তুমি আমার অভিমান পর্ব ৫

0
2011

#তুমি_আমার_অভিমান❤
|| পর্ব – ৫ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

নীরাকে হঠাৎ অফিসে দেখে অভিক খুব অবাক হলো। নীরা আর আসবে না, চাকরিই করবে না বলে রেগে চলে গেল। এখন সে নিজে থেকেই আবার অভিকের অফিসে এলো! যাইহোক অভিক কথা বাড়ালো না। নীরাকে বললো আজ তাদের কক্সবাজার যেতে হবে। নীরা যদি চাকরি করতে চায় তাহলে অভিকের সাথে নীরাকে কক্সবাজার যেতে বলেছে অভিক।

নীরাও রাজি হয়ে যায়। যেহেতু এটাই তার ডিউটি তাই তাকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। অভিক জানায় তিনদিন থাকতে হবে ওখানে তাদের। থাকতে হবে জেনে নীরা ভয় পাচ্ছে। অস্বস্তি লাগছে অভিককে কিছু বলতে। অভিক হোটেল রুম বুক করে রাখে দুটো। নীরা আর অভিকের পাশাপাশি রুম পরে। অভিক নীরাকে বলে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রাখতে। দুপুরের খাবার খেয়েই রওনা হবে। তাহলে পৌঁছাতে সন্ধ্যা লাগবে। নীরাও অভিকের কথায় মাথা নাড়ায়। অভিক নীরাকে আশ্রমে চলে যেতে বলে। আর ম্যানেজারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে সেও বাইরে চলে যায়। নীরা অভিকের কথা শুনে আশ্রমে চলে আসে।
.

দুপুরে ঘুমের মধ্যে নীরার ফোন বেজে উঠলেই নীরা ধড়ফড়িয়ে উঠে যায়। ঘুমুঘুমু চোখ নিয়ে কলটা রিসিভ করে নীরা।

‘হ্যালো।’

ওপাশ থেকে অভিক ধমক দিয়ে বলে,

‘আমি বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। জলদি আসো।’

অভিকের কথা শুনে নীরার হঠাৎ মনে পড়লো আজ তাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথা। নীরা বিছানা থেকে উঠে জানালার ধারে গিয়ে দেখে অভিক বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীরা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে হাত মুখ ধুঁয়ে চেঞ্জ করে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঝুঁটি করে নেয় চুলগুলো। মুখে একটু ক্রিম, চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে তৈরি হয়ে নেয় নীরা। মোবাইলটা হ্যান্ড ব্যাগে ঢুকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় নীরা। তার বুড়ো দাদুর কাছে গিয়ে বলে,

‘দাদু আসি। তুমি মাসিকে বলে দিও রান্নাবান্না করে দিতে। ভালো থেকো।’

নীরা বাইরে এসে দেখে অভিক অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। নীরা গলা হালকা ঝারে।

‘হুম হুম।’

অভিক নীরার গলার আওয়াজ পেয়ে নীরার দিকে ফিরে তাকায়। পা থেকে মাথা অব্দি নীরাকে পর্যবেক্ষণ করে অভিক। নীরা অস্বস্তিতে পরে যায়।

‘তোমার ব্যাগ কই? জামা কাপড় নাওনি?’

নীরা জ্বিভে কামড় দেয়। ইশ! তাড়াহুড়োয় ব্যাগ গুছাতেও ভুলে গেছে সে। নীরা বলে,

‘এক্ষুণি যাচ্ছি।’

অভিক নীরাকে তাড়া দিয়ে বলে,

‘যাইহোক, ওখান থেকে নিয়ে নিও। এখন গাড়িতে উঠো। অলরেডি লেইট।’

নীরা চুপচাপ অভিকের কথা শুনে গাড়ির পিছনের সিটে বসে পড়ে। অভিক তা দেখেই রেগে যায়। নীরার কাছে গিয়ে বলে,

‘আমি তোমার ড্রাইভার লাগি? পিছনে কেন বসেছ? সামনে আসো।’

নীরা অভিকের ধমক খেয়ে গাড়ি থেকে নেমে সামনের সিটে বসে। অভিকও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। নীরা অভিককে দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

‘মিটিং করতে যাচ্ছে নাকি সিনেমায় অ্যাক্টিং করতে যাচ্ছে কে জানে। হীরো সেজে যেতে হবে! অসহ্য।’

অভিক ভ্রু কুচকে নীরার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কিছু বলছ?’

