#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৮
#Jhorna_Islam
“তার মানে বুঝতে পারছেন? তার মানে হলো আমি আপনার ডাক্তার। ডাক্তারের ডাক্তার ”
সোহা দায়ানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।
দায়ান প্রতিউত্তরে কিছু বলে না।সামনের পুকুরটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
এই ডাক্তার আপনি আমার ‘ফি’ দিবেন না? পরিচিত বলে কিন্তু ছাড় পাবেন না বলে দিলাম। পাই টু পাই দিতে হবে। আমি আবার কমার্সের ছাত্রী বুঝলেন? ক’ড়া হিসাব জানি।এতো দরদী না যে বলবো থাক,আপনিতো কাছের মানুষই দিতে হবে না।
তা ডাক্তার ম্যাডামের ফি কতো হলো?
— হিসাব করি নাই।পরে হিসাব করে জানিয়ে দিবো।
— ওকে অপেক্ষায় রইলাম।
এবার উঠো বাড়ি যেতে হবে। নয়তো সন্ধা হয়ে যাবে।বাড়িতে সবাই টেনশন করবে।বলেই দায়ান পাশে ফিরে সোহার দিকে। একি সোহা তো এখানে নেই! কোথায় চলে গেলো? চারদিকে চোখ বুলিয়েও কোথাও দেখতে পেলো না।মুহূর্তের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো নাকি মেয়েটা? দায়ান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বার কয়েক এদিকে ওদিকে খুঁজেও পায় না।তারপর ডাক দেয়,,,,,
— সোহা,,,, কই তুমি? সোহা?
— এই মিয়া এই যে আমি।
— দায়ান এদিক ওদিক তাকিয়ে ও কোথাও দেখতে পায় না। কোথায় তুমি? দেখলাম পাচ্ছি না তো।
— আরে উপরে দিকে তাকান।
দায়ান সোহার কথা মতো উপরের দিকে তাকিয়ে একটা টা’স’কি খায়।এইই এইই তুমি ওখানে কি করছো? পরে যাবে তো নামো বলছি।পরে তোমার বাবা তোমার কিছু হলে আমায় জেলে ঢুকাবে।
সোহা বড় একটা পেয়ারা গাছের ডালে বসে থাকতে পা ঝুলিয়ে। আর কিছু সময় পর পর পেয়ারায় কামড় বসাচ্ছে।
আরে আপনি না ডাক্তার? ডাক্তারদের ভ’য় পেলে চলেনা।তাদের বুক ভরা সাহস থাকতে হয় বুঝলেন?
ফালতু কথা বাদ দিয়ে বলো তুমি ঐখানে কি করছো? পরলে পা আর কোমড় আস্তো থাকবে?
আপনার দেখছি আমার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই দেখছি।
মানে?
আরে এটা তো ছোট গাছ।আরো কতো বড় বড় গাছে চড়েছি।এটা আমার কাছে কোনো বেপারই না।গাছে উঠা আমার কাছে দুধ-ভাত বুঝলেন?
কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা।গে’ছো কোথাকার।
চুপ করুন এই গাছের পেয়ারা হে’ব্বি টেস্ট। আহ্ কি ভালো লাগছে খেতে।আপনিও একটা নিন বলেই গাছ থেকে একটা পেয়ারা ছিড়ে দায়ানের দিকে ঢি’ল মারে।
দায়ান কোনো উপায় না পেয়ে, পেয়ারাটা কে’চ করে ধরে নেয়।তারপর বলে নামো বলছি। নয়তো তোমায় একা রেখেই চলে যাবো আমি।
এইইই না না নামছি আমি।আমায় আবার এখানে একা রেখে যাবেন না।দিনের বেলা যতোই সাহসী হই না কেনো রাতের বেলা আমি খুব ভ’য় পাই।এমনিতেই আমার হা’র্ট দূ’র্ব’ল।
হা’র্ট দূ’র্ব’ল মানে? দায়ান সোহার কাছে জানতে চায়।
সোহা দায়ানের কথায় পাত্তা না দিয়ে তারাতাড়ি নামতে নামতে বলে ও কিছু না।
এই আস্তে পরে যাবা তো।কে শুনে কার কথা।গাছের অর্ধেক থেকেই লাফ দিয়ে নিচে নেমে আসে।
তারপর কোমড় থেকে পেঁচানো ওড়না টা গায়ে ভালো ভাবে দিয়ে বলে চলুন এবার। বলেই বাড়ির পথে হাঁটা দেয়। দায়ান ও সোহার সাথে তাল মিলিয়ে হাটছে।
হাঁটতে হাঁটতেই সোহা দায়ানের দিকে তাকায়। তারপর হাতের দিকে চোখ যায়।একি আপনি পেয়ারাটা এখনো খাচ্ছেন না কেনো খান।অনেক ম’জা খেয়ে দেখেন।
দায়ান পেয়ারার দিকে তাকিয়ে বলে,, বাড়ি গিয়ে ধুয়ে খাবো, এমন ভাবে আমি খেতে পারবো না।
দায়ানের কথা শুনে সোহা থা’বা মেরে দায়ানের হাত থেকে পেয়ারাটা কে’ড়ে নেয়।
দায়ান হাঁটা থামিয়ে বলে,,একি নিলে কেনো? বললাম না বাড়ি গিয়ে খাবো!
