তুমি অতঃপর তুমিই পর্ব :-৮

0
1376

তুমি অতঃপর তুমিই
২৬
Writer Taniya Sheikh

মানুষ মাত্রই বিশেষ কিছুর প্রতি আকৃষ্ট থাকে। এই বিশেষ আকর্ষণ মাঝে মাঝে বড়ো ধরনের দূর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাহিব যাকে স্রেফ স্বল্প সময়ের মোহ হিসেবে দু’বাহুতে ঠাঁই দিয়েছিল, আজ সেই মোহ মোহিনী হয়ে হৃদয়ে খোদিত হচ্ছে। একবার চাচ্ছে মৌটুসি নাম্নী মোহিনী তার হৃদয়ে খোদিত না হোক। কিন্তু সে চাওয়াটা খুবই দূর্বল। এই প্রথম তার কামনার চোখের সাথে সাথে প্রেমানুভূতি জাগা মনটাও চাইছে মৌকে। শুধুমাত্র বিছানা সঙ্গীনি নয় জীবনসঙ্গিনী করার অভিপ্রায়ে মন ব্যাকুল হয়ে উঠছে থেকে থেকে। এই চাওয়াতে একমাত্র বাধা সামিরা, তার বাগদত্তা। মাহিব অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে- একথা রটলে সামিরার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবেনা৷ সামিরার কথা মনে পড়তেই মাহিবের প্রেমিক স্বত্বা কেমন ম্লান হয়ে পড়ে,জেগে ওঠে প্রতিহিংসাপরায়ণ,নিষ্ঠুর এক পুরুষ। সে আবেগে ভাসতে চায়না। বরং হাসিল করার কামনায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে। মাহিব দ্বৈতসত্তা ধারণ করে ক্রমেই। তার ধূর্ত মস্তিষ্ক দারুন এক বুদ্ধির সঞ্চার করে। তাতেই যেন বিভৎস এক হাসি ফুটে ওঠে চোখে -মুখে।

দেশে করোনার প্রকোপ বাড়ায় লকডাউনে সমগ্র দেশ। যাতায়াত মাধ্যম অচল। অদেখা এক জীবনঘাতি ভাইরাসের ভয়ে মানুষ ভীতবিহ্বল। সকলের মনে সংশয়, দুশ্চিন্তা। ইমরোজের মা ইমরোজকে নিয়ে চিন্তিত। ছেলে তার এখন প্রায় সারাদিনই ডিউটিতে বহাল। লোকে কতকিছু বলছে,মিডিয়া তোলপাড় হচ্ছে অথচ ছেলেটার মধ্যে একবিন্দু ভয়ডর নেই। এদিকে নাতি পুতি তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত ছেলের বউটাও দেখা হলো না। আমেনা বেগমের মনে কেন যেন ভয় জাগে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন আজ ছেলেকে আচ্ছামতো ধরবেন৷ জিজ্ঞেস করবেন,কেন ইমরোজ এখনো বিয়ে করতে চায়না। একটা মাত্র ছেলে তার। তারও তো ইচ্ছা হয় পুত্র বধূর মুখ দেখার, নাতি পুতির সাথে খেলার। চোখ ছলছল করে ওঠে কথাগুলো মনে মনে আওয়াতেই। আহসান সাহেব মসজিদে গিয়েছিলেন। অন্যদিনের মতো উজ্জ্বল মুখে ফিরে এলেন না। স্বামীর পাণ্ডুর মুখশ্রী দেখে এগিয়ে গেলেন আমেনা বেগম,

” কী হয়েছে?”

” আর বলোনা, শুনলাম মসজিদও নাকি বন্ধ করে দেবে। বাসায় বসে নামাজ পড়তে হবে যতদিন পরিস্থিতি অনুকূলে না আসে। বাপের জন্মে যা শুনিনি, দেখিনি তাই হচ্ছে এখন।” দুঃখভারাক্রান্ত মনে কথাগুলো বলে হাতমুখ ধৌত করতে গেলেন। ওয়াশরুম থেকে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে বসার ঘরে বসতেই ইমরোজ ঢুকল। দুপুরে খাবে বলে ফিরেছে সে। বাবাকে দেখামাত্র বলল,

” মন খারাপ কেন?”

