকানদারকে বললো,

-ভাইয়া,এক সাইজ বড় দিন তো।

-সরি ম্যাম,এটাই সবচেয়ে বড় সাইজ।

মিথির চোখ কপালে।এটা বড় সাইজ হলে ওকে এটাই নিতে হবে।তারমানে একেকটা পরতে একেকবার বিশ্বযুদ্ধ বাঝাতে হবে!

-কি বলছেন?এটাই বড়?

-জ্বী।

-তো আমার হাত কি এলিয়েনের হাত?দুনিয়ার বাইরে থেকে এনেছি নাকি?

-আপনি এভাবে বলছেন কেনো?এটাতো ঠিকই আছে।আপনার হাতের পারফেক্ট সাইজ।

কথাটা উনি না বললেও জানতো।তবুও না নেওয়ার মতলবে থাকলে যা হয় আরকি।বললো,

-না,এটা ছোট হয় আমার।

বলেই চুড়িটা খোলার জন্য চেষ্টা করতে লাগলো মিথি।এক পর্যায়ে ভেঙেই ফেললো ও চুড়িটা।দোকানদার ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে আছে মিথির দিকে,আর ও শুকনা ঢোক গিলছে।আরমান এবার এগিয়ে এসে বললো,

-এমা!ভেঙে ফেললে চুড়িটা?

আরমানকে ওখানে মোটেও অাশা করেনি মিথি।বললো,

-আপনি?এখানে?

-কাজ আছে।চুড়িটা ভেঙে ফেললে তুমি?

মিথি মাথা নিচু করে বললো,

-আসলে পরা,খোলার অভ্যাস নেই তো।

দোকানদার কড়া গলায় বললো,

-এবার এইটাই কিনতে হবে আপনাকে।

মিথি অসহায়ভাবে তাকালো আরমানের দিকে,অপমানিত লাগছে ওর।আরমান বললো,

-হ্যাঁ,কিনবে।কি সমস্যা?

চুড়ির দামটা দিয়ে দিলো মিথি।আরমান জানে ও দিতে গেলে কোনোভাবে তা নিতো না ও,তাই জোরও করেনি।দোকানদার বাকি চুড়িগুলো যেইনা প্যাক করতে যাবে,

-ওয়েট!ওগুলো আমাকে দিন।

মিথি অবাক হয়ে তাকালো আরমানের দিকে।এ কেনো চায় চুড়ি?দোকানদার চুড়িটা আরমানের হাতে দিলে ও সেগুলো হাতে নিয়ে একপা দুপা করে এগুতে থাকলো মিথির দিকে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই খপ করে ওর হাত ধরে চুড়িগুলো পরিয়ে দেয় ও।অবাক করার বিষয় হলো একটা চুড়ি পরতে মিথির যেখানে ঘাম বেরিয়ে গিয়েছিলো,আরমান খুব সহজেই ওকে চুড়িগুলো পরিয়ে দিয়েছিলো।
একটানে হাত ছাড়িয়ে নিলো মিথি।আরমানের ওভাবে হাত ধরা ওর কাছে কতোটা শকিং ছিলো তা ওই জানে।আরমান হাত ধরাতে আটকে গেছিলো ও।ওর চুড়ির রিনরিন শব্দে চোখ বুজে নিলো আরমান।মিথি একটু রাগী গলায় বললো,

-এভাবে জোর করে চুড়ি পরালেন কেনো আমাকে?

চোখ মেলে আরমান ওর মুখটা মিথির কানের কাছে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে বললো,

-দেখতে ইচ্ছা করেছিলো তাই।

কথাটা বলে মুচকি হেসে আরমান বেরিয়ে গেলেও দম মেরে দাড়িয়ে থাকে মিথি।হাতের চুড়িটার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন আগের ঘটনাটাকে আরেকবার ফিল করে ও।কিছু না বুঝে শুধুমাত্র চুড়ি পরা শেষ এটা ভেবেই পা বারায় ভার্সিটির জন্য।

মনে করার কিছুক্ষন চেষ্টা করলাম।কোনো লাভ হয়নি।কে কখন কিভাবে চুড়ি পরাতে জোর করেছিলো কিছুই মনে নেই আমার।চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখি আরমান কিছুটা দুরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে একটু ঝুকে আমার দিকে ছলছল চোখে দাড়িয়ে আছেন।আমি কিছু বুঝলাম না ওনার চাওনি তে কি ছিলো।উনি আবারো এগিয়ে আসলেন আমার দিকে।বললেন,

-রিলেটেবল?