সোহা কোনো কথা না বলে,নিজের ওড়নার এক অংশ দিয়ে পেয়ারাটা ভালো করে মুছে নেয়।তারপর আবার দায়ানের হাতে গুঁজে দেয়।
দায়ান হাটতে হাটতে পেয়ারায় কামড় বসায়। ওড়না টা নোংড়া না করলেও পারতে।বাড়ি গিয়ে ধুয়ে খেয়ে নিতাম।
এখন খেতে যা ম’জা লাগবে বাড়িতে গিয়ে সেটা পাবেন না বুঝলেন?
ওমম আসলেই পেয়ারাটা অনেক টেস্টি।কি সুন্দর একটা ঘ্রাণ।
তারপর আর তাদের মধ্যে কোনো বিশেষ কথা হয়নি।দুইজনই চুপচাপ বাড়ির কাছাকাছি এসে পরে। তার মধ্যে তমার সাথে পথে দেখা হয়ে যায়। তমা সব গুলো দাঁত বের করে লাজুক হেসে সোহাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।
তমা কে দেখেই সোহার ভালো মে’জা’জ টা গরম হয়ে গেলো।
— কিরে সোহা তুই ঐদিক থেকে এলি? আর আমি তোকে খুজে খুজে হয়’রা’ন। আমাকে না নিয়েই তোরা ঘুরে এলি? আমি কিন্তু তোর সাথে রা’গ করেছি।
আর আপনিও আমায় রেখে ঘুরে এলেন? এটা মানা যায় এটা কিন্তু অ’ন্যা’য়।
দায়ান তমার কথা শুনেনি এমন একটা ভা’ব করে বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। তমার দিকে একবার তাকায় ও নি।
— এই যাহ্ সোহা এটা কি হলো?
– কি হলো?
— দেখলি উনিতো আমার কথায় পা’ত্তা দিবে দূরে থাক,আমার দিকে তাকিয়ে ও দেখলো না।এটা কি ঠিক হলো?
— তো যা না গিয়ে বল,,,,” দায়ান কাকা গিভ মি সাম পা’ত্তা।” তারপর বাড়িতে নিয়ে রান্না করে খাবি।
— তুই এমন ভাবে কথা বলছিস কেনো? আর উনার মতো ছেলেকে কেউ কাকা ডাকে নাকি?
— সোহা মনে মনে সেই লেভেলের খুশি দায়ান তমাকে ইগনোর করে চলে গেছে বলে। উনি না ছে’চ’ড়া লোকদের একদম দেখতে পারে না বুঝলি তমা?
আমি কি ছে’চ’ড়ামি করলাম রে সোহা?
ও কিছু না সামনে থেকে সর বাড়ি যাবো আমি।বলেই সোহা তমাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো গান গাইতে গাইতে,,,, লা,,,লা,,,লা,,,।
তমা কিছু সময় সোহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দেয়। তারপর নিজেও উল্টো পথে হাঁটা দেয়।
———————————
দায়ান বাড়িতে ঢুকে নিজের রুমে না এসে সোজা বাবা মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দাড়ায়।তারপর জোরে নিশ্বাস নেয়। দরজায় নক করে।
দায়ানের বাবা- মা দুজনে বসেছিলো। বসে বসে দায়ানের বিষয় নিয়েই কথা বলছিলো।হঠাৎ করে দরজায় ন’ক পরায় দায়ানের মা জানতে চায় ,,,, কে?
আম্মু আমি!
