তোমাতেই অস্তিত্ব আমার পর্ব-১৩

0
1953

#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা

১৩.

রাগ সহ্য করে নেওয়াটা শিখলেও প্রিয় মানুষটার নির্বোধের মতো কাজগুলো কখনো কখনো সয়ে ওঠা যায় না।কোনো কোনো সময় একটু না বোঝার জন্য এতটা অভিমান জমা হয় যে তার কষ্টটা সহ্য করতে আরো বেশি কষ্ট হয়।না পারা যায় বুঝাতে,না পারা যায় অভিযোগগুলো চিৎকার করে বলে প্রকাশ করতে।তাই মুখ বুজে সবটা মেনে নিতে গিয়ে আরো বেশি করে জ্বলতে হয়।এমনভাবেই জ্বলছে আরমান।ভেতরটা দুমরে যাচ্ছে ওর মিথির কথা শুনে।হুট করে মিথির মুখে উচ্চারন করা শব্দটার রেশ কাটার মতো খোচাচ্ছে ওকে।গাড়ি অবদি একপ্রকার ধুকতে ধুকতে পৌছালো ও।আরিশাও মানতেই পারছে না আরমানকে এ কথাটা শুনতে হলো। রাগে দপদপ করে জ্বলতে জ্বলতে গাড়ির দরজা খোলে।আরমান ওকে থামিয়ে শান্ত গলায় বললো,

-এমন বিহেভ করছিস কেনো তুই?

আরিশা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,

-ভাইয়া?তুই এমন বিহেভ করছিস কেনো?ওখানে…

-হ্যাঁ,তুই ওখানে ওভাবে কেনো কথা বললি মিথির সাথে?

-এটা তুই জিজ্ঞাসা করছিস?ও তোকে…

আরমান এবার রাগী গলায় বললো,

-আরু।তুই কিন্তু জানিস ওর মেমোরি লস হয়েছে।

আরিশা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ফেললো।আসলেই তো!এটা ও কি করে ভুলে গেলো?রাগের বশে খারাপ ব্যবহার করে এলো মেয়েটার সাথে।ওরই এমন রাগ হয়েছে তাহলে আরমান?ও কি করে এখনো এতটা শান্ত হয়ে আছে?এতোটা পরিবর্তন?রাগ সংবরন করতে শিখে যাওয়া?প্রতিবারই দেখছে আর অবাক হচ্ছে আরিশা।কি করে,কতোটা ভালোবাসলে কেউ এভাবে থাকতে পারে।মাথাটা নিচু রেখেই বললো,

-আ’ম সরি ভাইয়া।

-সরি কি তোর আমাকে বলা উচিত?

-না।মিথিকে বলা উচিত।বলবো ওকেও।আগে তুই বল রাগ করিসনি আমার উপর তুই?

আরমান তাচ্ছিল্যের স্বরে হেসে বললো,

-রাগ!তোর উপর কেনো করবো বলতো?তুই তো কিছুই করিস নি,যেখানে নিজের…

-এভাবে বলিস না ভাইয়া।

-আসলে কি বলতো আরু,তোর ভাইয়ার জীবনটাই না একটু হাটকে টাইপের।এজন্যই তো বারবার…

-ভাইয়া প্লিজ তুই…

আরমান আরুর দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা প্রায় কেদেই দিবে এখন।মুখে বড় করে একটা হাসি টেনে বললো,

-কাদুনে বুড়ির চোখের জল হাজিরা দিতে এসে গেছে।

আরমানের আদুরে কথা শুনে আরো কান্না পেলো আরুর।বললো,

-ভ্ ভাইয়া,আ্ আমি…

আরমান আরুর গাল টেনে দিয়ে আরো হেসে বললো,

-এই চিনলি তুই আমাকে?জানিস না ইশতিয়াক আরমান এখন যে ফর্মে ব্যাক করেছে তাতে আমার ফিলিংস্ এখন কেমন হতে পারে?

