তুমি অতঃপর তুমিই
২৫
Writer Taniya Sheikh
শান কল কাটার পরপরই চিন্তিত ইমরোজ উপায়ান্তর না দেখে মোবারককে কল করে। মোবারককে দৌড়ের উপর রেখে ঘটনার যতটুকু সারাংশ বলা লাগে বলে। মোবারক ভয়ে শেষ। কাঁদো কাঁদো হয়ে ছুটতে লাগল। ওর এমন অবস্থা দেখে আসমা,মতিনও গেল পিছু পিছু। মোবারক, মতিনের সহযোগিতায় মেইন দরজার লক ভেঙে ভেতরে ঢোকে। ওরা উপরে উঠে গেলেও আসমা যায়না। সে সোজা ছোটে ইমার রুমে। চব্বিশঘণ্টা হতে চলল। আসমা ইমাকে জাগানোর চেষ্টা করছে।
” স্যার,স্যার ও স্যার, দরজা খোলেন। শান স্যার।”
মতিন বোকার মতো চেয়ে আছে মোবারকের মুখের দিকে। মোবারক কাঁদছে। পাগলের মতো বিলাপ করছে দরজায় আঘাত করতে করতে।
” ভাইজান, স্যার দরজা খোলেনা ক্যান?”
” মতিন!” মোবারক আর কোনো শব্দই বের করতে পারল না। বাচ্চাদের মতো মতো শব্দ করে কাঁদছে সে। মতিনেরও এবার কান্না পেল। সে দেরীতেও হলে সব বুঝতে পেরেছে। দুজনে অনবরত দরজায় আঘাত করতে করতে বিলাপ করছে। এদিকে আসমার কয়েকবার ডাকে ইমা পিটপিট করে চোখ মেলে। সর্ব শরীর হাওয়ায় দোলা পাতার মতো বোধ হচ্ছে। আসমা চটজলদি ইমরোজকে কল করল। সে এখানে আসতে আসতেই স্বামী এবং ইমরোজ ভাইয়ের কথাবার্তা কিছুটা শুনেছে। তাই নিজে কিছু না বলে সরাসরি ইমাকে ধরিয়ে দেয় মোবাইল। সদ্য হুশ ফেরা ইমা হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে রইল। ওপাশ থেকে ইমরোজ হ্যাঁলো হ্যালো করতেই আসমা উঁচু গলায় বলল,
” ভাবি কথা বলেন, জরুরি কথা। দেরী করলে সব শেষ হয়ে যাবে।”
” শেষ হয়ে যাবে! কী শেষ হয়ে যাবে?”
আসমার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন হয়না। ইমার গলা শুনে ইমরোজ মোবাইলের ওপাশ থেকেই সব তড়িঘড়ি সারসংক্ষেপে বলল। একেতো অসুস্থ তারউপর এমন অঘটন! ইমার বাঁচা কুচা শক্তিটুকুও এবার শেষ। বিছানায় নড়তে চড়তে পর্যন্ত পারল না জবাব দেবে তো দূরের কথা। ইমরোজ উচ্চৈঃস্বরে আসমাকে ডাকল। আসমা মোবাইল কানে নিতেই দ্রুত ইমাকে ধরে উপরে নিতে বলে সে। আসমা তাই করে। সে বড়ো কষ্টে দূর্বল ইমাকে ধরে উপরে এসে দাঁড়ায় শানের দরজার সামনে।
মোবারক, মতিন ইমাকে দেখে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। ইমা বেশ বুঝতে পারে এদের কান্নার কারণ। ওর বুক জুড়ে প্রবল ঝড় বইছে। আসমা ধরে না রাখলে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি নেই। মনের জোরে গলার জোর বাড়িয়ে ইমা দরজার সাথে ঘেঁষে দাঁড়ায়,
” শান, এই শুনছেন আপনি? দেখুন চুপচাপ বেরিয়ে আসুন বলছি। আমাকে কিন্তু চেনেন আপনি ! মেজাজ চটে গেলে আপনার খবর আছে। শান,শান।” ইমার গলা ধড়ে আসে। আসমার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বসে পড়ে দরজা ঘেঁষে। হাত মুঠ করারও শক্তি নেই, সেখানে উঁচু গলায় ডাকবে কী করে আবার। নিচু গলায় তাই কাতর কণ্ঠে ডাকতে লাগল, ” শান প্লিজ দরজা খুলুন৷ শান।” দরজা খুট করে খুলে যায়। ইমার স্থির চোখের কোনা দিয়ে দু’ফোটা অশ্রু পড়ল। উপস্থিত বাকিদের মুখগুলো জ্বলে ওঠে। হাসি- কান্নার মিশ্রণে সমস্বরে বলে,
” স্যার আপনি বেঁচে আছেন?”