নীরা আমতা আমতা করে বলে,

‘ক-কই। গাড়ি ছাড়ুন।’

অভিক গাড়ি না ছেড়ে নীরার দিকে ঝুঁকতে নিলেই নীরা ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে,

‘কি-কি-কি করছেন!’

অভিক দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

‘সিটবেল্ট লাগাচ্ছি ম্যাম। আপনি তো লাগাননি। তাই আমিই লাগিয়ে দিচ্ছি। আর এতো লাফালাফি করবেন না গাড়ির মধ্যে প্লিজ।

অভিক নীরার সিটবেল্ট লাগিয়ে বিরক্তি নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে। নীরা নিজের কাজের জন্য নিজেই নিজেকে বকছে।
গাড়ির মধ্যে অভিক কয়েকবার নীরার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিল। যতবার তাকিয়েছে শুধু একবার নীরার চোখাচোখি হয়েছে। বাকিটা সময় নীরা গ্লাস দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত ছিল।
.

সন্ধ্যা ঠিক ছয়টায় তারা কক্সবাজার পৌঁছায়। অভিক নামার আগে নীরার দিকে তাকালো। নীরা ঘুমিয়ে আছে। এখন নীরাকে ডাকা উচিৎ হবে কিনা সেটাই ভাবছে অভিক।

নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে হোটেল ম্যানেজারকে কল দেয় অভিক। ম্যানেজার জানায় তাদের রুমগুলো গোছানো আছে। অভিক মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে নীরাকে ডাকতে থাকে।

‘নীরা! উঠো। আমরা এসে পড়েছি। নীরা।’

নীরা ঘুমের মধ্যে বলতে থাকে,

‘আর একটু ঘুমাই মাসি পরে আসিও।’

অভিক চটে যায়। সে কোন দিক দিয়ে নীরার মাসি লাগে? অভিক এবার পানির বোতল নিয়ে নীরার চোখে সবটা ঢেলে দেয়। নীরা পানির স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকায়৷ নীরার জামা ভিজে গেছে প্রায়। অভিকের দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলে,

‘কি করলেন এটা? আমি আর জামা আনিনি আপনি জেনেও আমার জামা ভিজিয়ে দিয়েছেন?’

অভিক নীরাকে বলে,

‘আমি কি মাসি লাগি তোমার যে আমাকে মাসি বললে তুমি?’

নীরা রাগ করে বলে,

‘ঘুমের মধ্যে মানুষ কত কি-ই না বলে, সব ধরতে আছে?’

নীরা গাড়ির দরজা খুলতে নিলে দেখে দরজা খুলতে পারছেনা। অভিক গাড়ি থেকে নেমে নীরাকে দরজা খুলে নামায়। তারপর গাড়ি লক করে নীরাকে নিয়ে হোটেলের ভিতরে ঢুকে। নীরার এই ভেজা জামা কাপড়ে থাকতে অস্বস্তি লাগছে। অভিকের পিছনে যেতে যেতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল নীরা। কিন্তু সিঁড়ির সাথে হোঁচড় খেয়ে পড়ে যায়।

‘আহ্।’

পিছন থেকে নীরার চিৎকার শুনে অভিক দ্রুত নীরার কাছে যায়। গিয়ে দেখে নীরা পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে আর কাঁদছে। অভিক জিজ্ঞেস করে,

‘কি হয়েছে পায়ে? ব্যথা পেয়েছ?’

নীরা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘হুম।’

অভিক কিছু না ভেবেই নীরাকে কোলে তুলে নেয়। নীরা অবাকের চরম সীমানায়। নীরা অভিককে বলে,

‘কি করছেন, ছাড়ুন।’

‘পায়ের যা অবস্থা, তাতে তো মনে হয়না হেটে যেতে পারবে বলে। তারচেয়ে এটা ভালো নয় কি?’

নীরা চুপ হয়ে যায়। কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে নীরার। অভিকের মনে কি আছে নীরার জানার খুব ইচ্ছে।

অভিক নীরাকে তার রুমে নিয়ে আসে। নীরাকে বিছানার উপর বসিয়ে অভিক বলে,

‘এখানে চুপ করে বসে থাকো। আমি এক্ষুনি তোমার জন্য জামা আর মুভ নিয়ে আসছি।’

অভিক দরজা লক করে চলে যায় নিচে। নীরা বসে বসে ভাবতে থাকে। কেন করছে অভিক এসব? ও চাইলেই ব্যাপারটাকে ইগনোর করতে পারতো। কিন্তু তা না করে তাকে নিয়ে আরো বেশি উদারতা দেখাচ্ছে অভিক। কিন্তু কেন?

