তুমি_আছো_হৃদয়েঝ_তাই পর্ব_২৭

0
2119

#তুমি_আছো_হৃদয়েঝ_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব:-২৭

[আগেই সরি বলে নিই৷ গতকাল গল্প দেই নি। এমনকি পোস্ট করে পর্যন্ত বলি নি গল্প দিতে পারবো না৷ এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আজ দু’টো পর্ব দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সম্ভব হলো না। আগামীকাল দু’টো পর্ব দিবো এই আমার ওয়াদা রইলো❤️❤️❤️]

মাশরাত প্রশ্নের জবাব পেল না৷ দ্রুত হেটে গিয়ে চেয়ারের সামনে দাঁড়াতেই তার চোখ কপালে উঠে গেল। আধুনিক্তা বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে। মাশরাত হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে বলল-
“আজও ভার্সিটি যাও নি।”
আধুনিক্তা হাসিমুখে না সূচক মাথা নাড়াল। মাশরাত আধুনিক্তার দিকে ঝুঁকে বলল-
“পড়া চোর আমার মোটেও পছন্দ না। বড়োদের সাথে কথা বলে বিয়ে ক্যান্সাল করতে হবে।”
“তোমার হুমকিকে আমি ভয় পাই না। কান্নাকাটি করে আব্বুকে ব্ল্যাকমেইল করবো। তারপর আব্বু তোমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রাজি করাবে।”
মাশরাত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“এমন গুন্ডামী আইডিয় কোথায় পাও?”
“আমার ব্রেইনে এভেইলএবেল।”
মাশরাত হেসে আধুনিক্তার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে নিজে চেয়ারে বসে আধুনিক্তাকে কোলে বসিয়ে কপালে চুমু দিলো। আধুনিক্তা মাশরাতের গাল ধরে টেনে বলল-
“এত সুইট হয়ে গেলে কেন আজ?”
“কারণ তোমাকে পার্মানেন্ট পাবার জন্য পারমিশন পেয়ে গেছি।”
“জানো আব্বু গতকাল দাদাইকে বলছিলেন খুব শীগগিরি আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।”
“তাহলে তো ভালোই হবে। তো বলুন হানিমুনে কোথায় যাবেন?”
আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবলো। তার কুঁচকানো ভ্রু দেখে মাশরাত হাসলো। আধুনিক্তার ভাবা শেষ হতেই বলল-
“এমন কোনো জায়গায় যাব যেখানে সবসময় বৃষ্টি হয়।”
“এমন জায়গা তো খুঁজতে হবে।”
“তাহলে খুঁজে নিব।”
“ওকে”
আধুনিক্তা মাশরাতের বুকে মাথা রাখলো। বড্ড শান্তি লাগে মেয়েটা আশে পাশে থাকলে। তখনই দরজা ঠকঠক করার শব্দ আসলো। আধুনিক্তা তারাতাড়ি মাশরাতের কোল থেকে নেমে দাঁড়াল। মাশরাত দাঁড়িয়ে বলল ভেতরে আসতে। আধুনিক্তার বাবা দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন। মাশরাতের হঠাৎ লজ্জা লাগলো। বাবা দেখে ফেলেনি তো? বাবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই বললেন-
“মাশরাত ফাইল নিয়ে এসেছো?”
“জি স্যার টেবিলের উপর রেখেছি।”
“ফাইলটা দাও আমি তোমার বস এর কেবিনে গিয়ে চেক করি।”
“স্যার আপনি আপনার কেবিনেই বসুন আমরা চলে যাচ্ছি। আর এমনিতেও আমার কাজ আছে।”
“আমার মেয়ে প্রথমবার এই অফিসে এসেছে। তার দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলাম। টেক কেয়ার অফ হার।”
“কিন্তু স্যার আমার কাজ?”
“এই অফিসে কর্মচারীর অভাব নেই। আধুনিক্তাকে নিয়ে বাহিরে যাও।”
“ওকে স্যার”
মাশরাত ফাইল আধুনিক্তার বাবাকে দিয়ে দিলো। বাবা চলে যেতেই মাশরাত রাগী দৃষ্টিতে আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তা উল্টো রাগান্বিত ভাব নিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বলল-
“কি হলো চোখ রাঙাচ্ছো কেন?”
“তোমার কারণে আজ আমার লজ্জা পেতে হলো। কেন আসলে অফিসে? আমার কি কাজ নেই?”
