কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ১

0
1651

‘ উইল ইউ ম্যারি মি শ্রেয়া?আই লাভ ইউ সো মাচ।’

প্রিয়ার এংগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে সবার সামনেই প্রিয়াকে ছেড়ে ওর কাজিন কে হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করে বসলো ড. তামিমুল ইসলাম মাহিন। মুখে একরত্তি হাসি ফুটিয়ে শ্রেয়ার রেসপন্সের অপেক্ষা করলো সে।

আজ শহরের বিখ্যাত কার্ডিওলজিষ্ট ড. তামিমুল ইসলাম মাহিন ও প্রিয়ার এংগেজমেন্ট।ফ্ল্যাট বাসার ছোট্ট পরিসরে এতো বড় অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয় বলে কমিউনিটি সেন্টারে ওদের এংগেজমেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। দুই পরিবারের সদস্যরা সহ আত্মীয়-স্বজন ও চাকরির সূত্রে অনেক লোকজন এসেছে ওদের এংগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে।স্টেজে উঠার এনাউসমেন্টের পর প্রিয়ার হাত ধরে স্টেজে উঠে এলো তামিম।প্রিয়া একা একা যেতে লজ্জা পাচ্ছিল তাই ওর সাথে ওর দূর সম্পর্কের কাজিন শ্রেয়া ও গেল। তারপরেই…….….

তামিমের কর্মকান্ড দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে গেছে।যার সাথে বিয়ে তার হাতে আংটি না পরিয়ে তার কাজিন কে প্রপোজ করছে বিয়ের জন্য? ভ্রমরের মতো গুনগুন আওয়াজ উঠলো চারদিকে। এদিকে যেন তামিমের কোন হেলদোল নেই, সে আবার জিজ্ঞেস করল শ্রেয়া কে,,,

‘এবার বিয়ে করবে আমাকে? সারাজীবন ভালোবেসে আগলে রাখবো। জানি তোমার সাথে আমার ব্রেক আপের পর তুমি খুব আপসেট হয়ে গিয়েছিলে, সেটার জন্য সরি বলছি আমি। কিন্তু কি করব বলো,বাবা তার নিজের সিদ্ধান্তকে আমার উপর জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছিলেন।যার কারণে প্রিয়ার মতো একটা আনম্যাচিউর, কুৎসিত চেহারার মেয়ে কে আমায় বিয়ে করতে হতো কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।যদি তুমি আজ আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হও তাহলে আমি তোমার সামনেই নিজেকে শেষ করে দেবো।বলো আমাকে তুমি বিয়ে করবে কি না?’

শ্রেয়া তামিমের কথা শুনে মুখটা কালো করে চিন্তিত মনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল এরপর বাম হাত টা বাড়িয়ে দিল তামিমের দিকে।প্রিয়া এসব দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো, বোধশক্তি সব হারিয়ে ফেললো এভাবে অপমানিত হয়ে।কিয়ৎক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে কোনো রিয়েকশন না চুপটি করে স্টেজ থেকে নেমে এলো প্রিয়া,দু চোখে শ্রাবণের ধারা বইছে যেন। একটু দূরেই ওর বাবা দাঁড়িয়ে, বাবার কাছে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো প্রিয়া। নাজিম সাহেব মেয়ে কে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেলেন না।প্রিয়া সবে মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে, জীবনের কোনো রং দেখেনি এখনো ও। ছোট বেলায় মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে তিনি নিজেই মেয়ে কে কোলেপিঠে বড় করেছেন। আদরের মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখে নাজিম সাহেবের বুকে তীরের মত বিধঁলো যেন। কোনোরকম বাক্যব্যয় না করে প্রিয়ার হাত ধরে কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। যেখানে বাইরের একটা ছেলে কলিজার টুকরা টাকে এভাবে অপমান করলো সেখানে আর এক মুহূর্তও থাকার মানে হয় না। বেরিয়ে আসার সময় উনার হাত ধরে আটকে ফেলল সোবহান চৌধুরী।

