তুমি আমি দুজনে পর্ব ৮

0
3054

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৮

কিছুক্ষণ আগেই যার সাথে ধাক্কা লাগলো ক্লাসে তাকেই স্যার হিসেবে দেখে তুরার চোখ চড়কগাছ।
তখন সাদমানের ডাকে হম্বিতম্বি করে ক্লাসে এসে বসেছিলো তুরা, ফারিহা আর সাদমানের সাথে গল্প করার মাঝেই ক্লাসে আগমন ঘটলো কিছুক্ষণ আগেই দেখা লোকটির।

-প্লিজ বি সিটেড এভরিবডি

ভরাট কণ্ঠস্বরের আদেশে সবাই বসে পরলেও তুরা এখনো হা করে চেয়ে আছে, ইশ সে কি না শেষে স্যারের সাথে ধাক্কা খেলো? কিন্তু এই স্যার কে তো সে আগে দেখেনি? তুরার ভাবনার মাঝেই পাশ থেকে ফারিহা এক হাত ধরে টেনে থপ করে বসিয়ে দিলো

-কি রে, এমন হা করে চেয়ে আছিস ক্যান,নতুন স্যার কে দেখে কি তোর ও ঘন্টা বেজে গেছে?

-এ্যাহ? ঘন্টা কেনো বাজবে?

তুরা বোকা বোকা প্রশ্নে ফারিহা কিছু বলতে নিবে তার আগেই কর্ণগোচর হয়

-হ্যালো এভরিবডি, আমি ইফতেখার আহমেদ মাহিদ তোমরা আমাকে মাহিদ স্যার ডাকতে পারো। আমি ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের নিউ লেকচারার। তোমাদের সাথে আজই ফার্স্ট ক্লাস।

মাহিদের কথা শুনে সকল স্টুডেন্টস একত্রে স্বাগতম জানায়।মাহিদ আবারও বললো

-তোমাদের ক্লাসটা নাকি সবচেয়ে শান্তশিষ্ট তাই প্রিন্সিপাল স্যার আগে এখানেই পাঠালো। তারপর আমার অপিনিওন এর সাপেক্ষে নির্ধারণ করবে আমি কোন ক্লাসে কনটিনিউ করবো।

মাহিদ স্যারের কথা শুনে রিফা নামের মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে ঢঙ করে বললো

-স্যার আপনি আমাদেরই ক্লাস নিবেন প্লিজ

প্রতুত্তরে মাহিদ হালকা হাসলো, ফুটফুটে ললাটে সরু ভাজ ফেলে বললো

-আচ্ছা দেখা যাক কি হয়। তবে তোমরা কিন্তু মোটেও শান্তশিষ্ট নও,আমিতো প্রথমে এসে ভাবলাম ভুলে ক্যান্টিনে ঢুকে পরলাম কি নাহ

বলেই মৃদু হাসলো। তুরা চুপচাপ তাকিয়ে আছে মাহিদ নামক স্যারের দিকে,,ভার্সিটির লেকচারার দের মাঝে একটা গুরুগম্ভীর ভাব থাকে কিন্ত এই লোকটা মোটেও তেমন নাহ,নেহায়াতই হাসি খুশি একটা মানুষ। হাসির ছলকে আবার উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নের মুখের বা পাশে একটা টোল ও পরে, ছিমছাম গড়নের শরীরের লোকটাকে এক দেখায় ই সুদর্শন বলা যায়। আরও কিছুক্ষণ মাহিদ স্যার সবার সাথে আলাপচারিতা করার মাঝেই ঘন্টা দিলো। ভদ্রলোক আবারও সুবিনয় ভাবে বিদায় জানিয়ে প্রস্থান করলেন।
পরপর আরও দুটো ক্লাস করে ব্যাগ কাধে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো তুরা, তুরাকে দাঁড়াতে দেখে ফারিহা বললো

-কই যাও ডিয়ার

তুরা উঠে দাঁড়িয়ে বললো
-আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছে গো, আজ আর ক্লাস করবো নাহ।

-তুমিও বেরোবে,আমারও আজ যেতে হবে

সাদমান ও তুরার সাথে উঠে দাড়ালো, ওদের দুজনকে উঠতে দেখে ফারিহাও নিজের ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো
-তাইলে আমি কি ফার্মের মুরগির মতো বইয়া থাকুম নাকি। আমিও যাবো চলো

