তুমি অতঃপর তুমিই পর্ব :-১৩

0
1935

তুমি অতঃপর তুমিই
৩১
Taniya Sheikh

আজ সারাদিন একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি তো কখনো মুষলধারে। আমেনা বেগম খাঁটি সরিষার তেল, চানাচুর, পেয়াজ,ঝাল দিয়ে বেশ করে মুড়ি মাখিয়ে বসলেন লুডুর আসরে। কোভিড আতঙ্ক কিছুক্ষণের জন্য ভুলিয়ে দিতেই এই আয়োজন মৌ-য়ের। নচেৎ,আমেনা বেগম ও আহসান সাহেব সারাক্ষণ এই নিয়ে ভয়ে থাকেন। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা,সেই সাথে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। স্বামী- স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় দিন পার করেন। মৌ সেই প্রথম দিন থেকেই তো দেখে আসছে। মাঝ রাতে,কিংবা দিনের কোনোভাগে স্বচক্ষে দেখেছে আমেনা বেগমের চোখের জল। এ জলের প্রতি ফোটা আল্লাহ তাআ’লাকে আর্জি জানায়, ক্ষমা করো মাবুদ। ক্ষমা করো এই পাপী বান্দাদের। বিপদ দূর করো। মৌ- ঠোঁট পড়তে পারত। এই মা-টি স্বার্থপর নয়। সে শুধু নিজের সন্তানের জীবনাশঙ্কায় ভীত নয় বরং সমগ্র মানব জাতির কষ্টে পীড়িত। মৌ-র মায়া হয়। সেদিন যখন নিজে এসে মৌকে হাত ধরে ডায়নিং এ বসিয়ে খাওয়াল- মৌ কেঁদেই ফেলেছিল। মৃত মায়ের মতো আমেনা বেগম তাকে বুকে টেনে বলেছিল,

” পাগলি মেয়ে, এভাবে কাঁদতে আছে?”

মৌ তবুও কান্না থামায়নি। মনখুলে কেঁদেছিল। ঐ ছিল গত কয়েক সপ্তাহের শেষ কান্না। এরপর আর কাঁদেনি সে। কাওকে কাঁদতেও দেয়নি। সারাক্ষণ হৈ হুল্লোড়ে মেতেছিল সবাইকে নিয়ে। শুধু ইমরোজ আসলেই কেমন লজ্জায় গুটিয়ে যেত। এতো লজ্জা কেন পেত ইমরোজকে তার ব্যাখ্যা নেই। পৃথিবীতে সবকিছুর কি ব্যাখ্যা থাকে! লুডুর সিরিয়াস সময় চলছে। তিনজনেরই একটা গুটি বাকি আছে। এরমধ্যে আহসান সাহেবের গুটি একটু আগে আমেনা বেগম খেয়ে দিয়েছিল। তাই নিয়ে দুজনের সে কি বাচ্চামো! বেচারার এখনো ছক্কা উঠছেই না। মৌ এবং আমেনা বেগমের দরকার ১,আশার ২। যারটা আগে উঠবে সেই বিজয়ী। দমবন্ধকর মুহূর্ত। এমন সময় আহসান সাহেবের হতাশ মনে আশার সঞ্চার হলো। ছয় পাঁচ উঠেছে তার। বাকিদের কাঙ্খিত নাম্বার ওঠার পূর্বেই ঘরে ঢুকে যায় আহসান সাহেব। হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। ঠিক সেই মুহূর্তে হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঢুকল ইমরোজ। ঢুকেই এগিয়ে এসে মৌ- র হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গেল। আর খেলা! বাকিদের চোখে-মুখে বিস্ময়। পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করে উঠে গেল সেদিক। ওদেরকে আসতে দেখে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় ইমরোজ। আমেনা বেগম চেঁচিয়ে ওঠেন। ইমরোজ সেসব গ্রাহ্যও করেনা৷

ইমরোজের এমন আচরণে হকচকিয়ে গেছে মৌ। আড়চোখে তাকাতেই বুক কাঁপে। রাগে কঠিন হয়ে আছে ইমরোজের মুখখানা। মনে মনে ভীষণ ভয় হচ্ছে মৌ-র। বিন্যস্ত জীবনটা অবিন্যস্ত হয়ে যাবে না তো আবার! মৌ আর ফিরে যেতে চায়না। প্রতিশোধও চায়না৷ একটু সুখ,স্বস্তি, শান্তি চায়। ইমরোজ শ্যেন দৃষ্টে চেয়ে এগোয়।

” কে তুমি?” ইমরোজের গম্ভীর গলার এই প্রশ্ন মৌ-কে অস্থির করে তোলে। সহসা জবাব দিতে ব্যর্থ হয়। ইমরোজ জবাব না পেয়ে ধমকে গলা চেপে ধরে,

” বল কে তুই? কেন এসেছিস এখানে, বল?”