-তুই তো স্যাড…

-ধুর!!স্যাড কেনো হবো আমি?আরু তুই জানিস,আমার এই জার্নিটা আমি সবার খুশির জন্যই শুরু করেছি।সো প্যারা নাই,চিল।

আরু কিছুটা শান্ত হলো এবার।ভাবলো এটাকে এতোটা ইস্যু না বানালেও হতো।আরমান বললো,

-কি হলো?হাস একটু?

আরু মৃদ্যু হাসলো।আরমানও একগাল হেসে বললো,

-গাড়িতে ওঠ।বাসায় গিয়ে কথা বলে নিস মিথির সাথে।

আরু গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে আরমান মিররে দেখলো মালিহা মিথির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসছে।মেয়েটার চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে,গিল্টি ফিল হচ্ছে ওর।হাটছে ঠিকই,তবে তা মালুর দায়িত্বে।নিচদিক তাকিয়ে কাদোকাদো ফেইস করে আসছে।কি দোষ করেছে না বুঝেও নিজেকে দোষী ভেবে কষ্ট পাচ্ছে ভেবে একটু হাসলো আরমান।গাড়িতে উঠলো না,ওদের সাথে কথা বলবে এজন্য ওখানেই দাড়ালো।

আচমকা কেউ ঝড়ের বেগে ছুটে এসে আরমানের বুকে মুখ গুজে ওকে শক্তভাবে জরিয়ে ধরে।আন্দাজ করতে পারছিলো,তার উপর চেহারাটাও দেখেছে আরমান।একরাশ বিরক্তি নিয়ে যেইনা মেয়েটাকে দুরে সরাবে বলে ওর হাতের কাধের নিচের অংশে ধরেছে,ঠিক তখনি মিথি চোখ তুলে উপরে তাকিয়েছিলো।একটা মেয়ে আরমানকে জরিয়ে আছে,আরমানও ওর হাতে ধরে আছে দেখেই পরের সেকেন্ডেই পিছনে ঘুরে যায় ও।অন্যকোনো মেয়ের গায়ে আরমানের স্পর্শের দৃশ্য সহ্য হয়নি ওর।চলে আসে ওখান থেকে।আরমান মেয়েটাকে একধাক্কায় গা থেকে ছাড়িয়ে রাগী গলায় বললো,

-এভাবে জরিয়ে ধরার মানে কি সুহানা?

সুহানা দু পা পিছিয়ে গিয়েছিলো।আরমানের এমন ব্যবহার আশা করেনি একদমই ও।একটু কাদোকাদো গলায় বললো,

-আরমান!এভাবে কেনো বলছো তুমি?লাস্ট চারমাসে কতো মিস করেছি তোমাকে তুমি জানো?একটাবারো কথা বলোনি কেনো আমার সাথে?মনে পরেনি তোমার আমার কথা?তুমি জানো,তোমার সাথে কথা বলার পরের ফ্লাইটেই আমি বোর্ড করে চলে আসলাম।তুমি এসেছো কথাটা বলার সাথে সাথে ইন্সট্যান্টলি বেরিয়ে পরেছি আমি।আমার…

ওর কথা কানে যাচ্ছে না আরমানের।দুটো চোখ খুজে চলেছে মিথিকে।এদিকেই তো আসছিলো ওরা।কোথায় গেলো?কখন গেলো?কেনই‌ বা গেলো?এমনটা তো হওয়ার কথা নয়!এই‌ ইরিটেটিং সুহানাটার জন্য দেখতেও পারলাম না কোনদিকে গেলো মিথি!
সুহানার আওয়াজ শুনে গাড়ি থেকে নামলো।আরিশা।সুহানাকে দেখে রীতিমতো তব্দা খেয়ে গেছে ও।মানুষের এতোটাও চেন্জ সম্ভব? নিজেরই চাচাতো বোনকে চেনা দায় হয়ে গেছে ওর।বিদেশফেরত ম্যামের পরনে গেন্জি,মিনি টপস্,জিন্সের মতো মর্ডান ড্রেসের পরিবর্তে লাইট গ্রিন কালারের গোলজামা,চুড়িদার।গ্রে কালারের ছোট চুলগুলো অনেকটাই বড়,ছাড়া। চুড়ির সাইজের মতো কানের দুল ঝুলতো যে কানে তা আজ খালি।হাতে ডায়মন্ডের ব্রেসলেটের জায়গায় একটা কমদামিই ঘড়ি।পায়ের সুচালো হাইহিলটাও চপ্পলে পরিনত হয়েছে!!!বিস্ময়ের স্বরেই বললো,