রান্নাঘরে খাবার গরম করছিলেন আমেনা বেগম। ছেলের গলা আওয়াজ শুনে দরজার কাছে এলেন।স্বামী কিছু বলার পূর্বেই বলে ওঠেন,

” কেয়ামত মনে হয় আর বেশি দূরে নাই,বাপ। কী শুরু হচ্ছে আজকাল। আল্লাহর ঘর বন্ধ করার সাহস কেমনে পায় মানুষ!” আমেনার বেগমের মনের সকল ক্ষোভ যেন এই বাক্যেগুলোয় প্রকাশিত হয়। ইমরোজ ভ্রুকুটি করে বাবা-মায়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বিরক্তিভাব ফুটিয়ে বলল,

” তোমাদের সমস্যা কী? কিছু না বুঝেই কথা বলো? মসজিদ বন্ধ করছে কে বলেছে?”

” শুনলাম তো।” আহসান মিয়ার গলার স্বর নমনীয়। ইমরোজ শক্ত গলায় বলে,

” বাবা তুমিই তো বলতে, শোনা কথায় কান দিতে নেই। তাছাড়া বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে দুরুত্ব মেইটেইন করা অপরিহার্য। মসজিদে সেটা সম্ভব হবে না বলেই আপাতত সেখানে জামাত পড়া নিষেধ করতে পারে। এর অর্থ এই নয় মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে। কে কখন কোভিড বহন করছে তা কী বুঝবে তুমি? একজনের কারনে মসজিদের বাকি দশজন আক্রান্ত হতে পারে,তারপর তাদের পরিবার, তারপর তাদের সংস্পর্শে আসা আরও লোক।”

” মরতে হবে হবেই, আজ মরি আর কাল মরি। তাই বলে আল্লাহর ঘর,,!” আমেনা বেগমের কথা থেমে যায় ইমরোজের চোখের আগুন দেখে।

” মরতে তো হবেই মানে কী মা? আজব তোমরা। তোমাদের কথা শুনলে মনে হয়, পৃথিবীতে বাঁচার জন্য নয় মরার জন্য এসেছ। জীবন আল্লাহ পাকের দেওয়া উপহার। উপহার মানুষ আনন্দে চিত্তে গ্রহণ করে, বহন করে। নিজের সাথে সাথে অন্যকে সুরক্ষিত রাখা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। এই কথাটা ভুলে যাও কেন? প্রয়োজনে আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়। এটাও তেমন একটা পদক্ষেপ। বোঝার চেষ্টা করো বিভ্রান্ত না হয়ে।”

ইমরোজ ফ্রেশ হয়ে সোজা রুমে চলে যায়। স্বামী স্ত্রী এক পলক মুখ চাওয়া চাওয়ি করে চুপ করে থাকে। আমেনা বেগম ফিরে যায় রান্নাঘরে। খাবার টেবিলে চারজন একসাথে খেতে বসে। ইমরোজের বোন আশার বিয়ে হয়েছে। স্বামী ডিফেন্সে চাকরী করে। দু’মাস আগে হংকং মিশনে গেছে সে। আশা তিন মাসের গর্ভবতী হওয়ায় আমেনা বেগম মেয়েকে নিজের কাছে এনে রেখেছেন। নিজে সরাসরি ছেলেকে কিছু বলতে পারছেন না বিধায় মেয়েকে দিয়ে বলাবেন বলে স্থির করেন। কিন্তু মেয়ে তার আরও ভীতু। কয়েকবার ইশারা করার পর আশা ভাইকে বলে,

” ভাইয়া, শান ভাই কেমন আছে?”

” হ্যাঁ, ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ।”

” শুনলাম ইমা ভাবি ফিরে এসেছে?”

” হুমম।” আমেনা ইশারায় আসল কথা বলার তাগিদ দেয় মেয়েকে। আশাকে ইতস্তত করতে দেখে ইমরোজ আড়চোখে তাকায়। খেতে খেতে বলে,

” কিছু বলবি?”

” হ্যাঁ, না মানে।”

ইমরোজ এবার পূর্ণ দৃষ্টি মেলে বোনকে দেখে। তারপর বাবা-মাকে। তাদের চেহারা পড়তে কষ্ট হয়না ইমরোজের। মুখটা ম্লান করে মুখ নামিয়ে চুপচাপ খায়। আমেনা বেগমের সেটা পছন্দ হয়না। নীরবতা ভাঙেন অভিমানি সুরে,

” তোর খালাত ভাই নাসিফ তো তোর বয়সী। চার বছরের একটা ছেলে আছে ওর। শুনলাম আবার নাকি আরেকটা হবে। শানকে দেখ। সেও তো বিয়ে করেছে। পোড়া কপাল আমার! একমাত্র ছেলের বিয়েটাও মনে হয় দেখে যেতে পারব না৷ দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। আমাদের কথা কী ভাবতে ইচ্ছা করেনা তোর?”