মৌ-র স্থির দৃষ্টির কোনা দিয়ে দু’ফোটা জল গড়ায়। যার চোখে অমূল্য হতে চেয়েছিল আজ তার চোখে হেয় সে। নিজের অবস্থান দেখতে পায় ঐ দুটি চোখে। কোনো জবাব আসে না৷ কণ্ঠস্বর থমকে যায়,চোখের পলক পড়ে না। কী হয় কে জানে! সেদিকে চেয়ে ইমরোজের কঠিন মুখাবয়ব ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসে। মুখ ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ থেমে বলে,

” আমাকে মারতে এসেছিলে? তো নাও। মেরে ফেলো।” কোমর থেকে রিভলবারটা বের করে ঘুরে দাঁড়ায়। এগিয়ে দেয় মৌ-র দিকে। মৌ- বিস্মিত বোবা নয়নে শুধু দেখছে। ইমরোজ সব জেনে গেছে! সব। হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে যায়। অবর্ণনীয় কষ্ট অনুভূত হয়। ইমরোজ জোর করে ওর হাতের রিভলবার ধরে বুকে ঠেকায়।

” কিল মি।”

মৌ তাকিয়ে আছে। ইমরোজকে দেখছে,দেখছে ঐ চোখের রঙ ভয়ানক লাল হয়ে ওঠার দৃশ্য। সে তো এসেইছিল ইমরোজের ক্ষতি করার প্লানে। এই তো সুযোগ। মাহিব পর্যন্ত নেওয়ার ঝামেলা নেই। শামীমকে এনকাউন্টার করার প্রতিশোধ নিয়ে মাহিবকে খুশি করার মোক্ষম সুযোগ। মার! মৌ,মার। মৌ-র শরীর অবশ হয়ে আসে। ট্রিগার কেন রিভলবারটাই ধরে রাখতে পারছে না ও। ইমরোজের অন্তর্ভেদী দৃষ্টি ওর হৃদয় তোলপাড় করছে। ঝড় উঠেছে সেখানে, কাল বোশেখী ঝড়।

স্বামী- স্ত্রী দুজন আজ বাগান পরিচর্যা করতে লেগে গেছে। গাছের আগাছা পরিষ্কার করে সেগুলোয় নতুনত্ব আনছে ওরা। শান গেল পাইপ টেনে আনতে। পাশে বসে ইমা গোলাপের ফুলগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল। শান গাছে পানি দিতে দিতে বলল,

” তারপর, কী ভাবলে?”

” কোনটা?”

” আমাদের বেবির নামের কথা বলছি।”

” এই যা! আমি তো ভুলেই গেছি।” ইমা জিহ্বা কাটতেই শান ওর দিকে পাইপ ধরে ভিজিয়ে দেয়।

” এটা কী করছেন?”

” স্মৃতি শক্তি প্রখর করছি। কবে থেকে লেগে আছ, অথচ জিজ্ঞেস করলেই বলো ভুলে গেছি।” শান পানির পাইপ ঘুরিয়ে আবার গাছে পানি দিতে থাকে। রাগে কিড়মিড় করে ইমা বলে,

” আপনাকে আমি দেখে নেব।”

” নেব আবার কী? এখনই দেখো,মন ভরে দেখো।” পাইপ নিচে ফেলে চট করে গায়ের টিশার্ট খুলে ইমার মুখে মারে। এগিয়ে গিয়ে বলে,

” দেখো,দেখো।”

রাগে শরীর জ্বলছে ইমার। শানের টিশার্ট টেনে দাঁড়িয়ে আছে। শান ওর খুব নিকটে আসতেই ইমা সরে দাঁড়াবে বলে ঘুরতেই হাত টেনে ধরে। ইমা গাল ফুলিয়ে বলে,

” ছাড়েন আমাকে।”

” আগে নাম বলো।”

” নাম ঠিক করি নাই।”

” তাহলে এখনই করো।”

” মাথা খারাপ আপনার।এখন কী করে করব। ভাবতে হবে না।”

