তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ (পর্ব ২)

0
1811

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

দায়ান হাসপাতালের ক্যাবিনে ঘুমিয়ে আছে। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। অথচ কিছু সময় আগে ঝড় গেছে রীতিমতো ক্যাবিনে আর পরিবারের লোকের উপর দিয়ে।
কি পা’গলামি যে করেছে সামলাতে সকলে হিমসিম খেয়ে গেছে।

দায়ানকে নিয়ে যখন হাসপাতালে আনা হয়। ডাক্তার তখন তারাতাড়ি করে ওর চিকিৎসা শুরু করে দেয়।কারণ এখানকার কম বেশি সকল ডাক্তারাই চিনে দায়ান কে।একেই এই হাসপাতাল থেকেই ডাক্তারি পাশ করেছে। তারপর এখানেই জয়েন হয়েছিল। দেশে ফিরে এখানেই জয়েন করার কথা।

প্রায় সকল চেক আপ করে ডাক্তার বিরস মুখে বের হয়ে আসে। রুশ আর দায়ানের বাবা তারাতাড়ি ডাক্তারের কাছে যায় দায়ানের পরিস্থিতি জানার জন্য।

দায়ানের বাবা বলে উঠে ডাক্তার আমার ছেলে ঠিক আছেতো?

রুশ ও এবার দায়ানের বাবার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,,,ডাক্তার বলছেন না কেনো কিছু? সব ঠিক আছে? আমার ভাই ঠিক আছে?

দেখুন পেশেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না।নিজের মন মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে চাপ পরেছে। তাও ভাগ্য ভালো পেশেন্ট আরেকটুর জন্য স্টো’ক করেনি। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তীতে করতে বেশি সময় লাগবে না।উনি হয়তো ট্র’মার মধ্যে আছেন।তাই নেক্সট টাইম উনাকে বেশি চিন্তা ভাবনা বা উত্তেজিত হওয়া থেকে বিরত রাখবেন।

ডাক্তার বেরিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর দায়ানের জ্ঞান ফিরে।এবার আগের থেকেও বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়। হাতের মধ্যে লাগানো স্যালাইনের সু’চ সব টেনে হিঁ’চ’ড়ে ছিড়ে ফেলে।সবাই এতো করে বলছে শান্ত হতে কারো কথা সে শুনছে না। শুনতে চাইছে ও না। তার একটাই কথা আমার তিশাকে চাই তিশাকে এনে দাও। নয়তো তোমরা সবাই আমার সামনে থেকে সরে যাও আমিও তিশার কাছে যাবো।

দায়ান তিশার কাছে যাবে বলেই আশেপাশে কিছু খুজতে থাকে। এবং পাশে একটা ছুড়ি পেয়ে ও যায়। সবার দিকে তাকিয়ে ছুড়ি টা হাতে তুলে নেয়। কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই হাতের মধ্যে এক টান মারে। হাত দিয়ে গলগলিয়ে র/ক্ত ঝড়তে থাকে। সবাই এবার দেখে চিৎকার করে উঠে দায়ান বলে।

কাঁপা কাঁপা হাতে দায়ান কাজটা করায় এবং তাড়াহুড়ো করায় বেশি কাটতে পারে নি। যতটুকু কেটেছে তা দিয়ে গলগলিয়ে র/ক্তের স্রোত ধারা বয়ে চলেছে।

সবাই যখন এগিয়ে আসে দায়ান কে বাঁধা দেওয়ার জন্য। তখন দায়ান বলে উঠে খবরদার কাছে আসবানা।নয়তো এটা দেখছোনা? ছুড়িটা দেখিয়ে এটা আমার গলায় চালিয়ে দিবো।

তারপর দায়ান নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর একটা শব্দ উচ্চারণ করে। আবার ছুড়ি দিয়ে হাতের সি’রা কাটতে নেয়,,,,,,দায়ান নিজে হাতে ছুড়ি পুনরায় লাগানোর আগেই দায়ানের মা চিৎকার করে উঠে দায়ান বলে।