” মা, আবার কেন শুরু হলে তুমি?”

” আবার কেন শুরু হলে মানে কী? আজ আমাকে তুই বল,বল কেন বিয়ে করতে চাস না।”

” আহা! কী করছ। ছেলেটাকে খেতে দাও।”৷ আহসান সাহেব স্ত্রীকে বাধা দেন নির্লিপ্ত ভাবে। মনে মনে তিনিও স্ত্রীর কথার সাথে একমত তবুও খাবার সময় কথাটা নিয়ে তর্কাতর্কি ঠিক তার পছন্দ না। স্বামীর নির্লিপ্ততায় আরও চটে যান আমেনা বেগম,

” হ্যাঁ, তাই তো। খাও তোমরা। আমার কী! আমি কেন এসব বলি? যার যা ইচ্ছা হয় করো।”

মাকে আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদতে দেখে ইমরোজের গলা দিয়ে খাবার নামে না। কিছুক্ষণ ভাবুক চেহারায় নিচু মুখে বসে থাকে। অর্ধেক খাবারের মধ্যে হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়ায়। আহসান সাহেব,আশা বাধা দেয়। আমেনা বেগম ছেলে খেলো না বলে শব্দ করে কাঁদেন। ইমরোজ রুমে ফিরে আসে। ইউনিফর্ম গায়ে দিতে দিতে আয়নার সামনে একবার নিজেকে দেখে নেয়। নিজেকে সে দেখতেই ভুলে গেছে। দায়িত্বের চাপে ভুলে গেছে নিজের প্রয়োজনীয়তা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বসার ঘরে মা এখনো উু উু করে কাঁদছেন।

” মা কাঁদছ কেন?”

আমেনা বেগম জবাব দেন না। তার আরও বেশি কান্না পায়। ইমরোজ এবার মৃদু হেঁসে পাশে গিয়ে বসে। আজ বহুদিন পর মাকে জড়িয়ে ধরে। বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকা শিশুর মতো কাঁদে আমেনা বেগম। ইমরোজের মন বিগলিত হয়। মা ছেলে এহেন আবেগপূর্ণ মুহূর্ত বাবা মেয়ে মিস করে না। দু’জনে মুচকি হাসে,প্রশান্তির হাসি। অবশেষে মায়ের চোখের জল মুছে হাসি ফোটায় ইমরোজ। সে বিয়ে করতে রাজি হয়। তার পরিবার যেই মেয়েকে পছন্দ করবে সে তাকেই বিয়ে করবে। আমেনা বেগম উচ্ছ্বাস দমিয়ে রাখতে পারেনা৷ ছেলে বেরোতেই লেগে পড়ে মেয়ে খুঁজতে। একটা মেয়ের সন্ধানও পেয়ে যায় দিনশেষে। আমেনা বেগমের দূরসম্পর্কের এক বোনের মেয়ে। সমস্যা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। এখন বিয়ে তো দূরের কথা মেয়ে দেখাদেখি করতেও রাজি হবেনা ইমরোজ। সে বিয়েতে রাজি হয়েছে তবে সেটা যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর হয় বলে জানিয়েছে। তাই আপাতত মেয়েটির ছবি, এবং আনুষঙ্গিক খোঁজ খবরে লেগে পড়েন আমেনা বেগম।