‘ দোস্ত ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই আমার কিন্তু তারপরও বলছি ক্ষমা করে দিস পারলে। আগে যদি জানতাম আমার ছেলে টা এভাবে আমার মুখে চুনকালি মাখাবে তাহলে বিশ্বাস কর আমি কখনো প্রিয়া মা’কে আমার ঘরের বউ করতে চাইতাম না। আমি আমার ছেলেকে শিক্ষিত করেছি ঠিকই কিন্তু মানুষ করতে পারিনি।ক্ষমা…….’

সোবহান চৌধুরীর আর কোনো কথা না শুনে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে হনহন করে চলে গেলেন নাজিম সাহেব।প্রিয়াকে নিয়ে গাড়িতে এসে বসার পর ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো।মেইন রোডে এলোপাথাড়ি ভাবে গাড়ি ছুটছে, জানালার বাইরে মুখ বের করে দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল প্রিয়া। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে এসব কি ঘটে গেল তার জীবনে?শ্রেয়া আপাই ওর সাথে এমনটা কি করে করতে পারলো,আপাই কে তো ও সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। সেই আপাই কিনা ওর বরকে এভাবে নিজের করে নিলো?’আর কখনো তোমার সাথে কথা বলবো না আপাই ‘ মনে মনে এসব বলে দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠলো প্রিয়া।

প্রায় দেড় ঘন্টা পর গাড়ি রোজ ভিলার সামনে এসে দাড়ালো। গাড়ি থেকে নেমে প্রিয়া দৌড়ে বাসায় ঢুকে গেল, নাজিম সাহেব আর গাড়ি থেকে নামলেন না।প্রিয়া নিজের রুমে যাওয়া অবধি গাড়িতে বসে রইলেন। মিনিট দুয়েক পর কাজের বুয়া মালিয়া এসে বললো

‘পিয়া আফামনি তানার রুমে গিয়া দরজা বন্ধ কইরা রাখছে। আমি পিছন পিছন গিয়া দরজাডা খুলতে কইলাম কিন্তু আফামনি কোনো উত্তরই দিলেন আমারে।আফামনির কি অইছে সাহেব ?’

নাজিম সাহেব মালিয়ার প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন ওর দিকে কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। হাতের ইশারায় ড্রাইভার কে গাড়ি ঘুরাতে বলে জানালার গ্লাস উঠিয়ে দিলেন।

__________________________________

ওয়াশরুমে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে সেই কখন থেকে কেঁদে চলেছে প্রিয়া। চোখের পানি যেন থামতেই চাইছে না আজকে, মনের মধ্যে জমে থাকা সব কষ্ট আজ চোখের পানিতে ধুয়ে ধুয়ে আসছে।বেশকিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিলো। অতিরিক্ত কান্নার দরুন লাল টুকটুকে হয়ে গেছে চোখদুটো,নাক মুখ ফুলে আছে হালকা।টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে বাইরে বেরিয়ে এলো প্রিয়া। টেবিল ঘড়িতে দেখল রাত এগারোটা বাজে।আর কোনো কিছুতে মন না দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লো সে, প্রচুর ক্লান্ত লাগছে নিজেকে।শোয়া মাত্রই অতিরিক্ত চাপের কারণে দু চোখ আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে এলো প্রিয়ার।

_______________________________________

হসপিটালের এই মাথা থেকে ও মাথা শুধু দৌড়াদৌড়ি করে বেরাচ্ছে তামিম। মাথা কাজ করছে না তার। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ফ্লোরে বসে কাঁদতে শুরু করলো সে।

কিছুক্ষণ আগে……………….

