তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব ৬

0
2182

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam

রুমে এসে পায়চারি করছে আর রাগে ফুঁসছে সোহা।ঐই
লু/ইচছা ছেলেরে সামনে পেলে কাঁ’চা চি’বিয়ে খেতো।ওড়নার কষ্টে কান্না পাইতেছে।
দায়ান তো এমন না করলেও পারতো।ওড়নাটা এনে দিলে কি এমন হতো? দয়া মায়া’হীন লোক একটা।

এসব নানান কথা ভেবে অনেকক্ষন থো’ম মেরে বসেছিল।ভাবতে ভাবতে কখন যে বিছানায় এসে শুয়ে ঘুমের রাজ্যে হাড়িয়ে যায় খেয়ালই করেনি।

পেটে খিদে থাকায় ঘুমটা ভেঙে যায়।আড়মোড়া ভেঙে ওঠে বসে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বেজে গেছে। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়।

রান্না ঘরে যাওয়ার টাইমে সোফার রুমে চোখ যায়। দায়ান সোফায় পা তুলে বসে,পায়ের উপর ল্যাপটপ নিয়ে একমনে কাজ করছে।

“দেখো এখন এনাকে দেখে মনে হচ্ছে। এনার থেকে ভালো মানুষ আর একটাও নেই।” যেমন ভাজা মাছটা উ’ল্টো করে খেতে জানেনা হুহ।বলেই মুখ ভে’ঙচি দিয়ে চলে গেলো।

দায়ান সোহার উপস্থিতি টের পেয়ে একবার চোখ তুলে তাকায়।সোহা রান্না ঘরে যাচ্ছে। তাই সে আবার ল্যাপটপে চোখ রেখে কাজে মন দেয়।

প্রায় একঘন্টা পর সোহা রান্না ঘর থেকে বের হয়।হাতে খাবারের প্লেট। সব সাজিয়ে ডাইনিং এ রাখে।ফ্রেশ হওয়া দরকার।ঘামে শরীর চিপ’চিপ হয়ে গেছে।তাই রুমের দিকে হাটা দেয়। রুমে যাওয়ার সময় দায়ানের দিকে আবার তাকায়।দায়ান এক মনে কাজ করছে।তার যেনো অন্য দিকে কোনো ধ্যা’ন জ্ঞা’ন নেই।

পা’ক্কা পনেরো মিনিট পর বের হয়ে আসে সোহা।এসে দেখে সোফা ফাঁ’কা। গেলো কই এই ব্যা’টা? খাবে না নাকি?
এদিক ওদিক তাকাতেই ডাইনিং এ চোখ যায়।আর যা দেখে তাতে চোখ বড় বড় হয়ে যায়।এ কি দেখছে সোহা? দায়ান অলরেডি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কেমন পা/ষাণ লোক এটা? একেইতো বিকেলে কতো গুলো কথা শুনালো সরি বলে নাই।তারউপর এতো ক’ষ্ট করে ঘেমে নেয়ে রান্না করলো।একটু অপেক্ষা তো করতে পারতো।

হায়রে সোহা তুই কার থেকে কি আশা করস? এই বে’টাতো তরে দেখতেই পারেনা।আর না বউ হিসাবে মানে।

গু’টি গু’টি পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পরে।নিজেও খাওয়া শুরু করে।

বাড়িতে ফোন করে বলে দিবা, যেনো তোমার সব কাগজ পত্র আর টি.সি নিয়ে রাখে।ড্রাইভার কে কাল পাঠাবো আনার জন্য। হঠাৎ দায়ানের কথায় মুখ তুলে একবার দায়ানের দিকে তাকায়।কিছুই বলে না।আবার খাবারে মন দেয়।