ইমা এখন বেশ সুস্থ। তবুও অসুস্থতার ভান ধরে পড়ে আছে। এছাড়া উপায় কী শানকে কাছাকাছি রাখার। শানের প্রতি রাগ,ক্ষোভ এখনো তার কমেনি,বরং বেড়েছে শানের বর্তমান আচরণের কারনে। ইমরোজ যতই বলুক তার বাবা ভাইয়ের মৃত্যুতে শানের হাত নেই,সে শুধু অজ্ঞাতে তাদের ধরে এনেছিল। তবুও সে দোষী ইমার চোখে। ইমা অপেক্ষা করছে সব কথা শুনবে বলে,কিন্তু শান সেই যে মুখে কুলুপ এঁটেছে তো এঁটেছেই। কেন সে ইমাকে সত্যিটা বলছে না? ইমার সামনের কুয়াশা কেন সরাচ্ছে না? এসব কী শানের অপরাধী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়! সে যদি সত্যিই নির্দোষ হতো তবে তাদের দুরত্ব কমার বদলে বাড়াচ্ছে কেন? কেন ঐ মেয়ে নিজেকে শানের বাগদত্তা দাবী করেছিল? কেন বলেছিল, শান তার সাথে আছে কেবল অনিচ্ছায়, হুকুম পালন করতে।পৃথিবীর কোনো স্ত্রী প্রতিদ্বন্দ্বী চায়না। ইমার যখনই মনে হয় শানের বলা সব কথা কেবল দায়িত্ববোধে সৃষ্ট, তখনই কষ্টে বুক ভারী হয়ে আসে। একবার মনে হয় শানের ভালোবাসা মিথ্যা নয়, পরক্ষনেই মনে পড়ে মেয়েটার কথা। সে না চাইতেও শানকে অবিশ্বাস করে,নিজেকে কষ্ট দেয়। আজকাল তো অবিশ্বাসের ভীত পোক্ত হচ্ছে। শানকে অচেনা মনে হয়। কাছের আসার আগ্রহ দেখতে পায়না,পায় দূরে সরে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা। তখন মনে হয় চারবছর আগের মেয়েটি সঠিক বলেছিল। শান তাকে ভালোবাসে না, সে কেবল আজ্ঞাবহ ভৃত্যের ন্যায় মালিকের কথায় ইমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করেছিল। সময়ের ব্যবধানে আজ সেই চেষ্টা নেই। এসব কথা গলায় দলা পাকিয়ে ক্রোধ বাড়ালেও সহজে ঠোঁটে আসেনা। তবে ইদানীং দলাটা আলগা হচ্ছে শানকে সামনে পেয়ে। সব কথা বলবে বলে অধীর হয়ে উঠছে।

” ইমা, তোমার ওষুধ।” পাশে দাঁড়ান শানকে দেখে মুখ ফিরিয়ে ইমা বলে,

” রেখে যান।”

” এখনই খাও নয়ত ভুলে যাবে।”

ইমা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে,

” ভুলে গেলে কী হবে? মরে যাব? আমার মৃত্যুতে পৃথিবীর কোনো পরিবর্তন হবে না, আর না পরিবর্তন হবে কারো ভেতর।”

কথাটা বলে আড়চোখে শানকে একপলক দেখে। স্থির,অবিচল ভাব শানের। ইমার অভিমানে কান্না পায়। চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় শান। ওষুধ, পানি সামনে ধরে বলে,

” সবসময় এসব না বললেই কী নয়! নাও খেয়ে নাও।”

রাগ সংবরণ করতে পারেনা ইমা। চেঁচিয়ে ওঠে,

” বললাম তো পরে খাব রেখে যান।”

” চেঁচাবে না,ইমা।”

” একশবার চেঁচাব। কী করবেন আপনি?”

শান প্রসঙ্গ এড়াতে চায়। নির্বিকার মুখে বলে,

” খেতে বলেছি খাও।”

” না, খাব না।”

শানের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। চোখের পলক পড়েনা। ইমা তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে ওর দিকে। শানের মনে হয় ইমার চোখে ক্রোধ নয়, ভীষণ ঘৃণা। সে শানের শাস্তি চায়, কঠিন শাস্তি। শান কাজই তো এমন করেছে,শাস্তি না চেয়ে উপায় কী! নিজেকে শাস্তি দেয় শান। ইমার চোখে চেয়ে যে অসহনীয় ব্যথা ওঠে তার চাপে হাতের গ্লাস ভেঙে যায়। রক্তাক্ত হাতটা দেখে ইমা চমকে ওঠে। শান চমকায় না। চমকানোর মতো কিছুই নেই ওর। ইমার বাধা উপেক্ষা করে চলে আসে নিজের রুমে। রক্ত ঝরা হাতটার দিকে চেয়ে চোখ জ্বলে,বুক জ্বলে। দরজায় আঘাত পড়ছে। ইমার গলা শুনতে পায় শান। চট করে যেমন-তেমন করে হাতে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দরজা সামান্য খুলে মুখ বের করে প্রশ্ন করে,

” কী হয়েছে? ”