আমি অবাক হয়ে তাকালাম তার দিকে।উনি কেনো জিজ্ঞাসা করছেন রিলেটেবল কি না?উনি কি করে জানবেন আমার লাইফে কি হয়েছে?কি করেই বা বুঝবেন আমি সত্যিই কিছুর সাথে এ ঘটনাকে মিলানোর চেষ্টা করছিলাম?কেউ না হয়েও কিভাবে উনি আমার প্রতিটা অচেনা ইনসিডেন্টের মাঝে চিরচেনার সুর এনে দিচ্ছেন?আমাকে ভাবতে দেখে উনি বললেন,

-থাক।আর ভাবতে হবে না।

আমি চুপচাপ আবারো পাশ কাটিয়ে চলে আসবো উনি আবারো আমার হাত ধরে ফেললেন।আরেকহাতে মোবাইল টিপতে টিপতে বললেন,

-যেতে বলি নি তোমাকে।

আরমানের শান্ত গলার কথা শুনলে আগে থেকেই রাগের পাশাপাশি ভয় কাজ করে আমার।উনার হুটহাট কাজগুলোতে এলোমেলো লাগে নিজেকে।কি করা উচিত?হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার সাধ্য আমার নেই!তাই ওভাবেই দাড়িয়ে রইলাম।

মিথিকে ছন্নছাড়া হয়ে খুজছে রিয়া।কথার মাঝে এতোটাই মগ্ন ছিলো ও যে খেয়ালই করে নি মেয়েটাকে কোথায় ছেড়ে এসেছে।আকাশকুসুম চিন্তা হচ্ছে ওর।ওদিকে মাহবুব আলম তো আছেনই,তাকে জবাব দেওয়ার কথা মনে হতেই গা শিউরে উঠছে রিয়ার।পাগলের মতো খুজতে খুজতে হঠাৎই চোখ আটকে যায় রাস্তার পাশের একটা রেস্টুরেন্টের ভিতরে আদিব এক লোকের কলার ধরে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে চেচিয়ে কিছু বলছে।

থাইগ্লাসের দেয়ালে বাধা পেয়ে শব্দ বাইরে আসছে না,কিন্তু চারপাশ দেখে রিয়া সিচুয়েশনটা আন্দাজ করলো।লোকটা কোটসুট পরা,ওর বাবার বয়সি।উনার চারপাশে আদিবকে ঘিরে আরো তিন চারটা ছেলে দাড়িয়ে,একপ্রকার গার্ডের মতো দাড়িয়ে।বাকিসব যেনো অন্ধ,কিছু দেখছেই না।আদিব কিছু বলে ঝাকিয়ে লোকটার কলার ছেড়ে দিলো,উনি শঙ্কিতভাবে কাউকে কল করলেন আর পাশের টেবিলেই থাকা ব্রিফকেসটা আদিবকে দেখিয়ে কিছু বলতে লাগলো।রিয়া বুঝলো এখানেও জোর জবরদস্তি চালিয়েছে এরা।কিন্তু আদিব এখানে হলে আরমান কোথায়?মিথি?

আদিবের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই দরজার কাছে এসে সামনে রাখা বড় ভেসটার সাথে ধাক্কা লাগে রিয়ার।পরে চুর্নবিচুর্ন হয়ে যায় ওটা।দরজা খোলা ছিলো,শব্দটা বাইরের ভিতরের সবার কানে পৌছেছে।আদিবও শব্দ শুনে ঘুরে তাকায় সেদিকে।নিচে পরে থাকা ভেস,আর চোরের মতো দাড়িয়ে থাকা রিয়াকে দেখেই বুঝলো কি ঘটেছে।তবে অতি সাহসী রিয়ার ওই চেহারা দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছিলো আদিবের।

‘বা রে আরমান,তোর আইডিয়ার তারিফ করতে হয়!সত্যিই রিয়া এদিক এসেছে!তবে যে কান্ড ঘটিয়েছে,তাতে তোর কাজের সাথে আমিও একটু মজা নিতে পারবো।কম জ্বালাইনি এ মেয়ে আমাকে! ‘

মনে মনে বলে লোকটার সাথে হিসাব শেষ করলো আদিব।রিসেপশন থেকে একজন দৌড়ে এসে রিয়াকে বললো,

-ভেতরে আসবেন?

-ন্ না মানে,আমি এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম।আর…

লোকটার গলার স্বর তৎক্ষনাৎ পাল্টে গেলো।বললো,

-এটা কি করলেন?এতোটা কাছ দিয়ে হাটছিলেন,খেয়াল করলেন না?

রিয়া আমতা আমতা করে বললো,

-আ’ম সরি।একচুয়ালি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম।

-তো ফুটপাত দিয়ে হাটতেন অন্যমনস্ক হয়ে।গেইটের এতো কাছে এসেছেন কেনো?

