#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২২
#Jhorna_Islam
সোহা দায়ানকে খাইয়ে দিচ্ছে আর বকবক করে চলেছে।অবশ্য দায়ান নিজ হাতে খেতে পারলো না।এটিটিউড দেখিয়ে হাত থেকে প্লেট নিয়ে ও।সেটার জন্য ও মাঝে মাঝে খোঁচা দিয়ে চলেছে।
দায়ান নিজের মনকে শান্তনা দিচ্ছে, রিল্যাক্স দায়ান।একদম রা’গবিনা।এই মেয়েটা তোকে রাগানোর জন্য এমন করছে। আমার সাথে মজা নিচ্ছো তাই না।নিতে থাকো।জাস্ট একটু হাতটা ভালো হতে দাও তারপর দেখো আমি কি করি।
সোহা সবটুকু খাবার দায়ানকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়।তারপর খুব যত্ন করে মুখটা ওড়না টা দিয়ে মুছিয়ে দেয়।এখন তেমন জ্বর না থাকায়,কম্বল টা আলমারিতে ভাজ করে উঠিয়ে রাখে।একটা পাতলা চাদর এনে দায়ানকে বলে,,,,,
— শুয়ে পরুনতো দেখি।
— মাত্র তো ঘুম থেকে উঠলাম।এখন ঘুম আসবে না।
— ঘুম আসবে না মানে? ঘুমের চৌ’দ্দ ঘু’ষ্ঠি আসতেও বাধ্য।
— তুমি কি এখন ঘুমকে ডেকে নিয়ে আসবা? বললামতো ঘুম আসবেনা।আমি এখন ল্যাপটপে একটু অফিসের ই-মেইলের গুলো চেক করবো।ল্যাপটপ টা আলমারির প্রথম তাকে রাখা আছে দেওতো।
— এএ এই অসুস্থ শরীর নিয়ে উনি কাজ করবেন একদ’ম চলবেনা।ঘুমিয়ে পরুন।ঔষধের সাথে না ঘুমের ঔষধ ও আছে ওকে? এবার শুয়ে পরুনতো।
— সোহা তুমি কি শুরু করেছো বলোতো?
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে নিজেই দায়ানকে ধরে বালিশে শুইয়ে দেয়।তারপর কাঁথা টেনে শরীরে দিয়ে দেয়।নিজে দায়ানের মাথার পাশে বসে পরে। খুব সুন্দর ভাবে দায়ানের মাথার চুল গুলো টেনে দিতে থাকে।
দায়ান ঔষধের জন্য সাথে সোহার হাত বুলিয়ে দেওয়ায়।আবারো ঘুমিয়ে যায়। সোহা দায়ানকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।
মূহুর্তের মধ্যেই সোহার হাস্যে’জ্জ’ল মুখে নেমে আসে বিষা’দের ছায়া।
জানা নেই ভবিষ্যতে কি হবে।দায়ানের জ্বরের ঘোরে বলা কথা গুলো এখনো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দায়ানের প্রতি একরাশ অভিমান হয়েছে।দায়ানকে বুঝতে দেয়নি। এখন যতোই অভিমান করি কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।আরো বি’গ’ড়ে যাবে।
দায়ানের অতীত সম্পর্কে দায়ান নিজে থেকে না বললে আমি জিগ্যেস করবোনা।আমি চাই উনি নিজ থেকে উনার অতীত আমাকে জানাক।ততোদিন আমাকে ধৈর্য ধরতে হবে।
তারপর সোহা দায়ানের রুম থেকে বেরিয়ে দরজাটা একটু চাপিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
——————————————–
সকাল সকাল আজ পরিবারের সবাই একসাথে খেতে বসেছে। অবশ্য পরিবারের সবাই বললে ভুল হবে।নোহা বাদে সবাই।
নোহা এই পরিবারের সদস্য হয়ে উঠতে পেরেছে কিনা কে জানে।
সকালে সবাই এক সাথে খেতে বসে।নোহা তাদের খাবার বেড়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত। কেউ একবার বলবেও না যে তুমিও বসে পরো একসাথে খেয়ে নেও।পরে একা একা খাবে ভালো লাগবে না।
অবশ্য নোহা আশাও করে না।এতোদিনে যখন কেউ বলেনি।ভবিষ্যতে বলবে এটাও নোহা আশা রাখেনা।
মাঝে মাঝে সকালে সবাই খেতে বসলে।নোহা বেড়ে দেওয়ার সময় ওমির দিকে তাকায়।শশুর শ্বাশুড়ি নাই বলতে পারে। কিন্তু ওমি উনিতো একবার মুখের কথাটাও বলতে পারে।
কোনোদিন বলেনি।খাবার টেবিলে নোহাকে হু’কু’ম দিতে ব্যস্ত এটা এগিয়ে দেও।ওটা এগিয়ে দেও। অথচ মুখ তুলে একবার তাকিয়ে ও দেখেনা।মেয়েটা ওমির থেকে একটু কেয়ার একটু সাপোর্ট পাবার জন্য তৃ’ষ্ণার্ত কা’কের মতো ওমির পানে ওমির দিকে তাকিয়ে রয়।
ওমির থেকে কিছু আশা করা। আর কোনো জড় বস্তুর থেকে আশা করা দুইটাই সমান।
খাবার টেবিলে চামচের টুংটাং আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই।মাঝে মাঝে নোহাকে বলা হচ্ছে এটা ওটা দিতে।
এই একটা সময়ই নোহা কাজ করলেও শান্তি তে থাকে।শ্বাশুড়ি মায়ের ঝামেলা সহ্য করতে হয় না।শ্বশুর যখন বাড়িতে থাকে শাশুড়ি তখন দুধে ধোয়া তুলসি পাতা।
শ্বশুর সাংসারিক ব্যাপারে উদাসীন হলেও।যদি সংসারের অশান্তির কথা জানতে পারে,,তাহলে শ্বাশুড়ি কেই ঝাড়বে।নোহা শ্বশুর কে এই মহিলা ভ’য় পায়। তাই চুপচাপ থাকে।
খাবার টেবিলের নীরবতা ভাঙে নোহার শ্বশুরের কথায়।
— ওমি ঐদিকে সব ঠিকঠাক?