দায়ান বাবা? আয় ভিতরে আয়।
দায়ান মায়ের কথায় রুমে ঢুকে। তার মা তাকে দেখে মুচকি একটা হাসি দেয়। কে জানে মায়ের এই মুচকি হাসিতে কি আছে! মন প্রান জুড়িয়ে যায়।মায়ের ঐই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকতেই মন চায়।
দায়ানের বাবা এতো সময় দাড়িয়ে ছিলো।দায়ানের কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে সে ও মুচকি হাসে। দায়ান হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রয় এক দৃষ্টিতে। এরাইতো সব দায়ানের।ওদের তো আর কেউ নেই দায়ান ছাড়া। দায়ান মনে মনে আওড়ায় আমার কিছু হয়ে গেলে এই দুটো মানুষের কি হবে? এতো দিন স্বা’র্থ’প’রের মতো শুধু আমার কথাটাই ভেবে গেলাম।একবারও ভেবে দেখলাম না এই দুইটা মানুষ আমার এমন অবস্থা দেখে কতো কষ্টে আছে।বাবা মায়ের মুখটাও কেমন শুকিয়ে গেছে এই কয়দিনে।হয়তো তার টেনশনেই খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে নি। এতো না নিজে ঠিক মতো খেয়েছে আর না ওদের দিকে খেয়াল দিয়েছে।দায়ানের এখন নিজেকে খুবই অপরাধী লাগছে।
আর বাবা মাকে কষ্ট দিবে না।তাকে ভালো থাকতে হবে।তার ভালো থাকার উপরই এই দুই জনের ভালো থাকা নির্ভর করে।
দায়ানের বাবা দায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়। দায়ান মুচকি হেসে বাবাকে গিয়ে ঝাপটে ধরে। তারপর বলে,,,, লাভ ইউ বাবা। তোমাদের অনেক অনেক ভালোবাসি।
কে বলে ছেলেদের কাঁদতে নেই।চোখ দিয়ে পানি বের হতে চায় না সহজে।এই যে নিজের ছেলেকে এতোদিন পর নিজের বুকে পেয়ে দায়ানের বাবার চোখের কোণে পানি এসে গেছে। ছেলের কথায় মন প্রাণ জুরিয়ে গেছে। দায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,,,,আমিও আমার বাপ কে খুব ভালোবাসি। আমি চাই সে যেনো সব সময় হাসি খুশি থাকে।দায়ান মুচকি হেসে কিছু সময় বাবাকে জরিয়ে ধরে রয়। তারপর মায়ের কাছে এগিয়ে যায়।
দায়ানের জন্য বিছানায় বসে ছিলো।দায়ান গিয়ে মায়ের কোলে শুয়ে পরে। তারপর হাসি মুখে মায়ের দিকে তাকায়। আম্মু তোমাদের আর আমায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এখন থেকে আমি ভালো থাকবো।তোমাদের আগের দায়ান হয়ে যাবো।রুশের বিয়ের পর গিয়ে হাসপাতালে জয়েন করবো।
দায়ানের বাবা ও এবার ওদের পাশে বসে।
তোমরা আর আমায় নিয়ে চিন্তা করবানা ঠিক আছে? দুইজন শরীরের কি হা’ল করেছো দেখেছো? এখন থেকে ঠিক সময় খাইবা আর ঘুমাইবা। বলেই আবার হাসে।
দায়ানের বাবা মা একে অপরের দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তির হাসি হাসে।
সোহা এতো সময় রুমের বাইরে দাড়িয়ে সব কথাই শুনেছে।ওদের তিন জন কে এক সাথে দেখে কি যে ভালো লাগছে।মনটা আনন্দে ভরে উঠলো এইটা ভেবে যে দায়ান আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
————————————
আজ সকলে এক সাথে রাতের খাবার খেতে বসে। দায়ান সবার সাথেই আজ হেসে কথা বলছে।দায়ানের পরিবর্তন দেখে সকলেই খুশি।
সোহা দায়ানের পাশে বসেছে আজ খেতে। খেতে খেতে দায়ান কে আস্তে করে ডাক দেয়,,, শুনুন!
দায়ান ও আস্তে করে বলে,,,বলো!
কাল খুব ভোরে উঠবেন বুঝলেন? আপনাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।
আবার কোথায়?
গেলেই দেখতে পাবেন।এখন বলা যাবে না।টপ সি’ক্রেট!
#চলবে,,,,,,