ইমার কান্না থেমে আসে,উদ্বিগ্নতা কিছুক্ষণের জন্য বিমূঢ় হয়। চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষ। শান জোর গলায় আবার প্রশ্ন করতেই মৃদু কেঁপে ওঠে ইমা। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে শানের কলার চেপে ধরে। ইদানীং এই কাজটাই সে করছে। বড্ড অস্বস্তি হয় শানের। ইমার হাত ছাড়িয়ে পেছনে মুড়ে ধরে খুব করে। ইমা ব্যথা গিলে শানকে বকছে। তার নিরর্থক বকাবকিতে স্পষ্ট সে কষ্ট পেয়েছে। শান সেটাই বুঝতে চায়। কিসের কষ্ট? ঘৃণিত মানুষের ব্যথায় কিসের কষ্ট তোমার ইমা! মুখে বলে,

” বার বার একই রকম অভদ্রতা আমার পছন্দ না,ইমা।”

” তোর পছন্দের খেতা বালিশ। ছাড় বলছি আমার হাত।”

” যতক্ষণ তুই তুকারী বন্ধ না করবে ছাড়ব না। সরি বলো।”

” সরি আমার,, ” শান পেছনে মুড়ে ধরা হাতটা আরও জোরে টেনে ধরতেই ব্যথায় কণ্ঠরোধ হয়ে যায় ইমার। তবুও জেদ কমে না। পা দিয়ে শানকে দূর্বল করবে বলে পা ছুড়াছুঁড়ি করে। শান মৃদু হাসে। সে হাসি ইমা দেখে না। উল্টো করে মুখোমুখি জড়িয়ে ধরতেই ইমার মুখ নত হয়ে যায়। শান গম্ভীরমুখে বলে,

” ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে নিচে চলে যাবে। বলো যাবে। ” ইমা কোনো জবাব দেয়না৷ নীরবতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে শান ছেড়ে দাঁড়াতেই ইমা দু’হাতে শানকে ঠেলে বিছানায় ফেলে দেয়। ওর বুকের উপর চড়ে বসে বলে,

” এতো ভাব কেন তোর? কেন আমার আবেগ, অনুভূতিকে বাজারের পণ্যের মতো ব্যবহার করছিস? খুব ভালোবাসিস সামিরাকে? এতোই যখন ভালোবাসা তোদের তাহলে আমার সাথে ভালোবাসার নাটক কেন করলি,বল? ধোঁকাবাজ,মিথ্যাবাদী?” ইমা দু’হাতে এলোপাথাড়ি শানকে আঘাত। শান হতবুদ্ধি হয়ে দেখছে শুধু। সামিরা! ইমা সামিরার কথা কী করে জানে? সামিরার সাথে ওর সম্পর্কের কথায় বা কেন বলছে? শানের মাথা ফাঁকা হয়ে গেল। বিস্মিত শানকে নিচে ফেলে ঝুকে দু’হাতে ইমার হাত চেপে ধরে। সে ইমাকে দেখছে, ইমার চোখে সামিরাকে দেখছে।

চলবে,,

দেখেন আপনারা যেন বিড়ম্বনায় না পড়েন তার কারনে বিভিন্ন সময় গল্প না দেওয়ার কারণ উল্লেখ করে পোস্ট করি। আপনরাই বলেন, বার বার পেজে আসেন,খোঁজেন তাই যেন বলে দেই কবে গল্প দেবো। এখন আমি তো রোবট না। রক্তমাংসে গড়া মানুষ।বিভিন্ন সময় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমি গল্প দিতে পারিনা। আমি ইচ্ছা করে অসুস্থ হইনা,ইচ্ছাকরে মোবাইলও নষ্ট করিনা। আর না এসব বলে জাহির করি আপনাদের জন্য গল্প লিখে এহসান করছি। লেখালেখি করতে ভালোবাসি বলেই ঝামেলা এড়িয়ে লেখার চেষ্টা করি। আমার জন্যে লিখি।আপনাদের ভালোবাসা পূর্ণ উৎসাহে উৎসাহিত হয়ে লিখি। আপনাদের লেখা উপহার দিতে ভালোবাসি বলেই লিখি। খারাপ লাগে আপনারা অনেকে বিষয়টা নেগেটিভলি নিলে। এই গল্প আগে যেভাবে দিতাম সেভাবেই দিব। এর সাথে দশটা গল্প শুরু করলেও এই গল্প লেখায় সমস্যা হবে না। আমার মোবাইল এখনো ঠিক হয়নি। চার্জে দেই আবার কিছুক্ষণ পর শেষ হয়ে যায় চার্জ। এভাবেই ফাঁকে ফাঁকে লিখছি গল্প। মনের খায়েশে লিখছি। লেখালেখির নেশায় পড়ে লিখছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here