” ওসব জানি না। আমি এখন শুনব।” ইমা নিরুপায় হয়ে অবশেষে ভাবতে শুরু করে। ভাবছে তো ভাবছেই। শান অধৈর্য্যে হয়ে বলে,

” এতো কী ভাবছ৷ একটা নাম ভাবতে এতো সময় লাগে।”

” হাস মুরগির বাচ্চার নাম না যে, ছোটো বাচ্চা, বড়ো বাচ্চা, লাল বাচ্চা, কালো বাচ্চা রাখব। মানুষের বাচ্চার নাম রাখব,সেটাও আমাদের। টাইম তো লাগবেই,নাকি?”

” ফালতু কথা বন্ধ করে যেটা বলেছি সেটা করো।”

” এতোই যখন তাড়াহুড়ো হলে আমি পারব না। আপনিই রাখেন গিয়ে যান।” দু’হাতে শানের বুকে ধাক্কা দিতে শান ওর ঠোঁট স্পর্শ করে সরে দাঁড়ায়। লজ্জায় এদিক, ওদিক তাকায় ইমা। শাসিয়ে বলে,

” কতবার বলেছি সবসময় এই কাজ করবেন না।”

” আমার ইচ্ছা।” ইমার ফুলিয়ে রাখা গালটা টেনে বাসার দিকে হাঁটে। পেছন পেছন ইমা এগোতে এগোতে বলে,

” আপনার ইচ্ছা! তবে আপনার ঠোঁটেই দেন।” শান ভ্রু কুঁচকে ঘুরে দাঁড়াতেই ইমা দাঁড়িয়ে যায়। শান হো হো করে হেসে ওঠে।

” সত্যিই পাগল তুমি।”

” পাগল বলবেন না।”

” ওপস, সরি পাগলি তুমি।”

” শান!” ইমার নাকে কান্না দেখে আরো জোরে হাসে। এগিয়ে এসে ওর গলা পেঁচিয়ে ধরে বলে,

” নিজের ঠোঁটে নিজে কিভাবে চুমু খায়? পাগলী না হলে এসব কথা কে বলে?”

” যান সরেন। শয়তান একটা।” ইমা ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যায়। শান হাসতে হাসতে ছোটে ওর পেছনে। ইমার দু-কাঁধে হাত রেখে খুনসুটি করতে করতে অন্দরে প্রবেশ করে। মতিন গেটে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসে।

মৌ সেই যে কথা বন্ধ করে আর তার মুখ দিয়ে কথা ফোটে না। পরদিন কাওকে কিছু না জানিয়ে খুব ভোরে চলে যায়। আমেনা বেগম ছেলেকে বার কয়েক জিজ্ঞেস করেও সদুত্তর পাননি। বন্ধ ঘরে ওদের দুজনের মধ্যে কী হয়েছে এরা কিছুই জানে না। দুপুরে খাবার টেবিলে এ নিয়ে কথা আমেনা বেগমই প্রথম তোলেন। মেয়েটার প্রতি বড্ড টান সৃষ্টি হয়েছিল তার৷ হুটহাট চলে যাওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন খুব।

” ইমু, মেয়েটা এভাবে কেন চলে গেল? কি বলছিস তুই ওকে?”

ইমরোজ মুখের সামনে তোলা খাবার প্লেটে নামিয়ে রাখে। মলিন চেহারায় একদৃষ্টে নিচে তাকিয়ে আছে।তাই দেখে আমেনা বেগম বলেন,

” খাওয়া বন্ধ করলি কেন? আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম। মেয়েটার প্রতি মায়া জন্মে গেছিল কি’না।”

” এতো তাড়াতাড়ি কারো উপর মায়া বাড়াবে না৷ কষ্ট বাড়বে। সবাই মায়া মহব্বতের অর্থ বোঝেনা, মা৷” চেয়ার ঠেলে হনহন করে রুমে ফিরে যায়। ইমরোজের এই কথার সঠিক অর্থ কেউই বুঝল না। সকলে বিষন্ন মনে বসে রইল খাবার টেবিলে।