দায়ান কথা গুলো বলে এক পলক তাকায় সোহার দিকে।অপরপাশ থেকে কোনো প্রতি’ক্রি’য়া না দেখে আর কথা বাড়ায় না।
চুপচাপ খাওয়ায় মন দেয় দুজনই।খাওয়ার টেবিলে আর একটা কথা ও হয়নি দুজনের মধ্যে।

দায়ান খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। রুমে যাওয়ার আগে এক পলক সোহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁ’ট প্রসা’রিত করে।আর দাঁড়ায় না রুমে চলে যায়।

সোহা একমনে ধীরে ধীরে বসে খাবার শেষ করে। সোহার খাবার খেতে একটু লেট হয়।তাড়াতাড়ি খাবার খেতে পারে না।তাই অনেক টাইম নিয়েই খাবার শেষ করে। সব কিছু গুছিয়ে, থালা বাসন ধুয়ে রান্না ঘরে রেখে আসে।ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে হঠাৎ ই হাত থেমে যায়।চোখ জোড়া সোফার উপর নিব’দ্ধ। ঐতো সোহার ওড়না।দৌড়ে গিয়ে ওড়না টা হাতে তুলে নেয়।মুখে খুশির ঝিলিক।ওড়না গায়ে জরিয়ে রুমে ঘুরা শুরু করে। ওড়নায় চুমু খায়।

আহা আমার জামাই জা’ন টারে হুদাই আমি এতো বকছি।স’রি জামাই।মনে মনে বকা দিছি তাই মনে মনেই স’রি বলে দিলাম।যতোটা খারাপ ভাবছে লোকটা ততোটাও খারাপ না।ভিতরে একটা নরম মন আছে কাউকে দেখায় না।

দায়ান দরজার পাশে দাড়িয়ে বুকে হাত গুঁ’জে এতোক্ষন সোহার দিকেই তাকিয়ে ছিল।একটা ওড়নার জন্য এতো খুশি? আর কিছু না ভেবে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় দায়ান।নয়তো এই মেয়ে দায়ান কে দেখে ল’জ্জায় পরতো।

——————————-

ওমি বাড়িতে এসেই চি’ল্লা চি’ল্লি শুরু করেছে।তনয়া বেগম নোহার নামে নানান কথা ওমির কানে তুলেছে। নোহা কিছু করেনা।সব তনয়া বেগম কে করতে হয়।একটা কাজে ও হাত লাগায় না।কিছু বললে মুখে মুখে তর্ক করে।ভালো ভালো খাবার গুলো বেছে বেছে খেয়ে ফেলে।
প্রতিদিন ছেলে বাড়িতে আসার পর ওনার প্রধান কাজ ই এটা।ছেলের কানে নোহার নামে বি/ষ ঢালা। অথচ একটা কথা ও সত্যি না।সারাদিন গা/ধার মতো খাটে নোহা।একটু বিশ্রাম নেওয়ার ও জো নেই। তনয়া বেগম একটা কাজ শেষ হওয়ার আগেই আরেকটা সামনে রেখে যায়।খাবার মুখে দেওয়ার ও সময় পায় না।কাজ করে যা ও খেতে বসে,ভালো খাবার জো’টে না। মাংস রান্না হলে ঝোলটাই কপালে জো’টে। তাও কিছু বলেনা নোহা।চুপচাপ মু্খ বুঁ’জে সব সহ্য করে।

ওমিটা বিয়ের প্রথম কয়দিন এমন ছিলনা।নোহার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতো।কেয়ার করতো।কিন্তু ধীরে ধীরে সব পা’ল্টে গেলো। তনয়া বেগম তার কানে নোহার নামে
বদ/নাম করতে লাগলো।মা অ’ন্ত প্রান ওমি।মায়ের কথা বিশ্বাস করতে লাগলো।আর নোহাকে শা’রী’রিক মানসিক ভাবে অত্যাচার করতে লাগলো।

তোর সাহস তো অনেক বেড়েছে দেখছি।তুই আমার মার হাতে সব কাজ করাস কোন সাহসে? তোকে কি বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য এনেছি?