দায়ানের কাছে এগিয়ে গিয়ে দুই গালে পর পর দুইটা ঠাস করে চ’ড় মে’রে দেয়।

দায়ান অবাক হয়ে ফেল ফেল নয়নে মায়ের পানে তাকিয়ে রয়। এই প্রথম তার মা তার গায়ে হাত তুলেছে।

তোর মরার খুব শখ না? যা মর আর বাঁধা দিবো না যা। তিশাই যখন তোর কাছে সব তখন যা করতে নিয়েছিলি কর আর কেউ তোকে আটকাবে না কেউ না। আমরা তোর কেউ না।এই মানুষ গুলো তোর কেউ না।আমাদের ভালোবাসা তোর কাছে ফিকে।

তারপর দায়ানের বাবার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,,,,, ঐ মানুষ টার পুরো জীবনের আশা ভরসা তোর পিছনে ব্যয় করা ভু’ল।

দায়ানের বাবা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে দেয়ালে হেলান দিয়ে ।

আমরা তোর কেউ না তাই না রে দায়ান? ঠিক আছে আব্বা যা করতে চাইছিলেন করেন। তিশার কাছে তো আপনাকে যেতে হবে তাই না? তবে যাওয়ার আগে আমাকে আর আপনার বাবা কে দয়া করে মেরে দিন।শেষ করে তবেই আপনিও যান।

নয়তো আপনি না পারলে ছু’ড়িটা আমার কাছে দিন আমিই আমাদের শেষ করে ফেলি।মরে যাই।দুনিয়ায় থেকে তোর আগেই চলে যাই। যে ছেলে তাদের বাবা মায়ের কথা একটি বার ভাবে না।সেই বাবা মায়ের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না।

দায়ান মায়ের দিকে কিছু সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। তারপর বাবার দিকে।একে একে রুশ ও তার মায়ের দিকে ও তাকায়। সবার চোখে অশ্রু। তারপর কি যেনো ভাবে।পাশ ফিরে বাইরের জানালার দিকে তাকায়। ছু’ড়িটা ছুড়ে বাইরের জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।

সকলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তারপর দায়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো র/ক্ত ঝড়ছে। রুশ দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার কে ডেকে আনে। ডাক্তার এসে হাতে ব্যা’ন’ডে’জ করে দেয়। এবং ঘুমের ইনজেকশন পু’শ করে। এই সবটুকু সময় দায়ান এক দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মুখ দিয়ে সে একটা টু শব্দ ও বের করেনি।

তারপর ঘুমের ঔষধের প্রভাবে আস্তে আস্তে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়।

দায়ানের মা আস্তে করে ছেলের পাশে বসে। যে ছেলের চোখে কখনো একটু ব্যাথা পাওয়ার কষ্ট দেখেনি।এমন শক্ত মনের ছেলেটার আজ কি অবস্থা। চোখের কোন ভিজে আছে। নিজের শাড়ির আঁচল টা দিয়ে যত্ন সহকারে দায়ানের চোখ দুটি মুছিয়ে দেয়। তারপর কপালে চুমু একে দেয়। দুই ফোটা পানি বেরিয়ে দায়ানের কপালে গিয়ে স্থান নেয়। তার একমাত্র য’ক্ষে’র ধ’ন এটা।

সেইদিনের পর আরো দুই মাস কেটে গেলো দায়ান কে দুই দিন হাসপাতালে রেখে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো। বাড়িতে এসে দায়ান নিজেকে ঘর বন্দি করে ফেলে একেবারে। দিনে হয়তো একবার খেলে খায় না খেলে নাই।আরো রা’গী গম্ভীর হয়ে উঠেছে। নিজের প্রতি যত্নের ছিটে ফোটাও নাই অনেকখানি শুকিয়ে গেছে।দাড়ি গো’ফ বড় হয়ে আছে।চুল গুলো অনেক বড় হয়ে আছে।