দিন পেরিয়ে গেল, সপ্তাহও। বাসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। মৌ-র স্মৃতি ক্রমেই ধূসর হয়। এদিকে দেশে লকডাউন খুলে দেওয়া হয়েছে। জীবনযাত্রা আগের মতো না হলেও মানুষ বাঁচার তাগিদে স্বাভাবিক হচ্ছে। ইমরোজদের বাসায় নতুন মেহমান এসেছে। আশা এক ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। সবাই খুশি৷ আমেনা বেগম পূর্ব নির্ধারিত পাত্রীকে পুত্রবধূ বানাবেন বলে মনস্থির করেছেন। আগামীকাল সপরিবারে মেয়েকে দেখতে যাবার প্লান সবার। ইমরোজ গড়িমসি করলেও আমেনা বেগম পুত্রকে মানিয়েছেন।

মৌ- কে নিজের কাছে ফিরে পেয়ে মাহিব প্রচণ্ড খুশি। ওর এই খুশিতে গ্রহণ লাগে আননোন নাম্বার থেকে থ্রেট আসতেই। কিন্তু কে করছে এমন? সামিরা! সামিরার সাথে তো মিউচুয়ালি সমঝোতা হয়ে গেছে। মা-কে হত্যার পর ওরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে। আর যা হোক বিয়ে পরস্পরকে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। মাহিব জানে এসব সামিরার মুখের কথা।শানকে হাসিল করার জন্যই বিপদে পড়ে মাহিবের সাথে হাত মেলাচ্ছে। পূর্বেও তো এমন করেছে সে। শান যখন ইমাকে নিয়ে মধুর সংসার উপভোগ করছিল তখন মাহিবই তো সেটা ওকে জানিয়েছিল। তারপর, রাহুকাল হয়ে ওদের জীবনে এলো সামিরা। শান, ইমা কিছু বোঝার পূর্বেই ওদের আলাদা করে দেয়। ইমার মা ছিল ওর হাতিয়ার। হাসপাতালে সামিরাকে দেখামাত্রই শিওরে ওঠেন৷ সামিরাকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। ইমাও চিনত,ভাইয়ের ফ্রেণ্ড হিসেবে। ইমার মাকে দিনরাত প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অস্থির করে তোলে সামিরা৷ ইরার মৃত্যুর আসল কারনটাও ইঙ্গিতের বলে দেয়। ইরাকে পাবার জন্য কৌশলে আরশাদকে ব্যবহার করে। আরশাদের অর্থ লিপ্সাকে কাজে লাগিয়ে ইরার সাথে বিয়ের নাটক করায়। সেদিন আরশাদ প্লান মোতাবেক বেড়ানোর কথা বলে ইরাকে ওর হাতে তুলে দিয়েছিল। মান সম্মান বাঁচাতে ইরা ছাঁদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে। সেটাকে ওরাই এক্সিডেন্ট সাজায়। সামিরা আরও জানায়,শান এসবের সাথে জড়িত,ইমাকেও ওরা মেরে ফেলবে এমন নানা গল্প শুনিয়ে বাধ্য করে ইমাকে নিয়ে চলে যেতে। মা’য়ের কথা ইমা অবিশ্বাস করতে পারেনা। ইমাকে বিশ্বাস করাতে শানের সাথে মিথ্যা কাবিনের ছবি এবং কাপল ছবি দেখায় সামিরা। ইমার ব্যথাতুর,সহজ- সরল মন ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার সব চেষ্টা অবশেষে সফল হয়৷

” তোমার কার উপর সন্দেহ হয়, ইমা নাকি ওর মায়ের উপর, না,সামিরার উপর?” মাহিবের বুকের উপর দু’হাতে ভর করে মুখ তুলে বলে মৌ। মাহিব ভেবে বলে,

” ইমা হবে না। ঐ মেয়ের সাহস আমার জানা আছে। আর ও তো সত্যিটা জানেও না৷ ওর মা শুনেছি অনেক আগেই মারা গেছে। বাকি থাকে সামিরা৷ হুম, এই কাল নাগিনীকে আমার বিশ্বাস নেই।” মাহিব বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। মৌ-র কপালে চুমু দিয়ে আসছি বলে বেরিয়ে যায়। মৌ চুপচাপ পাশ ফিরে শোয়। চোখে বিতৃষ্ণা জাগে।

” তুই আমার সাথে এমন করার সাহস কী করে পেলি সামিরা?”