বলেই তিনজনে একসাথে বেড়িয়ে এলো, গেইট থেকে বেড়িয়েই দেখলো ভার্সিটির সামনে বাড়ির গাড়িটা দাঁড়িয়ে। বাড়িতে দুটো গাড়ি একটা বাবা আর বাড়ির অন্যেরা ব্যবহার করে, আরেকটা ওই জ’ল্লাদ লোকটার একার। এখন আপাতত বাবার গাড়িটাই দাঁড়িয়ে আছে। ফারিহা আর সাদমান চলে গেছে অন্যপথে। ড্রাইভার গাড়ির ভেতর বসে ঝিমোচ্ছে। তুরার এই শহর টা একেবারেই অচেনা নয়। বেশ ভালোই চেনা জানা রাস্তা ঘাট। রোজ এমন গাড়িতে আবদ্ধ হয়ে যেতে তার একদম ভাল্লাগে নাহ, রাস্তা দিয়ে এমনিতেই হেটে যেতে ভাল্লাগে। তুরাকে দেখেই ড্রাইভার গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।

-আহেন, আপনারে বাড়িতে রাইখা বড় সাহেবের অপিসে যাইতে হইবো।

তুরা অমত জানিয়ে বললো সে একাই চলে যেতে পারবে ড্রাইভার যেনো চলে যায়, কিন্তু ড্রাইভার কিছুতেই তা মানতে নারাজ

-আপনারে না নিয়ে গেলে বড় সাহেব আমারে খুব বকবো

তুরা হাজার বোঝানো সত্ত্বেও ড্রাইভার শুনলো নাহ,অগত্যা বাধ্য হয়েই তুরা গাড়িতে করে আসলো। ক্লাস করে রাস্তার যানযট ঠেলে আসতে দুপুর হয়ে গেলো প্রায়, তুরা গাড়ি থেকে নেমেই ফটাফট বাড়ির দিকে হাটা দিলো। ভেতরে ঢুকতেই দেখলো বসার ঘরে রাইমা আর দিদুনের পাশে মাঝ বয়সী গোলগাল চেহারার এক ভদ্রমহিলা বসে, সামনের সোফাতেই বসা রুবি খাতুনের সাথে বেশ হাসি খুশি মুখে কথা বলছে।
তুরা ধীর পায়ে এগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই আমেনা খাতুন বললো

-ওইতো আমার নাতবউ এসে গেছে। তুরা এদিকে আসো তো

তুরা বেশ বিব্রতি নিয়ে এগিয়ে গেলো,আমেনা তুরাকে সামনে হালকা রঙের জামদানী শাড়ি পরিহিতাকে দেখিয়ে বললেন

-ও মিনু, আমার ছোট বোনের মেয়ে, তোমাকে তো বলেছিলাম ওর কথা । আজই এসেছে খাগড়াছড়ি থেকে

তুরা এগিয়ে যেতেই রুবি খাতুন চোখের ইশারা করলে সে সালাম দিয়ে পা ছুতে গেলেই ভদ্রমহিলা বলে উঠলো

-আরে থাক থাক, সালাম করতে হবে নাহ,দেখি আমার পাশে বসো তো, আমার আহান কেমন বউ এনেছে দেখি

বলেই তুরাকে পাশে বসিয়ে ওর থুতনিতে হাত রাখলো, কিন্তু তুরার খুব অসস্থি হচ্ছে, সে মানুষের সাথে খুব সহজেই মিশতে পারেনা, তার উপর রাইমা আপু বলেছিলো মিনু ফুপু নাকি বেশ মেজাজি আর খুতখুতে স্বভাবের।

-বাহ,বেশ রূপবতী বউ এনেছো দেখছি, তাই তো বলি আমার বিয়ে বিদ্রোহী ছেলেটা হুট করেই বউ নিয়ে আসলো, এমন রূপ দেখে তো যে কেও মুগ্ধ হবে

-আসলে আপা আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন নাহ। তুরার সাথে আহানের বিয়েটা পরিকল্পনা সাপেক্ষে হয়নি, হুট করেই হয়েছে

রুবি খাতুনের কথা পুরোটা না শুনেই মিনু ফুপু আবারও তুরার দিকে ফিরে বললো

-সে হটকারিতায় হোক না কেনো, ছেলের বউয়ের কিন্তু বেশ রূপের বাহার আছে, তা শুধু কি রূপই আছে নাকি অন্য কাজও জানো? রান্না বান্না জানো বউ?