রিয়া নিজেকে শক্ত করে বললো,

-দেখুন,ভুল হয়ে গেছে বললাম তো।প্রয়োজন পরলে জরিমানা দিচ্ছি।

-হ্যাঁ তাই দিন,বস এসে এমনটা দেখলে চাকরী থাকবে না আমার।

এমন ব্যবহারও জীবনে ফেস করতে হলো জীবনে।আড়চোখে আশেপাশে তাকালো রিয়া,কিন্তু আদিবকে দেখে ওর অন্যকারো দিকে তাকানোর ইচ্ছাই উঠে গেলো।কড়া গলায় বললো,

-কত দাম এটার?

-সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা!

-কিইইইইই?

-জ্বীইইইইই!

-আরেহ্ এই একটা মাটির মটকার দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা?মজা করছেন?

-দেখুন,এটা ইম্পোর্টেড।

-তো সে দেশের মাটির সাথে কি সোনাদানা থাকে নাকি?

-দেখুন ম্যাম,এটাই দাম।এটাই দিতে হবে আপনাকে।

-বোকা পেয়েছেন আমাকে?এখন আমি এটা কোনোদিন কিনি নি জন্য বোঝাতে আসছেন এসবের দামের আইডিয়া নাই আমার।আপনি যে সুযোগ নিচ্ছেন তা কিন্তু আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছি।

-আপনি যা খুশি ভাবতে পারেন।

আরো কিছু বলতে যাবে রিয়া তখনই মনে হলো এখানকার ব্যাপারটায় হ্যান্ডেল উইথ কেয়ার ঘন্টি বাজছে।অতো টাকা নাই ওর কাছে,দিবে কিভাবে?বাসা থেকে আনছি বললেও ওরা বিশ্বাস করে ছাড়বে না ওকে তা ও ভালোমতোই জানে।আদিবের দিকে একবার তাকালো।আশেপাশের কারো কোনো খবর নাই,তবে ওই লোকটা বেশ ভালোমতোই মজা নিচ্ছে।রিয়া গলা নামিয়ে লোকটাকে বললো,

-দেখুন,আমার কাছে এখন অতোটাকা নেই।কিছুক্ষন সময় দিন আমাকে।বাসায় কল করছি।

এই বলে যেইনা বাবার নাম্বারে ডায়াল করেছে আদিব লোকটাকে ওর সামনেই টাকাটা দিয়ে দেয়।লোকটা টাকা দেখে সাথেসাথেই নিয়ে নিলো।রিয়া কলটা কেটে দিয়ে আদিবের দিকে তাকালো।রাগী গলায় বললো,

-আপনি কেনো টাকা দিচ্ছেন?

আদিব ডোন্টকেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

-ইচ্ছা হলো তাই।

-কেনো ইচ্ছা হবে?আমার হাতে ভেঙেছে,আমিই টাকা দিবো।আপনার টাকা নিবো না আমি।

-আপনাকে দেইনি সেজন্যই।

-মানে?উনাকে দিবেন কেনো?

আদিবের রাগ হলো।উপকার করতে গিয়েও এ মেয়ে প্রশ্নের কাছে একবার টর্নেডো দর্শন হবেই।বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে গেলো ও।আদিবকে যেতে দেখে রিয়াও ওর পিছন পিছন যাচ্ছিলো।তারপর ভাবলো আগে টাকাটা ওই লোকের কাছ থেকে নেই।তাই রিসেপশনের লোকটাকে বললো,

-উনার টাকা কেনো নিলেন আপনি?

-দিলো তাই।

-ভেঙেছি তো আমি।উনার টাকা কেনো নিবেন?

-আমাদের টাকা কে দিলো তাতে মিনিং নাই,টাকা দিয়েছে,দ্যাটস্ ইট।আপনি এবার আসতে পারেন।

-কিসের আসতে পারেন?টাকাটা দিন,আগে উনাকে ফেরত দিবো তারপর আপনার টাকাটাও দিচ্ছি।

-কি ঝামেলা শুরু করলেন বলুন তো?যান তো,যিনি দিয়েছেন তাকে গিয়ে বলুন।

রিয়া বুঝলো এখানে মাথা ঠুকেও লাভ হবে না।আগে বাবাকে কল করে বিকাশ থেকে টাকা উঠালো,তারপর ছুটলো আদিবের খোজে।আর যাই হোক,ওর টাকা নিবে না রিয়া!এ লোকের পিছু করলে আরমান আর সাথে মিথিরও হদিস মিলতে পারে!

