#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৯
স্নিগ্ধ সকালের ফুরফুরে হাওয়ায় সফেদ পর্দাটা মৃদু দোলনে আচ্ছাদিত। বাবুই আর শালিকের কিচিরমিচির কলধ্বনিতে আহানের ঘুম ছুটে গেলো। চোখ বন্ধ রেখেও ঘরে এক নাম না জানা মিষ্টি সুবাসের ঘ্রণ পাচ্ছে আহান। তার চেয়েও কড়া এক সুরভী নাকের খুব কাছে ঠেকছে।
মনে হচ্ছে কোনো কিছু তাকে আষ্টেপৃষ্টে আটকে রেখেছে,, বুকের মাঝে উষ্ণ গরম বাতাসের প্রখরতা উপলব্ধি করেই চোখ খুলে গেলো আহানের।
রেশমি সুতার মতো নরম চুলগুলো একদম মুখে উপচে পরে আছে, এক হাতে নিজের মুখের উপর থেকে চিকন রেশমি সুতার ন্যায় জিনিসটা সরাতেই দেখলো তুরা তার পায়ের উপর এক পা তুলে আর এক হাতে গলা জড়িয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে, একদম ছোট বাচ্চার ন্যায় মিশে আছে আহানের বুকে,,হুট করেই আহান কোনো রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারলো নাহ,,কি একটা মনে হতে এক হাত তুলে আঙুল দিয়ে তুরার মুখ থেকে এলোমেলো চুলের গোছা সরিয়ে দিলো।
গৌড়বর্ণের পাতলা মুখটাতে খাড়া সরু নাক আর চাপা ঠোঁট দেখতে ভীষণ সুন্দর! ঘুমের মাঝে নিচের ঠোঁট দুটো কামড়ে ধরে রেখেছে, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়াই তা আহানের চোখে মুখে আছড়ে পরছে।
বাচোখের কোণায় আর নিচের ঠোঁটের তিলটার জন্য মেয়েটার সৌন্দর্য যেনো কয়েক ধাপ প্রসারিত হয়েছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছে আহান, কোনো অজানা এক জিরি জিরি অনুভূতির জোয়ারের প্রতিশব্দ ভেসে আসছে যেনো। এই প্রথম তার মনে হলো তাকে এভাবে বাচ্চাদের মতো ঝাপটে জড়িয়ে ধরা মেয়েটা তার বউ! হুট করেই আহানের হুস ফিরলো।
কি ভাবছিলো সে এতক্ষণ! না এই বিয়েটার কোনো মানে আছে,আর না সে মানে! এক হাত দিয়ে তুরার পা নামিয়ে দিলো, হাতটা নিজের গলা থেকে নামিয়ে উঠতে নিলেই টি-শার্ট এ টান পরলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তুরা আরেক হাত দিয়ে তার পরনের পোশাক টা খামচে ধরে রেখেছে। ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সেই হাত টাও ছাড়িয়ে নিলো। মেয়েটার শোয়া খুব একটা সুবিধার না সেটা তার বেশ ভালো বোঝা হয়ে গেছে, মাঝখানের বালিশ টা পায়ের নিচে আর মাথার নিচের বালিশ টা নিচে ফেলে দিয়ে আহানের বুকটাকে বালিশ বানিয়ে কি সানন্দে ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা, এটা আবার কোন সিস্টেমের ঘুমানো আহান বুঝে পাইনা, এভাবে দেখেই তো আহানের গায়ে ব্যথা করছে।
বেশ বিরক্তি নিয়ে উঠে গেলো আহান,,ঘড়ির কাটায় আটটা বেজে পাঁচ মিনিট। আপাতত ফ্রেস হয়ে আসা দরকার। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুমের বাহিরে এসে দেখলো তুরা টিপটিপ করে তাকিয়ে এদিক সেদিক দেখছে, যেনো প্রথম কোনো ঘর দেখছে। আহান সেদিনে ভ্রুক্ষেপ না করে আয়নার সামনে গিয়ে মুখ মুছতে লাগলো
-শুনুন,আপনার না ঘরে ভূত আছে!
সকাল বেলা করে এমন উদ্ভট কথা আহান একেবারেই আশা করেনি। হাতের তোয়ালে নামিয়ে এক পলক তাকালো পেছনেই বসে থাকা মেয়েটির দিকে। যে আপাতত এদিক ওদিক চেয়ে আকাশ কুসুম ভাবনায় মত্ব।
-তোমার এমন কেনো মনে হলো?
গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে তুরা খানিক ঢক গিলে সেও গম্ভির মুখ করে বললো
-রাতে আমার পায়ে সুরসুরি দিয়েছিলো
তুরার এমন বেহুদা কথা শুনে সকাল বেলা করেই আহানের মেজাজ চড়ে গেলো
-কি যা তা বলছো, মাথার তার ছেড়া আছে?
-নাহ আমি সত্যি বলছি,রাতে আমার পায়ে সুরসুরি দিয়েছে,আরও আমার বালিশ কেড়ে নিয়েছে, এই যে দেখুন নিচে পরে আছে বালিশটা
বলেই নিচে পরে থাকা বালিশটাকে হাত দিয়ে দেখালো। আহান ওর দিকে ঘুরে দু হাত বুকে গুজে বললো
-তোমার মতো পেত্নীর কাছে কোনো ভূত ভুলেও আসবে নাহ
-আমি পেত্নী কেনো হবো?
-এভাবে একটা পুরুষ মানুষের সামনে ওড়না ছাড়া পেত্নীরাই বসে থাকতে পারে।
আহানের কথা শুনে তুরা তড়িৎ গতিতে নিজের দিকে তাকালো। সারা শরীরে যেনো ঠান্ডা হিম বয়ে গেলো৷ ঘুম থেকে উটার দরুন এতসব খেয়াল ই ছিলো নাহ যে তার গায়ের ওড়না টা নেই। হন্তদন্ত করে এদিক ওদিক খুজেও ওড়না টা পাচ্ছেনা। অথচ লোকটা বেহায়ার মতো সটান তার দিকে চেয়ে আছে। খাটের উপর কোথাও না পেয়ে ঘাড় এগিয়ে নিচে তাকাতেই দেখলো তার ওড়না টা ফ্লোরে লুটোপুটি খাচ্ছে। হড়বড় করে নেমে ওড়না টা কোনো মতে গায়ে পেঁচিয়ে নিলো তুরা।
-তোমার কি মনে হয় এভাবে ওড়না ছাড়া আমার সামনে ঘুরে অ্যাটেনশন পাবে?
তুরা হকচকিয়ে তাকালো, মানে? সে ওড়না না পরে কেনো অ্যাটেনশন নিতে যাবে,এই লোকটা তো আচ্ছা যা তা!
-এসব উদ্ভট কথা বার্তা নিতান্তই আপনার মনের ভুল
-তাই নাকি! তাহলে লজ্জা করলো না এভাবে পেত্নীর মতো ওড়না ছাড়া বসে থাকতে?
এহেন লজ্জাজনক কথায় তুরা চুপচাপ চোখ মুখ কুচকে রইলো। এই লোকটা প্রচন্ড ব’জ্জাত, এর সামনেই থাকা যাবে নাহ। চুপচাপ ওয়াসরুমের দিকে চলে গেলো, আজকে শুক্রবার হওয়ার ভার্সিটি যাওয়ার ও তাড়া নেই, আর উঠতেও যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে,তাই আজ আর শাওয়ার না নিয়ে শুধু ফ্রেশ হয়েই বেড়িয়ে এলো। ঘর পুরো ফাঁকা আহান নেই, যাক হাফ ছেড়ে বাচলো তুরা। লোকটার সামনেই থাকা যাবে নাহ। এক তো জল্লাদ তার উপর প্রচন্ড অসভ্য।
পরনের জামা টা ঠিক করে চুল গুলো হাতখোপা করে নেমে এলো তুরা,, বেশ দেরি করে ফেলায় এখন তারই লজ্জা হচ্ছে, শেষে কি না বাড়িতে মেহমান আসলো আর সে পরে পরে বেলা ভরে ঘুমালো। ডাইনিং এ খেতে বসেছে মিনু ফুফু আর আমেনা খাতুন, রাইমা নেই, এখনো নামেনি হয়তো। রান্নাঘরে একবার উঁকি দিতেই দেখলো রুবি খাতুন পরোটা ভাজছে। তুরা সোজা রান্নাঘরের দিকেই এগিয়ে গেলো,
-আমি সাহায্য করবো মা?
রিনিঝিনি চিকন কণ্ঠে রুবি খাতুন পাশ ফিরে তাকালো, খুন্তি দিয়ে পরোটা প্লেটে রেখে আরেকটা পরোটা প্যানে দিয়ে বললো
-ঘুম ভাঙলো! থাক তুমি ছোট, এসব পারবে নাহ। তুমি বরং টেবিলে বসো আমি নাস্তা আনছি
-আমি ছোট নই, আর এসব আমি বেশ পারি, ও বাড়িতে থাকতে সকালে চাচা চাচীর জন্যে তো আমিই নাস্তা বানাতাম
তুরার কথায় রুবি খাতুন ওর দিকে তাকিয়ে বললো
-তোমাদের ও বাড়িতে কতজন যেনো থাকে?