” মোবারক, এসব কী শুরু করেছিস তোরা? যা নিচে যা।” ওদের কথা বিব্রত শান। শানের রুঢ় ধমকে লজ্জিত হয়ে তিনজনই নিচে নেমে গেল। তবে মনে মনে ওরা খুশি শানকে ঠিকঠাক দেখে। ওদের নেমে যাওয়ার ওর শান ইমার দিকে তাকায়। চুপচাপ সামনে দৃষ্টি মেলে বসে আছে সে।
” অসুস্থ শরীরে উপরে কেন এসেছ?”
ইমা জবাব দেয়না। শান ওর বাহুধরে টেনে তোলে। মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে কঠিন গলায় বলে,
” বলো?”
ইমা অসহায় চাহনীতে মুখ তুলতেই চোখ চলে যায় সোজা শানের বিছানায়। সম্পূর্ণ বিছানা অগোছালো। চাদরটা পড়ে আছে ফ্লোরের উপর। কী হতে যাচ্ছিল ভাবতেই ইমার মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল। শানের টিশার্টের কলার টেনে ধরে বলল,
” মরতে গেছিলি, কী রে বল?”
সহসা জবাব দিতে পারেনা শান। অন্যদিকে মুখ ঘুরাতেই ইমা আরো জোরে কলার টেনে চিৎকার করে ওঠে,
” কাওয়ার্ডের মতো এমন করতে তোর একটুও বাধল না? আমি তো কোনো কাওয়ার্ডকে ভালোবাসিনি। তাহলে এমন কাজ করার চিন্তা কী করে এলো তোর মাথায়, কথা বলছিস না কেন, কথা বল?” দু’হাতে এলোপাথাড়ি চড়,কিল মারতে মারতে শীঘ্রই শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসে। শান দু’হাতে ইমাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।
” আ’ম সরি।”
” তুই সবসময়ই এমন আ’ম সরি, আ’ম সরি করিস। ছাড় আমাকে। ছাড় বলছি।”
” ইমা শান্ত হও।”
” তুই আমাকে শান্ত হও বলার কে? যা না, গিয়ে মর। ছাড় বলছি।”
শান ছাড়ে না। ইমা কাঁদতে কাঁদতে একসময় থেমে যায়। একদম নিস্তেজ হয়ে রয় শানের বুকের মধ্যে। কোলে তুলে বিছানায় এনে বসাতেই ইমা গলা জড়িয়ে ধরে,
” আমাকে একা ফেলে কোথাও যাবিনা।”
অপরাধবোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে শানকে। মরতে গিয়েও ফিরে এসেছে। তখন মনে হয়েছে ইমরোজের কথা ঠিক। এ নিয়ে যতদিন ইমার মুখোমুখি হতে না পারবে নিজের সাথে কিছুই করবে না। শান মনের সকল ব্যথা মনে রেখে এক চিলতে হাসল। বড়ো বিবর্ণ সে হাসি।
” স্বামীকে তুই তোকারি করা বেয়াদবী তারপরও কেন করলে আবার?”
” তো কী করব? স্বামী আহাম্মকি করলে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবো? আমি পারব না।”
” আমি আহাম্মক!”