শ্রেয়ার বাম হাতের অনামিকায় আংটি ঢুকানোর শেষ মুহূর্তে হঠাৎ করেই শ্রেয়া জ্ঞান হারিয়ে স্টেজেই লুটিয়ে পড়ে। এদিকে প্রিয়ারা কমিউনিটি সেন্টার থেকে চলে যাওয়ায় উপস্থিত সবাই সেটা নিয়ে বলাবলি করছে আর এদিকে শ্রেয়ার এভাবে মাটিতে পড়ে যাওয়া দেখে চারদিকে হুলস্থুল পড়ে গেল। তামিম নিজেই যেহেতু ডাক্তার সেহেতু ও খুব সহজেই বুঝতে পারলো যে অতিরিক্ত প্রেশারের কারণে হয়তো শ্রেয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। চোখে মুখে পানির ছিটা দেওয়ার পরেও যখন ওর জ্ঞান ফিরলো না তখন তামিমের মাথা পাগল পাগল লাগতে শুরু করেছে। কোনো কিছু না ভেবেই শ্রেয়াকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে এনে বসিয়ে ফুল স্পীডে ড্রাইভ শুরু করলো।বিশ মিনিটের মধ্যে হসপিটালে ও পৌঁছে গেল ওকে নিয়ে কিন্তু নিজে ওর ট্রিটমেন্ট করতে পারলো না। হসপিটালের আইনে কোনো ডাক্তার তার নিজের আত্মীয়ের চিকিৎসা করতে পারেন না তাই তামিম ও পারলো না।আর তখন সব ডাক্তার ও অফ ডিউটিতে চলে গেছে তাই এখানে ওখানে কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করে শেষে শ্রেয়ার খারাপ কিছু হয়েছে এই আ’শ’ঙ্কা’য় কাঁদতে শুরু করলো।

বর্তমান………….

কতক্ষণ ফ্লোরে বসে বসে কাঁদছিল কে জানে? তামিমের আশপাশে হসপিটালের অনেকেই ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। একজন ডাক্তার এভাবে হসপিটালে এসে কান্না করছে বিষয়টা বেশ রোমাঞ্চকর মুহূর্ত, সবাই উপভোগ করছে সেটা। কয়েকজন নার্স এসে ওকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু ওদের ও ধ’ম’কে বিদেয় দিল ।বেশ কিছুক্ষণ পর একজন বয়স্ক ডাক্তার ভিড় ঠেলে তামিমের কাছে এলেন। আশপাশের সবাইকে ইশারায় চলে যেতে বলে ওর কাঁধে হাত রেখে বললেন,,,,,

‘ ডোন্ট ওয়ারি ড. তামিম এন্ড কংগ্রাচুলেশন। এবার কান্না থামিয়ে একটু হাসো কারণ তুমি বাবা হতে চলেছো।’

ডাক্তারের কথাগুলো যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গের মতো ঠেকলো তামিমের কানে। সঙ্গে সঙ্গে কান্না থামিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ড. সারোয়ার হোসেনের দিকে। কি ভুলভাল ব’ক’ছে’ন তিনি, তামিম বাবা হতে চলেছে মানে?

‘ আপনি কি বললেন স্যার? আমি বাবা হতে চলেছি মানে?’

‘ ইয়েস মাই সান, তুমি বাবা হতে চলেছো। তোমার স্ত্রী শ্রেয়া ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট। কংগ্রাচুলেশন এগেইন তামিম।’

পাথরের মুর্তির মতো চুপ করে গেল তামিম।ড. সারোয়ার হোসেনের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে তার, তার মস্তিষ্ক বারবার জানান দিচ্ছে যে শ্রেয়া মা হতে চলেছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব যেখানে ওদিকে মাঝখানে ফিজিক্যাল রিলেশন ই হয়নি কখনও?

চলবে………………… ইনশাআল্লাহ

#কলঙ্কিত_প্রেমের_উপন্যাস {১}
#Rawnaf_Anan_Tahiyat

(আসসালামুয়ালাইকুম। অল্প বয়সী একটি কিশোরীকে নিয়ে এই উপন্যাস তাই ভুল ত্রুটি মার্জনীয়,সকলেই রেসপন্স করবেন দয়া করে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here