.
অভিক আসে বিশ মিনিট পর। নীরার রুমের দরজা খুলে দেখে নীরা শুয়ে আছে। নীরাকে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলে,

‘আমি যাচ্ছি, তুমি চেঞ্জ করে নাও। আমাকে কল দিও, আমি খাবার নিয়ে আসবো।’

নীরা ব্যাগ খুলে দেখে দুটো শাড়ি ওখানে। অভিকের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘মাথা খারাপ আপনার? জামা না এনে শাড়ি কেন নিয়ে এলেন? আমি কি কাল মিটিং এ শাড়ি পরে যাবো?’

অভিক বললো,

‘ধুর! এ দোকানে শুধু শাড়িই পাওয়া যায়। আর শাড়ির সাথে ব্লাউজ আর পেটিকোটও আছে। চট জলদি চেঞ্জ করো।’

অভিক চলে যায় নিজের রুমে। এদিকে নীরা এক গাদা কথা শুনিয়ে দেয় অভিককে মনে মনে। কোনো রকম চেঞ্জ করে শাড়ি পরে নেয় নীরা। তারপর বারান্দায় ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দেয়। চুলগুলো খুলে ছেড়ে দেয়। রুমে এসে মোবাইল নিয়ে অভিকের কাছে কল দেয় নীরা।

‘আসুন আপনি।’

.
অভিক নীরার রুমের দরজা খুলতেই থমকে যায় নীরাকে দেখে। নীল শাড়িতে নীরাকে খুব মানিয়েছে। কি অপূর্ব লাগছে! অভিক অপলকভাবে নীরার দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিক ভাবছে, একটা মেয়ে এতটা সুন্দর হয় কিভাবে? শাড়িতে নারীদের সত্যিই খুব রূপবতী লাগে। অভিকের চোখ নীরার মধ্যেই আটকে যায়। এই প্রথম কোনো নারীকে শাড়ি পড়া অবস্থায় কাছ থেকে দেখছে অভিক। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে অভিকের। নীরা অভিকের তাকানো দেখে প্রশ্ন করে,

‘এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন? জীবনে কোনোদিন মেয়ে দেখেননি?’

নীরার কথা শুনে অভিক কাশতে শুরু করে। লজ্জায় পড়ে যায় অভিক। নিজেকে সংযোগ রেখে নীরার কাছে গিয়ে বলে,

‘কে বললো আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি?’

‘আমি কি বোকা? আমি দেখেছি আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।’

‘তুমি কিভাবে বুঝলে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি? তারমানে তুমিও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে?’

‘এই আপনি এতো প্যাঁচ ধরেন কেন?’

অভিক বিছানার উপর বসে বলে,

‘বসো। মিটিং কাল সন্ধ্যায়। পা টা দেখি তোমার।’

নীরা বিছানায় বসে অভিককে তার পা দেখায়। অভিক নীরার পায়ে মুভ লাগিয়ে দিচ্ছে। আর তা দেখেই নীরা অভিককে বলে,

‘আপনি কি আপনার অফিসের সব মেয়ে স্টাফদের এমন যত্ন নেন?’

অভিক স্বাভাবিকভাবে বলে,

‘নাহ্। এটাই ফার্স্ট টাইম।’

নীরা জিজ্ঞেস করে,

‘আপনি মানুষটা অনেক অদ্ভুত অভিক স্যার।’

অভিক নীরার পায়ে মুভ মালিশ করতে করতে হাসে। তারপর হাত ধুঁয়ে খাবার এনে একসাথে খেতে শুরু করে অভিক আর নীরা। অভিক খাওয়া শেষ করে নীরাকে একটা ব্যথার টেবলেট দিয়ে যায়। নীরা সেটা খেয়েই ঘুমিয়ে পরে। আসার সময় নীরাকে তার রুমের চাবি দিয়ে আসে সে। নীরা ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পরে।

অভিক নিজের রুমে এসে তার ময়লা শার্টটা সোফায় ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর এক লাফে বিছানায় উঠে উপড় হয়ে ঘুমিয়ে পরে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here