“অফিস এর কাজ তো সবসময়ই করো। আজ নাহয় আমার বডিগার্ড হয়ে যাও।”
“ইশশশশ আসছে কুইন এলিজাবেথ বাংলাদেশ ভার্সন।”
আধুনিক্তা হেসে মাশরাতের কাছে গিয়ে বলল-
“আমি সত্যি একজন কুইন। আমার সবাই এমনভাবে যত্ন নেয় নিজেকে খুব লাকি মনে হয় মাঝে মধ্যে।”
মাশরাত মুচকি হেসে আধুনিক্তার হাত ধরলো। আলতো করে আধুনিক্তার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো। বলার মতো আর কিছু খুজে পেল না মাশরাত। আধুনিক্তাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে সব কর্মচারীর সাথে আধুনিক্তার পরিচয় করিয়ে দিলো। পরিচয় পর্ব শেষ হতেই আধুনিক্তা বলল সে বাহিরে যেতে চায়। মাশরাত লম্বা নিশ্বাস ফেলল। এই মেয়ের ডিমান্ড পুরো না করলে তার বাবা মাশরাতকে আস্ত গিলে খাবে। আধুনিক্তাকে নিয়ে মাশরাত অফিস থেকে বেরিয়ে পরলো। দুজন হাতে হাত রেখে রাস্তায় হাঁটছে। আধুনিক্তা মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত বিরক্ত চেহারা বানিয়ে রেখেছে। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে গেল। মাশরাতও দাঁড়িয়ে আধুনিক্তার দিকে তাকাল।
“কি হলো?”
“তুমি কার উপর রেগে আছো?”
“কারো উপর না, বলো কোথায় যাবে?”
“বাসায় দিয়ে আসো আমাকে।”
“আরে তুমি রাগছো কেন?”
“রাগছি না”
মাশরাত হেসে আধুনিক্তার গালে হাত রাখলো। আধুনিক্তা মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। মাশরাত আধুনিক্তার নাক ধরে টেনে বলল-
“রাগলে তোমাকে লাল রং এর বেলুনের মতো দেখায়।”
আধুনিক্তা ছোটো ছোটো চোখ করে মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত পকেটে হাত রেখে ইশারায় বলল হাটতে। আধুনিক্তা ভেংচি কেটে হনহন করে হাটা ধরলো। মাশরাত তার পিছু নিলো। কিছুক্ষণ হাটার পর মাশরাত বলল-
“চলো আইসক্রিম খেতে যাই।”
“আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“চলো তোমার মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে আইসক্রিম খেলে।”
মাশরাত আধুনিক্তার হাত ধরে হাটতে লাগলো। দোকান থেকে দু’টো আইসক্রিম কিনে ছায়ায় গিয়ে দাঁড়াল। রাস্তায় মানুষ খুব কম। গাড়ি চলাচল করছে রাস্তার মাঝে৷ আধুনিক্তা বলল-
“কোথাও গিয়ে বসি চলো। এইখানে খুব গরম।”
“চলো পার্কে চলে যাই।”
আধুনিক্তা মাথা নাড়াল। আইসক্রিম খেতে খেতে দুজন পার্কে চলে গেল। পার্কে সব প্রেমিক প্রেমিকা বসে কথা বলছে। আধুনিক্তার মাথায় দুষ্টুমি কথা আসতেই বলল-
“এইখানে সবাই অল্পবয়সী কাপলরা এসেছে৷ তোমাকে নিয়ে এইখানে বসলে আমার মানসম্মান চলে যাবে।”
“কেন?”
“কারণ তোমাকে দেখতে ৬০ বছরের বুড়োদের মতো লাগে।”
“আবার তুমি..ধ্যাত তোমার সাথে কথা-ই বলবো না।”
বলেই মাশরাত একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো। আধুনিক্তা মুখ টিপে হাসলো। তারপর আবার সিরিয়াস চেহারা বানিয়ে মাশরাতের পাশে গিয়ে বসলো।
“তুমি দেখতে যেমনই বসবাস হৃদয়েই করো।”
“জুতা মেরে গরু দান করা লাগবে না৷ তারাতাড়ি আইসক্রিম শেষ করো বাসায় দিয়ে আসবো তোমাকে।”
আধুনিক্তা হেসে মাশরাতের হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো। মাশরাত কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর আধুনিক্তা মাথা তুলে বলল-
“আমি মজা করছিলাম। যদি সত্যি তোমাকে হার্ট করে থাকি। আই এম সরি। যত যাই বলি তোমাকে। তুমি ছাড়া আর কারো ব্যাপারে আমি ভাবতে পারি না।”
“হুম”
“কি হুম? তুমি আমাকে কখনো বলো না আমাকে ভালোবাসো কি না।”
“বলেছিলাম, মনে করো।”
“কয়বার বলেছো বলো তো?”