নিচদিক তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি।আরমান আমার হাত ধরেই মোবাইল ঘাটছেন।পা লেগে গেছে আমার একদম।ওদিকে আপি!ও বোধহয় আমার জন্য এতোক্ষনে পাগলপ্রায়,মরিয়া হয়ে খুজছে আমাকে হয়তো।বিরক্তি‌ নিয়ে বললাম,

-দেখুন আমার…

আরমানের ফোনটা বেজে উঠলো।আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

-নাও কথা বলো।

আমি ভ্রুকুচকে তাকালাম উনার দিকে।উনি বললেন,

-ইটস্ আরিশা।

ফোনটা নিলাম।আরু গড়গড় করে বলতে লাগলো,

-মিথি শোন,আমার পারফিউম শেষ।ভাইয়াকে কিনতে পাঠাইছি,ওর চয়েজ ভালো না।তুই আছিস,তুই একটা কিনে দিস।রাখছি।বাই।

কলটা কেটে গেলো।আমি কিনা ওর ভাইয়ের কান্ডকলাপ শুনাতে ফোনটা নিলাম আর ও,,

-শুনে নিয়েছো?বান্ধবীর কাজটা করে দাও।

ওহ্,এজন্য এতোক্ষন ধরে এতোসব করছেন উনি!বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।আমার দিকে একপলক তাকিয়ে উনি হাতটা ছেড়ে দিলেন।হয়তো বুঝেছেন,আরুর কাজটা আমি করে দিবো,যাবো না।হাত ছাড়া পেয়ে বুকে গুজে গাল ফুলিয়ে দাড়ালাম।আরমান একটা পারফিউম উনার কব্জিতে লাগিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।

-আমার কাছে দিন,আমি দেখে দিচ্ছি।

-পাকনামো না করলে চলে না তোমার তাইনা?

…….

-কি হলো?স্মেল ইট!

এতোবড়ো রাম ধমক!বেটা আস্ত খচ্চর!আমার সাথেই পারে খালি।পচাতে,ধমকাতে,অস্বস্তিতে ফেলতে!আমি নাক এগিয়ে শুকলাম।বললাম,

-এটা ভালো না।

উনি আরেকটা দেখালেন।ভালো ছিলো না ওটাও।উনার চয়েজকে একটু বেশি খারাপ দেখানোর জন্য নাক ছিটকিয়ে বললাম,

-ছিহ্!এতো বাজে স্মেল!ইয়াক!আপনি এসব ডিও কেনেন?

কথাটা তো বলে ফেললাম,কিন্তু উনার গায়ের ঘ্রান তো চেনা হয়ে গেছে আমার।সত্যি বলতে তার বুকে মুখ গুজে থাকতে কেমন নেশা লেগে যায়,আর,,,,,মিথি থাম!কিসব বকছিস তুই!পাগল হয়ে গেছিস নাকি?

-চুজ করে দেওয়ার কেউ নেই।বাধ্য হই এসবই কিনতে।

মন খারাপ করে বললেন উনি।কিছু বললাম না আর আমি।উনি অন্যদিক ঘুরে দাড়ালেন। আরেকবার হাত বারিয়ে বললেন।

-এটা দেখো তো।

এইটা সত্যি সত্যিই বিদঘুটে গন্ধের।পারফিউম কি না সন্দেহ!আমি দুর থেকে একটু গন্ধ পেয়েই নাক সরিয়ে নিলাম।দোকানদার বললেন,

-স্যার এটাই কিন্তু বেস্ট ছিলো।ম্যাম মেবি আপনাকে আরো দোকান ঘোরানোর ধান্ধায় আছেন।

আরমান রাগী লুকে তাকালো আমার দিকে।আমি বললাম,

-বিশ্বাস করুন,এ্ এটা একদমই ভালো না।উনি ক্ কি প্রোডাক্ট দিয়েছেন?নাম বলুন!কোন পারফিউম।

-আরেকটা কথা বললে…ভালো করে শুকে দেখো।

আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে উনার হাতর স্মেল করলাম।আরমান আস্তে করে একটু ফু দিলো আমার চোখে।চোখটা বন্ধ করে ফেললাম।পরে খুলতে গিয়েও আর খুলতে পারলাম না।সবটা আবছা হয়ে আসলো।ঢলে পরলাম কারো বাহুডোরে।

#চলবে…

®

[ রিপোস্ট এর আত্মকথা,

প্রতিটা পর্বে কপি,রিচেইক,এডিট,পোস্ট এগুলো ঘটছে। #এবিসি,#এসটি-২ টাইপিংয়ে আছি। একটানা পোস্ট করায় পড়লেও এ গল্পে সবাই রেসপন্স করছেন না। তবুও অনলাইন আসলে রিপোস্টের চেষ্টা করছি। তবে পাঁচ পর্বের বেশি একসাথে পোস্ট করা পসিবল না। আশা করি বুঝবেন বিষয়টা। ধন্যবাদ❤ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here