” ওহ,কাম অন মাহিব, সামিরার সাহস সম্পর্কে তোমার দেখছি এখনো আইডিয়াই হলো না। জিজ্ঞেস করছ কী করে পেলাম! পাওয়ার কী আছে! সাহস তো জন্মগত ভাবেই আমার রক্তে মিশে আছে। তোমার মতো ভিতু নাকি।” মাহিব ছুটে গিয়ে ওর হাতের হুইস্কির গ্লাস ফেলে দিয়ে কটাক্ষ করে,

” এতোই যখন সাহস তবে আননোন নাম্বার থেকে থ্রেট কেন দিচ্ছিস? আমি জানি তুই স্বীকার করবি না। সাহস, সাহস বলে যেসব জাহির করিস ওসব তোর শো অফ। আসলে তুই নিজেও জানিস তুই কী! একজন ভীতু,দূর্বল নারী।”

” মাহিব।” আচমকা মাহিবের গলা চেপে ধরে অগ্নিচোখে তাকায়। মাহিব নিজেকে ছাড়িয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। সামিরার সহ্য হয়না মোটেও। বজলুর কোমরে ঝোলা রিভলবার খুলে শুট করে মাহিবের ডান হাঁটুতে। মাহিব চিন্তাও করেনি সামিরা এমন করতে পারে। ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে। সামিরা ওর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মুচকি হেসে বলে,

” দেখলে তো আমি কী! বলো তো আরও ডেমো দেখাই। দেখাব বলো?” মাথার সাথে রিভলবার ঠেকাতেই মাহিব দাঁত পিষে ক্ষমা চায়। এই ক্ষমা সে মন থেকে চায়নি। এই মুহূর্তে বাঁচতে চায়। সামনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। মৌকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন সফল করতে হবে। অবস্থা বুঝে নত হয় মাহিব। সামিরা অবস্থা, পরিস্থিতি দেখে না৷ সে শুধু আবেগ দেখে। নিজের মন বোঝে। মন যা চায় তাই করে। মাহিব সবটা খুলে বলতেই সামিরা কিছুক্ষণ কী যেন ভাবে। বজুলকে ফিসফিস করে কিছু বলতেই বজলু বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার, নার্স এসে হাজির। মাহিবের ট্রিটমেন্ট শুরু হয়। ব্যাণ্ডেজ শেষে ডাক্তার চলে গেল। ব্যথায় বিছানায় কাতরায় মাহিব। সামিরা এসে বসে ওর পাশে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

” শানকে ভালো না বাসলে তুমিই আমার একমাত্র ভালোবাসা হতে মাহিব৷সুভাগ্য তেমনটা হলো না। তবুও তোমার প্রতি আমার হৃদয়ে এখনো সফট কর্ণার আছে আজ আবার বুঝলাম। তুমি শানের মতো কেন হলে না মাহিব?” সামিরা দু’হাতে ওর মুখটা তুলে চেয়ে আছে। আদর করে বলে,”খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?” মাহিব অবাক হয়ে সামিরাকে দেখছে। ওর মাঝে মাঝে মনে হয় সামিরা ওর মতোই পাগল। এখন মনে হচ্ছে ওর চেয়েও বেশি পাগল এই মেয়ে। বোঝার উপায় নেই কখন কী চলে ওর মনে। সামিরা কাছে আসে মাহিবের। হাঁটু ব্যথায় দাঁত কামড়ে পড়ে আছে মাহিব। সামিরাকে ভয় করে ও। অন্তত আজকের পর থেকে। সন্ধ্যার পর মাহিবের সামনে হাজির করা হয় আরশাদ শিকদারকে। সামিরার ইশারায় বজলু কয়েক ঘা দিতেই আরশাদ সব স্বীকার করে। সে বলে, টাকার জন্য মাহিবকে থ্রেট দিয়েছে। ক্ষমা চায় আরশাদ। ক্ষমা মেলে না। সামিরা সবার সম্মুখে শুট করে। সেখানেই মারা যায় আরশাদ। মাহিব ঘাবড়ে যায় সামিরার মুখের দিকে চেয়ে। ভয়ংকর এক নারীমূর্তি। মুখটাতে পৈশাচিক হাসি। যেন সব ধ্বংস করতেই এসেছে ও।

চলবে,,,,

গল্পটার প্রতি আপনাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে, হয়তো ভালো হচ্ছে না বলেই, অথবা যদি বলেন আমার লেট করে গল্প দেওয়ায় এর কারন তবে বলব ঠিক আছে। একদিন, কালেভদ্রে হয়তো আরো দুই একদিন বেশি লেট হয়েছে। এরজন্য আগ্রহ কমে যাওয়াটা যদি উচিত হয় তবে আর কি! ইহাই আমার প্রাপ্য ভেবে নেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here