— জ্বি বাবা।
— প্রচারণা কেমন চলছে?
— ভালোই।তবে আর কিছু টাকা পয়সা লাগবে।লোকজন কে দিতে হবে। নয়তে এরা মন দিয়ে কাজ করবেনা।
— টাকা লাগলে টাকা নাও।প্রচারণা বাড়িয়ে দাও।বাড়িতে বাড়িতে যাও।ইলেকশনের কিন্তু বেশিদিন বাকি নেই।
— হুম বাবা।
— হুম বললে চলবে না।আমি ফলাফল চাই।এইবারো যেনো আমার পজিশন ঠিক থাকে।
— ওকে।
কথাগুলো বলেই নোহার শ্বশুর খাওয়া শেষ করে উঠে যায়।ওমি আর ওর মা এখনো খেয়ে যাচ্ছে।
এতোদিন নোহা যেই কাজটা করেনি আজ তাই করলো।শ্বশুর উঠে যাওয়ার পরপরই নোহা টেবিলে খেতে বসে পরলো।
ওমি একবার নোহার দিকে তাকায়।কিন্তু কিছু বলেনা নিজের খাওয়ায় আবার মন দেয়।
নোহার শাশুড়ী কটমট করে নোহার দিকে তাকায়।
আস্তে করে বলে,,,এই মেয়ে আমাদের খাবার শেষ না হতেই তুমি বসে পরলে কেনো খাবার খেতে?
আপনাদের খাওয়া তো প্রায় শেষের দিকে মা। তাই ভাবলাম আমিও বসে পরি।
শেষের দিকে শেষ তো হয়নি।
ওমি ততক্ষণে খাওয়া শেষ করে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দেয়।
তোমার সাহস দিন দিন বেড়ে চলেছ দেখছি।
সাহস আমার আগে থেকেই ছিলো কিন্তু দেখাই নি।
বড্ড বার বেড়েছো তুমি।
কথা বাড়াবেন না মা।শ্বশুর নিশ্চয়ই নিজের ঘরের অশান্তি সকালে কাজে যাওয়ার সময় সহ্য করবেন না।আর কার উপর রাগ ঝাড়বেন আপনি নিশ্চয়ই জানেন?
নোহার শাশুড়ী রা’গে গ’জ গ’জ করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়।
নোহা উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় মন দেয়।
————————————
দেখতে দেখতে দুই দিন কেটে গেছে।দায়ানের হাতের এখনো তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।সেলাই করা জায়গা শুকাতে টাইম লাগবে।
এই দুই দিন দায়ানের শরীরে হালকা জ্বর ছিলো।তবে এখন আর নেই।হাতে অবশ্য হালকা ব্যাথা আছে।
সোহাই দায়ানকে খাইয়ে দেয় এখন।দায়ান কিছু বলে না।এখন সোহার হাতে খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এই দুইদিন অফিসে ও যায় নি।অফিসের কাজ রুশই সামলাচ্ছে। দায়ান অবশ্য যতোটুকু পারছে বাড়িতে বসেই কাজ করছে।
সকালে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোহা,,দায়ানকে খাইয়ে দিয়ে এখন সোফায় বসে টিভি দেখছে।খুব মনোযোগ সহকারে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।
দায়ান রুমে বো’র হচ্ছিলো বলে ল্যাপটপ টা নিয়ে,,সোফার রুমে চলে আসে।এসে দেখে সোহা বসে টিভি দেখছে। দায়ান কথা না বাড়িয়ে অপর পাশের সোফায় পা তুলে বসে,,পায়ের উপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে।
সোহা টিভিতে কোনো ফানি সিন দেখে খিলখিলিয়ে জোরে হেসে দেয়।
দায়ান ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে সোহার হাসির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে,, মুখে বিরক্তিকর ছাপ ফুটিয়ে তুলে।
উফফ সোহা কি শুরু করেছো বলোতো? বাচ্চাদের মতো।এরকম ভ’য়ংকর ভাবে হাসলে,আশে পাশের মানুষ তো ভ’য় পাবে।
— কি বললেন আপনি?