-চাচা চাচী,তাদের দুই ছেলে মেয়ে, চাচীর মা আর আমি ছিলাম
-ওত গুলো লোকের নাস্তা তুমি বানাতে?
-হ্যাঁ তো, রান্নাও আমিই করতাম।
তুরা বেশ হাসিখুশি মুখে বললেই রুবি খাতুন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন ওর দিকে। কতটুকু হবে বয়স। রাইমার ও অনেক ছোট, ছোট খাটো মুখখানা দেখলেই তো মায়া লাগে, আর এতটুকু মেয়েকে দিয়ে কি না রান্না করাতো, কি করে পারে মানুষ এতটা মায়াহীন হতে।
-দিন না আমাকে মা, এসে থেকে তো শুয়ে বসেই থাকি,আপনি কি আমার উপর ভরসা করতে পারছেন না?
তুরার কথায় ধ্যান ভাঙে রুবি খাতুনের,, থমকে যাওয়া চেহারায় হাসির রেখা এনে বলে
-তেমনটা নয়, আমি একাই পারবো
-আমি সত্যিই পারবো, আমায় যতটা ছোট ভাবছেন ততটাও নাহ, আমি অনেক কিছু পারি। দেখি আমায় দিন তো
বলেই রুবি খাতুনের হাত থেকে খুন্তি টা নিয়ে নিজে গিয়ে দাঁড়ালো। রুবি খাতুন আর কথা বাড়ালেন নাহ৷ থাক মেয়েটা যদি খুশি হয় তবে করুক। পরোটা ভেজে রাখা থাল টা নিয়ে ডাইনিং এ এগিয়ে গেলো। তুরা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝটপট করে কাজ সেরে পরোটা গুলো নিয়ে ডাইনিং এ আসলো। রাইমা ততক্ষণে নিচে নেমেছে। টেবিলে গিয়ে প্লেট রাখতেই তাকে দেখে মিনু খাতুন বললো
-আরে বউ। যাক তোমার মুখ তো দেখতে পেলাম। সকাল থেকে তো তোমার কদম ই নাই নিচে।
-আজ একটু দেরিই হয়ে গেছে উঠতে,তাই আরকি
আস্তে ধীরে তুরার বলা কথা শেষ না হতেই রাইমা বললো
-পরোটা গুলো কি তুই করলি তুরা?
-না নাহ,,মা ই করেছিলো। আমিতো শুধু এই কয়টা ভেজেছি।
বলে নিজেও রাইমার পাশে বসলো তুরা। রুবি খাতুন সকলের প্লেটে নাস্তা তুলে দিলো। ইনসাফ মাহবুব বেরিয়েছে সকালে হাটতে। আসার পথে বাজার করে আনবেন। বোন আসায় সে নিজে গিয়ে বাজার করে আনবে বলেছেন। তুরা খেতে বসে এদিক ওদিক চেয়ে দেখলো। আহান নেই, কোথায় গেলো লোকটা? পরক্ষনেই আবার ভাবলো যেখানে খুশি যাক, তার কি। থাকলেই তো অপমান শুরু করবে
-তা বউ রান্না বান্না কতটুকু যানো? আজকালকার মেয়েরা তো বাপু রান্নাঘরে পাও মাড়াতে চাইনা
খাওয়ার মাঝেই মিনু বলে উঠলো, উত্তরের অপেক্ষা না করে আবারও বললো
-আজ আমি বউয়ের হাতের রান্না খেতে চাই রুবি। তোর রান্নার প্রশংসা তো সারাজীবন ই করে গেলাম। তোর ছেলেবউ কেমন রাধে তা নাহয় দেখা যাক।
মিনুর কথায় ডাইনিং জুড়ে থমথমে পরিবেশ ছেয়ে গেলো। রুবি খাতুন তুরার দিকে একবার চেয়ে শাশুড়ী আমেনা খাতুনের দিকে চাইলো। তুরা এসে থেকে তাকে দিয়ে কোনো কাজই করাননি তারা। ইনসাফ মাহবুব বারবার বলেছেন, তুরাকে নিজের মেয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম না দেখতে, তুরার পড়াশোনায় যেনো কোনো প্রকার ক্ষতি নাহ হয়। আর তারা নিজেরাও তুরাকে সংসার নামক ভারি বোঝা এখনই চাপিয়ে দিতে চাইনি। মেয়েটা কি রান্না পারবে? মিনু যেমন খুতখুতে মানুষ? আমেনা খাতুন এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বলে উঠলো
-কি যে বলিস মিনু। ও তো এখনো ছোট, এতসব রান্না কি ও পারবে নাকি,আর…