-সুহানা আপু!তুমি?

-হাই আরিশা!হোয়াটস্ আপ?কেমন আছো?

-হ্যাঁ,আলহামদুলিল্লাহ ভালো।কখন ফিরেছো?আর এখানে?

-ওহ!এসেছি বেশ অনেক্ষন।বাসায় গিয়েছিলাম,আন্টি বললো তোমরা এখানে, চলে আসলাম।

-আম্মু বলে দিলো তোমাকে যে আমরা এখানে?

-হ্যাঁ,কেনো বলোতো?

-এই আম্মুও না,জেনেশুনে আপদ পাঠিয়েছে,যাও আমার ছেলে মেয়েদুটোকে জ্বালিয়ে এসো।যাও।

বিরবির করে বললো আরিশা।সুহানা বললো,

-কিছু বললে?

-ন্ না মানে,বললাম ভালো করেছে আম্মু!

-হুম।আরমান?কাকে খুজছো তুমি?চলো না বাসায় যাই?

আরমানের হাত ধরে বললো সুহানা।আরমান এক টানে ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কটমটে চোখে তাকালো সুহানার দিকে।কিছুটা ভয় পেলো সুহানা।ও জানে আরমানের রাগ কতোটা ভয়ানক।কিন্তু ওর মতে ভালোবাসার মানুষটার রাগে ভয়ে দুরে থাকতে নেই,বরং কাছে গিয়ে রাগ ভাঙাতে হয়।ও যে ভালোবাসে আরমানকে।তাইতো প্রতিবার অপমানের পরও বারবার ছুটে আসে ও আরমানের কাছেই।

সুহানার ছ বছর বয়স থেকেই ওরা বিদেশে সেটেল্ড।বড় ভাই শোয়াইব চাকরিসুত্রে দেশেই আরমানদের কাছে থাকতো,সে নাকি দেশসেবা করবে।শোয়াইব আর আরমান ছিলো দো দিল এক জান টাইপ।নিজের ভাইয়েরও বেশি কিছু।তাই ওর থাকাতে আপত্তি করেননি সুহানার বাবা মা,যদিও তাদের বারন শুনতো না শোয়াইব।মা বাবা আর ছোট আরেকটা ভাই শাহরিয়ারের সাথে সুহানাও‌ বিদেশেই থাকতো।
ছোট থেকেই বাবা আর ভাইয়ার কাছে আরমানের অনেক প্রশংসা শুনে এসেছে সুহানা।এতেই মনে মনে ভালোলাগা শুরু হয়েছিলো ওর।বাবা,ভাইকে আরমানের কথা শুনাতে পাগল করে রাখতো সবসময়,একটু বড় হয়ে ভার্চুয়ালী যোগাযোগ হতো ওদের।আরমানও ছোট বোনের চোখেই দেখতো ওকে,কথা বলতো ওর সাথে।

বুঝতে শেখার পর সুহানার মনে হয় ওর ভালোলাগাটা ভালোবাসা হয়ে দাড়িয়েছে।আট বছর আগের ঘটনায় যখন দেশে এসেছিলো ওরা তখনই আরমানকে সুহানা ওর মনের কথা জানিয়ে দেয়।আরমান ওকে তখন অনেককষ্টে বুঝিয়েছিলো ওটা নিতান্তই বয়সের দোষ,তাই আবারো শান্তিপুর্নভাবেই বিদেশে ফিরে গিয়েছিলো ও।কিন্তু ছ মাস আগে যখন ও মিথির ব্যাপারে জানতে পারে,মাকে নিয়ে সোজা দেশে ফিরে আসে।ওর মাকে দিয়ে আরমানের সাথে ওর বিয়ের ব্যাপারে বলায়।