মিনুর প্রশ্নে তুরা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো,এভাবে প্রথম দেখায় রান্না বান্না জানে কি না জিজ্ঞাসা করা লোক সে প্রথম দেখলো। তুরার অসস্থি বুঝতে পেরে রুবি খাতুন ওকে থামিয়ে বললো

-আরে সেসব পরে শোনা যাবে,,ও তো মাত্রই বাইরে থেকে আসলো ফ্রেশ হয়ে আসুক। আপনিও কতটা পথ পারি দিয়ে এসেছেন, নিশ্চয় ক্লান্ত। দুপুর ও হয়ে এসেছে চলুন টেবিলে যাওয়া যাক।

বলেই তুরাকে উপরে পাঠিয়ে দিলো। তুরাও যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। মহিলা যে খুব একটা সুবিধার না তা তার মনে খুতখুতিয়ে বলছে, কেমন জহুরি চোখে তাকায় বাবারে বাবা। তুরা উপরে এসেই ফ্রেশ হয়ে জামা বদলে সবুজ রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পরে নিলো। চুল গুলো হাত খোপা করে খাটে বসতেই নিচ থেকে রাইমার গলা শোনা গেলো, খেতে ডাকছে। তুরার ও বেশ ক্ষুধা পেয়েছে, সেই সকালে খেয়েছে এখন অবদি পেটে আর কিচ্ছু পরেনি। ঘর থেকে বেরিয়ে মাথায় ওড়না টা টেনে নেমে গেলো খাবার টেবিলে। সারা টেবিল জুড়ে নানা রকম খাবার সাজিয়েছে, ভদ্রমহিলা যে খেতে বেশ ভালোবাসে তা তার শরীর দেখলেই বোঝা যায়।
তুরা যেতেই সবাই একসাথে বসে খাওয়া শুরু করলো, খাবার মাঝেই মিনু তুরার প্লেটের দিকে চেয়ে বলে উঠলো

-তুমি তো কিছুই খাচ্ছো নাহ বউ প্লেট তো সবই ফাঁকা

মিনুর কথায় তুরা কি উত্তর দেবে বুঝতে পারেনাহ, তখন রাইমা পাশ থেকে বললো

-ফুফি ও একটু কম ই খাই

-সেকি কম খেলে চলবে? এইতো পাতার মত হালকা শরীর তাও যদি কম খাও তাহলে টিকবে কি করে,আহানের মতো লম্বা চওড়া স্বামী তোমার, তুমি এত হালকা পাতলা হলে তো চলবে নাহ

মিনু ফুফুর কথায় তুরা খাওয়া থামিয়ে হা করে চেয়ে থাকে, রুবি খাতুন বেশ লজ্জায় পরে যায়। তার ননাশ যে একটু মুখচোখা সে সবাই যানে, সব কিছু মুখের উপর বলে দেওয়া তার পুরোনো স্বভাব তা বলে মায়ের সামনে ছেলে বউকে নিয়ে এমন বলে ফেলবে ভাবতেও পারেনি। রাইমা কি বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ করে খেতে লাগলো। সবার অসস্থি ভেঙে আমেনা খাতুন বললো

-আহ কি বলিস মিনু। লাগাম ছাড়া কথা বলার স্বভাব তোর গেলো নাহ, ছোটদের সামনে কি বলছিস

-ছোট আর কই আম্মা, ও তো বউ আহানের

-সেসব থাক, তুই চুপচাপ খা তো

আমেনা খাতুনের কথায় মিনু আবারও খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। তুরা মাথা নিচু করে চুপচাপ প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করছে, সে পুরোপুরি না বুঝলেও ফুফুর কথার আংশিক অর্থ ঠিকই বুঝতে পেরেছে, এভাবে মা আর দিদুনের সামনে উনি কি করে বললো । লজ্জা আর সংকোচে তুরার ললাটে ভাজ পরে গেলো, খাবার আর গলা দিয়ে নামছে নাহ।

≈≈

ঘরের ভেতর অনবরত পায়চারি করছে তুরা, বুকের ভেতরে তান্ডব শুরু হয়েছে তার, সে কি করে যাবে ওই লোকটার ঘরে? নাহ আর ভাবতে পারছে নাহ। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, এমন অপ্রিতিকর পরিস্থিতিতে পরবে ভাবতেও পারেনি

-তুমি এখানে কি করছো? এখনো ঘরে যাওনি?

পরিচিন নারী কণ্ঠে তুরা পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে দরজায় মিনু ফুফু দাঁড়িয়ে, পেছনে রাইমাও আছে, মিনুকে দেখেই তুরা বললো

-আম,আসলে বই বই নিতে এসেছিলাম

-তোমার বই এই ঘরে কেনো থাকবে? তোমার ঘরে..