“ভালোবাসা সবসময় প্রকাশ করতে হয় না।”
“আমার যে প্রতিদিন তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে ইচ্ছে করে।”
মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকাল। মেয়েটা সবসময় মন ভোলানোর হাসি দেয়৷
“ভালোবাসি, অনেক বেশী ভালোবাসা।”
আধুনিক্তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মাশরাতের কাঁধে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো। হঠাৎ মাশরাতের চোখ গেল অন্য দিকে৷ সেখানে কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। আধুনিক্তা মাথা তুলে মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাতের চাহনি দেখে সেও সেদিকে তাকাল। আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকে বলল-
“মেয়েটা কি মালিহা?”
মাশরাত আধুনিক্তার হাত ছাড়িয়ে দাঁড়াল। আধুনিক্তাও দাঁড়াল তার সাথে।
“মাশরাত ছেলেটাকে চেনো?”
“আমার বস এর ছোটো ভাই।”
“বস এর ভাই? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মাশরাত আধুনিক্তাকে সব বলল। আধুনিক্তা কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মাশরাত আধুনিক্তার রিয়্যাকশন দেখে বলল-
“কি হলো তোমার?”
“আফসোস”
“কিন্তু কেন?”
আধুনিক্তা কপাল থেকে হাত সরিয়ে বলল-
“তুমি বলেছিলে বস এর পরিবার খুব ভালো। মালিহার বিয়ে হলে সে খুব সুখী হবে।”
“আমি জানি, কিন্তু মালিহা রাজি না হলে আমি কি করতে পারি?”
“তুমি চাইলে আমি মালিহার সাথে কথা বলবো। এখন না, অন্য কোনোদিন দেখা হলে।”
মাশরাত জবাব দিলো না। হঠাৎ নাওয়াল মালিহার হাত ধরলো৷ মালিহা এক ঝটকায় হাত সরিয়ে রাগান্বিত ভাব নিয়ে কিছু বলে চলে গেল। নাওয়াল মাথা নিচু করে রেখেছে। মাশরাত ভেবেছিল নাওয়ালের সাথে গিয়ে কথা বলবে। পরে ভাবলো এখন যাওয়া ঠিক হবে না। আধুনিক্তার কল আসায় সে ফোনে কথা বলে নিলো। মাশরাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা কল কেটে বলল-
“মাশরাত আমাকে বাসায় দিয়ে আসবে? আরমান ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে এখন ঔষধ লাগাতে চাচ্ছে না। আমার জন্য কান্না করছে।”
“চলো তাহলে যাওয়া যাক।”
মাশরাত আধুনিক্তার হাত ধরে পার্ক থেকে বেরিয়ে পরলো। দোকান থেকে চকোলেট কিনে নিলো আরমানের জন্য। রিকশা নিয়ে আধুনিক্তার বাসায় চলে গেলো। মাশরাত ভেতরে গিয়ে আরমানকে দেখে চকোলেট দিয়ে কান্না থামিয়ে বাসা থেকে বের হলো। মাশরাতের কিছু ভালো লাগছে না। তার জীবন তো ধীরে ধীরে সিকিউর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার বোন? মালিহা কি নাওয়ালকপ পছন্দ করে? মাশরাতের মাথা কাজ করছে না। মাশরাত অফিসে ফিরে আসলো। বস আর আধুনিক্তার বাবা বসে কথা বলছে বস এর কেবিনে।
“সরি বস আজ আমি কাজে সাহায্য করতে পারলাম না।”
“ইটস ওকে মাশরাত, প্রজেক্ট অনেকটাই পুরো হয়েছে। আর আমাদের কাছে অনেক সময় আছে।”
বাবা বলল-
“আধুনিক্তা কি বাসায়?”