কিন্তু আরমানের মত ছিলো না বিয়েতে।সুহানার বিদেশী সংস্কৃতির বেশভুষাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না মিসেস জামান নিজেও,আফরোজ জামান সবটা ছেড়েছিলেন আরমানের উপর।তাই বিয়েটাও হয়নি।এটা সুহানার মা মেনে নিলেও সুহানা মানতে পারেনি কোনোদিনও।পরিস্থিতির জন্য আবারো ওদেশে ফিরে গেলেও ওর বিশ্বাস ছিলো আরমান ওকে নিজেই একদিন ফিরে আসতে বলবে।হয়েছেও তাই,তাইতো মায়ের বারন সত্ত্বেও ছুটে এসেছে আরমানের কাছে।আরমান অত্যন্ত রাগী গলায় বললো,

-দেখো সুহানা,গায়ে পরা স্বভাবটা বদলাও। আই ডোন্ট লাইক অল দিস।

-কেনো আরমান?হোয়াই?

-কেনো মানে?তুমি জানো আমার লাইফ অন্য কেউ আছে।তাহলে এসব ছেচড়ামোর মানে কি?

-ছেচড়ামো?

-নয়তো কি?তুমি জানোনা আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি?তারপরও এসব…কাজিন হও তুমি আমার,আমি শুধু বিজনেস পার্পোজে ডেকেছি তোমাকে।কান খুলে শুনে রাখো এটা।

-এভাবে কেনো বলছো আরমান?তুমি দেখো।দেখো আমাকে।ঠিক সেভাবে সাজিয়েছি নিজেকে আমি যেভাবে তুমি চাও।সি।আমাকে আর দুরে সরিয়ে দিও না প্লিজ।

-হুহ!একজনের মতো করে নিজেকে সাজালেই সে হওয়া যায় না সুহানা।এটা বুঝে নিও।এসব ছেড়ে দেশে এসছো যখন,আঙ্কেলের বিজনেসের কাজগুলো…

-না,আমার অন্য কিছু চাইনা।কিচ্ছু না।কেনো অতীত নিয়ে পরে আছো তুমি?সে তো নেই!আমি আছি,তোমার মনের মতোন করেই আমি আছি আরমান।

আরমান হাসলো।বললো,

-অতীত?ওটা আমার জীবনের চিরন্তন সত্য সুহানা!সে ছিলো মানে?সে ছিলো,আছে,চিরজীবন থাকবে।আর শুধু সেই থাকবে।তুমি বলছো তুমি আছো,কিন্তু তুমি তো কোনোদিন ছিলেই না সুহানা।

-না আরমান।এখন আমিই আছি।তোমার পাশে আমিই থাকবো,ওয়ান এন্ড ওয়ানলি মি।মিথি তো কবেই…

আরমান একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,

-মিথি ফিরে এসেছে সুহানা।

সুহানা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ওর দিকে।আরু এতক্ষন সবটা চুপচাপ শুনলেও এবার সুহানার মুখ দেখে কোনোমতে হাসি আটকে রেখেছে।

-ম্ মানেহ?

-ইন ইংলিশ,মিথি ইজ ব্যাক!

সুহানা একটু জোর করে হাসি ফুটিয়ে বললো,

-ই্ ইউ আর জ্ জোকিং।রাইট আরমান?

আরমান দাতে দাত চেপে বললো,

-তোমার সাথে আমার মজার সম্পর্ক?