-আমি পারবো দিদুন, আপনি চিন্তা করবেন নাহ। আজকে দুপুরের খাবার আমিই রান্না করবো।
আমেনা বেগমকে থামিয়ে তুরা বললো। সবাই বেশ অবাক হয়। এতগুলো মানুষের রান্না কি করে করবে তুরা। রান্না করা তো আর চারটে খানি কথা নয়।
-এত মানুষের রান্না তুই পারবি নাকি তুরা, অনেক চাপ হবে
রাইমার কথায় তুরা মৃদু হেসে বললো।
-এর চেয়েও অনেক বেশি চাপ আমি সয়ে এসেছি আপু। তোমরা তো আমায় তুলা শাড়ি করে রেখেছো এবাড়িতে। ওখানে থাকিতে এক বেলা রান্না না করলে চাচী তো আমায় খেতেও দিতো নাহ
তুরার মলিন হেসে বলা কথায় পা দুটো থেমে গেলো আহানের, ঘরের দিকেই যাচ্ছিলো সে, তুরার এমন কথা শুনে তার ও পা দুটো জমে গেলো। এক পলক তাকালো বসে থাকা মেয়েটার দিকে৷ যে খুব স্বাভাবিকভাবেই এত বড় কথা টা বলে দিলো। বাবার কাছে শুনেছিলো আহান, তোফায়েল আংকেলের ব্যাবসায়ীক সাফল্য তার বাবার চেয়েও বেশি, তার অঢেল সম্পত্তির একমাত্র অধিকারী তুরা, আর তাকেই কিনা কাজ না করলে না খাইয়ে রাখতো। আহানের মতো বাকি সবাই ও বেশ বিহ্বলিত তুরার এমন কথায়। আমেনা খাতুন পরিস্থিতি বুঝে কিছু বলতে নিলেই দরজার সামনে দাঁড়ানো আহানকে দেখে বলে
-দাদুভাই, কোথায় ছিলে তুমি, নাস্তা করার সময় হয়েছে তোমার।
আমেনা খাতুনের কথায় বাকিরাও তাকালো আহানের দিকে। আহান দুহাত ঝেরে বললো
-আমি পরে খাবো দিদুন। আপাতত বেলচা দরকার, সেটা পাচ্ছিনা
-বেলচা কি করবে তুমি
রুবি খাতুনের প্রশ্নে আহান গলা ঝেরে বললো
-বাগানের কিছু গাছ হেলে পরেছে, ওগুলোর পরিচর্যা প্রয়োজন। ওটা কোথায় রেখেছো মা?
-স্টোররুমেই আছে, এক্ষুনি দিচ্ছি
বলেই উঠতে নিলে মিনু থামিয়ে দিয়ে বললো
-তুই দারা রুবি। তুরা তুমি যাও। তোমার স্বামীর কোনটা দরকার এটা তো তোমারই বোঝা উচিত
মিনু ফুফুর কথায় তুরা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো,,আবারও ওই লোকটার সামনে যেতে হবে? তুরা যতবার ভাবে উনার সামনে যাবে না বারবার ই ফেসে যায়। আহান বেলচার কথা বলেই আবারও বাগানে গেছে। তুরা স্মিত হেসে সম্মতি জানিয়ে উঠে এলো। স্টোর রুমে গিয়ে বেলচা খুঁজে দরজা পেরিয়ে বাগানে এসে দাঁড়ালো।
আহান এক হাটু ভাজ করে সূর্যমুখীর বাগানে বসে গাছের গোড়া গুলোতে সার প্রকার কিছু দিচ্ছে। রাতের টি-শার্ট বদলে কফি কালার একটা হাফ হাতা টি-শার্ট পরেছে। বলিষ্ঠ হাতের বাহুতে এটে থাকা হাতাটা মারাত্মক আকর্ষণীয় লাগছে৷ কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামে সকালের সূর্য রশ্মি পরে জ্বলজ্বল করছে। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আবৃত গম্ভির মুখ খানার লম্বা চওড়া সুপুরুষের দিকে এক ধ্যানে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুরা। আহান সামনের দিকে ঘুরে কাজ করাই তাকে এখনো খেয়াল করিনি। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত রেখে পুরোটা আবারও পরখ করে পিছু ঘুরে তাকাতেই দেখলো তুরা এক দৃষ্টিতে তার দিকেই হা করে চেয়ে আছে
-ইউ! আবারও এসেছো আমার বাগানে?