“হ্যাঁ আরমান পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। আধুনিক্তার জন্য কান্না করছিল খুব।”
“হুম আমার সাথে কথা হয়েছে৷ এখন ভাই বোন মিলে কার্টুন দেখছে।”
বস বলল-
“ওকে আমি তাহলে আসি, বাসায় তো কেও নেই। বাবু আর ওর খেয়াল আমারই রাখতে হবে।”
“আপনার ছোটো ভাইকে বিয়ে করিয়ে দিন। তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।”
“জি স্যার পাত্র খুঁজছি।”
“ইন শাহ আল্লাহ পেয়ে যাবেন।”
“ইন শাহ আল্লাহ, আজ আসি তাহলে। আর মাশরাত কিছু ফাইল আছে সেগুলো বাসায় নিয়ে গিয়ে তুমি দেখে নিও।”
“ওকে বস”
বস চলে গেলেন। মাশরাত টেবিলের উপর থেকে ফাইল নিয়ে ব্যাগে ভরে নিলো। বাবা মাশরাতকে মনমরা দেখে জিজ্ঞেস করলেন-
“কি হয়েছে মাশরাত? আধুনিক্তা কি কিছু বলেছে তোমাকে? কিছু বললে মন খারাপ করো না। জানোই তো ও কেমন।”
“না স্যার তেমন কিছু না। আমি কখনো আধুনিক্তার কথায় মন খারাপ করি না।”
“আচ্ছা, চলো তাহলে যাওয়া যাক।”
“বাসায় চলে যাবেন?”
“না, আমার অফিসে।”
“আমি গিয়ে কি করবো স্যার?”
“কিছু না এইভাবেই যাবে, চলো।”
মাশরাত কিছু বলল না৷ বাবা দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো। মাশরাত কেবিনের লাইট অফ করে বের হলো৷ বাবার সাথে গাড়িতে বসে রওয়ানা দিলো বাবার অফিসের দিকে। মাশরাতের মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। বাবা উনার অফিসের সামনে গাড়ি থামালেন। মাশরাত গাড়ি থেকে নেমে বিল্ডিং এর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে পেছনে ফিরে বাবাকে দেখে মুচকি হাসলো। বাবা মাশরাতকে নিয়ে ভেতরে গেলেন। সব কর্মচারীর সাথে মাশরাতের পরিচয় করিয়ে দিলেন। মাশরাত খুব অবাক হয়েছে। আধুনিক্তার বাবা মাশরাতকে মেয়ের হবু স্বামী বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। বাবা মাশরাতকে নিয়ে লিফ্ট দিয়ে অফিসের ১২ তলায় চলে গেলেন। দুজন একটা রুমে গেল। রুমটা অন্ধকার। বাবা রিমোট দিয়ে লাইট জ্বালাতেই মাশরাত অবাক হয়ে চারপাশে তাকালো। এইটা বার-রুম৷ বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ সাজানো চারপাশে। বাবা ভেতরে গিয়ে মাশরাতকে ডাকলো। মাশরাত ভেতরে গিয়ে বলল-
“স্যার আপনি ড্রিংকস করেন?”
“হুম, মাঝে মধ্যে। কখনো এটাকে নেশা হতে দেই নি। তুমি খাও না?”
“না না, সিগারেটের নেশা ছিল আগে। ইদানীং কমে গিয়েছে সব নেশা।”
“গুড, কোনো কিছুকেই নেশা বানানো ঠিক না। আসো তাহলে আজ এক গ্লাস একসাথে হয়ে যাক।”
“নেশা হয়ে গেলে বাসায় যাবেন কিভাবে?”
“সেটা নিয়ে টেনশন করো না। আমি সবসময় লিমিট রেখে ড্রিংকস করি।”
বাবা গিয়ে চেয়ারে বসলেন। মাশরাত বাধ্য ছেলের মতো গিয়ে বাবার বরাবরের চেয়ারে বসলো। মাশরাতের চোখ গেল বারান্দার দিকে। আকাশ দেখা যাচ্ছে। মাশরাতের চাহনি দেখে বাবা বললেন-
“চলো বারান্দায় গিয়ে বসি।”
মাশরাত বাবার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াল। দুজন বারান্দায় গেলেন৷ সেখান ছোটো একটা টি টেবিল ও তিনটে চেয়ার রাখা। তারা চেয়ারে বসলেন, বাবা মদের বোতল খুলে দু গ্লাসে একটু একটু করে ঢেলে নিলেন। মাশরাতের দৃষ্টি আকাশের দিকে। সে কখনো পাহাড়ি এলাকারায় ঘুরতে যায় নি। হয় তো পাহাড় থেকে আকাশ এমনটাই সুন্দর দেখা যায়। বাবা মাশরাতকে ডাকলো।
“তুমি কোথায় হারিে আছো বলো তো।”
“কোথাও না স্যার”
“এখন স্যার বলতে হবে না। তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক। শ্বশুরকে বাবা ডাকাই যায়।”
মাশরাত মুচকি হাসলো। বাবা ইশারায় বলল গ্লাস নিতে। বাবার দেখাদেখি মদে এক চুমুক বসিয়ে নাক মুখ কুঁচকালো। বাবা হঠাৎ হেসে উঠলেন। মাশরাতের কিছুটা লজ্জা লাগলো।
“তোমার অভ্যেস নেই তাই টেস্ট এমন লাগছে।”
“আমার এক বন্ধুর বিয়েতে একবার ড্রিংকস করেছিলাম। তখন আমি ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলাম। সেদিন আম্মু আমাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। কারণ নেশার কারণে একটা ছেলেকে অকারণে পিটিয়েছিলাম। সেদিন পর থেকে মদ নামক জিনিসটাকে ভয় পাই।”
“এমনটা হয় কম বেশী সবার সাথে। আচ্ছা জানো তোমাকে এখানে কেন নিয়ে আসলাম আজ?”