সুহানা আটকে গেছে।সত্যিই তাই,ওর সাথে এ বিষয়ে অন্তত মিথ্যে বলবে না আরমান তা ও জানে।আরমান নিজে যখন ফোন করেছিলো ওকে ফিরে আসার জন্য,ভেবেছিলো হয়তো সবটা ভুলে আরমান ওকে মেনে নিবে।কিন্তু এখানে তো অন্যকিছুই। অবাককন্ঠে বললো,

-আরমান,ও কিভাবে…

-হেই!তোমার সাথে এতো কথা বলছি কেনো আমি?আরু,গাড়িতে ওঠ।

বলে সুহানাকে কিছু বলতে না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো আরমান।আরিশা জানে,ও গাড়িতে সুহানার জায়গা হবে না।বেচারি এখনো ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।বললো,

-সুহানা আপু!

-আরিশা,আরমান এসব…

-বাসায় এসো,সবটা বলবো।

-আমি আসি না তোমাদের সাথে?

-সরি আপু,ভাইয়াকে তো তুমি চেনোই।তারচেয়ে বরং তোমার গাড়িতেই…

-হুম।

আরিশা চলে আসলো।আরমান কোনোদিক না তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।মিথিকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে ওর।ফোন লাগালো মালিহার কাছে।মালিহা উর্বি কেউই ঘটনাটা মিথির মতো করে দেখেনি।ঘটেছে এতোটাই তাড়াতাড়ি।মিথির মন খারাপের কারন না বলতে পারলেও বাসায় যাওয়ার কথা আরমানকে জানিয়ে দেয় মালিহা।
চোখেমুখে একরাশ চিন্তা নিয়ে ড্রাইভ করছে আরমান।মিথি ওভাবে আসার পরও কেনো চলে গেলো?কি হয়েছে ওর?কি এমন দেখেছে যা মালিহা উর্বিও দেখে নি?আরিশা পাশে বসেই ভাইয়ের চেহারাটা দেখে কিছু বলতে যাবে তখন ফোনটা বেজে উঠলো।নাম্বার দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলো আরমান।মালিহা তো বললো মিথি সাবধানেই পৌছেছে।তাহলে এই লোক ওকে কল করলো কেনো?কানে গোজা হেডফোনে রিসিভ করতেই,

-তোমার কাজ হয়ে গেছে।

-ও রিয়েলি?

-মিথ্যা কেনো বলবো তোমাকে?

-মজাও তো করতে পারেন।

-তোমার সাথে মজা করার মতো ইচ্ছে,সময় কোনোটাই নেই আমার।জিনিসগুলো কবে,,,,

-ওয়েট ওয়েট মিস্টার আলম।এতো তাড়া কিসের আপনার বলুন তো?নাকি আমার স্বাভাবিক বিহেভে আপনার মনে মিথির ব্যাপারের ভয়টা একটু বেশিই কমে গেছে?

মাহবুব আলম দাড়িয়ে গেলেন সোফা থেকে।রেগে বললেন,

-হোয়াট ডু ইউ মিন?

-আই মিন টু সে ইজ,যদি ওগুলো হাতে পেয়ে আমার মন পাল্টে যায়?

-আরমান তুমি কিন্তু…

-আরে রিল্যাক্স মিস্টার আলম।কুল ডাউন।মজা করছিলাম।এতোদিন হয়ে গেলো,তবুও যখন মন পাল্টায়নি!আর মনে হয় পাল্টাবেও নাহ্ !

-আর কি চাও তুমি?সোজাভাবে বলো।

-লিসেন মিস্টার আলম,আপনার কাছে এমন আর কিছুই নেই যে আমি চেয়ে নিবো,আর আপনি দিবেন আমাকে।প্রয়োজন পরলে আমিই নিয়ে আসতে পারবো।

-তাহলে?কি করতে চাও কি তুমি?

-ওয়েল,জিনিসগুলো আর ক দিন আপনার কাছে রাখুন।সময়মতো নিয়ে নিবো।

-সোজাভাবে বললেই তো হয় এখন নেবে না।

-আমি সোজাভাবে বললেও আপনি সোজা কথার মানুষ নন।

-আরমান!