বাড়ির সকলে বুঝিয়ে ও দায়ানকে ঠিক করতে পারে নি।তিশা যেই রুমে থাকতো সেই রুমে তিশার জিনিস পত্রের ছিটে ফোটাও নেই।দায়ান ভালো করেই জানে এটা তার মায়ের আর রুশের কাজ।তাও চুপ আছে কিছু বলছেনা।

————————
দায়ান এভাবে থাকতে থাকতে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। হয়তো পা’গলই হয়ে যাবে।

তাই বাড়ির সকলে ডিসিশন নিয়েছে হাওয়া বদলের দরকার। রুশের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তার মামাতো বোনের সাথে। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ছিলো দায়ান আসলে বিয়ের আয়োজন করা হবে।

রুশের মামা যেহেতু গ্রামের বাড়িতে থাকে।তাই সবাই মিলে ডিসিশন নিয়েছে গ্রামে যাবে।ঐখানেই বিয়ের আয়োজন করবে।কয়েকদিন সকলে মিলে থাকবে।এতে করে রুশের বিয়েও হয়ে যাবে। আর দায়ানের ও মনটা হয়তো কিছু টা ভালো হবে।

সকলে মিলে ঠিক করলো দুই এক দিনের ভিতর ই রওনা দিবে সেখানে।

দায়ানকে এবিষয়ে কেউ কিছুই বলেনি জানা আছে বললেও মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ ও করবে না।

ছেলেটা দিনকে দিন নিশ্চুপ হয়ে চলেছে। সারাদিনে মুখ দিয়ে দুইটা শব্দ বলে কি না সন্দেহ।

বিদেশ থেকে রিসার্চ করে ফিরে হাসপাতালে জয়েন করার কথা এক মাস রেস্ট নিয়ে।অথচ আজ দুই মাস হতে চললো। দায়ানের নিজের মনেই অসুখ মানুষকে কি সুস্থ করবে সে? দায়ান কে কাজের বিষয়ে কেউই কোনো জোর করেনি।সবাই দায়ানের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রহর গুনছে।

—————————————–

একটা বে’ঞ্চে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে দুই বান্ধবী সোহা আর তমা।

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে বর্তমানে দুই বান্ধবী রিলেক্স মোডে আছে। চড়কির মতো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেনো মুক্ত পাখি।

জীবনডা বে’দনার! বলেই সোহা তমার দিকে তাকায়।

— তমা ব্রু কোচকে ফেলে সোহার কথায়। জীবনডা বে’দনার কেনো হতে যাবে রে। তোর জীবন তোর হবে বে’দনার না।

— চুপ যা তা/মাক পাতা।একদম আমার কথায় ভুল ধরতে আসবিনা।

— হুহ্।

— এতো কষ্ট আমি কই রাখমু?

— তমা আবার ব’লে উঠে,,, আমাদের বাড়িতে একটা ড্রাম আছে এনে দেই? ঐখানে যত্ন সহকারে রেখে দে।

আমার সাথে মজা নিতে খুব ভালো লাগছে তাইনা রে?

— একদম না। আমিতো তোর সমস্যার সমাধান দিচ্ছি। ভালো লাগছে না তোর?

— তোর সমাধানের ক্ষে’তায় আগুন।

— এজন্য কারো উপকার করতে নেই।

— বহুত উপকার করলি তুই আমায় বোন আমার।তোরে তো একটা উপহার দিতে হয় এর জন্য।

— তমা খুশি হয়ে বলে,, কি দিবি দে।তবে ভালো কিছুই দিবি।

ওয়েট তোকে একটা গান শুনাই।

গানের কথা শুনেই তমার মুখটা চুপসে যায়। এই দিকে সোহা গান গাওয়া শুরু ও করে দিয়েছে।

“তমা কই? তমা নাই,আমি তমাকে চাই।
বারে বার শত বার আমি তমাকে চাই।”

সোহা গান টা গেয়েই এক দৌড় কারণ সে জানে এখন এখানে থাকলে তার পিঠে কয়েকটা পরবে।

#চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here