“না বাবা”
“তোমার মন খারাপের কথা জানতে। বলো তো কি হয়েছে তোমার।”
“আধুনিক্তা আপনার মতো হয়েছে পুরো। কোনো কিছু না জানার পর্যন্ত পিছু ছাড়ে না।”
বাবা শব্দ করে হাসলেন। মাশরাত বলল-
“আমি আমার বোনকে নিয়ে টেনশনে আছি।”
“বোন? কি হয়েছে মালিহার?”
“তার কিছু হয় নি বাবা। আসলে আমার বস এর ছোটো ভাই ওকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু ও রাজি না।”
“বলো কি? তোমার বস এর পরিবার খুব ভালো যতটুকু জানি। সে তো খুব সুখী হবে।”
“সবাই এটা বলছে, কিন্তু আমার বোন মানতে চাইছে না। হয় তো তার না বলার কারণ আমি সেই অফিসের কর্মচারী।”
“হুম ঠিক বললে, আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।”
“কি?”
“আমি জানি তোমার জবাব কি হতে পারে। তবুও একবার বলে দেখি। আমার অফিস আমি একাই হ্যান্ডেল করি। আরমান বড়ো হতে হতে এই অফিস থাকবে কি থাকবে না আমি জানি না। আমার ব্যবসায় আমার মেয়েরও ভাগ আছে। আমি চেয়েছিলাম আধুনিক্তা আমার অফিস চালাতে সাহায্য করুক। কিন্তু আমার মেয়ে বাস্কেটবল খেলা নিয়ে থাকতো। আমি চাই তুমি বিয়ের পর আমার সাহায্য করো এই ব্যবসা চালাতে।”
“অফার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ বাবা। কেওই এমন অফারে না বলবে না৷ কিন্তু বাবা, আমি রাজি হতে পারবো না।”
“আমি জানতাম তুমি না বলবে। তুমি যদি চাও মালিহার বিয়ে তোমার বস এর ভাই এর সাথে হোক একবার ভেবে দেখতে পারো।”
“আমি ভেবে দেখবো।”

সময় ঘনিয়ে কেটে গেল ৩ মাস। গত ২০ দিন আগে মাশরাতদের প্রজেক্ট কমপ্লিট হয়েছে। সবাই বেশ খুশী মাশরাতের অফিস এর সাকসেস দেখে। মাশরাত ভেবে নিয়েছে যত যাই হোক সে কখনো এই অফিস ছাড়বে না। যে কোনো পরিস্থিতিতে তার বস এর সাথেই থাকবে। আধুনিক্তা গালে হাত দিয়ে বসে আছে৷ মা ড্রেস ডিজাইনারকে ইচ্ছে মতো বকছে৷ কারণ ডিজাইনার আধুনিক্তার জামায় গন্ডগোল করে ফেলেছে। এখন এটা সন্ধ্যার আগে কিভাবে ঠিক হবে? সন্ধ্যায় তো আধুনিক্তার গায়ে হলুদ। আধুনিক্তা হাসছে মায়ের অস্থিরতা দেখে। উনার একমাত্র মেয়ের বিয়েতে উনি কোনো কমতি চায় না। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাত ধরে বলল-
“আম্মু রিলাক্স মাথা ঠান্ডা রাখো। উনাকে তুমি ৩০ মিনিট ধরে বকাঝকা করছো। এতক্ষণে তো উনি জামা কিছুটা ঠিক করে ফেলতেন না-কি?”