-বাই দ্যা ওয়ে,আপনার মেয়ে কোথায়?

ফোনটা কেটে দিয়ে রাগে ফুসতে লাগলো মাহবুব আলম।আরমান হু হা করে জোরে হেসে উঠলো।আরিশা কিছুই না বুঝে বললো,

-এভাবে হাসছিস কেনো?ওই লোকের সাথে কথা বলে এতটা আনন্দিত হওয়ার কিছু আছে বুঝি?

আরমান হাসতে হাসতেই বললো,

-তুই বুঝবি না আরু।লোকটা বেশ ইন্টারেস্টিং।

-ঠিকই আছে,মানাবে তোদের।

-মানাবে আমাদের মানে?তার মেয়েকে আনবো গাধি,তাকে নয়।

-আমি ফাইট ক্লাবের কথা বলছি।তুই পারিসও।

দু ভাইবোন একসাথে হাসতে লাগলো।কিছুক্ষন পর আরিশা একটু থেমে বললো,

-তুই সুহানা আপুকে ফোন করে আসতে বলেছিস?

-হুম।

-কিন্তু কেনো?ও এসে তো শুধু ঝামেলাই করবে।তুই তো জানিস ও…

-হুম জানি।শোন,আঙ্কেলের বিজনেস ওকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসে গেছে।আর মিথির ব্যাপারটা তো জানিসই।

-বুঝলাম।কিন্তু তাও…

-কোনো কিন্তু না,ইট ওয়াজ ইমারজেন্সি।

-হুম,যেটা তুই ভালো বুঝিস।

আরমান ড্রাইভে মন দিলো।মাহবুব আলম ওর এক্সপেক্টেশনের চাইতে একটু বেশিই তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ফেলেছেন।বাকা হাসলো আরমান,

‘ নিজেকে খুব চালাক মনে করেন আপনি তাইনা মিস্টার আলম?আপনার এতোটা শান্তভাবে কথা বলার ধরন দেখলে যে আমার অশান্তি লাগে সেটা কবে বুঝবেন বলুন তো?ট্রাস্ট মি,মনে হয় আপনি এতোটা স্বস্তিতে কথা বলবেন তখনি যখন আমাকে ব্যাকস্টেপ করতে পারবেন,বুঝতে পারি আমি।হোয়াটএভার,আমার খেলাতে আপনাকে বাজিমাত করতে দিতে পারবো না।সরি ফর দ্যাট!আগেরবার আন্ডারেস্টিমেট করেছিলাম আপনাকে,জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিলো আমার!এবার সবটা সেভাবেই হবে যেভাবে আমি সাজিয়েছি।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ!

ভার্সিটি থেকে এসে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে তার নিচে বসে যাই,কাদতে শুরু করি।মনে হচ্ছিলো কান্না করতে না পারলে দম আটকে মরেই যাবো আমি এখন।কিন্তু আমার কান্নার মতো তো কিছুই হয়নি।আমি তো এমন ছিলাম না।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সবার সাথে বসে লান্চ করলাম।
দুপুরটা একটু গরিয়েছে।মাইশু ঘুমাচ্ছে।আমি পড়ার টেবিলে বই খুলে হারিয়ে আছি ভার্সিটির সেই দু সেকেন্ডের দৃশ্যে।টুপটুপ করে পরা চোখের পানি মুছছি।একটা ছেলে!যে কিনা আমাকে বাজেভাবে স্পর্শ করে,কাছে চলে আসে,কেমন কেমন সব কথা বলে,তাকে কড়া কথা বলতে পারি না।তার স্পর্শকে অস্বীকার করতে পারি না।তার কথাতে জবাব দিতে পারি না।তার হাত কাটা দেখে কেদেছি।তার চিন্তায় ফোন অবদি করেছি।আর আজ!!আজ তো সব লিমিটই পার করে দিচ্ছি আমি।কেনো কাদছি?সেই ছেলেটা একটা মেয়েকে জরিয়ে ধরেছিলো বলে!তাতে আমার কি?তাতে তোর কি মিথি?তোর কি?কেউ হয় না ওই লোক তোর।কেউ হয় না।