” আবার জিগায়। শুধু আহাম্মক,মহা আহাম্মক।” রাগে মুখ শক্ত করে তোলে ইমা। শান সরে বসবে বলে নড়তেই ইমা থাবা মেরে ধরে। চোখ পাকিয়ে তাকাতেই শান গম্ভীরমুখে বলে,
” ছাড়ো ইমা।” ইমা ছাড়ে না। একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে, জেদি ভঙ্গিতে। শান সেটা অগ্রাহ্য করতে পারেনা। চুপচাপ মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে সে।
প্রচণ্ড ভাদুরে গরম শেষে যখন এক পশলা বৃষ্টি পড়ে,কেমন অনুভূতির জন্ম হয়! অবর্ণনীয় তাই না? শানের চিন্তায় অস্থির ইমরোজের মনটাও হঠাৎ দোদুল্যমান নারিকেল পাতার মতো ঝিরিঝিরি দুলছে সেই মেয়েটির মিষ্টি গলার স্বর শুনে৷ মেয়েটি ইতস্তত করে কথা বলছে৷ ইমরোজের মনে হলো মেয়েটির মতো ওরও কেমন লজ্জা লজ্জা ভাবের উদয় হচ্ছে। কিন্তু কেন? সে একজন ম্যাচিয়ুর্ড পার্সন। সত্যি তো!এসব সিলি ফিলিংস তার মানায় না। মনকে স্থির করে গম্ভীরগলায় বলল,
” প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড,আমি একটু ব্যস্ত আছি। ইম্পর্টেন্ট কিছু হলে দ্রুত বলুন।”
” না,মানে আপনার ব্লেজার আমার কাছে রয়ে গেছে। ওটা তো ফেরত দিতে হবে আপনাকে,তাই কল করেছিলাম। সরি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম বলে। যখন ফ্রী হবেন আমাকে বলবেন আমি গিয়ে দিয়ে আসব ওটা।”
মেয়েটি কল কেটে দিল। রাগ করেছে বোধহয়। ইমরোজের খারাপ লাগলেও সেটা ঝেরে ফেলে দিল। মোবারককে একটা কল করা উচিত। ভাবনা মতো কাজটা করল তাড়াতাড়ি।
মেয়েটি ভেবেছিল ইমরোজ আবার কল করবে। ক্ষমা চাইবে ওমন রূঢ় আচরণের জন্য। কিন্তু তার ধারণা ভুল। রাগে,ক্ষোভে আছড়ে ভাঙল মোবাইল। মাহিব দু’হাতে জড়িয়ে ধরতেই ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,
” ও নিজেকে কী ভাবে? সামান্য একজন পুলিশ অফিসার হয়ে এতো দেমাগ? মৌটুসিকে চেনে নাই। একবার যখন বলেছি ওকে আমার প্রেমে পড়তে হবে, তখন হবেই।”
মাহিব বিস্মিত চোখে তাকাল মৌটুসিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে। এ যেন মৌটুসি নয় সামিরা! কিছুক্ষণ কী ভেবে হেসে ফেলল। গাঢ় চুম্বন করল মেয়েটির ঠোঁটে। বিছানা উপর দুজনে বসল। মৌটুসির রাগ এখনো কমেনি৷
জীবনে একবার হলেও নাকি প্রেমে সবাই পড়ে। মাহিবের ধারণা ছিল সে সবার মতো না। প্রেম,ভালোবাসার মতো আবেগ তার নেই। কিন্তু সে ভুল ছিল। ভুল ভেঙেছে মৌটুসিকে কাছে পেয়ে। মাহিব আজকাল বড্ড বেশিই কাছে চাচ্ছে ওকে। অন্য সব মেয়ে থেকে আলাদা মৌটুসি। গত দু’বছর একসাথে থাকার পরও মাহিবকে ধরে রাখার মতো আবেগ দেখায় না৷ নিজের মতো চলে; মাহিবের ইচ্ছামতো কাছে আসে,দূরে যায়। অন্য সব মেয়ের মতো বিয়ে,বিয়ে করে লাফায় না দু’দিন পর পর। মাহিব মৌটুসির কাজে প্রসন্ন। আজকাল ওকে দিয়ে ব্যবসায়ীক,ব্যক্তিগত অনেক কাজই সে করাচ্ছে। ধীরে ধীরে দৈহিক নৈকট্য ছাড়িয়ে মনের কোনে জায়গা করে নিচ্ছে মৌটুসি। পাশে পা ঝুলিয়ে শুয়ে আছে মৌটুসি। মাহিব অপলক চোখে দেখছে। পাছে ওর চোখে এসব পড়ে যায় তাই চট করে দৃষ্টি নামিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হুইস্কির ছিপ খুলে গ্লাসে ঢালে।
” পেশন্স রাখো। ভুলে যেও না ইমরোজ চতুর পুলিশ অফিসার। হুটহাট একটা মেয়ের প্রেমে ও কখনোই পড়বে। ধৈর্য্য ধরে তোমাকে এগোতে হবে।”
এক প্যাগ বানিয়ে আবার এসে বসল বিছানায়। গ্লাসটা ঠোঁটের কাছে আনতেই পাশ থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় মৌটুসি। একবারে সবটা গলায় ঢেলে মুখ বিকৃত করে বলে,
” হুমম, তবে জান তুমি সিওর থাকো। ওকে তো আমি আমার প্রেমে নাকানিচুবানি খাওয়াবোই। তারপর তুমি যা চেয়েছ তাই হবে। ”
” দেখো আবার তুমিই না,,!” বাকিটা বলার অবসর মৌটুসি দিল না। মাহিব ঐ বাহুতে হারিয়ে গেল আরো একবার।
ইমার জোরাজুরিতে অনিচ্ছাস্বত্বেও ইমাকে কোলে নিয়ে নিচে নামে শান। নিচে বসে থাকা মোবারক মুখ টিপে হাসছে তাই দেখে।
” বলেছিলাম মোবারক নিচে আছে।” চাপা স্বরে বলল শান। ইমা বলল,
” তাতে কী?”