— কেন তুমি কালা? শুনতে পাওনি কি বলেছি?
— আমার হাসি ভয়ংকর?
— তার উপর যদি কিছু থেকে থাকে ঐটাই।
— ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিলাম।
— আমিও তাই বলছি।তোমার এভাবে হাসা একদম ঠিক হচ্ছে না।
— আমার হাসি সুন্দর দেখে আপনার হিংসা হচ্ছে আমি জানি।নিজেতো আমার মতো হাসতে পারেন না।তাই আমার টা দেখলে হিংসে হয়।
— আমার বয়েই গেছে তোমার এরকম হাসির উপর হিংসে হতে।
–বুঝি বুঝি,,,
— ক’চু বুঝো।এরকম ভয়ংকর ভাবে আর হাসবে না।আশে পাশে কতো দূর্বল হার্টের মানুষ আছে।তারা ভয়ে হা’র্টঅ্যা’টাক করবে। আর আমি এদেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব আছে না।তাই তোমায় সাবধান করে দিলাম।
— এএএএ আসছে আমার সচেতন নাগরিক রে।আপনি জানেন আমার হাসি দেখে মানুষ ফি’দা হয়ে যেতো।কতো ছেলেরা আমার প্রেমে পরেছে আমার হাসি দেখে।
— ঐসব ভালো মানুষ না।তোমার মতোই পা’বনা ফেরত আধ-পা/গল বুঝলা।কোনো সুস্থ মানুষ তোমার এই হাসি দেখে প্রেমে পরবে না ভ’য় পাবে।
সোহা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দায়ানের ফোনটা বি’কট শব্দ তুলে বেজে উঠে।
দায়ান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে,,নিজের মুখে আঙ্গুল দেখিয়ে সোহাকে চুপ থাকতে বলে।
সোহা দায়ানের কথার উত্তর দিতে না পারায় রাগে ফুঁসছে।
দায়ান কল টা রিসিভ করে।
— হ্যা রুশ বল।
— স্যার না মানে দোস্ত। আজ তো দেশের বাইরে থেকে একজন আসার কথা।তর সাথে মিটিং ফিক্স ছিলো আজ বিকালে।উনি এসে পরেছেন।
— এক কাজ কর উনাকে বাড়িতে নিয়ে আয়।বাড়িতেই মিটিং সেরে ফেলি।এক সাথে লাঞ্চ ও করে নিবো।
— ওকে।
— আমি খাবার অর্ডার করে দিতেছি।
এতোসময় সোহা দায়ানের সব কথাই শুনেছে,,তাই খাবার অর্ডারের কথা শুনেই বলল,,এই খাবার অর্ডার দিবেন কেনো? আমি কি রান্না করতে পারি না নাকি? আমি করবো।
তুমি পারবানা দেশের বাইরে থেকে আসছে লোক।তার উপর আমি, রুশ।এতো জনের রান্না পারবানা।
আল’বাত পারবো।
কিন্ত,,,,,,,,,,,,
তাহলেতো ভালোই হয় দোস্ত। দোস্ত মানা করিস না।মি. এলেক্স সোহার রান্না পছন্দ করবে দেখিস।
ঠিক আছে তোরা যা ভালো বুঝিস।
দুপুরের আগে,আগেই রুশ মি. এলেক্স কে নিয়ে দায়ানের বাসায় উপস্থিত হয়।
সোহা ও ড্রইং রুমেই ছিলো।মি. এলেক্স এসেই দায়ানের সাথে হাত মিলাতে যায়।দায়ানের কাটা হাতের জন্য আর তা হয়ে উঠে না।তাই এমনিতেই দায়ান কে প্রশ্ন করে,,,,
হেই ডা’য়ান হোয়াটস আপ?
দায়ান কে ডা’য়ান বলায় সোহা ফি’ক করে হেসে দেয়। সোহার দেখা দেখি রুশ ও হেসে দেয়।
দায়ান সোহা ও রুশের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
দায়ানের তাকানো দেখে ওরা মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়।
মি. এলেক্স সোহা কে দেখে আধো আধো বাংলায় বলে,,,,হেইই টুমি কি মিসেস শেখ?
সোহা হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।
ওহহ নাইস টু মিট ইউ।হেয়াটস ইউর নেইম?
জ্বি সোহা।
চোহা? নাইস নেইম।
এইবার দায়ান শব্দ করে হেসে দেয়। সাথে রুশ ও।
সোহার মুখটা চুপসে যায়।
মি. এলেক্স বলে উঠে,,হেই হুঁশ আমি ফ্রেশ হবো।রুশ কে উদ্দেশ্য করে।
দায়ান এবার টিপ্পু’নি কেটে বলে,,আমার নাম শুনে খুব হাসি পাইতেছিলো তাইনা? আমার টা তাও দেশে আছে।কিন্তু তোমাদের টা।
চোহা,হুঁশ আহা তোমরা যেনো আবার হয়ে যেয়োনা বেহুঁশ।
#চলবে,,,,,,,
বিঃদ্রঃ নাম গুলো লিখে আমি নিজেই হাসতে হাসতে শে’ষ।