‘আপন মানুষটা যখন ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়,স্পর্শ করে তখন রাগ না,মনে আনন্দ আর শরীরে অসম্ভব খুশির শিহরন বয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষটা যখন আঘাত পায়,সহ্য করা যায় না,তার জন্য চিন্তা হতে শুরু করে একটুতেই ‘

কথাটা শুনে চমকে উঠলাম আমি।তাড়াতাড়ি দু্হাতে চোখ মুখ মুছে,একটা শুকনো ঢোক গিলে,জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে রুমের দরজার দিকে তাকালাম।রিয়াপি এসেছে!এসময় ওকে একদম এক্সপেক্ট করি নি।হয়তো আগেরদিন ওভাবে কেদেছিলাম জন্য আজ না জানিয়েই চলে এসেছে এভাবে।
তার থেকেও বড় কথা ও এসব কথা কেনো বললো?আপন মানুষ,ভালোবাসার স্পর্শ,ভালোবাসার মানুষ?এসব তো আমার জন্য নাহ্!কাউকে তো কোনোদিন ভালোবাসি নি,আপন করি নি।তাহলে?কিন্তু সত্যিই কি কারো স্পর্শের শিহরন,আঘাতের চিন্তা,অন্যকাউকে তার পাশে সহ্য করতে না পারা এসবের মধ্য দিয়ে দিনপাত করছি না আমি?কেনো?কেনো এমন হবে?কোনোদিন কি ছিলো এগুলো আমার জীবনে?নাকি আমিই সবটা পেয়ে হারিয়েছি বা হারাচ্ছি?আপি বেডে বসতে বসতে বললো,

-কি হলো?কি ভাবছো?

-হুম?কিছু না আপি।তুমি এ বাসায়?

-হ্যাঁ,কেনো খুশি হও নি?

আমি জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,

-তোমাকে দেখে খুশি হবো না?এই চিনলে আমাকে?

-তাহলে মুখের এ হাল কেনো?

-ও কিছু না।

-তাই?

-হ্যাঁ।

-বেশ।

আমি উঠে গিয়ে মেঝেতে বসে ওর কোলে মাথা রেখে বললাম,

-আপি এসব কথা কেনো বললে তুমি?

-আজ হুমায়ন আহমেদের একটা বই পরলাম।ভালোবাসার কত্তো ডেফিনেশন তার কাছে।বাবা গো বাবা!তাই ভাবলাম তোমাকেও কিছু শুনিয়ে দেই।

-রিয়েলি?

-হুম।চলো বাইরে যাবো।সেদিন তো ঘোরাই হলো না।

-আব্বুকে বলেছো?

-হুম,ড্রয়িংয়ে আগে উনার অনুমতিই নিলাম।অবশ্য সিয়ামের কথা বলছিলেন আঙ্কেল।

-আপি,আব্বু এই লোককে…

-ডোন্ট ওয়ারি,মে হু না।ওই লোককে আমার একদম পছন্দ না।দরকার পরলে আমিই তোমাকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।

আপির কথায় একটু হাসলাম আমি।আপি ভ্রুকুচকে বললো,

-নাকি তোমার মত আছে?

আমি চেচিয়ে বললাম,

-আপিইইই!

-হুশ!শব্দ করো না।মজা করছিলাম তো।যাও তাড়াতাড়ি রেডি হও।মাইশু জেগে গেলে পিছু লাগবে কিন্তু!

আমি ঠোটে আঙ্গুল দিলাম।আপি ইশারা করতেই পা টিপে রেডি হতে চললাম,বেরোবো।ওর সাথে থাকলে অন্তত ভার্সিটির ঘটনা মনে পরবে না আমার।আপি বেডে বসেই মোবাইল ঘাটতে লাগলো।

#চলবে…

®

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here