” তাতে কী! তোমার লজ্জা করছে না?”
” একেবারেই না।” সত্যি বলতে লজ্জা তো ইমারও লাগছে। কিন্তু শানকে কাছে কাছে রাখার এরচেয়ে ভালো উপায় মাথায় আসেনি। তাছাড়া এই শরীরে হেঁটে নিচে নামার কষ্টটা করবে না বলেও এহেন আইডিয়া কাজ লাগিয়েছে। শান কাউচে বসিয়ে উঠে দাঁড়াবে তখনই গলার অংশের শার্ট টেনে ধরে ইমা।
” যান কই?”
” উপরে।”
” এতো শখ কেন মরার? কোথাও যাবেন না,আমার খিদে পেয়েছে খাবার তৈরি করুন।”
” আমি এখন পারব না। মোবারককে বলে দিচ্ছি ও বাসা থেকে তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসবে।”
” না, বলেছি মানে না। আপনি আমার জন্য রান্না করবেন নয়তো আমি খাব না।”
শানের এবার বিরক্ত লাগছে। সে ইমার সামনে কিছুতেই থাকতে চাচ্ছে না। একটু একা থাকার জন্য এতো পীড়াপীড়ি করছে, অথচ এই মেয়েটা একা ছাড়ছেই না।
” তুমি যা ভাবছ তেমন কিছুই করব না আমি। ছাড়ো আমার শার্ট।”
” ওসব করাকরির সাবজেক্ট বাদ। এখন আমি খাব। সুতরাং কিচেনে যান।”
শান জোর করে হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।
” তোমার সমস্যা কী! ইম্যাচুউরের মতো বিহেভ কেন করছ? বললাম তো আমার ভালো লাগছে না, আমাকে একা থাকতে দাও।”
শানের ধমকে লজ্জায় কাঁদো কাঁদো হয়ে মুখ নামিয়ে বসে থাকে ইমা। মোবারক বিব্রতবোধ করে এদের স্বামী স্ত্রীর মান অভিমানের সাক্ষী হয়ে।
” আমার শাশুড়ি আসবে আজ। স্যার আমি তাকে আনতে গেলাম।”
শান কোনো জবাব দেয় না। কোমরে হাত রেখে চোয়াল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইমার দিকে পিঠ করে। মোবারক ক্ষণকাল সেখানে অপেক্ষা না করে চলে যায়। নিজের অযাচিত ব্যবহারে অনুশোচনা হয় শানের। ইমার দিকে ঘুরে তাকায়। আ’ম সরি বলতে গিয়েও আঁটকে যায়। দু’চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ইমার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে বলে,
” আচ্ছা কী খাবে বলো?”
ইমা নীরবে মুখ ফিরিয়ে নেয়। শান সেদিকে হেলে তাকিয়ে বলে,
” চিকেন স্যুপ,চিকেন পাস্তা, একস্ট্রা চিজ দেওয়া পিজ্জা, বিফ স্টিক, প্যানকেক,বার্গার ? কী খাবে তাই বলো?”
ইমা জবাব না দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই শান হাত ধরে। চোখে পড়ে ইমার হাতের ব্যান্ডেজ রক্তে মাখামাখি।
” ইমা, একটু কেয়ারফুল থাকতে পারো না? দেখো আবার ব্লিডিং হচ্ছে।”
” হোক তাতে আপনার কী? যান আপনি আপনার কাজে।ছাড়েন আমাকে।”
” থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো যদি আবার মুখে মুখে তর্ক করেছ তো। বসো বলছি।”
শানের চড়া ধমকে ভীত হয়ে বসে পড়ে ইমা। ফার্স্ট এইড বক্স এনে তাড়াতাড়ি ইমার হাতটা নতুন করে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়।
” এবার বলো কী খাবে?”