“এখন কি এটা আমার দোষ?”
“নো মাই মম আমি সেটা বলি নি। আর আপনি, মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে না থেকে জামা ঠিক করে ফেলুন।”
ডিজাইনার মাথা নাড়িয়ে দৌড়ে পালালো। মা ধপ করে সোফায় বসে কপালে হাত দিয়ে রাখলো৷ আধুনিক্তা মাশের পাশে বসে মায়ের হাত ধরে কাঁধে মাথা রেখে বলল-
“আমার আম্মু যখন টেনশন করে একদম ভালো দেখায় না। দেখো আম্মু, সব একদম ঠিক আছে। জামা সময়ের মতো ঠিক না হলে তোমার যে কোনো জামা পড়ে আমি হলুদ ছোঁয়াতে বসে পরবো।”
“তোমার বিয়েতে কোনো কমতি হলে তোমার দাদাই আমাকে আর তোমার আব্বুকে ইচ্ছে মতো বকবে। উনার কলিজার টুকরার বিয়ে। উনি চান না কেও খুঁত বের করতে পারুক এই বিয়েতে।”
“চিন্তা করা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মন বলে সব ঠিক হবে।”
“তাই যেন হয়।”
আধুনিক্তা মায়ের গালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়াল। নিজের ঘরে এসে মাশরাতকে কল করলো। সকাল থেকেই সে মাশরাতকে কল করছে৷ কিন্তু মাশরাত কল ধরছে না। এমনকি মেসেজের রিপ্লাই পর্যন্ত দিচ্ছে না। আধুনিক্তা মোবাইল খাটের উপর রেখে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। ছেলেটা গতকাল রাতে কল দিয়ে কথা বলেছিল। এখন তো তার কোনো খবরই নেই।

অন্যদিকে…..
মাশরাত ঘর অন্ধকার করে বসে আছে। সে চায় না আজ মন খারাপ করতে৷ কিন্তু মন কিছুতেই ভালো হতে পারছে না। তার হাতে রয়েছে একটা নুপুর। নুপুরটা একটুখানি ভেঙে আছে। ধীরে ধীরে জং খেয়ে যাচ্ছে নুপুরটা। চেয়েছিল পিছুটানের কোনো নিশান রাখবে না নিজের সাথে৷ তাবাসসুমের ছবি পর্যন্ত ডিলিট করে ফেলেছে মোবাইল থেকে। কিন্তু এই নুপুরটা ফেলে দিতে পারে নি। মাশরাত মোবাইল হাতে নিলো। সকাল থেকে আধুনিক্তা ১৫ বারেরও বেশী কল দিয়েছে৷ কিন্তু মাশরাত মোবাইল সাইলেন্ট করতে রেখেছে। মোবাইলের পার্সোনাল নোটবুকে গিয়ে লিখলো,
“পিছুটান ফেলে আগে বাড়ার চেষ্টায় আছি। কিন্তু মনে হচ্ছে কেও পেছন থেকে ধরে রেখেছে। কখনো কি পাবো না এই অশান্তি থেকে শান্তি। তুমি আছো কোথায় তা তো জানি না। সত্য না জানার পর্যন্ত তোমাকে ভুলতে পারবো না। আধুনিক্তা আমার হৃদয় পুরোপুরিভাবে দখল করে ফেলেছে। কিন্তু তুমি নামক পিছুটান আজ পর্যন্ত আমাকে বেঁধে রেখেছে। প্রতি বছর আজকের দিনটা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে। প্রথমবার যখন এই দিনটায় তোমার জন্য নিজ হাতে কেক বানিয়েছিলাম হাতের তালু জ্বালানোর কারণে আম্মু অনেক বকেছিল। তবুও আমার মুখে হাসি ছিল। কেক খেয়ে তুমি বলেছিলে এত মজাদার কেক তুমি কখনো খাও নি। কিন্তু আমি খেয়ে অবাক হয়েছিলাম। এত ফালতু রান্না করতাম আমি আগে জানতাম না। জানি না আর কখনো তোমার দেখা পাব কি না। কিন্তু তোমার সাথে কাটানো কোনো মুহূর্ত-ই আমি ভুলতে পারবো না। তুমি যেখানেই থাকো সবসময় ভালো থাকো। আজকের দিনে আমার এরচেয়ে বেশী আমার কিছু চাওয়ার নেই। শুভ জন্মদিন প্রিয়।”

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here