সারাদিন বাড়িতে থেকে কি করিস? কোন না/গরের সাথে আলাপ করস ঘরে বসে?খেয়ে খেয়ে তো শীরর খালি তা/জা করতেছস।আজ থেকে দিনে একবেলা খাবার খাবি।
বলেই নোহার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে,ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।

নোহা গিয়ে টেবিলের কর্ণারের কোনায় বারি খায়।ব্যা’থায় চোখ মুখ কোচ’কে আহ শ’ব্দ করে ওঠে।

ওমি এসবে পা’ত্তা না দিয়ে।নোহার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে।হনহন করে ভিতরের রুমে চলে যায়।

নোহা ওখানেই বসে থাকে।নড়ার শক্তি টাও পাচ্ছে না।

তনয়া বেগম নোহার দিকে তাকিয়ে পৈ’শা’চিক আনন্দ পায়।হাসতে হাসতে কটা’ক্ষ করে বলে।বুঝো মজা কেমন লাগে।বেশ হয়েছে।আরো দেওয়ার দরকার ছিলো।

নোহা অশ্রু’শিক্ত নয়নে শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে থাকে।এই মহিলার কোন পাকা ধানে ম’ই দিয়েছে নোহা বোঝে পায় না।
আজ যে কপালে খাবার জোটবেনা ভালো করেই জানে নোহা।খাবার গলা দিয়ে নামতো ও না।মা ছেলের এতো আপ্যা’য়নে পেট এমনিতেই ভ’রে গেছে।

—————————————

পরের দিন দায়ান সকাল সকাল অফিসের জন্য বের হয়ে যায়। অফিসের ঝামেলার এখনো কোনো সমাধান খুঁ’জে পায় নি।এই নিয়ে একটু চি’ন্তায় আছে। কন’ফিডেন’সিয়াল
ফাইল গুলো এভাবে কিভাবে চুরি হয়ে যায়।ফাইলগুলো অফিসের সিক্রে’ট রুমে রাখা হয়েছিল।ঐ রুমের চারদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো।ক্যামেরা চেক করতে গিয়ে দায়ান দেখে সব ঠিক ঠাক আছে।বাট মাঝখানের কিছু মুহূর্ত ফুটেজে নেই। কেউ খুবই চতুরতার সাথে কেটে দিয়েছে।
যেই কাজটা করেছে মানতে হবে খুবই চালাক লোকটা।এবং বু’দ্ধি সম্পন্ন। সাহস ও আছে বলতে হবে।তানাহলে এতো কড়া সিকিউরিটির মধ্যে এরকম একটা কাজ কোনো ভাবেই সম্ভব না।তাও আবার এতো বড় একটা কোম্পানির ফাইল-পত্র।

দায়ান নিজের ক্যাবিনে বসে,,সিসিটিভি ফুটেজ গুলো বার বার চেক করতেছিল।যদি কোনো ক্লু পায়।

সকালে সোহা ঘুমে থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়। বাগানে গিয়ে গাছে পানি দেয়। একটু পরিচর্যা করে। বেলা হয়ে যাচ্ছে বলে ঘরে ফিরে আসে।এসেই রান্না ঘরের দিকে আগায়। এখনি রান্না করতে হবে।নয়তো দেরি হয়ে যাবে।উনি আবার অফিসে যাবে। তাড়াতাড়ি করে কি রান্না করবে ভেবে পায়না।দায়ান তো আবার সকাল বেলা তেল-চ’র্বি জাতীয় খাবার খায় ও না।অনেক ভাবনা চিন্তা করে,,,,,
ফ্রুটস সালাদ আর জেম পাউরুটি ঠিক করে নিল।এগুলাই দিবে। ডাইনিং এ প্লেট সাজিয়ে দায়ানের রুমের দিকে তাকায়। লোকটা এখনো আসছে না কেনো?