” কিছুই খাব না। পেট ভরে গেছে আপনার ধমক খেয়ে।”
” ইশশ রে কী আহ্লাদি মার্কা বউ পেয়েছি আমি! একটা ধমকে সে কেঁদে কেটে একাকার। এই মেয়ে কাঁদবে না বলছি। বলো কী খাবে? যদি না বলছ তো খামারে রেখে আসব গোরু-ছাগলের সাথে।”
ইমা তবুও কথা বলে না। শান উঠে দাঁড়িয়ে ইমাকে কোলে তুলে নেয়,
” গোরু -ছাগলের সাথে থাকার শখটা আজ তোমার পূরণ করেই দেই,চলো।”
” আমি তেহারি খাব, তেহারি।”
চোখ খিচে জোর গলায় বলে শানের গলা জড়িয়ে। শানের এবার সত্যি সত্যি হাসি পেল। ইমাকে নামিয়ে রেখে কিচেনে যায়। ইমা মনে মনে হাজারটা বকা দিল শানের এই ব্যবহারে। শানকে ফ্রিজ খুলতে দেখে অসুস্থ গলায় বলল,
” গোরুর সিনার মাংসের তেহারি সেই মজা। দুই পাশে চর্বিযুক্ত মাংস, মাঝে চিকন হাড্ডি। এক এক মুঠো পোলাওয়ে এক এক টুকরা মাংস। সব শেষে প্লেটের হাড্ডি চিবোতে কী যে মজাআআ!” শানকে রাগত ভঙ্গিতে সামনে দাঁড়াতে দেখে কথা থামিয়ে ভাবুক চেহারা ধরে অন্যদিকে তাকায় ইমা।
” এখন গোরুর সিনার মাংস কই পাব আমি?”
” শাহজাহান বউয়ের জন্য তাজমহল বানিয়েছে আর কেউ কেউ বউয়ের জন্য এক কেজি সিনার মাংসও সংগ্রহ করতে পারে না। আবার তারা বউ ভালোবাসে বলে জাহির করে। সব মিথ্যা, সব মায়া।”
” নাটক বন্ধ করো। শরীরের দিকে খেয়াল করেছ? অসুস্থ তুমি৷ এই অবস্থায় ওসব খাওয়ার দরকার নেই। আমি স্যুপ তৈরি করে দিচ্ছি সেটাই খাও।”
” ইয়াক! কেউ তাকে বলো,আমি মনেপ্রাণে বাঙালী। ওসব ইংলিশ খাবার আমার অসুস্থতা সারাবে না বরং বাড়িয়ে দেবে৷ যা বলেছি তাই রান্না করে দিলে দেবে নয়তো আহা! শাহজাহান! আহারে কী প্রেম!”
” এক নাম্বারের ড্রামাবাজ। ওকে ফাইন, তোমার কথায় হবে। তার আগে হালকা পাতলা কিছু খেয়ে নাও।”
” আচ্ছা তাহলে থাই স্যুপ আগে দিয়েন৷ বহুদিন খাইনা। পারলে ক’টা ওন্থনও বানিয়েএএএ!”
শান কটমট করে তাকিয়ে কপাল চাপড়ায়। কিচেনে ফিরে যেতেই ইমা জিহ্বা কামড়ে মিটিমিটি হাসে।
” ইংরেজদের দু’শ বছর ঠাঁই দিতে পারলে একবেলা তাদের খাবারও ঠাঁই দেওয়া যায়,বাঙালীদের মন উদার হয় বুঝলেন?”
” ইমা মুখ বন্ধ করে বসে থাকো। তোমার এসব পাগলের প্রলাপ শোনার ধৈর্য্য আমার নেই৷ শান্তিতে কাজ করতে দাও আমাকে।”
” ভালোর তো জামানায় নাই, হু।” এতোক্ষণ বকবক করে মাথা ধরে গেছে ইমার। বসে থাকতে না পেরে কাউচেই শুয়ে পড়ল। অচিরেই ঘুমিয়ে গেল অসুস্থতায়।
চলবে,,,
দিন দিন কমছে দেখছি এই গল্পের চাহিদা। কমলে আর কি করার! এখন থেকে গল্পটা কিন্তু একদিন পরপর পাবেন।