-আসলে ও এসেছে কয়েকদিন হয়েছে মাত্র,এখনো পুরোটা গুছিয়ে নেওয়া হয়নি

মিনুকে কথা সম্পূর্ণ না করতে দিয়েই রাইমা বললো। তুরাও তাকে ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

-আচ্ছা আমি আসছি তাহলে

বলেই তুরা ছোট ছোট পা ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো, মিনু গিয়ে বসলো খাটে, ঘর থেকে বেরিয়ে এক নজর পেছনে তাকিয়ে রাইমার দিকে অসহায় মুখ করে তাকালো,রাইমাও তার দিকে ফিরে তেমনই একটা চাহনি দিলো। যার অর্থ তারও কিছু করার নেই। অগত্যা আস্তে আস্তে সামনের ঘরটার দিকে এগিয়ে গেলো তুরা।

এখন প্রায় মাঝরাত হতে চললো। ইনসাফ মাহবুব আর আহান সন্ধ্যার পরপরই বাসায় ফিরেছিলেন,, বোন অনেকদিন পরে আসাই তিনি বেশ খুশিই হয়েছেন,সন্ধ্যা থেকে নিচেই ছিলো তুরা সকলের সাথে। একসাথে গল্প আড্ডা দিয়ে কখন রাত হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। সে তো এক প্রকার ভুলেই বসেছিলো যে আজকে তাকে ওই জল্লাদ লোকটার সাথে থাকতে হবে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ঘরে গেছে সবাই, রুবি খাতুন আবারও আহানকে বলে দিয়েছে, কয়েকটা দিনেরই তো ব্যপার, মিনু ফুফু চলে গেলেই তুরা আবারও ফিরে আসবে নিজের ঘরে। আর তুরাকেও বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে ভয় না পেতে আহান তাকে আর বকবে নাহ। বিনিময়ে তুরা শুধু আড়চোখে একবার গম্ভীর লোকটার দিকে তাকিয়েছিলো। রেগে আছে কি স্বাভাবিক তা মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই,কেমন একটা থ মারা ফেস করে ছিলো পুরোটা সময়।
তুরা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো ঘরটার সামনে,, বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে, ঠান্ডায় হাত পা অবশ হয়ে আসছে, লোকটার সামনে সে পাঁচ মিনিট দাঁড়াতে পারেনা পুরোটা রাত কি করে কাটাবে। দোমনা হয়ে তাকিয়ে আছে দরজার ফাঁক দিয়ে, লোকটাকে তো দেখা যাচ্ছে না ভেতরে। কি করবে,ঢুকবে? নাকি সারারাত এখানে দাঁড়িয়েই পার করে দেবে?

-এক মিনিটের মধ্যে ভেতরে না আসলে আমি দরজা লাগিয়ে দেবো

তুরার ভাবনার মাঝেই পুরুষালি স্বরে কেঁপে উঠলো। উৎকণ্ঠা রীতিমতো বেড়েই চলেছে, দেখলো কি করে লোকটা ভেতর থেকে? ভূত নাকি আজব! কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা টা খুলে ভেতরে ঢুকলো তুরা। ঠিক তার বাম পাশেই সোফাতে বসে আছে খয়েরী রঙের টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরিহিত অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষটি। কোলের উপর ল্যাপটপ টা রেখে তর্জনীর দক্ষতায় খটখট শব্দে হাতের চালনা করছে কি-বোর্ডে। হুট করেই তুরা উপলব্ধি করলো ফারিহা ভুল কিছু বলেনি, লোকটা আসলেই ভীষণ নজরকাড়া। ছেলেদের এতটা চার্মিং হতে নেই।

-এভাবে পেত্নীর মতো দাঁড়িয়ে থাকলে বাইরে গিয়ে দাঁড়াও, আমার সামনে অ্যাসেম্বলি করতে বলিনি।

কাঠকাঠ রুক্ষ মেজাজের কথা শুনে ভ্রু কুচকে এলো তুরার, লোকটা ভারি ব’জ্জাত,সবসময়ই এমন খিটখিট করে,গাল ফুলিয়ে বললো

-তাহলে কি করবো আমি?

-নাচো, যাত্রাপালা করো

তুরার এবার মন চাচ্ছে ল্যাপটপ টা দিয়েই মাথায় একটা বা’রি দিতে, কোনো কথায় কি সোজা ভাবে বলতে পারেনা এই লোক! প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে চেয়ে আছে তুরা।আহান কোল থেকে ল্যাপটপ টা নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো

-বেশি বউগিরি করতে গিয়ে মাথার তার ছিড়েছে? চুপচাপ শুয়ে পরো,এভাবে রাতে তোমায় পেত্নীর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অ্যাটাক আসবে

লোকটার এমন খোঁচা দেওয়া কথা আচ্ছা বিরক্তিকর, সে কখন বউগিড়ি করল? এ ঘরে তো তাকে মা ই পাঠিয়েছে। কিন্তু সেটা ভেতরেই দমিয়ে রেখে তুরা আমতাআমতা করে বললো