চিরচেনা ধ’মকে তুরার ধ্যান ভাংলো। বাগানের দিকে তাকাতেই সেদিন রাতের কথা মনে পরে গেলো। চুপচাপ মুখটা নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো
-ওভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে বলিনি ওই ব্যাগটা নিয়ে এদিকে এসো
আহানের কথা শুনেও তুরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। লোকটা তাকে ডাকছে কেনো। মা’রবে না তো!
-কি হলো, শুনতে পাও না? এদিকে আসতে বললাম তো
তুরা প্রচন্ড দ্বিধাবোধ নিয়ে এগিয়ে গেলো। আহান ওর দিকে একবার রূঢ় ভাবে চেয়ে এগিয়ে গিয়ে সারের ব্যাগিটা নিয়ে আসলো। তুরার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে বললো
-নাও, এখন গাছের গোড়ায় সার দাও
-অ্যাঁহহ?
আহানের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কথায় তুরা হতবুদ্ধির মতো করে বললো।
-হোয়াট! অ্যাঁহ আবার কেমন ভাষা, রিডিকিউলাস।
তুরা কপালে ভাজ ফেলে তাকালো আহানের দিকে। এই লোকটা আচ্ছা ভেজাল৷ সব কথায় উনার খিটখিটানি
-এসব উইয়ার্ড টোন না দিয়ে চুপচাপ যা বলেছি করো। তোমার জন্য আমার বাগানের এ অবস্থা, পেত্নীর মতো রাত বিরেতে তেল বানাতে এসে আমার বাগানের যা তা অবস্থা করেছো। এখম যতক্ষণ না সব ঠিকঠাক হচ্ছে এক পা নড়তে পারবে না।
আহানের কথায় তুরা অসহায় মুখ করে একবার আহানের মুখের দিকে তো আরেকবার বাগানের দিকে তাকায়, প্রায় পাঁচ ছয়টা মতো গাছ হেলে মাটিতে শুয়ে গেছে, সেদিন তুরাই তো পরে গেছিলো এগুলোর উপর। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে পরেনি।
-কি হলো কথা কানে যাচ্ছে নাহ। অকাজ করার সময় তো বলা লাগে নাহ, কাজের কথা বললেই যতি গাইগুই শুরু হয়
তুরা কাঁদো কাঁদো মুখ করে মাটিতে থপ করে বসে পরলো। হাতের বেলচা দিয়ে থপথপ করে গাছের গোড়ার সব মাটি তুলে ফেলতে লাগলেই আহান চাপা স্বরে চেঁচিয়ে বললো
-কি করছো তুমি,একটা কিচ্ছু ঠিকঠাক পারো নাহ,আমার গাছ উপড়ে ফেলবে নাকি
-আপনিই তো বললেন গোড়ায় সার দিতে তাই তো
বোকা বোকা মুখায়ব করে বললো তুরা
-তা বলে তুমি গোড়া থেকেই মাটি তুলে ফেলবে ষ্টুপিড! কোনো কাজ হবে না তোমায় দিয়ে
বলেই তুরার পাশে হাটু গেড়ে বসে হাত থেকে বেলচা কেড়ে নিয়ে নিজেই শুরু করলো, তুরা ওভাবে গোল হয়ে বসেই হা করে চেয়ে রইলো আহানের দিকে,
আচ্ছা লোকটার নাকের পাটা লাল কেনো হয়েছে? তুরা বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করেছে লোকটা রেগে গেলেই নাকের পাটা লাল হয়ে যায়, এমনটা কি সবার হয়, কই সে তো রেগে গেলে নাক লাল হয়না বরং কান্না আসে। এমনটা কি শুধু জল্লাদ লোকেদেরই হয়?
তুরা আনমনেই চেয়ে রইলো আহানের দিকে। কপাল আর কানের পেছন দিয়ে ঘাম টপকে পরছে আহানের। স্বরযন্ত্রীর স্থানের অ্যাডাম আপেলটার ওঠানামা করছে কথার সাথে, হুট করেই এমন গরমেও একরাশ হীম হাওয়া বয়ে গেলো তুরার অন্তস্তল জুড়ে, কেমন নাম ঠিকানাহীন বেওয়ারিশ অনুভূতিরা স্পষ্ট ঝাপটে উঠলো বুকের ভেতর। অস্থিরতায় এক অন্য মাত্রায় যোগ হলো, যা একেবারেই নতুন, অন্যরকম!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
Humu_♥