অফিসের সময় তো প্রায় চলে গেলো।ঘুম কি এখনো ভাঙেনি? নাকি মনেই নেই অফিসে যে যাওয়া লাগবে?

কিছু একটা ভেবে দায়ানের রুমের দিকে আগায়।দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। ডাকবে নাকি ডাকবেনা দ্বি’ধায় পরে যায়।
অনেক ভাবনা চিন্তা করে দরজায় হালকা করে টোকা দেয়।কিন্তু ঐপাশ থেকে কোনো প্রতি’ক্রি’য়া পায় না। এইবার শুকনো গলায় ঢুক গিলে ডাক দেয়।” শুনছেন”? তাও কোনো সারা শব্দ নেই।আবার ডাকে “শুনছেন,অফিসে যাবেন না? টাইমতো চলে গেলো!
,,,,,,,,,,,,,,
এইবার সাহস নিয়ে কাঁ’পা কাঁ’পা হাতে দরজার নবটা ঘুরায়।দায়ানের রুমে এখনো পর্যন্ত যাওয়া হয়নি।আস্তে আস্তে করে দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।

রুমে প্রবেশ করতেই শরীরে একটা শীতল হাওয়া এসে লাগে।সাথে পারফিউম এর তী’ব্র গ’ন্ধ। রুমের চারিদিকে চোখ বোলায়,,,,পুরো রুমে দামি দামি আসবাবপত্রে জায়গা করে আছে।রুমটা অনেক বড়।দেয়ালে একটা ফ্যামিলি ফটো।দায়ানের একপাশে একজন পুরুষ আর অন্য পাশে একজন সুন্দরী রমনী। পুরুষটির চেহারা আর দায়ানের চেহারা একইরকম দেখতে।বুঝে নিলো এরাই দায়ানের বাবা- মা। ওদের সম্পর্কে সোহা তেমন কিছুই জানেনা।শুধু জানে এরা আর পৃথিবীতে নেই। বেড সাইড টেবিলের উপর আরেকটা দায়ানের হাস্য’উজ্জ্ব’ল ছবি।ছবি দেখে সোহাতো পুরাই অবাক।এই লোক হাসতেও জানে? ইসসস হাসলে কতোই না সুন্দর লাগে গো আমার জামাইটারে।কিন্তু এই বেটায় কেমন গু’ম’রা মুখ করে থাকে।

হঠাৎ ই মনে হলো কি কাজের জন্য সোহা রুমে এসেছে।দায়ান কে আবার খুজতে লাগলো।কোথাও নেই।বারান্দায় গেলো ওখানেও নেই।বাথরুমের ও দরজা খোলা।কই গেলো এই লোকটা? চলে যায়নিতো অফিসে?

মনে হয় চলে গেছে। ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে সোহা।
নিজেকে খুবই তু’চ্ছ মনে হচ্ছে সোহার।একটাবার কি বলে যাওয়া যেতো না।স্ত্রী হিসেবে না হোক,,,,একই বাড়িতে থাকে।সেই মানবতার খাতিরে না হয় একটু বলে যেতো।

খেতে ইচ্ছে করছেনা সোহার।মনটাই বি/ষিয়ে গেছে।তাও জোড় করে এক টুকরো জেম পাউরুটি মুখে দিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলে,উঠে দাঁড়ায়।

তখনই কলিং বেল টা বে’জে ওঠে।ভ’য় পেয়ে যায় সোহা।এই সময় আবার কে আসলো? এখন কি কারো আসার কথা? উনিও তো বাসায় নেই।কি করবো আমি?

দাড়োয়াব চাচাতো লোকটাকে না চেক করে ঢুকতে দেয়নি।এটা ভেবেই দরজার দিকে এগিয়ে যায়।ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে। সামনে থাকা ব্যক্তিকে কিছু বলার আগেই লোকটা,,,,,,,,,,,,

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here