-আ’আমি কোথায় শুবো

মুখে একরাশ বিরক্তির ছাপ ফেলে তাকালো আহান।বোঝাই যাচ্ছে সে তুরার এমন অযাচিত কথায় ভীষণ বিরক্ত।

-এটা কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলার চলচ্চিত্র না যে কেও খাটে তো কেও নিচে শুবে। আর তোমার জন্য তো আমি মোটেও স্যাক্রিফাইস করতে পারবো নাহ, পাশে জায়গা আছে শুয়ে পরো, আদারওয়াইজ বাথরুমে জায়গা আছে ওখানে থাকতে পারো।

বলেই বালিশ ঠিক করে শুয়ে পরলো। তুরা কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। উপয়ান্তর না পেয়ে আস্তে আস্তে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালো। আহানের কোনো নড়চড় নেই, লোকটা কি ঘুমিয়ে গেছে? এই টুকু সময়েই? তুরাও আর বেশি না ভেবে খাটের এক কোণায় জড়সড় হয়ে শুয়ে পরলো। মাঝখানে একটা কোলবালিশ রাখা, আহান ই রেখেছে, ভালোই হয়েছে, তুরার নিজের উৎপটাং শুয়ার উপর নূন্যতম বিশ্বাস নেই, তার উপর পাশে একটা পুরুষ মানুষ। এখন তুরার হুমায়ুন আহমেদ এর একটা কথা বেশ মনে পরছে ‘নতুন বিয়ের পর একজন যুবকের সাথে এক বিছানায় ঘুমানোর মনে অস্বস্তিকর জিনিস আর হয় না!’

তুরার এসব উদ্ভট চিন্তাভাবনার মাঝেই খট করে পাশ থেকে টেবিল লাইট বন্ধ করে দিলো আহান। ভয়ে চোখ খুলে তাকালো তুরা, পুরো ঘর জুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার দূর থেকে রাস্তার ছোট আলোর বিন্দু ছাড়া একটা ছায়া ও বুঝার জো নেই। অন্ধকারে তুরার ভীষণ ভয়। ও কখনও অন্ধকারে থাকতে পারে নাহ রাতে তো একেবারেই নাহ। ভয়ে তুরা খানিকটা সরে এলো। ওপাশে কোনো সাড়াশব্দ নেই।

-শ..শুনুন!

ভাঙা ভাঙা গলায় বললো তুরা, তবুও অপরপক্ষে নিস্তব্ধতা বিরাজমান, কোনো উত্তর নেই। তুরার ভয় আরও বেড়ে গেলো, আরও খানিকটা সরে এসে হাত বাড়িয়ে খুঁজার চেষ্টা করলো। অন্ধকারে হাতরে ছোট ছোট ধার ধার কিছু বিধলো হাতে, আরেকটু এগিয়ে নিতেই আহান ধমকে উঠলো

-কি সমস্যা তোমার,এভাবে চোখে মুখে হাত দিচ্ছো কেনো। আর মাঝে বালিশ পার করে এদিকে সরে আসার সাহস কি করে হলো

অন্যসময় এমন ধমকে তুরার হাড় কেঁপে উঠলেও এবার যেনো শান্তি পেলো। অন্ধকারে সে ভীষণ ভয় পাচ্ছিলো। কপালের ঘাম হাতের উল্টো পিঠে মুছে মিনমিনিয়ে বললো

-আমি অন্ধকারে ঘুমাতে পারিনা,ভয় করে

-আর আমি লাইটের আলোয় ঘুমাতে পারিনা

আহানের কথা শুনে চুপ বনে গেলো তুরা, নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে, আহান বেশ কিছুক্ষণ নিঃশব্দে থেকে উঠে গিয়ে ডিম লাইট জ্বেলে দিয়ে আবারও এসে খাটে শুয়ে বললো

-এর চেয়ে বেশি আলো দেওয়া পসিবল নাহ, এতেও যদি ঘুম না হয় তাহলে বসেই থাকো

বলেই এক হাত মুখের উপর দিয়ে টান হয়ে শুয়ে রইলো। তুরা এবার নিঃশব্দে শুয়ে পরলো,নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো, এই আলোতেই হবে, অন্তত অন্ধকারের চেয়ে তো ভালো

-আর এই বালিশটা টপকে এদিকে আসার চেষ্টাও করলে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেবো তোমায়

বলেই অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পরলো আহান। তুরা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আহানের দিকে আর ভাবলো লোকটার হাড়ে হাড়ে ব’জ্জাতপনা
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here